জেনে বুঝে আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত করা।

ব্যাখ্যা: ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা আল্লাহর কিতাব তাওরাত ও ইনজিল জেনে-বুঝে বিকৃত করেছে। তারা এ কিতাবগুলো থেকে জ্ঞানার্জন করে বুঝার পর তথ্য বৃদ্ধি অথবা কমতি করার মাধ্যমে তাতে বিকৃতি ঘটিয়েছে। বিশুদ্ধ অর্থ বর্জন করে তার অপব্যাখ্যা করেছে, সবই সম্ভব হয়েছে তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে।

মুসলিমরাও এ সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। আহলে কিতাবরাই প্রথমত নিজেদের কু-প্রবৃত্তি, ইচ্ছা ও আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মূল বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও অস্বীকার করার পরিমাণ তারা নির্ধারণ করতে পারেনি। আর সুনির্দিষ্ট অর্থ ব্যতিরেকে কিতাবের অপব্যাখ্যা করে তা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে কিতাবগুলোর উপর অবিচার করেছে।

প্রবৃত্তি পুজারী, ভ্রষ্ট দল ও কু-প্রবৃত্তির অনুসারী এরূপ সমস্যায় মুসলিমরা জর্জরিত। যখন ঐ সব ভ্রষ্টদেরকে বলা হয়, সুদ হারাম। তখন তারা বলে, সুদ থেকে এ ব্যাখ্যা (বিকৃত ব্যাখ্যা) উদ্দেশ্য। তারা নিজেদের প্রবৃত্তি অনুসারে সুদের ব্যাখ্যা করে। বর্তমানেও তাদের অনেক কিতাবাদী, লিখনী ও ফাতওয়া আছে যা সুদকে বৈধ করে।

এমনিভাবে যখন তাদেরকে বলা হয়, এ বিধান আল্লাহ ও তার রসূল হারাম করেছেন, তখন তারা বলে, এটা কি সে সুদ যা আল্লাহ ও তার রসূল হারাম করেছেন? আল্লাহ ও তার রসূল জাহিলদের সুদ হারাম করেছেন যা অভাবীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত হিসাবে গ্রহণ করা হতো। এভাবে জাহিলরা সুদের বর্ধিতাংশ অর্জন করে অথবা তারা বলে, প্রথমে যে সুদের সূচনা হয়েছিল তা হারাম। আর বিনিয়োগে সুদ গ্রহণ ভাল।

ছ্বহীহ সূত্রে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে:

"الذهب بالذهب، والفضة بالفضة، والبر بالبر، والشعير بالشعير والتمر بالتمر، والملح بالملح، مثلاً بمثل، سواء بسواء، يداً بيد"

স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবনের বিনিময় লবন। এসব বিক্রয় করা সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে।[1]

এগুলোর বর্ধিতাংশ সুদ হিসাবে গণ্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এধরণের সুদ হারাম করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا)

রসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও (সূরা আল হাশর ৫৯:৭)।

আল্লাহ তা‘আলার কথা (وَحَرَّمَ الرِّبا) অর্থাৎ তিনি সুদ হারাম করেছেন। এ কথার ব্যাপক অর্থে বর্ধিত সুদ অন্তর্ভুক্ত। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের মাঝে এমন লোক ছিল যারা যথাক্রমে তাওরাত ও ইনজিল বিকৃত করেছে। আর উম্মাতে মুহাম্মাদীর মাঝে এমন লোক আছে যারা নিজেদের ও অন্যদের রীতিকে বৈধ করার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর বিধান পরিবর্তন করে। এমতাবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা মুসলিমদের উপর ওয়াজীব।

ইয়াহুদীদের দ্বারা বিধান বিকৃত করার উদাহরণ: যখন আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদীদেরকে বললেন,

(وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّداً وَقُولُوا حِطَّةٌ) [البقرة: 58]

দরজায় প্রবেশ কর মাথা নীচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’ (সূরা আল বাক্বারাহ ২: ৫৮)।

অর্থাৎ (তোমরা বল) (حط عنا ذنوبنا واغفر لنا) অর্থাৎ আমাদের পাপ মোচন করে দাও ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তারা এ কথাকে বিকৃত করে বললো, (حبة من حنطة) তথা আমাদেরকে তুমি গম দাও। এখানে (حط) হিত্তুন শব্দে ‘নুন’ অতিরিক্ত যোগ করে (حنطة) হিনতাতুন শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহর গুণাবলীর পরিবর্তন ঘটায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى) [طه: 5]

পরম করুণাময় আরশে সমুন্নত (সূরা ত্ব-হা ২০:৫)।

তারা বলে, (اسْتَوَى) তিনি আরশে সমুন্নত। এর অর্থ (استولى) তথা তিনি প্রভাব বিস্তার করলেন। ইয়াহুদীরা যেমন (حنطة) শব্দে নুন বর্ণ বৃদ্ধি করেছে, তেমনই (استولى) শব্দটিতে তারাও লাম বর্ণ বৃদ্ধি করেছে। এটাই হলো অতিরিক্ত কিছু বৃদ্ধি ও কমবেশি করে শব্দ বিকৃত করা। আর বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা ছাড়া কুরআন ও হাদীছের অপব্যাখ্যা করার নাম অর্থের বিকৃতী। তাই কুরআন ও হাদীছের কথাকে যথাস্থানে না রাখলে তা বিকৃত বলে গণ্য হয়।

>

[1]. ছ্বহীহ বুখারী ২১৩৪, ছ্বহীহ মুসলিম ১৫৮৭।