পরিচ্ছেদঃ
১৭৮৮। ইবরাহীম (আঃ) কে যখন আগুনের দিনে আগুনের নিকট নিয়ে আসা হলো। অতঃপর যখন তিনি আগুন দেখলেন তখন বললেনঃ হাসবুনাল্লাহু অনিমাল অকীল।
হাদীসটি দুর্বল।
এটিকে আবু নুয়াইম “আলহিলইয়্যাহ” গ্রন্থে (১/১৯) কাযী আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু উমার হতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনুল আব্বাস তায়ালাসী হতে, তিনি আব্দুর রহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ হতে, তিনি আবূ বকর ইবনু আইয়্যাশ হতে, তিনি হুমায়েদ হতে, তিনি আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ...।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। ইবনু আইয়্যাশ ও তার উপরের বর্ণনাকারী ইমাম বুখারীর বর্ণনাকারী। আর তার নিচের দু’জন বর্ণনাকারীর জীবনী খাতীব বাগদাদী “আততারীখ” গ্রন্থে (১০/৩৬, ১১/৮৬) উল্লেখ করেছেন।
আর কাযী আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু উমারের জীবনী আলোচনা করেছেন আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৮৮) এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মারা যান ৩৬২ হিজরীতে। তিনি তার সম্পর্কে ভালো-মন্দ কিছুই বলেননি। ইনিই হচ্ছেন এ সনদের সমস্যা।
তার ভাষার বিরোধিতা করা হয়েছে। খাতীব (১১/৮৬) হাদীসটিকে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস শাতাবী সূত্রে ইবরাহীম ইবনু মূসা জাওযী হতে, তিনি আব্দুর রহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু যায়েদ সাকারী হতে নিম্নের ভাষায় বর্ণনা করেছেনঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিনে আসলেন তখন তাকে বলা হলোঃ হে আল্লাহর রসূল! “একটা বড় বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর।” (সূরা আলে ইমরান ১৭৩)। তখন তিনি বললেনঃ হাসবুনাল্লাহু অনিমাল অকীল।”
তখন আল্লাহ্ তা’য়ালা নাযিল করলেনঃ যাদেরকে লোকে খবর দিয়েছিল যে, একটা বড় বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর ...। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৩)
বর্ণনাকারী এ শাতাবী ছাড়া এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। কারণ শাতাবীকে আমি চিনি না।
আর ইবরাহীম ইবনু মূসা জাওযীকে তাওয়ী বলা হয়। তাকে খাতীবও (৬/১৮৭) নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
তার থেকে আরেকটি সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ইবনু মারদুবিয়্যাহ বলেনঃ আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবনু মা’মার হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি ইবরাহীম ইবনু মূসা তাওযী হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে এটিকে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু এ মুহাম্মাদ ইবনু মামারও মাজহুল। খাতীব তার একটি হাদীস (৩/৩০৪) ইয়াহইয়া ইবনু হাফস ইবনু আখী হিলাল কুফী হতে তার সনদে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফূ’ হিসেবে নিম্নের ভাষায় বর্ণনা করেছেনঃ
من شارك ذميا فتواضع له
এরপর খাতীব বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার, আমি এটিকে একমাত্র এ সনদেই লিখেছি।
এ ইবনু মামার অথবা তার শাইখকে হাফিয যাহাবী এ হাদীসটি জাল করার ব্যাপারে দোষারোপ করেছেন। তিনি তার জীবনীতে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায় না। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এর সমস্যা হচ্ছে ইয়াহইয়া। আর তিনি যদি না হন তাহলে এর সমস্যা হচ্ছে বর্ণনাকারী সামী। কারণ তিনিও মাজহুলুল হাল (তার অবস্থা অজ্ঞাত)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইয়াহইয়ার দ্বারাই হাদীসটির সমস্যা বর্ণনা করা ভাল। কারণ সামী থেকে দু’জন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন একজন হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনু মুখাল্লাদ আলআত্তার আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন ইবনু মারদিবিয়্যাহ।
ইবনু যিয়াদ অথবা যায়েদের হাদীসটির সনদ এবং তার ভাষার বিরোধিতা করা হয়েছে। আহমাদ ইবনু ইউনুস বলেনঃ আমাদেরকে আবূ বকর হাদীসটি বর্ণনা করে শুনিয়েছেন, তিনি আবু হুসাইন হতে, তিনি আবুয যুহা হতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন হাসবুনাল্লাহু অনিমাল অকীল কথাটি ইবরাহীম (আঃ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই বলেছিলেন যখন তারা বলেছিলঃ “একটা বড় বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৩)।
এটিকে ইমাম বুখারী (৪৫৬৩) ও হাকিম (২/২৯৮) বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ। কিন্তু তারা দু’জন (বুখারী ও মুসলিম) বর্ণনা করেননি। আর হাফিয যাহাবী তার (হাকিমের) সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছি তারা সুস্পষ্টভাবে সন্দেহমূলক কথা বলেছেন। অর্থাৎ ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন!
তারা দু’জন আরেকটি সন্দেহমূলক কথা বলেছেন আর তা হচ্ছে এই যে, ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটিকে সহীহ আখ্যা দেয়া। কারণ এ আবূ বকর হতে ইমাম মুসলিম মুকাদ্দিমাতে ছাড়া অন্য কোথাও হাদীস বর্ণনা করেননি। আর মুহাদ্দিসগণ তার ব্যাপারে বহু সমালোচনা করেছেন। অতঃপর হাফিয যাহাবী “আলমীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি একজন ইমাম, কিরাআতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী। কিন্তু তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে ভুলকারী এবং সন্দেহপোষণকারী। ইমাম বুখারী তার হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে ভালো।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য আবেদ। কিন্তু তিনি যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন তার হেফযে ক্রটি দেখা দেয়। আর তার কিতাব সহীহ।
বর্ণনাকারী ইসরাঈল হাদীসটির কিছু অংশের ব্যাপারে আবু হুসাইন হতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তার মুতাবা’য়াত করেছেন। এর ভাষা হচ্ছেঃ ইবরাহীমকে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার শেষ কথা ছিল "হাসবিয়াল্লাহু অনিমাল অকীল"।
এটিকে ইমাম বুখারী (৪৫৬৪) মালেক ইবনু ইসমাঈল হতে, তিনি ইসরাঈল হতে বর্ণনা করেছেন। পূর্বে আলোচিত আবু বাকর হতে হাকিমের বর্ণনায় এ ভাষাতেই বর্ণিত হয়েছে।
ভাষা এবং সনদ উভয় ক্ষেত্রে মালেকের বিরোধিতা করে সালাম ইবনু সুলাইমান দেমাস্কী বর্ণনা করেছেন ইসরাঈল হতে, তিনি আবু হুসাইন হতে, তিনি আবু সালেহ্ হতে, তিনি আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে মারফু হিসেবে।
এ সালাম সম্পর্কে হাফিয যাহাবী "আলকাশেফ" গ্রন্থে বলেনঃ তার কতিপয় মুনকার বর্ণনা রয়েছে।
হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছি তার মত ব্যক্তির দ্বারা শাহেদ গ্রহণ করা যায় না। তিনি সনদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বিরোধিতা করেছেন। তিনি এটিকে আবু হুরাইরাহ (রাঃ)-এর মুসনাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি এটিকে মারফু বানিয়ে ফেলেছেন। অথচ আবূ বকর ও ইসরাঈল এ দু’নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনায় এটি মওকুফ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
মোটকথা হচ্ছে এই যে, আলোচ্য হাদীসটি মওকুফ হিসেবে সহীহ। এর এক বর্ণনাকারী কর্তৃক আবু বাকর হতে বুখারীর সহীহ্ বর্ণনার বিরোধী হওয়ার কারণে আর ইসরাঈল কর্তৃক তার মুতাবায়াত করার কারণে।
أتي بإبراهيم عليه السلام يوم النار إلى النار، فلما بصر بها، قال: (حسبنا الله ونعم الوكيل) ضعيف - أخرجه أبو نعيم في " الحلية " (1 / 19) : حدثنا القاضي عبد الله بن محمد بن عمر حدثنا عبد الله بن العباس الطيالسي حدثنا عبد الرحيم بن محمد بن زياد (كذا) : أنبأنا أبو بكر بن عياش عن حميد عن أنس بن مالك أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فذكره. قلت: وهذا إسناد رجاله ثقات، ابن عياش فمن فوقه من رجال البخاري، واللذان دونه ترجمهما الخطيب في " التاريخ " (10 / 36 و11 / 86) . والقاضي عبد الله بن محمد بن عمر، ترجمه أبو نعيم في " أخبار أصبهان " (2 / 88) ، وذكر أن وفاته كانت سنة (362) ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا. فهو علة هذا الإسناد وقد خولف في متنه، فأخرجه الخطيب (11 / 86) من طريق عبد الله بن العباس الشطوي: حدثنا إبراهيم بن موسى الجوزي حدثنا عبد الرحيم بن محمد بن زيد السكري ... بلفظ: أن النبي صلى الله عليه وسلم أتي يوم أحد، فقيل: يا رسول الله! (إن الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم) ، فقال: " حسبنا الله ونعم الوكيل ". فأنزل الله تعالى: " الذين قال لهم الناس إن الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم ". ورجاله ثقات، غير الشطوي هذا، فلم أعرفه. وإبراهيم بن موسى الجوزي، ويقال: (التوزي) وثقه الخطيب أيضا (6 / 187) وقد جاء من طريق أخرى عنه، فقال ابن مردويه: حدثنا محمد بن معمر حدثنا إبراهيم بن موسى التوزي به. ذكره ابن كثير في تفسير الآية. لكن محمد بن معمر هذا مجهول أيضا، فقد ساق له الخطيب حديثا (3 / 304) عن يحيى بن حفص ابن أخي هلال الكوفي بسنده عن ابن عمر مرفوعا بلفظ: " من شارك ذميا فتواضع له.. " الحديث. وقال عقبه: " حديث منكر لم أكتبه إلا بهذا الإسناد واتهم الذهبي به ابن معمر هذا أوشيخه، فقال في ترجمته: " لا يعرف ... ". ثم ساق له هذا الحديث، وقال: " آفته يحيى، وإلا فالسامي، فإنه مجهول الحال أيضا ". وأقول: لعل تعصيب الآفة بيحيى أولى، لأن السامي قد روى عنه اثنان، أحدهما: محمد بن مخلد العطار الراوي لهذا عنه، والآخر: ابن مردويه كما تقدم. وقد خولف ابن زياد أوزيد في إسناد الحديث ومتنه، فقال أحمد بن يونس: حدثنا أبو بكر عن أبي حصين عن أبي الضحى عن ابن عباس: (حسبنا الله ونعم الوكيل) قالها إبراهيم عليه السلام حين ألقي في النار، وقالها محمد صلى الله عليه وسلم حين قالوا: " إن الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم إيمانا وقالوا حسبنا الله ونعم الوكيل ". أخرجه البخاري (4563) والحاكم (2 / 298) وقال: " صحيح على شرط الشيخين، ولم يخرجاه "! ووافقه الذهبي! قلت: وقد وهما وهما ظاهرا، وهو استدراكه على البخاري وقد أخرجه! ووهما وهما آخر، تصحيحه على شرط مسلم أيضا، فإن أبا بكر هذا لم يخرج له مسلم شيئا إلا في المقدمة، وقد تكلموا فيه كثيرا، فقال الذهبي في " الميزان ": " أحد الأئمة الأعلام، صدوق ثبت في القراءة، لكنه في الحديث يغلط ويهم، وقد أخرج له البخاري، وهو صالح الحديث ". وقال الحافظ ابن حجر: " ثقة عابد، إلا أنه لما كابر ساء حفظه، وكتابه صحيح ". وقد تابعه على بعضه إسرائيل عن أبي حصين به، ولفظه: " كان آخر قول إبراهيم حين ألقي في النار: (حسبي الله ونعم الوكيل) ". أخرجه البخاري (4564) : حدثنا مالك بن إسماعيل حدثنا إسرائيل. وهذا اللفظ هو في رواية الحاكم المتقدمة عن أبي بكر. وخالف مالكا في إسناده ومتنه سلام بن سليمان الدمشقي، فقال: حدثنا إسرائيل عن أبي حصين عن أبي صالح عن أبي هريرة مرفوعا قلت: وسلام هذا قال الذهبي في " الكاشف ": " له مناكير ". وقال الحافظ في " التقريب ": " ضعيف قلت: فمثله لا يصلح للاستشهاد به، وقد خالف الثقة في السند، فجعله من مسند أبي هريرة، وتابعيه أبا صالح! وفي المتن، فرفعه، وهو موقوف برواية الثقتين: أبي بكر وإسرائيل وبالجملة، فحديث الترجمة الصحيح فيه الوقف، لمخالفة أحد رواته رواية البخاري الصحيحة عن أبي بكر، ومتابعة إسرائيل إياه. والله أعلم