উপদেশ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১১৬ টি
উপদেশ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১১৬ টি

জিহবা মূলত অন্তরের দরজা। মানুষের অন্তরের গোপনীয়তা জিহবা দ্বারা প্রকাশ পায়। এর ক্ষমতা প্রবল। এটা মানুষকে ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করতে পারে। আবার সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করাতে পারে। অধিকাংশ পাপ ও নেকীর কাজ জিহবা দ্বারাই সংঘটিত হয়ে থাকে। গীবত-পরনিন্দা, কুটনামী, মিথ্যা, অশ্লীল কথা, গালমন্দ ইত্যাদি জিহবারই কাজ। সুতরাং জিহবাকে সংযত রাখাই মানুষের জন্য অতীব যরূরী কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ.

হে মুমিনগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হ’তে বিরত থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ এবং তোমরা এক অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা কর না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করতে ভালবাসবে? বস্ত্ততঃ তোমরাও এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, দয়ালু (হুজুরাত ১২)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ‘সামনে ও পশ্চাতে নিন্দাকারীর জন্য ধ্বংস সুনিশ্চিত’ (হুমাযাহ ১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.

হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে বিদ্রূপ না করে; কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হ’তে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন বিদ্রূপ না করে; কেননা সে তাদের অপেক্ষা উত্তম হ’তে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা এক অপরের মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পরে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ পরিত্যাগ করে না, তারাই অত্যাচারী (হুজুরাত ১১)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা কি জান! কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তা হচ্ছে- আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে কোন জিনিস সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তা হচ্ছে- দু’টি মধ্যস্থান। একটি মুখ বা জিহবা, অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে জিহবা। কারণ জিহবা দ্বারা মানুষ সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে পারে। এর কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাজে বিশৃংখলা, অশান্তি, অরাজকতা ও নৈরাজ্য নেমে আসে। এজন্য জিহবা নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী।

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ-

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে (এই অঙ্গীকার করবে যে, সে) তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্তর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর জিম্মাদার হবে তবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব’ (বুখারী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬০১)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে রাসূল (ছাঃ) তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবেন। কারণ লজ্জাস্থান হচ্ছে সমাজে অশ্লীলতা বিস্তারের মূল। এর কারণে মানুষ অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। এসব থেকে বেঁচে থাকার জন্য লজ্জাস্থানের হেফাযত করা আবশ্যক।

অন্য এক বর্ণনায় আছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَجِدُوْنَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِيْ يَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَيَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৬১১)। অত্র হাদীছ দু’টি হতে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জিহবা ও লজ্জাস্থান কবীরা গুনাহ সমূহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখুরী, ধোঁকাবাজি, গীবত-তোহমত, অভিসম্পাৎ সব ধরনের কবীরা গোনাহ করে থাকে। যে পাপগুলি অত্যন্ত জটিল। কিন্তু মানুষ এসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিহবাকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলির ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘চোগলখোর ও খোটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ اللَّعَّانِيْنَ لاَ يَكُونُوْنَ شُهَدَاءَ وَلاَ شُفَعَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই অভিশাপকারী কখনো ক্বিয়ামতের মাঠে সাক্ষী দাতা ও সুপারিশকারী হতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২০; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৬০৯)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لَا يُلْقِي لَهَا بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَهْوِي بِهَا فِي جَهَنَّمَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ لَهُمَا يَهْوِي بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও এমন কথা বলে যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার গুরুত্ব জানে না। আল্লাহ এর দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পক্ষান্তরে বান্দা এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার অনিষ্ট সম্পর্কে অবগত নয়। আর এ কথাই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এই কথাই তাকে জাহান্নামের এত গভীরে পৌঁছে দেয়, যার পরিধি পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৮১৩; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৬০২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। উল্লিখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের যবান সাংঘাতিক জিনিস, যা মানুষকে জান্নাতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয় এবং জাহান্নামের গভীর গহবরেও ডুবিয়ে দেয়।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদী একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত বাংলা ৯ম খন্ড হা/৪৬১৩)। তাই আমাদের সকলের উচিত কথা বলার পূর্বে চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করা। যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে সেসব কথা বলা থেকে বিরত থাকা। অনুরূপভাবে সত্য বলার চেষ্টা করা এবং মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকা। সেই সাথে আল্লাহর যিকরে মশগূল থাকা। আল্লাহর বাণী ‘নিশ্চয়ই যে সকল নারী-পুরুষ বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান প্রস্ত্তত করে রেখেছেন’ (আহযাব ৩৫)

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, চোগলখোর (পরোক্ষ নিন্দাকারী) জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْغِيْبَةُ قَالَ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান গীবত কি? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বল, যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হল, আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে আপনার কি অভিমত? তখন তিনি বললেন, তুমি যা বল তার মধ্যে তা থাকলে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে যা তুমি বল, তখন তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে’ (মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১৭)

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلًا اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ اِئْذَنُوْا لَهُ فَبِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ عَائِشَةُ يَا رَسُولَ اللهِ قُلْتَ لَهُ كَذَا وَكَذَا ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَتَى عَاهَدْتِنِي فَحَّاشًا إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ، وفي رواية إتِّقَاءَ فَحْشِهِ-

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট সাক্ষাতের অনুমতি চাইল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা তাকে অনুমতি দাও। লোকটি হল স্বীয় গোত্রের মন্দ ব্যক্তি। যখন সে বসল, তখন নবী করীম (ছাঃ) হাসি-খুশি চেহারায় তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং মৃদু হাস্যে কথাবার্তা বললেন। অতঃপর লোকটি যখন চলে গেল তখন আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ লোকটি সম্পর্কে প্রথমে আপনি এমন এমন উক্তি করলেন। আবার আপনি হাসি-খুশি চেহারায় মৃদুহাস্য সহকারে তার সাথে কথাবার্তাও বললেন (এর কারণ কি?) তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আচ্ছা, তুমি কখন আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ? ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যার অশ্লীলতার ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করেছে’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১৮)

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ-

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেন, নিজের জিহবা আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থাক এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর’ (আহমাদ, তিরমিযী, বাংলা মিশকাত হা/৪৬২৬)

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ ذَا وَجْهَيْنِ فِي الدُّنْيَا كَانَ لَهُ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, ক্বিয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের জিহবা হবে’ (দারেমী, বাংলা মিশকাত হা/৪৬৩৩)

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا بِاللَّعَّانِ وَلَا الْفَاحِشِ وَلَا الْبَذِيْءِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভৎর্সনাকারী, অভিসম্পাৎকারী, অশ্লীল গালমন্দকারী ও নির্লজ্জ হতে পারে না’ (তিরমিযী, বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৪৬৩৪)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا تَعْنِي قَصِيْرَةً فَقَالَ لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِهَا الْبَحْرَ لَمَزِجَتْهُ-

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, ছাফিয়্যা সম্পর্কে আপনাকে এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে, সে এইরূপ এইরূপ। তিনি এটা দ্বারা বুঝাতে চাইলেন যে, তিনি বেঁটে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যদি তোমার এ কথাকে সমুদ্রের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা সমুদ্রের রং পরিবর্তন করে দেবে’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাউদ, বাংলা মিশকাত হা/৪৬৪০)

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ.

উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয় তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হতে) বিরত রাখবে’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৪৬৫৬)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيْثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوْا، وَلاَ تَجَسَّسُوْا، وَلاَ تَنَاجَشُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ تَبَاغَضُوْا، وَلاَ تَدَابَرُوْا وَكُوْنُوْا عِبَادَ الله إِخْوَانًا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা হতে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা। কারো কোন দোষের কথা জানতে চেষ্টা কর না। গোয়েন্দাগিরি কর না। ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি কর না। পরস্পর হিংসা রেখ না। পরস্পর শত্রুতা কর না এবং একে অন্যের পিছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘পরস্পর লোভ-লালসা কর না’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/৪৮০৮)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَعِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمِنْبَرَ فَنَادَى بِصَوْتٍ رَفِيعٍ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ، لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِيْنَ وَلاَ تُعَيِّرُوْهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهَ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ اَلْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِىْ جَوْفِ رَحْلِهِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিম্বরে আরোহন করে উচ্চৈঃস্বরে বললেন, ‘হে ঐ সকল লোক! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে প্রোথিত হয়নি, তোমরা মুসলমানদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে ভৎর্সনা কর না এবং তাদের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান কর না। কেননা যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে বেড়ায়, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করবেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করবেন, তাকে অপদস্থ করবেন, সে তার বাহনের পেটের মধ্যে অবস্থান করলেও’ (তিরমিযী হা/২০৩২, হাদীছ হাসান, ‘মুমিনকে সম্মান করা’ অনুচ্ছেদ; বাংলা মিশকাত হা/৪৮২৩)

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا عُرِجَ بِيْ رَبِّيْ مَرَرْتُ بِقَومٍ لَهُمْ أظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هؤُلاَءِ يَا جِبْرِيْلُ؟ قَالَ هؤُلاَءِ الَّذِيْنَ يَأكُلُوْنَ لُحُوْمَ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ أعْرَاضِهِمْ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার পরওয়ারদেগার যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে গেলেন, তখন আমি কতিপয় লোকের নিকট দিয়ে গমন করলাম, যাদের নখ ছিল তামার। তা দ্বারা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও হব অাঁচড়াতে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, ঐ সকল লোক যারা মানুষের মাংস খেত এবং তাদের ইয্যত আব্রুর হানি করত’ (আবুদাউদ, বাংলা মিশকাত হা/৪৮২৫)

ভদ্রতা, নম্রতা ও শালীনতা মানব জীবনের এক মহৎ গুণ। বিনয়-নম্রতা মানব চরিত্রের ভূষণ। এসব গুণের কারণে মানুষ সমাজে নন্দিত ও প্রশংসিত হয়। আর এসব গুণের অভাবে মানুষ নিগৃহীত, লাঞ্ছিত, অপমানিত ও নিন্দিত হয়। মহান আল্লাহ নিজে নম্র, তিনি নম্রতাকে পসন্দ করেন, ভালবাসেন। তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত সকল ক্ষেত্রে নম্রতাকে অবলম্বন করা। আল্লাহ বলেন,

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ.

অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত হয়েছিলে, তুমি যদি কর্কশ ভাষী; কঠোর হৃদয় হতে, তবে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংসর্গ হতে সরে যেত, অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অনন্ততর যখন তুমি সংকল্প করেছ তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ভরশীলগণকে ভালবাসেন (আলে ইমরান ১৫৯)

وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ.

ভাল এবং মন্দ সমান হ’তে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমরা সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অমত্মরঙ্গ বন্ধুর মত (ফুছসালাত ৩৪)

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে যুক্তিতর্ক কর সদ্ভাবে; তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপদগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে তাও সবিশেষ অবহিত (নাহল ১২৫)

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

যারা সচ্ছলতা ও অভাবের মধ্যে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে; আর আল্লাহ তো সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন (আলে ইমরান ১৩৪)

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ-

‘ক্ষমাশীলতা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চল’ (আ‘রাফ ১৯৯)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ تَعَالَى رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ.

وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: قَالَ لِعَائِشَةَ: عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ»

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)

عَنْ جَرِيْرٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ.

জারীর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যাকে কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৯)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِى الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيْمَانِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) এক আনছারী ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সে তার ভাইকে লজ্জা করার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা হল ঈমানের অংশ’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭০)

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِى إِلاَّ بِخَيْرٍ وَفِيْ رِوَايَةٍ : اَلْحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ.

ইমরান ইবনু হুছায়েন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, লজ্জার সবকিছুই কল্যাণ’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭১)

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُوْلَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِى فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী নবীগণ হতে লোকেরা যা পেয়েছে এবং আজও যা বিদ্যমান তা হল যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭২)

عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الأَنْصَارِىِّ قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ فَقَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِىْ صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.

নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-আনছারী (রাঃ) বলেন, ‘একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে নেকী ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নেকী হল উত্তম চরিত্র আর পাপ হল যে কাজ তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে এবং ঐ কাজটি তুমি জন সমাজে প্রকাশ হওয়া অপছন্দ কর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৩)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার কাছে অধিক প্রিয়, যার চরিত্র ভাল’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭৪)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৫)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ أُعْطِي حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ حُرِمَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِগ্ধ .

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যাকে নম্রতার কিছু অংশ প্রদান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিরাট কল্যাণের অংশ দেওয়া হয়েছে। আর যাকে সেই কোমলতা হতে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে উক্ত ইহকাল ও পরকালের বিরাট কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে (শরহু সুন্নাহ, মিশকাত হা/৫০৭৬)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْحَيَاءُ مِنَ الإِيْمَانِ وَالإِيْمَانُ فِى الْجَنَّةِ وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِى النَّارِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অংশ, আর ঈমানের ফলাফল জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অংশ, আর দুশ্চরিত্রতার পরিণতি জাহান্নাম’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৭৭)

عَنْ رَجُلٍ مِنْ مُزَيْنَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْإِنْسَانُ؟ قَالَ: ্রالْخُلُقُ الْحَسَنُগ্ধ.

মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, একদা ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সর্বোত্তম কোন্ জিনিসটি, যা মানব জাতিকে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, উত্তম চরিত্র (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫০৭৮)

عَنْ حَارِثَةَ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ قَالَ وَالْجَوَّاظُ الْغَلِيْظُ الْفَظُّ.

হারেছ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কঠোর ও রুক্ষ্ম স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০৮০)

عَنْ أَبِىْ الدَّرْدَاءِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ أَثْقَلَ شَىْءٍ يُوْضَعُ فِىْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ وَإِنَّ اللهَ يَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ.

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে জিনিসটি রাখা হবে, তা হল উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলভাষী দুশ্চরিত্রকে ঘৃণা করেন’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮১)

عَنْ عَائِشَةَ رَحِمَهَا اللهُ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘ঈমানদার ব্যক্তিরা তাদের উত্তম চরিত্র দ্বারা নফল ছিয়াম পালকারী ও রাতে ইবাদকারীর মর্যাদা লাভ করবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০৮২)

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ.

আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে। কোন কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে তার পর পরই ভাল কাজ করবে। ভাল কাজ পাপকে মুছে ফেলবে। আর সদাচরণের মাধ্যমে মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ وَبِمَنْ تَحْرُمُ النَّارُ عَلَيْهِ؟ عَلَى كُلِّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ قَرِيبٍ سَهْلٍ.

৪৮৬২ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকের সংবাদ দিব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়; আর আগুনও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যার মেজায নরম, স্বভাব কোমল, মানুষের নিকটতম (মিশুক) এবং আচরণ সরল সহজ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৪)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়’ (তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِىْ. قَالَ لاَ تَغْضَبْ. فَرَدَّ ذَلِكَ مِرَارًا، قَالَ لاَ تَغْضَبْ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি রাগ কর না। সে কয়েকবার একই কথা জিজ্ঞেস করল, রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেকবার একই জবাব দিলেন, তুমি রাগ কর না’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১০৪)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيْسَ الشَّدِيْدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيْدُ الَّذِىْ يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি শক্তিশালী নয় যে প্রতিপক্ষকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিতে পারে। বরং সে ব্যক্তিই প্রকৃত শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত করে রাখতে পারে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৫)

حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ الْخُزَاعِىِّ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَعَّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ جَوَّاظٍ زَنِيْمٍ مُتَكَبِّرٍ.

হারিছা ইবনু ওহাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকের কথা বলব না? তারা হল সরলতার দরুণ দুর্বল, যাদেরকে লোকেরা হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। আল্লাহ তাদেরকে এত ভালবাসেন যে, তারা কোন বিষয়ে কসম করলে তাদেরকে সত্যে পরিণত করেন। তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে কি জাহান্নামীদের কথা বলব না? তারা হল, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেযাজী অহংকারী’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِّنْ إِيْمَانٍ وَلاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَحَدٌ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِّنْ كِبْرِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমান থাকবে। পক্ষান্তরে এমন কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৭)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِّنْ كِبْرٍ. قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তখন এক ব্যক্তি বলল, সবাই তো পছন্দ করে যে তার পোশাক ভাল হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? তিনি বললেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হল, হককে অহংকার করে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে হীন ও তুচ্ছ মনে করা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ، وَفِىْ رِوَايَةٍ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদেরকে পাপ হতে পবিত্র করবেন না। অন্য বর্ণনায় আছে, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (১) বৃদ্ধ ব্যাভিচারী (২) মিথ্যাবাদী দায়িত্বশীল ও (৩) অহংকারী ফকীর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه و سلم قَالَ ثَلَاثُ مُنَجِّيَاتٍ وَثَلَاثُ مُهْلِكَاتٍ فَأَمَّا الْمُنَجِّيَاتُ فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِ وَالْعَلَانِيَةِ وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالسَّخْطِ وَالْقَصْدِ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ فَهَوَى مُتَّبِعٌ وَشُحُّ مُطَاعٍ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মুক্তিদানকারী এবং তিনটি জিনিস ধ্বংসসাধনকারী। মুক্তিদানকারী জিনিসগুলো হল, প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা। খুশী ও অখুশী উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলা এবং ধনী ও দরিদ্র উভয় অবস্থায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংস সাধনকারী জিনিসগুলি হল, প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া, লোভ-লালসার দাস হওয়া বা কৃপণ এবং কোন ব্যক্তি নিজ অহমিকায় লিপ্ত হওয়া এবং তা হল সর্বাপেক্ষা জঘন্য (শু‘আবুল ঈমান, বাংলা মিশকাত হা/৪৮৯৫)

প্রতিবেশী আত্মীয় হোক অথবা অনাত্মীয়, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম যে কোন অবস্থায় সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহায়তা করা ও তাদের খবরাখবর নেয়া যরূরী। যারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়, তারা জান্নাতে যাবে না। এদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) কসম করে বলেছেন, যেসব কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে না, প্রতিবেশীকে কষ্ট প্রদানকারী তার অন্যতম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُوْرًا-

‘আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীনদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। পথিক ও দাস-দাসীর সাথে ভাল ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অহংকারী-দাম্ভিককে পসন্দ করেন না’ (৩৬ নিসা) অত্র আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতিবেশীর হক উল্লেখ করেছেন এবং যারা প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করে না, তাদেরকে অহংকারী ও দাম্ভিক বলেছেন। পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহারের নির্দেশ দানের পাশাপাশি নিকটবর্তী ও দূরবর্তী প্রতিবেশী এবং দাস-দাসীর সাথেও উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপরোক্ত আয়াতে। কেননা প্রতিবেশী ও দাস-দাসীরাই মানুষের বিপদে-আপদে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে। তাই এসব লোকের সাথে ভাল আচরণ করা আদর্শ পুরুষের কর্তব্য।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ قَالُوا وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْجَارُ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, যার অন্যায় থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৯৬২; বাংলা মিশকাত হা/৪৭৪৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। অপর একটি হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি কখনও জান্নাতে যাবে না, যার অন্যায়ের কারণে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৩)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। অনুরূপ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩; বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৪০৬৯ ‘খাদ্য’ অধ্যায়) উল্লেখিত হাদীছ সমূহ হতে বিশেষভাবে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেশীর হক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার সাথে জান্নাত পাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। তাই প্রতিবেশীর হক আদায় করে জান্নাতের পথ সুগম করা প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর জন্য আবশ্যক।

عَنْ عَائِشَةَ وَابْنِ عَمْرَ عَنِ النَبِيٌِ صَلٌَى اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ.

আয়েশা ও ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি মনে হত যে, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে সম্পদের অংশীদার বানিয়ে দিবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৪)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশীকে তুচ্ছ মনে না করে এমনকি ছাগলের পায়ের ক্ষুর হলেও প্রতিবেশীর নিকট পাঠাতে হবে’ (বুখারী মুসলিম মিশকাত হা/১৮৯২; বাংলা ৪র্থ খন্ড, হা/১৭৯৮ ‘যাকাত’ অধ্যায়)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي قَالَ إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا.

আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’টি প্রতিবেশী আছে। এদের মধ্যে কাকে আমি হাদিয়া প্রদান করব? তিনি বললেন, ‘উভয়ের মধ্যে যার বাড়ী তোমার বেশী কাছে তাকে’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৩৬; বাংলা ৪র্থ খন্ড, হা/১৮৪০)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ جِيْرَانَكَ.

আবূ যার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আবূ যার! যখন তুমি তরকারী রান্না কর, তখন একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বেশি করো এবং তোমার প্রতিবেশীর হক্ব পৌঁছে দাও’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৩৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَمْنَعْ أَحَدُكُمْ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৬৪; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৮৩৫ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর জিনিস প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَّلُ خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ-

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ঝগড়াটে দুই প্রতিবেশীর মুকদ্দমা পেশ করা হবে’ (আহমাদ, বাংলা মিশকাত হা/৪৭৮২)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِيْ يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, যে উদর পূর্ণ করে খায় আর তার পার্শ্বেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে’ (বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৪৭৭৪)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فُلَانَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৪৭৭৫)

উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেশীর হক অত্যধিক। তাদের সাথে সদাচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকাও রাসূলের নির্দেশ। খাদ্য আদান-প্রদান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যরূরী। প্রতিবেশীর হক আদায় না করলে এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার না করলে জান্নাত পাওয়া কঠিন।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ» .

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে সঙ্গী-সাথী উত্তম, যে নিজের সঙ্গী-সাথীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে সে প্রতিবেশী উত্তম, যে নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম (তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৮৭)

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِنَبِيِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ لِي أَنْ أَعْلَمَ إِذَا أَحْسَنْتُ أَوْ إِذَا أَسَأْتُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ: قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ. وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ: قَدْ أَسَأْتَ فقد أَسَأْت ".

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি ভাবে জানতে পারব যে, আমি যা করেছি তা ভাল করেছি বা খারাপ করেছি? তিনি বললেন, যখন তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তুমি ভাল করেছ, তখন তুমি (বুঝতে পারবে যে) অবশ্যই ভাল কাজ করছ। আর যখন তাদেরকে বলতে শুনবে যে, তুমি খারাপ কাজ করছ, তখন তুমি (বুঝবে যে,) নিশ্চয় খারাপ কাজই করেছ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৯৮৮)

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي قُرَادٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ يَوْمًا فَجَعَلَ أَصْحَابُهُ يَتَمَسَّحُونَ بِوَضُوئِهِ فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا يَحْمِلُكُمْ عَلَى هَذَا؟ قَالُوا: حُبُّ اللهِ وَرَسُولِهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُحِبَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أَوْ يُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ فَلْيُصَدِّقْ حَدِيثَهُ إِذَا حَدَّثَ وَلْيُؤَدِّ أَمَانَتَهُ إِذَا أُؤْتُمِنَ وَلِيُحْسِنَ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَهُ.

আব্দুর রহমান ইবনু আবু কুরাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদিন রাসূল (ছাঃ) অযূ করলেন, তখন তাঁর ছাহাবীগণ অযূর পানি তাদের গায়ে মাখতে লাগলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমাদেরকে ইহা করতে উদ্বুদ্ধ করছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যারা আন্তরিক বাসনা যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসবে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) যেন তাকে ভালবাসে সে যখন কথা বলে যেন সত্য কথাই বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন উক্ত আমানত আদায় করে। এবং প্রতিবেশীর সাথে যেন প্রতিবেশী সুলভ উত্তম আচরণ করে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৯৯০)

عَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ فَقَالَ امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيْمِ وَأطْعِمْ الْمِسْكِيْنَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে নিজের হৃদয়ের কাঠিন্য সম্পর্কে অভিযোগ করল। তিনি বললেন, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকীনকে খানা খাওয়াও (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৯১)

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنِ كَالْمُجَاهِدِ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَحْسِبُهُ قَالَ يَشُكُّ الْقَعْنَبِىُّ كَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকীনের দেখা-শুনা করে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মত এবং দিনে ছিয়াম পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫১)

عَنْ سَهْلٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.

সাহ্ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আর ইয়াতীম পালনকারী নিজের ইয়াতীম হোক অথবা অন্যের ইয়াতীম হোক- জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তরজনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৭৩৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ কর না; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে (নূর ২৭)

وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا.

আর যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদন প্রাপ্ত হও, তবে তোমরাও তা হ’তে শ্রেষ্ঠতর উত্তম সম্ভাষণ কর অথবা ওটাই প্রত্যার্পণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী (নিসা ৮৬)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, কোন ইসলাম (তার কোন কাজ) উত্তম! তিনি বললেন, (অভুক্তকে) খানা খাওয়ান এবং যাকে চিন এবং যাকে চিন না সবাইকে সালাম করা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬২৯)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ: يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের ছয়টি হক। যথা- যখন সে রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার সেবা-শুশ্রুষা করবে। সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযা ও দাফন-কাফনে উপস্থিত থাকবে। দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করবে। সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দেবে। হাঁচি দিলে (يرحمك الله বলে) তার জওয়াব দেবে এবং উপস্থিত বা অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার জন্য কল্যাণ কামনা করবে (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৬৩০)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوْ لَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ.

আবু হুরায়রা রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে। আর তোমরা ঈমানদার হ’তে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কথা বলে দিব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? (অবশ্যই বলব তাহ’ল) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩১)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলাচলকারীকে এবং পদব্রজে চলাচলকারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে। আর কমসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম করবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩২)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ»

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথ অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কমসংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬৩৩)

عَن أَنَسٍ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى غِلْمَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ.

আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) কতিপয় বালকের নিকট দিয়ে গমন করলেন এবং তাদেরকে সালাম করলেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৪)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: لَا تَبْدَؤُوْا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ وَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أضيَقِه.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা ইহুদী-নাছারাদেরকে আগে সালাম দিবে না এবং রাস্তায় চলার পথে যখন তাদের কারো সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ পাশ দিয়ে যেতে বাধ্য করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৫)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمُ الْيَهُودُ فَإِنَّمَا يَقُولُ أَحَدُهُمْ: السَّامُ عَلَيْكَ. فَقُلْ: وَعَلَيْكَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইহুদীরা যখন তোমাদেরকে সালাম করে তখন তারা বলে ‘আসসামু আলাইকা’। সুতরাং জওয়াবে তুমি বলবে ‘ওয়া আলাইকা’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৬)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فَقُوْلُوا: وَعَلَيْكُمْ.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন আহলে কিতাব তোমাদেরকে সালাম করে, তখন তোমরা (জবাবে) ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৭)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: اِسْتَأْذَنَ رَهْطٌ مِنَ الْيَهُودِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكُمْ. فَقُلْتُ: بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ. فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الْأَمْرِ كُلِّهِ، قُلْتُ: أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا؟ قَالَ: قَدْ قُلْتُ وَعَلَيْكُمْ.

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একদল ইহুদী নবী (ছাঃ) এর কাছে আসতে অনুমতি চাইল এবং বলল, ‘আসসামু আলাইকুম’। তখন আমি (আয়েশা) জওয়াবে বললাম, ‘বাল আলাইকুমুস সাম ওয়াল্লানাত’। (অর্থ, বরং তোমাদেরই শীঘ্র মৃত্যু হোক এবং আল্লাহর অভিশাপ তোমাদের উপর বর্ষিত হোক। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, হে আয়েশা! আল্লাহ সহনশীল, তিনি প্রত্যেক কাজে সহনশীলতাকেই পছন্দ করেন। তখন আমি বললাম, আপনি শুনেননি তারা কি বলেছিল? তিনি বললেন, আমিও তো তাদের জওয়াবে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলেছি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৮)

عَن أُسامة بن زيد: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ أَخْلَاطٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ وَالْيَهُودِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ.

উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন এক সমাবেশের নিকট দিয়ে গমন করলেন যেখানে মুসলমান ও মুশরিক তথা পৌত্তলিক ও ইহুদী সম্প্রদায়ের লোক ছিল তিনি তাদেরকে সালাম করলেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৯)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ» . فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا. قَالَ: «فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ» . قَالُوا: وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الْأَذَى وَرَدُّ السَّلَامِ والأمرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ.

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তোমরা রাস্তার উপর বসা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের তো রাস্তার উপর বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই। কারণ, তথায় বসে আমরা প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি বললেন, যদি তোমরা তথায় বসতে একান্ত বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্ল­াহ! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, চক্ষু বন্ধ রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জওয়াব দেওয়া, ভাল কাজের আদেশ করা এবং খারাপ হতে নিষেধ করা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৪০)

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَ بِالسَّلَامِ.

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় যে প্রথমে সালাম করে (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৬)

عَن جَرِيرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِنَّ.

জারীর (রাঃ) বলেন, একদা নবী কারীম (ছাঃ) কতিপয় মহিলার নিকট দিয়ে গমন করলেন এবং তাদেরকে সালাম করলেন (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৪৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارٌ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কারো কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয় তখন সে যেন তাকে সালাম করে। অতঃপর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে কোন বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথরের আড়াল পড়ে যায়, পরে পুনরায় যখন সাক্ষাৎ হয় তখনও যেন আবার সালাম করে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫০)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ».

জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কথাবার্তার আগেই সালাম করবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৫৩)

عَن قتادةَ قَالَ: قُلْتُ لِأَنَسٍ: أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ.

কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (ছাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে ‘মুসাফাহার’ প্রচলন ছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ ছিল (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬৭৭)

عَن أنس قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: لَا. قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: لَا. قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: نَعَمْ.

আনাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে রাসূলুল্ল­াহ! আমাদের কেউ যখন তার কোন ভাইয়ের সাথে কিংবা কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে তখন কি তার জন্য মাথা নত করবে? তিনি বললেন, না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তাকে কি আলিঙ্গন করবে এবং চুম্বন করবে? তিনি বললেন, না। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, কি, তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহ করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৮০)

عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلى الله عليه وسلم قَالَ أَفْشُوْا السَّلاَمَ تَسْلَمُوْا.

বারা ইবনু আয়েব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে নিরাপদ থাকবে (তারগীব হা/২৬৯৬)

عَنْ أَبِيْ يُوْسُفَ عَبدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ سَمِعتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفشُوْا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ وَصَلُّوْا بِاللَّيلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ.

আবু ইউসুফ আব্দুললাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলছিলেন, হে মানুষ! তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর এবং দুঃস্থ-গরীবকে খাদ্য প্রদান কর। আর মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন ছালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে (তারগীব হা/২৬৯৭)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اُعْبُدُوْا الرَّحْمَنَ وَأَفْشُوْا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ تَدْخُلُوْا الْجِنَانَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা রহমানের ইবাদত কর এবং পরস্পরে সালামের প্রচলন কর। আর খাদ্য প্রদান কর, তাহলে তোমরা জান্নাতের মধ্যস্থলে প্রবেশ করবে (তারগীব হা/২৬৯৮)

عَنْ أَبِيْ الدَّرْدَاءِ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَفشُوْا السَّلاَم َكَيْ تَعْلَوْا

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে তোমরা সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে (তারগীব হা/২৭০১)

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلاَمِ.

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকটে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে ব্যক্তি আগেই সালাম প্রদান করে (তারগীব হা/২৭০৩)

عَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَعْجَزُ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ فِيْ الدُّعَاءِ وَأَبْخَلُ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلاَمِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অপারগ ব্যক্তি সেই, যে দো‘আ প্রার্থনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ সেই, যে সালাম প্রদানে কৃপণতা করে (তারগীব হা/২৭১৪)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَسْرَقُ النَّاسِ اَلَّذِيْ يَسْرِقُ صَلاَتَهُ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ صَلاَتَهُ قَالَ لاَ يُتِمُّ رُكُوْعَهَا وَلاَ سُجُوْدَهَا وَأَبْخَلُ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلاَمِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সবচেয়ে বড় চোর সেই, যে তার ছালাত চুরি করে। কেউ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কিভাবে সে তার ছালাত চুরি করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে তার ছালাতের রুকূ এবং সিজদা পূর্ণ করে। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ সেই, যে সালাম প্রদানে কৃপণতা করে (তারগীব হা/২৭১৫)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اَلسَّلاَمُ قَبلَ السَّؤَالِ؛ فَمَنْ بَدَأَكُمْ بِالسَّؤَالِ قَبْلَ السَّلاَمِ فَلاَ تُجِيْبُوْهُ.

ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জিজ্ঞাসা বা কথপোকথনের পূর্বে সালাম হতে হবে। অতএব যে ব্যক্তি সালামের পূর্বেই জিজ্ঞাসা বা কথপোকথন শুরু করবে তোমরা তার কথার উত্তর দিয়ো না (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮১৬)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, বক্তব্য বা যে কোন কথার পূর্বে সালাম হতে হবে।

عَنْ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم السَّلاَمُ قَبْلَ الْكَلاَمِ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কথার পূর্বে সালাম হতে হবে (তিরমিযী হা/২৬৯৯)। উল্লেখ্য যে, অত্র হাদীছটি যঈফ হলেও পূর্বের হাদীছের সমার্থবোধক। কাজেই অত্র হাদীছটি আমলযোগ্য।

عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ أَصحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذَا تَلاَقُوْا تَصَافَحُوْا وَإِذَا قَدِمُوْا مِنْ سَفَرٍ تَعَانَقُوْا.

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ পরস্পরে সাক্ষাৎ করলে মুছাফাহা করতেন এবং কোন সফর থেকে আসলে কাঁধে কাঁধ মিলাতেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৪৭)

عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْكَامَ قَالَ كُنَّا إِذَا سَلَّمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه و سلم عَلَيْنَا قُلْنَا : وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ.

যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) বলেন, যখন নবী কারীম (ছাঃ) আমাদেরকে সালাম দিতেন, তখন আমরা বলতাম, وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ ‘আপনার উপরে আল্লাহর শামিত্ম, রহমত, বরকত ও ক্ষমা অবতীর্ণ হোক (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৪৯)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَأْذِنُوْا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأْ بِالسَّلاَمِ.

জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম প্রদান না করে, তাকে তোমরা কথা বলার বা প্রবেশের অনুমতি দিয়ো না (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮১৭)

অত্র হাদীছগুলি দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, কথা বলার পূর্বে অথবা কোন স্থানে বা বাড়ীতে প্রবেশের পূর্বে সালাম প্রদান করা যরূরী।

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ.

‘হে আদম সন্ততানগণ! প্রত্যেক ছালাতের সময় সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর (তবে পরিচ্ছদ ও পানাহারে) অপব্যয় করবে না, কেননা, আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবসেন না (আ‘রাফ ৩১)

عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِيْ سَلَمَةَ قَالَ: كُنْتُ غُلَامًا فِي حِجْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّفْحَةِ. فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : سَمِّ اللهَ وَكُلْ يَمِيْنَكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ.

ওমর ইবনু আবু সালামা (রাঃ) বলেন, আমি একজন বালক হিসাবে রাসূল (ছাঃ) এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে যাচ্ছিল। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন, ‘বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হ’তে খাও’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৫৯)।

عَن حُذَيْفَة قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ».

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয় যে খাদ্যে বিসমিল্লাহ বলা হয় না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬০)।

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ ".

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদিগকে) বলে, এই ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের সুযোগ নাই এবং খাদ্যও পাওয়া যাইবে না। (সুতরাং চল এই স্থান ত্যাগ করি)। আর যখন ষে (ঘরে) প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম লয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের স্থান পাইয়াছ। আর যখন সে খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম লয় না তখন সে বলে, তোমরা রাত্রি যাপন ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ লাভ করেছ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬১)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন কিছু খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে তখন যেন ডান হাতে পান করে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬২)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَأْكُلَنَّ أَحَدُكُمْ بِشِمَالِهِ وَلَا يَشْرَبَنَّ بِهَا فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ছা:) বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেহই যেন বাম হাতে না খায় এবং সেই (বাম) হাতে পানও না করে। কেননা, শয়তান তার বাম হাতে খায় এবং সেই হাতে পানও করে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৩)

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِلَعْقِ الْأَصَابِعِ وَالصَّفْحَةِ وَقَالَ: إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ: فِي أَيَّهِ الْبَرَكَةُ؟

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (খাওয়ার শেষে) অঙ্গুলীসহ ও খাদ্যপাত্র চাটিয়া খাইতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ খাদ্যের কোন অংশটির মধ্যে বরকত রয়েছে নিশ্চয়ই তোমরা তা অবগত নও (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৫)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأْنِهِ حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمْ لُقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى ثُمَّ لْيَأْكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي: فِي أَيِّ طَعَامِهِ يَكُونُ الْبركَة؟

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কাহারও প্রতিটি কাজের সময় শয়তান তার পাশে উপস্থিত হয়, এমন কি তার খাওয়ার সময়ও তার নিকট উপস্থিত হয়। সুতরাং যদি তোমাদের কাহারও লোকমা পড়িয়া যায়, সে যেন তা তুলিয়া ময়লা পরিস্কার করে তা খাইয়া লয় এবং শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। আর খাওয়া শেষে যেন অঙ্গুলী চাটিয়া লয়। কেননা, সে জানে না, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৭)

عَن أبي جُحَيْفَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلم: لاَ آكُلُ مُتَّكِئًا.

আবু জোহায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ আমি হেলান দিয়ে খাই না। (হেলান দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের আচরণ, তাই নবী (ছাঃ) ইহা পছন্দ করতেন না (বুখারী, মিশকাত হা/৪১৬৮)

عَن قَتَادَة عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَا أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى خِوَانٍ وَلَا فِي سُكُرَّجَةٍ وَلَا خُبِزَ لَهُ مُرَقَّقٌ قِيلَ لِقَتَادَةَ: على مَ يَأْكُلُون؟ قَالَ: على السّفر.

কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (ছাঃ) কখনও টেবিলে রেখে আহার করেন নাই এবং ছোট ছোট পেয়ালাবিশিষ্ট খাঞ্চায়ও খানা খান নাই। আর তার জন্য কখনও চাপাতি রুটিও তৈয়ার করা হয় নাই। কাতাদাহকে জিজ্ঞাসা করা হল, তবে তারা কিভাবে খাইতেন? তিনি বললেন, সাধারণ দসত্মরখান বিছাইয়া আহার করতেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪১৬৯)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طُعَامًا قَطُّ اِنِ اشْتَهَاهُ اَكَلَهُ وَاِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) কখনও কোন খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেননি। অবশ্য মনে চাইলে খেতেন এবং অপছন্দ হ’লে পরিত্যাগ করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৭২)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ الْحَلْوَاء وَالْعَسَل.

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিষ্টি ও মধু পছন্দ করতেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪১৮২)

عَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ أَهْلَهُ الْأُدْمَ. فَقَالُوا: مَا عِنْدَنَا إِلَّا خَلٌّ فَدَعَا بِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ بِهِ وَيَقُولُ: «نِعْمَ الْإِدَامُ الْخَلُّ نِعْمَ الْإِدَامُ الْخَلُّ».

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা নবী (ছাঃ) নিজ গৃহে তরকারি চাহিলেন, তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ব্যতীত আর কিছুই নাই। তখন তিনি তা চাহিয়া লইলেন এবং তা দ্বারা রুটি খাইতে লাগলেন, আর বললেন, সিরকা উত্তম তরকারি, সিরকা উত্তম তরকারি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৮৩)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ الرُّطَبَ بِالْقِثَّاءِ.

আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) কাকড়ীর সাথে তাজা খেজুর খেতে দেকিয়াছি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৮৫)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَجُوعُ أَهْلُ بَيْتٍ عِنْدَهُمُ التَّمْرُ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন, সেই গৃহবাসী অভুক্ত নয়, যাদের কাছে খেজুর আছে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৮৯)

عَن سعدٍ قَالَ: سمعتُ رسولَ الله يَقُولُ: مَنْ تَصَبَّحَ بِسَبْعِ تَمَرَاتٍ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سَمٌّ وَلاَ سِحْرٌ.

সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ ও জাদুটোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯০)

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ فِي عَجْوَةِ الْعَالِيَةِ شِفَاءً وَإِنَّهَا تِرْيَاقٌ أَوَّلَ البكرة».

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মদীনার উচ্চভূমির আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রাতঃ ভোরে তা (খাওয়া) বিষের প্রতিষেধখ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯১)

عَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلًا فَلْيَعْتَزِلْنَا» أَوْ قَالَ: «فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا أَوْ لِيَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ» . وَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِقِدْرٍ فِيهِ خَضِرَاتٌ مِنْ بُقُولٍ فَوَجَدَ لَهَا رِيحًا فَقَالَ: «قَرِّبُوهَا» إِلَى بَعْضِ أَصْحَابِهِ وَقَالَ: «كُلْ فَإِنِّي أُنَاجِي مَنْ لَا تُناجي»

জাবের (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পিয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট হতে সরিয়া থাকে। অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ হতে দূরে থাকে অথবা নিজ বাড়ী-ঘরে বসে থাকে। এক সময় নবী (ছাঃ) খেদমতে একটি তরকারির পাতিল আনা হল। তিনি তাতে এক ধরনের গন্ধ অনুভব করলেন, তখন তা (হতে নিজে না খাইয়া উপস্থিত) একজন সাহাবীর সম্মুখে এগিয়ে দিতে বললেন এবং সেই সাহাবীকে বললেন, তুমি খাইতে পার। কারণ, আমাকে যার সাথে গোপনে কথা বলতে হয়, তোমাকে তার সাথে কথা বলতে হয় না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯৭)

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كِيلُوا طَعَامَكُمْ يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ.

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারীব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের খাদ্যদ্রব্যকে মেপে নেও। এতে তোমাদের জন্য বরকত দেওয়া হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/ ৪১৯৮)

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَفَعَ مَائِدَتَهُ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبُّنَا».

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) সম্মুখ হতে যখন দসত্মরখান উঠান হতে, তখন তিনি এই দো‘আ পড়িতেন, অর্থ, পাক-পবিত্র, বরকতময়, অনেক অনেক প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে পরওয়ারদেগার! তোমার নেয়ামত হতে মুখ ফিরান যায় না, আর তারঅমেবষণন ত্যাগ করা যায় না এবং তার প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকা যায় না (বুখারী, মিশকাত হা/৪১৯৯)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا.

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট, যে একগ্রাস খাদ্য খেয়ে তাঁর প্রশংসা করে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে’ (মুসিলম, মিশকাত হা/৪২০০)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَنَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اللهَ عَلَى طَعَامِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ أوَّلَه وآخرَه.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেহ খানা খায় এবং আল্লাহর নাম লইতে ভুলিয়া যায়, (স্মরণ হওয়ার পর) সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ আওয়্যালাহু ওয়া আখিরাহু (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২০২)

عَن أبي أيوبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَكَلَ أَوْ شَرِبَ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَ وَسَقَى وَسَوَّغَهُ وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجًا.

আবু আইউব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কিছু খাইতেন না পান করতেন, তখন এই দো’আ পড়িতেন। অর্থ: সমসত্ম প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি খাওয়াইয়াছেন, পান করায়িাছেন, অতি সহজে তা উদরসত্ম করেছেন এবং বের হইবার ব্যবস্থা করেছেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২০৭)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ أُتِيَ بِقَصْعَةٍ مِنْ ثَرِيدٍ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ جَوَانِبِهَا وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهَا فَإِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِي وَسَطِهَا.

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা নবী (ছা:) এর সম্মুখে এক পাত্র সারীদ আনা হল। তখন তিনি লোকদিগকে বললেনঃ তোমার তার পার্শ্ব হতে খাও, মধ্য হতে খাইও না। কেননা, খাদ্যের বরকত মাঝখানেই অবতীর্ণ হয় (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৪২১১)

عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْكَعْبِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتُهُ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ وَلَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَثْوِيَ عِنْدَهُ حَتَّى يُحَرِّجَهُ».

আবু শুরাইহ আলকাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের ঈমান রাখে সে যেন তার অতিথির সম্মান করে। অতিথির জন্য উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করা চাই এক দিন ও এক রাত। আর সাধারণভাবে আতিথেয়তা হল তিনি তিন দিন। এর পর যা করবে তা্হবে সদকা। আর মেহমানের জন্য জায়েয নয় এত সময় মেযবানের গৃহে অবস্থান করা যাতে তার কষ্ট হয় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৪)

জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ইয়াহুদী খৃষ্টানরা নারীদের মর্যাদা দেয় নি। অমুসলিমরাও নারীদের মূল্যায়ন করেনি। বরং ইসলামই নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন করেছে।

জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের ব্যাপারে মূল্যায়ন করা হয়নি, এব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ- يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ.

তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানী হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হ’তে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট! (নাহল ৫৮-৫৯)

وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ- بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ.

যখন জীবমত্ম-প্রথিত (জীবমত্ম কবর) কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে। কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (তাকবীর ৮-৯)

عَن الْمُغِيرَةِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ.

মুগীরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর তোমাদের মাতাদের অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৫)বাংলা মিশকাত হা/৪৬৯৮, পূর্ণ হাদীছ দিতে হবে

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ يَزِيْدَ الْجُعْفِيِّ قَالَ انْطَلَقْتُ أَنَا وَأَخِيْ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ أُمَّنَا مُلَيْكَةَ كَانَتْ تَصِلُ الرَّحِمَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتَفْعَلُ وَتَفْعَلُ هَلَكَتْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَهَلْ ذَلِكَ نَافِعُهَا شَيْئًا قَالَ لَا قَالَ قُلْنَا فَإِنَّهَا كَانَتْ وَأَدَتْ أُخْتًا لَنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَهَلْ ذَلِكَ نَافِعُهَا شَيْئًا قَالَ الْوَائِدَةُ وَالْمَوْءُودَةُ فِي النَّارِ إِلَّا أَنْ تُدْرِكَ الْوَائِدَةُ الْإِسْلَامَ فَيَعْفُوَ اللهُ عَنْهَا-

সালামা ইবনু ইয়াযীদ আল-জু‘ফী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আমার ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমাদের মাতা মুলাইকা আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখতেন, অতিথি সেবা করতেন। এছাড়া অন্যান্য ভাল আমল করতেন। তিনি জাহেলিয়াতের যুগে মারা গেছেন। এসব সৎ আমল তার কোন কাজে আসবে কি? তিনি উত্তরে বললেন, না। আমরা বললাম, তিনি জাহিলিয়াতের যুগে আমাদের এক বোনকে জীবন্ত পুঁতে দিয়েছিলেন, এতে তার কোন ক্ষতি হবে কি? নবী কারীম(সা.) বললেন, যাকে জীবন্ত দাফন করা হয়েছে এবং যে দাফন করেছে উভয়েই জাহান্নামে যাবে। তবে পরে ইসলাম গ্রহণ করলে ক্ষমা হবে’ (আহমাদ হা/১৫৮৬৬; ইবনু কাছীর হ/৭১৬৭)

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْوَائِدَةُ وَالْمَوْءُودَةُ فِي النَّارِ-

ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যাকে জীবন্ত দাফন করা হয়েছে এবং যে দাফন করেছে উভয়েই জাহান্নামী’ (ত্বাবারানী, ইবনু কাছীর হা/৭১৬৮)

عَنْ عُمَرَ قَالَ جَاءَ قَيْسُ بْنُ عَاصِمٍ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ قَالَ: إِنِّيْ وَأَدْتُ ثَمَانِيَ بَنَاتٍ لِيْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، قَالَ: أَعْتِقْ عَنْ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهَا رَقَبَةً، قُلْتُ: إِنِّيْ صَاحِبُ إِبِلٍ، قَالَ: اِهْدِ إِنْ شِئْتَ عَنْ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ بَدَنَةً-

ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, কায়েস ইবনু আছিম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমি জাহিলিয়াতের যুগে আমার ৮ জন কন্যাকে জীবিত প্রোথিত করেছি, এখন আমার করণীয় কি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি প্রত্যেকটি কন্যার বিনিময়ে একটি করে গোলাম আযাদ করে দাও। তখন কায়েস (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমি তো উটের মালিক। আমি গোলামের মালিক নই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেকের জন্য একটি করে উট আল্লাহর নামে কুরবানী করে দাও’ (বাযযার, তাবারানী, ইবনু কাছীর হা/৭১৭১)

وَفِى رِوَايَةٍ قَالَ قَيْسُ بْنُ عَاصِمٍ وَأَدَتُ ثَمَانِيَ بَنَاتٍ لِيْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَقَالَ فِى اَخِرِهِ فَاهْدِ إِنْ شِئْتَ عَنْ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ بَدَنَةً-

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, কায়েস ইবনু আছিম বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে আমার ৮টি মেয়েকে জীবন্ত প্রোথিত করেছি। নবী করীম(সা.) বললেন, ‘তুমি প্রত্যেকটি মেয়ের বিনিময়ে একটি করে উট কুরবানী কর’ (ত্বাবারানী, ইবনু কাছীর হা/৭১৭২)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ هَكَذَا وَضَمَّ أَصَابِعَهُ-

আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন করবে তাদের পূর্ণ বয়স্কা হওয়া পর্যন্ত, ক্বিয়ামতের দিন সে আমার সাথে এভাবে আসবে। এ বলে তিনি নিজের আঙ্গুলিসমূহ একত্রিত করে দেখালেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫০)

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ وَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

ওকবা ইবনু আমের (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে সে যদি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে এবং নিজের সামর্থ্যানুযায়ী তাদের খাদ্য প্রদান করে, পান করার ব্যবস্থা করে এবং তাদের পোশাক পরিধান করায়, তাহলে তারা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম হতে অন্তরাল হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬৯, ছহীহাহ হা/২৯৪)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ رَجُلٍ تُدْرِكُ لَهُ ابْنَتَانِ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِمَا مَا صَحِبَتَاهُ أَوْ صَحِبَهُمَا إِلَّا أَدْخَلَتَاهُ الْجَنَّةَ-

ইবনু আববাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে কোন মুসলমান ব্যক্তির দু’জন কন্যা হবে, সে তাদের ভালভাবে রক্ষণাহেবণ করবে যতদিন তারা দু’জন তার কাছে থাকবে, তাহলে তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৭০)

 عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ عَالَ ثَلَاثَ بَنَاتٍ فَأَدَّبَهُنَّ وَزَوَّجَهُنَّ وَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ فَلَهُ الْجَنَّةُ-

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিন জন মেয়েকে লালন-পালন করবে, তাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিবে এবং তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করবে, অতঃপর তাদের সাথে ভাল ব্যবহার বজায় রাখবে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে’ (আহমাদ হা/১১৮৬৩)।

অত্র আয়াতসমূহ এবং হাদীছগুলি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জাহেলিয়াতের যুগে মেয়েদেরকে জীবিত মাটিতে পুঁতে দেওয়া হত। মুফাসসিরগণ তার বাসত্মবরূপের এভাবে বিবরণ দেন।

ইহুদী-খৃষ্টান নারীদেরকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে এবং উপভোগের বস্ত্ত হিসাবে ব্যবহার করে। নারীরা ঋতুবতী হলে তারা তাদেরকে ঘৃণা করে।

عَنْ أَنَسٍ إِنَّ الْيَهُودَ كَانُوا إِذَا حَاضَتِ الْمَرْأَةُ فِيهِمْ لَمْ يُؤَاكِلُوهَا وَلَمْ يُجَامِعُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ فَسَأَلَ أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِى الْمَحِيضِ).

আনাস ইবনু মালেক (রা.) বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন কোন স্ত্রীলোক হায়েযগ্রস্তা হত তখন তাদের সাথে একত্রে খেত না এবং তাদেরকে এক সঙ্গে রাখত না। একবার নবী করীম(সা.) -কে তারা (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, আর তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে হায়েয সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৫)। অত্র হাদীছে নারীদের সাথে ইহুদী-নাছারাদের আচরণ প্রমাণিত হয়, যা খুব দুঃখজনক।

পক্ষামত্মরে নবী কারীম (ছাঃ) ঋতুবতী নারীদের সাথে যে আচরণ করেন।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ  مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ كِلاَنَا جُنُبٌ وَكَانَ يَأْمُرُنِي فَأَتَّزِرُ فَيُبَاشِرُنِي وَأَنَا حَائِضٌ وَكَانَ يُخْرِجُ رَأْسَهُ إِلَيَّ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فَأَغْسِلُهُ وَأَنَا حَائِضٌ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমি আর নবী একই পাত্র হতে গোসল করতাম, অথচ তখন আমরা উভয়ে নাপাক। আমি তাঁর আদেশক্রমে লজ্জাস্থানের উপর লুঙ্গী বা কাপড় বাঁধতাম, তারপর তিনি তাঁর শরীর আমার শরীরের সাথে লাগাতেন অথবা আমার সাথে শুইতেন। অথচ তখন আমি ঋতুবতী। তিনি ই‘তেকাফ অবস্থায় আমার দিকে মাথা বের করে দিতেন। আমি মাথা ধুয়ে দিতাম, অথচ আমি ঋতুবতী (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৬)।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ  فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِيَّ فَيَشْرَبُ وَأَتَعَرَّقُ الْعَرْقَ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ  فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِيَّ.

আয়েশাgবলেন, ‘আমি ঋতু অবস্থায় পানি পান করতাম, অতঃপর রাসূল(সা.) -কে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে মুখ রেখে পানি পান করতেন। আর কখনও আমি ঋতু অবস্থায় হাড়ের মাংস খেতাম। অতঃপর তা আমি তাকে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে মুখ লাগিয়ে খেতেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭)।

عَنْ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهَا أَنَّ النَّبِيَّ  كَانَ يَتَّكِئُ فِي حَجْرِي وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ.

আয়েশাgবলেন, ‘নবী(সা.) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন পড়তেন, অথচ আমি ঋতুবতী (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৮)।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَاوِلِينِي الْخُمْرَةَ مِنَ الْمَسْجِدِ قَالَتْ فَقُلْتُ إِنِّي حَائِضٌ فَقَالَ إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِي يَدِكِ.

আয়েশাgবলেন, নবী(সা.) একদা আমাকে বললেন, ‘মসজিদ হ’তে মাদুরটি দাও! আমি বললাম, আমি ঋতুবতী। রাসূল(সা.) বললেন, তোমার ঋতু তোমার হাতে লেগে নেই (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৯)।

عَنْ مَيْمُونَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي مِرْطٍ بَعْضُهُ عَلَيَّ وَبَعْضُهُ عَلَيْهِ وَأَنا حَائِض.

মায়মুনাgবলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)ছালাত পড়তেন একটি চাদরে, যার একাংশ আমার গায়ের উপর থাকত আর অপরাংশ তাঁর গায়ের উপর, অথচ তখন আমি ঋতুবতী (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫০)।

অত্র বিবরণে বুঝা যায় আল্লাহর নবী নারীদের কেমন মর্যাদা দিতেন। ঋতু অবস্থায় ইহুদীরা নারীদের ঘৃণা করে। আর এসময় আল্লাহর নবী স্ত্রীর উরুর উপর মাথা রেখে কুরআন তেলাওয়াত করেন।

প্রত্যেকটি জিনিসের ভাল ও মন্দ গুণাগুণ রয়েছে। এই গুণাগুণগুলিকে সে জিনিসের বৈশিষ্ট্য বলা হয়। বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উত্তম আদর্শ রয়েছে। সেগুলিই হচ্ছে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলি যে নারীর মধ্যে থাকবে সে-ই ইসলামের দৃষ্টিতে ভাল নারী বলে বিবেচিত হবে। অতএব বিশ্বের মুসলিম নারীদের শিক্ষার লক্ষ্যে ভাল নারীর কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোকপাত করা হল।

আল্লাহ তা‘আলা ভাল নারীর গুণাবলী উল্লেখ করে বলেন,

فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهَ

‘অতএব যারা সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোক তারা তাদের স্বামীদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালনকারীণী এবং স্বামীদের অনুপস্থিতিতে গোপনীয় বিষয়গুলির হেফাযতকারীণী হয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ নিজেই তার হেফাযত করেন’ (নিসা ৩৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ভাল নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন-

(১) সতী-সাধবীঃ ঐ স্ত্রী লোককে সতী-সাধবী বলা হয় যার মধ্যে ইসলামের দৃষ্টিতে অসাধু ও দৃষ্টিকটু কোন আচরণ পরিলক্ষিত হয় না।

(২) আল্লাহর হুকুম পালনকারীণী অর্থাৎ আল্লাহর আইন-বিধান স্বতঃস্ফূর্ত ও সার্বিকভাবে মেনে চলা। (৩) স্বামীর অনুপস্থিতিতে গোপনীয়তা রক্ষা করা। এগুলি হচ্ছে ভাল নারীর বিশেষ গুণাবলী, যা অর্জনের জন্য প্রত্যেক মুসলিম রমনীর সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে যত বাধা আসুক না কেন তা উপেক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। কেননা তিনি নিজেই তাদের হেফাযতের অঙ্গীকার করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا ‘নবী যদি আপনাদের সবাইকে তালাক দেন তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ নবীকে তোমাদের পরিবর্তে এমনসব স্ত্রী দিবেন যারা তোমাদের চেয়ে উত্তম হবে। যারা হবে সত্যিকার মুসলিম অনুগত, তওবাকারী, ইবাদতকারী, ছিয়াম পালনকারী কুমারী কিংবা অকুমারী’ (তাহরীম ৫)।

এ আয়াতে আল্লাহ ভাল নারীর ছয়টি গুণ উল্লেখ করেছেন। যথা-

(১) মুসলিম- এমন স্ত্রী লোক যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করতে সর্বদা প্রস্ত্তত থাকবে।

(২) মুমিন- যে অকৃত্রিম নিষ্ঠা সহকারে ঈমান এনেছে। অর্থাৎ যাবতীয় বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর দ্বীনের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে।

(৩) আনুগত্যশীল- আনুগত্য বলতে কোন পীর-দরবেশের আনুগত্য নয় বরং আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং স্বামীর আনুগত্যকে বুঝানো হয়েছে।

(৪) তওবাকারী- এমন স্ত্রী লোক যারা সর্বক্ষণ আল্লাহর নিকট নিজের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়। নিজের পাপ কর্মের জন্য সদা-সর্বদা লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। এ ধরনের স্ত্রীদের মধ্যে কোন সময়ই অহংকার, গৌরব ও আত্মম্ভরিতার ভাবধারা জাগ্রত হ’তে পারে না। এমন রমণীগণ হয় নরম প্রকৃতির।

(৫) ইবাদতকারীণী- একজন নারীকে সর্বোত্তম হওয়ার জন্য ইবাদতগুযার হওয়া একান্তই যরূরী।

(৬) ছিয়াম পালনকারী- ফরয বা নফল ছিয়াম পালন করা অতীতের নবী ও সৎলোকদের কাজ। ছিয়াম পালন করলে প্রবৃত্তি দমন হয়। তাই ছিয়াম পালন করা ভাল নারীদের এক বিশেষ গুণ।

ভাল মহিলাদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে এমন নারী যে, বন্ধুভাবাপন্ন, ঘন ঘন সন্তান প্রসবকারিণী, সমব্যথী, সান্ত্বনা প্রদানকারিণী, সহযোগিনী’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৪৯, ১৯৫২)। এ হাদীছে ভাল নারীর চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। যথা-

(১) স্বামীর প্রতি গভীর অনুরাগী ও বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া।

(২) অধিক সন্তান প্রসব করা। দারিদ্রের ভয়ে সন্তান নেয়া বন্ধ করা যাবে না। কেননা রিযিকের মালিক আল্লাহ। তিনি সবার রিযিক দান করেন।

(৩) স্বামীর কাজে সহযোগিতা করা। অর্থাৎ স্বামীর ইবাদত-বন্দেগী হ’তে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সব কাজে তাকে সহযোগিতা করা।

(৪) স্বামীর দুঃখে দুঃখী হওয়া ও তার ব্যথায় সমব্যথী হওয়া। উপরোক্ত চারটি গুণ লাভ করার জন্য প্রত্যেক মুসলিম মহিলাকে যত্নবান হওয়া অতীব যরূরী।

দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »