জাহেলী যুগ থেকে চলে আসা যা কিছু এ উম্মতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়েছে ‘যিহার’ তার একটি। যেসব শব্দে যিহার হয় তার কতগুলো নিম্নরূপ:
স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পৃষ্ঠতুল্য’। ‘আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম’। ‘তোমার এক চতুর্থাংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মতো হারাম’ ইত্যাদি। যিহারের ফলে নারীরা ভীষণভাবে অত্যাচারিত হয়। যিহার একটি অমানবিক কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ يُظَٰهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَآئِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَٰتِهِمۡۖ إِنۡ أُمَّهَٰتُهُمۡ إِلَّا ٱلَّٰٓـِٔي وَلَدۡنَهُمۡۚ وَإِنَّهُمۡ لَيَقُولُونَ مُنكَرٗا مِّنَ ٱلۡقَوۡلِ وَزُورٗاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٞ ٢﴾ [المجادلة: ٢]
“তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়। তাদের মা তো তারাই যারা তাদের প্রসব করেছে। তারা তো কেবল অসঙ্গত ও মিথ্যা কথা বলে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ২]
ইসলাম রমযান মাসে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় সহবাসে সিয়াম ভঙ্গের কাফ্ফারা, ভুলক্রমে হত্যার কাফ্ফারা যেভাবে দিতে বলেছে, যিহারের জন্যও ঠিক একইভাবে কাফ্ফারা দিতে বলেছে। কাফ্ফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত যিহারকারী স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يُظَٰهِرُونَ مِن نِّسَآئِهِمۡ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُواْ فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مِّن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۚ ذَٰلِكُمۡ تُوعَظُونَ بِهِۦۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٣ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ شَهۡرَيۡنِ مُتَتَابِعَيۡنِ مِن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۖ فَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ فَإِطۡعَامُ سِتِّينَ مِسۡكِينٗاۚ ذَٰلِكَ لِتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۗ وَلِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٤﴾ [المجادلة: ٣، ٤]
“যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের জন্য পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেওয়া হল। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছু কর তৎসম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। অতঃপর যে সেটার সামর্থ্য রাখে না তাকে পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখতে হবে। যে তারও সামর্থ্য রাখে না তাকে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে। এ বিধান এজন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে তোমরা যেন ঈমান রাখ। এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ৩-৪]
মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস কুরআন-হাদীস উভয়ের আলোকেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسَۡٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“তারা আপনাকে মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
পবিত্রতা লাভের পর তারা গোসল না করা পর্যন্ত তাদের নিকটে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা একই সাথে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“যখন তারা ভালোমত পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের নিকটে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক গমন কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلَّا النِّكَاحَ»
‘সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর”।[1]
মাসিকের সময় সহবাস যে কঠিন পাপ তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বাণী থেকে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,
«مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
“যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোনো মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয় সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করে”।[2]অজ্ঞতাবশতঃ যদি কোনো ব্যক্তি মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তাকে এজন্য কোনো কাফ্ফারা দিতে হবে না। কিন্তু জেনেশুনে যারা এ কাজ করবে তাদেরকে নির্ধারিত এক দীনার বা অর্ধ দীনার কাফ্ফারা দিতে হবে। এ সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।[3] এখানে এক দীনার বা অর্ধ দীনার দু’টি সুযোগের যে কোনো একটি নেওয়া যাবে বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, যদি মাসিকের শুরুতে যখন প্রথম রক্ত বেশি আকারে বের হতে থাকে তখন কেউ সহবাস করে তবে এক দীনার আর যদি মাসিকের শেষে যখন রক্ত কম বের হয়, অথবা তার গোসলের আগে সহবাস করা হয় তবে অর্ধ দীনার সদকা করতে হবে। আর এক দীনার এর পরিমাণ হচ্ছে, ২৫,৪ গ্রাম স্বর্ণ। অথবা সমপরিমাণ মূল্যের কাগজের মুদ্রা।
>[2] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৫৫১।
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ১২৫; সুনান আবু দাউদ; সুনান নাসাঈ; মিশকাত, হাদীস নং ৫৫৩, সনদ সহীহ।
দুর্বল ঈমানের কিছু লোক তাদের স্ত্রীদের সাথে পশ্চাৎদ্বার (পায়খানার রাস্তা) দিয়ে মেলামেশা করতে দ্বিধা করে না। অথচ এটা কবীরা গোনাহ। যারা এ কাজ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا»
“যে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন করে সে অভিশপ্ত”।[1]
পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবর্তী নারীর সাথে মিলিত হয় কিংবা পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয় সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার সাথে কুফরীকারী।’[2]
অবশ্য কিছু পবিত্রা স্ত্রী তাদের তাদের স্বামীদেরকে এ কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক স্বামীই তাদের কথা না মানলে তালাকের হুমকি দেয়। আবার যে সকল স্ত্রী আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে প্রতারণাচ্ছলে ধারণা দেয় যে, এ জাতীয় কাজ বৈধ। কারণ আল্লাহ বলেন,
﴿ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡۖ﴾ [البقرة: ٢٢٣]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যে পন্থায় ইচ্ছা গমন করো”। [সূরা আল-বাক্বারাহ ২২৩]
অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রীর সামনে দিয়ে, পিছন দিয়ে, যে কোনো ভাবে যেতে পারবে, যতক্ষণ তা সন্তান প্রসবের দ্বারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে’।[3]আর এটা অবিদিত নয় যে, পশ্চাৎদ্বার (পায়খানার রাস্তা) দিয়ে সন্তান প্রসব হয় না। সুতরাং আয়াতে সঙ্গমের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা বলা হয় নি; বরং একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে যেটা ইচ্ছা সেটা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। এসব অপরাধের মূলে রয়েছে বিবিাহিত শালীন জীবনের পাশাপাশি গণিকাগমনের জাহেলী প্রথা, সমকামিতা এবং যত্রতত্র প্রদর্শিত অশ্লীল নীল ছবি। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় কাজ হারাম। উভয়পক্ষ রাযী থাকলেও তা হারাম হবে। কেননা পারস্পরিক সম্মতিতে কোনো হারাম কাজ হালাল হয়ে যায় না।
>[2] তিরমিযী; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫৯১৮।
[3] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৬৪, সনদ হাসান।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে পুরুষদেরকে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩﴾ [النساء: ١٢٩]
“তোমরা যতই আগ্রহ পোষণ কর না কেন তোমরা কখনো স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না। তবে তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখ না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৯]
এখানে কাম্য হলো, রাত্রি যাপনে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকের নিকট এক রাত করে যাপন করা এবং প্রত্যেকের থাকা, খাওয়া ও পরার যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করা। অন্তরের ভালোবাসা সবার জন্য সমান হতে হবে এমন বিধান শরী‘আত দেয় নি। কেননা তা মানুষের ইখতিয়ার বহির্ভূত।
কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের একাধিক স্ত্রীর একজনকে নিয়ে পড়ে থাকে, অন্যজনের দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না; একজনের নিকট বেশি বেশি রাত কাটায় কিংবা বেশি খরচ করে, অন্যজনের কোনো খোঁজই নেয় না। নিঃসন্দেহে এরূপ একপেশে আচরণ হারাম। কিয়ামত দিবসে তাদের যে অবস্থা দাঁড়াবে তার একটি চিত্র আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসে আমরা পাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ»
‘যার দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, কিয়ামত দিবসে সে এক অংশ অবস অবস্থায় উঠবে”।[1]
>মানুষের মধ্যে ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে শয়তান সদা তৎপর। কি করে তাদের দ্বারা হারাম কাজ করানো যায় এ চিন্তা তার অহর্নিশ। তাই আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ وَمَن يَتَّبِعۡ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۚ ﴾ [النور: ٢١]
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাকে তো সে অশ্লীল ও অন্যায় কাজেরই হুকুম দেয়”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২১]
শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে।[1] কোনো গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই একটি চক্রান্ত। এজন্যই শরী‘আত উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
“কোনো পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনের মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান”।[2]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ، بَعْدَ يَوْمِي هَذَا، عَلَى مُغِيبَةٍ، إِلَّا وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوِ اثْنَانِ»
“আমার আজকের এ দিন থেকে কোনো পুরুষ একজন কিংবা দু’জন পুরুষকে সঙ্গে করে ব্যতীত কোনো স্বামী থেকে দূরে থাকা মহিলার সাথে নির্জনে দেখা করতে পারবে না”।[3]
সুতরাং ঘর হোক কিংবা স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক, আর বাড়ীর কক্ষেই হোক, কিংবা মোটর গাড়ীতেই হোক, কোথাও কোনো পুরুষ লোক বিবাহ বৈধ এমন কোনো মহিলার সাথে একাকী থাকতে পারবে না। নিজের ভাবী, পরিচারিকা, রুগিনী ইত্যাকার কারও সাথেই নির্জনবাস বৈধ নয়।অনেক মানুষ আছে যারা আত্মবিশ্বাসের বলে হোক কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করেই হোক উপরোক্ত মহিলাদের সাথে একাকী অবস্থানে খুবই উদার মনোভাব পোষণ করে। তারা এভাবে মেলামেশাকে খারাপ কিছুই মনে করে না। অথচ এরই মধ্য দিয়ে ব্যভিচারের সূত্রপাত হয়, সমাজ দেহ কলুষিত হয় এবং সমাজে অবৈধ সন্তানদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
[2] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩১১৮।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৩।
আজকের সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অবারিতভাবে চলছে। ফলে অনেক নারী-পুরুষই নিজেকে আধুনিক হিসাবে যাহির করার জন্য শরী‘আতের সীমালংঘন করে পরস্পরে মুসাফাহা করছে। তাদের ভাষায় এটা হ্যান্ডশেক বা করমর্দন। আল্লাহর নিষেধকে থোড়াই কেয়ার করে বিকৃত রূচি ও নগ্ন সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে তারা এ কাজ করছে এবং নিজেদেরকে প্রগতিবাদী বলে যাহির করছে। আপনি তাদেরকে যতই বুঝান না কেন বা দলীল-প্রমাণ যতই দেখান না কেন তারা তা কখনই মানবে না। উল্টো আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল, সন্দেহবাদী, মোহাচ্ছন্ন, আত্মীয়তাছিন্নকারী ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করবে।
চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন, ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুসাফাহা করা তো এসব লোকদের নিকট পানি পানের চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ»
“নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেওয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য হালাল নয়”।[1]
নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«الْعَيْنَانِ تَزْنِيَانِ، وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ، وَالرِّجْلَانِ تَزْنِيَانِ، وَالْفَرْجُ يَزْنِي »
“দু’চোখ যিনা করে, দু’হাত যিনা করে, দু’পা যিনা করে এবং লজ্জাস্থানও যিনা করে”।[2]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন,
«إِنِّي لَا أُصَافِحُ النِّسَاء»
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”।[3]
তিনি আরও বলেছেন,
«لا أمس أيدى النساء»
“আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না”।[4]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন,
«لاَ وَاللَّهِ مَا مَسَّتْ يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ، غَيْرَ أَنَّهُ بَايَعَهُنَّ بِالكَلاَمِ»
“আল্লাহর শপথ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনই কোনো বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করে নি। তিনি মৌখিক বাক্যের মাধ্যমে তাদের বায়‘আত নিতেন”।[5]সুতরাং আধুনিক সাজতে গিয়ে যারা নিজেদের বন্ধুদের সাথে মুসাফাহা না করলে স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার হুমকি দেয় তারা যেন হুঁশিয়ার হয়। জানা আবশ্যক যে, মুসাফাহা কোনো আবরণের সাহায্যে হোক বা আবরণ ছাড়া হোক উভয় অবস্থাতেই হারাম।
>[2] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৩৯১২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৪১২৬।
[3] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৩; সহীহুল হাদীস, হাদীস নং ২৫০৯।
[4] ত্বাবরাণী; কাবীর, ২৪/৩৪২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৭০৫৪।
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬৬।
আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করছে। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন,
«أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ»
“পুরুষরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর মেখে কোনো মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে গমন করে তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী বলে গণ্য হবে”।[1]
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تُقبلُ صَلاةٌ لامْرَأةِ تطيَّبت لهذا المسجدِ حتى ترجع فتغتَسِلَ غُسْلَها مِنَ الجنابةِ»
“যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার সালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে”।[2]বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে, এমনকি রমযানের রাতে মসজিদে আসার সময় তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। অথচ শরী‘আত তো শুধু মহিলাদের জন্য সে আতরের অনুমোদন দিয়েছে যার রঙ হবে প্রকাশিত পক্ষান্তরে গন্ধ হবে অপ্রকাশিত। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগণ্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেন। আমীন!
>[2] মুসনাদে আহমদ ২/৪৪৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৭০৩।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ»
“কোনো মহিলা স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম এমন কোনো আত্মীয়কে সাথে না নিয়ে যেন ভ্রমণ না করে”।[1]
[এ নির্দেশ সকল প্রকার সফরের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; এমনকি হজের সফরের ক্ষেত্রেও।] মাহরাম কোনো পুরুষ তাদের সাথে না থাকলে দুশ্চরিত্রের লোকদের মনে তাদের প্রতি কুচিন্তা জাগ্রত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে তারা তাদের পিছু নিতে পারে। আর নারীরা তো প্রকৃতিগত ভাবেই দুর্বল। তারা তাদের মান, ইযযত, আব্রু নিয়ে সামান্যতেই বিব্রত বোধ করে। এমতাবস্থায় দুষ্টলোকেরা তাদের পিছু নিলে বাধা দেওয়া বা আত্মরক্ষামূলক কিছু করা তাদের জন্য কষ্টকর তো বটেই।
অনেক মহিলাকে বিমান কিংবা অন্য যানবাহনে উঠার সময় বিদায় জানাতে দু’একজন মাহরাম নিকটজন হাযির থাকে, আবার তাকে স্বাগত জানাতেও এমন দু’একজন হাযির থাকে। কিন্তু পুরো সফরে তার পাশে থাকে কে? যদি বিমানে কোনো ত্রুটি দেখা দেয় এবং তা অন্য কোনো বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য হয় কিংবা নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে অবতরণে বিলম্ব ঘটে বা উড্ডয়নের সময়সূচী পরিবর্তন হয়, তাহলে তখন অবস্থা কি দাঁড়াবে? [ট্রেন, বাস, স্টীমার প্রভৃতি সফরেও এরূপ ঘটনা হর-হামেশা ঘটে। তখন কী যে অবস্থায় সৃষ্টি হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝিয়ে বলা কষ্টকর। সুতরাং সাথে একজন মাহরাম পুরুষ থাকা একান্ত দরকার, যে তার পাশে বসবে এবং আপদে-বিপদে ও উঠা-নামায় সাহায্য করবে।]
মাহরাম হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যথা-মুসলিম হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া ও পুরুষ হওয়া। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصَاعِدًا، إِلَّا وَمَعَهَا أَبُوهَا، أَوِ ابْنُهَا، أَوْ زَوْجُهَا، أَوْ أَخُوهَا، أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا»
“কোনো মহিলা যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান রাখে তার জন্য তিন দিন বা ততোধিক সফর করা বৈধ নয়; যদি না তার সাথে থাকে তার পিতা, তার পুত্র, তার স্বামী, তার ভাই অথবা তার কোনো মাহরাম পুরুষ”।[2]
>[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪০।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠]
“হে নবী! আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিচু করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্য পবিত্রতম। নিশ্চয় তারা যা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত আছেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَزِنَا العَيْنِ النَّظَر»
“চোখের যিনা দৃষ্টিপাত”।[1]
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সব স্ত্রীলোককে দেখা হারাম করে দিয়েছেন তাদেরকে দেখা হল চোখের যিনা। তবে শর‘ঈ অনুমোদন রয়েছে এমন সব প্রয়োজনে তাদের প্রতি তাকানো যাবে এবং যতটুকু দেখা দরকার তা দেখা যাবে। যেমন, বিবাহের জন্য কনে দেখা ও ডাক্তার কর্তৃক রুগিনীকে দেখা নিষিদ্ধ নয়।
পুরুষদের ন্যায় মহিলারাও বেগানা পুরুষের পানে কুমতলবে তাকাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ﴾ [النور: ٣١]
“হে নবী! আপনি বিশ্বাসী নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অনুরূপভাবে দাঁড়ি-গোফ বিহীন সুন্দর ও সুশ্রী বালকদের দিকে কুমতলবে তাকানোও হারাম।
তদ্রূপ পুরুষের সতর পুরুষের দেখা এবং নারীর সতর নারী কর্তৃক দেখাও হারাম। আর যে সতর দেখা জায়েয নেই তা স্পর্শ করাও জায়েয নেই। এমনকি কোনো আবরণ যোগে হলেও জায়েয নেই।কিছু লোক শয়তানী ফেরেবে পড়ে পত্র-পত্রিকা ও সিনেমার ছবি দেখে থাকে। তাদের দাবী, ‘এসব ছবির কোনো বাস্তবতা নেই। সুতরাং এগুলো দেখলে দোষ হবে না’। অথচ এগুলোর ক্ষতিকর এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্রভাব খুবই স্পষ্ট।
>যে নারী বা পুরুষ পর্দা মানে না তাকে দাইয়ূছী বলা হয়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ، وَالْعَاقُّ، وَالدَّيُّوثُ "، الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ»
“তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। লাগাতার শরাব পানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছী, যে নিজ পরিবারের মধ্যে বেহায়াপনাকে জিইয়ে রাখে’। [1]
আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের কোনো বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াটাই দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলো আমদানী করা এবং বাড়ীতে স্থান দেওয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
>