তারা ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করে যে, তিনি হাদীস জাল করাকে জায়েয বলেছেন।*

এই মহান ইমামের ইলম, তার দ্বীনদারী, পরহেজগারী এবং আলেমদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তাদের এই অপবাদকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট। হাদীস দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে কথা বলা আর হাদীস জাল করাকে জায়েয বলা দুটো এক জিনিস নয়। পাঠক এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন!!

কুলাইনী তার কাফী নামক গ্রন্থে সামা‘আহ ইবন মেহরান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তাদের সপ্তম নিষ্পাপ ইমাম আবুল হাসান মূসা ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “কেউ যদি তোমাদেরকে এমন হাদীস শুনায় যা তোমরা জান তাহলে তা গ্রহণ কর। আর কেউ যদি এমন কোনো হাদীস শুনায় যা তোমরা জান না, তাহলে সে হাদীস হল এই - তিনি হাত দিয়ে মুখের দিকে ইশারা করলেন- (অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাইলেন সে হাদীস মিথ্যা)। অতঃপর বললেন, আবু হানীফার উপর আল্লাহ্‌র লা‘নত হোক। সে বলত, আলী ‘আলাইহিস সালাম এই মত পোষণ করেন। আর আমি ও অন্যান্য সাহাবীরা এই মত পোষণ করি।”[1]

মুহাম্মদ ইবন আমর আল কাশ্‌শি তার ‘ইখতিয়ারু মারিফাতিল রিজাল’ গ্রন্থে বলেন, যে গ্রন্থটি ‘রিজালুল কাশশি’ নামে পরিচিত “হারুন ইবন খারিজা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ ‘আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণী ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে যুলুম মিশ্রিত হয় নি’[সূরা আনআম: ৮২] আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বললেন, তা (অর্থাৎ আয়াতে যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য) হল আবু হানীফা ও যুরারা যা কিছুকে ওয়াজিব বলেছেন সেসব বিষয়।”[2]

অন্য এক রেওয়ায়েতে আবু বুসাইর আবু আব্দুল্লাহ্‌ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (বুসাইর) বললেন, আমি বললাম, “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে যুলুম মিশ্রিত হয় নি’[সূরা আনআম: ৮২]। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ও তোমাকে সে যুলুম থেকে হেফাজত করুন। আমি বললাম, সে যুলুমটা কি? তিনি বললেন, যুরারা ও আবু হানীফা যা কিছু উদ্ভাবন করেছে তা।”[3]

অনুরূপভাবে তীজানী বলেন, “আমরা দেখতে পাই- আবু হানীফা একটি বিদ‘আতী মাযহাব চালু করেছে, যে মাযহাব শরীয়তের স্পষ্ট দলীলের বিপরীতে কিয়াস এবং যুক্তির উপর নির্ভরশীল।”[4]


বস্তুত এ সকল অভিযোগ অবান্তর, অগ্রহণযোগ্য। কারণ আবু হানীফা যে সুন্নতের অনুসারী ইমাম, হক্কপন্থী, হেদায়াতের বাহক এর সপক্ষে অসংখ্য মানুষ সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তিনি এমন ইলম রেখে গেছেন বড় বড় ব্যক্তিরাও যে ইলম বহন করার যোগ্যতা রাখেন না।

ইমামিয়া শিয়া আলেম ইউসুফ আল-বাহরাইনী এই মহান ইমামের বিরুদ্ধে তার সুপ্ত বিদ্বেষ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “প্রথম শাহ্‌ আব্বাস যখন বাগদাদ বিজয় করেন তখন তিনি আবু হানীফার কবরকে টয়লেট বানানোর নির্দেশ দেন। যে কেউ মল ত্যাগ করার জন্য আবু হানীফার কবরে চলে যেত। এছাড়া আবু হানীফা যে দুটি অচল দিরহাম ওয়াক্‌ফ করে গিয়েছেন সে দুটি দিরহামকে বাজারের মুখে লটকিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। একদিন বাদশাহ কবরের খাদেমকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ কবরের মধ্যে কার খেদমত কর? আবু হানীফা তো এখন জাহান্নামের সর্ব নিম্নস্তরে আছে। সে বলল, আপনার দাদা শাহ্‌ ঈসমাইল যখন বাগদাদ দখল করেন তখন এই কবর থেকে আবু হানীফার হাড্ডিগুড্ডি বের করে সেস্থানে একটা কুকুরকে দাফন করেছিল। আমি ঐ কুকরের খেদমত করি। তার কথা সত্য ছিল। কারণ মরহুম শাহ্‌ ঈসমাইল বাস্তবিকই এমনটি করেছিলেন।

তার (আবু হানীফার) একটা কারামত হল: বাগদাদের বাদশাহ্‌ একবার সুন্নী আলেম ও আবেদদেরকে ডেকে বললেন, কি ব্যাপার এই অন্ধ লোকটি মুসা ইবন জাফরের মাজারের গম্বুজের নীচে এক রাত্রি যাপন করে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। আবু হানীফাকে ইমামে আযম বলা হয়, কিন্তু আমরা তার ব্যাপারে এ রকম কোনো কারামতের কথা শুনি না কেন?তখন উপস্থিত লোকেরা জবাব দিল যে, আবু হানীফার বরকতেও এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে। বাদশাহ্‌ বলল, তাহলে আমি এ রকম একটা কারামত দেখতে চাই যেন আমি দ্বীনের ব্যাপারে স্পষ্ট জ্ঞান নিতে পারি। তখন তারা একজন গরীব লোকের কাছে এসে বলল, আমরা তোমাকে এত এত দিরহাম ও দিনার দিব। তুমি বলবে যে, আমি অন্ধ। লাঠি ঠেঁক দিয়ে দুই-তিন দিন তুমি হাঁটবে। এরপর জুমা’র রাত্রিতে আবু হানীফার কবরের কাছে গিয়ে রাত্রিযাপন করবে। সকাল হলে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ্‌, এই কবরওয়ালার বরকতে আমি নিরাময় লাভ করেছি। সে তাদের কথামত ঐ রাত্রিটি আবু হানীফার মাজারের গম্বুজের নীচে যাপন করল। যখন সকাল হল সে লোকটি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেল। তখন সে চিৎকার করে বলল, ও লোকেরা তোমরা শুন, এরকম এরকম আমার কাহিনী। আমি পেশাজীবি মানুষ, আমার পরিবার-পরিজন আছে। এভাবে তার খবর বাদশাহর কানেও গেল। তখন বাদশাহ তাকে ডেকে পাঠালেন এবং তার কাছে তাদের দুরভিসন্ধির কথা শুনলেন। এরপর বাদশাহ তাদেরকে বাধ্য করলেন আজীবন সে লোকটার জীবিকার ব্যবস্থা করতে।”[5]

>
* দেখুন: ‘আসসিরাতুল মুসতাকীম’ (৩/২১৩)।

[1] দেখুন: কুলাইনীর ‘আলকাফী’ (১/৫৮)।

[2] ‘রিজালুল কিশ্শি’ (পৃঃ ১৪৯)।

[3] ‘রিজালুল কাশশি’ (পৃঃ ১৪৫)।

[4] ‘আশ শিয়া হুম আহলুস সুন্নাহ্‌’ (পৃঃ ৮৮) লেখক: ড. মুহাম্মদ আত তীজানী।

[5] ইউসুফ আল বাহরাইনীর ‘আলকাশকুল’ গ্রন্থের (১/৩৫১); বৈরুতের আল হেলাল লাইব্রেরী; প্রথম সংস্করণ।

এ ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিয়ারা আহলে সুন্নাতের ইমামদের নিয়ে খারাপ ঘটনা বানিয়ে তাদের হিংসা চরিতার্থ করে থাকে। তাই এসব ঘটনার জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। [সম্পাদক]