পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

المحرم – يجتنب الصيد মুহরিম ব্যক্তি শিকার করা হতে বিরত থাকবে। তথা তা হত্যা ও শিকার করা হতে বিরত থাকবে যদিও সে তা ভক্ষণ না করে এবং তা ভক্ষণ করে যদি অন্য মুহরিম ব্যক্তি তা যাবাহ করবে না।

মুল্লা ’আলী কারী বলেনঃ শিকার দ্বারা উদ্দেশ্য সে সব বন্যজন্তু, সৃষ্টির মূলনীতিতে পৃথিবীতে যার জন্ম ও বংশ বিস্তার রয়েছে।

আর সমুদ্রের শিকার মুহরিম ও অমুহরিম সবার জন্য বৈধ। খাদ্য হিসেবে হোক বা না হোক, যেমন- আল্লাহ তা’আলার বাণী-

أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهٗ مَتَاعًا لَكُمْ

’’তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

’আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ ’’তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে’’। আল্লাহ তা’আলার এ বাণী সুস্পষ্ট ’আম্ প্রমাণ করে সমুদ্রের শিকার হজ্জ/হজ ও ’উমরাহকারী মুহরিম ব্যক্তির জন্য বৈধ, অনুরূপ আল্লাহ তা’আলা খাসভাবে বর্ণনা করেছেন যে, মুহরিম ব্যক্তির ওপর স্থল শিকার হারাম।

وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا

’’তোমাদের ইহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাকো।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

এটা হতে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের শিকার হারাম নয়।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের শিকার বৈধ। আল্লাহ তা’আলার এ বাণী দ্বারা-

أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُه

’’তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)

বিজ্ঞ ’উলামাহগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, সমুদ্রের শিকার মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা, খাওয়া এবং ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ। আর সমুদ্রের শিকার বলতে এমন প্রাণীকে বুঝায় যা সমুদ্রে জীবন-যাপন করে সেখানেই ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়, যেমন- মাছ, কচ্ছপ, কাকড়া ইত্যাদি অনুরূপ।

আর স্থল শিকার হজ্জ/হজ ও ’উমরাহকারী মুহরিম ব্যক্তির জন্যে সকল ’উলামাগণের মতে হারাম আর ঐকমত্য এমন বন্যজন্তুর ক্ষেত্রে যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল, যেমন হরিণ ও হরিণের বাচ্চারা অনুরূপ জন্তু, আর শিকারী জন্তুর প্রতি ইঙ্গিত করাও হারাম। আর শিকারীর ব্যাপারে কোন প্রকার সাহায্য করাও হারাম।

ইমাম শাফি’ঈ-এর নিকট শিকার বলতে যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল এমন পশু শিকার করা। আর যার মাংস (গোসত/মাংস) খাওয়া হালাল নয় এমন পশু শিকারে কোন বাধা নেই। তবে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু জন্তু চাই তার মাংস খাওয়া হালাল হোক বা না হোক তা শিকার করা বৈধ নয়। যেমন- নেকড়ে শাবক যার জন্ম হায়েনা ও বাঘের সংমিশ্রণে। তিনি আরো বলেনঃ শকুন, সিংহ অনুরূপ শিকার ও যার মাংস খাওয়া হারাম এমন পশু শিকারে বাধা নেই। কেননা তা শিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়, মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী-

وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا

’’আর তোমাদের ইহরামধারীদের জন্য হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাকো’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৬)। আর এটা ইমাম আহমাদ-এর মাযহাব।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ শিকার তথা যা হত্যাতে জরিমানা ওয়াজিব হয় তা এমন জন্তু যা তিনটি বিষয়কে একত্রিত করে। যার মাংস খাওয়া বৈধ কিন্তু তার কোন মালিক নেই তা শিকার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুতরাং প্রথম বৈশিষ্ট্য হতে বের হয়, যার মাংস হালাল নয় এবং হত্যাতে কোন জরিমানা নেই। যেমন- হিংস্র প্রাণী এবং কষ্টদায়ক কীটপতঙ্গ, পাখি।

ইমাম আহমাদ বলেনঃ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে হালাল জন্তু শিকারে- এটা অধিকাংশ ’উলামাগণের বক্তব্য; তবে শিশু জন্তুর ক্ষেত্রে চাই তার মাংস হালাল হোক বা না হোক, যেমন নেকড়ে শাবক যা হত্যাতে জরিমানা রয়েছে অধিকাংশদের নিকট তা হত্যা করা হারাম।

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বন্যজন্ত। অতএব বন্যজন্তু নয় এমন জন্তু মুহরিম ব্যক্তির জন্য যাবাহ করা এবং খাওয়া হারাম নয় যেমন সকল চতুষ্পদ প্রাণী এবং ঘোড়া ও মুরগী এবং অনুরূপ প্রাণীর ব্যাপারে ’উলামাগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সকলে ঐকমত্য হয়েছেন শিকার দ্বারা উদ্দেশ্য এমন বন্যপশু যার মাংস খাওয়া হালাল।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ চতুষ্পদ গৃহপালিত জন্তুর ব্যাপারে ইহরামধারীর জন্য এবং হারামের মধ্যে অবস্থান হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রভাব পড়বে না। কেননা তা শিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আল্লাহ তা’আলা শিকার করাকে হারাম করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় হারামে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য উট কুরবানী করেছেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-أفضل الحج العج والثج। সর্বোত্তম হজ্জ/হজ হলো চিৎকার করে তালবিয়াহ্ পাঠ করা, যাবাহ ও নাহর-এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করা। আর এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আর ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে বলেনঃ ইবনু ’আব্বাস ও আনাস মুহরিম ব্যক্তির যাবাহতে কোন দোষ মনে করতেন না।

মুল্লা ’আলী কারী বলেনঃ স্থলে যেসব জন্তুর মাংস খাওয়া হালাল তা সকলের ঐকমত্যে শিকার করা হারাম, আর সেসব জন্তুর মাংস খাওয়া হারাম তাদের ব্যাপারে বক্তব্য হলো- যদি তা কষ্ট দেয় এবং আক্রমণ করে এমন জন্তুকে হত্যা করা মুহরিম ব্যক্তির জন্য বৈধ এবং তাতে কোন জরিমানা নেই। যেমন- বাঘ, চিতা বাঘ, সিংহ ইত্যাদি।

আর যে প্রাণী অধিকাংশ সময়ে শুরুতেই কষ্ট দেয় না, যেমন- শিয়াল ইত্যাদি প্রাণী যদি তা আক্রমণ করে তাহলে হত্যা করা বৈধ, এতে কোন জরিমানা নেই।


২৬৯৬-[১] সা’ব ইবনু জাসামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আব্ওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি বন্যগাধা (শিকার করে এনে) হাদিয়্যাহ্ (উপহার) দিলেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গাধাটি ফেরত দিলেন। এতে তার মুখমণ্ডল ে বিমর্ষভাব (মনোকষ্ট হওয়ার নিদর্শন) লক্ষ্য করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমরা মুহরিম হওয়ার কারণে তা তোমাকে ফেরত দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

عَن الصعب بن جثامة أَنه أهْدى رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارًا وَحْشِيًّا وَهُوَ بِالْأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَلَمَّا رأى مَا فِي وَجْهَهُ قَالَ: «إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلَّا أنَّا حُرُمٌ»

عن الصعب بن جثامة انه اهدى رسول الله صلى الله عليه وسلم حمارا وحشيا وهو بالابواء او بودان فرد عليه فلما راى ما في وجهه قال انا لم نرده عليك الا انا حرم

ব্যাখ্যা: (أهْدٰى رَسُولَ اللّٰهِ ﷺ) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপঢৌকন দিয়েছিল বিদায় হজ্জে।’’

(حِمَارًا وَحْشِيًّا) - জংলী গাধা অনুরূপ বর্ণনা মালিক যুহরী হতে, তিনি ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উত্ববাহ্ হতে, তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস হতে, তিনি সা‘ব ইবনু জাসামাহ্ হতে।

মালিক হতে বর্ণনাটি সকল রাবীদের ঐকমত্য এবং তার অনুসরণ করেছে যুহরীর নয়জন মেধাবী ছাত্র।

আর তাদের বিরোধিতা করেছে সুফিয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্ যুহরী হতে, তিনি বলেছেন- أحديت له من لحم حمار وحش.- رواه مسلم ‘‘তাকে হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছে জংলী গাধার গোশ্‌ত (গোসত/গোশত)।’’ (সহীহ মুসলিম)

সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন (رجل حمار وحش) জংলী গাধার পা। অন্য রিওয়ায়াতে (عجز حمار وحش) জংলী গাধার পাছা, তাতে রক্ত ঝড়ছিল। আবার অন্য বর্ণনায় (شق حمار وحش) জংলী গাধার কিছু অংশ, আর এ বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে গাধার কিছু অংশ হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছিল পূর্ণ গাধা নয়। এ দু’ বর্ণনার মাঝে বৈপরীত্য রয়েছে।

কেউ কেউ দু’ হাদীসের সমন্বয়কে প্রাধান্য দিয়েছে, আবার কেউ ইমাম মালিক-এর বর্ণনাকে প্রাধান্য দিয়েছে। যেমন- ইমাম শাফি‘ঈ বলেন। মালিক-এর হাদীস যে, সা‘ব গাধা হাদিয়্যাহ্ দিয়েছেন- এ হাদীসটি ‘‘গাধার গোশ্ত (গোসত/গোশত)’’-এর হাদীসের চেয়ে বেশী শক্তিশালী।

এজন্য ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেন- (باب إذا أهدى للمحرم حمارًا وحشيًا حيًا لم يقبل)

অর্থাৎ- যখন মুহরিম ব্যক্তিকে জীবিত জংলী গাধা উপহার দেয়া হবে তা গ্রহণ করা হবে না। অতঃপর মালিক-এর বর্ণনাকৃত হাদীসটি নিয়ে আসেন।

আবার ‘উলামাগণের মধ্যে কেউ গোশতের হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন- ইবনু ক্বইয়্যিম (রহঃ) বলেন, গোশতের বর্ণনাকৃত হাদীসটি প্রাধান্য পাবে তিনটি কারণে।

১. এ হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীস মুখস্থ করেছে এবং যথাযথভাবে ঘটনা সংরক্ষণ করেছেন। এমনকি বলেছেন- (أنه يقطر دمًا) ‘যে রক্ত ঝড়ঝড় করে পড়ছে’। এটা প্রমাণ করে ঘটনাকে দৃঢ়ভাবে সংরক্ষণের যা অস্বীকার করা যাবে না।

২. গাধা এবং গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) দু’টি শব্দে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) বলতে জীবন্ত প্রাণীও বুঝায় যা বাকরীতি কক্ষনো প্রত্যা্যখ্যান করে না।

৩. সকল বর্ণনা একমত হয়েছে এ বিষয়ে তা গাধার কিছু অংশ তবে মতভেদ করেছে ঐ অংশটি কি তা নিয়ে, তা পা অথবা পাছা, অথবা কোন অংশ অথবা তা হতে কিছু গোশ্‌ত (গোসত/গোশত)। আর এ সমস্ত রিওয়ায়াতে কোন বৈপরীত্য নেই। সম্ভবত কিছু অংশ বলতে পাছা হতে পারে আবার পা দিয়ে এটা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর ইবনু ‘উয়াইনাহ্ তার এ বক্তব্য حمارًا ‘‘গাধা’’ হতে মত পরিবর্তন করে (لحم حمار حتى مات) গাধার গোশ্‌ত এমনকি মারা গেছে বলে প্রমাণ করেছেন।

আর এটা প্রমাণ করে গোশত হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছে জীবন্ত গাধা নয়।

আবার কেউ গাধার উপঢৌকন দেয়ার হাদীসকে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, কুল তথা পূর্ণ দ্বারা কিছু অংশ উদ্দেশ্য, যেমন যুরক্বানী শারহে মুয়াত্ত্বায় ও ইবনু হুমাম ফাতহুল ক্বদীরে বর্ণনা করেছেন।

আবার কেউ এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, সা‘ব  প্রথমে যাবাহকৃত গাধা নিয়ে এসেছেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই কিছু অংশ কেটে তার সামনেই উপস্থাপন করেছেন।

(أَبْوَاءِ) ‘‘আব্ওয়া’’ পাহাড় যা মক্কার নিকটবর্তী আর সেখানে শহর রয়েছে তার দিকে সম্বোধন করা হয়। কারো মতে সেখানে মহামারী হওয়ার কারণে ঐ স্থানকে আব্ওয়া বলা হয়।

‘আয়নী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মা এখানে মারা গেছেন।

(أَوْ بِوَدَّانَ) অথবা ‘‘ওয়াদ্দান’’ রাবী সন্দেহের কারণে এমনটি বলেছেন।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ সেটা আবওয়া হতে জুহফার নিকটবর্তী। আর মদীনাহ্ হতে আসার পথে আব্ওয়া হতে জুহফার দূরত্ব তের মাইল আর ওয়াদ্দান হতে জুহফাহ্ আট মাইল।

(إِنَّا لَمْ نَرُدَّه عَلَيْكَ إِلَّا أنَّا حُرُمٌ) ‘‘আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি, তাই আমরা তোমার হাদিয়্যাহ্ ফেরত দিয়েছি।’’ অর্থাৎ- আমরা তা অন্য কান কারণে ফেরত দেইনি। বরং ইহরাম অবস্থায় আছি, এজন্য তা ফেরত দিয়েছি। এ হাদীসটি তাদের দলীল যারা বলেনঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকারকৃত পশুর গোশ্ত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ নয়।

এ হাদীসের শিক্ষাঃ

১। উপঢৌকন গ্রহণে কোন বাধা থাকলে তা ফেরত দেয়া বৈধ।

২। বিনা কারণে উপঢৌকন ফেরত দেয়া মাকরূহ।

৩। উপঢৌকনদাতার মনোতুষ্টির জন্য উপঢৌকন ফেরত দেয়ার কারণ বর্ণনা করা জরুরী।

৪। দানকৃত বস্ত্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত দাতাই তার মালিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৭-[২] আবূ কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (’উমরা করতে) বের হয়েছেন এবং পথিমধ্যে তিনি তাঁর কিছু সহযাত্রীসহ পিছনে পড়ে গেলেন। সাথীদের সকলেই মুহরিম ছিলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা তখনও ইহরাম বাঁধেননি। আবূ কাতাদা’র দেখার পূর্বে তার সাথীরা একটি বন্যগাধা দেখলেন। তারা বন্যগাধাটি দেখার পর তাকে (আবূ কাতাদা-কে) এভাবেই থাকতে দিলেন। অবশেষে আবূ কাতাদাও ওটাকে দেখে ফেললেন। এরপর তিনি (আবূ কাতাদা) তার ঘোড়ায় চড়ে সাথীদেরকে তার চাবুকটা দিতে বললেন। কিন্তু সাথীরা তা তাকে দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। অতঃপর তিনি নিজেই চাবুক উঠিয়ে নিলেন।

তারপর বন্যগাধাটির ওপর আক্রমণ করে আহত (দুর্বল) করলেন। অবশেষে (তা যাবাহ করার পর) আবূ কাতাদা তা খেলেন এবং তারাও (সাথীরাও) খেলেন কিন্তু এতে তারা অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে তাকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের সাথে বন্যগাধার কিছু আছে কি? তারা উত্তরে বললেন, আমাদের সাথে (রন্ধনকৃত) এর একটি পা আছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন ও খেলেন। (বুখারী, মুসলিম)

বুখারী মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে- তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ কি আবূ কাতাদা-কে বন্যগাধাকে আক্রমণ করার জন্য বলেছিলে? তারা বললেন, জ্বি না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তোমরা এর অবশিষ্ট মাংস (গোসত/মাংস) খেতে পারো।[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّهُ خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَخَلَّفَ مَعَ بَعْضِ أَصْحَابِهِ وَهُمْ مُحْرِمُونَ وَهُوَ غَيْرُ مُحْرِمٍ فَرَأَوْا حِمَارًا وَحْشِيًّا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ فَلَمَّا رَأَوْهُ تَرَكُوهُ حَتَّى رَآهُ أَبُو قَتَادَةَ فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَسَأَلَهُمْ أَنْ يُنَاوِلُوهُ سَوْطَهُ فَأَبَوْا فَتَنَاوَلَهُ فَحَمَلَ عَلَيْهِ فَعَقَرَهُ ثُمَّ أَكَلَ فَأَكَلُوا فَنَدِمُوا فَلَمَّا أَدْرَكُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلُوهُ. قَالَ: «هَلْ مَعَكُمْ مِنْهُ شَيْءٌ؟» قَالُوا: مَعَنَا رِجْلُهُ فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَأكلهَا
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: فَلَمَّا أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَمِنْكُمْ أَحَدٌ أَمَرَهُ أَنْ يَحْمِلَ عَلَيْهَا؟ أَوْ أَشَارَ إِلَيْهَا؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَكُلُوا مَا بَقِيَ مِنْ لَحمهَا»

وعن ابي قتادة انه خرج مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فتخلف مع بعض اصحابه وهم محرمون وهو غير محرم فراوا حمارا وحشيا قبل ان يراه فلما راوه تركوه حتى راه ابو قتادة فركب فرسا له فسالهم ان يناولوه سوطه فابوا فتناوله فحمل عليه فعقره ثم اكل فاكلوا فندموا فلما ادركوا رسول الله صلى الله عليه وسلم سالوه قال هل معكم منه شيء قالوا معنا رجله فاخذها النبي صلى الله عليه وسلم فاكلهاوفي رواية لهما فلما اتوا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال امنكم احد امره ان يحمل عليها او اشار اليها قالوا لا قال فكلوا ما بقي من لحمها

ব্যাখ্যা: (أَنَّه خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ) ‘‘তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলেন’’। অর্থাৎ- হুদায়বিয়ার বৎসর। জেনে রাখা ভাল যে, আবূ কাতাদা কর্তৃক বন্যগাধা শিকার করার বর্ণনার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ মোটকথা এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরী সালে ‘উমরা করার উদ্দেশে মদীনাহ্ থেকে রওয়ানা হলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুলহুলায়ফাহ্ হতে ৩৪ মাইল দূরে রওহা নামক স্থানে পৌঁছলে খবর পান যে, মুশরিক শত্রুরা গয়ক্বাহ্ নামক উপত্যকাতে অবস্থান করছে।

আশঙ্কা করা হয় যে, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসতর্কতার সুযোগে তাঁর ওপর তারা আক্রমণ করতে পারে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ শত্রুদলের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে একদল লোক সেদিকে প্রেরণ করেন। তাদের মাঝে আবূ কাতাদা  ছিলেন। অতঃপর যখন তারা নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এসে মিলিত হন। আবূ কাতাদা ব্যতীত অন্য সবাই ‘উমরা করার নিমিত্তে ইহরাম বাঁধে। আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরামবিহীন অবস্থায় তার ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন এজন্য যে, হয়তঃ তিনি তখনো তার মীকাতে পৌঁছেনি অথবা তার ‘উমরা করার ইচ্ছা ছিল না। মোটকথা, তিনি এ অবস্থায় ‘‘সুক্বইয়্যাহ্’’ নামক স্থানে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্বে রওহা নামক স্থানে শিকারের ঘটনা ঘটে।

(حَتّٰى رَاٰهُ أَبُو قَتَادَةَ فَرَكِبَ فَرَسًا لَه) ‘‘আবূ কাতাদা শিকারী পশু দেখতে পেয়ে তিনি তার বাহনে আরোহণ করেন।’’

(فَسَأَلَهُمْ أَنْ يُنَاوِلُوهُ سَوْطَه فَأَبَوْا) ‘‘তিনি তার সঙ্গীদেরকে চাবুক তুলে দিতে বললে তারা তা তুলে দিতে অস্বীকার করে।’’ কেননা ইহরাম অবস্থায় যেরূপ কোন কিছু শিকার করা হারাম অনুরূপ শিকারীর সহযোগিতা করাও হারাম। তাই তারা আবূ ক্বাতাদার হাতে চাবুক তুলে দিয়ে পশু শিকার কাজে তাকে সহায়তা করতে অস্বীকার করেন।

(ثُمَّ أَكَلَ فَأَكَلُوا فَنَدِمُوْا) ‘‘এরপর আবূ কাতাদা শিকারী পশু রান্না করে তার গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেলেন এবং তাঁর সঙ্গীরাও তা খাবার পর আফসোস করতে থাকল।’’ কেননা তারা ধারণা করেছিল যে, কোন অবস্থাতেই মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকারী পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ নয়।

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে যে, (فأكل بعض أصحاب رسول الله - ﷺ - وأبي بعضهم) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সহাবা তা খেলেন আর কিছু সহাবা তা খেতে অস্বীকার করেন।’’ হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ অনেক বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত যে, তারা ঐ পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল যে, ইহরাম অবস্থায় আমরা কি শিকারী পশুর গোশ্‌ত (গোসত/গোশত) খেতে পারি?

(فَلَمَّا أَدْرَكُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ سَأَلُوْهُ) ‘‘তারা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন তখন তারা তার নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। অর্থাৎ- ইহরাম অবস্থায় শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ কি-না।

(فَأَخَذَهَا النَّبِىُّ ﷺ فَأَكَلَهَا) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে খেলেন।’’ এতে ইঙ্গিত রযেছে যে, কাজের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেয়া কথার মাধ্যমে উত্তর দেয়ার চেয়ে বেশী মজবুত।

কাযী ‘আরায বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বাতাদার নিকট হতে উক্ত শিকারী পশু চেয়ে নিয়ে খেলেন যাতে তাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে যারা তা হতে খেয়েছিলেন। কেননা তাদের মধ্যে যে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল তা দূর করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথা ও কাজের মাধ্যমে তা বৈধ হওয়ার প্রমাণ দিলেন।

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, বন্য গাধা খাওয়া হালাল এবং তা এক প্রকার শিকারী পশু।

এতে এ প্রমাণও পাওয়া যায় যে, মুহরিম ব্যক্তির পক্ষে শিকারকৃত পশুর গোশত (গোসত/গোশত) খাওয়া বৈধ যদি উক্ত পশু মুহরিমের খাবার উদ্দেশে শিকার করা না হয়।

মুসনাদ আহমাদ (৫ম খণ্ড, ৩০৪ পৃঃ) ইবনু মাজাহ্, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক (৪র্থ খণ্ড, ৪৩০ পৃঃ) দারাকুত্বনী, ইসহাক ইবনু রহওয়াইহ্, ইবনু খুযায়মাহ্ ও বায়হাক্বী (৫ম খণ্ড, ১৯০ পৃঃ) মা‘মার (রহঃ)-এর বরাতে ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবী কাসীর থেকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবী কাতাদা সূত্রে তার পিতা আবূ কাতাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ হুদায়বিয়ার সময়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরসঙ্গী ছিলাম। আমার সঙ্গীগণ ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। আমি একটি বন্যগাধা দেখতে পেয়ে তা আক্রমণ করে শিকার করি। বিষয়টি আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখপূর্বক বললামঃ এটা কিন্তু আপনার জন্যই শিকার করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদেরকে তা খেতে বললেন কিন্তু আমি তাঁর জন্য শিকার করেছি এ কথা বলাতে তিনি তা আর খেলেন না।

ইবনু খুযায়মাহ্ বলেনঃ এ হাদীসের এ অতিরিক্ত অংশটুকু যদি সহীহ বলে গণ্য হয় তাহলে এর মর্ম হলো যে, আবূ কাতাদা তাঁর উদ্দেশে পশুটি শিকার করেছেন এ কথা বলার আগে তিনি তা থেকে খেয়েছিলেন। অতঃপর তিনি যখন তাঁকে অবহিত করলেন যে, এটি তাঁর উদ্দেশেই শিকার করেছেন তখন তা খাওয়া থেকে বিরত থাকলেন।

(فَكُلُوْا مَا بَقِىَ مِنْ لَحْمِهَا) ‘‘এর অবশিষ্ট গোশত তোমরা খাও’’। এ আদেশসূচক শব্দ বৈধতা বুঝানোর জন্য, আবশ্যক বুঝানোর জন্য নয়। কেননা এ আদেশটি ছিল তাদের প্রশ্নের জবাব স্বরূপ। আর প্রশ্ন ছিল খাওয়া বৈধ কি-না, এ সম্পর্কে?

এ হাদীসের শিক্ষাঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা বৈধ নয় এবং এ সংক্রান্ত সাহায্য-সহযোগিতাও বৈধ নয়।

হালাল ব্যক্তি যে পশু শিকার করে তা থেকে মুহরিম ব্যক্তির খাওয়া বৈধ যদি না তার উদ্দেশে শিকার করা হয়। এ বিষয়ে সকলেই একমত। তবে যদি পশুটি মুহরিম ব্যক্তির উদ্দেশে শিকার করা হয় তাহলে জমহূর ‘উলামাগণের মতে তা মুহরিম ব্যক্তির পক্ষে খাওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতে তা খাওয়া বৈধ যদিও তা মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা হয়। আবূ কাতাদা বর্ণিত এ হাদীসটিই তাদের সপক্ষে দলীল।

জমহূর ‘উলামাগণ এ হাদীসের জবাবে বলেন যে, মা‘মার (রহঃ)-এর বরাতে বর্ণিত হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবূ কাতাদা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করলেন যে, পশুটি তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশেই শিকার করেছেন তখন তিনি তা থেকে খেতে বিরত থাকলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৮-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হারামে কিংবা ইহরাম অবস্থায় পাঁচটি প্রাণী তথা ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর হত্যা করেছে, তার কোন গুনাহ হবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَمْسٌ لَا جُنَاحَ عَلَى من قتلَهُنّ فِي الْحل وَالْإِحْرَامِ: الْفَأْرَةُ وَالْغُرَابُ وَالْحِدَأَةُ وَالْعَقْرَبُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ

وعن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال خمس لا جناح على من قتلهن في الحل والاحرام الفارة والغراب والحداة والعقرب والكلب العقور

ব্যাখ্যা: (فِى الْحَرَمِ وَالْإِحْرَامِ) ‘‘হারাম এলাকায় ও ইহরাম অবস্থায়।’’ অর্থাৎ- মক্কার হারাম এলাকায় মুহরিম ব্যক্তির জন্য হাদীসে উল্লিখিত পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করা বৈধ।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, হারাম এলাকার বাইরে ইহরামবিহীন ব্যক্তির পক্ষে তা হত্যা করা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বৈধ। কেননা ইহরাম অবস্থায় কোন কিছু হত্যা করা অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও যখন তার জন্য এ প্রাণীগুলো হত্যা করা বৈধ তখন যার মধ্যে এ অবৈধতা নেই তার জন্য নিশ্চিতভাবে তা বৈধ।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীসে এগুলো হত্যা করার মধ্যে ক্ষতি নেই বলা হয়েছে যা দ্বারা এগুলো হত্যা করা বৈধতা বুঝায়। আর আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে এগুলো হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে, এগুলো হত্যা করা মুস্তাহাব; শাফি‘ঈ, হাম্বালী ও আহলুয্ যাহিরদের মতানুযায়ী তা হত্যা করা মুস্তাহাব।

অত্র হাদীসে পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করার বৈধতা বর্ণিত হয়েছে। যদিও পাঁচ সংখ্যাটি খাস, অর্থাৎ- নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝায় কিন্তু অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে নির্দিষ্ট সংখ্যা উদ্দেশ্য নয়। বরং সকল প্রকার কষ্টদায়ক প্রাণীই হত্যা করা বৈধ।

(الْفَأْرَةُ) ইঁদুর। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহূর ‘উলামাগণের মতে মুহরিমের জন্য ইঁদুর হত্যা করা বৈধ। একমাত্র ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ তা হারাম বলেছেন। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর বলেনঃ এ অভিমত হাদীস ও ‘উলামাগণের মতের বিরোধী। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেন, এ অভিমত সুস্পষ্ট দলীল ও ‘আলিমদের মতের বিরোধী।

(الْغُرَابُ) ‘‘কাক’’। অর্থাৎ- সাদা-কালো ডোরাকাটা কাক। যে কাকের পিঠে ও পেটে সাদা বর্ণের পালক রয়েছে তাকেই الْغُرَابُ الْأَبْقَعْ বলা হয় আর তা হত্যা করা বৈধ।

সকল ‘আলিমগণ একমত যে, যে সমস্ত ছোট কাক শুধু শস্যদানা ভক্ষণ করে সে কাক হত্যা করা বৈধ নয়। আর তা খাওয়াও বৈধ।

(وَالْكَلْبُ الْعَقُوْرُ) ‘‘হিংস্র কুকুর। এ দ্বারা কি উদ্দেশ্য এ নিয়ে ‘আলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে।

(১) ইমাম যুফার বলেনঃ এখানে الْعَقُوْرُ শব্দ দ্বারা নেকড়ে বাঘ উদ্দেশ্য।

(২) ইমাম মালিক বলেনঃ প্রত্যেক ঐ হিংস্রপ্রাণী উদ্দেশ্য যা মানুষের ওপর আক্রমণ চালায় যেমন- চিতা বাঘ, সিংহ, নেকড়ে বাঘ ইত্যাদি। জমহূর ‘আলিমদের অভিমতও তাই।

(৩) ইমাম আবূ হানীফা বলেনঃ (الْكَلْبُ الْعَقُوْرُ) দ্বারা কুকুরই উদ্দেশ্য তবে পাগলা বা ক্ষ্যাপা কুকুর।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ সকল ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কুকুর ইহরামধারী, ইহরামবিহীন, হারাম এলাকা বা হারামের বাইরে সর্বত্র হত্যা করা বৈধ।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসে উল্লিখিত পাঁচ প্রকার প্রাণী ছাড়াও কষ্টদায়ক অন্যান্য প্রাণীও হত্যা করা বৈধ। কিন্তু এ বৈধতার কারণ সম্পর্কে তারা মতভেদ করেছেন।

(১) ইমাম মালিক-এর মতে তা কষ্টদায়ক প্রাণী, তাই হত্যা করা বৈধ।

(২) ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতে তা খাওয়া অবৈধ, তাই তা হত্যা করা বৈধ।

(৩) হানাফীদের মতে হাদীসে বর্ণিত শুধু পাঁচ প্রকার প্রাণীই হত্যা করা বৈধ। তবে সাপ হত্যা করা অন্য দলীলের ভিত্তিতে এবং নেকড়ে বাঘ কুকুরের সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে তা হত্যা করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুহরিম ব্যক্তির শিকার করা হতে বিরত থাকবে

২৬৯৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি ক্ষতিকর প্রাণী হিল্ ও হারাম (সর্বস্থানে) যে কোন স্থানেই হত্যা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো সাপ, (সাদা কালো) কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمُحْرِمِ يَجْتَنِبُ الصَّيْدَ

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَمْسٌ فَوَاسِقُ يُقْتَلْنَ فِي الْحِلِّ وَالْحَرَمِ: الْحَيَّةُ وَالْغُرَابُ الْأَبْقَعُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ وَالْحُدَيَّا

وعن عاىشة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال خمس فواسق يقتلن في الحل والحرم الحية والغراب الابقع والفارة والكلب العقور والحديا

ব্যাখ্যা: حِلِّ (হিল্): এর অর্থ কয়েকটি- হালাল, মক্কার আশেপাশের সম্মানিত স্থান ব্যতীত অন্য জায়গাকে বলা হয়, ইহরাম থেকে বের হওয়ার সময়, কোন স্থানে অবতরণকারীকেও হিল্ করা হয়।

(حَرَمِ) হারামঃ এর অর্থ প্রত্যেক ঐ বস্ত্ত যার সংরক্ষণ করা হয়। নিষিদ্ধ, পবিত্র, পবিত্র স্থান, হেরেম, ক্যাম্পাস, যার দিক থেকে প্রতিরোধ করা হয়।

(خَمْسٌ فَوَاسِقُ) ‘‘পাঁচ প্রকার ক্ষতিকর প্রাণী।’’ পাঁচ প্রকার প্রাণীকে ফাসিক্ব বলার কারণ এই যে, অন্যান্য প্রাণীর হুকুম থেকে এ প্রাণীগুলোর হুকুম পৃথক। অর্থাৎ- অন্যান্য প্রাণী হত্যা করা হারাম, আর এগুলো হত্যা করা বৈধ অথবা এগুলো খাওয়া হারাম, অথবা এগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ক্ষতিকারক, এর মধ্যে কোন উপকার নেই। পক্ষান্তরে অন্যান্য প্রাণী উপকারী।

‘আল্লামা তুরবিশতী বলেনঃ প্রাণীকুলের মধ্য থেকে এ পাঁচ প্রকার ক্ষতিকর প্রাণীকে অন্যান্য প্রাণী হতে পৃথক হুকুম দেয়ার কারণ এই যে, এর অপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা অবহিত অথবা এগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনার মানুষের জন্য অধিক ও দ্রুত ক্ষতিকর। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা হয় যে, কোন হত্যাকারী হত্যা করার পর হেরেমে আশ্রয় গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করা বৈধ। কেননা এ প্রাণী হত্যা করা বৈধ হওয়ার কারণ হলো এগুলো ফাসিক। আর হত্যাকারীও ফাসিক্ব, তাই ঐ প্রাণীগুলোর মতো হত্যাকারীকেও হেরেমে হত্যা করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে