হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩০০৮

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

الْعَطَايَا শব্দটি عطية এর বহুবচন, উদ্দেশ্য শাসনকর্তাদের দান, তাদের অনুদান। গাযালী (রহঃ) ’’মিনহাজুল আবিদীন’’ গ্রন্থে বলেন, আপনি বলুন : এ সময়ে আপনি বাদশাহদের পুরস্কার গ্রহণে কি বলবেন? তাহলে জেনে রাখুন! এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছে। এক সম্প্রদায় বলেছে, প্রত্যেক ঐ সকল বস্তু যে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হারাম, ব্যক্তির পক্ষে তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। অন্যরা বলেন, যে বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হালাল তা গ্রহণ না করাই উত্তম। কেননা এ যুগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদশাহদের সম্প্রদায়ের সাথে হারাম মিশে আছে এবং হালাল তাদের হাতে নেই, আর থাকলে অতি নগণ্য। অন্য সম্প্রদায় বলেন, বাদশাহদের অনুদানের ব্যাপারে যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে, তা হারাম, তখন তা ধনী, দরিদ্র সকলের জন্য বৈধ হবে, দায়ভার কেবল দাতার ওপর বর্তাবে। তারা বলে কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসকান্দারিয়ার বাদশাহ মুকাওকিসের উপটৌকন গ্রহণ করেছিলেন, আল্লাহ তা’আলার أَكَّالُونَ لِلسُّحْتِ ’’তারা হারাম খেতে অভ্যস্ত’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪২) এ বাণী সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের থেকে ধার গ্রহণ করেছিলেন। তারা বলেন, নিঃসন্দেহে সাহাবীদের একটি দল অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো পেয়েছে। এমতাবস্থায় তারা তাদের থেকে ধার গ্রহণ করেছে, তাদের মাঝে রয়েছে আবূ হুরায়রাহ্, ইবনু ’আব্বাস, ইবনু ’উমার এবং আরো অনেকে। আর একদল বলেন, তাদের সম্পদ হতে সামান্যতম হালাল হবে না, ধনীর জন্যও না দরিদ্রের জন্যও না, কেননা তারা অন্যায় অবিচারের মাধ্যমে চিহ্নিত। তাদের সম্পদের অধিকাংশ হারাম, আর হুকুম অধিকাংশের জন্যই বর্তায়।

সুতরাং এ থেকে সে যেন আবশ্যকীয়ভাবে বিরত থাকে। অন্য এক দল বলেন, যে বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হারাম তা শুধুমাত্র দরিদ্রের জন্য হালাল। তবে দরিদ্র যদি জানে যে, তা হুবহু ছিনতাই করা সম্পদ, তখন সে সম্পদ একমাত্র মালিকের নিকট ফেরত দেয়া ছাড়া তার পক্ষে তা গ্রহণ করার সুযোগ নেই। বাদশাহর সম্পদ হতে গ্রহণ করাতে দরিদ্রের ওপর সংকীর্ণতা নেই, অতঃপর ফাকীরকে যদি দান করা হয়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে দরিদ্রের পক্ষে গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। আর যদি তা মালে ফাই অথবা ভূমিকর অথবা উশর হয়, তাহলে সেখানে ফাকীরের অধিকার থাকবে অনুরূপভাবে বিদ্বানগণের জন্য। ’আলী বিন আবূ ত্বালিব বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্যের সাথে ইসলামে প্রবেশ করবে এবং প্রকাশ্য কুরআন পাঠ করবে, তার জন্য প্রত্যেক বছর বায়তুল মালে দু’শত দিরহাম থাকবে। এক বর্ণনাতে দু’শত দীনারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যদি দুনিয়াতে তা গ্রহণ না করে তাহলে পরকালে তা গ্রহণ করবে। আর বিষয়টি যখন এমনই তখন ফাকীর এবং বিদ্বান নিজ অধিকার হতে গ্রহণ করবে। তারা বলেন, সম্পদ যখন ছিনতাই করা সম্পদের সাথে মিশ্রিত হবে, তাকে আলাদা করা সম্ভব হবে না অথবা সম্পদ যখন ছিনতাই করা সম্পদ হবে তা মালিকের কাছে এবং মালিকের উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হবে, তখন বাদশাহর পক্ষে তা দান করে দেয়া ছাড়া তা হতে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ এমন নন যে, তাকে দরিদ্রের ওপর দান করতে আদেশ করবেন এবং দরিদ্রকে তা গ্রহণ করতে নিষেধ করবেন অথবা তা গ্রহণ করতে অনুমতি দিবেন অথচ তা তার ওপর হারাম। সুতরাং দরিদ্রের তা গ্রহণের সুযোগ আছে, তবে যদি হুবহু ছিনতাই করা এবং হারাম সম্পদ হয় তাহলে তার জন্য তা গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩০০৮-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। ’উমার খায়বার যুদ্ধে (গনীমাতের) একখন্ড জমিন লাভ করলেন। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি খায়বারে একখন্ড জমিন লাভ করেছি, তার চেয়ে উত্তম সম্পদ আমি আর কক্ষনো লাভ করিনি। হে আল্লাহর রসূল! এখন আমাকে এতে কি করতে বলেন? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনি যদি চান তবে এর মূলস্বত্ব রক্ষা করে লভ্যাংশ দান করে দিতে পারেন। তাই ’উমার তা এরূপে দান করলেন যে, তার মূল বিক্রি করা যাবে না, হেবা (দান) করা যাবে না এবং তাতে উত্তরাধিকার প্রবর্তিত হবে না। তা (হতে উৎপাদিত ফল-ফসল) দান করা হবে অভাবগ্রস্তদের মাঝে, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে, দাসমুক্তকরণে, আল্লাহর পথে (জিহাদে), মুসাফিরদের জন্য ও মেহমানদের জন্য। যে উক্ত জমিনের মুতাওয়াল্লী হবে সে জমা না করে তা হতে ন্যায্যভাবে খেতে বা (নিজ পরিবারকে) খাওয়াতে পারবে। এতে কোনো দোষ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ أَصَابَ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِي مِنْهُ فَمَا تَأْمُرُنِي بِهِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا» . فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ: إِنَّهُ لَا يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلَا يُوهب وَلَا يُورث وَتصدق بهَا فِي الْفُقَرَاءِ وَفِي الْقُرْبَى وَفِي الرِّقَابِ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَالضَّيْفِ لَا جُنَاحَ عَلَى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوفِ أَوْ يُطْعِمَ غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ قَالَ ابْنُ سِيرِينَ: غير متأثل مَالا

ব্যাখ্যা: (فَمَا تَأْمُرُنِىْ بِه؟) অর্থাৎ- এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ করছেন? কেননা আমি তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে ইচ্ছা করেছি, এমবতাবস্থায় আমি জানি না কোন্ পন্থায় তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করব।

(وَتَصَدَّقْتَ بِهَا) অর্থাৎ- সে জমির আয়, অর্জিত শস্যদানা ও ফলফলাদি দান কর। (لَا يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلَا يُوْهَبُ وَلَا يُوْرَثُ وَتُصُدِّقَ بِهَا فِى الْفُقَرَاءِ) অর্থাৎ- সে জমির আয় হতে অর্জিত বস্তু দরিদ্রদের মাঝে দান করে দিতে হবে, তথা মদীনার নিঃস্বদের মাঝে অথবা আহলে সুফ্ফার মাঝে কিন্তু সে জমি বিক্রয় ও দান করা নিষিদ্ধ।

(وَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى) উদ্দেশ্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী, অথবা তাঁর নিজের নিকটবর্তী, তবে বাহ্যিক দিক হলো- তাদের ধনী, দরিদ্র সকলে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (وَفِى الرِّقَابِ) অর্থাৎ- ঐ সকল দাস যারা তাদের ঋণ আদায়ের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ এবং এর বিনিময়ে দাসদেরকে ক্রয় করে তাদেরকে মুক্ত করে দেয়াও উদ্দেশ্য হতে পারে। (وَفِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) নিবেদিত যোদ্ধা বা হাজী (وَابْنِ السَّبِيلِ) মুসাফির ব্যক্তি, যদিও তিনি নিজ দেশে ধনী হন।

(قَالَ ابْنُ سِيرِينَ - رَحِمَهُ اللّٰهُ تَعَالٰى - : غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالًا) অর্থাৎ- তা থেকে নিজের জন্য কোনো পুঁজি জমাবেন না। নববী (রহঃ) বলেন, এতে ওয়াক্ফের মৌলিকভাবে বিশুদ্ধতার ব্যাপারে দলীল আছে। আর তা জাহিলী কালিমাসমূহের বিরোধী। আর মুসলিমগণ ঐ ব্যাপারে একমত। এতে আরও আছে- ওয়াক্ফ করা বস্তু বিক্রি করা যায় না, দান করা যায় না এবং তার উত্তাধিকারীও হওয়া যায় না। তাতে কেবল ওয়াকফকারীর শর্তানুপাতে উপকার লাভ করা যায়। এতে ওয়াকফকারীর শর্তসমূহ বিশুদ্ধ। আরও রয়েছে ওয়াকফের মর্যাদা আর তা হলো চলমান দান। আরো রয়েছে ঐ বস্তু দান করা শ্রেষ্ঠ যা ব্যক্তি ভালোবাসে। ‘উমার (রাঃ)-এর প্রকাশ্য শ্রেষ্ঠত্ব, বিভিন্ন বিষয়ে কল্যাণকামী ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীর পরামর্শের শ্রেষ্ঠত্ব, কল্যাণের পন্থাসমূহ। এতে আরও আছে, খায়বার অঞ্চল বলপূর্বক বিজয় করা হয়েছিল এবং বিজয়ীরা তার মালিক হয়েছিল, তা বণ্টন করেছিল, তাদের অংশসমূহের উপর তাদের মালিকানা অব্যাহত ছিল। আরও আছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা এবং তাদের জন্য ওয়াকফ করার মর্যাদা। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬৩৩)