হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৫৩১

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সম্মিলিত কসম

الْقَسَامَةِ কফ ও মীম বর্ণে যবর যোগে। এটা শপথ যা কোনো এলাকায় নিহত ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে এলাকার অধিবাসীদের কসম করা হয়।

শাফি’ঈদের নিকট খুনী ব্যক্তি অজ্ঞাত থাকলে নিহত ব্যক্তির অভিযোগকারী ওয়ারিসরা নিহতের রক্তমূল্যের জন্য কসম করবে। এর কারণ হলো নিহত ব্যক্তিকে তাদের মহল্লায় পাওয়া অথবা এরূপ কোনো কারণ বা আলামত পাওয়া। তাদের কসমের মূল অংশ হলো-بِاللّٰهِ مَا قَتَلْنَاهُ অথবাلَا عَلِمْنَا لَه قَاتِلً কসমকারীর জন্য শর্ত হলো সে পুরুষ, স্বাধীন ও জ্ঞানসম্পন্ন হবে। ইমাম মালিক বলেনঃ ভুলক্রমে হত্যার ক্ষেত্রে মহিলাও কসামার অন্তর্ভুক্ত। ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে নয়।

আর এর ফায়সালার বিধান হলো কসমের পর দিয়াত ওয়াজিব।

شَرْحِ السُّنَّةِ -এ রয়েছে নিহত ব্যক্তির ওয়ালীগণ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে অথবা কোনো দলের ওপর অভিযোগ করবে আর তাদের নিকট স্পষ্ট যখম বা ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। আর তা হচ্ছে এমন বিষয় প্রাপ্তি যা অভিযোগকারীর সত্যতা প্রবলরূপে অনুমান করা যায়। যেমন তাদের অঞ্চলে নিহত ব্যক্তিকে পাওয়া অথবা নিহত ব্যক্তি ও তাদের মাঝে শত্রুতা বিদ্যমান থাকা ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩৫৩১-[১] রাফি’ ইবনু খাদীজ এবং সাহল ইবনু হাসমাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, ’আব্দুল্লাহ ইবনু সাহল এবং মুহাইয়িসাহ্ ইবনু মাস্’ঊদ খায়বারে এলেন। তারা খেজুর বাগানে প্রবেশ করে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। অতঃপর (কেউ) ’আব্দুল্লাহ ইবনু সাহল-কে হত্যা করলো। এমতাবস্থায় ’আব্দুর রহমান ইবনু সাহল (’আব্দুল্লাহ-এর ভাই) এবং মাস্’ঊদ-এর দু’পুত্র হুওয়াইয়িসাহ্ এবং মুহাইয়িসাহ্ (রাঃ)(’আব্দুল্লাহ-এর চাচাতো ভাই) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাদের ভাইয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করেন। অতঃপর ’আব্দুর রহমান যখন কথা বলা শুরু করলেন, আর তিনি ছিলেন সকলের ছোট। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বড়কে কথা বলতে দাও (সম্মান কর)। তিনি (ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার উদ্দেশ্য হলো- যিনি বয়সের বড় সেই কথা শুরু করার অগ্রাধিকারযোগ্য। অতএব তারা তাদের ভাইয়ের হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করল।

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে পঞ্চাশজন কসম করলে তোমাদের নিহত ব্যক্তির; অথবা বলেছেন, তোমাদের ভাইয়ের দিয়াত (রক্তপণ) পাওয়ার হকদার হতে পারবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা (কসম) এমন জিনিস যা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে ইয়াহূদীদের থেকে পঞ্চাশজন কসম করে অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তারা তো কাফির। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকে তাদের হত্যার দিয়াত প্রদান করলেন। অপর বর্ণনাতে আছে, তোমরা পঞ্চাশ জন কসম কর তোমাদের নিহত ব্যক্তির অথবা বলেছেন, তোমাদের সঙ্গীর দিয়াতের হকদার হতে পারবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকে তাদেরকে দিয়াতস্বরূপ একশত উট আদায় করে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقَسَامَةِ

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ وَسَهْلِ بْنِ أَبِي حَثْمة أَنَّهُمَا حَدَّثَا أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَهْلٍ وَمُحَيِّصَةَ بْنَ مَسْعُودٍ أَتَيَا خَيْبَرَ فَتَفَرَّقَا فِي النَّخْلِ فَقُتِلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَهْلٍ فَجَاءَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَهْلٍ وَحُوَيِّصَةُ وَمُحَيِّصَةُ ابْنَا مَسْعُودٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَكَلَّمُوا فِي أَمْرِ صَاحِبِهِمْ فَبَدَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ وَكَانَ أَصْغَر الْقَوْم فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كبر الْكبر قَالَ يحيى بن سعد: يَعْنِي لِيَلِيَ الْكَلَامَ الْأَكْبَرُ فَتَكَلَّمُوا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَحِقُّوا قَتِيلَكُمْ أَوْ قَالَ صَاحِبَكُمْ بِأَيْمَانِ خَمْسِينَ مِنْكُمْ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْرٌ لَمْ نَرَهُ قَالَ: فَتُبَرِّئُكُمْ يَهُودُ فِي أَيْمَانِ خَمْسِينَ مِنْهُمْ؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ قَوْمٌ كُفَّارٌ فَفَدَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قِبَلِهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: «تَحْلِفُونَ خَمْسِينَ يَمِينًا وَتَسْتَحِقُّونَ قَاتِلَكُمْ أَوْ صَاحِبَكُمْ» فَوَدَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عِنْده بِمِائَة نَاقَة وَهَذَا الْبَاب خَال من الْفَصْل الثَّانِي

ব্যাখ্যা: শিষ্টাচারের ইঙ্গিত দেয়ার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়কে অগ্রবর্তী করেছেন। এর দ্বারা যেন তিনি যেথায় সমতা হবে সেথায় বড়কে বা বয়সে বড়কে অগ্রবর্তী করার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করতে চেয়েছেন। তবে যদি ছোটদের নিকট এমন জ্ঞান থাকে যা বড়দের নিকট নেই, এই অবস্থায় বড়দের উপস্থিতিতে ছোটদের কথা বলাতে নিষেধ নেই। কারণ ‘উমার এবং আবূ বাকর কোনো এক মাজলিসে থাকার কারণে ‘উমার বিন খত্ত্বাব-এর পুত্র ‘আব্দুল্লাহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে ইতস্তবোধ করে জবাব দেয়নি। এজন্য ‘উমার পরে আফসোস করেছিলেন তার পুত্র উত্তরে কথা না বলায়। ‘উমার -এর আফসোসের কারণ ছিল বড়দের মাজলিসে পুত্রের কথা না বলা। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৪২, ৬১৪৩)

কেউ কেউ এ হাদীস দ্বারা সাদাকার মালকে বিনামূল্যে উপকার লাভে ব্যবহারের মত পোষণ করেন। যেমন মতানৈক্য বন্ধকরণ এবং বিভেদের সমাধানের জন্য।

আবার কেউ এ হাদীস যাহিরী অর্থে ব্যবহার করেছেন। আর কাযী ‘ইয়ায কোনো বিদ্বানের উদ্ধৃতি দিয়ে যাকাতের মালকে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করার বৈধতা দিয়েছেন। আর এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীসকে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যাকাত অধ্যায়ে আবূ লাস-এর হাদীসে রয়েছে। তিনি বলেনঃ

قَالَ حَمَلَنَا النَّبِيُّ ﷺ عَلٰى إِبِلٍ مِنْ إِبِلِ الصَّدَقَةِ فِي الْحَجِّ

অর্থাৎ- আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজে/হজ্জের সময় সাদাকার কোনো উটের উপরে বহন করিয়েছিল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২২)

الْقَسَامَةِ-এর হাদীসটি শারী‘আত মূলনীতিসমূহের একটি মূলনীতি পদ্ধতি এবং বান্দার কল্যাণের অন্যতম রুকন। কুফা, শাম ও হিজাযের সকল তাবি‘ঈ ও সাহাবীর নিকট এ হুকুমটি গৃহীত। যদিও الْقَسَامَةِ গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ বিদ্যমান।

একদল ‘আলিমের মতে الْقَسَامَةِ বাতিল। এর কোনো বিধান নেই। আর এটা ‘আমলযোগ্য নয়। এই দলের মধ্যে সালিম বিন ‘আব্দুল্লাহ, সুলায়মান বিন ইয়াসার, হাকাম বিন ‘উয়াইনাহ্, কাতাদাহ, আবূ ক্বিলাবাহ্, মুসলিম ইবনু খালিদ, ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্ ও বুখারী; এছাড়া অন্যরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয় তবে এক্ষেত্রে কিসাস ওয়াজিব কিনা- এই ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।

হিজাযের একটি বিরাট অংশ কিসাসকে ওয়াজিব বলেছেন। এটা যুহরী, রবী‘আহ্, মালিক (রহঃ) ও তার সাথীগণ আহমাদ (রহঃ), ইসহক, আবূ সাওর ও দাঊদ-এর অভিমত। আর এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এর পুরাতন মত।

‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয ও ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবায়র থেকে বর্ণিত, আবূ যিনাদ বলেনঃ আমরা এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল সাহাবীগণ বলেন- এই মতের লোক সংখ্যা এক হাজার। এ ব্যাপারে দু’টি মাযহাবের ইখতিলাক রয়েছে। কুফাবাসী ও শাফি‘ঈর সর্বাধিক সহীহ অভিমত হলো কিসাস ওয়াজিব নয়। মূলত দিয়াত ওয়াজিব।

কসামাহ্-এর ক্ষেত্রে কারা কসম করবে এই নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ (রহঃ) এবং জুমহূরের মত হলো নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস পঞ্চাশজনের কসম করা ওয়াজিব। তারা এই সহীহ হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর এতে অভিযোগকারীর কসম শুরু করার ব্যাপারটি স্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে। এটা অনেক সহীহ সানাদ দ্বারা প্রমাণিত, যা প্রত্যাখ্যাতযোগ্য নয়।

ইমাম মালিক বলেনঃ নব্য ও পুরাতন ইমামগণ অভিযোগকারীগণের কসম শুরু করবে মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

হাদীস বিশারদগণ বলেনঃ যেসব বর্ণনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কসম শুরু করার কথা বর্ণিত হয়েছে তা সংশয়মুক্ত নয়। কেননা অভিযোগকারীর কসম দ্বারা কসামাহ্ শুরু হবে, এমন বর্ণনায় যে زيادة রয়েছে তা বহুল প্রসিদ্ধ সানাদ দ্বারা সহীহ। সুতরাং তার উপর ‘আমল করা ওয়াজিব।

‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবলরূপে আবির্ভূত না হয় ততক্ষণ শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে কিসাস এবং দিয়াত ওয়াজিব নয়।

আবার তারা কসামাহ্ ওয়াজিবকারী গ্রহণযোগ্য সংশয় সম্পর্কে মতভেদ করেছেন এর সাতটি সুরত যা নিম্নে বর্ণিত হলো।

(১) নিহত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় বলবে دَمِىْ عِنْدَ فُلَانٍ আমার রক্তমূল্য তার নিকটে, যে আমাকে হত্যা করেছে অথবা যে আমাকে প্রহার করেছে। যদিও তার কোনো চিহ্ন না থাকে।

(২) হত্যার পর্যবেক্ষণের স্পষ্ট দলীল ব্যতীত দুর্বল প্রমাণ থাকলে। যেমন শুধু একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রদান। অথবা একদল লোক সাক্ষ্য যারা ন্যায়বান নয়।

(৩) যখন দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আঘাতের সাক্ষ্য দেয়, অতঃপর বেঁচে থাকে, অতঃপর এটা থেকে জ্ঞানহীন হওয়ার আগে মারা যায়।

(৪) নিহতের নিকটে অথবা পাশে অথবা তার দিক থেকে আসা সন্দিহান ব্যক্তির প্রস্থান করা অথবা তার সাথে অস্ত্র-শস্ত্র থাকা। অথবা তার সাথে অন্যের রক্ত মাখানো চিহ্ন বিদ্যমান থাকা। আর সেখানে হিংসপ্রাণী বা অন্য কিছু না থাকা যাতে তার ওপর হত্যার সূত্র সংযুক্ত করা যায়।

(৫) দু’টি দলের যুদ্ধ হওয়া, অতঃপর তাদের কারো মাঝে নিহত ব্যক্তিকে পাওয়া।

(৬) নিহত ব্যক্তিকে মানুষের ভীড়ের মধ্যে পাওয়া।

(৭) কোনো গোত্রের মধ্যে অথবা কোনো সম্প্রদায়ের মহল্লায় বা অঞ্চলে নিহত ব্যক্তিকে পাওয়া।

(فَتُبْرِئُكُمْ يَهُودُ بِخَمْسِينَ يَمِينًا) অর্থাৎ তারা তোমাদের অভিযোগ থেকে পঞ্চাশজনের কসমের মাধ্যমে তোমাদের নিকট থেকে দায়মুক্ত হবে। এতে কাফির ও ফাসিক ব্যক্তির কসম শুদ্ধ হওয়ার দলীল রয়েছে। (শারহে মুসলিম ১১তম খন্ড, হাঃ ১৬৬৯)