হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
১১৩১

পরিচ্ছেদঃ ২৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমামের দায়িত্ব

১১৩১-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যারা মানুষের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করায় সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কারণ (তার পেছনে) মুক্তাদীদের মধ্যে রোগী, দুর্বল, বুড়োও থাকে (তাদের প্রতি খেয়াল রাখাও দরকার)। আর তোমাদের কেউ যখন একা একা সালাত আদায় করবে সে যত ইচ্ছা সালাত দীর্ঘ করতে পারে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الإِمَامِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا صلى أحدكُم النَّاس فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فِيهِمُ السَّقِيمَ وَالضَّعِيفَ وَالْكَبِيرَ. وَإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّلْ مَا شَاءَ»

ব্যাখ্যা: (إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمُ النَّاسَ) অর্থাৎ ফরয বা নফল সালাতের ইমাম হয়ে তোমাদের কেউ যখন মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করবে। মুসলিমের এক বর্ণনা এসেছে, তোমাদের কেউ যখন মানুষের ইমামতি করবে।

(فَلْيُخَفِّفْ) হালকাকরণ বিষয়টি তুলনামূলক নির্দেশের আওতাভুক্ত। কখনো একই বস্ত্ত বা বিষয় এক সম্প্রদায়ের অভ্যাসের দিকে সম্বন্ধ করে হালকা, অন্য সম্প্রদায়ের অভ্যাসের দিকে সম্বন্ধ করে লম্বা। সুতরাং সম্প্রদায়ের মাঝে সর্বাধিক দুর্বল ব্যক্তির বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে তবে এ শর্তে যে, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতের মাঝে কোন প্রকার ত্রুটি করা যাবে না। সুতরাং সকল কিছু পূর্ণাঙ্গ আদায়ের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হালকা করতে হবে।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ‘উসমান বিন আবিল ‘আস কর্তৃক আবূ দাঊদ ও নাসায়ী সংকলিত হাদীস থেকে (التخفيف) বা হালকাকরণ এর যে সংজ্ঞা বা পরিচিতি গ্রহণ করা হয়েছে তা সর্বোত্তম সংজ্ঞা বা পরিচিতি। তাতে আছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান বিন আবিল ‘আসকে বললেনঃ তুমি তোমার সম্প্রদায়ের ইমাম। তুমি তাদের মাঝে সর্বাধিক দুর্বল ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি রাখবে। এর সানাদ হাসান, এর মূলও মুসলিমে আছে।

(فَإِنَّ فِيهِمُ السَّقِيمَ وَالضَّعِيفَ وَالْكَبِيرَ) ইমাম মুসলিম এক বর্ণনাতে একটু বেশি উল্লেখ করেছেন তা হল (الضَّعِيفَ) ত্ববারানী ‘উসমান বিন আবিল ‘আস কর্তৃক একটু বেশি বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধদানকারিণী নারী এর কথা। ত্ববারানীর অপর বর্ণনাতে ‘আদী বিন হাতিম-এর হাদীসে আছে মুসাফিরের কথা। আবূ মাস্‘ঊদ ও ‘উসমান বিন আবিল ‘আস-এর আগত হাদীসদ্বয়ে রসূলের উক্তি (ذَا الْحَاجَةِ) বা প্রয়োজন বোধকারী উল্লেখিত সকল গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

এটি মুসলিমের এক বর্ণনাতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীস কর্তৃকও প্রমাণিত হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘কেননা তাদের মাঝে.....’ শেষ পর্যন্ত যা হাদীসে এসেছে তা বর্ণিত নির্দেশের কারণ। সুতরাং অবস্থার চাহিদা অনুপাতে তাদের মাঝে যখন উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত কোন ব্যক্তি থাকবে না অথবা তারা যখন সালাত দীর্ঘ করার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে এমন কোন স্থানে সীমাবদ্ধ থাকবে যেখানে তারা ছাড়া অন্য কেউ শামিল হবে না তখন সালাত দীর্ঘ না করার কারণ না থাকার কারণে সালাত দীর্ঘ করতে কোন ক্ষতি সাধন হবে না। তবে ইবনু আবদিল বার বলেনঃ আমার মতে সালাত হালকাকরণকে আবশ্যক করে দেয় এমন কোন কারণ অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকা যায় না।

কেননা ইমাম যদিও তার পেছনের মুক্তাদীদের শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে বুঝতে পারেন কিন্তু ব্যস্ত করে দেয় এমন কোন ঘটনা তাদের কখন ঘটবে তা তিনি জানেন না এবং কোন প্রয়োজন তাদের সামনে উপস্থিত হবে ও প্রস্রাব বা অন্য কোন বিপদে পতিত হবে তাও তিনি জানেন না। ইয়া‘মুরী বলেনঃ হুকুম আহকাম অধিকাংশের সাথে সম্পর্কিত। বিরলতার সাথে না। সুতরাং ইমামদের জন্য সাধারণভাবে জামা‘আতের সালাতকে হালকা করাই উচিত হবে। তিনি বলেন, এটি ঠিক অনুরূপ যেমন মুসাফিরের সালাতের ক্ষেত্রে ক্বসর করার বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। আর এর কারণ দর্শানো হয়েছে কাঠিন্যতাকে। যদিও সফরে অনেক ক্ষেত্রে ‘আমল করা কষ্ট হয় না। তথাপিও ক্বসর প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। কেননা মুসাফির জানে না কখন তার ওপর কি সমস্যা সৃষ্টি হবে।

(فَلْيُطَوِّلْ مَا شَاءَ) অর্থাৎ ক্বিরাআতে, রুকূ‘তে, সাজদাতে, ধীর-স্থিরতাতে, দু’ সাজদার মাঝে বসা ও তাশাহুদে যে পরিমাণ ইচ্ছা হয় লম্বা করবে।

মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে সে যেভাবে ইচ্ছা সালাত আদায় করবে অর্থাৎ হালকা, দীর্ঘ যেভাবে ইচ্ছা অর্থাৎ সে তার ইচ্ছানুযায়ী হালকা বা দীর্ঘ করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কোন সালাতের সময় নিজ সময় থেকে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বা কোন সালাত নিষিদ্ধ সময়ের মাঝে প্রবেশ হওয়া পর্যন্ত সালাত দীর্ঘ করা উচিত হবে না। সিরাজ-এর মুসনাদে আছে ‘‘আর যখন ব্যক্তি একাকী সালাত আদায় করবে তখন ইচ্ছা হলে সালাত দীর্ঘ করবে।’’ হাদীসটি ইমামদের সালাত হালকাকরণ শারী‘আতসম্মত হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। আরও প্রমাণ বহন করছে দুর্বলতা, অসুস্থতা, বার্ধক্যতা, প্রয়োজন ও এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট উল্লেখিত কারণগুলোর ক্ষেত্রে সালাত দীর্ঘ করা বর্জন করার উপর।

তবে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন উল্লেখিত নির্দেশ ওয়াজিবের জন্য নাকি সুন্নাতের জন্য ব্যবহৃত? কুসত্বলানী বলেছেনঃ এক দল রসূলের উক্তি (فَلْيُخَفِّفْ) এর মাঝে নির্দেশের বাহ্যিক দিক লক্ষ্য করে নির্দেশটি আবশ্যকতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন ইবনু হাযম, ইবনু আবদিল বার ও ইবনু বাত্ত্বাল। ইবনু ‘আবদুল বার-এর ভাষ্য এ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে সর্বাধিক স্পষ্ট দলীল রয়েছে যে, জামা‘আতের ইমামদের ওপর আবশ্যক জামা‘আতকে হালকা করা আর এটা মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এ ব্যাপারে তাদের নির্দেশ দেয়ার কারণে। এমতাবস্থায় জামা‘আতের সালাত দীর্ঘ করা তাদের পক্ষে বৈধ হবে না, কেননা সালাত হালকা করার ব্যাপারে নির্দেশের মাঝে সালাত দীর্ঘ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

সালাত হালকা করার দ্বারা উদ্দেশ্য হল তা এমনভাবে হওয়া যাতে সালাতের সুন্নাত ও তার উদ্দেশে কোন ক্ষতি হয় না। শাওকানী নায়লুল আওতারে বলেছেন, ইবনু ‘আবদিল বার বলেনঃ প্রত্যেক ইমামের পক্ষে জামা‘আতের সালাতকে হালকা করা একটি সুন্নাতসম্মত বিষয়। যার ব্যাপারে বিদ্বানগণ একমত। তবে তা পূর্ণাঙ্গ সালাতের সর্বাধিক কম (সময়ের) সালাত। পক্ষান্তরে সালাতের কোন অংশকে বিলুপ্ত করা, কোন অংশের হ্রাস করা উদ্দেশ্য না। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কাকের মতো ঠোকর দেয়া থেকে নিষেধ করেছেন।

একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাত আদায় করতে দেখলেন যে, তার রুকূ' পূর্ণাঙ্গভাবে করেনি। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ফিরে যাও অতঃপর সালাত আদায় কর; কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করবে না যে তার রুকূ‘ সাজদাতে পিঠ সোজা করবে না। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা সালাত পূর্ণাঙ্গ হওয়ার যে শর্ত করেছি সে অনুযায়ী যে ব্যক্তি সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে এমন প্রত্যেক ইমামের পক্ষে জামা‘আতের সালাত হালকা করা সুন্নাতসম্মত হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্বানদের মাঝে কোন মতানৈক্য জানি না।

‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের প্রতি রাগান্বিত করিও না তা এভাবে যে, তোমাদের কেউ তার সালাতে দীর্ঘ করবে ফলে দীর্ঘতা পেছনে মুক্তাদীদের ওপর কঠিন হয়ে যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ