মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৫৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৫৫-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : দু’টি নিআমাতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকায় পতিত হয়; একটি সুস্থতা অপরটি অবসরতা। (বুখারী)

الفصل الاول

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (6412) ۔
(صَحِيح)

عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نعمتان مغبون فيهما كثير من الناس الصحة والفراغ رواه البخاريرواہ البخاری 6412 ۔صحيح

ব্যাখ্যা :  “আল্লামাহ্ ইবনু বাত্তল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : উল্লেখিত হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, যখন শরীর সুস্থ থাকে তখন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকারের উপায় হলো আল্লাহর আদেশসমূহ মান্য করা আর তাঁর নিষেধসমূহ থেকে দূরে থাকা। অতএব কেউ যদি এ কাজ করতে অবহেলা করে তবে হাদীসের ভাষায় সেই হলো মাগবুন তথা উদাসীন বা প্রতারিত। 

কেননা দুনিয়া হলো পরকালের জন্য উপার্জনের ক্ষেত্র। তাই দুনিয়াতে কর্ম করলে অর্থাৎ ব্যবসা করলে পরকালে এর লাভ প্রকাশ পাবে। অতএব যে ব্যক্তি তার সুস্থতা ও অবসর সময় আল্লাহর আনুগত্যে কাজে লাগাবে সে হবে ঈর্ষার পাত্র। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। তীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : নাবী (সা.) মুকাল্লাফ ব্যক্তিকে ঐ ব্যবসায়ীর সাথে তুলনা করেছেন যার মূলধন রয়েছে সে ব্যবসায়ী তার মূলধন ঠিক রেখে লাভবান হতে চায়। আর মুনাফা অর্জনের পন্থা হলো প্রথমত সে এটা ঠিক করবে যে, সে কার সাথে ব্যবসা করবে। দ্বিতীয়ত সে সত্যবাদিতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করবে, যাতে সে ধোঁকায় পতিত না হয়। অনুরূপভাবে মুকাল্লাফ ব্যক্তির সুস্থতা ও অবসর সময় হলো তার মূলধন, তার উচিত হলো সে সর্বদা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং দীনের শত্রু শয়তান ও নাসের অনুসরণ পরিহার করবে যাতে সে ইহকালে ও পরকালে লাভবান হতে পারে। (ফাতহুল বারী ৬৪১২)

‘আল্লামাহ্ ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : মানুষ অধিকাংশ সময়ই সুস্থ থাকে কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে কর্মমুক্ত থাকতে পারে না। আবার কখনো কখনো কর্মব্যবস্ততা থেকে অবসর পায় বটে কিন্তু অনেক সময় অসুস্থও থাকে। কাজেই কোন ব্যক্তি যদি সুস্থও থাকে এবং কর্মমুক্তও থাকে তাহলে অনেক সময় তাকে অলসতা পেয়ে বসে এবং ‘ইবাদাত-বন্দেগী হতে দূরে থাকে। হাদীসের ভাষায় এই ব্যক্তিই হলো উদাসীন বা প্রতারিত। কারণ সে দুটো নি'আমাতেরই শুকরিয়া করেনি। 

আরো বলা হয়েছে, অধিকাংশ মানুষ এই দুটো নিয়ামতের পরিমাণ ধারণা করতে পারে না। তারা এ দুটো উপস্থিত থাকা অবস্থায় সকাজে সাওয়াব অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। অলসতা আর অবহলোয় এ দুটো হারিয়ে এদের বিপরীত অবস্থা আপতিত হয় তখন নিজেদের ওপরেই তিরস্কার করে। কিন্তু এই তিরস্কার তাদের কোনই কাজে আসে না শুধু কষ্টই বৃদ্ধি করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩০৪) 


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৫৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৫৬-[২] মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার উপমা হলো, যেমন- “তোমাদের কেউ মহাসমুদ্রের মধ্যে নিজের একটি অঙ্গুলি ডুবিয়ে দেয় এরপর সে লক্ষ্য করে দেখুক তা কি (পরিমাণ পানি) নিয়ে আসলো”। (মুসলিম)।

الفصل الاول

وَعَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «وَاللَّهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يجعلُ أحدُكم إصبعَه فِي اليمِّ فَلْينْظر بِمَ يرجع» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (55 / 2858)، (7197) ۔
(صَحِيح)

وعن المستورد بن شداد قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول والله ما الدنيا في الاخرة الا مثل ما يجعل احدكم اصبعه في اليم فلينظر بم يرجع رواه مسلمرواہ مسلم 55 2858 7197 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সময় ও পরিধি একেবারে সংক্ষিপ্ত। দুনিয়ার সুখ-শান্তিও ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আখিরাতেরটা চিরস্থায়ী, সেই সুখ শান্তি কখনো শেষ হবার নয়। তাই আখিরাতকে রূপকভাবে সমুদ্রের সাথে উপমা করে বিশাল পার্থক্য স্থাপন করা হয়েছে। (শারুহুন্ নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা. ২৮৫৮/৫৫)

অর্থাৎ বিশাল সমুদ্রের অফুরন্ত পানির মধ্যে কেউ যদি তার হাতের আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে তা বের করে নিয়ে আসে তাহলে সে আঙ্গুলের মধ্যে যেমন কিছু দেখতে পাবে না শুধুমাত্র তার আঙ্গুল ভেজা ছাড়া যা সমুদ্রের পানির তুলনায় যেমন কিছুই না, তেমনি পরকালের সীমাহীন সময় যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই তার তুলনায় এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন কিছুই না। অতএব ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সুখের জন্য চিরস্থায়ী জীবনের সুখ বিসর্জন দেয়া কোন বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়। (সম্পাদকীয়)। 


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৫৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৫৭-[৩] জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ (সা.) একটি কানকাটা মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পছন্দ করবে যে, এক দিরহামে বিনিময়ে এটা তার মালিকানাভুক্ত হোক। তাঁরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে এটা আমাদের মালিকানাভুক্ত হোক তা আমরা পছন্দ করব না। তখন তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ. قَالَ: «أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ؟» فَقَالُوا: مَا نحبُّ أَنه لنا بشيءقال: «فَوَاللَّهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُم» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (2 / 2957)، (7418) ۔
(صَحِيح)

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بجدي اسك ميت قال ايكم يحب ان هذا له بدرهم فقالوا ما نحب انه لنا بشيءقال فوالله للدنيا اهون على الله من هذا عليكم رواه مسلمرواہ مسلم 2 2957 7418 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (مَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ) ছোট কানওয়ালা ছাগলের বাচ্চা। অন্যান্য রিওয়ায়াতে (السخلة) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। উভয়ের অর্থই ছাগলছানা। (শারুহুন্ নবাবী ১৮শ খণ্ড, ২৯৫৭/২; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৩২১) |

(مَا نحبُّ أَنه لنا بشيء)অর্থাৎ কোন বস্তুর বিনিময়েই আমরা তা গ্রহণ করব না সে বস্তু যতই সামান্য হোক না কেন। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো তা যদি আমাদেরকে বিনামূল্যেও দেয়া হয় তবুও আমরা গ্রহণ করব না। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষকে দুনিয়া হতে অনুৎসাহিত ও পরকালের প্রতি উৎসাহিত করা। কেননা দুনিয়ার প্রতি মুহাব্বাতই হল সকল অন্যায় অপরাধমূলক, যেমনটি ইমাম বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) মুরসাল মূত্রে হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তিই ‘ইবাদাতেরও মূল। কেননা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ব্যক্তি যদিও দীনের কাজে ব্যস্ত থাকে। তথাপি সেখানে অনেক সময়ই তা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশেই সম্পাদন করে। এতে তার ভালো কাজও বিফল হয়। এর বিপরীতে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ব্যক্তিও যদি দুনিয়ার বিষয়ে ব্যস্ত থাকে তথাপি সেখানে তার উদ্দেশ্য থাকে পরকালের কল্যাণ লাভ। এজন্যই কোন আল্লাহ প্রেমী বলেছেন : দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ব্যক্তিকে কোন পথপ্রদর্শকই পথ দেখাতে সক্ষম নয়। আর দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত কোন ব্যক্তিকে দুনিয়ার সকল পথভ্রষ্টের প্রচেষ্টাও তাকে পথহারা করতে পারে না। (মিক্বাতুল মাফাতীহ) 


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৫৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৫৮-[৪] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য জান্নাতস্বরূপ। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّنْيَا سِجْنُ المؤمنِ وجنَّةُ الكافرِ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (1 / 2956)، (7417) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الدنيا سجن المومن وجنة الكافر رواه مسلمرواہ مسلم 1 2956 7417 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (الدُّنْيَا سِجْنُ المؤمنِ وجنَّةُ الكافرِ)  ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : উল্লেখিত হাদীসে দুনিয়াতে একজন মুমিন হারাম এবং ঘৃণিত সব ধরনের প্রবৃত্তির ভোগে আবদ্ধ থাকে, যা নিষিদ্ধ। মন যা চায় তাই সে করতে পারে না। বরং কষ্টসাধ্য হলেও সব ধরনের ‘ইবাদত-বন্দেগী পালনে বদ্ধপরিকর, সে যখন মারা যায় তখন এই কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পায় এবং তার রবের পক্ষ থেকে প্রস্তুতকৃত প্রতিদান পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে একজন কাফির প্রবৃত্তির ভোগ বিলাসে লাগামহীন পদচারণার কারণে দুনিয়ার বুকে অনেক আরাম ও শৌখিনভাবে বসবাস করে। কিন্তু সে যখন মারা যায় তখন চিরস্থায়ী শাস্তি আর অভিসম্পাত তাকে আচ্ছাদিত করে।

‘আল্লামাহ্ মুনাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : সে যেহেতু অবৈধ প্রবৃত্তি ভোগে বাধাপ্রাপ্ত, তাই সে কারাবন্দীর মতো, আর কাফির যেহেতু বাধাহীন, তাই সে মুক্ত ও স্বাধীন।

ফুযায়ল ইবনু ইয়াস (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ার ভোগ-বিলাস পরিত্যাগ করল, সে মূলত জেলখানায় আবদ্ধ। ইবনু উমার (রা.) বলেন, মুমিনের প্রাণ যখন তার দেহ থেকে বের হয় তখন তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো যে জেলখানায় আবদ্ধ ছিল, অতঃপর তাকে জেলখানা হতে ছেড়ে দেয়ার পর সে তথা হতে বের হয়ে জমিনে বিচরণ করে এবং প্রশস্ততা বোধ করে তেমনি মু'মিন ব্যক্তি দুনিয়া ছেড়ে পরপারে গিয়ে প্রশস্ততা বোধ করে। 

 (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২৩২৪; শারূহুন্ নবাবী ১৮শ খণ্ড, হা, ২৯৫৬/১; মিক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৫৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৫৯-[৫] আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ কোন মুমিনের ভালো কাজকে নষ্ট করেন না, দুনিয়াতেও তার বিনিময় প্রদান করেন এবং আখিরাতেও তার প্রতিদান দেন। আর কাফির আল্লাহর জন্য যেসব ভালো কাজ করে দুনিয়াতে তার বিনিময় ভোগ করে, অবশেষে যখন সে আখিরাতে পৌছবে, তখন তার (আমালনামায়) কোন ভালো কাজ থাকবে না যার প্রতিদান সে পেতে পারে। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا فِي الدُّنْيَا وَيُجْزَى بِهَا فِي الْآخِرَةِ وَأَمَّا الْكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ بِهَا لِلَّهِ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا أَفْضَى إِلَى الْآخِرَةِ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَة يجزى بهَا» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (56 / 2808)، (7089) ۔
(صَحِيح)

وعن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله لا يظلم مومنا حسنة يعطى بها في الدنيا ويجزى بها في الاخرة واما الكافر فيطعم بحسنات ما عمل بها لله في الدنيا حتى اذا افضى الى الاخرة لم يكن له حسنة يجزى بها رواه مسلمرواہ مسلم 56 2808 7089 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً) উক্ত হাদীসের সাথে ‘উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন যে, একজন কাফির কুফরী নিয়ে মারা গেলে সে যে সমস্ত সৎ ‘আমল করেছিল তার বিনিময়ে আখিরাতে কোন প্রতিদান থাকবে না। বরং দুনিয়াতেই তাকে ঐ সমস্ত সৎ ‘আমলের প্রতিদান দেয়া হবে। পক্ষান্তরে একজন মু'মিন সৎ ‘আমল করলে দুনিয়াতে এর সুফল তো পাবেই, এমনকি আখিরাতে এর চাইতেও উত্তম প্রতিদান প্রস্তুত রাখা আছে। তাই এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের জন্য অত্যাবশ্যক। 

মূলত হাদীসটি আল্লাহ তা'আলার বাণী : “অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা লোকেদের প্রতি যুলম করেন না ”-এর ব্যাখ্যা। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার বান্দা মু'মিন হোক অথবা কাফির হোক সকলকেই তার ‘আমলের প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তা কম হোক বা বেশি হোক, ভালো হোক বা মন্দ হোক। হয় তা দুনিয়াতে দেন, অথবা উভয় জগতে দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাঁর মু'মিন বান্দা সৎ আমলের প্রতিদান দুনিয়াতেও দেন; যেমন বিপদ দূর করা, রিযক প্রশস্ত করা, বা অনুরূপ অনেক নি'আমাত প্রদান করা। আবার পরকালেও এর পুরস্কার দিয়ে থাকেন এটা মুমিন বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ, তাদের প্রতি তাঁর মর্যাদা। আর কাফিরগণ যে ভালো কাজ করে থাকে যেমন দরিদ্রকে খাবার দেয়া, ইয়াতীমের প্রতি দয়া করা ও মাযলুমকে সাহায্য করা অর্থাৎ যে সমস্ত আমল বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ঈমান আনা শর্ত নয় ঐ সমস্ত ‘আমলের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। এটা তাদের প্রতি ইনসাফ। অতঃপর মৃত্যুবরণ করার পর তাদের এমন কোন সৎ আমল বাকী থাকে না যে কাজের বিনিময় তাদের দেয়া হবে, তাই তাদের পরকালে কোন প্রতিদান দেয়া হবে না। এটা তাদের প্রতি কোন যুলম নয় বরং এটাই ইনসাফ। মোটকথা মুমিনগণ আল্লাহর আনুগত্য করার কারণে আল্লাহ পরকালে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। পক্ষান্তরে কাফিরগণ আল্লাহর আনুগত্য না করার কারণে, আল্লাহ তাদের প্রতি পরকালে কোন প্রকার অনুগ্রহ করবেন না।

(শারহুন নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা. ২৮০৮/৫৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬০-[৬] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামকে কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় জিনিস দ্বারা। (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিম-এর বর্ণনায় (حُجِبَتِ) “ঢেকে রাখা হয়েছে” এর (শব্দের) স্থলে (خُفَّتْ) “ঘিরে রাখা হয়েছে” রয়েছে।

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. إِلَّا أَنْ عِنْدَ مُسْلِمٍ: «حُفَّتْ» . بَدَلَ «حُجِبَتْ»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6487) و مسلم (1 / 2823) [و رواہ مسلم (1 / 2822)، (7130 و 7131) من حدیث سیدنا انس رضی اللہ عنہ] ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم حجبت النار بالشهوات وحجبت الجنة بالمكاره متفق عليه الا ان عند مسلم حفت بدل حجبتمتفق علیہ رواہ البخاری 6487 و مسلم 1 2823 و رواہ مسلم 1 2822 7130 و 7131 من حدیث سیدنا انس رضی اللہ عنہ ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : (حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ) এখানে (الشَّهَوَاتِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পার্থিব জগতের ঐ সকল বিষয় যা করতে ও বলতে অনেক মজাদার কিন্তু শারী'আত এগুলোকে হারাম হিসেবে গণ্য করেছে। যেমন মদপান করা, যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। এ কাজগুলো এভাবে ঘটতে পারে ১. নিষিদ্ধ কাজে মন উদগ্রীব থাকা, ২. শারী'আতের আবশ্যকীয় ও বৈধ বিষয় বর্জন করা। জাহান্নামকে এ সকল বিষয়াদি দ্বারাই সাজানো হয়েছে। আর(الْمَكَارِهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন সব ‘আমল যেগুলো শারী'আতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অত্যন্ত কষ্টের সাথে আদায় করে। এজন্যই ইসলামের অধিকাংশ ‘ইবাদাত কষ্টসাধ্য। এগুলোর মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে একজন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। 

মোটকথা হলো কষ্টদায়ক কাজ সম্পাদন না করে জান্নাতে পৌঁছানো যাবে না যাকে মাকারিহ (অপছন্দনীয়) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ জাহান্নামে সেই যাবে যে ব্যক্তি মনের চাহিদা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করবে। যা করতে আনন্দ লাগবে, মনে কোন কষ্ট মনে হবে না। জান্নাতকে কষ্টদায়ক কাজ দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি এই কষ্টের ঘেরাও অতিক্রম করবে সেই জান্নাতে যাবে। আর জাহান্নামকে আনন্দদায়ক কাজ দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি এ ঘেরাওয়ের মধ্যে আবদ্ধ হবে সেই জাহান্নামে যাবে। যদিও এখানে জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে তথাপি উদ্দেশ্য হলো ঐ সমস্ত কাজ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা করা যে সমস্ত কাজ দ্বারা জাহান্নাম ঘিরে রাখা হয়েছে।

(শারুহুন্ নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা, ২৮২২/১; ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা. ৬৪৮৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৫৫৯; মিক্বাতুল মাসাবীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬১-[৭] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ (রা.)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম, উত্তম পোশাকের গোলাম। যদি তাকে দেয়া হয় তবে সন্তুষ্ট হয়; আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে ধ্বংস হোক, অধঃপতিত হোক যদি তার পায়ে কাঁটা বিধে তবে তা যেন খুলে দেয়ার মতো কেউ না থাকে। আর ঐ বান্দার জন্য সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত রয়েছে, যার চুল বিক্ষিপ্ত, দু পা ধূলি-মিশ্রিত। তাকে পাহারার কাজে নিয়োজিত করা হলে সে পাহারারত থাকে। আর তাকে সৈন্যদলের পশ্চাতে নিয়োজিত করলে পশ্চাতে থাকে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হয় না (বুখারী)

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ وَعَبْدُ الْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ سَخِطَ تَعِسَ وَانْتَكَسَ وَإِذَا شِيكَ فَلَا انْتُقِشَ. طُوبَى لِعَبْدٍ أَخَذَ بِعِنَانِ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَشْعَثُ رَأْسُهُ مُغْبَرَّةٌ قَدَمَاهُ إِنْ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ وَإِنْ كَانَ فِي السَّاقَة كَانَ فِي السَّاقَة وَإِن اسْتَأْذَنَ لَمْ يُؤْذَنْ لَهُ وَإِنْ شَفَعَ لَمْ يشفع» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (2887) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تعس عبد الدينار وعبد الدرهم وعبد الخميصة ان اعطي رضي وان لم يعط سخط تعس وانتكس واذا شيك فلا انتقش طوبى لعبد اخذ بعنان فرسه في سبيل الله اشعث راسه مغبرة قدماه ان كان في الحراسة كان في الحراسة وان كان في الساقة كان في الساقة وان استاذن لم يوذن له وان شفع لم يشفع رواه البخاريرواہ البخاری 2887 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ) উল্লেখিত হাদীসাংশে ‘আল্লামাহ্ খলীল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (التَعِسُ) শব্দের অর্থ হলো এমন হোঁচট খাওয়া যা থেকে আর সুস্থ হওয়া যায় না। বলা হয়েছে, (تَعِسَ) অর্থ অকল্যাণ। আবার কেউ বলেন, ধ্বংস। আবার বলা হয়েছে, উপুড় হয়ে পড়ে যাওয়া। আবার কেউ বলেন, এর অর্থ হলো। সঠিক যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়া। 

সম্পদের লোভে আসক্ত হয়ে দীনের কাজ ছেড়ে দিয়ে দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া একটি ঘৃণিত কাজ সে সম্পদ যাই হোক না কেন। কিন্তু হাদীসে দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) ও দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো এ দুটো এমন বস্তু বা মুদ্রা যা দ্বারা সর্বপ্রকার মনের খায়েশ পূর্ণ করা যায় এবং শয়তানের উদ্দেশ্য এতে সম্পন্ন হয়। অনুরূপভাবে খামীসাহ্ (রেশমী কাপড়)-এর উল্লেখ করার কারণ হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পরিধান করা হয় অহংকার প্রকাশ করা ও সুখ্যাতি অর্জনের জন্য। আর যখন মন সম্পূর্ণভাবে এ কাজের প্রতি ঝুঁকে পরে তখন তা হতে আর ফিরতে পারে না যেন সে তার গোলামে পরিণত হয়েছে। 
 

(إِذَا شِيكَ فَلَا انْتُقِشَ) যখন তার কোন অঙ্গে কাঁটা বিদ্ধ হয় তখন তা আর বের করা যায় না। অর্থাৎ দয়া করা হয় না এবং সে নিজেও ঐ বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে অক্ষম। মূলত হাদীসে এ বাক্যটি দুনিয়া লোভীদের জন্য বদ্‌দু'আ। 
 

(إِنْ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ) এখানে বলা হয়েছে, (كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ) এর অর্থ হলো, সে পাহারার সাওয়াব অর্জনে নিযুক্ত থাকে। আবার কারো মতে, এটা অনেক মর্যাদার কাজ এটা বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে। তখন অর্থ হবে, যদি সে পাহারার দায়িত্বে নিযুক্ত থাকে তাহলে সে যেন অত্যন্ত মহৎ কাজে নিযুক্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এর অর্থ হলো, সে আল্লাহর যিক্‌রে অমনোযোগী। তিনি মর্যাদাকে উদ্দেশ্য করেননি। তাঁর মতে তাকে পাহারায় রাখা হলে সে ঐ কাজেই স্থির থাকে আর যদি সে মিছিলে থাকে তাহলে সে ঐ কাজেই রত থাকে। 

(ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৮৮৭; শারহু ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, হা. ৪১৩৫; মিক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬২-[৮] আবু সাঈদ আল খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আমার পর তোমাদের জন্য সবচাইতে বেশি যে ব্যাপারে ভয় করি তা হলো দুনিয়ার চাকচিক্য ও তার সৌন্দর্য, যা তোমাদের ওপর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি মন্দ নিয়ে আসতে পারে? তখন তিনি (সা.) কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা ধারণা করলাম, তার ওপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছে। অতঃপর তিনি (সা.) ঘাম মুছে বললেন : সে প্রশ্নকারী কোথায়? বর্ণনাকারী বলেন : যেন তিনি (সা.) প্রশ্নকারীর কথাটি প্রশংসার যোগ্য মনে করেছেন। তখন তিনি (সা.) বললেন : কল্যাণ কখনো মন্দ আনে না। (এটার উদাহরণ,) নালার পার্শ্বের উর্বরতা উৎপাদন করে তা মূলত (ভক্ষণকারীকে) ধ্বংস করে না বা ধ্বংসের নিকটবর্তী নিয়ে যায় না; কিন্তু তৃণভোজী জানোয়ার যখন অতিমাত্রায় খায়, অবশেষে যখন কোমরের উভয় পার্শ্ব ফুলে উঠে তখন সূর্যের সামনে রৌদ্রে গিয়ে বসে এবং মলমূত্র ত্যাগ করে। পরে আবার তৃণভূমির দিকে ফিরে গিয়ে তাথেকে ভক্ষণ করে। বস্তুত দুনিয়ার মাল সম্পদ শ্যামল-সবুজ সুস্বাদু বটে। যে তা বৈধভাবে উপার্জন করে এবং বৈধ পথে ব্যয় করে তখন তা তার পক্ষে উত্তম সাহায্যকারী। কিন্তু যে তা অবৈধ পথে উপার্জন করে তখন তার উদাহরণ ঐ জন্তুর ন্যায়, যে খায় কিন্তু পরিতৃপ্ত হয় না এবং দুনিয়াবী মাল-সম্পদ কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا» . فَقَالَ رجلٌ: يَا رَسُول الله أوَ يَأْتِي الْخَيْرُ بِالشَّرِّ؟ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ يُنَزَّلُ عَلَيْهِ قَالَ: فَمَسَحَ عَنْهُ الرُّحَضَاءَ وَقَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» . وَكَأَنَّهُ حَمِدَهُ فَقَالَ: «إِنَّهُ لَا يَأْتِي الْخَيْرُ بِالشَّرِّ وَإِنَّ مِمَّا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ مَا يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ إِلَّا آكِلَةَ الْخَضِرِ أكلت حَتَّى امتدت خاصرتاها اسْتقْبلت الشَّمْسِ فَثَلَطَتْ وَبَالَتْ ثُمَّ عَادَتْ فَأَكَلَتْ. وَإِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ وَوَضَعَهُ فِي حَقِّهِ فَنِعْمَ الْمَعُونَةُ هُوَ وَمَنْ أَخَذَهُ بِغَيْرِ حَقِّهِ كَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ وَيَكُونُ شَهِيدًا عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1465) و مسلم (123 / 1052)، (2423) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سعيد الخدري ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان مما اخاف عليكم من بعدي ما يفتح عليكم من زهرة الدنيا وزينتها فقال رجل يا رسول الله او ياتي الخير بالشر فسكت حتى ظننا انه ينزل عليه قال فمسح عنه الرحضاء وقال اين الساىل وكانه حمده فقال انه لا ياتي الخير بالشر وان مما ينبت الربيع ما يقتل حبطا او يلم الا اكلة الخضر اكلت حتى امتدت خاصرتاها استقبلت الشمس فثلطت وبالت ثم عادت فاكلت وان هذا المال خضرة حلوة فمن اخذه بحقه ووضعه في حقه فنعم المعونة هو ومن اخذه بغير حقه كان كالذي ياكل ولا يشبع ويكون شهيدا عليه يوم القيامة متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 1465 و مسلم 123 1052 2423 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : সহীহ মুসলিমের শারহ-তে রয়েছে, (إِنَّ مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا

আলোচ্য হাদীসের এই অংশে দুনিয়ার লোভে পড়ে প্রত্যায়িত হওয়া এবং দুনিয়ার ঐশ্বর্য নিয়ে গর্ব করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এবং এখানে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে- অধিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝাতে আল্লাহর নামে শপথ করা মুস্তাহাব। 

অর্থাৎ নাবী (সা.) অত্র হাদীসে দুনিয়ার চাকচিক্য সম্পর্কে তাঁর উম্মাতকে সতর্ক করেছেন এবং ক্ষতির বা অকল্যাণের আশঙ্কা করেছেন। তখন রসূলের সামনে উপস্থিত এক ব্যক্তি উল্লেখ করলেন যে, আমরা যে সম্পদ অর্জন করব তাতো বৈধ পথেই অর্জন করব যেমন গনীমাত বা অন্য কিছু। আর এতে তো অকল্যাণের কিছু নেই। অতএব এ কল্যাণ কি অকল্যাণ নিয়ে আসবে? অর্থাৎ লোকটি বুঝাতে চেয়েছেন যে, কল্যাণ তো কল্যাণই তা আবার অকল্যাণ হয় কি করে? তখন নাবী (সা.) বলেছেন, প্রকৃত কল্যাণ তো অকল্যাণ নিয়ে আসে না। তবে তোমরা যে দুনিয়ার চাকচিক্য অর্জন করবে তাতো প্রকৃতপক্ষে কল্যাণ নয় বরং তা ফিতনাহ্ (পরীক্ষার বস্তু)। কেননা তোমরা এই মাল অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে এবং তোমরা তা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে যা তোমাদেরকে পরকাল বিমুখ করে দিবে। আর এতেই তোমাদের অকল্যাণ হবে। অতঃপর তিনি (সা.) একটি উদাহরণ পেশ করেছেন।

(إِنَّ مِمَّا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ) নালার পার্শ্বে যে ঘাস জন্মায় তা ভক্ষণকারী অতিরিক্ত ভক্ষণের ফলে খতিগ্রস্থ হয়। তবে যে পশু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভক্ষণ না করে বরং প্রয়োজন পরিমাণ মাফিক ভক্ষণ করার পর বিরতি দেয় এবং জাবর কাটে তাহলে তাকে ক্ষতি করতে পারে না। অনুরূপ মাল উপার্জন করা তো ভালো। তবে তা উপার্জন করতে গিয়ে যদি মাল নিয়েই ব্যস্ত থাকে তার ওপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন না করে তাহলে ঐ মাল তাকে ধ্বংস করে অথবা তাঁকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মিটানোর মতো মাল উপার্জনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে এবং উপার্জন করে তুষ্ট থাকে তাহলে সে সেই পশুর মতো যে পশু প্রয়োজন মত জাবর কাটে তাহলে সে রক্ষা পায়। 

(শারহু নাবাবী ৭ম খণ্ড, হা. ১০৫২/১২৩; মিকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৩-[৯] ’আম্‌র ইবনু আওফ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সম্পর্কে দরিদ্রতার ভয় করি না; কিন্তু আমি ভয় করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে যেমনি প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আর তোমরা তা লাভ করার জন্য ঐরূপ প্রতিযোগিতা করবে যেরূপ তারা এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করেছিল। ফলে এটা তোমাদেরকে ধ্বংস করবে যেরূপ তাদেরকে ধ্বংস করেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «فَوَاللَّهِ لَا الْفَقْرُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا وتهلككم كَمَا أهلكتهم» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4015) و مسلم (6 / 2961)، (7425) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عمرو بن عوف قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فوالله لا الفقر اخشى عليكم ولكن اخشى عليكم ان تبسط عليكم الدنيا كما بسطت على من كان قبلكم فتنافسوها كما تنافسوها وتهلككم كما اهلكتهم متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 4015 و مسلم 6 2961 7425 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (فَوَاللَّهِ لَا الْفَقْرُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ) উল্লেখিত হাদীসাংশের অর্থ হলো, আমি তোমাদের দরিদ্রতাকে ভয় পাই না, কেননা এ দরিদ্রতা অধিকাংশ সময়ই শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনে। কিন্তু আমি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সেটি হলো, তোমাদের জন্য দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও তার সরঞ্জামাদি প্রশস্ত হয়ে যাবে, অর্থাৎ বেড়ে যাবে। ফলে তোমরা পরস্পরের প্রতি একে অন্যের সাথে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মতো আচরণ করবে আর বিভিন্ন প্রকারের বালা-মুসীবত দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাবে।

(كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ) পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস হওয়ার কারণ হলো তারা ফকীরদের ওপর রহম করত না, ধন-সম্পদের ওপর চরম লোভ আর ঝেকে থাকার কারণে তারা কপট আর কৃপণ হয়েছিল। 

এখানে (الْفَقْرُ) দারিদ্রতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীন ও দুনিয়ার প্রয়োজন মিটানোর জন্য যা দরকার তা না থাকা।

(أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ) “তোমাদেরকে প্রাচুর্যতা দান করা হবে” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রয়োজন মিটানোর জন্য যা না হলেই নয় তার চাইতে বেশি প্রদান করা। যা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত হতে বিমুখ করে দেয়। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো তোমরা দুনিয়ার প্রাচুর্যতা অর্জনের জন্য ব্যস্ত থাকবে এবং তা জমা করে রাখার জন্য লোভী হয়ে যাবে, ফলে সম্পদের কারণে অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে। যার অনিবার্য ফল হলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া। (মিক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু ‘আওফ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৪-[১০] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবার-পরিজনকে জীবিকা নির্বাহ পরিমাণ রিযক দান করো। অপর এক বর্ণনায় আছে, প্রয়োজন পরিমাণ। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ قُوتًا» وَفِي رِوَايَةٍ «كفافا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6460) و مسلم (18 / 1055)، (2427) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اللهم اجعل رزق ال محمد قوتا وفي رواية كفافا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6460 و مسلم 18 1055 2427 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (آلِ مُحَمَّدٍ) “মুহাম্মাদ-এর পরিবার”-এর দ্বারা উদ্দেশ্য তার সন্তানাদি ও স্ত্রীবর্গ এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসারীগণ ও তার প্রকৃত বন্ধুগণ। 

(قُوتًا) এর শাব্দিক অর্থ হলো খাদ্য যা দ্বারা মানুষ জীবনযাপন করে। এখানে(قُوت) দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষের কাছে হাত না পেতে জীবন যাপনের সামগ্রী অর্জন করা যা তার ক্ষুধা নিবারণ করে। 

(اللَّهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ قُوتًا) আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামাহ্ ইবনু বাত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : উল্লেখিত হাদীসে স্বল্প জীবিকার ফাযীলাত পাওয়া যাচ্ছে এবং আখিরাতের অবিনশ্বর ও অফুরন্ত নি'আমাতের আশায় দুনিয়ার মায়া বর্জনের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে। অতএব উম্মতের সবার জন্য বিষয়টি ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরী। 

‘আল্লামাহ্ কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : হাদীসের অর্থ হলো স্বল্প জীবিকা অন্বেষণ করা। কেননা হাদীসে বর্ণিত (القوت) শব্দটি ব্যবহৃত হয় ততটুকু পরিমাণ বুঝাতে যতটুকু পরিমাণে শরীর সুস্থ থাকে এবং প্রয়োজন পূরণ হয়। আর এ অবস্থায় সম্পদের স্বল্পতা আর আধিক্যতার সব রকমের বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা. ৬৪৬০; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৬১; মিকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৫-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সে ব্যক্তিই সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাকে প্রয়োজন মাফিক রিযক প্রদান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (125 / 1054)، (2426) ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قد افلح من اسلم ورزق كفافا وقنعه الله بما اتاه رواه مسلمرواہ مسلم 125 1054 2426 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا) এখানে (كَفَافًا) দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণ তথা মাঝামাঝি অবস্থা বুঝানো হয়েছে। খুব বেশিও না, আবার একেবারে কমও না। (শারহুন নাবাবী ৭ম খণ্ড, হা. ১০৫৪/১২৫) 

(قَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ) আল্লাহ তা'আলা তাকে যা দিয়েছেন তার প্রতি তাকে তুষ্ট করেছেন অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে অভাবী বানায়নি আবার অধিক সম্পদের অধিকারী করেনি, অথচ এতেই সে সন্তুষ্ট থাকে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আল্লাহ তা'আলা তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার প্রতি রাজি-খুশি থাকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৬-[১২] আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: বান্দা (গর্ব : করে) বলে আমার সম্পদ, আমার সম্পদ; প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদ হতে তার (উপকারে আসে) মাত্র তিনটি যা খেয়ে সে শেষ করে দিয়েছে বা পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছে অথবা দান করে (পরকালের জন্য) সংরক্ষণ করেছে। এতদ্ভিন্ন যা আছে তা তার কাজে আসবে না এবং সে মানুষের (ওয়ারিসদের) জন্য ছেড়ে চলে যাবে। (মুসলিম)।

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ الْعَبْدُ: مَالِي مَالِي. وَإِن مَاله مِنْ مَالِهِ ثَلَاثٌ: مَا أَكَلَ فَأَفْنَى أَوْ لَبِسَ فَأَبْلَى أَوْ أَعْطَى فَاقْتَنَى. وَمَا سِوَى ذَلِك فَهُوَ ذاهبٌ وتاركهُ للنَّاس . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (4 / 2959)، (7422) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول العبد مالي مالي وان ماله من ماله ثلاث ما اكل فافنى او لبس فابلى او اعطى فاقتنى وما سوى ذلك فهو ذاهب وتاركه للناس رواه مسلمرواہ مسلم 4 2959 7422 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : উল্লেখিত হাদীসের অর্থ হলো এই মানুষ সম্পদশালী হলে গর্ব করে বলে এটা আমার সম্পদ, আমি অমুক অমুক সম্পদের মালিক, আমার এত এত সম্পদ আছে ইত্যাদি। সে তার এই সম্পদের উপকার তিনভাবে ভোগ করে, ১. যা খায় তা শেষ হয়ে যায়, ২. যা পরিধান করে তা পুরাতন হয়ে যায়, ৩. যা দান করে তা আখিরাতের জন্য সঞ্চিত থাকে, বাকী সম্পদ মানুষের জন্য রেখে সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়।  কাজেই আমার আমার বলে অহংকার করা আর পুঞ্জিভূত করে রাখা নেহায়েত বোকামী আর অজ্ঞতার পরিচয়। এজন্য সম্পদ হাতে থাকলে বেশি বেশি সদাক্বাহ করে আখিরাতে মুক্তি পাওয়াটাই মুখ্য বিষয়।  (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৭-[১৩] আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তিনটি জিনিস মৃত লাশের সাথে যায়। দুটি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে গমন করে আত্মীয়স্বজন, মাল-সম্পদ এবং তার ’আমল। পরে জাতি-গোষ্ঠী ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার ’আমল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلَاثَةٌ: فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عمله . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6514) و مسلم (5 / 2960)، (7424) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يتبع الميت ثلاثة فيرجع اثنان ويبقى معه واحد يتبعه اهله وماله وعمله فيرجع اهله وماله ويبقى عمله متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6514 و مسلم 5 2960 7424 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : (وَيَبْقَى عمله) এ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : ‘আমল তার সাথে কবরে প্রবেশ করে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৭৯)। 

এ ‘আমলের কারণেই সে সওয়াবের অধিকারী হবে অথবা শাস্তির উপযোগী হবে। হাদীসে রয়েছে, “কবর জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্য হতে একটি বাগান অথবা আগুনের গর্তগুলোর মধ্য হতে একটি গর্ত।” 

(يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ) এখানে পরিবার বলতে সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত অনেক বন্ধু-বান্ধব আর (مَالُهُ) দ্বারা দাস-দাসী, জন্তু জানোয়ার ও আসবাবপত্র বুঝানো হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৮-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্উদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার কাছে নিজ সম্পদ অপেক্ষা উত্তরাধীকারীদের সম্পদ অধিক প্রিয়? তারা বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই; বরং ওয়ারিসের সম্পদ অপেক্ষা নিজের সম্পদই অধিক প্রিয়। তিনি (সা.) বললেন : যে (আল্লাহর পথে খরচ করে) যা অগ্রিম পাঠায় তাই তার সম্পদ। আর যা সে পিছনে রেখে যায় তা তার ওয়ারিসের সম্পদ। (বুখারী)।

الفصل الاول

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ؟» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا مَنَّا أَحَدٌ إِلَّا مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِ وَارِثِهِ. قَالَ: «فَإِنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالَ وَارِثِهِ مَا أخر» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (6442) ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايكم مال وارثه احب اليه من ماله قالوا يا رسول الله ما منا احد الا ماله احب اليه من مال وارثه قال فان ماله ما قدم ومال وارثه ما اخر رواه البخاريرواہ البخاری 6442 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (فَإِنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالَ وَارِثِهِ مَا أخر) উল্লেখিত হাদীস সম্পর্কে ইবনু বাত্ত্বলসহ আরো অনেকে বলেন, আখিরাতে উপকৃত হওয়ার জন্য সৎ ও উত্তম পন্থায় সম্পদ দান করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কেননা মৃত ব্যক্তি যে সম্পদ রেখে মারা যায় তার মালিক তার উত্তরাধিকারীগণ। অতএব মৃতের পূর্বে মালের মালিক নিজে যদি ঐ মাল দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ সম্পাদন করে তাহলে এর সাওয়াব সে নিজে পাবে। আর এই মাল উপার্জন ও তা জমা করার জন্য যে কষ্ট সে নিজে করেছে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। আর ঐ মাল দ্বারা যদি সে আল্লাহর অবাধ্যমূলক কাজ করে তাহলে তো সে উপকৃত হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। (ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা. ৬৪৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৬৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৬৯-[১৫] মুত্বাররিফ তাঁর পিতা (’আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রা.)) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : একদিন আমি নাবী (সা.) -এর দরবারে আসলাম, এ সময় তিনি সূরাহ্ (اَلۡهٰکُمُ التَّکَاثُرُ) “ধনের প্রাচুর্য তোমাদেরকে গাফিল করে রেখেছেন”- (সূরাহ্ আত্ তাকা-সুর ১০২ : ১) পাঠ করছিলেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন: আদম সন্তান বলে- “আমার মাল, আমার মাল”। তিনি (সা.) বলেন : হে আদম সন্তান! তুমি যা খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথবা পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছ অথবা দান করে সঞ্চয় করেছ এছাড়া কি তোমার কোন সম্পদ আছে? (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَن مُطرّف عَنْ أَبِيهِ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يقْرَأ: (آلهاكم التكاثر) قَالَ: يَقُولُ ابْنُ آدَمَ: مَالِي مَالِي . قَالَ: «وَهَلْ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ إِلَّا مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ أَوْ تصدَّقت فأمضيت؟ ؟» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (3 / 2958)، (7420) ۔
(صَحِيح)

وعن مطرف عن ابيه قال اتيت النبي صلى الله عليه وسلم وهو يقرا الهاكم التكاثر قال يقول ابن ادم مالي مالي قال وهل لك يا ابن ادم الا ما اكلت فافنيت او لبست فابليت او تصدقت فامضيت رواه مسلمرواہ مسلم 3 2958 7420 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (هَلْ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ) হে আদম সন্তান! তোমার মাল তো তাই যা তুমি ভক্ষণ করেছ। অর্থাৎ মাল অর্জন করে যা তুমি জমা করে রাখবে তা অন্যে ভোগ করবে। তুমি ভোগ করতে পারবে না। আর যা তুমি ভক্ষণ করেছ তাই ভোগ করেছ। অতএব যা তুমি ভোগ করতে পেরেছ তা তোমার। অনুরূপ যা তুমি পরিধান করেছ এটাও তোমারই। আর যা তুমি দান করেছ তা তুমি আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছো তোমার জন্য তা জমা থাকবে। পরকালে তুমি তা ভোগ করবে, অতএব এতটুকুই তোমার মাল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৭০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫১৭০-[১৬] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সম্পদের প্রাচুর্যতা ধনাঢ্যতা নয় বরং প্রকৃত ধনাঢ্যতা অন্তরের ধনাঢ্যতা। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفس» مُتَّفق عَلَيْهِ.

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6446) و مسلم (120 / 1051)، (2420) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس الغنى عن كثرة العرض ولكن الغنى غنى النفس متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6446 و مسلم 120 1051 2420 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : (لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفس) উল্লেখিত হাদীসে (الْعَرَضُ) শব্দটি যদি ‘হরকত’ যোগে পড়া হয় তবে অর্থ হবে টাকা-পয়সা যাবতীয় সম্পদ। আর ‘সাকীন’ যোগে পড়া হলে অর্থ হবে টাকা-পয়সা ব্যতীত অন্যান্য সকল সম্পদ। 

আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,(الْعَرَضُ) হলো সব ধরনের ভোগ্য সামগ্রী। তবে জীবজন্তু জমি জমা আর ঐ সমস্ত বস্তু যেগুলো ওযন বা পরিমাপ করা যায় না এগুলো(الْعَرَضُ) -এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

(إِنَّمَا الْغِنَى غِنَى النَّفس) ইবনু বাত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : প্রকৃত ধনী অধিক সম্পদ থাকলেই হওয়া যায় না। কারণ অধিকাংশ সম্পদশালী লোক তাদের সম্পদে আত্মতৃপ্ত হতে পারে না। সম্পদের প্রতি চরম মোহ থাকায় আরো বেশি সম্পদশালী হবার জন্য চেষ্টা চালায়। এজন্য সে সম্পদশালী হয়েও ফকীর থেকে যায়। তার স্বভাব ফকীরদের মতো ভিক্ষুক। 

পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থা যাই হোক সে যদি প্রশস্ত মনের অধিকারী হয় এবং অল্পেই তার মন থেকে অভাব দূর হয় তবে সেই হবে প্রকৃত ধনী। কারণ সে ভিক্ষুকের মতো মনের মধ্যে আরো বেশি পাওয়ার স্বপ্ন দেখে না। 

ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : মনের প্রাচুর্যতাই হলো প্রশংসনীয় মহান এবং উপকারী ধনী। 

ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মনের ধনাঢ্যতা অর্জন হয় অন্তর তথা কলবের ধনাঢ্যতা থেকে। অর্থাৎ সে সকল বিষয়ে তার রবের মুখাপেক্ষী হবে। আর সে নিশ্চিতভাবে জানবে যে তার রবই তাকে দান করে থাকেন। আর না দিলেও তিনি দেন না। বিধায় তার রবের ফায়সালার উপর সে রাজি খুশি থাকে। তাই নিআমাত পেয়ে সে তার রবের শুকরিয়া আদায় করে। আর বিপদে পতিত হয়ে সে তার রবেরই অভিমুখী হয়। অতএব রবের মুখাপেক্ষিতাই তাকে অন্যের দ্বারস্থ হওয়া থেকে যথেষ্ট করে দেয়।  (মিক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা, ৬৪৪৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৭১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫১৭১-[১৭] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কে এ বাক্যগুলো আমার নিকট হতে গ্রহণ করবে? অতঃপর নিজে সে মতো ’আমল করবে অথবা এমন ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেবে যে সে অনুযায়ী আমল করে। আমি বললাম : আমি হে আল্লাহর রাসূল! এরপর তিনি (সা.) আমার হাত ধরে পাঁচটি গণনা করলেন। তিনি (সা.) বললেন : ১. আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হতে বেঁচে থাকো, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে উত্তম ইবাদাতকারী, ২. আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনবান, ৩. তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, এতে তুমি হবে পূর্ণ ঈমানদার, ৪. নিজের জন্য যা পছন্দ করো মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলিম এবং ৫. বেশি হাসবে না; কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। (আহমাদ ও তিরমিযী এবং তিনি বলেছেন : হাদীসটি গরীব)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من أَخذ عَنِّي هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ فَيَعْمَلُ بِهِنَّ أَوْ يُعَلِّمُ مَنْ يَعْمَلُ بِهِنَّ؟» قُلْتُ: أَنَا يَا رَسُولَ الله فَأخذ بيَدي فَعَدَّ خَمْسًا فَقَالَ: «اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللَّهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ وَأَحْسِنْ إِلَى جَارِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكَ تُمِيتُ الْقَلْبَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

سندہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 310 ح 8081) و الترمذی (2305) * ابو طارق مجھول و الحسن البصری مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اخذ عني هولاء الكلمات فيعمل بهن او يعلم من يعمل بهن قلت انا يا رسول الله فاخذ بيدي فعد خمسا فقال اتق المحارم تكن اعبد الناس وارض بما قسم الله لك تكن اغنى الناس واحسن الى جارك تكن مومنا واحب للناس ما تحب لنفسك تكن مسلما ولا تكثر الضحك فان كثرة الضحك تميت القلب رواه احمد والترمذي وقال هذا حديث غريبسندہ ضعیف رواہ احمد 2 310 ح 8081 و الترمذی 2305 ابو طارق مجھول و الحسن البصری مدلس و عنعن ۔ضعيف

ব্যাখ্যা : (اتَّقِ الْمَحَارِمَ) অর্থাৎ তোমার ওপর আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাতে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাক। 

(وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللَّهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ) আল্লাহ তোমাকে যে অংশ দিয়েছে তাতে রাজি থাক, তাহলেই তুমি সবার চাইতে ধনী হতে পারবে। অর্থাৎ আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা রেখেছেন তাতো আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেনই, তাই তুমি এতেই সন্তুষ্ট থাকো তবেই তুমি সর্বাধিক ধনী বলে বিবেচিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত অংশ পেয়েই সন্তুষ্ট হতে পারে যদিও তা পরিমাণে কম হয় তাহলেই সে অন্যের হাতে যা আছে তার প্রতি লোভ করে না। এতে সে অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়াই ধনী হওয়ার প্রমাণ।

(وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكَ تُمِيتُ الْقَلْبَ) এখানে হাসির সাথে অন্তরের মৃত্যুর সম্পর্ক হলো এই, মৃতের ব্যক্তির অন্তরে যে রকম আল্লাহর যিক্র-আযকার, ভয় বা ইবাদাত-বন্দেগীর কথা স্মরণ থাকে না বা অনুভূতি জন্মায় না, অনুরূপ অধিক হাসির কারণে সীমাহীন আনন্দে মত্ত থাকায় আল্লাহর যিক্র-আযকার, ভয় বা ‘ইবাদতের কথা স্মরণ থাকে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩০৫, মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৭২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫১৭২-[১৮] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ্ (রা.)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য ব্যস্ততা হতে মুক্ত হও। আমি তোমাদের হৃদয়কে অভাব-মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দরিদ্রতার পথ বন্ধ করে দিব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার হাতকে (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মিটাব না। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ)।

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ: ابْنَ آدَمَ تَفْرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسِدَّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَكَ شُغُلًا وَلَمْ أسُدَّ فقرك . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (2 / 358 ح 8681) و ابن ماجہ (4107) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله يقول ابن ادم تفرغ لعبادتي املا صدرك غنى واسد فقرك وان لا تفعل ملات يدك شغلا ولم اسد فقرك رواه احمد وابن ماجهاسنادہ حسن رواہ احمد 2 358 ح 8681 و ابن ماجہ 4107 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (ابْنَ آدَمَ تَفْرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسِدَّ فَقْرَكَ) আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ‘ইবাদতে মশগুল থাক আমি তোমার অন্তরকে ধনাঢ্যতা দিয়ে পূর্ণ করে দিবো এবং তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিব। 

ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) ইমরান ইবনু হুসায়ন থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয় আল্লাহ তাঁর সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে দেন এবং এমন জায়গা হতে রিযকের ব্যবস্থা করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি মনোযোগী হয় আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়ার প্রতি সোপর্দ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার দায়িত্ব তারই নিজ হাতে তুলে দেন, তার কোন দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেন না। (মিক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৭৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫১৭৩-[১৯] জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট এমন এক ব্যক্তির আলোচনা করা হলো, যে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে খুব চেষ্টা করে (কিন্তু গুনাহ হতে বেঁচে থাকার প্রতি তেমন লক্ষ্য রাখে না) এবং এমন আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো (যে ইবাদত-বন্দেগী কম করে) কিন্তু সে পরহেজগারী অবলম্বন করে (গুনাহ হতে বেঁচে চলে), তখন নাবী (সা.) বলেন, তা (ইবাদত করা এবং ’ইবাদতে সচেষ্ট থাকা) পরহেজগারীর সমতুল্য হতে পারবে না। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: ذُكِرَ رَجُلٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعِبَادَةٍ وَاجْتِهَادٍ وَذُكِرَ آخَرُ بِرِعَّةٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَعْدِلْ بِالرِّعَّةِ» . يَعْنِي الْوَرَعَ. رَوَاهُ الترمذيُّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2519 وقال : غریب) * محمد بن عبد الرحمن بن نبیہ : مجھول الحال ۔
(ضَعِيف)

وعن جابر قال ذكر رجل عند رسول الله صلى الله عليه وسلم بعبادة واجتهاد وذكر اخر برعة فقال النبي صلى الله عليه وسلم لا تعدل بالرعة يعني الورع رواه الترمذياسنادہ ضعیف رواہ الترمذی 2519 وقال غریب محمد بن عبد الرحمن بن نبیہ مجھول الحال ۔ضعيف

ব্যাখ্যা : (لَا تَعْدِلْ بِالرِّعَّةِ) অর্থাৎ ‘ইবাদাতকে পরহেজগারিতা দিয়ে মাপা যায় না। (الرِعَّةِ) মূলত (الورع) ছিল। এর অর্থ হলো, হারাম কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকা। 

হাদীসের মূল অর্থ হলো, একজন লোক অনেক ‘ইবাদত করে কিন্তু হারাম থেকে বেঁচে থাকার পরহেজগারিতা কম। পক্ষান্তরে আরেকজন লোক ‘ইবাদত-বন্দেগী কম করলেও হারাম কার্যকলাপ সম্পর্কে খুবই পরহেজগারী। এ দুই ব্যক্তির মধ্যে কে উত্তম? এটা নাবী (সা.) এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘ইবাদাতকে পরহেজগারিতার সাথে মিলিও না। অর্থাৎ মুত্তাক্বী লোকেদের ‘ইবাদত এমনিতে বেশি হয়। পরিমাণে এবং মর্যাদায় উভয় স্তরে সমান থাকে।

রাগিব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শারী'আতের পরিভাষায় (وَرَعَ) বলা হয় দুনিয়ার সহায়-সম্পদ অর্জনের জন্য তাড়াহুড়া বর্জন করা। অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত না হওয়াকে (وَرَعَ) তথা পরহেজগারিতা বলা হয়। এটা তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব : সমস্ত হারাম কাজ হতে বিরত থাকা। এটা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। (২) মানদূব : সন্দেহজনক জিনিস হতে বিরত থাকা। অর্থাৎ কোন কাজ ইসলামী শারী'আতে জায়িয নাকি হারাম তা অস্পষ্ট হলে সে কাজ হতে বিরত থাকা। এটা তা মধ্যম পর্যায়ের লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (৩) ফযীলত বা মর্যাদাপূর্ণ কাজ : অনেক বৈধ কাজ হতে বিরত থাকা এবং সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয়তার মধ্যে স্বীমাবদ্ধ থাকা। আর এটা নবী, শহীদ, সিদ্দীক ও সালিহীনদের জন্য প্রযোজ্য। (মিক্বাতুল মাফাতীহ) 


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
৫১৭৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫১৭৪-[২০] ’আমর ইবনু মায়মূন আল আওদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে নাসীহাতস্বরূপ বললেন : পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি কাজকে বিরাট সম্পদ মনে করো। ১. তোমার বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, ২. রোগাগ্রস্ত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্যকে, ৩. দরিদ্রতার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে, ৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং ৫. মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে। (তিরমিযী মুরসাল হিসেবে একে বর্ণনা করেছেন)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ: اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ مُرْسلا

حسن ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) [و البغوی فی شرح السنۃ (14 / 224 ح 2021) و ابن المبارک فی الزھد (2) و النسائی فی الکبری کما فی تحفۃ الاشراف (13 / 328 ح 19179)] * السند مرسل و رواہ الحاکم (4 / 306) موصولاً من حدیث ابن عباس و صححہ علی شرط الشیخین و وافقہ الذھبی و سندہ حسن ۔
(صَحِيح)

وعن عمرو بن ميمون الاودي قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لرجل وهو يعظه اغتنم خمسا قبل خمس شبابك قبل هرمك وصحتك قبل سقمك وغناك قبل فقرك وفراغك قبل شغلك وحياتك قبل موتك رواه الترمذي مرسلاحسن رواہ الترمذی لم اجدہ و البغوی فی شرح السنۃ 14 224 ح 2021 و ابن المبارک فی الزھد 2 و النساىی فی الکبری کما فی تحفۃ الاشراف 13 328 ح 19179 السند مرسل و رواہ الحاکم 4 306 موصولا من حدیث ابن عباس و صححہ علی شرط الشیخین و وافقہ الذھبی و سندہ حسن ۔صحيح

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »