হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৩০৪

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩০৪-[১] সাহল ইবনু সা’দ আস্ সা’ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উওয়াইমির আল আজলানী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কোনো ব্যক্তি যদি স্বীয় স্ত্রীর সাথে অপর পুরুষকে (ব্যভিচারে) দেখতে পায় এবং সে যদি (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকে হত্যা করে বসে, তবে কি নিহতের আত্মীয়স্বজন তাকে হত্যা করবে? (আর এরূপ যদি না করে) তবে সে (স্বামী) কি করবে (অর্থাৎ- এই ব্যভিচারের কারণে তার করণীয় কি)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার এবং তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে ওয়াহী নাযিল হয়েছে, ’যাও তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আসো’। বর্ণনাকারী সাহল বলেন, অতঃপর তারা উভয়ে মসজিদে এসে লি’আন করল, আমিও অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে উপস্থিত থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলাম।

অতঃপর উভয়ে যখন লি’আন শেষ করল, তখন ’উওয়াইমির বলল, আমি যদি তাকে আমার বিবাহের বন্ধনে রাখি, তাহলে আমি তার ওপর মিথ্যারোপ করেছি, এটা বলে সে তাকে তিন তালাক প্রদান করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি স্ত্রী লোকটি কালো রংয়ের এবং কালো চক্ষুবিশিষ্ট, বড় বড় নিতম্ব, মোটা মোটা পা-বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে মনে করতে হবে ’উওয়াইমির তার সম্পর্কে সত্য বলেছেন। আর যদি রক্তিম বর্ণের ক্ষুদ্রাকৃতির কীটের ন্যায় সন্তান প্রসব করে, তবে মনে করব ’উওয়ামির মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর স্ত্রীলোক এমন বর্ণের সন্তান প্রসব করল যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা দিয়েছিলেন- সে সেরূপ সন্তানই প্রসব করল।’ এর দ্বারা ’উয়াইমির-এর দাবির সত্যতার ধারণা জন্মে, অতঃপর সন্তানটিকে (পিতার পরিবর্তে) মায়ের পরিচয়ে ডাকা হতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ قَالَ: إِن عُوَيْمِر الْعَجْلَانِيَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رَجُلًا وجدَ معَ امرأتِهِ رجُلاً أيقْتُلُه فيَقْتُلُونه؟ أمْ كَيفَ أفعل؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قدْ أُنْزِلُ فِيكَ وَفِي صَاحِبَتِكَ فَاذْهَبْ فَأْتِ بِهَا» قَالَ سَهْلٌ: فَتَلَاعَنَا فِي الْمَسْجِدِ وَأَنَا مَعَ النَّاسِ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا فَرَغَا قَالَ عُوَيْمِرٌ: كَذَبْتُ عَلَيْهَا يَا رسولَ اللَّهِ إِن أَمْسكْتُها فطلقتها ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: انْظُرُوا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَسْحَمَ أَدْعَجَ الْعَيْنَيْنِ عَظِيمَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقَيْنِ فَلَا أَحسب عُوَيْمِر إِلَّا قَدْ صَدَقَ عَلَيْهَا وَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أُحَيْمِرَ كَأَنَّهُ وَحَرَةٌ فَلَا أَحْسِبُ عُوَيْمِرًا إِلَّا قَدْ كَذَبَ عَلَيْهَا فَجَاءَتْ بِهِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ تَصْدِيقِ عُوَيْمِرٍ فَكَانَ بَعْدُ يُنْسَبُ إِلَى أمه

ব্যাখ্যা: ‘‘লি‘আন’’ অর্থাৎ একে অপরে অভিশাপ দেয়া। ইমাম নববী লিখেন, ‘‘লি‘আন’’-কে লি‘আন বলার কারণ হলো, স্বামী স্ত্রী উভয় এর মাধ্যমে একে অপর থেকে দূরে সরে যায় এবং তাদের মাঝে বিবাহ চিরস্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। ফাতহুল বারীতে লিখেন, লি‘আনকে এজন্য লি‘আন বলা হয় যেহেতু স্বামী বলে, ‘‘আমার ওপর আল্লাহর লা‘নাত, যদি আমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হই।’’

(قدْ أُنْزِلُ فِيكَ وَفِىْ صَاحِبَتِكَ فَاذْهَبْ فَأْتِ بِهَا) অর্থাৎ তোমার ও তোমার স্ত্রীর বেলায় হুকুম অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তুমি যাও, গিয়ে তাকে নিয়ে এসো।
লি‘আনের বিধান সংক্রান্ত আয়াত কার বেলায় নাযিল হয়- এ নিয়ে ‘উলামাহ্ কিরামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে লি‘আনের বিধান সংক্রান্ত আয়াত ‘উওয়াইমির আল ‘আজলানীর বেলায় নাযিল হয়। বর্ণিত হাদীসটি তাদের মতের পক্ষে দলীল। তবে জুমহূর বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিমের মতে হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর ঘটনা কেন্দ্র করে লি‘আনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। কেননা সহীহ মুসলিমে হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর ঘটনার বিবরণে রয়েছে, (وَكَانَ أَوَّلَ رَجُلٍ لَاعَنَ فِي الْإِسْلَامِ) অর্থাৎ ‘‘তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামে লি‘আন করেন।’’

বর্ণনার মাঝে উভয় সম্ভাবনা থাকায় ‘আল্লামা ইবনু হাজার লিখেন, ‘‘আমি বলি, যথাসম্ভব উভয়ের বেলায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্ভবত উভয়ের প্রশ্ন পাশাপাশি দুই সময়ে সময়ে ছিল। তাই উভয়ের বেলায় লি‘আনের আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে, যদিও হিলালের ঘটনা আগের। তাই ‘উওয়াইমির-এর বেলায় অবতীর্ণ হয়েছে বা হিলাল ইবনু উমাইয়াহ্-এর অবতীর্ণ হয়েছে উভয় কথায়ই সঠিক। তবে হিলাল প্রথমে লি‘আনের বিধান কার্যকর করেছেন। লি‘আন কিভাবে করতে হবে তার বিবরণ লি‘আন সংক্রান্ত আয়াত অর্থাৎ সূরা আন্ নূর-এর ৪ নং আয়াতে রয়েছে।
 

(فَطَلَّقَهَا ثَلَاثًا) অতএব আমি তাকে তিন তালাক দেই। হাদীসের এই অংশ থেকে বুঝা যায়, লি‘আন সংঘটিত হয়ে গেলে কেবল লি‘আনে বিচ্ছেদ ঘটবে না। কেবল লি‘আনে বিচ্ছেদ ঘটলে তালাক দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। হয় তালাক দিতে হবে অথবা কাযী বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবে। পরবর্তী বিবরণে আমরা দেখব যে, (فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا) অর্থাৎ অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন। এর আলোকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে স্বামীর তালাক বা কাযীর ফায়সালা ছাড়া বিচ্ছেদ ঘটবে না।

তবে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈসহ জুমহূর ‘উলামার মতে কেবল লি‘আনেই বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। কেননা পরবর্তীতে আরেকটি সহীহ বর্ণনায় আমরা দেখব যে, স্বামী স্ত্রী উভয়ে লি‘আন করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ «حسابكما على الله أحدكما كاذب لا سبيل لك عليها» অর্থাৎ তোমাদের হিসাব আল্লাহ তা‘আলার ওপর, তোমাদের একজন মিথ্যা, তোমার জন্য স্ত্রীকে পাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, লি‘আনের মাধমেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার পর কাযী তাদেরকে ভালোভাবে পৃথক করে দিবেন। বিচ্ছেদ ঘটার কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরক পৃথক করে দিয়েছেন। আর ‘উওয়াইমির নিজ থেকে আবার তালাক দেয়ার কারণে বিচ্ছেদ ঘটেনি এর কোনো ইঙ্গিত হাদীসে নেই। হয়ত তার অতিরিক্ত ঘৃণাবোধ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তিনি অধিক সতর্কতাবশত তিন তালাক দিয়ে দেন, যাতে কোনো সময় এই স্ত্রীকে সংসারে নিয়ে আসার আর কোনো ধরনের সুযোগ বের না হয়।
(ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৪৫; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৯২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ