হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
১২৫৭

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৫৭-[৪] সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’খুলুক’ (স্বভাব-চরিত্র) ব্যাপারে কিছু বলুন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? আমি বললাম, হ্যাঁ পড়ি। এবার তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নৈতিকতা ছিল আল-কুরআন। আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর ব্যাপারে বলুন। তিনি বললেন, (রাতের বিতর সালাতের জন্যে) আমি পূর্বে থেকেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর মিসওয়াক ও উযূর পানির ব্যবস্থা করে রাখতাম।

আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁকে ঘুম হতে সজাগ করতে চাইতেন, উঠাতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে মিসওয়াক করতেন, তারপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন ও নয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অষ্টম রাক্’আত ব্যতীত কোন রাক্’আতে তিনি বসতেন না। আট রাক্’আত পড়া শেষ হলে (’তাশাহহুদে’) বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন অর্থাৎ আত্‌তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন। তারপর সালাম ফিরানো ব্যতীত নবম রাক্’আতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাক্’আত শেষ করে তাশাহুদ পাঠ করার জন্যে বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন (অর্থাৎ তাশাহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন।

তারপর বসে বসে দু’ রাক্’আত আদায় করতেন। হে বৎস! এ মোট এগার রাক্’আত হলো। এরপর যখন তিনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেলেন এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন বিতরসহ সাত রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। আর পূর্বের মতোই দু’ রাক্’আত বসে বসে আদায় করতেন। প্রিয় বৎস! এ মোট নয় রাক্’আত হলো। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে, তা নিয়মিত আদায় করতে পছন্দ করতেন। কোন দিন যদি ঘুম বেশী হয়ে যেত অথবা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিত, যাতে তাঁর জন্যে রাত্রে দাঁড়ানো সম্ভব হত না, তখন তিনি দুপুরে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করে নিতেন। আমার জানা মতে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এক রাতে সম্পূর্ণ কুরআন পড়েননি। অথবা ভোর পর্যন্ত সারা রাত্র ধরে সালাত আদায় করেননি এবং রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে গোটা মাস সওম পালন করেননি। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْوِتْرِ

وَعَن سعد بن هِشَام قَالَ انْطَلَقْتُ إِلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: أَلَسْتَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟ قُلْتُ: بَلَى. قَالَتْ: فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ. قُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ وَتْرِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ مَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَتَسَوَّكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَا يَجْلِسُ فِيهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ فَيُصَلِّي التَّاسِعَةَ ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَمَا يُسَلِّمُ وَهُوَ قَاعد فَتلك إِحْدَى عشرَة رَكْعَة يابني فَلَمَّا أَسَنَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخَذَ اللَّحْمَ أَوْتَرَ بِسَبْعٍ وَصَنَعَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِثْلَ صَنِيعِهِ فِي الْأُولَى فَتِلْكَ تِسْعٌ يَا بُنَيَّ وَكَانَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلَاةً أَحَبَّ أَنْ يُدَاوِمَ عَلَيْهَا وَكَانَ إِذَا غَلَبَهُ نَوْمٌ أَوْ وَجَعٌ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ وَلَا صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شهرا كَامِلا غير رَمَضَان. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: (فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللّهِ ﷺ كَانَ الْقُرْانَ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র ছিল আল কুরআন’’ এর অর্থ হলো আল কুরআনের আদেশ, নিষেধ, ভদ্রতা ইত্যাদি ধারণ করা; আরো স্পষ্ট করে বলা যেতে পারে যে, কুরআনুল কারীমে উত্তম চরিত্র ও উত্তম আদর্শ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যা বলেছেন তা-ই উত্তম নৈতিকতা। আর এসব গুণাবলী তার মধ্যে ছিল।

এ ব্যাপারে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কুরআনুল কারীমের প্রতি ‘আমল করা, তার সীমালঙ্ঘন না করা, সে অনুযায়ী আদর্শবান হওয়া, সুন্দর তিলাওয়াত ও নির্দেশের বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি এবং উক্ত বাক্যে আল্লাহ তা‘আলার সে কথা ‘‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী’’- (সূরাহ্ আল ক্বলাম ৬৮ : ৪)-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(عن وتر رسول الله) বলতে বিতর সালাতের সময় পদ্ধতি ও রাক্‘আতের সংখ্যা বুঝানো হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯ রাক্‘আত আদায় করতেন এবং ৮ম রাক্‘আত ব্যতীত কোন বৈঠকে বসতেন না। এখান থেকে যে শার‘ঈ বিধান হবে ধারাবাহিকভাবে। শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন সালাম হবে না এবং ৮ম রাক্‘আতে শুধু বৈঠক হবে সালাম ফিরানো যাবে না। আর এ বৈঠকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাশাহুদ পড়তেন তা সাধারণ হাম্‌দ ও সানা (আল্লাহর প্রশংসা) পড়তেন। প্রকৃত আত্তাহিয়্যাতু নয় কারণ তাশাহুদের মাঝে আল্লাহর প্রশংসা শব্দের উল্লেখ নেই এবং আরো পরিচিত দু‘আ পড়তেন এরপর দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ৯ম রাক্‘আতের শেষে উচ্চ আওয়াজে সালাম ফিরাতেন।

এখানে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বিতর সালাতে প্রতি দু’ রাক্‘আতে বৈঠক ওয়াজিব নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাগাতার ৮ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন কোন বৈঠক ছাড়াই। তবে হানাফী মাযহাবধারীরা সম্পূর্ণ এর বিপরীত, তারা বলে প্রতি দু’ রাক্‘আতে তাশাহুদের জন্য বৈঠক ওয়াজিব। তারা জবাব হিসেবে বলেন যে, দু’ রাক্‘আতের মাঝে বৈঠকের নিষেধাজ্ঞা বলতে সালাম ফিরানো নিষেধ এ কথা বুঝানো হয়েছে।

তারা আরো বলেন যে, ৯ রাক্‘আতের তিন রাক্‘আত বিতর এবং তার পূর্বের ৬ রাক্‘আত নফল।

তবে এটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, বৈঠকের নিষেধাজ্ঞা বলতে সালাম ফিরানো নিষেধ বুঝানো হয়েছে মর্মে যা বলা হয় তার কোন প্রমাণ নেই। কারণ হাদীসটি খুবই স্পষ্ট বরং তা একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য। অষ্টম রাক্‘আতের পূর্বে বৈঠক নিষেধ হওয়ার ক্ষেত্রে, আর ৯ম রাক্‘আতের পূর্বে সালাম ফিরানো নিষিদ্ধ হওয়াটা মুত্বলাক্ব। কাজেই পূর্ণ সালাতটি দু’ বৈঠকে এবং সালামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অতএব এটাও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শ্রেণীর বিতর।

(ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ...) এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন।

ইমাম নাবাবী বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন বিতরের পরেও নফল সালাত আদায় করা বৈধ এটা বর্ণনার জন্য এবং বসা অবস্থায় নফল সালাত আদায় করা বৈধ এটা বর্ণনার জন্য।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুম কিংবা অসুস্থতাজনিত কারণে রাতের সালাত আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি উক্ত সালাত সূর্য উদিত হওয়া এবং ঢলে পড়ার মাঝামাঝি সময়ে বারো রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। তবে বলা হয় যে, ৮ রাক্‘আত ক্বিয়ামুল লায়ল রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ ও ৪ রাক্‘আত সালাতুয্ যুহা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ