নফল সদকার প্রতি উৎসাহ প্রদান

আল্লাহ তা‘আলা নফল সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বলেন:

﴿مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١﴾ [البقرة: 261]

“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ‘ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬১]

অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨﴾ [الدهر: 8]

“তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে”। [সূরা আদ-দাহর, আয়াত: ৮]

হাদীস থেকে সদকার প্রতি উৎসাহ প্রদান:

প্রথম হাদীস:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْل - (يعني بمقدار أو بقيمة) - تَمْرَةٍ مِن كَسْبٍ طَيِّب وَلا يقبلُ اللهُ إلا الطَيِّب فإنَّ الله يتقبلها بيمينِه، ثم يُرْبيها لصاحبها (يعني يَزيدُها) كما يُرَبِّي أحَدُكُم فلُوَّه، حتى تكونَ مِثلُ الجبل».

“যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে খেজুর পরিমাণ (অর্থাৎ খেজুর বা তার মূল্য) সদকা করল, (আল্লাহ হালাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না) তিনি অবশ্যই সেটি ডান হাত দিয়ে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি সেটি তার মালিকের জন্য প্রতিপালন করেন। (অর্থাৎ বাড়াতে থাকেন) যেমন, তোমাদের কেউ উটের বাচ্চাকে প্রতিপালন করে, অবশেষে তা উহুদ পরিমাণ হয়”।[1] আরবীতে فلُوَّ বলা হয় উটের সে বাচ্চাকে, সবেমাত্র যার থেকে মায়ের দুধ ছাড়ানো হয়েছে।

দ্বিতীয় হাদীস:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«يقول العبد: مالِي مالِي، إنما له مِن مالِهِ ثلاث: ما أكَلَ فأفنَى، أو لَبِسَ فأبْلَى، أو أعطَى فاقتنَى - (يعني تصدَّق فادَّخَرَ لنفسه حسناتٍ يوم القيامة) ، وما سِوَى ذلك فهو ذاهِبٌ وتاركُهُ للناس».

“বান্দা বলে: আমার সম্পদ, আমার সম্পদ, অথচ সে মাত্র তিনটি বস্তুর মালিক: যা খেয়ে হজম করেছে অথবা যা পরিধান করে পুরান করেছে অথবা যা সদকা করে সঞ্চয় করেছে। (অর্থাৎ সদকা করে কিয়ামতের দিনের জন্য নিজের নেকি উপার্জন করেছে)। এ ছাড়া বাকিসব ধ্বংস হবে ও তা মানুষের জন্য রেখে যাবে”।[2]

তৃতীয় হাদীস:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ما منكم مِن أحدٍ إلا سَيُكَلِّمُهُ الله، ليس بينه وبينه تُرْجُمَان، فينظرُ أيْمَنَ منه، فلا يرى إلا ما قَدَّمَ، فينظرُ أشأمَ منه فلا يرى إلا ما قَدَّمَ، وينظرُ بين يديه فلا يرى إلا النارَ تِلقاءَ وَجهِه، فاتقوا النارَ وَلَو بِشِقّ تَمرة "، وفي رواية: مَن استطاعَ منكم أنْ يَسْتَتِرَ مِن النار وَلَو بِشِقّ تَمرة فْليَفعَلْ».

“তোমাদের এমন কেউ নেই, আল্লাহ যার সাথে দোভাষী ছাড়া কথা বলবেন না, সে তার ডানে তাকাবে অগ্রে যা পাঠিয়েছে তা ব্যতীত কিছুই দেখবে না, অতঃপর তার বাঁয়ে দেখবে, অগ্রে যা পাঠিয়েছে তা ব্যতীত কিছুই দেখবে না, সামনে তাকাবে চেহারার সমীপে আগুন ব্যতীত কিছুই দেখবে না। অতএব, তোমরা আগুন থেকে বাচ, যদিও এক টুকরো খেজুর দিয়ে হয়”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “তোমাদের কেউ যদি একটি খেজুর দিয়ে আগুন থেকে আড়াল হতে পারে, সে যেন তাই করে”।[3]

চতুর্থ হাদীস:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كُلُّ امْرِئٍ في ظِلَّ صَدَقَتِه حتى يُقضَى بين الناس» وقال أيضاً: «إنَّ الصدقة لَتُطْفِئُ عن أهلها حَرّ القبور، وإنما يَسْتَظل المؤمن يوم القيامة في ظِلِّ صَدَقَتِه».

“প্রত্যেক মানুষ তার সদকার ছায়ার নিচে অবস্থান করবে, যতক্ষণ না মানুষের মাঝে ফয়সালা করা হবে”।[4]

তিনি আরও বলেন: “নিশ্চয় সদকা কবরের গরম থেকে ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়। কিয়ামতের দিন মুমিন তার সদকার ছায়ার নিচে আশ্রয় নিবে”।[5]

পঞ্চম হাদীস:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«والصدقة تُطفِئُ الخَطيئة كما يُطفِئُ الماءُ النار».

“সদকা পাপ মুছে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়”।[6]

>
[1] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৫৯।

[3] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[4] সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৪৫১০।

[5] সিলসিলাহ সহীহাহ: খণ্ড ৭।

[6] সহিহুল জামি: হাদীস নং ৫১৩৬।