বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা ইহুদীদের চরিত্র। মুসলমানদের চরিত্র নয়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«تَرَى كَثِيْرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا، لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَـهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ سَخِطَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَفِيْ الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُوْنَ»

‘‘আপনি ইহুদীদের অনেককে দেখবেন যে, তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করছে। তাদের এ বন্ধুত্ব কতই না নিকৃষ্ট। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ফলে, তারা চিরকাল আযাবে থাকবে’’। (মা’য়িদাহ্ : ৮০)

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব দুনিয়ার সকল অঘটনের মূল। তাতে মুসলমানদের বিন্দু মাত্রও কোন ফায়দা নেই।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ، إِلاَّ تَفْعَلُوْهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِيْ الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيْرٌ»

‘‘যারা কাফির তারা একে অপরের বন্ধু। তোমরা যদি উপরোক্ত বিধান কার্যকর না করো তথা মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব না করে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করো তাহলে দুনিয়াতে শুরু হবে কঠিন ফিৎনা ও মহাবিপর্যয়’’। (আনফাল : ৭৩)

কাফিরদের সাথে যতই বন্ধুত্ব করা হোকনা কেন তারা তাতে কখনোই সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না মুসলমানরা তাদের ন্যায় কাফির হয়ে যায়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلاَ النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ»

‘‘ইহুদী ও খ্রিস্টানরা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্ম অনুসরণ করেন’’। (বাক্বারাহ্ : ১২০)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَدُّوْا لَوْ تَكْفُرُوْنَ كَمَا كَفَرُوْا فَتَكُوْنُوْنَ سَوَآءً فَلاَ تَتَّخِذُوْا مِنْهُمْ أَوْلِيَآءَ»

‘‘তাদের মনে চায়, তোমরাও যেন তাদের মতো কাফির হয়ে যাও। তা হলে তোমরা সবাই একই রকম হয়ে যাবে। অতএব তোমরা তাদেরকে কখনো বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না’’। (নিসা’ : ৮৯)

তিনি আরো বলেন:

«وَلاَ يَزَالُوْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوْكُمْ عَنْ دِيْنِكُمْ إِنْ اسْتَطَاعُوْا»

‘‘কাফিররা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতেই থাকবে যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম থেকে ফেরাতে পারে যদি তাদের পক্ষে তা করা সম্ভবপর হয়’’। (বাক্বারাহ্ : ২১৭)

কাফিরদের প্রতি যে কোন ধরনের দুর্বলতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلاَ تَرْكَنُوْا إِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ، وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ أَوْلِيَآءَ ثُمَّ لاَ تُنْصَرُوْنَ»

‘‘তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না। অন্যথায় তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া তোমাদের কেউ সহায় হবে না। অতএব তোমাদেরকে তখন কোন সাহায্যই করা হবে না’’। (হূদ : ১১৩)

কাফিরদের প্রতি ঝুঁকে পড়া অনেক ধরনেরই হয়ে থাকে যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

১. তাদের সাথে সাধারণ বন্ধুত্ব করা।

২. তাদের সাথে বিশেষ বন্ধুত্ব করা।

৩. তাদের প্রতি সামান্যটুকুও দুর্বলতা দেখানো।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلَوْ لاَ أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيْلًا، إِذًا لَّأَذَقْنَاكُمْ ضِعْفَ الْـحَيَاةِ وَضِعْفَ الْـمَمَاتِ، ثُمَّ لاَ تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيْرًا»

’’আমি আপনাকে অবিচল না রাখলে আপনি তাদের প্রতি প্রায় কিছুটা ঝুঁকেই পড়ছিলেন। আপনি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকে পড়লে আমি অবশ্যই আপনাকে ইহকাল ও পরকালে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম। তখন আপনি আমার বিপক্ষে কোন সাহায্যকারী পেতেন না’’।

(ইসরা’/বানী ইস্রা’ঈল : ৭৪-৭৫)া

৪. তাদের প্রতি যে কোন ধরনের নমনীয়তা দেখানো।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَدُّوْا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ»

‘‘তারাতো চায়, আপনি তাদের প্রতি একটু নমনীয় হোন তাহলে তারাও আপনার প্রতি নমনীয় হবে’’। (ক্বলম : ৯)

৫. যে কোন ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা।

«وَلاَ تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا، وَاتَّبَعَ هَوَاهُ، وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا»

‘‘যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনযোগী করে দিয়েছি এবং যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও কার্যকলাপে সীমাতিক্রম করে আপনি কখনো তার আনুগত্য করবেন না’’। (কাহফ : ২৮)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تُطِيْعُوْا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফিরদের আনুগত্য করো তাহলে তারা তোমাদেরকে মুরতাদ বানিয়ে ছাড়বে। অতঃপর তোমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’’। (আলে-ইমরান : ১৪৯)

৬. তাদেরকে কাছে বসানো।

৭. কোন কাজে তাদের পরামর্শ নেয়া।

৮. তাদেরকে মুসলমানদের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে খাটানো।

৯. তাদেরকে মুসলমানদের ভেদজ্ঞাতা তথা প্রাইভেট সেক্রেটারী বানানো।

১০. তাদের সাথে উঠা-বসা, বন্ধুসুলভ সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি।

১১. তাদেরকে দেখে খুশি প্রকাশ করা বা তাদের সাথে হাস্যোজ্জল মুখে সাক্ষাৎ করা।

১২. তাদেরকে যে কোন ধরনের সম্মান করা।

১৩. তাদেরকে আমানতদার মনে করা।

১৪. তাদেরকে যে কোন কাজে সহযোগিতা করা।

১৫. তাদেরকে যে কোন দুনিয়াবি কাজে নসীহত করা।

১৬. তাদের মতামত অনুসরণ করা।

১৭. তাদের সাথে চলাফেরা করা।

১৮. তাদের যে কোন কাজে সন্তুষ্ট থাকা।

১৯. তাদের সাথে যে কোন ধরনের সাদৃশ্য বজায় রাখা।

২০. তাদেরকে যে কোন সম্মানসূচক শব্দে সম্বোধন করা।

২১. তাদের সাথে বা তাদের এলাকায় বসবাস করা।

সামুরাহ্ বিন্ জুন্দুব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ جَامَعَ الْـمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهُ فَإِنَّهُ مِثْلُهُ

‘‘যে ব্যক্তি কোন মুশ্রিকের সাথে উঠেবসে এবং তার সাথে বসবাস করে সে তার মতোই মুশ্রিক বলে গণ্য’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৭)

জারীর বিন্ ’আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَنَا بَرِيْءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيْمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْـمُشْرِكِيْنَ

‘‘যে সকল মুসলমান মুশ্রিকদের মাঝে বসবাস করে আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৬৪৫)

২২. তাদেরকে সালাম দেয়া। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَبْدَؤُوْا الْيَهُوْدَ وَلاَ النَّصَارَى بِالسَّلاَمِ، فَإِذَا لَقِيْتُمْ أَحَدَهُمْ فِيْ طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوْهُ إِلَى أَضْيَقِهِ

‘‘তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে সালাম দিবে না। বরং তোমারা তাদের কাউকে বড় রাস্তায় পেলে তাকে সংকীর্ণ পথে চলতে বাধ্য করবে’’। (মুসলিম, হাদীস ২১৬৭)

আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত ব্যাপারে ইব্রাহীম (আ.) এর আদর্শ অনুসরণ করার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে আহবান করেছেন:

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِيْ إِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهُ إِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآؤُا مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهُ»

‘‘তোমাদের জন্য ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ; তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা এবং আল্লাহ্’র পরিবর্তে তোমরা যে মূর্তিসমূহের ইবাদাত করছো তা হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত পবিত্র। তোমাদেরকে আমরা অস্বীকার করছি এবং আজ হতে চিরকালের জন্য আমাদের ও তোমাদের মাঝে বলবৎ থাকবে শত্রুতা ও বিদ্বেষ যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহ্’র প্রতি ঈমান আনো’’। (মুমতাহিনাহ্ : ৪)

রাসূল (সা.) কে ভালোবাসাও দু’ ধরনের:

১. যা ফরয বা বাধ্যতামূলক। আর তা হচ্ছেঃ তাঁর আনীত সকল বিধি-বিধানকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া। আল্লাহ্ তা’আলাকে পাওয়ার জন্যে একমাত্র তাঁরই পথকে অনুসরণ করা। তাঁর সকল বাণীকে সত্য মনে করা, তাঁর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তাঁর আনীত দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো। তাঁর আদর্শ বিরোধীদের সাথে প্রয়োজন ও সাধ্যানুযায়ী যুদ্ধ করা।

২. যা প্রশংসনীয় ও রাসূলপ্রেমীদের কাজ। আর তা হচ্ছেঃ চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, নফল-মুস্তাহাব ইত্যাদি তথা তাঁর সকল শিষ্টাচার ও উন্নত চরিত্রের ব্যাপারে তাঁর সার্বিক অনুসরণ করা। তাঁর জীবনী নিয়ে গবেষণা করা। তাঁর নাম শুনলে হৃদয় ভক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া। তাঁর উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। তাঁর বাণী শুনতে ভালো লাগা। তাঁর বাণীকে অন্য সকলের বাণীর উপর প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়ার ব্যাপারে স্বল্পতে তুষ্টি এবং আখিরাতের প্রতি অধিক অনুরাগী হওয়া।

পক্ষান্তরে যারা রাসূল (সা.) এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বশতঃ মিলাদুন্নাবী পালনের মতো বিদ্’আত এবং কঠিন মুহূর্তে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য রাসূলকে আহবানের মতো শির্ক করে তারা মুখে রাসূলপ্রেমের ঠুন্কো দাবিদার হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা চরম মিথ্যাবাদী।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَيَقُوْلُوْنَ آمَنَّا بِاللهِ وَبِالرَّسُوْلِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ مِّنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُوْلاَئِكَ بِالْـمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘তাদের উক্তি: আমরা আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং তাদের আনুগত্য স্বীকার করেছি। অথচ তাদের একদল কিছুক্ষণ পর এ প্রতিজ্ঞা থেকে সরে দাঁড়ায়। বস্ত্ততঃ এরা মু’মিন নয়। কারণ, রাসূল (সা.) এ কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন অথচ তারা তাই করছে’’। (নূর : ৪৭)

ঈমানের সত্যিকার মজা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা.) কে ভালোবাসার মধ্যেই নিহিত।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيْمَانِ: أَنْ يَّكُوْنَ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُّحِبَّ الْـمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ للهِ، وَأَنْ يَّكْرَهَ أَنْ يَّعُوْدَ فِيْ الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُّقْذَفَ فِيْ النَّارِ

‘‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে থাকবে সে সত্যিকারার্থে ঈমানের মজা পাবে। যার নিকট আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা.) সর্বাধিক প্রিয় হবে। যে ব্যক্তি কাউকে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই ভালোবাসবে। যে ব্যক্তি মুরতাদ্ হওয়া অপছন্দ করবে যেমনিভাবে অপছন্দ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া’’।

(বুখারী, হাদীস ১৬, ২১, ৬৯৪১ মুসলিম, হাদীস ৪৩ তিরমিযী, হাদীস ২৬২৪)