পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

২৬০২-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা (’আরাফার দিন) মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং নিজেদেরকে তারা বাহাদুর ও অভিজাত বলে অভিহিত করতো। আর সমস্ত ’আরব গোত্র ’আরাফার ময়দানে অবস্থান গ্রহণ করতো। অতঃপর ইসলাম আসার পর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করলেন, ’আরাফার ময়দানে গিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে অবস্থান নিতে, তারপর সেখান থেকে ফিরে আসতে। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে এ ব্যাপারটিকে এভাবেই বলেছেন, ’’সুম্মা আফীযূ মিন হায়সু আফা-যান্না-সু’’ (অর্থাৎ- অতঃপর তোমরা ফিরে আসো, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ ফিরে আসে।’’)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

عَن عَائِشَة قَالَتْ: كَانَ قُرَيْشٌ وَمَنْ دَانَ دِينَهَا يَقِفُونَ بالمزْدَلفَةِ وَكَانُوا يُسمَّوْنَ الحُمْسَ فكانَ سَائِرَ الْعَرَبِ يَقِفُونَ بِعَرَفَةَ فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ أَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَأْتِيَ عَرَفَاتٍ فَيَقِفُ بِهَا ثُمَّ يَفِيضُ مِنْهَا فَذَلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ: (ثُمَّ أفِيضُوا من حَيْثُ أَفَاضَ النَّاس)

عن عاىشة قالت كان قريش ومن دان دينها يقفون بالمزدلفة وكانوا يسمون الحمس فكان ساىر العرب يقفون بعرفة فلما جاء الاسلام امر الله تعالى نبيه صلى الله عليه وسلم ان ياتي عرفات فيقف بها ثم يفيض منها فذلك قوله عز وجل ثم افيضوا من حيث افاض الناس

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে হজ্জের কার্যাবলী সম্পাদনের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয়া হয়েছে। জাহেলী যুগে কুরায়শগণ মুযদালিফা থেকে সরাসরি তাওয়াফে চলে আসত। বাকী সব ‘আরবগণ ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলাম যখন আসলো তখন আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দিলেন যে, সকলকে ‘আরাফায় অবস্থান করতে হবে। আর এ অবস্থান হজ্জের অন্যতম ফরয কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘‘তোমরা সেখান থেকে তাওয়াফের জন্য ফিরে আসো যেখান থেকে লোকেরা আসে’’- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৯)। এ আয়াতে যে স্থানের কথা বলা হয়েছে তা হলো ‘আরাফার ময়দান।

ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ মক্কাহ্বাসী হজ্জের সময় হারাম এলাকা থেকে বের হত না, আর ‘আরাফাহ্ হারামের বাহিরে। তারা মুযদালিফায় অবস্থান করত, আর বলত যে, আমরা আল্লাহর ঘরের অধিবাসী। মক্কাহবাসীদের ‘আরাফায় অবস্থান না করার কারণে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন যে, সকলকে ‘আরাফায় অবস্থান করতে হবে।

ইমাম সিন্দী বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করাকে আবশ্যক করে দিয়েছে।

হাফিয ‘ইরাকী বলেনঃ এ হাদীসে বর্ণিত আয়াতে যে স্থানের কথা বলা হয়েছে তা হলো- ‘আরাফার মাঠ। অর্থাৎ- যেখানে সকল হজ্জ/হজকারীকে অবস্থান করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

২৬০৩-[১২] ’আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আরাফার দিন বিকালে নিজের উম্মাতের (হাজীদের) জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। উত্তর দেয়া হলো, অত্যাচারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। কেননা আমি মাযলূমের পক্ষ হয়ে যালিমকে পাকড়াও করে হাক্ব আদায় করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আমার রব! আপনি ইচ্ছা করলে মাযলূমকে জান্নাত দিতে পারেন এবং যালিমকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু সেদিন বিকালে তাঁর দু’আ কবূল হলো না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মুযদালিফায় ভোরে উঠলেন, তখন আবার সেই দু’আ করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা চেয়েছিলেন তা তাঁকে দেয়া হলো। রাবী ’আব্বাস বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুচকী হাসলেন। এ সময় আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) বললেন, আমাদের পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এটা তো এমন একটা সময় যে, আপনি কোন সময়ই হাসতেন না। কিসে আপনাকে হাসালো? আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আরও হাসিখুশি রাখুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলীস যখন জানতে পারলো যে, আল্লাহ আমার দু’আ কবূল করেছেন এবং উম্মাত (হাজীদেরকে) ক্ষমা করে দিয়েছেন তখন সে মাটি উঠিয়ে নিজের মাথায় ছিটাতে লাগলো আর বলতে লাগলো, হায় আমার কপাল! হায় আমার দুর্ভাগ্য! ইবলীসের এ অস্থিরতা দেখেই আমায় হাসি এসেছে। [ইবনু মাজাহ; বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর ’’কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশূর’’-এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন][1]

وَعَن عبَّاسِ بنِ مِرْداسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَا لِأُمَّتِهِ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ بِالْمَغْفِرَةِ فَأُجِيبَ: «إِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ مَا خَلَا الْمَظَالِمَ فَإِنِّي آخُذُ لِلْمَظْلُومِ مِنْهُ» . قَالَ: «أَيْ رَبِّ إِنْ شِئْتَ أَعْطَيْتَ الْمَظْلُومَ مِنَ الْجَنَّةِ وَغَفَرْتَ لِلظَّالِمِ» فَلَمْ يُجَبْ عَشِيَّتَهُ فَلَمَّا أَصْبَحَ بِالْمُزْدَلِفَةِ أَعَادَ الدُّعَاءَ فَأُجِيبَ إِلَى مَا سَأَلَ. قَالَ: فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوِ قَالَ تبسَّمَ فَقَالَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي إِنَّ هَذِهِ لَسَاعَةٌ مَا كُنْتَ تَضْحَكُ فِيهَا فَمَا الَّذِي أَضْحَكَكَ أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ؟ قَالَ: «إِنَّ عَدُوَّ اللَّهِ إِبْلِيسَ لَمَّا عَلِمَ أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدِ اسْتَجَابَ دُعَائِي وَغَفَرَ لأمَّتي أخذَ الترابَ فَجعل يحشوه عَلَى رَأْسِهِ وَيَدْعُو بِالْوَيْلِ وَالثُّبُورِ فَأَضْحَكَنِي مَا رَأَيْتُ مِنْ جَزَعِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى البيهقيُّ فِي كتاب الْبَعْث والنشور نحوَه

وعن عباس بن مرداس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا لامته عشية عرفة بالمغفرة فاجيب اني قد غفرت لهم ما خلا المظالم فاني اخذ للمظلوم منه قال اي رب ان شىت اعطيت المظلوم من الجنة وغفرت للظالم فلم يجب عشيته فلما اصبح بالمزدلفة اعاد الدعاء فاجيب الى ما سال قال فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم او قال تبسم فقال له ابو بكر وعمر بابي انت وامي ان هذه لساعة ما كنت تضحك فيها فما الذي اضحكك اضحك الله سنك قال ان عدو الله ابليس لما علم ان الله عز وجل قد استجاب دعاىي وغفر لامتي اخذ التراب فجعل يحشوه على راسه ويدعو بالويل والثبور فاضحكني ما رايت من جزعه رواه ابن ماجه وروى البيهقي في كتاب البعث والنشور نحوه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। হাদীসের প্রারম্ভে দেখা যাচ্ছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মাতের জন্য হজ্জের সময় আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছেন যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উম্মাতকে মাফ করে দেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর ব্যাখ্যায় মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য করেছেন যারা তাঁর সাথে হজ্জ/হজ করেছিলেন।

‘আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল উম্মাতের জন্য দু‘আ করেছিলেন যারা তখন তার সাথে হজ্জ/হজ করেছিলেন এবং যারা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হজ্জ/হজ করবেন সকলের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেছেন। অথবা তিনি সকল উম্মাতের জন্য দু‘আ করেছেন চাই সে হজ্জ করুক বা না করুক।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে