পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

২৫৯২-[১] মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আস্ সাক্বাফী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তখন তারা উভয়ে মিনা হতে সকালে ’আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলেন। আপনারা এ ’আরাফার দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কি করতেন? তখন তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়াহ্ পাঠ করার পাঠ করতো, এজন্যে তাদের তা হতে নিষেধ করা হতো না এবং যারা তাকবীর ধ্বনি দিতো এতেও নিষেধ করা হতো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوُقُوْفِ بِعَرَفَةَ

عَن محمدِ بن أبي بكرٍ الثَقَفيُّ أَنَّهُ سَأَلَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ وَهُمَا غَادِيَانِ مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَةَ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ فِي هَذَا الْيَوْمِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: كَانَ يُهِلُّ مِنَّا الْمُهِلُّ فَلَا يُنْكَرُ عَلَيْهِ وَيُكَبِّرُ الْمُكَبِّرُ مِنَّا فَلَا يُنكَرُ عَلَيْهِ

عن محمد بن ابي بكر الثقفي انه سال انس بن مالك وهما غاديان من منى الى عرفة كيف كنتم تصنعون في هذا اليوم مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان يهل منا المهل فلا ينكر عليه ويكبر المكبر منا فلا ينكر عليه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটিতে মীনা হতে ‘আরাফাহ্ গমনের পথে তালবিয়াহ্ ও তাকবীর পাঠ করা বৈধ হওয়ার দলীল। যদি কেউ ‘আরাফাহ্ গমনের পথে তালবিয়াহ্ অথবা তাকবীর পাঠ করে তবে তার বৈধতা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগেও সাহাবীগণ পাঠ করেছিলেন। তিনি অস্বীকৃতি জানাননি। তাঁর চুপ থাকা স্বীকৃতির পরিচায়ক। আর সাহাবীগণও পরস্পর পরস্পরকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করেননি। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, মীনা হতে ‘আরাফাহ্ গমনের পথে তালবিয়াহ্ এবং তাকবীর পাঠ করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে হাদীসটি দলীল।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অন্যান্য যিকিরের ন্যায় তাকবীর পড়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ‘আরাফার দিন তাকবীর পাঠ করা হাজীদের সুন্নাত নয়, বরং সুন্নাত হচ্ছে কুরবানীর দিন জামারাতুল ‘আক্বাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ পর্যন্তও সময় তালবিয়াহ্ পাঠ করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

২৫৯৩-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি, মিনা সম্পূর্ণটাই কুরবানীর স্থান। তাই তোমরা তোমাদের বাসায় কুরবানী কর। আমি এ স্থানে (’আরাফায়) অবস্থান করেছি, আর ’আরাফাহ্ সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান এবং আমি এ জায়গায় অবস্থান করেছি, আর মুযদালিফা সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْوُقُوْفِ بِعَرَفَةَ

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «نحرتُ هَهُنَا وَمِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ فَانْحَرُوا فِي رِحَالِكُمْ. وَوَقَفْتُ هَهُنَا وعرفةُ كلُّها موقفٌ. ووقفتُ هَهُنَا وجَمْعٌ كلُّها موقفٌ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال نحرت ههنا ومنى كلها منحر فانحروا في رحالكم ووقفت ههنا وعرفة كلها موقف ووقفت ههنا وجمع كلها موقف رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানী করার স্থানকে এবং ‘আরাফায় অবস্থান করার স্থানকে নির্দিষ্ট না করার দলীল। বরং মিনার সকল স্থানে কুরবানী করা বৈধ। কিন্তু উত্তম হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে কুরবানী করেছেন সেখানে কুরবানী করা ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন। সারকথা হচ্ছে মিনার সকল স্থানে কুরবানী করা বৈধ। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাড়ীতে কুরবানী করো। আর তোমরা কুরবানী আমার কুরবানী করার স্থানে কুরবানী করা ধার্য করে নিয়ো না, বরং মিনায় অবস্থিত তোমাদের বাড়িগুলোতেও কুরবানী করতে পার। আর ‘উরানাহ্ নামক স্থান ব্যতীত ‘আরাফার সকল স্থানেই অবস্থান করার জায়গা। সকল ‘উলামা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ‘আরাফার যে কোন স্থানে অবস্থান করলে তা শুদ্ধ হবে। এর চারটি সীমারেখা আছে,

১. পূর্ব দিকের রাস্তার সীমানা।

২. পাহাড় সংলগ্ন সীমানা, যা তার পেছনে আছে।

৩. কাবার সামনের বাম পাশের দুই পাশ সংলগ্ন বাগানের সীমানা পর্যন্ত।

৪. ‘উরানাহ্ উপত্যকা।

‘উরানাহ্ উপত্যকা ও নামিরাহ্ ‘আরাফাহ্ ও হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

২৫৯৪-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে ’আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ- যা চায় আমি তাদেরকে তাই দেবো)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْوُقُوْفِ بِعَرَفَةَ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ . رَوَاهُ مُسلم

وعن عاىشة قالت ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما من يوم اكثر من ان يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة وانه ليدنو ثم يباهي بهم الملاىكة فيقول ما اراد هولاء رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসটি ‘আরাফার দিন ফাযীলাতপূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে দলীল। যদি কেউ বলেন, আমার স্ত্রী সর্বোত্তম দিনে ত্বলাক্ব। এ উত্তম দিনটির ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে।

১. জুমু‘আর দিন উদ্দেশ্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসের কারণে,

خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ فِيْهِ الشَّمْسُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ.

অর্থাৎ- এক সপ্তাহের বা সাত দিনের মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন। আর এভাবেই এ হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

২. ‘আরাফার দিন উদ্দেশ্য, সরাসরি হাদীসে বর্ণিত হওয়ার কারণে। ‘আরাফার দিন ফাযীলাতপূর্ণ হওয়ার হাদীসটি বাহ্যিকভাবে ইঙ্গিত বহন করে যে, সালফে সলিহীনদের মতানুসারে তিনি সুবহানাহূ তা‘আলা মাখলূকের সাথে কোন প্রকার তা’বীল, তাক্‘ঈফ ও তাসবীহ ব্যতীত ‘আরাফার দিন দুপুরের পরে বান্দাদের নিকটবর্তী হন। অতঃপর বান্দাকে নিয়ে মালায়িকাহ্’র সাথে ফখর করেন।

মুল্লা ‘আলী কারী বলেন, তারা কি চায়? যার কারণে তারা পরিবার ও দেশ ত্যাগ করেছে, মাল ব্যয় করেছে। মূলত তারা ক্ষমা, সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও সাক্ষাৎ লাভ করতে চায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে