দুর্বলরা যে নীতির উপর রয়েছে, সেটাকে হক্ব মনে না করা

দুর্বলরা ছাড়া কেউ বাতিলের অনুসরণ করে না বলে প্রমাণ পেশ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ) [الشعراء: 111]

তারা বলল, ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নিম্নশ্রেণীর লোকেরা তোমাকে অনুসরণ করছে? (সূরা শু‘আরা ২৬:১১১)।

(أَهَؤُلاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا) [الأنعام: 53]

এরাই কি, আমাদের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? (সূরা আন‘আম ৬:৫৩)।

কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা (দুর্বলদের প্রতি উপস্থাপিত অভিযোগ) প্রত্যাখ্যান করে বলেন,

(أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ) [الأنعام: 53]

আল্লাহ কি কৃতজ্ঞদের ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞাত নয়? (সূরা আন‘আম ৬:৫৩)।

........................................................

ব্যাখ্যা: এটা পূর্ববর্তী মাস’আলার বিপরীত। মাস’আলাটি ছিল শক্তিশালীরা হক্বের উপর রয়েছে বলে প্রমাণ পেশ করা। আর এ বিষয়কে তারা দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করে যে, দুর্বলরা হক্বের উপর নেই। যদি তারা হক্বের উপরই থাকতো তাহলে তারা দুর্বল হতো না। হক্ব ও বাতিল বুঝার জাহিলদের মাপকাঠি এটাই। তারা জানে না যে, শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা আল্লাহ তা‘আলার হাতেই আছে। দুর্বলতা সত্ত্বেও দুর্বলরা কখনো হক্বের উপর থাকে এবং শক্তিসম্পন্নরা কখনো বাতিলের উপর থাকে। নূহ আলাইহিস সালাম তার জাতিকে দাওয়াত দিলে তারা বলে,

(قَالُوا أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ) [الشعراء:111]

তারা বলল, ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ নিম্নশ্রেণীর লোকেরা তোমাকে অনুসরণ করছে? (সূরা শু‘আরা ২৬:১১১)।

অর্থাৎ আমাদের মাঝে যারা দুর্বল তারা (অনুসরণ করবে)। আপনি যদি হক্বের উপর থাকতেন তাহলে শক্তিসম্পন্নরা আপনার অনুসরণ করতো। অন্য আয়াতে আছে,

(وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِي الرَّأْيِ)

আমরা দেখছি যে, কেবল আমাদের নীচু শ্রেণীর লোকেরাই বিবেচনাহীনভাবে তোমার অনুসরণ করেছে। (সূরা হুদ ১১:২৭)

অর্থাৎ যাদের কোন রায় বা সিদ্ধান্ত নেই, তারাই আপনার অনুসরণ করে। আর তারা এ ব্যাপারে অন্য কোন চিন্তা-ভাবনা করে না।

অনুরূপভাবে রসূল এর যুগে মুশরিকরা দুর্বল মু’মিনদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো। যেমন বিলাল, সালমান, আম্মার ইবনে ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও তার মাতা-পিতা এবং দুর্বল ছাহাবীগণকে তারা উপহাস করতো। তারা বলতো, ঐসব দুর্বলরা আপনার নিকটে থাকার কারণে আমরা আপনার সাথে বসবো না। তাদের মজলিশ ভিন্ন অন্যত্র আমাদের বসার ব্যবস্থা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য নির্দিষ্ট মজলিশ নির্ধারণ করার ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা‘আলা ভৎর্সনা করে বলেন,

(وَلا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِيَقُولُوا أَهَؤُلاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا) [الأنعام: 52، 53]

আর তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না তাদেরকে, যারা নিজ রবকে সকাল সন্ধ্যায় ডাকে, তারা তার সন্তুষ্টি চায়। তাদের কোন হিসাব তোমার উপর নেই এবং তোমার কোন হিসাব তাদের উপর নেই, ফলে তুমি তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে এবং তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে (সূরা আল আন‘আম ৬:৫২-৫৩)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَهَؤُلاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا)

এরাই কি, আমাদের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? (সূরা আল আন‘আম ৬:৫৩)।

ঐ সব লোকেরা অর্থাৎ দুর্বল ছাহাবীরা। কল্যাণ অর্জনে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হওয়া তাদের সম্ভব নয়।

(لَوْ كَانَ خَيْراً مَا سَبَقُونَا إِلَيْهِ)

যদি এটা ভাল হত তবে তারা আমাদের থেকে অগ্রণী হতে পারত না। (সূরা আহক্বাফ ৪৬:১১)

জাহিলদের মত বর্তমানেও অজ্ঞরা আলিমদেরকে আখ্যা দেয় যে, তাদের কোন রায় (সিদ্ধান্ত) ও চিন্তা ভাবনা নেই, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ, তারা পাথরে পরিণত হয়েছে, তারা জটিলতা সৃষ্টি করে, শেষ পর্যন্ত এভাবেই বলতে থাকে।

শাইখ রহিমাহুল্লাহ যে ঐতিহাসিক বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন তা কেবল সর্তকতার উদ্দেশেই করেছেন। যাতে এ বিষয়সমূহের ব্যাপারে তিনি সতর্ক করতে পারেন। কেননা তা জাহিলী বিষয়াদীর অন্তর্ভুক্ত। জাহিলরা তো ফাসেক আলেম ও অজ্ঞ ইবাদতকারীদের অনুসরণ করে।