পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ

৫৮৪-[৪] ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খলীফাহ্ ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) একদিন ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেরীতে আদায় করালেন। ’উরওয়াহ্ [ইবনুয্ যুবায়র] (রহঃ) খলীফাকে বললেন, সাবধান! জিবরীল (আঃ) নাযিল হয়েছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিয়েছিলেন (ইমামাত করেছিলেন)। ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয বললেন, দেখ ’উরওয়াহ্! তুমি কী বলছো? উত্তরে ’উরওয়াহ্ বললেন, আমি বাশীর ইবনু আবী মাস্’ঊদ হতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। জিবরীল (আঃ) অবতীর্ণ হলেন। আমার ইমামাত করলেন। আমি তার সাথে সালাত (যুহর) আদায় করলাম। তারপর তাঁর সাথে সালাত আদায় করলাম (’আসর)। আবার তাঁর সাথে সালাত আদায় করলাম (মাগরিব)। এরপর তাঁর সাথে সালাত আদায় করলাম (’ইশা)। অতঃপর তাঁর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলাম (ফাজর (ফজর)। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের আঙ্গুল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হিসাব করছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

وَعَن ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ أَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَهُ عُرْوَةُ: أَمَا إِنَّ جِبْرِيلَ قَدْ نَزَلَ فَصَلَّى أَمَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: اعْلَمْ مَا تَقُولُ يَا عُرْوَةُ فَقَالَ: سَمِعْتُ بَشِيرَ بْنَ أَبِي مَسْعُودٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «نَزَلَ جِبْرِيلُ فَأَمَّنِي فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ» يحْسب بأصابعه خمس صلوَات

وعن ابن شهاب ان عمر بن عبد العزيز اخر العصر شيىا فقال له عروة اما ان جبريل قد نزل فصلى امام رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال له عمر اعلم ما تقول يا عروة فقال سمعت بشير بن ابي مسعود يقول سمعت ابا مسعود يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول نزل جبريل فامني فصليت معه ثم صليت معه ثم صليت معه ثم صليت معه ثم صليت معه يحسب باصابعه خمس صلوات

ব্যাখ্যা: বর্ণিত এ হাদীসের মধ্যে ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয-এর একদিনের ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ে বিলম্ব করার এবং ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবাযর-এর তাঁকে সালাতের সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ উপদেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) কোন একদিন মিম্বারে বসে মুসলিম প্রজাদেরকে কিছু নাসীহাত করতে করতে ‘আসরের আও্ওয়াল ওয়াক্ত পার করে দিয়েছিলেন। মসজিদে উপস্থিত ছিলেন সাহাবী ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)। সাহাবী সাথে সাথে উপদেশ দিলেন যে, আপনি উত্তম কাজে ব্যাস্ত আছেন ঠিকই। কিন্তু ‘আসরের আও্ওয়াল ওয়াক্ত পার করে দেয়া উচিত নয়। কারণ শুধু সালাতের সময়টি বুঝানোর উদ্দেশে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন স্বয়ং জিবরীল (আঃ) কে রসূলের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। সুতরাং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আও্ওয়াল ওয়াক্তেই আদায় করে নিতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ

৫৮৫-[৫] খলীফাহ্ ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার শাসনকর্তাদের কাছে লিখলেন, আমার কাছে আপনাদের সকল কাজের মধ্যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ই হলো সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যে এর যথাযথ হিফাযাত করেছে ও তা রক্ষা করেছে, সে তার দীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা বিনষ্ট করেছে সে তা ছাড়া অপরগুলোর পক্ষে আরো বেশী বিনষ্টকারী প্রমাণিত হবে। অতঃপর তিনি লিখলেন, যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে ছায়া এক বাহু ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে ছায়া এক মিসাল হওয়া পর্যন্ত (ছায়া আসলী বাদ দিয়ে)। সূর্য উপরে পরিষ্কার সাদা থাকা অবস্থায় ’আসরের সালাত আদায় করবে, যাতে একজন আরোহী সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দু’ বা তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করে যেতে পারে। মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে সূর্য অস্ত যাবার পরপর। ’ইশার সালাত আদায় করবে ’শাফাক্ব’ দূর হয়ে যাবার পর থেকে শুরু করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তার চোখ না ঘুমাক যে এর আগে ঘুমাবে (তিনবার বললেন)। অতঃপর ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করবে যখন তারাসমূহ পরিষ্কার হয় ও চকমক করে। (মালিক)[1]

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ كَتَبَ إِلَى عُمَّالِهِ إِنَّ أَهَمَّ أُمُورِكُمْ عِنْدِي الصَّلَاة فَمن حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَفِظَ دِينَهُ وَمَنْ ضَيَّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ ثُمَّ كَتَبَ أَنْ صلوا الظّهْر إِذا كَانَ الْفَيْءُ ذِرَاعًا إِلَى أَنْ يَكُونَ ظِلُّ أَحَدِكُمْ مِثْلَهُ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرَّاكِبُ فَرْسَخَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً قبل مغيب الشَّمْس وَالْمغْرب إِذا غربت الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ وَالصُّبْحَ وَالنُّجُومُ بَادِيَةٌ مُشْتَبِكَةٌ. رَوَاهُ مَالك

وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه انه كتب الى عماله ان اهم اموركم عندي الصلاة فمن حفظها وحافظ عليها حفظ دينه ومن ضيعها فهو لما سواها اضيع ثم كتب ان صلوا الظهر اذا كان الفيء ذراعا الى ان يكون ظل احدكم مثله والعصر والشمس مرتفعة بيضاء نقية قدر ما يسير الراكب فرسخين او ثلاثة قبل مغيب الشمس والمغرب اذا غربت الشمس والعشاء اذا غاب الشفق الى ثلث الليل فمن نام فلا نامت عينه فمن نام فلا نامت عينه فمن نام فلا نامت عينه والصبح والنجوم بادية مشتبكة رواه مالك

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসের মধ্যে ‘উমার (রাঃ) সরকারী পদের অধিকারী স্বীয় গভর্নরগণকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, তোমাদের ঈমান ও দীন-ধর্ম নির্ভর করছে সালাতের উপর। তার সাথে সাথে একটি বড়ই সূক্ষ্ম বিষয় তাদেরকে তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমাদের সালাতগুলো নির্ভর করছে সালাতের নির্ধারিত সময়গুলো খেয়াল রাখার উপর। বুঝাতে চাইলেন যে, কোন মুসলিম যতই বেশী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করুক না কেন যদি সে আল্লাহর পক্ষ হতে আসা সালাতের সময়গুলো উপেক্ষা করে তাহলে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিল পরিমাণও তার কোন উপকার করতে পারবে না। সাথে সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়গুলো লিখিতভাবে তাদের বুঝিয়ে দিলেন। মানুষের ছায়া তার এক হাত পরিমাণ হওয়ার পর থেকে আরম্ভ করে তার শরীরের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যুহরের সালাত। উল্লেখ্য যে, এটা ঐ ঋতুর জন্য যে ঋতুতে এবং সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ানোর সাথে সাথে জিনিসের ছায়া বেশী পরিমাণে দেখা দেয়।

আর সূর্য আকাশের মধ্যে উপরের দিকে সাদা উজ্জ্বল ও চকচকে থাকা অবস্থায় ‘আসর আদায় করে নিতে হবে যেন ‘আসর সালাত আদায়ের পর একটি সওয়ারী সূর্য ডোবার পূর্বে শীতকালে ছয় মাইল ও গ্রীষ্মকালে নয় মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে এবং সূর্য পূর্ণরূপে অস্ত যাওয়ার পর মাগরিব আদায় করবে এবং ‘ইশার সালাত আদায় করবে সূর্যের লাল আভা মুছে যাওয়ার পর থেকে রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অতঃপর তিনি বদদু‘আ স্বরূপ একটি বাক্য উচ্চারণ করলেন যে, যে ব্যক্তি ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে নিদ্রা যাওয়ার চেষ্টা করবে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন যেন তাকে শান্তির ঘুম দান না করেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ

৫৮৬-[৬] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গরমকালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুহরের সালাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَانَ قَدْرُ صَلَاةِ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الظّهْر فِي الصَّيْفِ ثَلَاثَةَ أَقْدَامٍ إِلَى خَمْسَةِ أَقْدَامٍ وَفِي الشِّتَاءِ خَمْسَةَ أَقْدَامٍ إِلَى سَبْعَةِ أَقْدَامٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابن مسعود قال كان قدر صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم الظهر في الصيف ثلاثة اقدام الى خمسة اقدام وفي الشتاء خمسة اقدام الى سبعة اقدام رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) শুধুমাত্র যুহরের সময়টি বুঝাতে চেয়েছেন। একটি কথা একেকজন সাহাবী একেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রীষ্মকালে যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন সূর্য পশ্চিম দিকে চলে যাওয়ার পর হতে একজন মানুষের ছায়া তার তিন পা সমান হওয়া পর্যন্ত। আবার কখনো আবহাওয়া খুব গরম হওয়ার কারণে সময়টি একটু ঠাণ্ডা করার উদ্দেশে যুহরকে আরো একটু বিলম্ব করতেন তখন দেখা যেত যে, মানুষের ছায়া তার পাঁচ ক্বদম বা তার পাঁচ পা সমান হয়ে গেছে।

আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালে যুহর আদায় করতেন সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ার পর হতে একজন মানুষের ছায়া পাঁচ থেকে সাত কদম হওয়া পর্যন্ত।

উল্লেখ্য যে, মানুষের সাত ক্বদম তার হাতের প্রায় সাড়ে তিন হাত পরিমাণ হবে। তার অর্থ দাঁড়ায় প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ পর্যন্ত।

উল্লেখ্য যে, ছায়া ঋতুভেদে কম-বেশী হয়ে থাকে- এ কথাটি সর্বক্ষণ মনে রাখা দরকার।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে