হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৯২৫

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ ও তার মর্যাদা

৯২৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী- দা’ওয়াতে কাবীর)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللَّهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ

ব্যাখ্যা: (مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَـيَّ) ‘‘যে কেউ আমাকে সালাম করলে’’ এর প্রকাশ্য ভাব এ অর্থ প্রকাশ করে যে, যে কোন স্থানের ও যে কোন সময়ের সালাম দাতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে দূরবর্তী ও নিকটবর্তী সকল সালাম প্রদানকারী সমান মর্যাদার অধিকারী এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত হতে সালাম প্রদানকারীর সালামের জওয়াব দিয়ে থাকেন। তবে অনেক ‘আলিম মনে করেন এ হাদীস হতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের পাশে সালাম প্রদানকারী উদ্দেশ্য। অতএব, কবরের নিকটবর্তী হয়ে সালাম প্রদানকারীর ক্ষেত্রেই এ হাদীসটি প্রযোজ্য। আল্লাহই প্রকৃত বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।

এ হাদীসের সালাম দ্বারা দু‘আ উদ্দেশ্য নেয়া যায়। অভিবাদনের সালাম উদ্দেশ্য নয়। অতএব, হাদীসের অর্থ ব্যাপক। সুতরাং সালাম প্রদানকারী দূরবর্তী হোক বা নিকটবর্তী এত কোন পার্থক্য নেই এবং এটি কবর যিয়ারতকারীর জন্য খাসও নয়। বরং এ হাদীসে বর্ণিত মর্যাদা দূরবর্তী ও নিকটবর্তী সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

(اِلَّا رَدَّ اللّهُ عَلَـيَّ رُوْحِيْ حَتّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ) আল্লাহ আমার রূহ ফিরিয়ে দেন যাতে আমি তার সালামের প্রতি উত্তর দিতে পারি। এতে বুঝা যায় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দেয়ার পর তাঁর শরীরে তাঁর রূহ ফেরত দেয়া হয়। তবে এই ফেরত দেয়া রূহ তাঁর শরীরে অব্যাহতভাবে থাকা বুঝায় না। জেনে রাখা জরুরী যে, সালাম দেয়ার পরে শরীরে রূহ ফিরিয়ে দেয়া এবং মৃত্যুর পরে তা পুনরায় শরীরে ফিরে আসা যেমনভাবে তা শরীরে অব্যাহতভাবে থাকা আবশ্যকীয় নয়। শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক এবং তার সাথে তা মিলিত থাকাটা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে।

১) ইহজগতে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক জাগ্রত ও ঘুমন্ত অবস্থায়।

২) আলামে বারযাখে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক মৃত ব্যক্তির অবস্থা ভেদে বিভিন্ন ধরনের।

৩) পুনরুথান দিবসে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক। তাই আলামে বারযাখে শরীরে রূহ ফেরত দেয়ার কারণে ইহজগতের ন্যায় জীবন যাপন আবশ্যক নয়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, এ হাদীসের অনুরূপ অর্থে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে আছে যা ইবনু ‘আবদুল বার বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, ‘‘যে ব্যক্তি তার মু’মিন ভাইয়ের কবরের কাছ দিয়ে যায় যার সাথে দুনিয়াতে তার পরিচয় ছিল। আর সে তাকে সালাম দেয় তাহলে আল্লাহ ঐ মৃত ব্যক্তিকে তার রূহ ফেরত দেন যাতে সে তার ভাইয়ের সালামের প্রতি উত্তর দিতে পারে। আর কোন ব্যক্তিই এ দাবী করেনি যে, এ ফেরত দেয়ার কারণে তার রূহ তার মধ্যে অব্যাহতভাবেই থাকবে। আর এও বলেনি যে, এই ফেরত দেয়ার ফলে তার জন্য ইহকালীন জীবনের মতো তার জীবন যাপন আবশ্যক হয়ে যায়।

এখানে প্রশ্ন উত্থাপন হতে পারে যে, যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে বিরামহীনভাবে সালাত ও সালাম প্রেরিত হচ্ছে সেহেতু তাঁর রূহ সর্বদাই তাঁর সাথে সম্পৃক্ত থাকা আবশ্যক কিনা? যদিও তা অন্য কারো বেলায় প্রযোজ্য নয়। এর জওয়াব এই যে, পরকালের বিষয়সমূহ সাধারণ জ্ঞান দ্বারা বুঝা সম্ভব নয়। আর আলামে বারযাখের অবস্থা পরকালীন জীবনের সাথে সামঞ্জস্যশীল। অতএব, আমরা হাদীসে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো এবং তাতে বর্ণিত বিষয় সত্য বলে গ্রহণ করবো। এর প্রকৃত অবস্থার জ্ঞান আল্লাহর প্রতি প্রত্যার্পণ করবো। আলামে বারযাখের বিষয়গুলোকে ইহকালীন বিষয়ের সাথে তুলনা করবো না। কেননা আলামে বারযাখের বিষয় যা আমাদের দৃষ্টির বাইরে তা ইহকালীন চাক্ষুষ বিষয়ের সাথে তুলনা করা অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা, যুলম ও ভ্রষ্টতার শামিল।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ