কন্যা বিদায় করার পূর্বে পিতা-মাতার উচিৎ, তাকে আল্লাহ-ভীতি ও নতুন সংসারের উপর বিশেষ উপদেশ দান করা। যেমন উচিৎ ছিল তার জীবনকে সুন্দর ও আদর্শময় করে গড়ে তোলা।

এক কন্যাকে তার মাতার উপদেশ নিম্নরূপঃ

‘বেটী! তোমাকে যে শিক্ষা দিয়েছি তাতে অতিরিক্ত উপদেশ নিষ্প্রয়োজন। তবুও উপদেশ বিস্মৃত ও উদাসীনকে স্মরণ ও সজাগ করিয়ে দেয়।

বেটী! মেয়েদের যদি স্বামী ছাড়া চলত এবং তাদের জন্য মা-বাপের ধন-দৌলত ও স্নেহ-ভালোবাসাই যদি যথেষ্ট হত, তাহলে নিশ্চয় তোমাকে শবশুরবাড়ি পাঠাতাম না। কিন্তু মেয়েরা পুরুষ ( স্বামী)দের জন্য এবং পুরুষরা মেয়েদের (স্ত্রী)দের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।

বেটী! তুমি সেই পরিবেশ ত্যাগ করতে চলেছ, যেখানে তুমি জন্ম নিয়েছ। সেই গৃহ ত্যাগ করতে চলেছ, যাতে তুমি লালিত-পালিত হয়েছ এবং এক নতুন কুটীরে গমন করতে চলেছ, যেখানে তোমার কেউ পরিচিত নয়। এমন সঙ্গীর সাথে বসবাস করতে যাচ্ছ, যার সাথে তোমার কোনদিন আলাপই হয়নি। সে তোমাকে তার স্বামীত্বে নিয়ে তোমার তত্ত্বাবধায়ক ও মালিক হয়েছে। সুতরাং তুমি তার সেবিকা হয়ো, সে তোমার সেবক হয়ে যাবে।

বেটী! স্বামীর জন্য তোমার মায়ের এই ১০টা কথা সর্বদা খেয়াল রেখো, চিরসুখিনী হবে ইনশাআল্লাহঃ-

১- অল্পে তুষ্ট হয়ে সদা তার নিকট বিনীতা থাকবে।

২- খেয়াল করে তার সকল কথা শ্রবণ করবে এবং তার সকল আদেশ পালন করবে।

৩- তার চক্ষে সদাই সুদর্শনা হয়ে থাকবে। তোমার কোন অঙ্গ ও কাজ যেন তার চক্ষে অপ্রীতিকর না হয়।

৪- তার নাকের কাছেও যেন তুমি ঘৃণ্য না হও। বরং সদা সে যেন তোমার নিকট হতে সৌরভ-সুঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারে। (নচেৎ, যেন কোন প্রকারের দুর্গন্ধ না পায়।)

৫- তার নিদ্রা ও আরামের কথা সদা খেয়াল রাখবে। কারণ, নিদ্রা ভাঙ্গার ফলে বিরক্তি ও রাগ সৃষ্টি হয়।

৬- তার আহারের কথাও সর্বদা মনে রাখবে। যথাসময়ে খাবার প্রস্ত্তত রাখবে।

৭- তার ধন-সম্পদের হিফাযত করবে, খেয়ানত করো না। অপচয় ও অপব্যয় করো না এবং স্বামীকে তা করতে বাধ্য করো না।

৮- তার পরিজনের যথার্থ সেবা করবে। শত সতর্কতার সাথে সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।

৯- খবরদার! তার কোন কথার অবাধ্য হয়ো না। নচেৎ তার হৃদয় থেকে তোমার ভালোবাসা দূর হতে থাকবে।

১০- তার কোন গোপন রহস্য ও ভেদ কারো নিকট প্রকাশ করো না, নচেৎ তুমি তার নিকট বিশ্বাসঘাতিনী হয়ে যাবে।

আর সাবধান! স্বামী যদি কোন বিষয়ে চিন্তিত বা শোকাহত থাকে, তবে তার সামনে কোন প্রকার আনন্দ প্রকাশ করো না। আর যদি আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকে, তবে তার সামনে তোমার কোন শোকের কথা প্রকাশ করো না।[1]

আদর্শ মায়ের আদর্শ উপদেশই বটে! মানতে পারলে সুখের দাম্পত্যই লাভ হয় সৌভাগ্যবান দম্পতির।

অতঃপর বেটীজামায়ের উদ্দেশ্যে এই দুআ পঠনীয়ঃ-

اَللّهُمَّ بَارِكْ فِيْهِمَا وَبَارِكْ لَهُمَا فِيْ بِنَائِهِمَا.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা বা-রিক ফীহিমা, অবা-রিক লাহুমা ফী বিনা-ইহিমা।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! ওদের দু’জনের জন্য বরকত দান কর এবং ওদের বাসরে মঙ্গল দান কর।[2]

[1] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৯)

[2] (তাবারানী, আদাবুয যিফাফ ১৭৪পৃঃ)