হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৯৫

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৯৫-[১৭] মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ’’(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সন্তানদেরকে বের করলেন’’ (সূরাহ্ আল আ’রাফ ৭: ১৭২) (...আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদমের পিঠে হাত বুলালেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সন্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ’আমল করবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ’আমলের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মালিক, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني

وَعَن مُسلم بن يسَار قَالَ سُئِلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ (وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورهمْ) قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يسْأَل عَنْهَا فَقَالَ: «خلق آدم ثمَّ مسح ظَهره بِيَمِينِهِ فأاستخرج مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقَتُ هَؤُلَاءِ لِلْجَنَّةِ وَبِعَمَلِ أهل الْجنَّة يعْملُونَ ثمَّ مسح ظَهره فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ ذُرِّيَّةً فَقَالَ خَلَقَتُ هَؤُلَاءِ لِلنَّارِ وبعمل أهل النَّار يعْملُونَ فَقَالَ رجل يَا رَسُول الله فَفِيمَ الْعَمَل يَا رَسُول الله قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ إِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلْجَنَّةِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ من أَعمال أهل الْجنَّة فيدخله الله الْجَنَّةَ وَإِذَا خَلَقَ الْعَبْدَ لِلنَّارِ اسْتَعْمَلَهُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى يَمُوتَ عَلَى عَمَلٍ مِنْ أَعمال أهل النَّار فيدخله الله النَّار» . رَوَاهُ مَالك وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 2


Muslim b. Yasar said that when ‘Umar b. al-Khattab was questioned about the verse, “When your Lord took their offspring from the backs of the children of Adam...” 1 he replied that he had heard God’s messenger say when he was questioned about it, “God created Adam, then passed His right hand over his back and brought forth from it his offspring, saying, ‘I have created these for paradise and they will do the deeds of those who go to paradise.’ He then passed his hand over his back and brought forth from it his offspring, saying, ‘I have created these for hell and they will do the deeds of those who go to hell’.” A man asked, “What is the good of doing anything, messenger of God?” to which God’s messenger replied, “When God creates a man for paradise He employs him in doing the deeds of those who will go to paradise, so that his final action before death is one of the deeds of those who go to paradise, for which He will bring him into paradise. But when He creates a man for hell He employs him in doing the deeds of those who will go to hell, so that his final action before death is one of the deeds of those who go to hell, for which He will bring him into hell.”

Malik, Tirmidhi and Abu Dawud transmitted it.

ব্যাখ্যা: উল্লিখিত হাদীসটি আবূ দাঊদ এবং তিরমিযী থেকে সংকলিত, যেখানে সুস্পষ্ট যে, শুধু ‘আমলের দ্বারা জান্নাত বা জাহান্নামে কেউ যাবে না বরং আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত বিষয় ‘তাক্বদীর’ এখানে বিশেষভাবে কার্যকর। অতএব, যার তাক্বদীরে যা লিখা আছে সে তারই হকদার হবে।

আয়াত ও হাদীসের বাহ্যিক মতবিরোধের সুষ্ঠু সমাধানঃ

আয়াতে কারীমাতে উল্লেখ আছেঃ

وَاِذْ اَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِىْ ادَمَ مِن ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلى اَنفُسِهِمْ ألَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلى شَهِدْنَا اَن تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّا كُنَّا عَنْ هذَا غَافِلِيْنَ

আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন। অপরপক্ষে হাদীসে উল্লেখ আছে, সন্তানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করেছেন। এর সমাধানে মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) তার হুজ্জাতুল্লাহ আল্ বালিগাহ্ কিতাবে বলেন, আয়াতে কারীমা হাদীসের বিপরীত নয়। কেননা আদম (আঃ) থেকে তার সন্তানদের বের করা হয়েছে আর তার সন্তানদের থেকে তাদের সন্তানদের বের করেছেন, এভাবে ধারাবাহিকভাবে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত চলবে। অতএব আয়াতে ঘটনার কিছু অংশবিশেষ বর্ণনা করা হয়েছে এবং হাদীস তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেছে।

আদম (আঃ)-এর পিঠের উপর দিয়ে হাত অতিক্রম করলো, (এই হাত অতিক্রমের) কোন প্রকার ব্যাখ্যা বা ধরণ বর্ণনা করা ছাড়াই এই অর্থ গ্রহণ করতে হবে।

কেউ মন্তব্য করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তার পিঠকে ফেড়েছিলেন। অতঃপর তাদেরকে সেখান থেকে তিনি বের করেছেন। তবে সবচেয়ে নিকটতম অর্থটি হচ্ছে, তিনি তাদেরকে তার পিঠের লোমের গোড়া থেকে বের করেছেন। কারণ প্রত্যেক লোমের নীচে সূক্ষ্ম ছিদ্র বিদ্যমান, যার নাম হলো سم বা ছিদ্র, যেমনঃ سَمُّ الْخِيَاطِ সুঁচের ছিদ্র। আর এটাও সম্ভব যে, সন্তান এই ছিদ্র থেকে বের হয়েছে যেমনভাবে এখান থেকে ঘাম বের হয়।

অতএব এই মুহূর্তে আয়াত এবং হাদীসকে একই সাথে নিয়ে কথা বলা আবশ্যক এভাবে যে, কিছু সন্তান কিছু সন্তানের পিঠ থেকে বের হয়েছে। আদম (আঃ)-এর পিঠ থেকে আয়াত এবং হাদীসের মধ্যকার মতবিরোধ সমাধানকল্পে এমনটাই বলতে হবে।

অত্র হাদীসটি তাক্বদীরের উপর প্রমাণবাহী এভাবে যে, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করার পূর্বেই এগুলো তাঁরা চিরন্তন জ্ঞানের মাধ্যমে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর সৃষ্টি করার পরে এই সৃষ্টিজীবের ভবিষ্যৎ কি হবে তা তাঁর আগেই জানা আছে।