রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত হাদীসে দুনিয়া ও আখিরাতের স্বার্থ একত্রিত করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«اتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ».
“তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো।”[1] দুনিয়া ও আখিরাতের নি‘আমত ও স্বাদ কেবল আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে প্রাপ্ত হবে। আর শরীর ও মনের আরাম, দুনিয়া অন্বেষণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা এর প্রতি অধিক যত্নবান হওয়া, কষ্ট-ক্লেশ, একগুঁয়েমি, পরিশ্রম, দুঃখ-দুর্দশা ইত্যাদি উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণের মাধ্যমে অর্জিত হবে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে সে আখিরাতের সুখ ও নি‘আমত লাভে সফলকাম হবে।
আর যে ব্যক্তি উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করবে সে দুনিয়ার ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা থেকে আরামে থাকবে। আল্লাহই সাহায্যকারী।
কবির ভাষায়:
দুনিয়া ডেকে বলছে, সৃষ্টিকুলের কেউ যদি তার কথা শুনতো। বহু দৃঢ়প্রত্যয়ী জীবনযাপনকারীকে আমি ধ্বংস করেছি, আর বহু জমাকারী আমি তা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করেছি।
>রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুনাহের কাজ ও ঋণগ্রস্ততার কর্ম থেকে আশ্রয় চাওয়া একই হাদীসে একত্রিত করেছেন।[1] কেননা গুনাহ আখিরাতের ক্ষতিগ্রস্ততা অত্যাবশ্যকীয় করে আর ঋণগ্রস্ততা দুনিয়ার ক্ষতিগ্রস্ততা নিশ্চিত করে।
>«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ المَأْثَمِ وَالمَغْرَمِ " فَقَالَ لَهُ قَائِلٌ: مَا أَكْثَرَ مَا تَسْتَعِيذُ مِنَ المَغْرَمِ، فَقَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَرِمَ، حَدَّثَ فَكَذَبَ، وَوَعَدَ فَأَخْلَفَ»
“হে আল্লাহ, আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি গুনাহের কাজ ও ঋণগ্রস্ততার কর্ম থেকে। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততার কর্ম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি বললেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৯।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ٦٩﴾ [العنكبوت: ٦٩]
“আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা অবশ্যই আমাদের পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৬৯] এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াতকে জিহাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। সুতরাং হিদায়াতের দিক দিয়ে সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ যে জিহাদের দিক থেকে সর্বাগ্রে। নফস, প্রবৃত্তি, শয়তান ও দুনিয়াদারীর বিরুদ্ধে জিহাদ হলো সর্বোত্তম ফরয জিহাদ। যে ব্যক্তি এ চারটির বিরুদ্ধে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ করবে, আল্লাহ তাকে তাঁর সন্তুষ্টির পথ দেখাবেন যে পথ তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোতে জিহাদ পরিত্যাগ করবে সে জিহাদের প্রকারগুলোর মধ্যে যতটুকুতে জিহাদ বন্ধ করেছে ততটুকু হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে।
জুনায়েদ রহ. বলেছেন, যারা আমাদের পথে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে তাওবার মাধ্যমে জিহাদ করবে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে ইখলাসের পথে পরিচালিত করব। আর এসব শত্রুর বিরুদ্ধে কখনও বাহ্যিকভাবে জিহাদ করা সম্ভব হবে না যতক্ষণ এসব শত্রুর বিরুদ্ধে গোপন জিহাদ করা না হবে। যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করবে সে শত্রুর ওপরও বিজয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তির ওপর প্রবৃত্তি জয়লাভ করবে তার ওপর শত্রুও জয় লাভ করবে।
ব্যক্তির ইচ্ছার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হিম্মত হলো, তার হিম্মত সম্পৃক্ত হবে আল্লাহর ভালোবাসা ও তাঁর দীনি আদেশের উদ্দেশ্যের সাথে। অর্থাৎ তার কাজটি আল্লাহর ভালোবাসা ও তাঁর দীনি আদেশ অনুযায়ী ব্যক্তি স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী করতে পারা, এটা সর্বোচ্চ হিম্মত বলে বিবেচিত হবে।
আর সর্বনিম্ন হিম্মত হলো, আল্লাহর থেকে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হিম্মত করা। সে আল্লাহর থেকে কিছু পাওয়ার জন্য তাঁর ইবাদত করে, আল্লাহ তার থেকে যা চায় সেজন্য তাঁর ইবাদত করে না। প্রথম প্রকারের হিম্মত আল্লাহর পক্ষ থেকে (বান্দার জন্য আসে) এবং আল্লাহও তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ইচ্ছা করেন। আর দ্বিতীয় প্রকারের হিম্মতে সে আল্লাহর থেকে কিছু পাওয়ার জন্য সংকল্প করে, এবং তা আল্লাহর (শরী‘আতগত) ইচ্ছা থেকে মুক্ত থাকে।
আমলহীন আলিমগণ জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের কথার মাধ্যমে মানুষদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকে আর তাদের কাজের মাধ্যমে লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে। তারা যখনই কথার মাধ্যমে লোকদেরকে ডেকে বলে, এদিকে আসো, তখনই তাদের কাজ বলে, তাদের কথা শুনিও না। তারা যেসব কথা বলে তা যদি সত্যিকার অর্থেই বলত, তাহলে তারাই সর্বপ্রথম সে কাজ পালনে অগ্রগামী হতো। বস্তুত তারা বাহ্যিকভাবে পথপদর্শক হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা পথের মধ্যকার ডাকা।
ছোট বড় সব ধরণের পাপের মূল হলো তিনটি। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে অন্তরকে সম্পৃক্ত করা, রাগশক্তির আনুগত্য ও প্রবৃত্তিশক্তির কথা অনুযায়ী চলা। এ তিনটি কাজ ক্রমানুসারে শির্ক, যুলুম ও অশ্লীলতা। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ও তাঁর সাথে অন্য কাউকে ডাকার পরিণতি শির্ক। রাগের মাথায় কোনো কাজ করার সর্বোচ্চ অন্যায় হচ্ছে হত্যা করা। আর অশ্লীলশক্তির আনুগত্য করে কাজ করলে এর পরিণতি যিনায় লিপ্ত হওয়া। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা এ তিনটি কাজকে একত্রে এভাবে বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَ٦٨﴾ [الفرقان: ٦٨]
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮]
এ তিনটি অন্যায় কাজ একটির দিকে অন্যটি আহ্বান করে। শির্ক যুলুম ও অশ্লীলতার দিকে ডাকে যেমনিভাবে ইখলাস ও তাওহীদ ব্যক্তিকে যুলুম ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كَذَٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَۚ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ٢٤﴾ [يوسف: ٢٤]
“এভাবেই, যাতে আমরা তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দিই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৪]
কুরআন ত্যাগ করার অনেক ধরণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:
প্রথমত: কুরআন শ্রবণ না করা, এর প্রতি ঈমান না আনা এবং কুরআনের প্রতি মনোযোগ না দেওয়া।
দ্বিতীয়ত: কুরআন অনুযায়ী আমল ত্যাগ করা, কুরআনের হালাল ও হারামের কাছে অবস্থান না করা; যদিও সে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং এর প্রতি ঈমান আনে।
তৃতীয়ত: কুরআন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা না করা ও কুরআনের ফয়সালা না মানা।
চতুর্থত: কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও বুঝে পড়া পরিত্যাগ করা এবং কুরআন থেকে আল্লাহর উদ্দেশ্য বুঝা বাদ দেওয়া।
পঞ্চমত: অন্তরের সব রোগ-ব্যাধির নিরাময়ে কুরআনকে ঔষধ হিসেবে গ্রহণ করা পরিত্যাগ করা। যার ফলে সে কুরআন ছেড়ে অন্য কিছু দ্বারা আরোগ্য লাভে চেষ্টা করে এবং কুরআন দ্বারা চিকিৎসা করানো না মানা। উপরোক্ত সব প্রকার নিম্নোক্ত আয়াতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِي ٱتَّخَذُواْ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورٗا٣٠﴾ [الفرقان: ٣٠]
“আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩০] যদিও কতিপয় পরিত্যাগ একটির তুলনায় অন্যটি বেশি জঘন্য।
এ সব লোকদের অন্তরে কুরআনের দ্বারা সংকীর্ণতা সৃষ্টি হয়। আর তারা নিজেরা তা বুঝতে পারে এবং এ জটিলতা তারা অন্তরে অনুভব করে। দীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টিকারী এমন কাউকে পাবে না, উক্ত বিদ‘আত করার সময় যার অন্তরে কিছু আয়াতের ব্যাপারে সংকীর্ণতা আসে না, বিশেষ করে যে সব আয়াত তাদের ও তাদের কাজের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অতএব, এ বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা-গবেষণা করো। অতঃপর নিজের জন্য যেটা পছন্দ করো সেটি গ্রহণ করো।
যখন কোনো বান্দা সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয় (তার অন্তরে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো চিন্তা না থাকে) তখন আল্লাহ তা‘আলা তার সমস্ত প্রয়োজনের দায়িত্বভার নিয়ে নেন, সে যেসব ব্যাপারে চিন্তা করে তা তার থেকে দূরীভূত করে দেন, তার অন্তরকে তিনি শুধু তাঁর ভালোবাসার জন্য, জবানকে তাঁর যিকিরের জন্য এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তাঁর আনুগত্যের জন্য খালি করে দেন। আর যদি সে এমন অবস্থায় সকাল ও সন্ধ্যা করে যে, দুনিয়াই তার সকল চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু, তখন আল্লাহ তার ওপর দুনিয়ার দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা ও কষ্ট-ক্লেশ চাপিয়ে দেন এবং তিনি তাকে নিজের ওপর ন্যস্ত করে দেন। ফলে তার অন্তর আল্লাহর ভালোবাসা ছিন্ন হয়ে সৃষ্টির ভালোবাসায় ব্যস্ত হয়ে যায়, তার জবান আল্লাহর যিকির বাদ দিয়ে সৃষ্টিকুলের যিকির করে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁর আনুগত্য না করে সৃষ্টির খিদমত ও কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يَعۡشُ عَن ذِكۡرِ ٱلرَّحۡمَٰنِ نُقَيِّضۡ لَهُۥ شَيۡطَٰنٗا فَهُوَ لَهُۥ قَرِينٞ٣٦﴾ [الزخرف: ٣٦]
“আর যে রহমানের (পরম করুণাময় আল্লাহর) যিকির থেকে বিমুখ থাকে আমরা তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৩৬]
ঈমানের রয়েছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিষয়। এর প্রকাশ্য দিক হলো জবানের দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা আমল করা এবং অপ্রকাশ্য দিক হচ্ছে, অন্তরে ঈমানের সত্যায়ন করা, ঈমানের চাহিদানুযায়ী আত্মসমর্পণ করা ও ঈমানকে ভালোবাসা। অতএব, বাহ্যিক ঈমান কোনো উপকারে আসবে না যদি ঈমাননের অপ্রকাশ্য দিকগুলো ঠিক না হয়; যদিও এ ঈমান তাকে রক্তপাত থেকে বিরত রাখবে, তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তা দিবে। অন্যদিকে অপ্রকাশ্য ঈমানও যথেষ্ট হবে না যতক্ষণ বাহ্যিক ঈমান ঠিক না হবে; তবে হ্যাঁ, ব্যক্তি যদি কোনো কারণে অক্ষম হয় বা বাধ্য হয় বা জীবন নাশের আশঙ্কা থাকে। সুতরাং প্রকাশ্য আমল গোপনীয় আমলের বিপরীত হলে এবং এর সাথে প্রকাশ্য আমল করা থেকে বিরত রাখার দলীল না থাকে তাহলে তার অপ্রকাশ্য আমল নষ্ট বলে বিবেচিত হবে ও তাকে ঈমানহীন বলা হবে। প্রকাশ্য আমলের ত্রুটি অপ্রকাশ্য ঈমানের ত্রুটির প্রমাণ। এমনিভাবে প্রকাশ্য আমলের জোরদারী অপ্রকাশ্য আমলের জোরদারীর প্রমাণ।
অতএব, ঈমান হলো ইসলামের মূলবিন্দু ও সারাংশ। আর ইয়াকীন হলো ঈমানের হৃৎপিণ্ড ও শ্রেষ্ঠাংশ। যে ইলম ও আমল ঈমান ও ইয়াকীনকে বৃদ্ধি করে না তা প্রকৃত ইলম ও আমল নয়; আবার যে ঈমান আমলের প্রতি উৎসাহিত করে না তাও প্রকৃত ঈমান নয়।
আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কয়েক প্রকার।
প্রথমত: বান্দার প্রয়োজন মিটানো ও দুনিয়ার অংশ পাওয়ার জন্য আল্লাহর ওপর তাওয়াক্বুল করা অথবা অপছন্দনীয় জিনিস ও দুনিয়াবী বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ যেসব জিনিস পছন্দ করেন, যেমন ঈমান, ইয়াকীন, জিহাদ ও আল্লাহর পথে দাওয়াত ইত্যাদি অর্জনে তাওয়াক্বুল করা।
এ দু’প্রকারের তাওয়াক্বুলের মধ্যকার পার্থক্য আল্লাহ ব্যতীত কেউ গননা করতে পারবে না। কেননা বান্দা যখন যথাযথভাবে দ্বিতীয় প্রকারের তাওয়াক্বুল করবে তখন তার প্রথম প্রকারের সব প্রয়োজন পুরোপুরিভাবে মিটে যাবে। আর যদি বান্দা প্রথম প্রকারের তাওয়াক্বুল করবে তখন তার জন্য যদিও দ্বিতীয় প্রকারের তাওয়াক্বুল যথেষ্ট হবে; তবে আল্লাহ যেসব কাজ পছন্দ করেন ও যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন ইত্যাদি কাজে তাওয়াক্বুলকারীর যে মর্যাদা রয়েছে সে মর্যাদা প্রাপ্ত হবে না।
আল্লাহর ওপর সর্বোচ্চ তাওয়াক্বুল হলো হিদায়াত প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা, তাওহীদকে শির্ক ও বিদ‘আত মুক্ত করা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করা ও বাতিলের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ইত্যাদির জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। এগুলো রাসূলগণ ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারীগণের তাওয়াক্বুল।
তাওয়াক্বুলের অন্তর্নিহিত রহস্য ও হাকীকত হলো, একমাত্র আল্লাহর ওপর অন্তরে আস্থা রাখা এবং এ তাওয়াক্বুলের সাথে দুনিয়াবী কোনো উপায়-উপকরণের সাহায্য নেওয়া থেকে বিরত থাকা ও অন্য কিছুর ওপর নির্ভরশীল না হওয়া। যেমন, ব্যক্তির এ কথা কোনো উপকারে আসবে না যদি সে এভাবে বলে, ‘আমি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করলাম, সাথে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলাম, তার ওপর আস্থা রাখলাম ও তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম। সুতরাং জবানের তাওয়াক্কুল আর অন্তরের তাওয়াক্কুল দু’টি দুই জিনিস। যেমন, অন্তরে বারবার গুনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করে জবানের তাওবা এবং অন্তরের তাওবা- যদিও জবানে উচ্চারণ না করে দু’টি দুই জিনিস। যেমন বান্দার কথা, আমি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করলাম সাথে অন্যের ওপর অন্তরে আস্থা রাখলাম, একথা যেমন কোনো কাজে আসবে না, তেমনিভাবে বান্দার কথা আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করলাম আর সে অন্তরে বারবার গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে তার এ তাওবা কোনো কাজে আসবে না।