আল্লাহর বিধিবদ্ধ ইবাদত কম-বেশি করা

ইবাদতে বৃদ্ধি করা যেমন আশুরার দিনের কর্মকান্ড আর ইবাদতে কম করা যেমন আরাফার ময়দানে অবস্থান ত্যাগ করা।

...........................................

ব্যাখ্যা: ইবাদতে বৃদ্ধি করা: যেমন জাহিলরা আশুরার দিনে তথা মুহারর্ম মাসের দশম দিনে বাড়াবাড়ি মূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় অথচ এ দিনে এক বড় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, তা হলো ফেরআউন ও তার সম্প্রদায় সমুদ্রে নিমোজ্জিত হয়। অপরদিকে মূসা আলাইহিস সালাম ও তার জাতি মুক্তি লাভ করেন। আর এ দিনেই মিথ্যার বিরূদ্ধে হক্বকে সাহায্য করা হয় এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা আদায় স্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম এ দিনে সিয়াম পালন করতেন। আর এ সিয়াম পালন করার রীতি মুসলিমদের জন্য শরী‘আত সম্মত। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরতের পর তিনি ইয়াহুদীদেরকে এ দিনে সিয়াম পালন করতে দেখে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, এ দিনে তোমরা কেন সিয়াম পালন করো? জবাবে তারা বলে, এটি এমন দিন যে দিনে মূসা আলাইহিস সালাম ও তার জাতি মুক্তি লাভ করেন এবং ফেরআউন ও তার সম্প্রদায় ধ্বংস হয়। মূসা আলাইহিস সালাম সিয়াম পালন করতেন তাই আমরাও তার সিয়াম পালন করি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

نحن أحق بموسى منكم

মূসা আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমরাই বেশি হক্বদার।[1] অতঃপর তিনি এ সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন এবং ইয়াহুদীদের বিপরীতে এ সিয়ামের পূর্বে (৯ম, ১০ম) অথবা পরের একদিন (১০ম, ১১শ) মোট দু’টি সিয়াম পালনের আদেশ করেন।

তাই আশুরার দিনে সিয়াম পালন করা শরীয়ত সম্মত। কিন্তু জাহিলরা এ দিনে সিয়াম পালনের ব্যাপারে অতিরিক্ত কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। তাই ইয়াহুদীরা এ দিনকে ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করে তাদের ঘড়-বাড়ি, সন্তানাদি ও স্ত্রীদেরকে সজ্জিত করে তুলে এবং দিনটিকে ঈদের দিন গণ্য করে। এভাবে তারা শরী‘আতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। তাই আশুরার দিনে সিয়াম পালনের সাথে অতিরিক্ত কিছু করা জাহিলী কর্ম। অনুরূপভাবে রাফেযীরাও এ দিনকে শোক, মাতম ও বিলাপের দিন হিসাবে গণ্য করে অতিরিক্ত কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। কেননা, এ দিনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে হত্যা করা হয়েছে।

অপরদিকে জাহিলদের ইবাদতের কমতি হলো যেমন হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা যা কিছু ঘটে। জাহিলী যুগে তারা হজ্জ পালন করতো, এজন্য যে, এটা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দীনের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হজ্জ পালনের সময় তারা অনেক পরিবর্তন করে এবং শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা আরাফায় অবস্থান করা বিধিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু তারা আরাফায় অবস্থান করতো না বরং মুযদালিফায় অবস্থান করতো। এটাই ইবাদতের কমতি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাজ্জ পালন করতেন তারা ধারণা করতো যে, তিনি তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করবেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা অতিক্রম করে সেখানে অবস্থান করেন। আর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর আদর্শের উপর হজ্জ পালন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ)[البقرة : 199]

অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে (সূরা বাক্বারাহ ২:৯৯)।

অর্থাৎ আরাফা হতে (প্রত্যাবর্তন করো)। মুশরিকদের মুযদালিফায় অবস্থানের ব্যাপারে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে তারা তালবিয়া পাঠেও অতিরিক্ত কথা যোগ করতো, তাদের তালবিয়া হলো:

(إلا شريكاً هو لك. تملكه وما ملك)

ইল্লা শারীকান হুয়া লাকা, তামাল্লাকুহু ওয়ামা মুলক।এ সবই হচ্ছে ইবাদতের মাঝে কমতি। এ সব কিছু জাহিলী দীনের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে যারা দীনের মাঝে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করে তারাও জাহিলী দীনের উপরই রয়েছে। তাই বিদ‘আত ও কুসংস্কার সবই জাহিলী দীনের অন্তর্ভুক্ত।

>
[1]. ছ্বহীহ বুখারী হা/২০০৪,৩৯৪২,৩৯৪৩ মুসলিম হা/১১৩০।