কিয়ামতের আলামত আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী ৫৫ টি
কিয়ামতের আলামত আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী ৫৫ টি
৭) হেজায অঞ্চল থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবে

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে হেজাযের (আরব উপদ্বীপের) যমিন থেকে বড় একটি আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الْإِبِلِ بِبُصْرَى

‘‘হেজাযের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে’’।[1]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ ৬৫৪ হিজরীতে আমাদের যামানায় উল্লেখিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এটি ছিল বিরাট একটি আগুন। পবিত্র মদ্বীনার পূর্ব দিক থেকে তা প্রকাশিত হয়েছিল। একমাস পর্যন্ত আগুনটি স্থায়ী ছিল।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।

আমানত শব্দটি খেয়ানত শব্দের বিপরীত। আমানতের হেফাযত করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকের লক্ষণ। আখেরী যামানায় আমানতের খেয়ানত ব্যাপাকভাবে দেখা দিবে। অযোগ্য লোককে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়াও আমানতের খেয়ানতের অন্তর্ভূক্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক এসে নবীজীকে এই বলে প্রশ্ন করলো যে, কিয়ামত কখন হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছু লোক মন্তব্য করলোঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটির এই প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন। আবার কিছু লোক বললোঃ তিনি তাঁর কথা শুনতেই পান নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচনা শেষে বললেনঃ প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বললোঃ এই তো আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ

‘‘যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে। লোকটি আবার প্রশ্ন করলোঃ কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজী বললেনঃ যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকো’’।[1]

আখেরী যামানায় যখন আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে তখন বলা হবে অমুক গোত্রে একজন আমানতদার লোক আছে। লোকেরা একথা শুনে তার প্রশংসা করবে এবং বলবেঃ সে কতই না বুদ্ধিমান! সে কতই না মজবুত ঈমানের অধিকারী! অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।[2]

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
৯) দ্বীনী ইল্ম উঠে যাবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে

কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনী ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ

‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’।[1] এখানে ইল্ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্ম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’।[2]

ইমাম যাহাবী (রঃ) বলেনঃ বর্তমানে দ্বীনী ইল্ম কমে গেছে। অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝেই ইলম চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ইলমের আরো কমতি হবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে।

ইমাম যাহাবীর যামানায় যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানকালের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানে ইলমে দ্বীনের চর্চা কমে গেছে। কুরআন-সুন্নার আলেমের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যার ফলে শির্ক-বিদআতে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মোটকথা কিয়ামতের এই আলামতটি অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
১০) অন্যায়ভাবে যুলুম-নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একদল লোক আসবে, যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হবে এবং আল্লাহর ক্রোধ নিয়েই বিকাল বেলা ঘরে ফিরবে’’।[1]

বর্তমানে আমরা যদি ইসলামী অঞ্চলগুলোর দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখতে পাবো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীটি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায় যে, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অন্যায়ভাবে জনগণের উপর যুলুম-নির্যাতন করে থাকে। প্রায়ই সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমে জনগণের উপর পুলিশের বেধড়ক লাঠি চার্জের সংবাদ পাওয়া যায়।

[1] - মুসনাদে আহমাদ, ইমামম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সহীহুল জামে হাদীছন নং- ৩৫৬০।

আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা, যে ব্যভিচার হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا(

‘‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)

ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।

সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ

فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا

‘‘আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আগমণ করলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম, তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুন প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ববলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মাতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ’’।[1]

কিয়ামতের পূর্বে উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে এই পাপের কাজটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে এবং মুসলমানেরা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে’’।[2] তিনি আরো বলেনঃ আমার উম্মতের একটি দল যেনাকে হালাল মনে করবে’’।[3] আখেরী যামানায় ভাল লোকগণ চলে যাওয়ার পর শুধুমাত্র দুষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের সামনে গাধার ন্যায় ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। তাদের উপরে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।[4]

ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ হাদীছে নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ রয়েছে। কারণ তাঁর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমাদের যামানায় প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হচ্ছে।

কিয়ামতের এই আলামতটি বর্তমান মুসলিম সমাজেও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে, যা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখেনা। বড় পরিতাপের বিষয় এইযে, অনেক ইসলামী দেশে সরকারীভাবে ব্যভিচারের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। এ সমস্ত মুসলিম দেশের শাসকরা রোজ কিয়ামতে আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন!!

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তা’বীর
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবা।
[4] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।

মুসলমানদের উপর সুদ আদান-প্রদান করা এবং সুদের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً(

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করোনা। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩০) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোরকে অভিশাপ করেছেন’’।[1]

কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা’’।[2] তিনি আরো বলেনঃ

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَظْهَرَ الرِّبَا

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের আলামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে’’।[3]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অগণিত সংখ্যক মুসলমান আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন ইসলামী দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে সুদী ব্যাংক নেই বা সুদের ব্যবসা নেই।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।
[2] - তাবারানী, ইমাম মুনযেরী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, (৩/৯)।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ
১৩) গান বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাবে

আখেরী যামানার লোকেরা গান-বাজনা হালাল মনে করে ব্যাপকভাবে তাতে আসক্ত হয়ে পড়বে। বর্তমানে ব্যাপক আকারে এই আলামতটি দেখা দিয়েছে। মুসলমানদের ঘরে ঘরে টিভি, ডিস এন্টিনা, ইন্টারনেটসহ নানা ধরণের প্রযুক্তি ঢুকে পড়েছে। ২৪ঘন্টা এগুলোতে গান-বাজনা, উলঙ্গ, অর্ধালঙ্গ নারী পুরুষের ফাহেশা ছবি এবং ফিল্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এগুলো মুসলমানের সন্তানদের ঈমান আকীদা ও চরিত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। যারা একাজে মত্ত হবে তাদেরকে তিন ধরণের শাস্তি দেয়া হবে। নবী সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আখেরী যামানায় কোন কোন জাতিকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেয়া হবে, কোন জাতিকে উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হবে। আবার কারো চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিণত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো কখন এরূপ করা হবে? তিনি বললেনঃ ‘‘যখন গান-বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে’’।[1]

এই পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে অতীতের কোন কোন জাতিকে এভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমানেও আমরা প্রায়ই ভূমি ধসে ব্যাপক ধ্বংসের খবর প্রচার মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি। তবে চেহারা পরিবর্তনের ঘটনা সম্ভবত এখনও ঘটেনি। আমরা মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করি, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা কিয়ামতের আগে অবশ্যই ঘটবে। দ্বীন-ধর্ম ছেড়ে দিয়ে যে সমস্ত মুসলমান গান-বাজনা ও গায়ক-গায়িকা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তাদের উপরে চেহারা বিকৃত করার শাস্তি অবশ্যই আসবে।

[1] - ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর হাদীছ নং- ২১৬

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُشْرَبَ الخَمْرُ

‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতের মধ্য থেকে একটি আলামত হচ্ছে মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে’’।[1]

মুসলমানদের মাঝে মদ্যপান ও মদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। কেউ বা অন্য নাম দিয়ে কেউ বা হালাল মনে করে এতে লিপ্ত হচেছ। মুসলিম দেশগুলোতে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি হচ্ছে। মুসলমানদের চরিত্র ও আদর্শ ধ্বংস কারার জন্যে সরকারী লাইসেন্স নিয়ে এক শ্রেণীর মুসলমান মদের ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। মোটকথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী নিশ্চিতরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ

‘‘যত দিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে ততদিন কিয়ামত হবেনা’’।[1]

ইমাম বুখারী (রঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করে বলেনঃ ‘‘লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ করবেনা’’।[2] উমার (রাঃ) মসজিদকে জাঁকজমক করতে নিষেধ করেছেন।[3]

মোটকথা আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে মসজিদ আবাদ করতে হবে। তা বড় করে নির্মাণ করা ও চাকচিক্যময় করার মাধ্যমে নয়।

[1] - মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৯৮।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত।
[3] - ফাতহুল বারী, (১/৫৩৯)।
১৬) দালান-কোঠা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে

সহীহ মুসলিম শরীফে উমার (রাঃ) বর্ণিত হয়েছে, একবার জিবরীল ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধরে ধবধবে সাদা পোষাক পরিধান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে এসে ইসলাম, ঈমান এবং ইহসান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলেন। তারপর জিবরীল (আঃ) কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ প্রশ্নকৃত ব্যক্তি প্রশ্নকারী অপেক্ষা এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত নন। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আমি তোমার চেয়ে বেশী জানিনা। অতঃপর জিবরীল ফেরেশতা বললেনঃ তাহলে আমাকে কিয়ামতের কিছু আলামত সম্পর্কে বলে দিন। তিনি বললেনঃ ‘‘যখন তুমি দেখবে দাসী তার মনিবকে প্রসব করছে এবং এক সময়ের বস্ত্রহীন, অভাবী এবং উট-ছাগলের রাখালরা বড় বড় দালান-কোঠা তৈরী করছে তখন তুমি মনে করবে যে, কিয়ামত নিকটবর্তী’’।[1]

এই হাদীছে বর্ণিত কিয়ামতের আলামতটি অতি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এক সময় যে সমস্ত মানুষের কাছে কোন সম্পদ ছিলনা, পরণে ভাল পোষাক ছিলনা, অপরের রাখালী করে জীবন ধারণ করতো তাদের কাছে প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়ার কারণে তারা বহুতল ভবন নির্মাণে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে। এমনিভাবে কিয়ামতের পূর্বে মানুষের আসল অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে। যারা মর্যাদার হকদার নয় তাদেরকে সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করা হবে। আমানতদারকে বিশ্বাস করা হবেনা; বরং খেয়ানতকারীকে আমানতদার হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

[1] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »