গুনাহ মাফের উপায় শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল (রহ.) ৫৫ টি
গুনাহ মাফের উপায় শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল (রহ.) ৫৫ টি

দুনিয়ার প্রত্যেকটি শিশুই ফিতরাত বা স্বভাব-ধর্ম ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। আবার মানুষ মাত্রই কোন না কোনভাবে কখনো না কখনো প্রবৃত্তির তাড়নায় বা শয়তানের ধোঁকায় ভুল-ত্রুটি, গুনাহ-খাতা করে বসে; তা সে গুনাহ ছোট হোক বা বড় হোক, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, জেনে হোক বা না জেনে হোক। শয়তান আল্লাহর নিকট প্রতিজ্ঞা করেই দুনিয়ায় এসেছে যে, সে আদমসন্তানকে আল্লাহর সরল পথ থেকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করবেই। যা আল্লাহ তা‘আলা এভাবে বর্ণনা করেছেন,

قَالَ أَنْظِرْنِىْ إِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ 14- قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِيْنَ -15 قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِىْ لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ 16- ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ 17

‘‘সে (শয়তান) বলল, ‘সেদিন (ক্বিয়ামাত) পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। সে বলল, ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন (সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন), সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। ‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’।’’[1]

তাই তো দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই জীবনের কখনো না কখনো শয়তানের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গুনাহ অর্জন করে।

গুনাহ করাটা মানুষের জন্য স্বাভাবিক। যেমনটা আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ

‘‘প্রত্যেক আদম সন্তানই চরম গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তাওবাকারীগণ।’’[2]

মু’মিন ব্যক্তি গুনাহকে মনে করে পাহাড়ের মত, যার নিচে সে বসে আছে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি গুনাহকে মনে করে মাছির মত, যা তার নাকের ডগায় বসে উড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرٰى ذُنُوبَه كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرٰى ذُنُوبَه كَذُبَابٍ مَرَّ عَلٰى أَنْفِه

‘‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বড় মনে করে, যেন সে একটা পাহাড়ের নীচে বসা আছে, আর সে আশংকা করছে যে, কখন যেন পাহাড়টা তার উপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকের উপর দিয়ে চলে যায়।’’[3]

গুনাহ করাটা যেহেতু মানুষের জন্য স্বাভাবিক সেহেতু গুনাহ হয়ে যেতেই পারে। মানুষ যদি গুনাহ না করতো তাহলে আল্লাহ তাদের বদলে অন্য কোন জাতিকে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করতো এবং পরক্ষণেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো। এ কথাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন এভাবে,

وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِه لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ

‘‘সেই স্বত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে বিলীন করে দিয়ে নতুন এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করতো আবার পরক্ষণেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতো। তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।’’[4]

উল্লেখ্য যে, এই হাদীসের উদ্দেশ্য কখনই পাপের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা বা উৎসাহ দেয়া নয়; বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর অসীম ক্ষমার ইচ্ছা ও অপার দয়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করার অভ্যাস গড়ে তোলার তাকিদ দেয়া। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, বান্দার গুনাহ হয়ে গেলে সে যেন অহংকার করে বা লজ্জায় পরে কিংবা হীনমন্যতায় ভুগে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত না থাকে; বরং সাথে সাথে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়ার সময় কান্নাকাটি করলে তা মাফ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্যই গুনাহগারের উচিত গুনাহ হয়ে গেলে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এই আদেশই নীচের হাদীসে দেয়া হয়েছে :

قَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلٰى خَطِيئَتِكَ

‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুক্তির উপায় কী? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: ‘‘তুমি নিজের জিহবাকে আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থেকে নিজের পাপের জন্য কান্না কর’’।[5]

জীবন চলার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণায় কখনো গুনাহ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এমন অবস্থায় একজন মুমিনের কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া, তাওবাহ্ করা এবং ‘আমলে সালেহ (সৎকর্ম) করতে থাকা।

স্বাভাবিকভাবে গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও তাওবাহ্ করা উচিত। আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

إِنَّ صَاحِبَ الشِّمَالِ لِيَرْفَعُ الْقَلَمَ سِتَّ سَاعَاتٍ عَنِ الْعَبْدِ الْمُسْلِمِ الْمُخْطِئِ أَوِ الْمُسِيءِ، فَإِنْ نَدِمَ وَاسْتَغْفَرَ اللهَ مِنْهَا أَلْقَاهَا، وَإِلا كُتِبَتْ وَاحِدَةً

‘‘বামপাশের ফেরেশতা গুনাহকারী মুসলিম বান্দার গুনাহ লেখার পূর্বে ছয় ঘণ্টা (একটি নির্ধারিত সময়) কলম তুলে রাখেন (গুনাহ লেখেন না)। (এই সময়ের মধ্যে) গুনাহকারী ব্যক্তি যদি (তার গুনাহের কারণে) লজ্জিত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে ফেরেশতা তা না লিখে ছুঁড়ে ফেলে দেন। কিন্তু (এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যদি গুনাহকারী লজ্জিত হয়ে) ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে তার ‘আমলনামায় একটি গুনাহ লেখা হয়।’’[6]

ক্ষমা চাইতে বা তাওবাহ্ করতে দেরি করা মারাত্মক অন্যায় ও ভুল। কারণ কখন যে মৃত্যু এসে যাবে তা আমরা কেউ জানি না। তাই প্রথমবার গুনাহ করে শয়তানকে খুশি করলেও আল্লাহ ইস্তিগফার ও তাওবার সুযোগ দেয়ার পরও তা না করে দ্বিতীয়বার শয়তানকে খুশি করা কোন মুসলিমের জন্য কখনো উচিত নয়। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত গুনাহ হয়ে যাওয়ার পরপরই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তাওবাহ্ করা ও অন্যান্য সুন্নাহ্সম্মত ‘আমল করার মাধ্যমে কৃত গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নেয়া।

কুরআন ও হাদীসে গুনাহ মাফের জন্য ইস্তিগফার ও তাওবার পাশাপাশি আরও কিছু ‘আমল বর্ণিত হয়েছে যেগুলো করলে অনেক গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা সে ‘আমলগুলো না জানার কারণে এবং না করার কারণে আমাদের গুনাহগুলো মাফ করাতে পারি না। অথচ সেগুলো খুবই সহজ ‘আমল। এই ‘আমলগুলো করলে আমাদের গুনাহগুলো মাফ হয়ে যেতে পারে, ইনশা-আল্লা-হ। সেদিকে দৃষ্টি রেখে সকল গুনাহগারের জন্য এই বইয়ে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহ মাফের বেশকিছু পদ্ধতি ও ‘আমল বর্ণনা করা হয়েছে।

[1]. সূরা আল আ‘রাফ ০৭ : ১৪-১৭।

[2]. জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৪৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২৫১, হাদীসটি হাসান।

[3]. সহীহুল বুখারী : ৬৩০৮।

[4]. সহীহ মুসলিম : ৭১৪১।

[5]. মুসনাদ আহমাদ : ২২২৩৫; সুনান আত্ তিরমিযী : ২৪০৬; মিশকাত : ৪৮৩৭, হাদীসটি সহীহ।

[6]. আল মু‘জামুল কাবীর : ৭৭৬৫, হাদীসটির সদন সহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহাহ্ : ১২০৯।

‘গুনাহ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত হলেও এটি মূলত ফার্সি শব্দ।[1] গুনাহ বুঝাতে বাংলায় আরও একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে পাপ। বাংলা অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে অন্যায়, কলুষ, দুষ্কৃতি ইত্যাদি।[2] আরবীতে গুনাহ বা পাপ বুঝানোর জন্য অনেকগুলো পরিভাষা ব্যবহৃত হয়। যেমন, আল ইস্ম (الإثمُ), আল খাত্বা ও আল খাত্বীআহ্ (الخطأ والخطيئة), আল মা‘সিয়াহ্ (المعصيةُ), আল জুর্ম (الجرمُ), আয্ যান্ব (الذنبُ) ইত্যাদি।

এ সকল পরিভাষার মাঝে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকলেও মূলত যা বুঝায় তা হলো, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আদেশ পালন না করা বা তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করা ও তাঁদের নিষেধকৃত কাজ করা, তা প্রকাশ্যেই হোক বা গোপনে হোক।

[1]. বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৩৬২।

[2]. বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃ. ৭৪৬।

গুনাহ বা পাপগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় :

১. কাবীরা গুনাহ বা বড় গুনাহ; যেমন শির্ক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা, বিদ্‘আত করা, মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি।

২. সগীরা গুনাহ বা ছোট গুনাহ; যেগুলো কাবীরা গুনাহ নয় এমন গুনাহ; যেমন, পরনারীর প্রতি দ্বিতীয়বার তাকানো ইত্যাদি।

কাবীরা গুনাহের তালিকা

কাবীরা গুনাহের কোন সুনির্দিষ্ট তালিকা কুরআন ও হাদীসে একই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে আসেনি। বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস গবেষণা করে ‘আলিমগণ কাবীরা গুনাহের তালিকা প্রণয়ন করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন ইমাম হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ)[1]। তিনি তার কিতাব ‘‘আল কাবায়ির’’-এর মধ্যে অর্ধশতাধিক কাবীরা গুনাহের তালিকা দিয়েছেন। সম্প্রতি সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন ‘আবদুল্লাহ আত্ তুয়াইজিরী একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন যা তার রচিত ইসলামী ফিকহ বিশ্বকোষ-এর ১৬ তম পর্বে ‘‘কিতাবুল কাবায়ির’’ নামে উল্লিখিত হয়েছে। নিম্নে সেই তালিকাটি পেশ করা হলো। উল্লেখ্য যে, তিনি তার লেখায় প্রতিটি কাবীরা গুনাহর দলীল উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা কলেবর বৃদ্ধির শঙ্কায় দলীলগুলোর মূলপাঠ (Text) উল্লেখ না করে শুধু সূত্র (রেফারেন্স) উল্লেখ করে দিয়েছি। যাতে করে কোন পাঠক চাইলে সেই সূত্র ধরে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।[2]

(ক) অন্তরের কাবীরা গুনাহ :

১. কুফর[3]

২. শির্ক[4]

৩. অহংকার[5]

৪. মুনাফিক্বী[6]

৫. রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমল[7]

৬. যাদু করা[8]

৭. অশুভ লক্ষণ বিশ্বাস করা[9]


(খ) জ্ঞান ও জিহাদ সংক্রান্ত কাবীরা গুনাহ :

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে জ্ঞান অর্জন করা[10]

৯. জ্ঞান গোপন করা[11]

১০. আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করা[12]

১১. জ্ঞান অনুযায়ী ‘আমল না করা[13]

১২. আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দানে বিরত থাকা বা দা‘ওয়াতী কাজ ছেড়ে দেয়া[14]

১৩. সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া[15]

১৪. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া[16]

১৫. ভ্রান্তদলের পক্ষে যুদ্ধ করা[17]

১৬. যুদ্ধে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদেরকে সাহায্য করা[18]


(গ) ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে কাবীরা গুনাহ

১৭. পেশাব হতে বেঁচে/সতর্ক না থাকা (যথাযথভাবে পরিচ্ছন্ন না থাকা)[19]

১৮. সলাত পরিত্যাগ করা[20]

১৯. সলাতে ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা[21]

২০. সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা[22]

২১. যাকাত দানে বাধা দেয়া বা যাকাত না দেয়া[23]

২২. সিয়াম পরিত্যাগ করা[24]

২৩. হাজ্জ পরিত্যাগ করা[25]

২৪. আল্লাহকে স্মরণ না করা[26]


(ঘ) শাসন-প্রশাসন ও লেনদেনের ক্ষেত্রে কাবীরা গুনাহ

২৫. আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান ছাড়া শাসন/বিচার করা[27]

২৬. শাসক কর্তৃক নাগরিকদের ধোঁকাদান বা নাগরিকদের সাথে প্রতারণা করা[28]

২৭. অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা[29]

২৮. সূদ খাওয়া[30]

২৯. ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ ও অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা[31]

৩০. জুয়া খেলা[32]

৩১. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া[33]

৩২. শরীয়তের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা[34]

৩৩. স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে মূল্য গ্রহণ করা[35]

৩৪. অন্যায়ভাবে মালিকানা দাবি করা[36]

৩৫. মানুষের সাথে প্রতারণা করা[37]

৩৬. মিথ্যা ক্বসম করে পণ্য বিক্রয় করা[38]

৩৭. অন্যায় উদ্দেশে পণ্য মজুদ করা[39]

৩৮. মিথ্যা শপথ করা[40]

৩৯. দোষ গোপন ও মিথ্যা কথা বলে পণ্য বিক্রয় করা[41]

৪০. হারাম ব্যবসা করা[42]

৪১. যুলুম করে (অন্যায়ভাবে) কোন কিছু গ্রহণ করা[43]

৪২. সাক্ষ্য গোপন করা[44]

৪৩. জমিনের সীমানা/খুঁটি অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করা[45]


(ঙ) পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক কাবীরা গুনাহ

৪৪. অধীনদের ওপর অত্যাচার করা[46]

৪৫. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া[47]

৪৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা[48]

৪৭. কারো বংশ নিয়ে কটাক্ষ করা[49]

৪৮. বিনা কারণে মুসলিমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা[50]

৪৯. মন্দ নামে ডাকা[51]

৫০. প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করা[52]

৫১. মানুষকে কষ্ট দেয়া[53]

৫২. এমন কথা বলা যা বললে আল্লাহ তা‘আলা রাগান্বিত হন[54]

৫৩. মুসলিমকে কাফির বলা[55]

৫৪. বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করা[56]

৫৫. স্বামীর অবাধ্য হওয়া[57]

৫৬. স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করা[58]

৫৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়া[59]

৫৮. মুত্‘আহ্ (সাময়িক চুক্তিভিত্তিক)বিবাহ করা[60]

৫৯. গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ) মহিলার সাথে বিবাহহীন অবস্থায় নির্জনে অবস্থান করা[61]

৬০. সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান না করা[62]

৬১. দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা[63]


(চ) চারিত্রিক কাবীরা গুনাহ

৬২. মিথ্যা বলা[64]

৬৩. সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া[65]

৬৪. গীবত ও চোগলখোরী করা[66]

৬৫. আমানতের খিয়ানত করা[67]

৬৬. অভিশাপ দেয়া[68]

৬৭. সাহাবীদেরকে গালি দেয়া[69]

৬৮. অসমীচীন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা[70]

৬৯. সীমালঙ্ঘন করা[71]

৭০. অত্যাচার ও শত্রুতা করা[72]

৭১. মারাত্মক ঝগড়া বিবাদ করা[73]

৭২. অশ্রাব্য গালিগালাজ করা[74]

৭৩. হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা[75]

৭৪. গর্ব ও অহংকার করা[76]

৭৫. কৃপণতা করা[77]

৭৬. বাড়াবাড়ি করা[78]

৭৭. বিশ্বাসঘাতকতা করা[79]

৭৮. অপকৌশল ও ঠকবাজি করা[80]

৭৯. অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা[81]

৮০. আত্মহত্যা করা[82]

৮১. অপচয় করা[83]

৮২. অপব্যয় করা[84]

৮৩. স্বেচ্ছাচারিতা করা[85]

৮৪. গোয়েন্দাগিরি করা[86]

৮৫. অন্যায়ভাবে রাগান্বিত হওয়া[87]

৮৬. অশ্লীল ভাষায় কথা বলা[88]

৮৭. আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ মনে করা[89]

৮৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া[90]

৮৯. অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা[91]

৯০. উপকার করে খোঁটা দেয়া[92]

৯১. আল্লাহর ওয়ালীদের সাথে শত্রুতা করা[93]

৯২. আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা[94]

৯৩. হারামের মধ্যে ডুবে থাকা[95]

৯৪. ওয়াদা ভঙ্গ করা[96]

৯৫. মাদকাসক্ত হওয়া[97]

৯৬. যিনা বা ব্যভিচার করা[98]

৯৭. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া[99]

৯৮. চুরি করা[100]

৯৯. ডাকাতি করা[101]

১০০. চেহারায় দাগ কাটা ও চিহ্ন দেয়া[102]

১০১. সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করা[103]

১০২. পুরুষের রেশম বা স্বর্ণের পোশাক পরিধান করা[104]

১০৩. অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা[105]

১০৪. জানা সত্ত্বেও অন্যকে পিতা দাবী করা[106]

১০৫. বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও বাজনা শোনা[107]

১০৬. কবরের উপর বসা[108]

১০৭. টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া[109]

১০৮. পুরুষদের মহিলার বেশ এবং মহিলাদের পুরুষদের বেশ ধারণ করা[110]

১০৯. ছায়ায় ও রাস্তায় প্রসাব-পায়খানা করা[111]

১১০. মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন জন্তুকে আটকে রাখা[112]

১১১. কোন জন্তুকে তীর বা গুলি লাগানোর ট্রেনিং-এর লক্ষ্য বস্তু বানানো[113]

১১২. বিনা কারণে কুকুর পোষা[114]

১১৩. মৃত জন্তু ও রক্ত খাওয়া[115]

উল্লেখ্য যে, উপর্যুক্ত তালিকায় বর্ণিত গুনাহগুলোর মধ্যে শাস্তির পরিমাণ ও ভয়ংকরিতার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর কোনটি পৃথিবীতে দন্ডনীয় অপরাধ আবার কোনটির পৃথিবীতে দন্ড উল্লেখ নেই। আবার কিছু গুনাহ কাবীরা গুনাহ কিনা তা নিয়ে ‘আলিমগণের মধ্যে সঙ্গত কারণেই মতবিরোধ রয়েছে। তাছাড়া যেহেতু এখানে সংক্ষেপে শুধু গুনাহগুলোর শিরোনাম উল্লেখ করা হয়েছে সেহেতু উল্লিখিত শিরোনামগুলোর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা বোঝা জরুরি। নতুবা ভুল বোঝার আশঙ্কা রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সংশিস্নষ্ট বইপত্র পড়ে ও ‘আলিমদের জিজ্ঞেস করে স্পষ্ট করে বুঝে নেয়া উচিত।

[1]. জন্ম : ৬৭৩ হি. - মৃত্যু : ৭৪৮ হি.।

[2]. এই তালিকাটি রাজশাহীর মাকতাবাতুস সুন্নাহ্ থেকে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে।

[3]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৬১-১৬২; সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১০৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫০-১৫১।

[4]. সূরা আল বায়্যিনাহ্ ৯৮ : ৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭২; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান বায়হাক্বী : ১৭১২৮; সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯০১,৩০১৯।

[5]. সূরা আল মু’মিন ৪০ : ৬০; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭২-১৭৩; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ৩৪; সহীহুল বুখারী : ৬০৭১, সহীহ মুসলিম : ৭৩৬৬, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৫৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৬৪৯।

[6]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪৫; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৮; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৭।

[7]. সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : ১১০; সহীহ মুসলিম : ৭৬৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২০২, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৯৩৮; সহীহ মুসলিম : ৫০৩২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩১৩৭, মুসতাদরাক হাকিম : ২৫২৪।

[8]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১০২; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান বায়হাক্বী : ১৭১২৮।

[9]. সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ১৮-১৯; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৯১০, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৬১৪।

[10]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪২; সহীহ মুসলিম : ৫০৩২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩১৩৭, মুসতাদরাক হাকীম : ২৫২৪, ৩৬৪, মুসনাদ আহমাদ : ২৮৭৭।

[11]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৯-১৬০; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৭৪-১৭৫; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৫৮, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৬৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৬৪, হাদীসটি হাসান, সহীহ।

[12]. সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৪৪; সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১১৬-১১৭; সহীহুল বুখারী : ১১০, সহীহ মুসলিম : ৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ৩০, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৫১।

[13]. সূরা আস্ সফ্ ৬১ : ২-৩, সহীহুল বুখারী : ৩২৬৭, সহীহ মুসলিম : ৭৬৭৪।

[14]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৪-১০৫; সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮।

[15]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭৮-৭৯; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৮০; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৪-১০৫।

[16]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৮-৩৯; সহীহ মুসলিম : ৫০৪০, সুনান আবূ দাঊদ : ২৫০২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩০৯৭; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[17]. সহীহ মুসলিম : ৪৮৯২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১১৪, সহীহ ইবনু হিববান : ৪৫৮০।

[18]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৩; সহীহ মুসলিম : ৪৮০৩, সুনান আন্ নাসায়ী (কুবরা) : ১১৫৩৬।

[19]. সহীহুল বুখারী : ২১৬, সহীহ মুসলিম : ৭০৩, সুনান আন্ নাসায়ী : ২০৬৭, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৫৫।

[20]. সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯; সহীহ মুসলিম : ২৫৬, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ৬৪৯৫।

[21]. সহীহুল বুখারী : ৬৯১, সহীহ মুসলিম : ৯৯২।

[22]. সহীহুল বুখারী : ৫১০, সহীহ মুসলিম : ১১৬০, মুয়াত্ত্বা মালিক : ১৬২, ৫২৬, সুনান আন্ নাসায়ী : ৭০১।

[23]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৮০; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৪; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৫; সহীহুল বুখারী : ১৪৬০, সহীহ মুসলিম : ২৩৪৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৫৫৯; সহীহ মুসলিম : ২৩৩৯, সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৫৮, সুনান আন্ নাসায়ী : ২৪৪২।

[24]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৩; সহীহুল বুখারী : ৮, সহীহ মুসলিম : ১২২, ১২৩।

[25]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৯৭; সহীহুল বুখারী : ৮, সহীহ মুসলিম : ১২২।

[26]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০৫; মুসনাদ আহমাদ : ৯৫৮০, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৩৮০।

[27]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৪; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৫; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৭; সহীহুল বুখারী : ৭১৫১, সহীহ মুসলিম : ৩৮৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭৯০১।

[28]. সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৪২; সূরা সোয়াদ ৩৮ : ২৬; সহীহুল বুখারী : ৭১৫০, সহীহ মুসলিম : ৪৮৩৪।

[29]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৮; সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯।

[30]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৮-২৭৯; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৩০-১৩১; সহীহ মুসলিম : ৪১৭৭।

[31]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান আবূ দাঊদ : ২৮৭৪।

[32]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯০-৯১।

[33]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ৩০ সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯।

[34]. সহীহুল বুখারী : ২৪২৪, সহীহ মুসলিম : ৪১৩৬।

[35]. সহীহুল বুখারী : ২২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৪৪২, মুসনাদ আহমাদ : ৮৬৭৭।

[36]. সহীহুল বুখারী : ৩৫০৮, সহীহ মুসলিম : ২২৬, সহীহ ইবনু হিববান : ১৫৩৩৫।

[37]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯; সহীহ মুসলিম : ২৯৫, সহীহ ইবনু হিববান : ৪৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ২১২০।

[38]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৭৭; সহীহুল বুখারী : ২৩৬৯, সহীহ মুসলিম : ৩১০; সহীহুল বুখারী : ২০৮৭, সহীহ মুসলিম :৪২০৯; সহীহ মুসলিম : ৩০৬।

[39]. সহীহ মুসলিম : ৪২০৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৪৭।

[40]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৭৭; সহীহুল বুখারী : ২৩৫৬, সহীহ মুসলিম : ৩৭২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৫৯৭৬, সুনান আবূ দাঊদ : ৩২৪২; সহীহ মুসলিম : ৩৭০, সুনান দারিমী : ২৬৪৫, মুয়াত্ত্বা মালিক : ১১।

[41]. সহীহুল বুখারী : ২০৮২, সহীহ মুসলিম : ৩৯৩৭; সহীহুল বুখারী : ৬৮৭৪, সহীহ মুসলিম : ২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৫৭৫, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১০০।

[42]. সূরা লুক্বমান ৩১ : ৬; সহীহুল বুখারী : ২২২৩, সহীহ মুসলিম : ৪১৩২, সুনান ইবনু মাজাহ : ২১৬৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৮৬; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৩৮০, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১০৭৭৮।

[43]. সূরা আল ফুরক্বান ২৫ : ১৯; সহীহুল বুখারী : ২৪৫২, সহীহ মুসলিম :৪২২০; সহীহুল বুখারী : ২৪৫৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ২১৬৬।

[44]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৮৩; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২২৮।

[45]. সহীহ মুসলিম : ৫২৩৯, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪৪৪২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭০১৭।

[46]. সহীহ মুসলিম : ৪৮২৬, সুনান আন্ নাসায়ী : ৮৮২২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ২০৪৬৬; সহীহ মুসলিম : ৩৮৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭৯০১।

[47]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৩-২৪; সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯০১, ৩০১৯; সহীহুল বুখারী : ৫৯৭৩, সহীহ মুসলিম : ২৭৩, সুনান আবূ দাঊদ : ৫১৪১।

[48]. সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ২২-২৩; সহীহুল বুখারী : ৫৯৮৯, সহীহ মুসলিম : ৬৬৮৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩৪৩৪, ৩৪৩৬; সহীহুল বুখারী : ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম : ৬৬৮৫, সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৯৬।

[49]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সহীহ মুসলিম : ২২০৩, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১০০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৫৩৫।

[50]. সহীহুল বুখারী : ৬০৭৭, সহীহ মুসলিম : ৬৬৯৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১১, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯৩২; সহীহ মুসলিম : ৬৭০৯, মুসনাদ আহমাদ : ৯১৯৯; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১৫, মুসনাদ আহমাদ : ১৭৯৩৫, মুসতাদ্রাক হাকীম : ৭২৯২।

[51]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সহীহুল বুখারী : ৬০৪৪, সহীহ মুসলিম : ২৩০, সুনান ইবনু মাজাহ : ৬৯, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১০৫; সহীহুল বুখারী : ৩০, সহীহ মুসলিম : ৪৪০৫।

[52]. সহীহুল বুখারী : ৬০১৬, মুসনাদ আহমাদ : ৮৪১১, ৮৪১২, ৮৪১৩; সহীহ মুসলিম : ১৮১, মুসনাদ আহমাদ : ৮৮৫৫, সহীহ ইবনু হিববান : ৫১০।

[53]. সূরা আল বুরূজ ৮৫ : ১০; সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহ মুসলিম : ৬৮২৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৬৬৬৫, সহীহ ইবনু হিববান : ২৮৭।

[54]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৫-৬৬; সহীহুল বুখারী : ৬৪৭৮, সহীহ মুসলিম : ৭৬৭২।

[55]. সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৪৫, সহীহ মুসলিম : ৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৭৮৭১।

[56]. সহীহুল বুখারী : ১৪৭৪, সহীহ মুসলিম : ২৪৪৫-২৪৪৬; সুনান ইবনু মাজাহ : ১৮৩৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৭৮৭১।

[57]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৪; সহীহুল বুখারী : ৩২৩৭, সহীহ মুসলিম : ৩৬১১, মুসনাদ আহমাদ : ৭৪৬৫; সহীহুল বুখারী : ৩০৪, সহীহ মুসলিম : ২৫০, সুনান ইবনু মাজাহ : ৪০০৩।

[58]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২৯; সহীহ মুসলিম : ৩৭২১, মুসনাদ আহমাদ : ৮৩৬৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৪৭২৭; সহীহুল বুখারী : ৫১৮৬, সহীহ মুসলিম : ৩৭২০, সুনানুল কুবরা নাসায়ী : ৯০৯৫; সুনান আবূ দাঊদ : ২১৩৩, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১১৪১, সুনান আদ্ দারিমী : ২২৫২।

[59]. সহীহুল বুখারী : ৫১৯৪, সহীহ মুসলিম : ৩৬১১, সুনান আদ্ দারিমী : ২২৭৪; সহীহ মুসলিম : ৩৬১৩; সহীহুল বুখারী : ৩২৩৭; সুনান আবূ দাঊদ : ২১৪১।

[60]. সহীহ মুসলিম : ৩৪৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী : ৫৫১৯।

[61]. সহীহুল বুখারী : ৫২৩২, সহীহ মুসলিম : ৫৮০৩, সুনান আদ্ দারিমী : ২৬৮৪; সহীহুল বুখারী : ৩০০০৬; সহীহ মুসলিম : ৩৩৩৬; সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১০১৩৪।

[62]. সহীহুল বুখারী : ২৫৮৭, সহীহ মুসলিম : ৪২৬৯; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩৬৮১; সহীহ ইবনু হিববান : ৫১০৩।

[63]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৫৮; সহীহ মুসলিম : ৬৭৯৮; মুসনাদ আহমাদ : ১০৪২৭।

[64]. সূরা আল ‘আন্কাবূত ২৯ : ৬৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৯৪, সহীহ মুসলিম : ৬৮০৩, সুনান আদ্ দারিমী : ২৭৫৭; সহীহুল বুখারী : ৩৩, সহীহ মুসলিম : ২২০; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৬৮৮; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৬৩২।

[65]. সূরা আন্ নূর ২৪ : ২৩; সূরা আন্ নূর ২৪ : ৪; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[66]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১২; সূরা আল ক্বলাম ৮৬ : ১০-১৩; সহীহ মুসলিম : ৬৭৫৮, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৮৭৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩৫৬১; সহীহুল বুখারী : ৬০৫৬; সহীহ মুসলিম : ৩০৩।

[67]. সূরা আল আনফাল ৮ : ২৭; সহীহুল বুখারী : ৩৪; সহীহ মুসলিম : ২১৯।

[68]. সহীহুল বুখারী : ৬০৪৭, সহীহ মুসলিম : ২১১০; সহীহ মুসলিম : ৬৭৭৭; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯০৭।

[69]. সহীহুল বুখারী : ৩৬৭৩, সহীহ মুসলিম : ৬৬৫১, সুনান ইবনু মাজাহ : ১৬১, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৬৫৮; সহীহুল বুখারী : ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম : ২৪৬; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৯০০।

[70]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৫; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৬।

[71]. সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৪২; সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৩; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯০২, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৫১১; সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২১১।

[72]. সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : ২৯; সূরা কফ ৫০ : ২৪-২৬; সূরা হূদ ১১ : ১০২; সহীহুল বুখারী : ৪৬৮৬, সহীহ মুসলিম : ৬৭৪৬, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩১১০; সহীহুল বুখারী : ২৪৪২, সহীহ মুসলিম : ৬৭৪৩, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৮৯৩।

[73]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ৩; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৫; সহীহুল বুখারী : ২৪৫৭; সহীহ মুসলিম : ৬৯৫১।

[74]. সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহুল বুখারী : ৪৮; সহীহ মুসলিম : ২৩০।

[75]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১০৯; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৪; সহীহ মুসলিম : ৬৭০১।

[76]. সূরা গাফির/আল মু’মিন ৪০ : ৬০; সূরা লুক্বমান ৩১ : ১৮; সহীহ মুসলিম : ২৭৫; সুনান ইবনু মাজাহ : ৫৯; সহীহুল বুখারী : ৪৯১৮; সহীহ মুসলিম : ৭৩৬৬।

[77]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৮০; সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৯৮; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৪১৬১।

[78]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭৭; মুসনাদ আহমাদ : ১৮৫১; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩০৫৭; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৬১; সহীহ মুসলিম : ৩২৩; সুনান আদ্ দারিমী : ২৫৩২।

[79]. সহীহুল বুখারী : ৩১৮৮; সহীহ মুসলিম : ৪৬২৭; সহীহ মুসলিম : ৪৬৩৬; বায়হাক্বী : ১৬৬৩৫।

[80]. সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১০; সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ৪৩; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪২; সহীহ মুসলিম : ৭৩৮৬, মুসনাদ আহমাদ : ১৭৪৮৪।

[81]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ৯৩; সূরা আল ফুরক্বান ২৫ : ৬৮-৭০; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[82]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯; সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩০; সহীহুল বুখারী : ৩৪৬৩; সহীহ মুসলিম : ১১৩।

[83]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১; সূরা আল মু’মিন ৪০ : ৪৩।

[84]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৬; সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৭; সুনান আবূ দাঊদ : ২৮৭২; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩৬৬৮; সুনান ইবনু মাজাহ : ২৭১৮।

[85]. সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৫৫-৫৬; সূরা আন্ না-যি‘আ-ত ৭৯ : ৩৭-৩৯; সূরা আন্ নাবা ৭৮ : ২১-২২।

[86]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১২; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৪, সহীহ মুসলিম : ৬৭০১; সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৮৪৯, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১০; সহীহুল বুখারী : ৭০৪২; বায়হাক্বী : ১৪৫৭২।

[87]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০০; সহীহুল বুখারী : ৬১১৬, মুসনাদ আহমাদ : ১০০১১; সহীহুল বুখারী : ৩৩৮২, সহীহ মুসলিম : ৬৮১২।

[88]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৩; সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৯০; সহীহুল বুখারী : ৬০৩২; সহীহ মুসলিম : ৬৭৬১।

[89]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৯৯; সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৪৫-৪৭।

[90]. সূরা ইউসুফ ১২ : ৮৭; সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৮৩; সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩; সূরা আল হিজর ১৫ : ৫৫-৫৬; সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ৪৯।

[91]. সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ৬; সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ২২-২৩; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৬, সহীহ মুসলিম : ৬৭০১।

[92]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬৪; সহীহ মুসলিম : ৩০৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ২২০৮; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৭৪।

[93]. সূরা আল বুরূজ ৮৫ : ১০; সহীহুল বুখারী : ৬৫০২; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১২৪৭।

[94]. সূরা আল মুজাদালাহ্ ৫৮ : ২২; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৫১।

[95]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ২৫; সহীহুল বুখারী : ৬৮৮২; বায়হাক্বী : ১৫৯০২।

[96]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭; সূরা আর্ রা‘দ ১৩ : ২৫; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩; সহীহ মুসলিম : ৪৮৯২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১১৪।

[97]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯০-৯১; সহীহ মুসলিম : ৫৩৩৫, মুসনাদ আহমাদ : ১৪৮৮০; সহীহুল বুখারী : ৫৫৭৫, সহীহ মুসলিম : ৫৩৪১।

[98]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৩২; সূরা আন্ নূর ২৪ : ২-৩।

[99]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৮০-৮৪; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৪৬২, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৪৫৬।

[100]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩৮; সহীহুল বুখারী : ২৪৭৫, সহীহ মুসলিম : ২১১; সহীহুল বুখারী : ৬৭৬৩; সহীহ মুসলিম : ৪৫০৩।

[101]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩৩।

[102]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম : ৫৬৭৪।

[103]. সহীহুল বুখারী : ৫৪২৬, সহীহ মুসলিম : ৫৫২১; সহীহ মুসলিম : ৫৫০৯।

[104]. সহীহুল বুখারী : ৫৮৩৪; সহীহ মুসলিম : ৫৫৩১; সহীহ মুসলিম : ৫৫৯৩।

[105]. সহীহ মুসলিম : ৬৮৩২।

[106]. সহীহুল বুখারী : ৬৭৬৬; সহীহ মুসলিম : ২২৯।

[107]. সূরা লুক্বমান ৩১ : ৬; সহীহুল বুখারী : ৫৫৯০; সহীহ মুসলিম : ৪০৩৯।

[108]. সহীহ মুসলিম : ২২৯২।

[109]. সহীহ মুসলিম : ৩০৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ২২০৮; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৭৬; সহীহুল বুখারী : ৫৭৮৭।

[110]. সহীহুল বুখারী : ৫৮৮৫; সুনান ইবনু মাজাহ : ১৯০৪; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩২০৭; ৩২০৮; সহীহুল বুখারী : ৫৮৮৬; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯৩২; মুসনাদ আহমাদ : ২১২৩।

[111]. সহীহ মুসলিম : ৬৪১, সুনান আবূ দাঊদ : ২৫; সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৬৭; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৯১।

[112]. সহীহুল বুখারী : ৩৩১৮; সহীহ মুসলিম : ৫৯৮৯।

[113]. সহীহুল বুখারী : ৫৫১৫; সহীহ মুসলিম : ৫১৭৪।

[114]. সহীহুল বুখারী : ৫৪৮১; সহীহ মুসলিম : ৪১০৬।

[115]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩।

গুনাহ বা পাপগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় :

১. কাবীরা গুনাহ বা বড় গুনাহ; যেমন শির্ক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা, বিদ্‘আত করা, মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি।

২. সগীরা গুনাহ বা ছোট গুনাহ; যেগুলো কাবীরা গুনাহ নয় এমন গুনাহ; যেমন, পরনারীর প্রতি দ্বিতীয়বার তাকানো ইত্যাদি।

কাবীরা গুনাহের তালিকা

কাবীরা গুনাহের কোন সুনির্দিষ্ট তালিকা কুরআন ও হাদীসে একই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে আসেনি। বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস গবেষণা করে ‘আলিমগণ কাবীরা গুনাহের তালিকা প্রণয়ন করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন ইমাম হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ)[1]। তিনি তার কিতাব ‘‘আল কাবায়ির’’-এর মধ্যে অর্ধশতাধিক কাবীরা গুনাহের তালিকা দিয়েছেন। সম্প্রতি সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন ‘আবদুল্লাহ আত্ তুয়াইজিরী একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন যা তার রচিত ইসলামী ফিকহ বিশ্বকোষ-এর ১৬ তম পর্বে ‘‘কিতাবুল কাবায়ির’’ নামে উল্লিখিত হয়েছে। নিম্নে সেই তালিকাটি পেশ করা হলো। উল্লেখ্য যে, তিনি তার লেখায় প্রতিটি কাবীরা গুনাহর দলীল উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা কলেবর বৃদ্ধির শঙ্কায় দলীলগুলোর মূলপাঠ (Text) উল্লেখ না করে শুধু সূত্র (রেফারেন্স) উল্লেখ করে দিয়েছি। যাতে করে কোন পাঠক চাইলে সেই সূত্র ধরে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।[2]

(ক) অন্তরের কাবীরা গুনাহ :

১. কুফর[3]

২. শির্ক[4]

৩. অহংকার[5]

৪. মুনাফিক্বী[6]

৫. রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমল[7]

৬. যাদু করা[8]

৭. অশুভ লক্ষণ বিশ্বাস করা[9]


(খ) জ্ঞান ও জিহাদ সংক্রান্ত কাবীরা গুনাহ :

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে জ্ঞান অর্জন করা[10]

৯. জ্ঞান গোপন করা[11]

১০. আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করা[12]

১১. জ্ঞান অনুযায়ী ‘আমল না করা[13]

১২. আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দানে বিরত থাকা বা দা‘ওয়াতী কাজ ছেড়ে দেয়া[14]

১৩. সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া[15]

১৪. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে বিরত থাকা বা তা ছেড়ে দেয়া[16]

১৫. ভ্রান্তদলের পক্ষে যুদ্ধ করা[17]

১৬. যুদ্ধে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদেরকে সাহায্য করা[18]


(গ) ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে কাবীরা গুনাহ

১৭. পেশাব হতে বেঁচে/সতর্ক না থাকা (যথাযথভাবে পরিচ্ছন্ন না থাকা)[19]

১৮. সলাত পরিত্যাগ করা[20]

১৯. সলাতে ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা[21]

২০. সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা[22]

২১. যাকাত দানে বাধা দেয়া বা যাকাত না দেয়া[23]

২২. সিয়াম পরিত্যাগ করা[24]

২৩. হাজ্জ পরিত্যাগ করা[25]

২৪. আল্লাহকে স্মরণ না করা[26]


(ঘ) শাসন-প্রশাসন ও লেনদেনের ক্ষেত্রে কাবীরা গুনাহ

২৫. আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান ছাড়া শাসন/বিচার করা[27]

২৬. শাসক কর্তৃক নাগরিকদের ধোঁকাদান বা নাগরিকদের সাথে প্রতারণা করা[28]

২৭. অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা[29]

২৮. সূদ খাওয়া[30]

২৯. ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ ও অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা[31]

৩০. জুয়া খেলা[32]

৩১. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া[33]

৩২. শরীয়তের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা[34]

৩৩. স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে মূল্য গ্রহণ করা[35]

৩৪. অন্যায়ভাবে মালিকানা দাবি করা[36]

৩৫. মানুষের সাথে প্রতারণা করা[37]

৩৬. মিথ্যা ক্বসম করে পণ্য বিক্রয় করা[38]

৩৭. অন্যায় উদ্দেশে পণ্য মজুদ করা[39]

৩৮. মিথ্যা শপথ করা[40]

৩৯. দোষ গোপন ও মিথ্যা কথা বলে পণ্য বিক্রয় করা[41]

৪০. হারাম ব্যবসা করা[42]

৪১. যুলুম করে (অন্যায়ভাবে) কোন কিছু গ্রহণ করা[43]

৪২. সাক্ষ্য গোপন করা[44]

৪৩. জমিনের সীমানা/খুঁটি অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করা[45]


(ঙ) পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক কাবীরা গুনাহ

৪৪. অধীনদের ওপর অত্যাচার করা[46]

৪৫. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া[47]

৪৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা[48]

৪৭. কারো বংশ নিয়ে কটাক্ষ করা[49]

৪৮. বিনা কারণে মুসলিমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা[50]

৪৯. মন্দ নামে ডাকা[51]

৫০. প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করা[52]

৫১. মানুষকে কষ্ট দেয়া[53]

৫২. এমন কথা বলা যা বললে আল্লাহ তা‘আলা রাগান্বিত হন[54]

৫৩. মুসলিমকে কাফির বলা[55]

৫৪. বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করা[56]

৫৫. স্বামীর অবাধ্য হওয়া[57]

৫৬. স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করা[58]

৫৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়া[59]

৫৮. মুত্‘আহ্ (সাময়িক চুক্তিভিত্তিক)বিবাহ করা[60]

৫৯. গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ) মহিলার সাথে বিবাহহীন অবস্থায় নির্জনে অবস্থান করা[61]

৬০. সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান না করা[62]

৬১. দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা[63]


(চ) চারিত্রিক কাবীরা গুনাহ

৬২. মিথ্যা বলা[64]

৬৩. সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া[65]

৬৪. গীবত ও চোগলখোরী করা[66]

৬৫. আমানতের খিয়ানত করা[67]

৬৬. অভিশাপ দেয়া[68]

৬৭. সাহাবীদেরকে গালি দেয়া[69]

৬৮. অসমীচীন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা[70]

৬৯. সীমালঙ্ঘন করা[71]

৭০. অত্যাচার ও শত্রুতা করা[72]

৭১. মারাত্মক ঝগড়া বিবাদ করা[73]

৭২. অশ্রাব্য গালিগালাজ করা[74]

৭৩. হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা[75]

৭৪. গর্ব ও অহংকার করা[76]

৭৫. কৃপণতা করা[77]

৭৬. বাড়াবাড়ি করা[78]

৭৭. বিশ্বাসঘাতকতা করা[79]

৭৮. অপকৌশল ও ঠকবাজি করা[80]

৭৯. অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা[81]

৮০. আত্মহত্যা করা[82]

৮১. অপচয় করা[83]

৮২. অপব্যয় করা[84]

৮৩. স্বেচ্ছাচারিতা করা[85]

৮৪. গোয়েন্দাগিরি করা[86]

৮৫. অন্যায়ভাবে রাগান্বিত হওয়া[87]

৮৬. অশ্লীল ভাষায় কথা বলা[88]

৮৭. আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ মনে করা[89]

৮৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া[90]

৮৯. অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা[91]

৯০. উপকার করে খোঁটা দেয়া[92]

৯১. আল্লাহর ওয়ালীদের সাথে শত্রুতা করা[93]

৯২. আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা[94]

৯৩. হারামের মধ্যে ডুবে থাকা[95]

৯৪. ওয়াদা ভঙ্গ করা[96]

৯৫. মাদকাসক্ত হওয়া[97]

৯৬. যিনা বা ব্যভিচার করা[98]

৯৭. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া[99]

৯৮. চুরি করা[100]

৯৯. ডাকাতি করা[101]

১০০. চেহারায় দাগ কাটা ও চিহ্ন দেয়া[102]

১০১. সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করা[103]

১০২. পুরুষের রেশম বা স্বর্ণের পোশাক পরিধান করা[104]

১০৩. অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা[105]

১০৪. জানা সত্ত্বেও অন্যকে পিতা দাবী করা[106]

১০৫. বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ও বাজনা শোনা[107]

১০৬. কবরের উপর বসা[108]

১০৭. টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া[109]

১০৮. পুরুষদের মহিলার বেশ এবং মহিলাদের পুরুষদের বেশ ধারণ করা[110]

১০৯. ছায়ায় ও রাস্তায় প্রসাব-পায়খানা করা[111]

১১০. মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন জন্তুকে আটকে রাখা[112]

১১১. কোন জন্তুকে তীর বা গুলি লাগানোর ট্রেনিং-এর লক্ষ্য বস্তু বানানো[113]

১১২. বিনা কারণে কুকুর পোষা[114]

১১৩. মৃত জন্তু ও রক্ত খাওয়া[115]

উল্লেখ্য যে, উপর্যুক্ত তালিকায় বর্ণিত গুনাহগুলোর মধ্যে শাস্তির পরিমাণ ও ভয়ংকরিতার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর কোনটি পৃথিবীতে দন্ডনীয় অপরাধ আবার কোনটির পৃথিবীতে দন্ড উল্লেখ নেই। আবার কিছু গুনাহ কাবীরা গুনাহ কিনা তা নিয়ে ‘আলিমগণের মধ্যে সঙ্গত কারণেই মতবিরোধ রয়েছে। তাছাড়া যেহেতু এখানে সংক্ষেপে শুধু গুনাহগুলোর শিরোনাম উল্লেখ করা হয়েছে সেহেতু উল্লিখিত শিরোনামগুলোর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা বোঝা জরুরি। নতুবা ভুল বোঝার আশঙ্কা রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সংশিস্নষ্ট বইপত্র পড়ে ও ‘আলিমদের জিজ্ঞেস করে স্পষ্ট করে বুঝে নেয়া উচিত।

[1]. জন্ম : ৬৭৩ হি. - মৃত্যু : ৭৪৮ হি.।

[2]. এই তালিকাটি রাজশাহীর মাকতাবাতুস সুন্নাহ্ থেকে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে।

[3]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৬১-১৬২; সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১০৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫০-১৫১।

[4]. সূরা আল বায়্যিনাহ্ ৯৮ : ৬; সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭২; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান বায়হাক্বী : ১৭১২৮; সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯০১,৩০১৯।

[5]. সূরা আল মু’মিন ৪০ : ৬০; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭২-১৭৩; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ৩৪; সহীহুল বুখারী : ৬০৭১, সহীহ মুসলিম : ৭৩৬৬, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৫৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৬৪৯।

[6]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪৫; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৮; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৭।

[7]. সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : ১১০; সহীহ মুসলিম : ৭৬৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২০২, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৯৩৮; সহীহ মুসলিম : ৫০৩২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩১৩৭, মুসতাদরাক হাকিম : ২৫২৪।

[8]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১০২; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান বায়হাক্বী : ১৭১২৮।

[9]. সূরা ইয়াসীন ৩৬ : ১৮-১৯; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৯১০, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৬১৪।

[10]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪২; সহীহ মুসলিম : ৫০৩২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩১৩৭, মুসতাদরাক হাকীম : ২৫২৪, ৩৬৪, মুসনাদ আহমাদ : ২৮৭৭।

[11]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৯-১৬০; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৭৪-১৭৫; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৫৮, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৬৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৬৪, হাদীসটি হাসান, সহীহ।

[12]. সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৪৪; সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১১৬-১১৭; সহীহুল বুখারী : ১১০, সহীহ মুসলিম : ৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ৩০, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৫১।

[13]. সূরা আস্ সফ্ ৬১ : ২-৩, সহীহুল বুখারী : ৩২৬৭, সহীহ মুসলিম : ৭৬৭৪।

[14]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৪-১০৫; সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮।

[15]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭৮-৭৯; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৮০; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৪-১০৫।

[16]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৮-৩৯; সহীহ মুসলিম : ৫০৪০, সুনান আবূ দাঊদ : ২৫০২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৩০৯৭; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[17]. সহীহ মুসলিম : ৪৮৯২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১১৪, সহীহ ইবনু হিববান : ৪৫৮০।

[18]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৩; সহীহ মুসলিম : ৪৮০৩, সুনান আন্ নাসায়ী (কুবরা) : ১১৫৩৬।

[19]. সহীহুল বুখারী : ২১৬, সহীহ মুসলিম : ৭০৩, সুনান আন্ নাসায়ী : ২০৬৭, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৫৫।

[20]. সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫৯; সহীহ মুসলিম : ২৫৬, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ৬৪৯৫।

[21]. সহীহুল বুখারী : ৬৯১, সহীহ মুসলিম : ৯৯২।

[22]. সহীহুল বুখারী : ৫১০, সহীহ মুসলিম : ১১৬০, মুয়াত্ত্বা মালিক : ১৬২, ৫২৬, সুনান আন্ নাসায়ী : ৭০১।

[23]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৮০; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৪; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৫; সহীহুল বুখারী : ১৪৬০, সহীহ মুসলিম : ২৩৪৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৫৫৯; সহীহ মুসলিম : ২৩৩৯, সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৫৮, সুনান আন্ নাসায়ী : ২৪৪২।

[24]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৩; সহীহুল বুখারী : ৮, সহীহ মুসলিম : ১২২, ১২৩।

[25]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৯৭; সহীহুল বুখারী : ৮, সহীহ মুসলিম : ১২২।

[26]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০৫; মুসনাদ আহমাদ : ৯৫৮০, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৩৮০।

[27]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৪; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৫; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪৭; সহীহুল বুখারী : ৭১৫১, সহীহ মুসলিম : ৩৮৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭৯০১।

[28]. সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৪২; সূরা সোয়াদ ৩৮ : ২৬; সহীহুল বুখারী : ৭১৫০, সহীহ মুসলিম : ৪৮৩৪।

[29]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৮; সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯।

[30]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৮-২৭৯; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৩০-১৩১; সহীহ মুসলিম : ৪১৭৭।

[31]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০; সহীহুল বুখারী : ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম : ২৭২, সুনান আবূ দাঊদ : ২৮৭৪।

[32]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯০-৯১।

[33]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ৩০ সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯।

[34]. সহীহুল বুখারী : ২৪২৪, সহীহ মুসলিম : ৪১৩৬।

[35]. সহীহুল বুখারী : ২২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৪৪২, মুসনাদ আহমাদ : ৮৬৭৭।

[36]. সহীহুল বুখারী : ৩৫০৮, সহীহ মুসলিম : ২২৬, সহীহ ইবনু হিববান : ১৫৩৩৫।

[37]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯; সহীহ মুসলিম : ২৯৫, সহীহ ইবনু হিববান : ৪৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ২১২০।

[38]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৭৭; সহীহুল বুখারী : ২৩৬৯, সহীহ মুসলিম : ৩১০; সহীহুল বুখারী : ২০৮৭, সহীহ মুসলিম :৪২০৯; সহীহ মুসলিম : ৩০৬।

[39]. সহীহ মুসলিম : ৪২০৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৪৭।

[40]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৭৭; সহীহুল বুখারী : ২৩৫৬, সহীহ মুসলিম : ৩৭২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৫৯৭৬, সুনান আবূ দাঊদ : ৩২৪২; সহীহ মুসলিম : ৩৭০, সুনান দারিমী : ২৬৪৫, মুয়াত্ত্বা মালিক : ১১।

[41]. সহীহুল বুখারী : ২০৮২, সহীহ মুসলিম : ৩৯৩৭; সহীহুল বুখারী : ৬৮৭৪, সহীহ মুসলিম : ২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ২৫৭৫, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১০০।

[42]. সূরা লুক্বমান ৩১ : ৬; সহীহুল বুখারী : ২২২৩, সহীহ মুসলিম : ৪১৩২, সুনান ইবনু মাজাহ : ২১৬৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৮৬; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৬৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৩৮০, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১০৭৭৮।

[43]. সূরা আল ফুরক্বান ২৫ : ১৯; সহীহুল বুখারী : ২৪৫২, সহীহ মুসলিম :৪২২০; সহীহুল বুখারী : ২৪৫৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ২১৬৬।

[44]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৮৩; সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২২৮।

[45]. সহীহ মুসলিম : ৫২৩৯, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪৪৪২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭০১৭।

[46]. সহীহ মুসলিম : ৪৮২৬, সুনান আন্ নাসায়ী : ৮৮২২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ২০৪৬৬; সহীহ মুসলিম : ৩৮৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৭৯০১।

[47]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৩-২৪; সহীহুল বুখারী : ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম : ২৬৯, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯০১, ৩০১৯; সহীহুল বুখারী : ৫৯৭৩, সহীহ মুসলিম : ২৭৩, সুনান আবূ দাঊদ : ৫১৪১।

[48]. সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ২২-২৩; সহীহুল বুখারী : ৫৯৮৯, সহীহ মুসলিম : ৬৬৮৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩৪৩৪, ৩৪৩৬; সহীহুল বুখারী : ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম : ৬৬৮৫, সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৯৬।

[49]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সহীহ মুসলিম : ২২০৩, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১০০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৫৩৫।

[50]. সহীহুল বুখারী : ৬০৭৭, সহীহ মুসলিম : ৬৬৯৭, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১১, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৯৩২; সহীহ মুসলিম : ৬৭০৯, মুসনাদ আহমাদ : ৯১৯৯; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১৫, মুসনাদ আহমাদ : ১৭৯৩৫, মুসতাদ্রাক হাকীম : ৭২৯২।

[51]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সহীহুল বুখারী : ৬০৪৪, সহীহ মুসলিম : ২৩০, সুনান ইবনু মাজাহ : ৬৯, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১০৫; সহীহুল বুখারী : ৩০, সহীহ মুসলিম : ৪৪০৫।

[52]. সহীহুল বুখারী : ৬০১৬, মুসনাদ আহমাদ : ৮৪১১, ৮৪১২, ৮৪১৩; সহীহ মুসলিম : ১৮১, মুসনাদ আহমাদ : ৮৮৫৫, সহীহ ইবনু হিববান : ৫১০।

[53]. সূরা আল বুরূজ ৮৫ : ১০; সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহ মুসলিম : ৬৮২৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৬৬৬৫, সহীহ ইবনু হিববান : ২৮৭।

[54]. সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৫-৬৬; সহীহুল বুখারী : ৬৪৭৮, সহীহ মুসলিম : ৭৬৭২।

[55]. সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৪৫, সহীহ মুসলিম : ৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৭৮৭১।

[56]. সহীহুল বুখারী : ১৪৭৪, সহীহ মুসলিম : ২৪৪৫-২৪৪৬; সুনান ইবনু মাজাহ : ১৮৩৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৭৮৭১।

[57]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৪; সহীহুল বুখারী : ৩২৩৭, সহীহ মুসলিম : ৩৬১১, মুসনাদ আহমাদ : ৭৪৬৫; সহীহুল বুখারী : ৩০৪, সহীহ মুসলিম : ২৫০, সুনান ইবনু মাজাহ : ৪০০৩।

[58]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২৯; সহীহ মুসলিম : ৩৭২১, মুসনাদ আহমাদ : ৮৩৬৩, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১৪৭২৭; সহীহুল বুখারী : ৫১৮৬, সহীহ মুসলিম : ৩৭২০, সুনানুল কুবরা নাসায়ী : ৯০৯৫; সুনান আবূ দাঊদ : ২১৩৩, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১১৪১, সুনান আদ্ দারিমী : ২২৫২।

[59]. সহীহুল বুখারী : ৫১৯৪, সহীহ মুসলিম : ৩৬১১, সুনান আদ্ দারিমী : ২২৭৪; সহীহ মুসলিম : ৩৬১৩; সহীহুল বুখারী : ৩২৩৭; সুনান আবূ দাঊদ : ২১৪১।

[60]. সহীহ মুসলিম : ৩৪৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী : ৫৫১৯।

[61]. সহীহুল বুখারী : ৫২৩২, সহীহ মুসলিম : ৫৮০৩, সুনান আদ্ দারিমী : ২৬৮৪; সহীহুল বুখারী : ৩০০০৬; সহীহ মুসলিম : ৩৩৩৬; সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী : ১০১৩৪।

[62]. সহীহুল বুখারী : ২৫৮৭, সহীহ মুসলিম : ৪২৬৯; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩৬৮১; সহীহ ইবনু হিববান : ৫১০৩।

[63]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ১০৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৫৮; সহীহ মুসলিম : ৬৭৯৮; মুসনাদ আহমাদ : ১০৪২৭।

[64]. সূরা আল ‘আন্কাবূত ২৯ : ৬৮; সহীহুল বুখারী : ৬০৯৪, সহীহ মুসলিম : ৬৮০৩, সুনান আদ্ দারিমী : ২৭৫৭; সহীহুল বুখারী : ৩৩, সহীহ মুসলিম : ২২০; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৬৮৮; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৬৩২।

[65]. সূরা আন্ নূর ২৪ : ২৩; সূরা আন্ নূর ২৪ : ৪; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[66]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১২; সূরা আল ক্বলাম ৮৬ : ১০-১৩; সহীহ মুসলিম : ৬৭৫৮, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৮৭৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩৫৬১; সহীহুল বুখারী : ৬০৫৬; সহীহ মুসলিম : ৩০৩।

[67]. সূরা আল আনফাল ৮ : ২৭; সহীহুল বুখারী : ৩৪; সহীহ মুসলিম : ২১৯।

[68]. সহীহুল বুখারী : ৬০৪৭, সহীহ মুসলিম : ২১১০; সহীহ মুসলিম : ৬৭৭৭; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯০৭।

[69]. সহীহুল বুখারী : ৩৬৭৩, সহীহ মুসলিম : ৬৬৫১, সুনান ইবনু মাজাহ : ১৬১, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৬৫৮; সহীহুল বুখারী : ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম : ২৪৬; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৯০০।

[70]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১১; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৫; সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৬।

[71]. সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৪২; সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৩; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯০২, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৫১১; সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২১১।

[72]. সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : ২৯; সূরা কফ ৫০ : ২৪-২৬; সূরা হূদ ১১ : ১০২; সহীহুল বুখারী : ৪৬৮৬, সহীহ মুসলিম : ৬৭৪৬, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩১১০; সহীহুল বুখারী : ২৪৪২, সহীহ মুসলিম : ৬৭৪৩, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৮৯৩।

[73]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ৩; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৫; সহীহুল বুখারী : ২৪৫৭; সহীহ মুসলিম : ৬৯৫১।

[74]. সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৮; সহীহুল বুখারী : ৪৮; সহীহ মুসলিম : ২৩০।

[75]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১০৯; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৪; সহীহ মুসলিম : ৬৭০১।

[76]. সূরা গাফির/আল মু’মিন ৪০ : ৬০; সূরা লুক্বমান ৩১ : ১৮; সহীহ মুসলিম : ২৭৫; সুনান ইবনু মাজাহ : ৫৯; সহীহুল বুখারী : ৪৯১৮; সহীহ মুসলিম : ৭৩৬৬।

[77]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৮০; সুনান আবূ দাঊদ : ১৬৯৮; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৪১৬১।

[78]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭৭; মুসনাদ আহমাদ : ১৮৫১; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩০৫৭; সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৬১; সহীহ মুসলিম : ৩২৩; সুনান আদ্ দারিমী : ২৫৩২।

[79]. সহীহুল বুখারী : ৩১৮৮; সহীহ মুসলিম : ৪৬২৭; সহীহ মুসলিম : ৪৬৩৬; বায়হাক্বী : ১৬৬৩৫।

[80]. সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১০; সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ৪৩; সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৪২; সহীহ মুসলিম : ৭৩৮৬, মুসনাদ আহমাদ : ১৭৪৮৪।

[81]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ৯৩; সূরা আল ফুরক্বান ২৫ : ৬৮-৭০; সহীহুল বুখারী : ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম : ২৭২।

[82]. সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৯; সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩০; সহীহুল বুখারী : ৩৪৬৩; সহীহ মুসলিম : ১১৩।

[83]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১; সূরা আল মু’মিন ৪০ : ৪৩।

[84]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৬; সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ২৭; সুনান আবূ দাঊদ : ২৮৭২; সুনান আন্ নাসায়ী : ৩৬৬৮; সুনান ইবনু মাজাহ : ২৭১৮।

[85]. সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৫৫-৫৬; সূরা আন্ না-যি‘আ-ত ৭৯ : ৩৭-৩৯; সূরা আন্ নাবা ৭৮ : ২১-২২।

[86]. সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১২; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৪, সহীহ মুসলিম : ৬৭০১; সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৮৪৯, সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯১০; সহীহুল বুখারী : ৭০৪২; বায়হাক্বী : ১৪৫৭২।

[87]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০০; সহীহুল বুখারী : ৬১১৬, মুসনাদ আহমাদ : ১০০১১; সহীহুল বুখারী : ৩৩৮২, সহীহ মুসলিম : ৬৮১২।

[88]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৩; সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৯০; সহীহুল বুখারী : ৬০৩২; সহীহ মুসলিম : ৬৭৬১।

[89]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৯৯; সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৪৫-৪৭।

[90]. সূরা ইউসুফ ১২ : ৮৭; সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৮৩; সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩; সূরা আল হিজর ১৫ : ৫৫-৫৬; সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ৪৯।

[91]. সূরা আল ফাত্হ ৪৮ : ৬; সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ২২-২৩; সহীহুল বুখারী : ৬০৬৬, সহীহ মুসলিম : ৬৭০১।

[92]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬৪; সহীহ মুসলিম : ৩০৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ২২০৮; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৭৪।

[93]. সূরা আল বুরূজ ৮৫ : ১০; সহীহুল বুখারী : ৬৫০২; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১২৪৭।

[94]. সূরা আল মুজাদালাহ্ ৫৮ : ২২; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৫১।

[95]. সূরা আল হাজ্জ ২২ : ২৫; সহীহুল বুখারী : ৬৮৮২; বায়হাক্বী : ১৫৯০২।

[96]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭; সূরা আর্ রা‘দ ১৩ : ২৫; সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩; সহীহ মুসলিম : ৪৮৯২, সুনান আন্ নাসায়ী : ৪১১৪।

[97]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯০-৯১; সহীহ মুসলিম : ৫৩৩৫, মুসনাদ আহমাদ : ১৪৮৮০; সহীহুল বুখারী : ৫৫৭৫, সহীহ মুসলিম : ৫৩৪১।

[98]. সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৩২; সূরা আন্ নূর ২৪ : ২-৩।

[99]. সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৮০-৮৪; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৪৬২, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ১৪৫৬।

[100]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩৮; সহীহুল বুখারী : ২৪৭৫, সহীহ মুসলিম : ২১১; সহীহুল বুখারী : ৬৭৬৩; সহীহ মুসলিম : ৪৫০৩।

[101]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩৩।

[102]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম : ৫৬৭৪।

[103]. সহীহুল বুখারী : ৫৪২৬, সহীহ মুসলিম : ৫৫২১; সহীহ মুসলিম : ৫৫০৯।

[104]. সহীহুল বুখারী : ৫৮৩৪; সহীহ মুসলিম : ৫৫৩১; সহীহ মুসলিম : ৫৫৯৩।

[105]. সহীহ মুসলিম : ৬৮৩২।

[106]. সহীহুল বুখারী : ৬৭৬৬; সহীহ মুসলিম : ২২৯।

[107]. সূরা লুক্বমান ৩১ : ৬; সহীহুল বুখারী : ৫৫৯০; সহীহ মুসলিম : ৪০৩৯।

[108]. সহীহ মুসলিম : ২২৯২।

[109]. সহীহ মুসলিম : ৩০৬, সুনান ইবনু মাজাহ : ২২০৮; সুনান আবূ দাঊদ : ৩৪৭৬; সহীহুল বুখারী : ৫৭৮৭।

[110]. সহীহুল বুখারী : ৫৮৮৫; সুনান ইবনু মাজাহ : ১৯০৪; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ৩২০৭; ৩২০৮; সহীহুল বুখারী : ৫৮৮৬; সুনান আবূ দাঊদ : ৪৯৩২; মুসনাদ আহমাদ : ২১২৩।

[111]. সহীহ মুসলিম : ৬৪১, সুনান আবূ দাঊদ : ২৫; সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ : ৬৭; শারহুস্ সুন্নাহ্ বাগাভী : ১৯১।

[112]. সহীহুল বুখারী : ৩৩১৮; সহীহ মুসলিম : ৫৯৮৯।

[113]. সহীহুল বুখারী : ৫৫১৫; সহীহ মুসলিম : ৫১৭৪।

[114]. সহীহুল বুখারী : ৫৪৮১; সহীহ মুসলিম : ৪১০৬।

[115]. সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩।

গুনাহের পরকালীন শাস্তির কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই গুনাহের ইহকালীন কুপ্রভাব সম্পর্কে জানি না। আসলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে গুনাহের অনেক কুপ্রভাব রয়েছে। গুনাহ আমাদের জীবনযাপনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে। কখনো কখনো ব্যক্তির করা গুনাহের প্রভাব ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কখনো সেই প্রভাব ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এমনকি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

আমরা নিয়মিত গুনাহ করে যাচ্ছি। অথচ এসব গুনাহ আমাদের জীবনে কিভাবে কুপ্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে তা আমরা অনেকেই বুঝি না, বোঝার চেষ্টাও করি না। খারাপ থেকে বাঁচার জন্যই খারাপকে চিনতে হবে।

কবি আবূ ফারাস আল হামদানী[1] বলেছেন :

عرفت الشَّرَّ لا للشَّر ... لكن لتوقِّيهِ

ومن لا يعرف الشَّرَّ ... من النَّاس يقع فيهِ

‘‘আমি খারাপকে চিনেছি, খারাপ কিছু করার জন্য নয় বরং খারাবী থেকে বাঁচার জন্য; আর যে মানুষ খারাপকে চিনবে না সে তাতে পতিত হবে।’’[2]

কিন্তু কুরআন, হাদীস এবং সালাফে সালিহীনের বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে জানা যায়, এই গুনাহগুলো আমাদের জীবনে কী ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করছে। গুনাহ থেকে বাঁচার অনুভূতি মনের মধ্যে তৈরি করার জন্য গুনাহের কুপ্রভাব জানা জরুরি। তাই গুনাহ মাফের উপায় বর্ণনা করার আগে আমাদের জীবনে গুনাহের কিছু প্রভাব আলোচনা করা জরুরি মনে করছি। নিম্নে কিছু কুপ্রভাব উল্লেখ করা হলো :


১. জ্ঞান ও মুখস্থশক্তি কমে যাওয়া :

জ্ঞান ও মুখস্থ শক্তি আল্লাহর দেয়া অনন্য নি‘আমত। গুনাহের কারণে আল্লাহ এই নি‘আমত তুলে নেন। ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)[3]একদিন মাদীনায় ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)[4]-এর সামনে বসা ছিলেন। তখন ইমাম মালিক ইমাম শাফি‘ঈকে দেখে বুঝলেন যে, ছেলেটির মধ্যে প্রতিভা আছে। তাই তিনি তাকে নসীহত হিসেবে বলেন,

إني أرى الله قد ألقى على قلبك نوراً فلا تطفئه بظلمة المعصية

‘‘আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ তোমার অন্তরে আলো (জ্ঞান) দান করেছেন, অতএব তুমি এই আলোকে গুনাহের অন্ধকার দিয়ে নিভিয়ে দিও না।’’

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) নিজেই বলেন :

شكوت إلى وكيع سوء حفظي *** فأرشدني إلى ترك المعاصي
وأخبرني بأن العلم نور *** ونور الله لا يهدى لعاصي

‘‘আমি আমার শিক্ষক ওয়াকি‘-এর নিকট দুর্বল মুখস্থশক্তির ব্যপারে অভিযোগ করলাম (অর্থাৎ আমি বললাম যে, আমার মুখস্থশক্তি/স্মৃতিশক্তি দুর্বল। এখন আমি কী করতে পারি?) জবাবে তিনি আমাকে বললেন, আমি যেন গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করি। তিনি আরও বললেন, জেনে রাখো, জ্ঞান হচ্ছে আলো। আর আল্লাহর আলো তিনি কোন গুনাহগারকে দেন না।’’[5]

অনেকে বিভ্রান্ত হন যখন দেখেন, কোন গুনাহগারকেও আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান ও মুখস্থশক্তি দান করেন। এটা কেন? এর উত্তর জানতে নিচের আয়াত দু’টি পড়ুন :

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِىْ آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ -175 وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَكِنَّهٗ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ 176

‘‘আর তুমি তাদের নিকট সে ব্যক্তির সংবাদ পাঠ কর, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তার পেছনে লেগেছিল। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মতো। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহবা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব তুমি কাহিনীসমূহ বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে।’’[6]

ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাউযিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)[7] বলেন,

"ففي الآية دليل على أنه ليس كل من آتاه الله العلم فقد رفعه به، إنما الرفعة بالعلم درجة فوق مجرد إتيانه"

‘‘এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহ যাকে জ্ঞান দান করেন তাকেই উচ্চমর্যাদা দান করেন না। যথাযথ জ্ঞানের মাধ্যমে উচ্চমর্যাদা লাভ শুধু জ্ঞানার্জনের চেয়ে অনেক উত্তম ব্যাপার।’’

উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা গেলো যে, আল্লাহ কোন গুনাহগারকে জ্ঞানের আলো দেন না। বাহ্যিকভাবে কাউকে দিয়েছেন বলে দেখা গেলে বুঝে নিতে হবে যে, এটি তার জন্য পরীক্ষা। ক্বিয়ামাতের বিচারের মাঠে তার এই জ্ঞান তার বিরুদ্ধেই প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে। তাই জ্ঞান ও মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির জন্য এবং অর্জিত জ্ঞান ধরে রাখার জন্য গুনাহের কাজ বর্জনের ও জ্ঞানানুযায়ী ‘আমলের কোন বিকল্প নেই। সকল মানুষের বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে বেশি সচেতন হওয়া জরুরি।

২. রিযক্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া :

গুনাহের কুপ্রভাবগুলো মধ্যে অন্যতম হলো, গুনাহ করলে তা গুনাহকারীর জীবিকা কমিয়ে দেয় বা সে বরকতপূর্ণ জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা অনেকেই একসময় ভালো ও পর্যাপ্ত খাবার এবং অন্যান্য নি‘আমত ভোগ করলেও হঠাৎ দেখি রিযক্ব ও নি‘আমত কমে যাওয়া শুরু করেছে। তখন আমরা হতাশ হই, এর কারণ খুঁজি। আসল কারণের কথা হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে। সাওবান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

«لَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُه”»

‘‘দু‘আ ব্যতীত আর কিছুই ভাগ্যকে ফেরায় (পরিবর্তন করে) না, পুণ্য ব্যতীত আর কিছু্ আয়ুকে বাড়ায় না এবং কৃত পাপের কারণেই বান্দা জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’’[8]


৩. আল্লাহর আনুগত্য কঠিন মনে হওয়া :

গুনাহের কাজের অন্যতম কুপ্রভাব হলো আল্লাহর আদেশ-নিষেধ না মানা এবং নিজের মনের ইচ্ছার লাগামহীন অনুসরণ করা। মানুষ যখন গুনাহ করতে থাকে এবং গুনাহের পরিমাণ বাড়াতে থাকে তখন ধীরে ধীরে তার ‘ইবাদাতের পরিমাণ কমতে থাকে, ঈমান সঙ্কুচিত হতে থাকে, ‘ইবাদাতের প্রতি মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেয়, আল্লাহর আনুগত্য করতে না পারলে দুঃখ বা আফসোস লাগে না। গুনাহের প্রভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করা কঠিন মনে হতে থাকে। অন্যায়-অশ্লীলতার চর্চায় সুখ লাভ করে এবং তা অভ্যাসে পরিণত হয়।

আল্লাহর আনুগত্য ও শয়তানের আনুগত্য একই সাথে সমান গতিতে চলতে পারে না। তাই শয়তানের আনুগত্যের মাধ্যমে গুনাহ অর্জন করতে থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করতে মন আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যারা আল্লাহর আনুগত্যে অনীহাবোধ করে, অলসতাবোধ করে অথচ তারা একসময় ‘ইবাদাতে মনোযোগী ছিল এবং অন্যকেও দা‘ওয়াত দিত তখন বুঝে নিতে হবে যে, তার উপরে তার কৃত গুনাহের কুপ্রভাব পড়েছে। তাই সে ইবাদাতে গাফিল ও পিছিয়ে। তাইতো যারা কাফির তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে মৃত বলেছেন; তারা জীবিত নয়। (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ২১) অর্থাৎ কাফিররা শারীরিকভাবে জীবিত থাকলেও আত্মিক ও মানসিকভাবে তারা মৃত।


৪. অন্তর মরে যাওয়া ও অপমানিত হওয়া :

গুনাহ মানুষের অন্তরকে মেরে ফেলে। এর কারণে অন্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। গুনাহে লিপ্ত থাকা অসম্মানেরও কারণ। সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহর অবাধ্যতা করে সম্মানিত হওয়া যায় না। বরং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়া যায়। ফলে সে সকলের আন্তরিক ভালোবাসায় সিক্ত হয়।

আল্লাহর ভালোবাসা পেলে যেমন মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া যায় তেমনি আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তার বিরাগভাজন হতে হয় এবং অপমানিত হতে হয়।

ইমাম ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহিমাহুল্লাহ)[9] বলেন :

رأيت الذنوب تميت القلوب وقد يورث الذل إدمانها

وترك الذنوب حياة القلوب وخير لنفسك عصيانها

‘‘আমি দেখেছি গুনাহ অন্তরকে মেরে ফেলে আর সর্বদা গুনাহে লিপ্ত থাকা অপমান নিয়ে আসে। গুনাহ পরিত্যাগ করা অন্তরের বাঁচিয়ে রাখে আর নফস্ বা প্রবৃত্তির অনুসরণ না করার মধ্যেই কল্যাণ নিহীত।’’


৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়া :

মানুষের গুনাহের কারণে দুনিয়াতে বিভিন্ন রকমের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিপর্যয় হতে পারে স্থলভাগে, হতে পারে জলভাগে (সাগর-নদীতে), হতে পারে আকাশে, হতে পারে ফল-ফসলে, হতে পারে বাসস্থানে। এই বিপর্যয়ের কথাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

‘‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’’[10]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، قَالَ : أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ ، فَقَالَ : «يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ ، خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ ، وَأَعُوذُ بِاللهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ ، لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ ، حَتّٰى يُعْلِنُوا ، بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ ، الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا ، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللهِ ، وَعَهْدَ رَسُولِه# إِلَّا سَلَّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللهِ ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللهُ إِلَّا جَعَلَ اللهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ».

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, ‘‘হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।’’[11]


৬. সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা ও মনস্তাত্বিক রোগে ভোগা :

গুনাহগার ব্যক্তি সবসময় জানা-অজানা ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। তাকে দেখেই বোঝা যায় যে, সে ভীত, নিরাপত্তাহীন। যখন কেউ গুনাহ করে তখন সে আল্লাহর নিরাপত্তা থেকে বের হয়ে যায়। আর আল্লাহর আনুগত্য হচ্ছে এমন এক নিরাপত্তা যার ভিতরে কেউ ঢুকলে সে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে।

আর যে আল্লাহর আনুগত্যের নিরাপত্তা থেকে বের হয়ে যাবে সে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। সে মনে মনে ভাববে, কখন না জানি মৃত্যু চলে আসে, কখন না জানি শাস্তি চলে আসে। সে মৃত্যুকে ভয় পাবে। কারণ সে জানে যে, মারা গেলে পরেই তার প্রাপ্য শাস্তি শুরু হয়ে যাবে। আর মৃত্যুকে ভয় পাবার কারণে সে ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে। এভাবে সারাক্ষণ সে ভয়ের মধ্যে কাটাবে, হীনমন্যতায় ভুগবে। একটা পর্যায়ে তাকে ‘‘ভয়রোগ’’ গ্রাস করে ফেলবে, যা আজকাল পৃথিবীর সবচেয়ে মহামারী রোগ হিসেবে চিহ্নিত। ফলে সে কোন সৃজনশীল কাজ করতে পারবে না।


৭. মুসলিমদের শক্তি বিনষ্ট হওয়া :

গুনাহের প্রভাবে মুসলিমদের শক্তি বিনষ্ট হয়। কাফিররা আর মুসলিমদেরকে ভয় পায় না। বর্তমানেও এমন অবস্থাই সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই মুসলিমরাই ইসলামের প্রথম যুগে অস্ত্রশক্তিতে দুর্বল হওয়ার পরও শুধু ঈমানের ও ‘আমলের বলে বলিয়ান হয়ে কাফিরদের পরাজিত করেছিল। কিন্তু আজ মুসলিমরা গুনাহে নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের ঈমান ও ‘আমলের শক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে।

যে মুসলিমরা শত্রুর অস্ত্রের আঘাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলেও মৃত্যু পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছে সেই মুসলিমরাই আজ পায়ে একটি কাঁটা বিধঁলে ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না।

মুসলিমরা আজ ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় সংখ্যায় বেশি হলেও তাদেরকে আজ কাফির-মুশরিকরা পাত্তা দিচ্ছে না। এর কারণ কী? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মৃত্যুভয়। আর মৃত্যুভয় তৈরি হয় গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকলে, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন :

يُوشِكُ الأُمَمُ أَنْ تَدَاعٰى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ إِلٰى قَصْعَتِهَا فَقَالَ قَائِلٌ وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ قَالَ «بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِفَنَّ اللهُ فِى قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ». فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا الْوَهَنُ قَالَ حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ

‘‘অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের ওপর বিজয়ী হবে, যেমন খাদ্য গ্রহণকারী বড় পাত্রের দিকে আসে। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, আমাদের সংখ্যা কি তখন কম হবে? তিনি বলেন, না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মত। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের ভীরুতা দূর করে দেবেন। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! ‘আল ওয়াহ্‌ন’ কী? তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।[12]

৮. লজ্জা-শরম কমে যাওয়া :

গুনাহের কাজ করলে ধীরে ধীরে লজ্জা-শরম কমে যেতে থাকে। তখন সে যা ইচ্ছা তা-ই বলতে পারে, করতে পারে। হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

إِذَا لَمْ تَسْتَحْىِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ

‘‘যখন তোমার থেকে লজ্জা চলে যাবে তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো।’’[13]

অর্থাৎ লজ্জাহীন মানুষ যা ইচছা তা-ই করতে পারে। আর লজ্জার পুরোটুকুই কল্যাণ। যার লজ্জা নাই তার কাছে কল্যাণও থাকার কথা না। তাই লজ্জাহীন মানুষ কল্যাণহীন হতে পারে। আর যখন কারো মধ্যে কল্যাণ থাকবে না তখন তার কর্মকা- বিপথে পরিচালিত হবে। এগুলো সবই তার গুনাহের কুপ্রভাবে হয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেছেন :

وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ ‘‘লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’[14]


৯. আল্লাহর নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হওয়া :

গুনাহের কারণে ব্যক্তি আল্লাহর অনেক নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হয়। ‘আলী বলেন,

إذا كنت في نعمة فارعها.....فإن الذنوب تزيل النعم.

‘‘যদি তুমি আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে থাকো তাহলে তার যত্ন নাও। কারণ গুনাহ নি‘আমতকে দূর করে দেয়।’’

১০. গুনাহের কারণে গুনাহগার ও তার রবের মাঝে এবং তার ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও দুঃসম্পর্ক তৈরি হয় :

কোন এক পূর্ববর্তী বিদ্বান বলেছেন,

إني لأعصي الله ، فأرى ذلك في خلق دابتي وامرأتي

‘‘আমি যখন আল্লাহর অবাধ্য হই তখন তার কুপ্রভাব আমি আমার বাহন ও আমার স্ত্রীর আচার-আচরণে দেখতে পাই।’’


১১. দৈনন্দিন কাজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া ও সমস্যায় পড়া :

গুনাহের কুপ্রভাবে গুনাহগার যখনই কোনো কাজ করতে যায় তখনই সে তাতে বাধাপ্রাপ্ত ও সমস্যায় পতিত হয়। তার উপরে কাজটি কঠিন হয়ে যায়। এর বিপরীতে মুত্তাকী ব্যক্তি যখন কোনো কাজ করতে যায় তখন আল্লাহ তার জন্য সে কাজকে সহজ করে দেন। তবে তাকে আল্লাহ কখনো কখনো পরীক্ষাও করেন।


১২. গুনাহ গুনাহগারের জীবনকে অন্ধকারময় করে দেয় :

গুনাহগার ব্যক্তি তার অন্তরে অন্ধকার অনুভব করে। রাতের অন্ধকারে আলোহীন পথিকের যে অবস্থা হয় গুনাহের ভারে নিমজ্জিত ব্যক্তিরও তেমন অবস্থা হয়।

চোখ না থাকার কারণে যেমন অন্ধ ব্যক্তির সামনে দুনিয়ার সবকিছু অন্ধকার মনে হয় তেমনি গুনাহের কারণে চামড়ার চোখ থাকার পরও গুনাহের অন্ধকারে গুনাহগারও হাবুডুবু খায়। কারণ আল্লাহর আনুগত্য করাই হচ্ছে আসল আলো। আর তাঁর অবাধ্যতাই হচ্ছে অন্ধকার।

অন্ধকার যত বাড়তে থাকে আলোহীন পথিক যেমন বেশি পথ হারায় তেমনি গুনাহগারও যখন গুনাহ মাফ না করিয়ে নতুন নতুন গুনাহ করতে থাকে তখন ধীরে ধীরে সে বিদ্‘আত, বিভ্রান্তি ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ সে বুঝতেই পারে না যে সে বিপথে চলছে। একসময় সে কোন কিছুকেই গুনাহ মনে করে না। সবকিছুকেই বৈধ ও সঠিক কাজ মনে করে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস বলেন,

إن للحسنة ضياءً في الوجه، ونوراً في القلب ، وسعةً في الرزق، وقوةً في البدن، ومحبةً في قلوب الخلق، وإن للسيئة سواداً في الوجه ، وظلمةً في القلب، ووهناً في البدن ونقصاً في الرزق، وبغضةً في قلوب الخلق

‘‘সাওয়াবের কাজ হলো চেহারা উজ্জ্বলতা, অন্তরের আলো, রিয্ক্বের প্রশস্তি, শরীরের শক্তি এবং মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী। আর গুনাহ হচ্ছে চেহারার কলুষতা, অন্তরের অন্ধকার, শরীরের দুর্বলতা, রিয্ক্বের সংকট ও মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।’’


১৩. গুনাহের কারণে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় :

আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া গুনাহের আর যদি কোনো কুপ্রভাব না থাকতো তাহলে শাস্তি হিসেবে এটাই যথেষ্ট হতো। আমরা যদি একবার চিন্তা করে দেখি যে, গুনাহের শাস্তি হিসেবে আমরা আর আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবো না- এমন যদি হতো তাহলে তা কতই না ভয়াবহ একটি ব্যাপার হতো। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, আ-মীন।)

গুনাহের কারণে আল্লাহর আনুগত্যের পথ ও সুযোগ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে একটি, দু’টি, তিনটি করতে করতে আনুগত্যের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এসব আনুগত্যের পথগুলোর এক একটি দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম ছিল।


১৪. গুনাহ চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় :

গুনাহ ধীরে ধীরে গুনাহগারের অন্তরে গুনাহ থেকে বাঁচার ইচ্ছাকে দুর্বল করে দেয়। আর আরো বেশি গুনাহ করার ইচ্ছাকে শক্তিশালী ও বৃদ্ধি করে দেয়। তার অন্তর থেকে তাওবার ইচ্ছাকে দূর করে দেয়। একসময় সে পুরোপুরিভাবে তাওবাকে পরিত্যাগ করে। একসময় সে মিথ্যাবাদীদের মত শুধু মৌখিক ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ করে কিন্তু তার অন্তর থাকে গুনাহের সাথে বাঁধা। সে দিনরাত গুনাহ করতেই থাকে। আর এটিই হচ্ছে অন্তরের সবচেয়ে বড় রোগ। আর এটিই তাকে আসেত্ম আসেত্ম চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

১৫. গুনাহের কাজের প্রতি ঘৃণাভাব দূর হয়ে যায় :

নিয়মিত গুনাহ করতে থাকলে গুনাহ গুনাহগারের অন্তর থেকে গুনাহের প্রতি ঘৃণাভাব দূর করে দেয়। ফলে সে আর গুনাহকে খারাপ কিছু মনে করে না। তার কাছে গুনাহের কাজগুলো স্বাভাবিক মনে হয়। তাকে গুনাহের কাজ করতে মানুষ দেখছে বা মানুষ তার খারাপ দিক নিয়ে সমালোচনা করছে তাতেও তার কিছুই আশে যায় না। সে কিছুই মনে করে না। তার অন্তরে গুনাহের প্রতি কোনো ঘৃণা জাগে না।


১৬. গুনাহ অন্তরকে গাফিল করে দেয় :

গুনাহগার যখন অতিমাত্রায় গুনাহ করতে থাকে তখন তার অন্তরে মোহর পড়ে যায়। ফলে তার অন্তরে ভালো কিছুর প্রভাব পড়ে না। তখন সে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।[15]

উপরোল্লিখিত কুপ্রভাবগুলো ছাড়াও গুনাহের আরো অনেক কুপ্রভাব মানবজীবনে রয়েছে। অনেক প্রভাব রয়েছে যেগুলো শুধু ভুক্তভোগীই জানে এবং অনুভব করে। গুনাহের কুপ্রভাবে যেমন জীবন সংকীর্ণ ও কষ্টকর হয়ে যায় তেমনি গুনাহ থেকে মুক্তি জীবনকে করে উচ্ছ্বল, সফল ও সুখময়।

[1]. জন্ম : ৩২০ হি./৯৩২ ঈ. - মৃত্যু : ৩৫৭ হি./৯৬৮ ঈ.।

[2]. আল হামাসাহ আল মাগরিবিয়্যাহ, পৃ. ১২৪ (আল মাকতাবাতুশ শামিলাহ)।

[3]. জন্ম : ১৫০ হি./৭৬৭ ঈ. - মৃত্যু : ২০৪ হি./৮২০ ঈ.।

[4]. জন্ম : ৯৩ হি./৭১১ ঈ. - মৃত্যু : ১৭৯ হি./৭৯৫ ঈ.।

[5]. ই‘য়ানাতুত্ তালিবীন ‘আলা হাল্লি আলফাযি ফাতহিল মু‘ঈন, খ. ২, পৃ. ১৬৭।

[6] সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৭৫-১৭৬।

[7]. জন্ম ৬৯১ হি./১২৯২ ঈ. - মৃত্যু ৭৫১ হি./১৩৫০ ঈ.।

[8]. সুনান ইবনু মাজাহ : ৪০২২, মুসনাদ আহমাদ : ২২৪১৩; মিশকাত : ৪৯২৫, হাদীসটির প্রথমাংশ হাসান লিগাইরিহী, তবে শেষাংশের ইসনাদ য‘ঈফ।

[9]. জন্ম : ১১৮ হি. - মৃত্যু : ১৮১ হি.।

[10] সূরা আর্ রূম ৩০ : ৪১।

[11]. সুনান ইবনু মাজাহ : ৪০১৯, হাদীসটির সনদ হাসান।

[12]. সুনান আবূ দাঊদ : ৪২৯৯, মুসনাদে আহমাদ : ২২৩৯৭, হাদীসটি সহীহ।

[13]. সহীহুল বুখারী : ৬১২০।

[14]. সহীহুল বুখারী : ৯।

[15]. https ://islamqa.info/ar/23425; ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তার ‘‘আল জাওয়াব আল কাফী’’ গ্রন্থে উক্ত কুপ্রভাবগুলোর অনেকগুলো উল্লেখ করেছেন।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কাবীরা ও সগীরা সকল গুনাহ-ই কি মাফ হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, আল্লাহ চাইলে সকল গুনাহ-ই মাফ করতে পারেন। তবে তিনি কুরআনে বলে দিয়েছেন যে, তিনি শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ মাফ করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’’[1]

শির্ক ছাড়া অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তাওবাহ্ করার দরকার হয়। কিন্তু সগীরা গুনাহ মাফের জন্য সবসময় তাওবার প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কিছু ‘আমলের মাধ্যমে এসব ছোট-খাট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। তাই কাবীরা গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে সগীরা গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন,

إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا

‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কাবীরা গুনাহগুলো বা গুরুতর/বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[2]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ

‘‘যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া কাবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত থাকে। নিশ্চয় তোমার রব অপরিসীম ক্ষমাশীল।’’[3]

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلٰى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ

‘পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান; এর মাঝে সংঘটিত (সগীরা) গুনাহ মুছে ফেলে, যদি কাবীরা গুনাহ থেকে সে বেঁচে থাকে তাহলে (নতুবা নয়)।’[4]

অর্থাৎ কেউ যদি ফজরের সলাত আদায় করে, তারপর যোহরের সময় যোহরের সলাত আদায় করে তাহলে সে ফজরের সলাতের পর থেকে যোহরের সলাত পর্যন্ত যে সব সগীরা গুনাহ করেছে, যোহরের সলাত আদায় করার সাথে সাথে তার সেই গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। এ রকমই এক সপ্তাহে জুমু‘আহর সলাত আদায় করে পরের সপ্তাহের জুমু‘আর সলাত আদায় করলে এই দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিনের সগীরা গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে।

একইভাবে এ বছর যারা রমাযান মাসের সিয়াম পালন করেছে এবং পরবর্তী বছরও রযামানের সিয়াম পালন করলে তার এই দুই রমাযানের মাঝের এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে এই সময়গুলোতে কাবীরা গুনাহ করা যাবে না।

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

الصَّلاَةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ

‘‘পাঁচ ওয়াক্তের সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সব পাপের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি কাবীরা গুনাহসমূহ তাকে আবিষ্ট না করে (অর্থাৎ সে কোন কাবীরা গুনাহ না করে)।’’[5]

আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُه صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذٰلِكَ الدَّهْرَ كُلَّه

‘‘যে ব্যক্তি ফরয সলাত উপস্থিত হলে সে জন্য উত্তমরূপে উযূ করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকূ‘’ করবে। তাহলে তার সলাত পূর্বে সংঘটিত কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশির জন্য কাফ্ফারা বা মাফের অবলম্বন হয়ে যাবে। আর এ বিধান সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।’’[6]

সাধারণভাবে ভালো কাজ খারাপ কাজকে মুছে ফেলে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ

‘‘নিশ্চয় ভালো কাজগুলো মন্দকাজগুলোকে মিটিয়ে দেয়।’’[7]

উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ আল্লাহ তা‘আলা সাধারণ নেক কাজের মাধ্যমে এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। এর জন্য বিশেষ তাওবাহ্ জরুরি নয়। বিভিন্ন ‘আমলের মাধ্যমেই এসব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, কিছু কিছু কাবীরা গুনাহও বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

ذَاكَ جِبْرِيلُ أَتَانِي فَقَالَ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ

‘‘তিনি জিবরীল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে (অর্থাৎ শির্ক না করে) মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও’।’’[8]

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

إِنِّى لِأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولًا الْجَنَّةَ وَآخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا رَجُلٌ يُؤْتٰى بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ اعْرِضُوا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوبِه وَارْفَعُوا عَنْهُ كِبَارَهَا. فَتُعْرَضُ عَلَيْهِ صِغَارُ ذُنُوبِه فَيُقَالُ عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا وَعَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا. فَيَقُولُ نَعَمْ. لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يُنْكِرَ وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِ ذُنُوبِه أَنْ تُعْرَضَ عَلَيْهِ. فَيُقَالُ لَه فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ حَسَنَةً. فَيَقُولُ رَبِّ قَدْ عَمِلْتُ أَشْيَاءَ لا أَرَاهَا هَا هُنَا. فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُه

‘‘নিশ্চয় আমি সেই জান্নাতী ব্যক্তি সম্পর্কে জানি, যে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে। সে এমন এক ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, ‘ওর ছোট-ছোট পাপগুলো ওর কাছে পেশ কর এবং বড়-বড় পাপগুলো তুলে নাও।’ তারপর তার ছোট-ছোট পাপগুলো তার কাছে পেশ করা হবে এবং বলা হবে, ‘তুমি অমুক দিনে এই পাপ করেছ, অমুক দিনে এই এই পাপ করেছ? সে বলবে, হ্যাঁ। সে তো অস্বীকার করতে পারবে না। সে তার বড় পাপগুলো পেশ করার ভয়ে ভীত থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘তোমার প্রত্যেক পাপের স্থলে একটি করে পুণ্য দেয়া হল।’ তখন সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তো অনেক কিছু (এমন পাপ) করেছি, যা এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি না।’ এ ঘটনা বর্ণনা করে নাবী (সা.) এমনভাবে হেসে ফেললেন যাতে তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে গেল।’’[9]

উপরিউক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেলো আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ প্রেক্ষাপটে কিছু কাবীরা গুনাহ বান্দার অজান্তে তাওবাহ্ ছাড়াও মাফ করেন।

কাবীরা গুনাহ ক্ষমা সম্পর্কে ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)[10] বলেন :

أن الكبائر إنما تكفرها التوبة أو رحمة الله تعالى وفضله والله أعلم

‘‘কাবীরা গুনাহ শুধু তাওবাহ্ অথবা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের মাধ্যমে মাফ হয়। আল্লাহ অধিক জানেন।’’[11]

অধিকাংশ (জুমহূর) ‘আলিমগণের মতে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যমূলক বিভিন্ন ‘আমল এবং ফরয ‘আমলগুলো সগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে দেয়; কাবীরা গুনাহ মাফ করায় না। যা উপরিউক্ত আলোচনার প্রথমদিকের দলীলগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। কাবীরা গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাওবাহ্ করতে হবে। তবে হদ্দ বা দন্ড-বিধির আলোকে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত শাস্তির রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট কাবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায় যে কথা আমরা সামনে আলোচনা করবো।

সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)[12] এ ব্যাপারে ‘আলিমগণের মতভেদ উল্লেখ করার শেষে বলেন,

‘‘কিন্তু বলা যেতে পারে যে, আমরা এরূপ কথা বলা (মতভেদ করা) থেকে নীরব থেকে আল্লাহর নিকট এই আশা রাখব যে, তিনি (সগীরা-কাবীরা) সকল গুনাহকেই ক্ষমা করে দেবেন। বিশেষ করে যখন হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘তার পাপ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে।’’[13] আর আল্লাহর কাছে এই আশা রাখব যে, কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত না থাকলেও সে ক্ষমা বহাল থাকবে। বলাবাহুল্য, এ কথা বিচ্যুতি থেকে অধিক দূরে এবং আশার ব্যাপারে বেশি বলিষ্ঠ।’’[14]

আল্লাহ গাফুর (ক্ষমাশীল), রহীম (দয়ালু); তিনি চাইলে যে কোন ওয়াসীলায় আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। অতএব, আমরা সর্বদা গুনাহ মাফের ব্যাপারে আশাবাদী থাকবো, কখনো হতাশ বা নিরাশ হবো না। তাই হতাশ না হয়ে আশাবাদী থাকাটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর।

[1]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৪৮, ১১৬।

[2]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৩১।

[3]. সূরা আন্ নাজ্ম ৫৩ : ৩২।

[4]. সহীহ মুসলিম : ৫৭৪।

[5]. সহীহ মুসলিম : ৫৭২; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২১৪।

[6]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৫।

[7]. সূরা হূদ ১১ : ১১৪।

[8]. সহীহুল বুখারী : ৬৪৪৪; সহীহ মুসলিম : ২৩৫১।

[9]. সহীহ মুসলিম : ৪৮৭, মুসনাদ আহমাদ : ২১৩৯৩।

[10]. জন্ম : ৪৭৬ হি./১০৮৩ ঈ. - মৃত্যু : ৫৪৪ হি./১১৪৯ ঈ.।

[11]. শারহু সহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১০৬ ও ১২৭।

[12]. জন্ম : ১৯৪৭ হি./১৯২৫ ঈ. - মৃত্যু : ১৪২১ হি./২০০১ ঈ.।

[13]. পূর্ণ হাদীস ও রেফারেন্স সামনে আসছে।

[14]. শারহু বুলূগিল মারাম, খ. ৭, পৃ. ৫৪, পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায় গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে মাফ করার অনেকগুলো উপায় বলে দিয়েছেন। এই উপায়গুলো দুই ধরনের :

* উপলক্ষযুক্ত উপায়;

* উপলক্ষহীন উপায়।


* উপলক্ষযুক্ত উপায় :

উপলক্ষযুক্ত উপায় বলতে কোন কথা বলা, কাজ করা বা বিপদ, পরীক্ষা, রোগ-বালাই ইত্যাদির উপলক্ষÿ বান্দার গুনাহ মাফ করানো। তা হতে পারে বান্দার তাওবাহ্ করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর-এর আনুগত্যমূলক কাজ যেমন সলাত, সিয়াম, দু‘আ, দান-সদাক্বাহ্ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে; হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে, যার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার গুনাহগুলোকে মাফ করে দিবেন, তাঁর রবের সাথে সম্পর্ক নবায়ন করবেন, এমনকি বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের কারণে তিনি বান্দাকে অতিরিক্ত সাওয়াব দান করবেন।

কখনো কখনো বান্দা জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার জন্য অন্যদের দু‘আ ও ইস্তিগফার করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করা হয়। আবার বান্দা মৃত্যুবরণ করার পরও কিছু মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আছে। যেমন- জানাযার সলাত, পরকালে বিচারের মাঠে শাফা‘আতের মাধ্যমে গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়। আবার মৃতব্যক্তির জন্য জীবিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে দু‘আ, ইস্তিগফার, দান-সদাকাহ্, ওয়াক্ফ, সিয়াম রাখা, হাজ্জ বা ‘‘উমরাহ্ করা ইত্যাদি ‘আমলের মাধ্যমেও বান্দা মাফ পেতে পারে। এগুলো সবই গুনাহ মাফের উপলক্ষযুক্ত উপায়।

* উপলক্ষহীন উপায় :

উপলক্ষহীন উপায় বলতে মূলত আল্লাহর ইচ্ছাকেই বুঝানো হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছার উপরে খবরদারি করার কেউ নেই। তিনি একান্ত তাঁর অনুগ্রহবশত কোন বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন। এ জন্য কারও কাছে তাঁর কোন জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি যেমন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিয্‌ক্বদাতা ঠিক একইভাবে তিনিই আইনদাতা এবং সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তাই তিনি ইচ্ছামত কারণ ছাড়া ও জবাবদিহিতা ছাড়াই বান্দার জন্য যে কোনও কিছু বরাদ্দ বা ফায়সালা করতে পারেন, তার কোন বান্দাকে মাফও করে দিতে পারেন। এটি হচ্ছে গুনাহ মাফের উপলক্ষহীন উপায়।

তাওবাহ্ ছাড়া অন্যান্য প্রায় সকল উপায় দ্বারা শুধু সগীরা গুনাহ মাফ করা হয়। কোন কোন ‘আলিম বলেছেন, বান্দার যদি সগীরা গুনাহ না থাকে তাহলে এর দ্বারা কাবীরা গুনাহকে হালকা করে দেয়। আবার কিছু কিছু উপায় আছে যেগুলো আল্লাহর হকের সাথে সম্পৃক্ত সগীরা ও কাবীরা-সকল গুনাহ মাফ করে দেয়। কখনো গুনাহ মাফের সাথে সাথে বান্দার মর্যাদাও বাড়িয়ে দেয়।

আর তাওবাহ্ ছোট-বড় সকল গুনাহ মোচন করে দেয়, যদি শর্ত পূরণ করে যথাযথভাবে তাওবাহ্ করা হয়। আল্লাহ চাইলে যে কাউকে নিজের রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। আবার কখনো কখনো মাযলূম ব্যক্তিকে যুল্মের ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেও বান্দার হক কেন্দ্রিক গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এর মানে এই নয় যে, কোন মুসলিম যদি দুনিয়ায় দন্ডযোগ্য অপরাধজনিত গুনাহ যেমন চুরি, ব্যভিচার, অপবাদ/মানহানী করা ইত্যাদি করে, তারপর আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে, তাহলে তার উপর থেকে দন্ড-বিধি বা শাস্তি রহিত হয়ে যাবে। কখনো না, বরং যখন যথাযথ আদালতের রায়ের মাধ্যমে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি অপরাধীর উপরে বাস্তবায়ন করা হবে তখন সে ঐ অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে। এবং তার এই তাওবাই হলো সত্যিকারের তাওবা, যা তার অন্তরকে পবিত্র করবে এবং তার সাওয়াবের পাল্লাকে ভারি করবে।[1]

[1]. মিন মুকাফ্ফিরাতিয যুনূব, পৃ. ৮-১০ (ভূমিকা দ্র.)।

গুনাহ মাফের যতগুলো উপায় কুরআন ও গ্রহণযোগ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্য থেকে ধারাবাহিকভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ উপায় দলীলসহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো। এখানে বড় বড় উপায়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।

১. ইস্তিগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা

আরবী শব্দ ‘ইস্তিগফার’ (الإستغفار) শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় দু‘আ ও তাওবাহ্ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ‘ইস্তিগফার’ বলা হয়। পাপ মোচনের প্রথম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা।

মহান আল্লাহ নূহ (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا

‘‘(নূহ (আ.) বললেন) অতঃপর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল’।’’[1]

পাপের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম ইস্তিগফার। কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন,

وَاسْتَغْفِرِ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[2]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّه كَانَ تَوَّابًا

‘‘তুমি তোমার রব-এর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা জ্ঞাপন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবাহ্ গ্রহণকারী।’’[3]

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

أَنَّمَا إِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ

‘‘তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তাঁরই পথ অবলম্বন কর এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য।’’[4]

আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রশংসা করে বা তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেছেন,

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلٰى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ-أُولٰئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

‘‘আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না বা এর উপরে তারা অটল থাকে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর ‘আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!’’[5]

কিছু পাপের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। কিন্তু পাপ করার পর তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকলে তিনি পাপীকে শাস্তি দেন না। তিনি বলেন,

وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

‘‘আর আল্লাহ কখনো এমন নন যে, তাদেরকে ‘আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে কখনো ‘আযাবদানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’’[6]

কেউ যদি কোন পাপ করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেছেন,

وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুল্ম করবে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[7]

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন :

يَا عِبَادِى إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِى أَغْفِرْ لَكُمْ

‘‘হে আমার বান্দারা! তোমরা রাত-দিন পাপ করে থাকো, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।’’[8]

নাবী (সা.) বলেছেন :

إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لَا أَبْرَحُ أُغْوِىْ عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِىْ أَجْسَادِهِمْ قَالَ الرَّبُّ وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ لَا أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ

‘‘নিশ্চয় শয়তান বলেছে, ‘হে আমার রব! আপনার ইয্যতের ক্বসম! আমি আপনার বান্দাদেরকে অবিরামভাবে পথভ্রষ্ট করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে।’ (শয়তানের এই কথার উত্তরে) রব বলেছেন, ‘আর আমার ইয্যত ও উচ্চ মর্যাদার ক্বসম! আমি অবিরামভাবে তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’’[9]

আনাস ইবনু মালিক বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلٰى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً

‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের যে পর্যন্ত দৃষ্টি যায়/প্রকাশ পায় সে পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি জমিন ভরা গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমি জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’[10]

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَه وَمَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَه وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَه

‘‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার নিকট প্রার্থনা করে? আমি তাকে দান করব। এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করব।’’[11]

নাবী (সা.) (সামান্য অন্যমনস্কতার জন্য) প্রতিদিন ১০০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি বলেছেন,

إِنَّه لَيُغَانُ عَلٰى قَلْبِىْ وَإِنِّىْ لِأَسْتَغْفِرُ اللهَ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ

‘‘আমার অন্তর ক্ষণিক বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর আমি দিনে ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।’’[12]

তিনি আরও বলেছেন,

وَاللهِ إِنِّىْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً

‘‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও তাওবাহ্ করে থাকি।’’[13]

ইবন ‘উমার বলেন, একই মজলিসে বসে নাবী (সা.)-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় ১০০ বার পর্যন্ত গুণতাম,

رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তাওবাহ্ কবূল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, পরম দয়াময়।’’[14]

নাবী (সা.)-এর জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার পরও অর্থাৎ তিনি নিষ্পাপ হওয়ার পরও যদি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার মহান রব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাওবাহ্ করেন তাহলে আমার-আপনার মতো পাপীদের কী করা উচিত? প্রতিদিন কতবার ইস্তিগফার ও তাওবাহ করা উচিত?

ইস্তিগফারের কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে। যেমন প্রতিদিন ১০০ বার ইস্তিগফার পড়লে মন-মস্তিষ্কে তার বিশেষ প্রভাব পড়ে। কারণ বারবার উচ্চারিত কথা মনে-ব্রেনের নির্দিষ্ট জায়গায় স্থান করে নেয় এবং সেই অনুযায়ী মানুষের চরিত্র ও আচরণে বিশেষ প্রভাব পড়ে। সুতরাং পাপ থেকে বারবার ক্ষমা চাইলে পাপ করার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যায়।

শাস্তির দিন এসে পড়ার আগে পাপীর উচিত পাপ বর্জন করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। নাবী (সা.) একদিন মহিলাদের উদ্দেশে বললেন,

يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الاِسْتِغْفَارَ فَإِنِّى رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ

‘‘হে নারীসমাজ! তোমরা দান-সাদকাহ করতে থাক ও বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা কর। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই তোমাদেরকে দেখলাম।’’[15]

পরকালে যার ‘আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তিগফার পাওয়া যাবে তার জন্য সুসংবাদ। ‘আবদুল্লাহ ইবন বুস্র বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন :

طُوبٰى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا

‘‘যে ব্যক্তি তার ‘আমলনামায় অধিক পরিমাণে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দবার্তা।’’[16]

[1]. সূরা নূহ ৭১ : ১০।

[2]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১০৬।

[3]. সূরা আন্ নাস্‌র ১১০ : ৩।

[4]. সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্ ৪১ : ৬।

[5]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৩৫-৩৬।

[6]. সূরা আল আনফাল ০৮ : ৩৩।

[7]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১১০

[8]. সহীহ মুসলিম : ৬৭৩।

[9]. মুসনাদ আহমাদ : ১১২৩৭; মুসতাদরাক হাকীম : ৭৬৭২, হাদীসটি সহীহ, আস-সিলসিলা আস্ সহীহাহ্ : ১০৪।

[10]. জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৮০৫, হাদীসটি সহীহ।

[11]. সহীহুল বুখারী : ১১৪৫, ৭৪৯৫; সহীহ মুসলিম : ১৮০৮।

[12]. সহীহ মুসলিম : ৭০৩৩।

[13]. সহীহুল বুখারী : ৬৩০৭।

[14]. সুনান আবূ দাঊদ : ১৫১৮; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৪৩৪, হাদীসটি সহীহ।

[15]. সহীহুল বুখারী : ২০৪, সহীহ মুসলিম : ২৫০।

[16]. সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৮১৮, হাদীসটি সহীহ।
১. ইস্তিগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা - আমরা কেন ইস্তিগফার করবো?

আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত পাওয়ার জন্য ইস্তিগফার করা জরুরি। ইস্তিগফারের কারণে আল্লাহ তাওবাকারীর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন। নূহ (আ.) তার জাতিকে তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কয়েকটি প্রতিদানে কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আ.)-এর বক্তব্য তার কালামে উল্লেখ করেছেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا -يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

‘‘আর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি অতীব ক্ষমাশীল’। ‘তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’।’’[1]

এই আয়াতগুলোতে ইস্তিগফারের ৫টি লাভের কথা বলা হয়েছে :

মুষলধারে বৃষ্টি লাভ;
ধন-সম্পদ লাভ;
সন্তান-সন্ততি লাভ;
বাগ-বাগিচা লাভ;
নদী-নালা লাভ।

এতগুলো লাভ শুধু ইস্তিগফার করলে। তারপরও আমরা কেন ইস্তিগফার করবো না?

আমরা ইস্তিগফার করবো পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য। প্রখ্যাত ফকীহ তাবিঈ বাক্র বিন আবদুল্লাহ আল মুযানী (মৃ. ১০৬ হি.) একদিন কোথাও যাওয়ার পথে দেখলেন, তাঁর সামনে এক কাঠুরে ‘‘আল হামদুলিল্লাহ’’, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহ’’ বলতে বলতে পথ চলছিল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি এ ছাড়া অন্য কিছু জান না?’ কাঠুরে বলল, অবশ্যই জানি। আমি কুরআনের হাফিয এবং জানিও অনেক কিছু (দু‘আ-জিকির)। কিন্তু মানুষ সর্বদা পাপে নিমজ্জিত ও নি‘আমতে ডুবে থাকে। তাই আমি পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর দেয়া নি‘আমতের জন্য প্রশংসা করি।’ এ কথা শুনে বাক্র আল মুযানী বললেন, ‘বাক্র হল অজ্ঞ, আর কাঠুরে হল বিজ্ঞ।’[2]

আমরা কেউ পাপমুক্ত নই। তাই আসুন, পাপ বর্জন করি এবং সংকল্প করি, আর পাপ করব না। আর সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আমরা ইস্তিগফার করবো হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। গুনাহ করতে করতে আমরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন? এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গুনাহ করায়।

শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি : প্রথমবার গুনাহ করে; দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে; তৃতীয়বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ না করে গুনাহ করতে থেকে। তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সকল গুনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلٰى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

‘‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।’’[3]

এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় যত গুনাহই আমরা করে ফেলি না কেনো আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তাঁর কাছে মাফ চাইতে থাকতে হবে। তিনি ছাড়া মাফ করার আর কে আছে?

[1]. সূরা নূহ ৭১ : ১০-১২।

[2]. পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায় দ্র.।

[3]. সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »