উপদেশ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১১৬ টি
উপদেশ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১১৬ টি

অন্য এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন,

عَلَيْكُمْ بِالْإَبْكَارِ فَإِنَّهُنَّ أَعْذَبُ أَفْوَاهًا وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا وَأَرْضَى بِالْيَسِيْرِ

‘তোমরা কুমারীদের বিবাহ কর। কেননা তাদের মুখ বেশি মিষ্টি, তারা অধিক গর্ভধারিণী এবং অল্পে তুষ্ট’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬২৩, ১৯৫৭)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, (১) তালাকপ্রাপ্তা নারীর চেয়ে কুমারী নারীকে বিবাহ করা ভাল। স্বামীর নিকট কুমারী স্ত্রী হিসাবে থাকা যরূরী। এ বাণী দ্বারা আরো প্রতীয়মান হয় যে, ‘চুন থেকে পান খসলেই’ অর্থাৎ একটু অসুবিধা হ’লেই প্রথম স্বামীর ঘর-সংসার ছেড়ে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা শোভনীয় নয়। যদিও তা শরী‘আতে জায়েয। (২) অধিক সন্তান প্রসব করতে হবে। (৩) স্বামীর সামর্থ অনুসারে সামান্য কোন জিনিসে তুষ্ট থেকে স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। আর এগুলি ভাল নারীরা ছাড়া অন্যের পক্ষে অসম্ভব।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে নারীকে বিবাহ করা হয় : (১) তার সম্পদ (২) বংশ (৩) সৌন্দর্য ও (৪) ধার্মিকতা। তুমি শুধুমাত্র ধার্মিকতার প্রতি লক্ষ্য কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৪৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) শুধুমাত্র ধার্মিক পর্দানশীল মেয়েকে বিবাহ করতে বলেছেন। বাকী গুণগুলি থাকলে ভাল, না থাকলে কোন দোষ নেই।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا كُلَّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ পৃথিবী সম্পদ। আর পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হচ্ছে সৎ চরিত্রবান নারী’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৩)।

ভাল নারীর একটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لَيْسَ لِلنِّسَاءِ وَسْطُ الطَّرِيْقِ

‘নারীরা রাস্তার মধ্য দিয়ে চলাচল করবে না’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৫৬)। অত্র হাদীছে ভাল নারীদের রাস্তায় চলার আদর্শ বর্ণিত হয়েছে। রাস্তায় চলার ব্যাপারে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা রাস্তার মধ্যস্থল দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে চলবে না। দৃষ্টি নত করে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাই হচ্ছে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلاَيُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّلِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْابَآءِ بُعْوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَائِهِنَّ اَوْاَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْاِخَوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اَخَوَتِهِنَّ اَوْنِسَائِهِنَّ اَوْمَامَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِالتَّبِعِيْنَا غَيْرِاُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَتِ النَّسَاءِ وَلاَ يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَايُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّط وَتُوْبُوْآاِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-

‘আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, যা প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর দিয়ে পেচিয়ে রাখে’ তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ৩১)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন কর না’ (আহযাব ৩৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْحَيَاءُ مِنَ الِإيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ فِي الْجَنَّةِ ‘লজ্জা হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম’ (মিশকাত হা/৫০৭৭)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহিলাদেরকে নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে। প্রয়োজন বশত যদি তাদেরকে বাইরে যেতেই হয় তাহ’লে তাদেরকে পূর্ণ পর্দা করে যেতে হবে। মূলতঃ পর্দাই হচ্ছে মহিলাদের জন্য এক শ্রেষ্ঠ গুণ। কারণ যাদের পর্দা নেই তাদের লজ্জা-শরম নেই। আর যাদের লজ্জা নেই ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি ভালবাসা তাদের নিকট হ’তে দূরে সরে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনা মহিলার জন্য কুরআন-হাদীছ অনুসারে পর্দা করা যরূরী এবং লোক দেখানো পর্দা পরিহার করা আবশ্যক।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلى اِمْرَأةٍ لاَ تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا وَهِيَ لاَ تَسْتَغْنيِ عَنْهُ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে মহিলার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর শুকরিয়া আদায় করে না, আর সে স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ণ মনে করে না’ (ত্বাবারাণী, কাবায়ির পৃঃ ২৯৩)

অত্র হাদীছে মহিলাদের দু’টি দোষের কথা বলা হয়েছে। (১) স্বামীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করা (২) স্বামীকে নিজের জন্য যথেষ্ট মনে না করা। মুসলিম মহিলাদের জন্য উক্ত দোষ দু’টি থেকে বেঁচে থাকা অতীব যরূরী। কেননা যে কারণে মহিলারা বেশি বেশি জাহান্নামে যাবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮২)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ مَسْعُوْدٍ لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ تَعَالَى.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্ তা‘আলা ঐসব নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দেহে উল্কি (সুচিবিদ্ধ করে চিত্র অংকন) করে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নেয়। যারা ভ্রূ উপড়িয়ে চিকন করে, যারা দাঁত সমূহকে শানিত ও সরু বানায়। কারণ তারা আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টির বিকৃতি ঘটায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩১)

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ ‘যারা চুলে জোড়া লাগায় অথবা অন্যের দ্বারা লাগিয়ে নেয়, যে নারী দেহে কিছু অংকন করে অথবা অন্যের দ্বারা করিয়ে নেয় তাদের উভয়ের প্রতি অভিশাপ করেছেন’ (বুখারী,মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)

উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে রাসূল কতিপয় কাজ করতে মহিলাদের বারণ করেছেন। আদর্শনারীর জন্য উক্ত কাজগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لَعَنَ اللهُ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ

‘আল্লাহ তা‘আলা সেই সব পুরুষের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা মহিলার বেশ ধারণ করে। আর ঐসব মহিলাদের প্রতিও অভিশাপ করেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯, বাংলা মিশকাত হা/৪২৩২)

অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষ মহিলার পোশাক পরিধান করতে পারে না। তেমনি কোন মহিলাও পুরুষের পোশাক পরিধান করতে পারে না। তদ্রূপ যে সমস্ত পোশাকে মাহিলাদের সাথে পুরুষের সাদৃশ্য করা হয় কিংবা পুরুষদের সাথে মহিলাদের সাদৃশ্য হয়, সেসব পরিহার করতে হবে। আদর্শ নারীর জন্য ঐসব কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত আবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শ মুসলিম মহিলা কখনো পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে না।

কোন এক বৈঠকে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জাহান্নামের প্রতি লক্ষ্য করলাম দেখলাম সেখানকার অধিকাংশই নারী। ছাহাবীগণ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না, তারা স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না এবং অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করে না। তুমি যদি সারা জীবন তাদের সাথে অনুগ্রহ কর, অতঃপর তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করে, তখন বলে ফেলে আমি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণই পাইনি’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/১৩৯৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَوْ كُنْتُ آمِراً أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا-

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি আমি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম তবে স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫৫; বাংলা মিশকাত হা/৩১১৬, হাদীছ ছহীহ)অত্র হাদীছে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব কতটুকু তা স্পষ্ট হয়েছে।

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘স্বামী হচ্ছে মহিলাদের জন্য জাহান্নাম এবং জান্নাতের মাধ্যম’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২, ১৯৩৪)। অত্র হাদীছগুলি দ্বারা বুঝা যায় যে, আদর্শ মহিলার জন্য তার স্বামীকে রাযী-খুশি করা, আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তার খিদমতে সর্বদা নিয়োজিত থাকা অত্যন্ত যরূরী।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একজন মহিলাকে ভাল হতে হলে নিম্নোক্ত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। ঈমানদার, পরহেযগার, নেককার, আল্লাহভীরু, লজ্জাস্থানের হিফাযতকারিণী, সতী-সাধবী, উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী, অনুগত, পর্দাশীলা, দানশীলা, ছালাত আদায়কারিণী, ছিয়াম পালনকারিণী ইত্যাদি। এক কথায় যার মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ রয়েছে সেই হচ্ছে প্রকৃত ভাল নারী। কেননা আল্লাহ বলেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا.

‘প্রকৃত পক্ষে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে এক সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে, আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি আশাবাদী এবং খুব বেশি বেশি আললাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ২১)

স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা যরূরী। স্ত্রীর ন্যায় সঙ্গতভাবে স্বামীর খিদমত করবে। রান্না বান্না থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করবে। যদি স্ত্রী স্বামীর খিদমত না করে তাহ’লে স্বামী তার স্ত্রীকে খিদমতে বাধ্য করবে। আর এটাই হ’ল তার কর্তৃত্ব।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে । আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২২৮)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি অধিকার রাখে। যা পরস্পরকে আদায় করা কর্তব্য। তবে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيّاً كَبِيرا.

‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে সৎস্ত্রীগণ হয় আনুগত্যশীল এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন তা হেফাযত করেন। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা রয়েছে তাদের সদুপদেশ দাও। তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবার শ্রেষ্ঠ’ (নিসা ৩৪)।

অত্র আয়াত দু’টিতে স্বামী-স্ত্রীর পার্থক্য এবং তাদের পারস্পরিক অধিকার যথাযথভাবে উল্লেখ হয়েছে। তাদের কর্তব্য এবং সেগুলির স্তর নির্ণয় সম্পর্কে একটি শারঈ মূলনীতি হিসাবে গণ্য। নারীদের উপর যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা একান্ত যরূরী, তেমনিভাবে পুরুষদের উপরও নারীদের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা যরূরী। তবে পুরুষের মর্যাদা নারীদের তুলনায় বেশি। দু’টি ন্যায়সঙ্গত ও তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই পুরুষদেরকে নারীদের উপর পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রথমতঃ পুরুষকে তার জ্ঞানৈশ্বর্য ও পরিপূর্ণ কর্মক্ষমতার কারণে নারী জাতির উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যা অর্জন করা নারী জাতির পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ নারীর যাবতীয় প্রয়োজন পুরুষেরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা মিটিয়ে থাকে। প্রথম কারণটি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ও মানুষের নিজস্ব ক্ষমতা বহির্ভূত। আর দ্বিতীয় কারণটি নিজের উপার্জিত ও ক্ষমতাভিত্তিক।

পারিবারিক জীবনে যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশংকা দেখা দেয়, তাহ’লে প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধনের জন্য নরমভাবে তাদের বুঝাবে। যদি তাতে বিরত না হয়, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের শয্যা পৃথক করে দিবে। যাতে এই বিচ্ছিন্নতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। বিচ্ছিন্নতা শুধু শয্যাতেই হবে, বাড়ি ও থাকার ঘর পৃথক করতে হবে না। কারণ তাতে তার অনুতাপ বেশি হবে। এতে সংশোধন না হ’লে প্রহারের কথা আল্লাহ্ তা’আলা উল্লেখ করেছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ وَلاَ تَأْذَنَ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإذْنِهِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল  বলেছেন, ‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর ছিয়াম পালন করা জায়েয নয় এবং স্বামীর বাড়িতে তার অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়াও জায়েয নয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩১ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘কাযা ছিয়াম পালন করা’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে, ফরয ছিয়াম পালন করার জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন হয় না। স্বামী যথাযথভাবে স্ত্রীর খিদমত উপভোগ করবে। নফল ইবাদত এই খিদমত বন্ধ করতে পারে না। কাজেই স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নফল ইবাদত করা যাবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ وفي رواية وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلاَّ كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল  বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে বিছানায় যেতে অস্বীকার করে এবং স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, তখন ফেরেশতাগণ তার প্রতি সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকেন’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল  আল্লাহর কসম করে বললেন, ‘কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকলে এবং তার স্ত্রী তা অস্বীকার করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তার উপর ততক্ষণ পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট থাকে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪৬, বাংলা মিশকাত হা/৩১০৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ إِذَا صَلَّتْ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ-

আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল  বলেছেন, ‘যখন কোন স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করবে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করবে এবং নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে ও স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে বলা হবে’ (আহমাদ, আবূ নু‘আইম, মিশকাত হা/৩২৫৪, বাংলা মিশকাত হা/৩১১৫, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে নারীদের ইচ্ছামতো জান্নাতে যাওয়ার চারটি মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে। তার একটি হচ্ছে স্বামীর অনুগত হওয়া। স্ত্রীদের জন্য স্বামীর সেবাই হচ্ছে প্রধান কাজ। স্বামীর সেবার বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। স্ত্রীলোকের জন্য সাংসারিক দায়িত্ব খুবই কম।

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لاَ تُؤْذِي امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ لاَ تُؤْذِيهِ قَاتَلَكِ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হূরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, হে (অভাগিনী)! তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে পরবাসী। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩২৫৮, বাংলা মিশকাত হা/৩১১৯, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৪ পৃঃ)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ نَفْسَهَا.

‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) বলেন, রাসূল  বলেছেন, ‘স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক্ব আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক্ব আদায় না করবে। যদি স্বামী উটের গদির উপর থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবুও স্ত্রীকে সম্মতি প্রকাশ করতে হবে’ (ইবনু মাজাহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৪ পৃঃ, হাদীছ ছহীহ)।

عَنِ الْحُصَيْنِ بْنِ مِحْصَنٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ أَتَتْ النَّبِيَّ فِي حَاجَةٍ فَفَرَغَتْ مِنْ حَاجَتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِي أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ.

হুছাইন ইবনু মিহছান বলেন, আমার ফুফু আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন যে, কোন প্রয়োজনে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে আসলাম। অতঃপর নবী (ছাঃ) বললেন, ‘হে ওমুক মহিলা! তোমার স্বামী আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? সে বলল, আমি তার অনুগত ও খিদমতে কমতি করি না। তবে আমি তার পক্ষ থেকে কমতি পাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি অপেক্ষা কর, তুমি তার মাধ্যমে কোথায় যাবে? কেননা সে তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’ (আহমাদ, আবী শায়বাহ, আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২৮৫ পৃঃ)। হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে স্বামীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা। কেননা স্বামী হচ্ছে তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ।

যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সরাসরি জাহান্নামের উল্লেখ করেছেন, বেপর্দা নারী তাদের অন্যতম। যা মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। মানুষের ঈমান ধ্বংসেরও কারণ বটে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ.

‘এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হ’তে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শামিত্ম পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে’ (রূম ২১)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى- ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না’ (আহযাব ৩৩)।

জাহেলী যুগে নারীরা নগ্ন, অর্ধনগ্ন হয়ে নিজেদেরকে প্রদর্শন করত যাকে বর্বরতা ও অসভ্য বলা হয়েছে। আমাদের নারীদেরকে এ নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পথ অবলম্বন করতে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلاَبِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ-

‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’ (আহযাব ৫৯)।

এ আয়াতে স্বাধীন নারীদেরকে এক বিশেষ ধরনের পর্দার আদেশ দেয়া হয়েছে। তারা যেন মাথার উপর দিক থেকে চাদর ঝুলিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। যাতে সাধারণ দাসীদের থেকে তাদের স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠে এবং দুষ্টদের কবল থেকে নিরাপদ থাকে। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ-

‘হে নবী! আপনি ঈমানদার নারীদের বলে দিন। তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের গ্রীবা ও হবদেশ চাদর দ্বারা ঢেকে রাখে’ (নূর ৩১)।

অত্র আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা নারীদেরকে দৃষ্টি নত রাখার জন্য আদেশ করেছেন। কারণ যেসব দৃশ্য পুরুষের জন্য ক্ষতিকর, সেসব দৃশ্য নারীর জন্যও ক্ষতিকর। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ-

‘তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ (আহযাব ৫৩)।

অত্র আয়াতের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে অন্য কোন পুরুষ কোন ব্যবহারিক পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া যরুরী হ’লে সামনে এসে নিবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। দেয়াল, দরজা ও পোশাক অন্তরাল হ’তে পারে। অত্র আয়াতে আরও বলা হয়েছে যে, পর্দার এই বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখে।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

وَالْقَوَاعِدُ مِنْ النِّسَاءِ اللاَّتِي لاَ يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ-

‘বৃদ্ধ নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের বহির্বাস পোষাক (চাদর, বোরকা ইত্যাদি) খুলে রাখলে কোন অপরাধ হবে না। তবে এটা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (নূর ৬০)

অত্র আয়াতে পর্দার বিশেষ পোষাক পরা ভাল বলা হয়েছে। যদিও সমাজে এ আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করা হয়। অর্থাৎ বয়ঃপ্রাপ্তা মা বোরকা পরিধান করেন অথচ সাথে পূর্ণ যুবতী মেয়ে নগ্ন-অর্ধনগ্ন হয়ে থাকে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ.

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমি জান্নাতের প্রতি লক্ষ্য করলাম দেখলাম জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র। অতঃপর জাহান্নামের প্রতি লক্ষ্য করলাম এবং দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৪; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৫০০৫ ‘মন ভোলানো’ অধ্যায়)।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلاَ تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ.

আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক পুরুষ অপর পুরুষের গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। তেমনি এক নারী অপর নারীর গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। দু’জন পুরুষ একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করতে পারে না। তেমনি দু’জন নারী একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করতে পারে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০০; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৬৬ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) অনেক বিষয়ে পুরুষকে পুরুষ থেকে এবং নারীকে নারী থেকে পর্দা করতে বলেছেন। বিশেষ করে হাতের কব্জি ও মুখমণ্ডল ব্যতীত একজন নারী অপর নারীর বাকী অঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না’।

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتْهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهاَ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক নারী অপর নারীর অঙ্গের সাথে অঙ্গ লাগাতে পারে না বা স্পর্শ করতে পারে না। কারণ সে তার স্বামীকে ঐ নারীর অঙ্গের বিবরণ দিতে পারে তখন তার স্বামী ঐ নারীকে অন্তরের চোখে লক্ষ্য করবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৯৯; বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৩৯২১ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীকে নারী থেকে পর্দা করতে বলেছেন। সুতরাং আমাদের দেশে বিবাহের অনুষ্ঠানে হলুদ মাখানো প্রথা নিতান্তই জঘন্য।

عَنْ جَرِيرِبْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نَظْرَةِ الْفَجْأَةِ فَأَمَرَنِي أَنْ أَصْرِفَ بَصَرِى.

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল(ছাঃ)-কে নারীদের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০৪; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৭০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদের প্রতি স্বেচ্ছায় লক্ষ্য করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْمَرْأَةَ تُقْبِلُ فِي صُوْرَةِ شَيْطَانٍ وَتُدْبِرُ فِي صُوْرَةِ شَيْطَانٍ إِذَا أَحَدُكُمْ أَعْجَبَتْهُ الْمَرْأَةُ فَوَقَعَتْ فِي قَلْبِهِ فَلْيَعْمِدْ إِلَى إِمْرَأَتِهِ فَلْيُوَاقِعْهَا فَإِنَّ ذَلِكَ يَرُدُّ ماَ فِي نَفْسِهِ.

জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহিলারা শয়তানের আকৃতিতে আসে আর শয়তানের আকৃতিতে যায়। যদি কোন নারীকে তোমাদের কাউকে ভাল লাগে এবং সে অন্তরে গেঁথে যায়, তাহ’লে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট চলে যায় এবং তার সাথে মিলনে লিপ্ত হয়। নিশ্চয়ই এ মিলন অন্তরের মন্দ পরিকল্পনা দূর করে দিবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০৫)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বেহায়া নগ্ন নারীদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। তাদের ক্ষতি অন্তরে জাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।

عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ إِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলে’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১০৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নারী পর্দাবিহীন অবস্থায় বের হ’লে শয়তান তাকে পাপের উপর ক্ষিপ্ত করে’।

عِنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُسَافِرُمَرْأَةٌ مَسِيْرَةَ يَوْمٍ وَ لَيْلَةٍ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُومَحْرَمٍ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা একদিন এক রাতের সফর করতে পারে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১৫; বাংলা ৫ম খন্ড, হা/২৪০১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে একা সফর করতে নিষেধ করেছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী রয়েছে যাদেরকে এখনও আমি দেখিনি (প্রথম শ্রেণী) এমন সম্প্রদায় যাদের হাতে গরু পরিচালনা করা লাঠি থাকবে যা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী) নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী যারা পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সেই সুগন্ধি এত বহুদূর হতে পাওয়া যায়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক মাসের পথের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়’ (মুসলিম, মিশকত হা/৩৫২৪; বাংলা ৭ম খন্ড, হা/৩৩৬৯)।

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নগ্ন পোষাক পরিহিতা বেহায়া ঈমান ধ্বংসকারিণী নারীদের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি তাদেরকে জাহান্নামী বলেছেন। বিশেষ করে তাদের নগ্ন মাথার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَيَاءُ مِنَ الِإيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ فِي الْجَنَّةِ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জাই হচ্ছে ঈমান। ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৭৭; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৮৫৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) লজ্জাকে ঈমান বলেছেন। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, ‘লজ্জা বিহীন নারী-পুরুষ সবকিছুই করতে পারে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৮৫১)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যে নারী নগ্ন হয়ে চলে তার লজ্জা নেই।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ... فَاتَّقُوا الدُّنْيَا واتَّقوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ.

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘.... তোমরা দুনিয়া এবং নারীদের থেকে সাবধান থাক। কারণ নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলের প্রথম দুর্ঘটনা নারীদের মধ্যেই ঘটে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৬; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৫২ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

عَنْ أًسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا تَرَكْتُ بَعْدِيْ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ.

উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আমার পরে এমন কোন জটিল সমস্যা ত্যাগ করিনি, পুরুষদের জন্য বেশী ক্ষতিকারক হতে পারে নারীদের চেয়ে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৫)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বেশী ধ্বংসাত্মক বলে ঘোষণা করেছেন। কাজেই পুরুষদের সাবধান থাকা যরূরী।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ.

উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে সাবধান থাক। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে কি বলছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘দেবর মরণ সমতুল্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০২; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৬৯ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) পুরুষদেরকে নারী থেকে সাবধান থাকতে বলেছেন। আর ভাবীদেরকে দেবর থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

عَنْ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِإِمْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطانُ.

ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হ’লে তৃতীয় জন হবে শয়তান’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৩১৮; বাংলা হা/২৯৮৪)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) পুরুষদেরকে অপর কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং শয়তান তাদেরকে বিপদগামী করবে বলে সাবধান করেছেন।

قَالَ رَسُولُ ا للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِيْنٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَيْ كُنَّ.

একদা রাসূল (ছাঃ) মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘বুদ্ধি ও ধর্মের ব্যাপারে অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী পুরুষদের জ্ঞান তোমাদের অপেক্ষা আর কেউ অধিক বিনষ্ট করতে পারে এমন কাউকে আমি দেখিনি’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জ্ঞানী ব্যক্তিও নারীদের চক্রান্ত থেকে রেহায় পায় না। নারীদের চক্রান্ত অত্যন্ত শক্তিশালী। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (ইউসুফ ২৮)।

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا নিঃসন্দেহে শয়তানের ষড়যন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল (নিসা ৭৬)।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لُبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لُبْسَةَ الرَّجُلِ-

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সেই পুরুষের ওপর অভিশাপ করেছেন যে, মহিলার পোষাক পরিধান করে এবং সে মহিলার উপর অভিশাপ করেছেন যে পুরুষের পোষাক পরিধান করে (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৯, বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৪২৭০, হাদীছ ছহীহ)।

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنْ النِّسَاءِ .

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) হিজড়ার বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর উপর অভিশাপ করেছেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৮)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بِنْ عَمْرٍوعنِ النَبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالدَّيُّوثُ وَرَّجْلَةُ النِّسَاءِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ্, ছহীহ তারগীব হা/২০৭০)।

عَنْ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ قِيلَ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِنَّ امْرَأَةً تَلْبَسُ النَّعْلَ فَقَالَتْ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَةَ مِنْ النِّسَاءِ

আবূ মুলায়কা (রাঃ) বলেন, একদা আয়েশা (রাযিঃ)-কে বলা হল- একটি মেয়ে পুরুষের জুতা পরে। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, রাসূল (ছাঃ) পুরুষের বেশধারী নারীর প্রতি অভিশাপ করেছেন (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৭০, হাদীছ ছহীহ)।

হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, যেসব পোষাক পুরুষের পোষাক বলে পরিচিত সে সব পোষাক নারীরা পরিধান করলে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হবে। উল্লেখ্য নারীদের মাথার চুল ছোট করা পুরুষের বেশ ধারণ করার অমতর্ভুক্ত।

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا- وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى.

কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাত উত্তম ও চিরস্থায়ী। (আ‘লা ১৬-১৭)।

أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ- حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ- كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ- ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ- كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ- لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ- ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ- ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ.

পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার তোমাদেরকে আত্মভোলা করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। এটা কখনও ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে; অতঃপর, এটা কখনও ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে। সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে। এটা কখনও নয়, তোমরা এটা চাক্ষুষ প্রত্যয়ে দেখবেই, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে সুখ ও সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে (তাকাছুর ১-৮)।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ ".

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, স্বাস্থ্য ও অবসর দুইটি নেয়ামতের (সদ্বব্যবহারের) ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৫৫)

عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله يَقُوْلُ وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِى الْاَخِرَةِ اِلَّا مِثْلَ مَايَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ.

মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হ’ল যেমন তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙ্গুল ডুবানোর পর লক্ষ্য করে দেখুক আঙ্গুল কি পরিমাণ পানি নিয়ে আসল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৬)। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে আঙ্গুলের পানি এবং সাগরের পানি কম-বেশ হওয়ার ব্যাপারে তুলনা যেমন ইহকাল ও জান্নাতের তুলনা তেমন।

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ فَقَالُوْا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ قَالَ فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ-

জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)একটি কান কাটা মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এটাকে এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা তো এটাকে কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করব না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর চাইতেও অধিক নিকৃষ্ট’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৭)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ-

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের পক্ষে জান্নাত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৮)।

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا فِي الدُّنْيَا وَيُجْزَى بِهَا فِي الْآخِرَةِ وَأَمَّا الْكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ بِهَا لِلَّهِ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا أَفْضَى إِلَى الْآخِرَةِ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَةً يَجْزِى بِهَا.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা কোন মুমিনের নেক কাজকে নষ্ট করেন না, দুনিয়াতেও তার বিনিময় প্রদান করেন আবার আখেরাতেও তার প্রতিদান দেন। আর কাফের আল্লাহর জন্য যেই সব ভাল কাজ করে দুনিয়াতে সে তার বিনিময় ভোগ করে, অবশেষে যখন সে আখেরাতে পৌছবে, তখন তার (আমলনামায়) কোন ভাল কাজ থাকবে না যার প্রতিদান সে পেতে পারে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهْوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ-

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘জাহান্নামকে কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে বিপদ-মুছীবত দ্বারা’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬০)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيفَةِ وَالْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘টাকা-পয়সার পূজারীরা ধ্বংস হোক। পোষাক বিলাসী ধ্বংস হোক। তাকে দিতে পারলে খুশী হয়, না দিতে পারলে রাগান্বিত হয় (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৬১)

عَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلم: فَوَاللهِ لَا الْفَقْرُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا وَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ.

আমর ইবনে আওফ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সম্পর্কে দরিদ্রতার ভয় করি না; কিন্তু আমি ভয় করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দেওয়া হবে যেমন প্রশস্ত করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। আর তোমরা তা লাভ করার জন্য ঐরূপ প্রতিযোগিতা করবে যেরূপ তারা প্রতিযোগিতা করেছিল। ফলে তা তোমাদেরকে ধ্বংস করবে যেরূপ তাদেরকে ধ্বংস করেছিল (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৩)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ» .

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তিই সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাকে প্রয়োজনমাফিক রিযক প্রদান করা হল এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৫)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ الْعَبْدُ مَالِيْ مَالِيْ وَإِنَّ مَالَهُ مِنْ مَالِهِ ثَلاَثٌ مَا أَكَلَ فَأَفْنَى أَوْ لَبِسَ فَأَبْلَى أَوْ أَعْطَى فَاقْتَنَى وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَهُوَ ذَاهِبٌ وَتَارِكُهُ لِلنَّاسِ-

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, বান্দা আমার মাল, আমার সম্পদ বলে (তথা গর্ব করে)। প্রকৃতপক্ষে তার মাল হতে তার (উপকারে আসে) মাত্র তিনটি। যা সে খেয়ে শেষ করে দিয়েছে বা পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলেছে অথবা দান করে (পরকালের জন্য) সংরক্ষণ করেছে। এতদ্ভিন্ন যা আছে তা তার কাজে আসবে না এবং সে লোকদের (ওয়ারিছদের) জন্য ছেড়ে চলে যাবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৬)

(6) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُهُ-

আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত লাশের সাথে যায়। দু’টি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে গমন করে আত্মীয়-স্বজন, কিছু মাল-সম্পদ এবং তার আমল। পরে জাতি-গোষ্ঠী ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার আমল’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৬৭)

(7) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا مِنَّا أَحَدٌ إِلَّا مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِ وَارِثِهِ قَالَ فَإِنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالُ وَارِثِهِ مَا أَخَّرَ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে নিজের মাল অপেক্ষা আপন উত্তরাধিকারীদের সম্পদকে অধিক ভালবাসে? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই; বরং ওয়ারিছদের সম্পদ অপেক্ষা নিজের নিজের সম্পদকেই বেশী ভালবাসে। তিনি বললেন, যে (আল্লাহর পথে খরচ করে) যা অগ্রিম পাঠায় সেটিই তার সম্পদ। আর যা সে পিছনে রেখে যায় সেটা তার ওয়ারিছের সম্পদ’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৬৮)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفس».

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ধনী হওয়া সম্পদের প্রচুর্যের নাম নয়; বরং প্রকৃত সম্পদশালী সেই, যার অন্তর সম্পদশালী (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৭০)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من أَخذ عَنِّي هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ فَيَعْمَلُ بِهِنَّ أَوْ يُعَلِّمُ مَنْ يَعْمَلُ بِهِنَّ؟» قُلْتُ: أَنَا يَا رَسُولَ الله فَأَخَذَ بيَدي فَعَدَّ خَمْسًا فَقَالَ: «اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ وَأَحْسِنْ إِلَى جَارِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكَ تُمِيتُ الْقَلْبَ» .

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কে এই কয়েকটি বাক্য (বিধান) আমার নিকট হতে গ্রহণ করবে? অতঃপর নিজে সে মতে আমল করবে অথবা এমন ব্যক্তিকে শিখিয়ে দিবে, যে তার প্রতি আমল করে। আমি বললাম, আমি প্রস্ত্তত আছি হে রাসূলুল্লাহ! তার পর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং পাঁচটি গণনা করালেন। তিনি বললেন, (১) আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হতে বেঁচে থাক, তাতে তুমি হবে উত্তম ইবাদতকারী। (২) আল্লাহ তোমার কিসমত যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, তাতে তুমি হবে সর্বাপেক্ষা ধনবান। (৩) তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, তাতে তুমি হবে পূর্ণ ঈমানদার। (৪) নিজের জন্য যা পছন্দ কর মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলমান। (৫) অধিক হাসবে না। কেননা, অধিক হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৭১)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِيْ أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدُّ فَقْرَكَ وَإِلَّا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَكَ شُغْلًا وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ-

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করে নাও। আমি তোমার অন্তরকে অভাব-মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দরিদ্রতার পথ বন্ধ করে দিব। আর যদি তা না কর, তবে আমি তোমার হাতকে (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব মিটাবো না’ (আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫১৭২)

عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ: " اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ".

আমর ইবনে মায়নূন আওদী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে নসীহতস্বরূপ বললেন, পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি কাজ করাকে বিরাট সম্পদ মনে কর। (১) তোমার বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে। (২) রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্যকে। (৩) দরিদ্রতার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে। (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে। এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৭৪)

عَنْ سَهْلٍ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله لَوْكَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحُ بَعُوْضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شُرْبَةً.

সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হত, তা‘হলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না (আহমাদ, মিশকাত হা/৫১৭৭)

عَن ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَامَ عَلَى حَصِيرٍ فَقَامَ وَقَدْ أَثَّرَ فِي جَسَدِهِ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يَا رَسُولَ اللهِ لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَبْسُطَ لَكَ وَنَعْمَلَ. فَقَالَ: ্রمَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ وَمَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَاগ্ধ .

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি (খালি) চাটাইয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, তা হতে উঠলে তাঁর দেহ মোবারকে চাটাইয়ে দাগ পড়েছিল। তখন ইবনে মাসউদ আরয করলেন, হে রাসূলুল্লাহ! যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন তবে আমরা আপনার জন্য একখানা বিছানা তৈরি করে বিছিয়ে দিতাম। তিনি বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? বস্ত্ততঃ আমর ও দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল একজন ঐ আরোহীর ন্যায়, যে একটি গাছের নীচে ছায়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেয়, অতঃপর বৃক্ষটিকে ছেড়ে চলে যায় (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫১৮৮)

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " عَرَضَ عَلَيَّ رَبِّي لِيَجْعَلَ لِي يَطْحَاءَ مَكَّة ذَهَبَا فَقُلْتُ لَا يَا رَبِّ وَلَكِنْ أَشْبَعُ يَوْمًا وَأَجُوعُ يَوْمًا فَإِذَا جُعْتُ تَضَرَّعْتُ إِلَيْكَ وَذَكَرْتُكَ وَإِذَا شَبِعَتُ حَمِدْتُكَ وَشَكَرْتُكَ ".

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমার (রাঃ) মক্কার বাতহা (প্রশস্ত উপত্যকা) আমার জন্য স্বর্ণে রূপান্তরিত করে দেওয়ার বিষয় আমার নিকট পেশ করলেন, তখন আমি বললাম, না, হে আমার প্রভু! বরং আমি একদিন পরিতৃপ্ত এবং আরেক দিন অভুক্ত থাকতে চাই। যাতে আমি যখন অভুক্ত থাকি তখন তোমার কাছে সকাতরে বিনয় প্রকাশ করব এবং তোমাকে স্মরণ করব। আর যখন পরিতৃপ্ত হব তখন তোমার প্রশংসা করব এবং তোমার শোকর আদায় করব (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৯০)

عَن مقدامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ্রمَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ طَعَامٌ وَثُلُثٌ شَرَابٌ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ .

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারাব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি তার উদর অপেক্ষা মন্দ কোন পাত্রকে ভর্তি করেনি। আদম সন্তানের জন্য এই পরিমাণ কয়েক লোকমাই যথেষ্ট যা দ্বারা সে নিজের কোমরকে সোজা রাখতে পারে ( ও আল্লাহর এবাদত করতে পারে)। যদি এর অধিক খাওয়ার প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫১৯২)

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لَا تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ: عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلَاهُ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ؟ ".

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) নবী (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটুও নড়তে পারবে না যে পর্যন্ত না তার নিকট হতে পাঁচটি বিষয়ের উত্তর চাওয়া হবে। (১) তার বয়স সম্পর্কে-সে তা কি কাজে ব্যয় করেছে? (২) তার যৌবন সম্পর্কে- সে তা কি কাজে ক্ষয় করেছে? (৩) তার মাল-সম্পদ সম্পর্কে-সে তা কোথায় থেকে উপার্যন করেছে? (৪) আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? (৫) এবং যেই ইলম হাসিল করেছিল তা অনুযায়ী কি আমল করেছে? (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৯৭)

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: ارْتَحَلَتِ الدُّنْيَا مُدْبِرَةً وَارْتَحَلَتِ الْآخِرَةُ مُقْبِلَةً وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ.

আলী (রাঃ) বলেন, দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত সম্মুক্ষে আসছে। আর তাদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা, আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন আমল নেই (বুখারী, মিশকাত হা/৫২১৫)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ النَّاسِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: ্রكُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِগ্ধ . قَالُوا: صَدُزْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُومُ الْقَلْبِ؟ قَالَ: ্রهُوَ النَّقِيُّ التَّقِيُّ لَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَلَا بَغْيَ وَلَا غِلَّ وَلَا حَسَدَগ্ধ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসিত করা হল, মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন, প্রত্যেক নিষ্কলুষ অন্তঃকরণ সত্যভাষী। সাহাবাগণ আরয করলেন, ‘সুদূকুল নিসান’ তো আমরা বুঝি, তবে ‘মাখ্মূমুল কাল্ব’ কি? তিনি বললেন, নির্মল ও পবিত্র অন্তঃকরণ, যা পাপ করেনি, যুলুম করেনি ও যা হিংসা-বিদ্বেষ হতে মুক্ত (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫২২১)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا: حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِي طُعْمَةٍ.

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্ত্ত বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যাই তাতে তোমার কোন ক্ষতি নাই। আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানা-পিনা সতর্কতা অবলম্বন করা। (আহমাদ, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/৫২২২)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ يَسْبِقُونَ الْأَغْنِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الْجَنَّةِ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا.

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, গরীব মুজাহিরগণ ক্বিয়ামতের দিন ধনীদের চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৫)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا شَبِعَ آل مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْرِ الشَّعِيرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গ লাগাতার দুই দিন যবের রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হননি। এমতাবস্তায়ই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ওফাত হয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৭)

عَن سعيد المَقْبُري عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ فَدَعَوْهُ فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ وَقَالَ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيرِ.

সাঈদ মাক্বারী আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, একদা তিনি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন যাদের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়েছিল ভাজা করা বক্রী। তারা খাওয়ার জন্য আবু হুরায়রাকে ডাকলেন; কিন্তু তিনি এই বলে খেতে অস্বীকার করলেন যে, নবী (ছাঃ) দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন, অথচ তিনি যবের রুটি দ্বারাও পরিতৃপ্ত হতে পারেন নাই (বুখারী, মিশকাত হা/৫২৩৮)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ سَبْعِينَ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ إِمَّا إِزَارٌ وَإِمَّا كِسَاءٌ قَدْ رُبِطُوا فِي أَعْنَاقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الْكَعْبَيْنِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَرَاهِيَةَ أَن تُرَى عَوْرَتُهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় আমি ‘ছুফ্ফা’বাসীদের মধ্য হতে সত্তর জন লোককে দেখেছি যে, তাদের কোন একজনের নিকটও একখানা চাদর ছিল না। হয় তো একখানা লুঙ্গি ছিল অথবা একখানা কম্বল, যা তারা নিজেদের ঘাড়ের সাথে পেঁচিয়ে রাখত। উহা কারো অর্ধ গোড়ালী পর্যমত্ম, আবার কারো টাখনু পর্যমত্ম পৌঁছাত। তারা ওটাকে নিজের হাতের সাথে ধরে রাখত-এই আশংকায় যেন সতর খুলে না পড়ে (বুখারী, মিশকাত হা/৫২৪১)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُগ্ধ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: ্রانْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمগ্ধ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে মাল-সম্পদে, স্বাস্থ্য- সামর্থে অধিক দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিম্ন মানের ব্যক্তির দিকে তাকায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৪২)। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকাইও না যে, তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের। যদি এই নীতি অবলম্বন করে তা হলে আল্লাহ তোমাকে যেই নেয়ামত দান করেছেন, তাকে ক্ষুদ্র বা হীন মনে করবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রيَدْخُلُ الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الْأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمِائَةِ عَامٍ نِصْفِ يَوْمٍগ্ধ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, গরীবেরা ধনীদের পাঁচ শত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হবে ক্বিয়ামতের অর্ধদিন (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫২৪৩)

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اَللَّهُمَّ أَحْيِنِي مِسْكِينًا وَأَمِتْنِي مِسْكِينًا وَاحْشُرْنِي فِي زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: إِنَّهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِأَرْبَعِينَ خَرِيفًا يَا عَائِشَةُ لَا تَرُدِّي الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ فَإِنَّ اللهَ يُقَرِّبُكِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় জীবিত রাখ, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান কর এবং মিসকীনদের দলে হাশর কর। বিবি আয়েশা বললেন, কেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, তারা ধনীদের চলি­শ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আয়েশা! কোন মিসকীনকে তোমার দুয়ার হতে (খালি হাতে) ফিরিয়ে দিও না। খেজুরের একটি টুকরা হলেও প্রদান করিও। হে আয়েশা! মিসকীনদেরকে ভালবাসিও এবং তাদেরকে নিজের কাছে স্থান দিও, ফলে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তোমাকে নিকটে রাখবেন (তিরমিযী, বায়হাকী, মিশকাত হা/৫২৫৪)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ وَيَشِبُّ مِنْهُ اثْنَانِ: الْحِرْصُ عَلَى الْمَالِ وَالْحِرْصُ عَلَى الْعُمُرِ.

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয় এবং দুইটি জিনিস তার মধ্যে জওয়ান হয়- সম্পদের প্রতি মোহ এবং দীর্ঘ জীবনের আকাঙ্খা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৭০)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَزَالُ قَلْبُ الْكَبِيرِ شَابًّا فِي اثْنَيْنِ: فِي حُبِّ الدُّنْيَا وَطُوْلِ الْأَمَلِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বৃদ্ধ লোকের অন্তর দুইটি ব্যাপারে সর্বদা জওয়ান হতে থাকে। দুনিয়ার মহবত ও দীর্ঘ আকাঙ্খা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৭১)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لَابْتَغَى ثَالِثًا وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ.

ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম(সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দু’টি উপত্যকাও যদি দেওয়া হয়, সে তৃতীয়টির অপেক্ষা করবে। বস্ত্ততঃ আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া অন্য কিছুই পরিপূর্ণ করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর কাছে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৭৩)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِبَعْضِ جَسَدِىْ فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَعُدَّ نَفْسَكَ فِيْ أَهْلِ الْقُبُوْرِ فَقَالَ لِي ابْنُ عُمَرَ إِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالْمَسَاءِ وَإِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالصَّبَاحِ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ قَبْلَ مَوْتِكَ -

ইবনু ওমর (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)আমার শরীরের এক অংশ ধরে বললেন, ‘পৃথিবীতে মুসাফির অথবা পথযাত্রীর ন্যায় জীবনযাপন কর। আর প্রতিনিয়ত নিজেকে কবরবাসীর একজন মনে কর’। তারপর আল্লাহর রাসূল(সা.) আমাকে বললেন, ‘ইবনু ওমর, সকাল হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা কর না এবং সন্ধ্যা হলে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা কর না। আর অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে মূল্যায়ন কর এবং মরণের পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫২৭৪)

কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হয়। শয়তানের প্রতিক্রিয়া থাকে না। কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহ রুযীতে বরকত দেন। তেলাওয়াতকারীর পক্ষে কুরআন ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ الْكَهْفِ فِىْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ النُّوْرُ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পড়বে তার ঈমানী আলো এক জুম‘আ হতে অপর জুম‘আ পর্যন্ত চমকিতে থাকবে’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২১৭৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পড়লে অপর জুম‘আ পর্যন্ত যে কোন অন্যায় হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং যে কোন কল্যাণ অর্জন করার জন্য আলোর মত কাজ করবে।

عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : يُؤْتَى يَوْمَ القِيَامَةِ بِالقُرْآنِ وَأَهْلِهِ الَّذِيْنَ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ بِهِ فِي الدُّنْيَا تَقْدُمُهُ سُوْرَةُ البَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ، تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا-

নাওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনকে এবং যারা দুনিয়াতে কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে আনা হবে। কুরআনের আগে আগে থাকবে সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান। আর এ সূরা দু’টি তাদের তেলাওয়াতকারীদের পক্ষ থেকে জবাবদিহি করবে’ (মুসলিম, মিশকাত, রিয়াযুছ ছালিহীন, ৩/৪৩পৃঃ)। ক্বিয়ামতের দিন তেলাওয়াকারীর পক্ষ হয়ে কুরআন আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে এবং সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيْقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلاَ يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنْ الْإِبِلِ-

ওকবা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা মসজিদে আহলে ছুফ্ফাদের মাঝে ছিলাম। এমন সময় রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, সে প্রত্যহ সকালে বুতহান অথবা আকীক নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা এমন সুযোগ প্রত্যেকেই গ্রহণ করতে চাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না, অথচ একাজ তার জন্য দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম? তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। মোটকথা যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১০; বাংলা মিশকাত হা/২০০৮)

এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, একটি বড় দামী উটনী দান করে যত নেকী পাওয়া যাবে, কুরআনের একটি আয়াত মসজিদে গিয়ে পড়লে বা পড়ালে তার চেয়ে অধিক নেকী পাওয়া যাবে। এভাবে যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা বেশী নেকী পাওয়া যাবে।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ أَنْ يَجِدَ فِيْهِ ثَلاَثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ فَثَلاَثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلاَتِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এটা ভালবাসবে যে, সে যখন বাড়ী ফিরে আসবে, তখন সে তিনটি হৃষ্টপুষ্ট বড় কুঁজ বিশিষ্ট গর্ভধারিণী উটনী পাবে? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। তিনি বললেন, মনে রেখো, তিনটি আয়াত যা তোমাদের কেউ তার ছালাতে পড়ে তা তার জন্য এধরনের তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১১; বাংলা মিশকাত হা/২০০৯)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছালাতের মধ্যে সর্বনিম্ন তিনটি আয়াত পড়লেও তাকে বড় দামী তিনটি উটনী দান করার সমান নেকী দেওয়া হবে।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِيْ يَقْرَؤُهُ يَتَتَعْتَعُ فِيْهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ-

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফিরিশতাদের সাথে থাকবেন। আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয় তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১২; বাংলা মিশকাত হা/২০১০)। এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা অর্থ সহকারে সুন্দর উচ্চারণে দক্ষতার সাথে কুরআন পড়তে পারে এবং নিয়মিত পড়ে তারা জান্নাতে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী হবে। আর যারা সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না, পড়লে আটকে যায় এবং পড়া খুব কষ্টকর হয় তাদের জন্য ডবল নেকী রয়েছে।

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِيْنَ-

ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এই কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ কোন কোন জাতিকে উন্নত করেন এবং অন্যদের অবনত করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৫; বাংলা মিশকাত হা/২০১৩)

এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একমাত্র কুরআনের মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালে মর্যাদা লাভ করতে পারে। আর কুরআন তেলাওয়াত না করলে মানুষ উভয় জীবনে হবে লাঞ্ছিত।

عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوْطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُو وَتَدْنُو وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ تِلْكَ السَّكِيْنَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ-

বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, একব্যক্তি সূরা কাহফ পড়ছিল এবং তার কাছে তার ঘোড়া রশি দ্বারা বাঁধা ছিল। এসময় এক খন্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিল এবং তার অতি নিকটতর হতে লাগল। আর তার ঘোড়া লাফাতে লাগল। সে যখন সকালে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তা ছিল আল্লাহর রহমত ও শান্তি, যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে নেমে এসেছিল। অন্য বর্ণনায় এসেছে,

وَفِيْ رِوَايَةٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْمَلاَئِكَةُ دَنَتْ لِصَوْتِكَ وَلَوْ قَرَأْتَ لَأَصْبَحَتْ يَنْظُرُ النَّاسُ إِلَيْهَا لَا تَتَوَارَى مِنْهُمْ-

রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তারা ছিল ফিরিশতা। তোমার কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে নিকটতর হয়েছিল। তুমি যদি পড়তে থাকতে তারা সকাল পর্যন্ত তথায় থেকে যেত এবং মানুষ তাদের দেখতে পেত, তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে লুকাতে পারত না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৬-২১১৭; বাংলা মিশকাত হা/২০১৪-২০১৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি নাযিল হয়। ফিরিশতারা কুরআন শুনার জন্য দল বেঁধে নেমে আসেন।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘর সমূহকে কবরস্থানে পরিণত কর না। নিঃসন্দেহে শয়তান সেই ঘর হতে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৯; বাংলা মিশকাত হা/২০১৭)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় না সে ঘর কবরস্থানের ন্যায়। যে ঘরে কুরআন তেলাওয়া করা হয় সে ঘর হতে শয়তান পালিয়ে যায়।

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اقْرَءُوْا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِأَصْحَابِهِ اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ وَسُوْرَةَ آلِ عِمْرَانَ فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا اقْرَءُوْا سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ وَلَا تَسْتَطِيْعُهَا الْبَطَلَةُ-

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর। কেননা কুরআন ক্বিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করতে আসবে। তোমরা দুই উজ্জ্বল সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান তেলাওয়াত কর। কেননা ক্বিয়ামতের দিন সূরা দু’টি দুইটি মেঘখন্ড অথবা দুইটি সামিয়ানা অথবা দু’টি পাখা প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে এবং পাঠকদের পক্ষে আল্লাহর সামনে জোরাল দাবী জানাবে। বিশেষভাবে তোমরা সূরা বাক্বারাহ পড়। কারণ সূরা বাক্বারাহ পড়ার বিনিময় হচ্ছে বরকত আর না পড়ার পরিণাম হচ্ছে আক্ষেপ। অলস ব্যক্তিরাই এ সূরা পড়তে অক্ষম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২০)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান ক্বিয়ামতের দিন মেঘখন্ডের ন্যায় ছায়া হয়ে থাকবে। সূরা দু’টি পাঠককে জান্নাতে দেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট জোরাল দাবী করবে। সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করলে অর্থ সম্পদে বরকত হবে। আর অলস ব্যক্তিরা এ সূরা পড়তে চায় না।

إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا، اللهُُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ، حَتَّى تَخْتِمَ الْآيَةَ فَإنَّهُ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ الله حَافِظٌ، وَلاَ يَقْرُبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ.

অবশেষে সে বলল, তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া ওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটে আসতে পারবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/২১১৩)

আয়াতুল কুরসী এক ব্যতিক্রম আয়াত। কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। শয্যা গ্রহণের সময় এটা তেলাওয়াত করলে সকাল পর্যন্ত শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যে কোন ছালাতে সালামের পর আয়াতুল কুরসী পড়লে সে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করা মাত্রই জান্নাতে যাবে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا جِبْرِيْلُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ نَقِيْضًا مِنْ فَوْقِهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ فَقَالَ هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الْأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَسَلَّمَ وَقَالَ أَبْشِرْ بِنُوْرَيْنِ أُوتِيْتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيْمُ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيْتَهُ-

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এক সময় জিবরাঈল (আঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় উপর দিক হতে একটি দরজা খোলার শব্দ শুনলেন। তিনি উপর দিকে মাথা উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এই যে দরজাটি আজ খোলা হল, এই দরজা এদিনের পূর্বে আর কোন দিন খোলা হয়নি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে দরজা হতে একজন ফিরিশতা যমীনে নামলেন। তখন জিবরাঈল বললেন, এই যে, ফিরিশতা যমীনে নামলেন, তিনি এদিন ছাড়া ইতিপূর্বে কোন দিন যমীনে নামেননি। তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম করলেন। অতঃপর বললেন, দু’টি নূরের জ্যোতির সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি-সূরা ফাতিহা ও সূরা বাক্বারার শেষাংশ। আপনি তার যে কোন অক্ষর বা বাক্য পাঠ করুন না কেন নিশ্চয়ই আপনাকে তা দেয়া হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৪; বাংলা মিশকাত হা/২০২২)

হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল, অত্র আয়াতগুলি পূর্বের কোন নবীকে দেয়া হয়নি। এই আয়াতগুলি আকাশের বিশেষ এক দরজা দিয়ে অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি। আয়াতগুলি এমন একজন ফিরিশতা নিয়ে এসেছিলেন, যিনি পূর্বে কোনদিন যমীনে আসেননি। অত্র আয়াতগুলি পড়ে যা চাওয়া হবে আল্লাহ তাই দিবেন।

عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الآيَتَانِ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ، مَنْ قَرَأَهُمَا لَيْلَةً كَفَتَاهُ-

আবু মাসউদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত যে রাতে পড়বে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৫; বাংলা মিশকাত হা/২০২৩)

এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কোন ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত পড়বে সে শয়তানের ক্ষতি হতে নিরাপদে থাকবে। আল্লাহ তাকে বিশেষ রহমতের মাধ্যমে নিরাপদে রাখবেন। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে বাড়ীতে সূরা বাক্বারার শেষ দু’আয়াত পড়া হবে সে বাড়ীতে শয়তান প্রবেশ করে না’।

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ-

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জাল হতে নিরাপদে রাখা হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৬; বাংলা মিশকাত হা/২০২৪)

এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করে নিয়মিত পড়লে তাকে দাজ্জালের ফেৎনা হতে নিরাপদে রাখা হবে।

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِيْ لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ قَالُوْا وَكَيْفَ يَقْرَأْ ثُلُثَ الْقُرْآنِ قَالَ قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ-

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অক্ষম? ছাহাবীগণ বললেন, কি করে প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়বে? তিনি বললেন, সূরা ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (ইখলাছ) কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২; বাংলা মিশকাত হা/২০২৫)

ব্যাখ্যা : সূরা ইখলাছ এত মান সম্পন্ন সূরা যা একবার পড়লে এত নেকী হবে যে, কুরআনের তিনভাগের একভাগ পড়লে যত নেকী হয়। অর্থাৎ সূরা ইখলাছ তিনবার পড়লে পূর্ণ কুরআন পড়ার সমান নেকী হবে।

দেখানো হচ্ছেঃ ৬১ থেকে ৭০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 পরের পাতা »