হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
১৩৫৪

পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

এখানেبَابُ الْجُمُعَةِ (জুমু’আহ্ অধ্যায়) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমু’আর দিনের ফাযীলাত ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, الْجُمُعَةِ শব্দের ج এবং م বর্ণদ্বয়ে পেশ যোগে পড়া যাবে এবং م এ সাকিন এবং যবর যোগেও পড়া যাবে। এ দিনে মানুষ সালাত আদায়ের জন্য একত্রিত হয় বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে(يَوْمُ الْجُمُعَةِ) বা একত্রিত হওয়ার দিন। আর জাহিলী যামানায় জুমু’আর দিনকে বলা হত ’’আরুবাহ্’’।

ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) জুমু’আর দিনটা ইসলামী নাম, এটি জাহিলীতে ছিল না। নিশ্চয় জাহিলী যুগে এর নাম ছিল ’’আরবাহ্’’। ইসলামী যুগে লোকজন এ দিনে সালাতে একত্রিত হওয়ার কারণে الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) বলে নামকরণ করা হয়। এরই সমর্থনে ’আবদ ইবনু হুমায়দ তাঁর তাফসীরে ইবনু সীরীন থেকে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা করেছেন সে ঘটনা, যাতে আস্ওয়াদ ইবনু যুরারার সাথে আনসারগণ একত্রিত হয়েছিল। আর তারা জুমু’আর দিনকে ’’আরুবাহ্’’ বলত, অতঃপর তিনি তাদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তাদের সাথে আলোচনা করলেন। অতঃপর তারা যখন এ দিনে জমায়েত হয়েছিল তখন এ দিনের নামকরণ করল ’’জুমু’আর দিন’’।

কেউ বলেছেন, এ দিনে সকল সৃষ্টিকুলকে একত্রিত করা হবে বিধায় এ দিনের নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে। কেউ বলেছেন এ দিনে আদম (আঃ) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনে একত্রিত করা হয়েছে বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে। যেমন- এ মতের সমর্থনে সালমান (রাঃ)বর্ণিত হাদীস আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ্ সংকলন করেছেন এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত এর সমর্থনে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা রয়েছে এবং হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) এ মতকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন।

কেউ বলেছেনঃ যেহেতু এ দিনে কা’ব ইবনু লুয়াই তার ক্বওমের লোকদেরকে একত্রিত করত ও হারাম মাসগুলোর সম্মান রক্ষার নির্দেশ দিত বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে।

যা হোক ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) তার ’’আল হুদা’’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১০২-১১৮ পৃষ্ঠায় জুমু’আর দিনের ৩৩টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, যার কতক হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন।


১৩৫৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা দুনিয়ার শেষের দিকে এসেছি। তবে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মর্যাদার দিক থেকে আমরা সবার আগে থাকব। তাছাড়া ইয়াহূদী নাসারাদেরকে আমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে পরে। অতঃপর এ ’জুমু’আর দিন’ তাদের উপর ফরয করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে মতভেদ করলে আল্লাহ তা’আলা ওই দিনটির ব্যাপারে আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। এ লোকেরা আমাদের অনুসরণকারী। ইয়াহূদীরা আগামীকালকে অর্থাৎ ’শনিবারকে’ গ্রহণ করেছে। আর নাসারারা গ্রহণ করেছে পরশুকে অর্থাৎ ’রবিবারকে’। (বুখারী, মুসলিম)

কিন্তু মুসলিমের এক রিওয়ায়াতে সেই আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমরাই (পরবর্তীরাই) প্রথম হব। অর্থাৎ যারা জান্নাতে গমন করবে তাদের মধ্যে আমরা প্রথম হব। অতঃপর (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর) পার্থক্য এই যে, বাক্য হতে শেষ পর্যন্ত পূর্ববৎ বর্ণনা করেন।[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَحْنُ الْآخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الْكُتَّابَ مِنْ قَبْلِنَا وَأُوتِينَاهُ من بعدهمْ ثمَّ هَذَا يومهم الَّذِي فرض عَلَيْهِم يَعْنِي يَوْم الْجُمُعَةَ فَاخْتَلَفُوا فِيهِ فَهَدَانَا اللَّهُ لَهُ وَالنَّاسُ لَنَا فِيهِ تَبَعٌ الْيَهُودُ غَدًا وَالنَّصَارَى بَعْدَ غَد» وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «نَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَنَحْنُ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ بيد أَنهم» . وَذكر نَحوه إِلَى آخِره

ব্যাখ্যা: হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, আমরা যামানাগত দিক সর্বশেষ এবং ক্বিয়ামাতে মর্যাদার দিক দিয়ে আমরাই প্রথম। এখানে মূল উদ্দেশ্য হলোঃ এ উম্মাতগণ দুনিয়াতে তাদের উপস্থিতির ক্ষেত্রে অতীতের সকল উম্মাতের শেষে, কিন্তু আখিরাতে সবার অগ্রবর্তী হবে। কারণ সর্বপ্রথম যারা হাশর, হিসাব, বিচার এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে তারাই হলো এ উম্মাত বা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাত। আর সে দিনটি হলো জুমু‘আর দিন। (يومهم الَّذِي فرض) ইবনু হাজার বলেন এখানে يوم দ্বারা (يوم الجمعة) বা জুমু‘আর দিন উদ্দেশ্য আর فرض দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এ দিনের সম্মান, যেমন সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পরবর্তীদের জুমু‘আর দিন থেকে পথভ্রষ্ট করেছেন।’’

আল্লামা ক্বাসত্বালানী (রহঃ) বলেনঃ আবূ হাতিম (রহঃ) সানাদী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ ইয়াহূদীদের ওপর জুমু‘আহ্ (শুক্রবারে) ফরয করলেন অতঃপর তারা তা অস্বীকার করল এবং তারা বলল, হে মূসা! আল্লাহ তা‘আলা তো শনিবারে কিছুই সৃষ্টি করেননি কাজেই সে দিনটি আমাদের নির্ধারণ করে দাও। অতঃপর তিনি তাদের ওপর তা নির্ধারণ করলেন।

কুসত্বালানী (রহঃ) বলেনঃ তাদের ওপর জুমু‘আর দিন নির্ধারণ হওয়ার পর এবং উক্ত দিবসের সম্মান করার নির্দেশপ্রাপ্ত হওয়ার পর তারা তা পরিত্যাগ করল এবং তারা তাদের ক্বিয়াসকেই প্রাধান্য দিলো। অতঃপর তারা শনিবারকে সম্মান করা শুরু করল, এ দিনে (শনিবার) সৃষ্টি থেকে অবসর গ্রহণের কারণে এবং তারা (ইয়াহূদীরা) ধারণা করল যে, এ দিন বড় ফাযীলাতের দিন, এ দিনকে সম্মান করা তাদের ওপর ওয়াজিব এবং তারা বলে যে, এ দিনে আমরা ‘আমলের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করি ও ‘ইবাদাতে ব্যস্ত থাকি। আর নাসারাগণ রবিবারের দিনকে সম্মান করত, কারণ এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির সূচনা করেছেন, কাজেই (তাদের যুক্তি) এ দিন সম্মানের সর্বাধিক হকদার।

এ দিনের (জুমু‘আর দিন শুক্রবার) সম্মানের ক্ষেত্রে ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পথ দেখিয়েছে যেমন- ‘আবদুর রাযযাক্ব (রহঃ) বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, মদীনাহবাসীগণ একত্রিত হলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনায় আগমন ও জুমু‘আর দিন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। অতঃপর আনসারগণ বললেন যে, ইয়াহূদীদের একটি দিন রয়েছে প্রতি সপ্তাহে তারা সেদিনে একত্রিত হয় এবং নাসারাদেরও অনুরূপ দিন রয়েছে, তবে আমরা কি একটি দিন নির্ধারণ করতে পারি না? যেদিনে আমরা একত্রিত হব, আল্লাহর যিকর করব, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করব ও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। অতঃপর তারা ‘আরুবাহ্ দিবস গ্রহণ করল এবং এ দিনে তারা আস্ওয়াদ ইবনু যুরারাহ্ (রাঃ)-এর নিকট একত্রিত হলে তিনি তাদের সাথে উক্ত দিনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আল্লাহ নাযিল করলেন, ‘‘জুমু‘আর দিনে যখন ডাকা হবে তখন তোমরা আল্লাহর ডাকে দ্রুত সাড়া দাও.....।’’ (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ