বিভক্ত হওয়া ও ঐক্য বিনষ্ট করা

আল্লাহ তা‘আলার আশ্চর্য জনক নিদর্শন! আল্লাহ তা‘আলার একতাবদ্ধ হওয়ার উপদেশকে জাহিলরা পরিত্যাগ করে। অথচ তিনি বিভক্ত হতে তাদেরকে নিষেধ করেন আর সেটাই তারা করে এবং প্রত্যেক দল নিজের অবস্থান নিয়ে উল্লাস করে।

............................................

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার বিস্ময়কর নিদর্শন হলো জাহিলরা যখন আল্লাহর কিতাবের উপর একতাবদ্ধ থাকা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অর্পিত শরী‘আতকে আঁকড়ে ধরা বর্জন করলো তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা, বিক্ষিপ্ততা ও হানাহানি সৃষ্টি করে তাদেরকে পরীক্ষায় ফেললেন। আর তারা নিজেদের বাতিলকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলো। এটাই তাদের শাস্তি। কেননা মানুষ বাতিল নিয়ে আনন্দিত হলে তা আর পরিত্যাগ করে না। অপরদিকে যখন বাতিলের প্রতি আনন্দবোধ থাকে না, সন্দেহ জাগে তখন এক্ষেত্রে তাওবা করা ও ফিরে আসার সম্ভবনা থাকে। কিন্তু যখন বাতিলকে নিয়ে শান্তি পায় ও আনন্দিত হয় তখন ব্যক্তির মাঝে পরিবর্তন ঘটে না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বাতিলপন্থীদের শাস্তি।

কেননা যে হক্ব পরিত্যাগ করে, সে বাতিলের পরীক্ষায় পড়ে। আর যে একতাবদ্ধ থাকা বর্জন করে, সে বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত, হানাহানি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার পরীক্ষায় পড়ে। তাই দীন ও দুনিয়াবী বিষয়ে ভিন্নমতের ঐসব মানুষের মাঝে কেবল শত্রুতা, গোঁড়ামী ও বিদ্বেষ পাওয়া যায়। কখনো কখনো নিজেরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আর যারা কুরআন ও সুন্নাহকে একত্রে আঁকড়ে ধরে, তাদের মাঝে হৃদ্যতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয় এবং পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগীতা করতে দেখা যায়। তারা যেন একটি দেহের মত।

তাই কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা ব্যতীত কোন নিরাপত্তা নেই। আর কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ ছাড়া কোন ঐক্যও নেই। এ ছাড়া যা কিছু আছে সবই বিভেদ ও শাস্তি। যারা নিজেদের কথা অনুযায়ী মুসলিমদেরকে একতাবদ্ধ দেখতে চায়, তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যদি মুসলিমদের ঐক্য কামনা করেই থাকো, তাহলে আক্বীদার ক্ষেত্রে এক হও। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন সে একত্বে ও আক্বীদার উপর সবাই এক হয়ে যাও। আর এটা আমাদের কবর, এটা আমাদের সূফীমত ও এটা আমাদের শিয়ামত এসব বলে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করো না।

প্রথমেই আক্বীদার উপর এক হও, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মা‘বুদ নেই এ কালেমা আঁকড়ে ধরো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধানের ক্ষেত্রে এক হও। আর আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের দিকে ফিরে আসো। আর যাবতীয় নিয়ম, রীতি ও গোত্রীয় অভ্যাস ইত্যাদি প্রত্যাখ্যান করো এবং কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে আসো যেহেতু তোমরা মুসলিমদের একতাবদ্ধতা ও ঐক্য কামনা করছো। তাই একই আক্বীদা ও উদ্দেশ্য ছাড়া মুসলিমরা কখনোই এক হতে পারবে না।

এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধান ও নের্তৃত্বের একত্বতা যা মুসলিমদের শাসকের কথা শ্রবণ ও আনুগত্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। মুসলিমদের শাসকের মাধ্যমে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবে। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إن الله يرضى لكم ثلاثاً: أن تعبدوه ولا تشركوا به شيئاً، وأن تعتصموا بحبل الله جميعاً ولا تفرقوا، وأن تناصحوا من ولاّه الله أمركم

আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তিনটি বিষয় পছন্দ করেন, তারই ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে শরীক করবে না ও সকলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, দল বিভক্ত হবে না এবং আল্লাহ যাকে তোমাদের শাসক নির্ধারণ করেছেন পরস্পর তোমরা তার কল্যাণ কামনা করবে।[1]

>
[1]. ছ্বহীহ: মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ।