পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৩১-[১] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো বিচারক রাগান্বিত অবস্থায় দু’জনের মাঝে বিচার-ফায়সালা করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَمَلِ فِى الْقَضَاءِ وَالْخَوْفِ مِنْهُ

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَقْضِيَنَّ حَكَمٌ بَيْنَ اثْنَيْنِ وَهُوَ غَضْبَانُ»

عن أبي بكرة قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «لا يقضين حكم بين اثنين وهو غضبان»

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে রাগান্বিত অবস্থায় বিচার শালিস করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা রাগান্বিত অবস্থায় বিচারক বাদী-বিবাদীর কথা বুঝতে পারবেন না এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারবে না, ফলে ফায়সালায় ভুল হয়ে যেতে পারে। ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, রাগান্বিত অবস্থায় যেমন বিচার করা যাবে না ঠিক তেমনিভাবে প্রখর গরম, কনকনে শীত, প্রচণ্ড ক্ষুধা, পিপাসা ও অসুস্থতা নিয়েও বিচার করা যাবে না যদি এসব অবস্থায় বিচার করে তাহলে তা মাকরূহ অপছন্দনীয় হবে। আবার বিচার ভুল হওয়ার কারণে হারামও হবার আশংকা রয়েছে। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭১৫৮; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭১৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৩৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৩২-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো বিচারক যদি বিচারকার্য পরিচালনায় সঠিক ফায়সালা প্রদান করেন, তবে তার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান রয়েছে। পক্ষান্তরে যথাসাধ্য চিন্তা-ভাবনা করার পরও যদি ফায়সালায় ত্রুটিপূর্ণ হয়, তারপর তার জন্য একটি প্রতিদান রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَمَلِ فِى الْقَضَاءِ وَالْخَوْفِ مِنْهُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَبِي هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فلهُ أجرٌ واحدٌ»

وعن عبد الله بن عمرو وأبي هريرة قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا حكم الحاكم فاجتهد فأصاب فله أجران وإذا حكم فاجتهد فأخطأ فله أجر واحد»

ব্যাখ্যা: (وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَه أَجْرٌ) বিচারক বিচারকার্যে খুব বিচার-বিশ্লেষণের পর যদি ভুল করে তাহলে তার জন্য একটি সাওয়াব রয়েছে।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ ভুল করার পরও তাকে সাওয়াব দেয়ার কারণ হলো তার ইজতিহাদ একটি ‘ইবাদাত, সে ‘ইবাদাতের সাওয়াব দেয়া হয়েছে, ভুলের জন্য সাওয়াব দেয়া হয়নি। এ বিধান সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বরং যারা ইজতিহাদ তথা গবেষণার সকল শর্তপূরণ, মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞাত। একটি বিধানের সাথে আরেকটি বিধানের সমন্বয় ঘটানোর সম্পর্কে জ্ঞাত ইত্যাদি লোকেদের গবেষণার ভুল হলেও সাওয়াব প্রদান করা হবে। কিন্তু যে ইজতিহাদ গবেষণার যোগ্যতা রাখে না তারপরও বিচার করে, এমতাবস্থায় ভুল করলে তাকেও সাওয়াব দেয়া হবে বিষয়টি এমন নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বিচারক তিন শ্রেণীর, এক শ্রেণীর বিচারক জান্নাতে যাবে আর দু’ শ্রেণীই জাহান্নামে যাবে। আর ভুল করলেও সাওয়াব দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা হলো শাখা মাস্আলার ক্ষেত্রে যেগুলোতে একাধিক সম্ভাবনা থাকে। মূল মাসআলাহ্ যেগুলো শারী‘আতের মূলভিত্তি এবং أُمَّهَاتِ الْأَحْكَامِ তথা মৌলিক বিধানসমূহ যা পরিষ্কার এবং একাধিক মতের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত সেগুলোতে ভুল করলে সে ভুলের জন্য সাওয়াবের কোনো প্রশ্নই আসে না। এক্ষেত্রে তার বিচার বাতিল বলে গণ্য হবে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ ‘উলামায়ে কিরাম মতবিরোধ করেছেন যে, প্রত্যেক গবেষকই পৌঁছতে সক্ষম নাকি একজন যার গবেষণা আল্লাহর হুকুমের সাথে মিল আর অপরজনের গবেষণা আল্লাহর হুকুমের সাথে না মিলার কারণে তার ইজতিহাদ ভুল?

এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম শাফি‘ঈ ও তাঁর সহচরগণ বলেছেন, একটি বিষয় গবেষণার পর বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন মত প্রদান করলে সকলের মত সঠিক হয় না সঠিক হয় একজনের মত, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে مُصِيبًا তথা সঠিক আর অপরজনকে مُخْطِئًا তথা ভুলকারী বলেছেন।

আর যে সমস্ত ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেনঃ দু’জনই সঠিক, তারা বলেছেন, যদি সঠিক এবং বেঠিক সবাই সঠিক না হয় তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়াবের ক্ষেত্রে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতেন না। তবে এক্ষেত্রে ভুলকারী গবেষককে ইজতিহাদ বা গবেষণার যোগ্য হতে হবে। নচেৎ সে তো ইজতিহাদই করতে পারবে না। আর যদি সে ইজতিহাদ করতে না পারে তাহলে তার সাওয়াবের প্রশ্নই আসে না। সে তার বিচার করার কারণে পাপী হবে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ সে সমস্ত ক্ষেত্রে গবেষকের নিকট কুরআন, হাদীস, ইজমা থাকবে না, সেক্ষেত্রে তার হুকুম হলো ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে সালাতের সময় ক্বিবলাহ্ খুঁজে পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় চেষ্টার পরও যদি সে সালাত আদায়ের পর দেখে, ভুল দিকে ফিরে সালাত হয়ে গেছে, সে যেমন ভুল করার পরও তার সালাত হয়ে যাবে তদ্রূপ ইজতিহাদের যোগ্যতা থাকার পরও ভুল করলে সে সাওয়াব পাবে।

(ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭৩৫২; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭১৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩২৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে