(২) প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর অনুসরণ

বিদআত জন্মের এক কারণ প্রবৃত্তি পূজা। কোনও কর্মকে উত্তম মনে করা হয়, অতঃপর শয়তান সেই কর্মকে অধিক সুন্দর ও সুশোভিতরূপে তার মনে প্রবেশ করিয়ে দেয়। মন তা পছন্দ ও বরণ করে। কখনো বা অভ্যাসগতভাবে ঐ কর্মকেই ধর্ম বলে পালন করে। যখন কারো সতর্কবাণীও গ্রাহ্য হয় না। | বিদআত ঐ প্রবৃত্তিরই বোনা জাল। যে প্রবৃত্তির কাছে কিতাব ও সুন্নাহর ততটা বা কিছুটাও মান নেই। বস্তুতঃ যারাই কিতাব ও সুন্নাহর পথ ছেড়ে অন্য পথে চলতে চায় তারাই প্রবৃত্তির পূজা করে এবং নিজ মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ, অতঃপর ও যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয় তাহলে জানবে যে, ওরা তো কেবল নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। আর আল্লাহর পথনির্দেশ বিনা যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে? (সূরা কাসাস ৫০ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَىٰ

অর্থাৎ, ওরা তো কেবল অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ ওদের নিকট ওদের প্রতিপালকের তরফ হতে পথনির্দেশ এসেছে। (সুরা নাম ২৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِن بَعْدِ اللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

অর্থাৎ, তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজের উপাস্য করে নিয়েছে? আল্লাহ (তার ভ্রষ্টতা) জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চক্ষর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সুরা জাসিয়াহ ২৩ আয়াত) সুতরাং প্রবৃত্তি পূজা এমন এক বিপজ্জনক হৃদরোগ যার কারণে পূজারী মানুষ। বিভ্রান্ত ও কুটিলতায় পড়ে সরল পথ থেকে সুদূরে অপসৃত হয়। এমন বক্রপথ অবলম্বন করে যে, সঠিক পথ-নির্দেশ সত্ত্বেও সত্য পথে প্রত্যাবর্তন করতে সম্মত। হয় না।

পর্বতসম দলীল তার কাছে পেশ করলেও তা অগ্রাহ্য করে নিজের মতের উপরই সুদৃঢ়ভাবে নির্বিচল থাকে। যেহেতু ঐ খেয়াল তার মনে এমনভাবে বদ্ধমূল হয় যে, ন্যায় শুনতে কর্ণ বধির এবং সরল ও সত্য পথ দেখতে চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। কখনো বা কিতাব ও সুন্নাহ থেকেই এমন দলীল বক্রতার সহিত বের করে, যা তার প্রবৃত্তি ও মতের বাহ্যতঃ অনুকূল মনে হয়। কখনো বা একটি মাত্র আয়াত বা হাদীসঅথবা তার কোন একাংশ ধরে তা নিজের মতের উপর দলীলরূপে পেশ করে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে। কিন্তু অন্যান্য আয়াত, হাদীস বা তার পুণাংশের প্রতি ভ্রক্ষেপ করে না। এমন গোঁয়ার ও ভ্রষ্টলোকের সৃষ্ট বিদআত সবচেয়ে অধিক মারাত্মক।