শির্ক কী ও কেন? দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী
কারো বিশেষ মর্যাদার ওসীলায় আখেরাতে কেউ বিপদ থেকে রক্ষা পাবেনা

কারো মর্যাদার ওসীলায় যেমন কেউ ইহকালীন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে না, তেমনি কেউ কারো মার্যাদার খাতিরে পরকালীন বিপদ থেকেও রক্ষা পেতে পারে না। যদি কেউ পারতো তা হলে সর্বাগ্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটাত্মীয়রাই তা পারতেন। কিন্তু দেখা যায় রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ-জাতীয় সম্ভাবনার কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁর কোনো নিকটাত্মীয়দের মনে যাতে এ-জাতীয় ধারণার উদ্রেক না হয়, সে-জন্য তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বনী হাশিম ও বনী মুত্তালিব এমনকি তাঁর কলিজার টুকরা মা ফাতেমাকেও ডেকে বলে দিয়েছিলেন:

«لاَ أُغْنِيْ عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا»

‘‘আমি আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করতে পারবো না’’।[1] আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অফুরন্ত মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তিনি যদি তাঁর মর্যাদার ওসীলায় তাঁর নিকটাত্মীয়দেরকে পরকালীন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারেন, তাঁর আত্মীয়রা যদি আখেরাতে তাঁর মর্যাদার দ্বারা কোনো উপকার পেতে না পারে, তা হলে এ-জগতে আর কে থাকতে পারেন যিনি তাঁর নিজের মর্যাদার ওসীলায় তাঁর নিকটাত্মীয় ও ভক্তদেরকে পরকালীন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন ?!প্রকৃতকথা হচ্ছে-পরকালীন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত উপায় হচ্ছে-রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সঠিক ঈমান ও বিশুদ্ধ ‘আমল দ্বারা নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা। যারাই এ যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হবে, তারাই হয় বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে, না হয় হালকা হিসেব হবে, প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফা‘আত লাভে ধন্য হবে। এর বাইরে প্রারম্ভে কোনো পীর বা ওলির ওসীলায় কারো পার পাবার কোনই উপায় নেই। কিন্তু সাধারণ জনমনে ওলিদের ব্যাপারে এ-জাতীয় ধারণার জন্ম হওয়ার ফলেই তারা ওলিদের কবরে নানারকম উপাসনা করার মাধ্যমে তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চেষ্টা করে।

এ-উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তাদের কেউবা কবরের খেদমত করে, কেউবা সেখানে মানত করে। কেউবা সেখানে যেয়ে বসে থেকে ধ্যানে মগ্ন হয়ে মুরাক্বাবা ও মুশাহাদা করে। কেউবা কবরের পার্শ্বে নামায পড়ে। কেউবা সেখানে অনুনয় বিনয় করে দো‘আ করে। কেউবা সেজদাবনত হয় ইত্যাদি...। আর এ-সব কর্মের মাধ্যমে তারা কবরস্থ ওলির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর দয়া ও কৃপা অর্জন করতে চায় এবং তাঁদের দয়ার ওসীলায় আখেরাতে পরিত্রাণ পেয়ে আল্লাহর নিকটতম হতে চায়। তবে এ-জাতীয় কর্মকারীদের জানা আবশ্যক যে, তারা যে ধারণার ভিত্তিতে মাযার ও কবরে এ-সব কর্ম করেন, আরবের মুশরিকরাও ঠিক এ ধারণার ভিত্তিতেই তাদের ওলিদের মূর্তিকে কেন্দ্র করে এ-সব করতো। যার প্রমাণ এ পরিচ্ছেদের প্রারম্ভেই প্রদান করা হয়েছে।

>
[1]. আবু আব্দিল্লাহি দ্দারিমী, সুনান, (দার এহইয়াউস সুন্নাতিন্নববীয়্যাঃ, সংস্করণ বিহীন, তারিখ বিহীন), ২/৩০৩৫।