প্রশ্নঃ জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান কী?

উত্তরঃ প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন নিম্নে বর্ণিত ঘটনার প্রতি, ঘটনাটি বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ রহ. তার কিতাবুস সালাতে। যার মূল বর্ণনা রয়েছে সহীহ মুসলিমে। ইমাম আহমাদ বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে; সে বলল হে আল্লাহর রাসূল, আমি একজন দৃষ্টি শক্তিহীন, দুর্বল শরীর এবং বৃদ্ধ মানুষ, বাড়ীও দূরে, মসজিদ ও আমার মাঝে খেজুর গাছ এবং খালও রয়েছে। অতএব, আমি বাড়ীতেই সালাত আদায় করব এই অনুমতি কি রয়েছে?” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: “তুমি কি আযান শুন?” সে বলল জি হ্যাঁ, তিনি বললেন: “তবে মসজিদে আসতে হবে।”

ইমাম আহমদ উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা শেষে বলেন, “যদি কারো জন্য সালাতের জামা‘আত থেকে বিরত থাকার সুযোগ থাকতো তবে অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বৃদ্ধ, দুর্বল শরীর, দৃষ্টি শক্তিহীন, বাড়ী দূরে অবস্থিত এবং তার ও মসজিদের মাঝে অনেক খেজুর গাছ ও খাল বিদ্যমান ব্যক্তিটিকে অনুমতি দিতেন। (ইমাম আহমদের উক্তি এ পর্যন্ত)

অতএব, এই স্পষ্ট সহীহ হাদীস জানার পর কি আর কারো জন্য সালাতের জামা‘আত থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ রয়েছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এ ব্যক্তির ওযর গ্রহণও করতেন তবুও কোনো সুস্থ-সবল ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য জামা‘আত থেকে বিরত থাকার ওযর গ্রহণযোগ্য হতো না। দেখুন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে তার ওযর প্রত্যাখ্যান করে তাকে মসজিদের জামাতে শরীক হওয়ার নির্দেশ দিলেন, আর তাঁর নির্দেশ দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।

দ্বিতীয় দলীল: মসজিদে জামা‘আতবদ্ধভাবে সালাত আদায় ওয়াজিব হওয়ার দ্বিতীয় দলীল হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনল অতঃপর শর‘ঈ ওযর ব্যতীত মসজিদে উপস্থিত হলো না তার সালাত হবে না।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ)

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, শর‘ঈ ওযর কী? তিনি বলেন, ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা।

তৃতীয় দলীল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: শপথ ঐ সত্তার যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, আমি ইচ্ছা পোষণ করছি যে, কাঠ (জ্বালানী) একত্রিত করার আদেশ দিব এবং এক ব্যক্তিকে আদেশ দিব সে যেন সালাতের ইমামতী করে অতঃপর (যে মসজিদে আসে নি) আমি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের নিকট গিয়ে তাদের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেই।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

ইমাম আহমদ “কিতাবুস সালাত”-এ বলেন, তাদের সালাত থেকে বিরত থাকা যদি বড় গুনাহ্ না হতো, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুশিয়ারী দিতেন না।

চতুর্থ দলীল: ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুসলিম অবস্থায় সাক্ষাৎ করে আনন্দ উপভোগ করবে, সে যেন সালাতসমূহের হিফাযত করে যেখানেই সালাতের আযান দেওয়া হোক না কেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের বিধিসম্মত পথ নির্ণয় করেছেন। আর সালাতসমূহ ঐ বিধিসম্মত পথেরই অন্তর্ভুক্ত, তোমরা যদি নিজেদের ঘরে-ঘরে সালাত পড়া শুরু কর যেমন, (জামা‘আত থেকে) বিরত এ ব্যক্তিটি নিজের ঘরে সালাত আদায় করে থাকে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাতকে পরিত্যাগ করলে, আর যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর তবে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। আর আমরা তো আমাদের যুগে দেখতাম, সালাতের জামা‘আত থেকে মুনাফিক ব্যক্তিই বিরত থাকত, যাদের মুনাফেকী স্পষ্ট। (আমাদের মাঝে এমন) এক ব্যক্তিও ছিল যাকে দু’জনের উপর ভর করে নিয়ে এসে (সালাতের) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হত। (সহীহ মুসলিম)

ইবন মাসউদের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে- তিনি বলেন, “নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের তরীকা শিখিয়ে দিয়েছেন এবং হিদায়াতের তরীকাসমূহের অন্যতম হলো যে মসজিদে আযান দেওয়া হয় সেখানেই সালাত আদায় করা।”

হিবরুল উম্মাহ (উম্মাতের পণ্ডিত ব্যক্তি) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই বাণীর প্রতি লক্ষ্য করুন, যার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয় ফুটে উঠে:

১। (ফরয) সালাত বাড়ীতে আদায় করা হলো সুন্নাত তথা রাসূলের আদর্শ পরিহার করা। আর রাসূলের আদর্শ পরিহার করা হলো পথভ্রষ্টতা।

২। সাহাবায়ে কিরাম সালাতের জামা‘আত থেকে বিরত ব্যক্তিদেরকে সু-স্পষ্ট মুনাফিক গণনা করতেন; যার মুনাফেকীতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

৩। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সালাতের জামা‘আতের প্রতি গুরুত্ব, এমন কি (তাদের মধ্যে) অসুস্থ ব্যক্তি যিনি চলতে পারেন না, তাকেও দু’জনের উপর ভর দিয়ে নিয়ে আসা হতো।

প্রিয় দীনী ভাই! সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত এই সমস্ত স্পষ্ট প্রমাণ-পঞ্জি এবং এছাড়াও অসংখ্য দলীল প্রমাণের পর সালাত জামা‘আতের সাথে আদায়ে বিরত ব্যক্তিদের জন্য অলসতা, প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং শয়তানের প্রতিবন্ধকতা ব্যতীত আর কোনো ওযর-আপত্তি অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন।

এ বিষয়টিকে হিবরুল উম্মাহ, কুরআনের ভাষ্যকর আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফাতওয়ার মাধ্যমে শেষ করতে চাই যা তিরমিযীতে প্রখ্যাত তাবে‘ঈ মুজাহিদ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইবন আব্বাসকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে দিনে সাওম রাখে এবং রাত্রিতে ইবাদতে মগ্ন থাকে কিন্তু জুমু‘আ ও জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হয় না, তিনি বলেন, সে জাহান্নামী।”

অতএব, জাহান্নামী হওয়ার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কী হবে, যে ব্যক্তি রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহ কর্তৃক হারাম জিনিসে মত্ত থাকে? যেমন টিভি, সিরিজ (ভি ডি ও, ডিশ) ইত্যাদি এবং দিনে ফজর ও অন্যান্য সালাত আদায় না করে ঘুমায়?

দীনি ভাই! এই ব্যাপারটি অত্যন্ত ভয়াবহ, সালাতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। কেননা সালাতই হচ্ছে জান্নাত নতুবা জাহান্নাম। আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।”