হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৮২৭

পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য

(৩৮২৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনী ইস্রাঈলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে সেখানে নামায পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (দুটিই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দিই, তার সুমতি দাও)।’

সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ’জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ’জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদ্দুআ দিয়ে) বলল, ’হে আল্লাহ! বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’

বনী ইসরাঈল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপসৌন্দর্য ছিল। সে বলল, ’তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, ’এটি জুরাইজের সন্তান।’ সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম হতে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, ’কি ব্যাপার তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা বলল, ’তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে।’

সে বলল, ’সন্তানটি কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, ’আমাকে নামায পড়তে দাও।’ সুতরাং সে নামায পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ’ওহে শিশু! তোমার পিতা কে?’ সে জবাব দিল, ’অমুক রাখাল।’ অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলৌকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও (বরকত নিতে) স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, ’আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব।’ সে বলল, ’না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’ সুতরাং তারা তাই করল।

(তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনী ইস্রাঈলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারীতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দু’আ ক’রে বলল, ’হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’ শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ’হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ’তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল, ’হাসবিয়াল্লাহু অনি’মাল অকীল।’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।) তা দেখে মহিলাটি দু’আ করল, ’হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’

ছেলেটি সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, ’হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ অতঃপর মাবেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, ’একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কি?)’ শিশুটি বলল, ’(তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ ثَلاثَةٌ : عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً عَابِداً فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي فَأقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَلَمَّا كَانَ مِنْ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي فَأقْبَلَ عَلَى صَلاَتِهِ فَقَالَتْ : اَللّٰهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتّٰـى يَنْظُرَ إِلَى وُجُوهِ المُومِسَاتِ فَتَذَاكَرَ بَنُو إسْرائِيل جُرَيْجاً وَعِبَادَتَهُ وَكَانَتِ امْرَأةٌ بَغِيٌّ يُتَمَثَّلُ بحُسْنِهَا فَقَالَتْ : إنْ شِئْتُمْ لأَفْتِنَنَّهُ فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَيْهَا فَأتَتْ رَاعِياً كَانَ يَأوِي إِلَى صَوْمَعَتِهِ فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوقَعَ عَلَيْهَا فَحَمَلَتْ فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَتْ : هُوَ مِنْ جُريج فَأتَوْهُ فَاسْتَنْزَلُوهُ وَهَدَمُوا صَوْمَعَتَهُ وَجَعَلُوا يَضْرِبُونَهُ فَقَالَ : مَا شَأنُكُمْ ؟ قَالُوا : زَنَيْتَ بهذِهِ البَغِيِّ فَوَلَدَتْ مِنْكَ قَالَ : أيْنَ الصَّبيُّ ؟ فَجَاؤُوا بِهِ فَقَالَ : دَعُوني حَتّٰـى أصَلِّي فَصَلَّى فَلَمَّا انْصَرفَ أتَى الصَّبيَّ فَطَعنَ في بَطْنِهِ وَقالَ : يَا غُلامُ مَنْ أبُوكَ ؟ قَالَ : فُلانٌ الرَّاعِي فَأَقْبَلُوا عَلَى جُرَيْجٍ يُقَبِّلُونَهُ وَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ وَقَالُوا : نَبْنِي لَكَ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَب قَالَ : لاَ أعِيدُوهَا مِنْ طِينٍ كَمَا كَانَتْ فَفَعلُوا وبَينَا صَبِيٌّ يَرْضَعُ منْ أُمِّهِ فَمَرَّ رَجُلٌ رَاكِبٌ عَلَى دَابَّةٍ فَارِهَةٍ وَشَارَةٍ حَسَنَةٍ فَقَالَتْ أُمُّهُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَل ابْنِي مِثْلَ هٰذَا فَتَرَكَ الثَّدْيَ وَأقْبَلَ إِلَيْهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ ثُمَّ أقْبَلَ عَلَى ثَدْيه فَجَعَلَ يَرتَضِعُ فَكَأنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُول الله ﷺ وَهُوَ يَحْكِي ارْتضَاعَهُ بِأصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ في فِيه فَجَعَلَ يَمُصُّهَا قَالَ وَمَرُّوا بِجَارِيَةٍ وَهُم يَضْرِبُونَهَا ويَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ وَهِيَ تَقُولُ : حَسْبِيَ اللهُ ونِعْمَ الوَكِيلُ فَقَالَتْ أمُّهُ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَل ابْنِي مِثْلَهَا فَتَركَ الرَّضَاعَ ونَظَرَ إِلَيْهَا فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مثْلَهَا فَهُنَالِكَ تَرَاجَعَا الحَديثَ، فَقَالَتْ : مَرَّ رَجُلٌ حَسَنُ إِلٰهَيْئَةِ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهُ فَقُلْتَ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ وَمَرُّوا بهذِهِ الأمَةِ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا وَيَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ فقلتُ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهَا فَقُلْتَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا قَالَ : إنَّ ذلك الرَّجُل كَانَ جَبَّاراً فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ لا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ وَإنَّ هذِهِ يَقُولُونَ : زَنَيْتِ وَلَمْ تَزْنِ وَسَرقْتِ وَلَمْ تَسْرِقْ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ