হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
২৬৪৪

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরবানীর পশুর বর্ণনা

২৬৪৪-[১৮] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কুরবানী করে, তৃতীয় দিনের পর সকালেও যেন তার ঘরে কুরবানীর মাংসের কিয়দংশও অবশিষ্ট না থাকে। রাবী (সালামাহ্) বলেন, পরবর্তী বছর আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা গত বছর যা করেছি এ বছরও কি সেভাবে করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; তোমরা খাও, অন্যদরকেও খাওয়াও এবং (যদি ইচ্ছা কর তবে) জমা করে রেখো। কারণ গত বছর তো মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে ছিল। আর তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাদের সাহায্য করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَنْ ضَحَّى مِنْكُمْ فَلَا يُصْبِحَنَّ بَعْدَ ثَالِثَةٍ وَفِي بَيْتِهِ مِنْهُ شَيْءٌ» . فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَفْعَلُ كَمَا فَعَلْنَا الْعَامَ الْمَاضِي؟ قَالَ: «كُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا فَإِنَّ ذَلِكَ الْعَامَ كَانَ بِالنَّاسِ جَهْدٌ فَأَرَدْتُ أَنْ تُعِينُوا فِيهِمْ»

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদের তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) জমা করে রাখতে নিষেধ করেছেন, কারণ সে বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ায় মদীনার আশেপাশের গ্রাম্য লোকেরা মদীনায় এসে আশ্রয় নিলে তিনি তাদেরকে সহযোগিতার উদ্দেশে এ আদেশ দিলেন। পরবর্তী বছর মানুষেরা এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, সে হুকুম দুর্ভিক্ষের কারণে ছিল বরং তোমরা নিজেরা খাও, অপরকে খাওয়াও এবং পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (كُلُوْا) (তোমরা খাও) টি আমরের (আদেশসূচক) বাক্য। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, যারা বলেন যে কুরবানীর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) থেকে খাওয়া আবশ্যক তারা এটিকে নিজেদের দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে। তবে এতে তাদের পক্ষের দলীল নেই। কারণ যখন আমরের সীগাহ্ হাযর বা নিষেধসূচক বাক্যের পরে আসবে তখন তা মুবাহের অর্থ দিবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কুরবানীর গোশত (গোসত/গোশত) থেকে খাওয়া মুস্তাহাব। আর জমহূর ‘আলিমগণ এ ‘আমলটিকে মানদূব বা মুবাহের অর্থে গ্রহণ করেছেন।

খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মুত্বলাক্ব হাদীসসমূহ প্রমাণ করে যে, কুরবানীর গোশত খাওয়ার পরিমাণের ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। আর কুরবানী দাতার জন্য কুরবানীর গোশতের কিছু অংশ খাওয়া আর বাকীটুকু সাদাকা এবং হাদিয়্যাহ্ করা মুস্তাহাব।

ইমাম শাফি‘ঈর বর্ণনা হলো কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগে বিভক্ত করা মুস্তাহাব। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নিজেরা খাও, অপরকে খাওয়াও আর সাদাকা কর। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেছেন, ইমাম শাফি‘ঈ ছাড়া অন্যরা বলতেন অর্ধেক নিজে খাওয়া আর বাকী অর্ধেক অপরকে খাওয়ানো মুস্তাহাব। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, জমহূরের মত হলো কুরবানীর গোশত থেকে খাওয়া আবশ্যক নয়। এ ক্ষেত্রে আদেশটি অনুমতির জন্য। আর তার থেকে সাদাকা করার বিষয়ে সঠিক বক্তব্য হলো যতটুকু করলে সাদাকা বুঝাবে ততটুকু করা আবশ্যক। তবে বেশি অংশ সাদাকা করাই উত্তম। ইবনু হাযম (রহঃ) তার ‘মুহাল্লা’ নামক গ্রন্থে বলেন, প্রত্যেক কুরবানীদাতার ওপর আবশ্যক হলো, সে তার কুরবানীর গোশত হতে এক লোকমা হলেও খাবে এবং কম হোক বা বেশি হোক সাদাকা করবে। তবে তার থেকে ধনী, কাফিরদের খাওয়ানো এবং উপঢৌকন দেয়া মুবাহ।

ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর ‘‘আল মুগনী’’ নামক গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, আমরা ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীসকে গ্রহণ করব। যেখানে বর্ণিত আছে কুরবানীদাতা এক তৃতীয়াংশ খাবে। এক তৃতীয়াংশ যাকে খুশি খাওয়াবে, আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদের সাদাকা করবে। ‘আলক্বমাহ্ (রহঃ) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ) আমাকে একটি হাদীয়াহ দিয়ে প্রেরণ করে বললেন, যেন আমি এক তৃতীয়াংশ খাই, এক তৃতীয়াংশ তার ভাই ‘উতবাহ্’র পরিবারে প্রেরণ করি আর বাকী এক-তৃতীয়াংশ সাদাকা করি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কুরবানী এবং হাদীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ তোমার, এক তৃতীয়াংশ তোমার পরিবারের আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদের। আদ্ দুররুল মুখতারের লেখক বলেন, কুরবানীর গোশত থেকে খাবে, ধনীদের খাওয়াবে এবং জমা করে রাখবে তবে সাদাকা এক-তৃতীয়াংশের কম না হওয়ায় ভাল।

ভাষ্যকার ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, ‘উলামাহগণ فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيْرَ (সূরা আল হজ্জ/হজ ২২ : ২৮) আয়াতে খাওয়ার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তার হুকুম নিয়ে মতবিরোধ করেছেন যে, তা ওয়াজিব না মুস্তাহাব। জমহূরের মতে, আয়াতদ্বয়ে ‘আমর বা খাওয়ার আদেশ দ্বারা উদ্দেশ্য মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ইবনু কাসীর, ইবনু জারীর এবং কুরতুবী (রহঃ) সকলেই তাদের তাফসীরে আয়াতদ্বয়ের আমরের দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য এই তাফসীর করেছেন। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, খাওয়া আবশ্যক এ বক্তব্যটি বিরল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ