ষষ্ঠ ও অষ্টম উদাহরণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦ ﴾ [ق: ١٦]

আর আমি[1] তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে। (সূরা কাফ: ৫০: ১৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

﴿ وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنكُمۡ﴾ [الواقعة: ٨٥]

আর তোমাদের চাইতে আমি তার অধিক কাছে। (সূরা আল ওয়াকিয়াহ: ৫৬: ৮৫)


তাফসীর গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত দু‘ আয়াতে ‘অধিক কাছে’ বলতে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে।

জওয়াব

উল্লিখিত দু’ আয়াতে অধিক কাছে বলতে ফেরেশতারা অধিক কাছে বলে যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাতে বাণীকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। গভীরভাবে চিন্তা করলে এ বিষয়টি আমাদের বুঝে আসে।

প্রথম আয়াত

এখানে ‘কাছে থাকা’র বিষয়টি এমন কিছুর সঙ্গে বন্ধনযুক্ত করে উল্লেখ করা হয়েছে যার দ্বারা ফেরেশতাদের নিকটতাকেই বুঝা যায়। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَنَحۡنُ أَقۡرَبُ إِلَيۡهِ مِنۡ حَبۡلِ ٱلۡوَرِيدِ ١٦ إِذۡ يَتَلَقَّى ٱلۡمُتَلَقِّيَانِ عَنِ ٱلۡيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ قَعِيدٞ ١٧ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨ ﴾ [ق: ١٦، ١٨]

আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তাও আমি জানি। আর আমি[2] তার গলার ধমনী হতেও অধিক কাছে। যখন ডানে ও বামে বসা দু’জন লিপিবদ্ধকারী লিখতে থাকবে তার প্রত্যেক কর্ম ও কাজ সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে। (সূরা কাফ: ৫০: ১৬ - ১৭)

এখানে إِذْ يَتَلَقَّى (যখন... গ্রহণ করবে) দ্বারা এটা বুঝা যাচ্ছে যে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো লিপিবদ্ধকারী দুই ফেরেশতার নিকটতা।

দ্বিতীয় আয়াত

দ্বিতীয় আয়াতে যে ‘নিকটতা’র কথা বলা হয়েছে, তা বান্দার মৃত্যুকালীন অবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর মৃত্যুকালে বান্দার কাছে যারা উপস্থিত হন তারা হলেন ফেরেশতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ تَوَفَّتۡهُ رُسُلُنَا وَهُمۡ لَا يُفَرِّطُونَ ٦١ ﴾ [الانعام: ٦١]

অবশেষে যখন তোমাদের কারো কাছে মৃত্যু আসে, আমার প্রেরিত দূতগণ তার মৃত্যু ঘটায়। আর তারা কোনো ত্রুটি করে না। (সূরা আল আন‘আম: ৬: ৬১)

মানুষের মৃত্যুকালে ফেরেশতাই যে বান্দার নিকটে আসেন, এর আরেকটি প্রমাণ হলো আল্লাহ তা‘আলার কথা:

﴿وَلَٰكِن لَّا تُبۡصِرُونَ ٨٥ ﴾ [الواقعة: ٨٥]

কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। (আল ওয়াকিয়া: ৫৬: ৮৫)

কেননা এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে যিনি নিকটবর্তী হন তিনি ঠিক ওই জায়গাতেই নিকটবর্তী হন যে জায়গাতে মৃত্যুগামী ব্যক্তি রয়েছে। অথচ আমরা তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না। এ বিষয়টি ফেরেশতা কর্তৃক নিকটতাকে নির্ধারণ করে দিচ্ছে; কেননা আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রে এ প্রকৃতির নিকটতা অসম্ভব।

একটি প্রশ্ন

এখানে একটি প্রশ্ন এভাবে উত্থাপিত হতে পারে যে, যদি ফেরেশতাই নিকটবর্তী হবেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা কেন বললেন যে, ‘আমি তার নিকটে’? অর্থাৎ ‘নিকটতা’-কে আল্লাহ তা‘আলা নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে কেন উল্লেখ করলেন? এ প্রকৃতির অভিব্যক্তির উদাহরণ কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?

উত্তর

আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতার নিকটতাকে তাঁর নিজের নিকটতা বলে উল্লেখ করেছেন; কারণ ফেরেশতার নিকটতা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই ঘটে থাকে। ফেরেশতারা হলেন সৈন্য ও দূত।

ফেরেশতার নিকটতাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজের নিকটতা বলে ব্যক্ত করার উদাহরণ আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসেছে, যেমন:

﴿ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ﴾ [القيامة: ١٨]

অতঃপর যখন আমরা তা পাঠ করি (জিবরাঈলের মাধ্যমে) তখন তুমি তার পাঠের অনুসরণ কর। (সূরা আল কিয়ামাহ: ৭৫: ১৮)

উক্ত আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কুরআন পাঠ মূলত ফেরেশতা জিব্রীল আ. এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ পাঠকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বলেছেন, ‘যখন আমি তা পাঠ করি’। এটা এ হিসেবে যে, জিব্রীল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহর নির্দেশেই কুরআন পাঠ করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

﴿ فَلَمَّا ذَهَبَ عَنۡ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلرَّوۡعُ وَجَآءَتۡهُ ٱلۡبُشۡرَىٰ يُجَٰدِلُنَا فِي قَوۡمِ لُوطٍ ٧٤ ﴾ [هود: ٧٤]

অতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমাদের সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। (সূরা হুদ: ১১: ৭৪)এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আ. লূত আ. কওম সম্পর্কে আল্লাহর সঙ্গে বাদানুবাদ করতে লাগলেন। অথচ আমরা জানি যে তিনি ফেরেশতাদের সঙ্গে বাদানুবাদ করতে লাগলেন। কিন্তু যেহেতু ফেরেশতারা আল্লাহর দূত হিসেবে এসেছিলেন সে হিসেবে তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ করা এক অর্থে আল্লাহর সঙ্গেই বাদানুবাদ করা।

>
[1] ইবনে কাসীর বলেন, এখানে نحن বলে আল্লাহর ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে।

[2] ইবনে কাসীর বলেন, এখানে نحن বলে আল্লাহর ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে।