বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী
৫. রুকু, সিজ্দাহ্, বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাযের শির্ক:

রুকু, সিজ্দাহ্, সাওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাযের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য এ সকল গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝানো হয়।

এ ইবাদাতগুলো একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই করতে হয়। অন্য কারোর জন্য নয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوْا الْـخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমারা রুকূ, সিজ্দাহ্, তোমাদের প্রভুর ইবাদাত এবং সৎকর্ম সম্পাদন করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’। (হাজ্জ: ৭৭)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ، إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ»

‘‘তোমরা সিজদাহ্ করোনা সূর্য বা চন্দ্রকে। বরং সিজদাহ্ করো সে আল্লাহ্ তা’আলাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন ওগুলোকে। যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করতে চাও’’। (ফুসসিলাত/হা-মীম আস্ সাজদাহ্ : ৩৭)

কাইস্ বিন্ সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ইয়েমেনের ‘‘হীরা’’ নামক এলাকায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সে এলাকার লোকেরা নিজ প্রশাসককে সিজ্দা করে। তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, এ জাতীয় সিজ্দাহ্’র উপযুক্ত একমাত্র রাসূলই (সা.) হতে পারে। অন্য কেউ নয়। তাই আমি মদীনায় এসে রাসূল (সা.) কে ঘটনাটি এবং আমার মনের ভাবটুকু জানালে তিনি বললেন:

لاَ تَفْعَلُوْا، لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَّسْجُدَ لِأَحَدٍ لأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَّسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ ؛ لِـمَا جَعَلَ اللهُ لَـهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْـحَقِّ

‘‘বলো! তুমি আমার ইন্তিকালের পর আমার কবরের পাশ দিয়ে গেলে আমার কবরটিকে সিজ্দাহ্ করবে কি? আমি বললাম: না, তিনি বললেন: তাহলে এখনও করোনা। আমি যদি কাউকে কারোর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম তাহলে মহিলাদেরকে নিজ স্বামীদের জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা পুরুষদেরকে নিজ স্ত্রীদের উপর প্রচুর অধিকার দিয়েছেন’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২১৪০)

আল্লাহ্ তা’আলা নামায ও সুদীর্ঘ বিনম্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পর্কে বলেন:

«حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ»

‘‘তোমরা নামাযসমূহ বিশেষভাবে মধ্যবর্তী নামায (’আসর) সময় মতো আদায় করো এবং বিনীতভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উদ্দেশ্যেই দাঁড়াও। অন্য কারোর উদ্দেশ্যে নয়’’। (বাক্বারাহ্ : ২৩৮)

মু’আবিয়াহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি:

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

‘‘যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকুক তাহলে সে যেন নিজ বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’’।

(তিরমিযী, হাদীস ২৭৫৫)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ»

‘‘আপনি বলে দিন: আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণকালের সকল নেক আমল সারা জাহানের প্রভু একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এরই জন্যে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই আমার উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলমান’’। (আন্’আম : ১৬২-১৬৩)

তিনি আরো বলেন:

«فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ»

‘‘অতএব তোমার প্রভুর জন্য নামায পড়ো এবং কুরবানী করো’’। (কাউসার : ২)