পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২১৫-[৫] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের সাথে দেখা করলেন। তিনি বললেন, হে জিবরীল! আমি এক নিরক্ষর উম্মাতের কাছে প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে আছে প্রবীণা বৃদ্ধা, প্রবীণ বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী। এমন ব্যক্তিও আছে যে কখনো লেখাপড়া করেনি। জিবরীল বললেন, হে মুহাম্মাদ! (এতে ভয় নেই) কুরআন সাত রীতিতে (পড়ার অনুমতি নিয়ে) নাযিল হয়েছে। (তিরমিযী।)

আহমদ ও আবূ দাঊদের এক বর্ণনায় আরো আছে, ’’এদের প্রত্যেক পাঠই (অন্তর রোগের জন্য) নিরাময় দানকারী ও যথেষ্ট। কিন্তু নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, জিবরীল ও মীকাঈল আমার নিকট এলেন। জিবরীল আমার ডানদিকে ও মীকাঈল বাম দিকে বসলেন। জিবরীল বললেন, আপনি আমার কাছ থেকে কুরআন পড়ার রীতি শিখে নিন। তখন মীকাঈল বললেন, আপনি তার নিকট কুরআন পড়ার রীতি বৃদ্ধির আবেদন করুন। আমি তা করলাম। অতঃপর এ রীতি সাত পর্যন্ত পৌঁছল। তাই এ সাত রীতির প্রত্যেকটাই আরোগ্য দানকারী ও যথেষ্ট।[1]

عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَقِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِبْرِيلَ فَقَالَ: يَا جِبْرِيلُ إِنِّي بُعِثْتُ إِلَى أُمَّةٍ أُمِّيِّينَ مِنْهُمُ الْعَجُوزُ وَالشَّيْخُ الْكَبِيرُ وَالْغُلَامُ وَالْجَارِيَةُ وَالرَّجُلُ الَّذِي لَمْ يَقْرَأْ كِتَابًا قَطُّ قَالَ: يَا مُحَمَّد إِن الْقُرْآن أونزل عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لِأَحْمَدَ وَأَبِي دَاوُدَ: قَالَ: «لَيْسَ مِنْهَا إِلَّا شَافٍ كَافٍ» . وَفِي رِوَايَةٍ لِلنَّسَائِيِّ قَالَ: إِنَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ أَتَيَانِي فَقَعَدَ جِبْرِيلُ عَنْ يَمِينِي وَمِيكَائِيلُ عَنْ يَسَارِي فَقَالَ جِبْرِيلُ: اقْرَأِ الْقُرْآنَ عَلَى حَرْفٍ قَالَ مِيكَائِيلُ: اسْتَزِدْهُ حَتَّى بَلَغَ سَبْعَة أحرف فَكل حرف شاف كَاف

عن أبي بن كعب رضي الله عنه قال: لقي رسول الله صلى الله عليه وسلم جبريل فقال: يا جبريل إني بعثت إلى أمة أميين منهم العجوز والشيخ الكبير والغلام والجارية والرجل الذي لم يقرأ كتابا قط قال: يا محمد إن القرآن أونزل على سبعة أحرف . رواه الترمذي وفي رواية لأحمد وأبي داود: قال: «ليس منها إلا شاف كاف» . وفي رواية للنسائي قال: إن جبريل وميكائيل أتياني فقعد جبريل عن يميني وميكائيل عن يساري فقال جبريل: اقرأ القرآن على حرف قال ميكائيل: استزده حتى بلغ سبعة أحرف فكل حرف شاف كاف

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরক্ষর জাতির নিকটে আগমন করেছেন। নিরক্ষর বলতে যারা লিখিত বিষয়কে ভালভাবে পড়তে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِى الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ ‘‘তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রসূলকে তাদেরই মধ্য হতে’’- (সূরা আল জুমাহ্ ৬২ : ২)।

আবার কেউ বলেছেন أمى বলা হয়, যারা লিখতে ও কোন কিতাব পড়তে পারে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (إنا أمة أمية لا نكتب ولا نحسب) অর্থাৎ- আমরা এমন এক নিরক্ষর জাতি যারা লিখতে পারে না ও হিসাব করতে জানে না। যাদের মধ্যে রয়েছে عجوز বা বৃদ্ধা মহিলা ও الشيخ الكبير বা বৃদ্ধা লোক- এরা বার্ধক্যজনিত কারণে শিখতে অপারগ। الغلام الجارية ছোট ছেলে-মেয়ে শৈশবকালে থাকায় পড়তে সক্ষম হয় না। এরা যাতে সহজে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। তাই জিবরীল বললেন, কুরআন নাযিল হয়েছে সাত রীতিতে।

প্রত্যেকটি রীতিকে মূর্খতা রোগের আরোগ্য দানকারী এবং সালাতের জন্য যথেষ্ট করা হয়েছে। অথবা উদ্দেশ্যবোধ রোগের নিরাময়কারী এবং অলঙ্কার প্রকাশে অপারগ ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।

মিরকাত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন, অর্থ সঙ্গতি বিধানে মু’মিন বক্ষের নিরামক এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সততা প্রমাণে যথেষ্ট।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২১৬-[৬] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তিনি এক গল্পকারের নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন, সে গল্পকার কুরআন পড়ছে। আর মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছে। (এ দৃশ্য দেখে) তিনি দুঃখে ’ইন্না- লিল্লা-হি’ পড়লেন। এরপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে সে যেন বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায়। খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে যারা কুরআন পড়ে বিনিময়ে মানুষের কাছে হাত পাতবে। (আহমদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ مَرَّ عَلَى قَاصٍّ يَقْرَأُ ثُمَّ يَسْأَلُ. فَاسْتَرْجَعَ ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فليسأل الله بِهِ فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقوام يقرؤون الْقُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ النَّاسَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ

وعن عمران بن حصين رضي الله عنهما أنه مر على قاص يقرأ ثم يسأل. فاسترجع ثم قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «من قرأ القرآن فليسأل الله به فإنه سيجيء أقوام يقرؤون القرآن يسألون به الناس» . رواه أحمد والترمذي

ব্যাখ্যা: কুরআন পড়ে বা কুরআনের আলোচনা করে এক ব্যক্তি মানুষের নিকট থেকে দুনিয়ার কোন বিনিময় চাইলে ‘ইমরান বিন হুসায়ন ‘‘ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-যি‘ঊন’’ পড়লেন। কারণ ঘটনা বর্ণনাকারী কুরআনের বিনিময়ে মানুষের নিকটে কিছু চাওয়া বিপদে নিপতিত হয়েছে। কেননা এটি বিদআত (বিদাত) বা পাপ কাজ। আর মুসলিমদের মাঝে এরূপ বিদআত (বিদাত) বা পাপকার্য প্রকাশ পাওয়া এক ধরনের বিপদ। অথবা তিনি নিজেই এরূপ জঘন্য অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার পরীক্ষায় পড়েছেন যা এক ধরনের বিপদ। তাই তিনি ‘‘ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-যি‘ঊন’’ পড়লেন।

কুরআন পড়লে দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কে আল্লাহর নিকটে চাইতে হবে। মানুষের কাছে নয়। হতে পারে যে, পাঠক যখন রহমাতের আয়াত পড়বে তখন সে আল্লার কাছে চাইতে। আর যখন শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত পাঠ করবে- সে তখন তা থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর তিলাওয়াতের শেষে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত দু‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করবে। আর তার দু‘আ পরকালীন ও মুসলিমদের ইহকালে ও পরকালে কল্যাণের জন্য হওয়া উচিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن) 8. The Excellent Qualities of the Quran
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে