বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

জ্যোতিষীর শির্ক বলতে রাশি-নক্ষত্রের সাহায্যে ভূমন্ডলে ঘটিতব্য ঘটনাঘটনসমূহের আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করাকে বুঝানো হয়। যেমন: আকাশের কোন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বৃষ্টি, বন্যা, শীত, গরম, মহামারী ইত্যাদির আগাম সংবাদ দেয়া।

সর্ব সাকুল্য দু’টি কারণেই জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:

১. জ্যোতিষীরা এ কথা দাবি করে থাকে যে, নক্ষত্রাদি স্বেচ্ছা স্বয়ংক্রিয়। যে কোন অঘটন এদেরই প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জাতীয় ধারণা সর্বসম্মতিক্রমে কুফরি। কারণ, এটি হচ্ছে এক আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য আরেকটি কর্তৃত্বশীল সৃষ্টিকর্তা মানার শামিল।

২. গ্রহ-নক্ষত্রাদির কক্ষপথ পরিভ্রমণ, সম্মিলন বা বিক্ষিপ্ত অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে কোন অঘটন প্রমাণ করা। এটিও একটি হারাম কাজ। কারণ, তা ইল্মুল্ গায়েবের দাবি বৈ কি? তেমনিভাবে তা যাদুরও অন্তর্গত।

আবু মিহজান্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ مِنْ بَعْدِيْ ثَلاَثًا: حَيْفَ الْأَئِمَّةِ وَإِيْمَانًا بِالنُّجُوْمِ وَتَكْذِيْبًا بِالْقَدْرِ

‘‘আমি আমার মৃত্যৃর পর আমার উম্মতের উপর তিনটি বস্ত্তর আশঙ্কা করছি। নেতৃস্থানীয়দের যুলুম-অত্যাচার, রাশি-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (ইবনু ’আব্দিল্ বার্ /জা-মি’উ বায়ানিল্ ’ইল্মি ওয়া ফায্লিহি : ২/৩৯)

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ بَعْدِيْ خَصْلَتَيْنِ: تَكْذِيْبًا بِالْقَدْرِ وَإِيْمَانًا بِالنُّجُوْمِ

‘‘আমি আমার মৃত্যুর পর আমার উম্মতের উপর দু’টি চরিত্রের আশঙ্কা করছি। রাশি-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (আবু ইয়া’লা, হাদীস ১০২৩ ইবনু ’আদি’/কা-মিল: ৪/৩৪)

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُوْمِ ؛ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ ؛ زَادَ مَا زَادَ

‘‘যে ব্যক্তি রাশি-নক্ষত্রের জ্ঞান শিখলো সে যেন যাদুর কোন একটি বিভাগ শিখে নিলো। সুতরাং যত বেশি সে রাশি-নক্ষত্রের জ্ঞান শিখলো তত বেশি সে যাদু শিখলো’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৭৯৪ আহমাদ : ১/৩১১)

আল্লাহ্ তা’আলা এ গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে তিনটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। যা নিম্নরূপ:

১. আকাশের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য।

২. তা নিক্ষেপ করে শয়তানকে তাড়ানোর জন্য। যাতে তারা যে কোন বিষয়ে আল্লাহ্ তা’আলার সিদ্ধান্ত মূলক বাণী চুরি করে শুনতে না পায়।

৩. দিক নির্ণয় তথা পথ নির্ধারণের জন্য।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا للشَّيَاطِيْنَ »

‘‘আমি দুনিয়ার আকাশকে সুশোভিত করেছি গ্রহ-নক্ষত্র দিয়ে এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ’’। (মুলক : ৫)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوْا بِهَا فِيْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ »

‘‘আর তিনিই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন নক্ষত্ররাজিকে যেন তোমরা এগুলোর মাধ্যমে জল ও স্থলের অন্ধকারে সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো’’। (আন’আম : ৯৭)

তিনি আরো বলেন:

«وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ »

‘‘আর ওরা নক্ষত্রের সাহায্যে পথের সন্ধান পায়’’। (না’হল : ১৬)

তেমনিভাবে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্র সম্পর্কীয় জ্ঞানের সহযোগিতায় কিবলার দিক নির্ণয়, নামাযের সময় সূচী নির্ধারণ ও ষড় ঋতুর জ্ঞানার্জনে কোন অসুবিধে নেই। তবে তাই বলে এ গুলোর সহযোগিতায় ইল্মুল্ গায়েবের অনুসন্ধান বা দাবি করা কখনোই জায়িয হবে না।