আল্লাহকে চেনার মাধ্যম হচ্ছে জ্ঞান বা ইলম। আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু এসেছে নবুওয়তের মাধ্যমে, সেসবও ইলম এর অন্তর্ভুক্ত। নবী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো জানা এবং বুঝাও ইলম এর অংশ। আল্লাহকে চেনা, জানা এবং তার নির্দেশ ও নিষেধসমূহ ইলম। এই ইলম অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে চারটি। ১. আল কিতাব বা আল কুরআন। ২. আস্ সুন্নাহ্। ৩. কিয়াস এবং ৪. শর্ত সাপেক্ষে ইজতিহাদ। আল্লাহর কিতাব বা আল কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীসে ইলম (জ্ঞান) ও আলিম (জ্ঞানী) সম্পর্কে অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আলিমদের সম্পর্কে বলেছেন

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলিমগণই আল্লাহকে ভয় করে।”[১]

অন্যত্র বলা হয়েছে,

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ

‘আল্লাহ্ নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। ফেরেশতাগণ এবং যারা জ্ঞানী (অর্থাৎ আলিম) তারাও সততা ও ইনসাফের সাথে এই সাক্ষ্য দিচ্ছে।'[২]

আল্লাহর ওহীই যে জ্ঞান সেই সম্পর্কে আল্লাহ্ নিজেই বলেন,

وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا

‘তিনি আপনাকে এমন বিষয় জানিয়েছেন যা আপনার জানা ছিলো না। মূলত আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বিরাট।'[৩]

ইলম বা জ্ঞানের অধিকারীরা যে অত্যন্ত মর্যাদাবান সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে,

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ্ তাদেরকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।[৪]

আরেক জায়গায় বলা হয়েছে-

هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা উভয়ে কি সমান হতে পারে? যাদের জ্ঞান বুদ্ধি আছে নসীহত কেবল তারাই গ্রহণ করে থাকে।[৫]

সহীহ্ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمِ انْتِزاعًا يَنْتَزِعُهُ مِن الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاء حَتَّى إِذا لم يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤَسَاءَ جُهَّالًا فَيُسْأَلُوا،فأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

আল্লাহ অবশ্য মানুষের অন্তর থেকে ইম কেড়ে নেবেন না কিন্তু তিনি আলিমদেরকে তুলে নেবেন। যখন কোনো আলিম থাকবে না তখন মানুষ মূর্খ জাহিলদের নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে তারা না জেনেই মতামত দিয়ে দেবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং লোকদেরও পথভ্রষ্ট করবে।[৬]

সহীহ মুসলিমের অন্য হাদীসে বলা হয়েছে (বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা রা.), রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ ، وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ ، إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ ، وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ ، وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ ، وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ

যে ব্যক্তি একজন মুমিনের কষ্ট দূর করে দেবে, আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো লোকের কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট লাঘব করে দেবেন। যে ব্যক্তি কারও দোষত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তার জন্য তাঁর সাহায্য অব্যাহত রাখেন। যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জনের জন্য বের হয় আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথটি সহজ করে দেন। যখন কিছু লোক আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত এবং তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে। তাদেরকে রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন। আর তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সাথে তাদের কথা স্মরণ (বলাবলি করতে থাকেন। যার কার্যকলাপ তাকে পিছিয়ে দেবে, বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবে না।[৭]

[১]. সূরা ফাতির, আয়াত : ২৮।

[২]. সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮।

[৩]. সূরা আন নিসা, আয়াত : ১১৩।

[৪]. সূরা আল মুজাদালা, আয়াত : ১১।

[৫]. সূরা আয যুমার, আয়াত : ৯।

[৬]. সহীহ আল-বুখারী, ইলম অধ্যায়; সহীহ মুসলিম, ইলম অধ্যায় (হাদীস ৬৫৫২)।

[৭]. সহীহ মুসলিম, যিকির, দুআ, তাওবা ও ইস্তিগফার অধ্যায়, (হাদীস-৬৬০৮)।