শরীয়তের দু’টি প্রধান ও প্রতিষ্ঠিত বৈশিষ্ট্য হলো শিথিলতা ও সরলতা। এ দুটি গুণ মুসলমানকে তার ইবাদতে এবং কাজ-কর্মে-আচার-আচরণে সাহায্য করে।
وَأَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَىٰ
“আর তিনিই (যাকে ইচ্ছা) হাসান আর (যাকে ইচ্ছা) কাদান।” (৫৩-সূরা আন নাজমঃ আয়াত-৪৩)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসা ও কৌতুক করা এই উভয় কাজই করতেন। কিন্তু সত্য ছাড়া অন্য কিছু (তথা মিথ্যা) বলতেন না। তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন এবং তিনি স্পষ্ট ভাষায় কৃত্রিমতা ও কঠোরতা নিষেধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, কেউ যখন ধর্ম খুব বেশি কঠিন করে ধর্ম তখন তাকে অসহায় করে ফেলবে।
অন্য একটি হাদীসে আমাদেরকে অবগত করা হয়েছে যে, ধর্ম দৃঢ়। অতএব ধীরে ধীরে আমাদেরকে গভীরে প্রবেশ করতে হবে। আমাদেরকে এ কথাও জানানো হয়েছে যে, প্রত্যেক মানুষের জীবনী শক্তির একটি স্তর আছে এবং যে ব্যক্তি অতি কঠোর সে অবশ্যই ও অবশেষে ভেঙ্গে পড়বে। সে মটকে যাবে (মট করে ভেঙ্গে যাবে) এ কারণে যে, সে শুধুমাত্র বর্তমান অবস্থাটা দেখে এবং সেসব অবস্থা সে দেখে না, যে অবস্থাতে সে ভবিষ্যতে থাকতে পারে। সে তার মনোভাবের দীর্ঘকালীন প্রভাব ও অতিরিক্ত কঠোরতার ফলে সৃষ্ট বিরক্তির কথা ভুলে যায়। অধিকতর জ্ঞানী তিনিই, যিনি সর্বদা অল্প পরিমাণ কাজ করে যান, পরিবেশ পরিস্থিতি যাই হোক না কেন (তিনি কাজ বাদ দেন না)। হঠাৎ যদি তিনি কোন নির্দিষ্ট দিনে বেশি উৎসাহী হয়ে যান, তবে তিনি অতিরিক্ত কাজ করেন। কিন্তু যদি তিনি দুর্বল হয়ে যান তবে কমপক্ষে তিনি তার দৈনিক রুটিনের অংশ বিশেষ হলেও সম্পাদন করেন (তবুও একেবারে কাজ ছেড়ে দেন না)।
একজন সাহাবী (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত কথার সম্ভবত এটাই অর্থ- “আত্মা এক সময়ে আগে বাড়ে, এক সময়ে পিছু হটে। যে সময় এটা আগে বাড়ে, তখন সুবিধা ভোগ কর আর যখন এটা পিছু হটে তখন এটাকে একা ছেড়ে দাও।”
আমি এমন অনেক লোক দেখেছি, যারা ভালো নিয়্যতে অত্যধিক পরিমাণে নফল সালাত পড়েছে এবং তাদের ধর্ম-কর্মে চরম বাড়াবাড়ি করেছে। কিন্তু যা হোক অবশেষে তারা তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বোধ করার পূর্বে যে (স্বাভাবিক) অবস্থায় ছিল তার চেয়েও অধিকতর দুর্বল অবস্থায় পৌছে গিয়েছিল। অনেকে যে বিষয়টি উপেক্ষা করে তা হলো ধর্ম মূলতঃ মানুষের নিকট সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনার জন্যই এসেছে।
مَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقَىٰ
“(হে মুহাম্মদ!) তোমার ওপর আমি কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যাতে তুমি কষ্ট পাও।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-২)
যারা নিজেদের উপর সাধ্যাতিত বোঝা চাপায়, আল্লাহ তাদেরকে তিরস্কার করেন। নিজেদেরকে বাস্তব জগৎ থেকে সরিয়ে নেয়ার কারণে তারা তাদের পূর্বকৃত ওয়াদা থেকে ফিরে গিয়ে শেষ হয়ে যায়।
وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا
“আর সন্ন্যাসবাদ বা বৈরাগ্যবাদ, তারা একে আবিষ্কার করেছিল, আমি তাদের ওপর এ বিধান দেইনি। তবে তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এটা পালন করত। কিন্তু এটাকেও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।” (৫৭-সূরা আল হাদীদঃ আয়াত-২৭)
ইসলাম দেহ-মনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার কারণে, ইহ-পরকালের পাথেয় যোগান দেয়ার কারণে এবং সকলের নিকট স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করার কারণে অন্যান্য ধর্ম থেকে ব্যতিক্রমধর্মী।
“সেটিই সঠিক ধর্ম।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৩৬)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন “একজন মরুবাসী আরব এসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কোন লোক সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন-
مؤمن مجاهد بنفسه وماله في سبيل الله ثم رجل معتزل فى شعب من الشعاب يعبد ربه
যে মু’মিন নিজের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে সে-ই উত্তম। পরবর্তী স্তরের লোক হলো সে, যে তার প্রভুর ইবাদত করার জন্য কোন উপত্যকায় (বা গিরিপথে) থেকে একাকী বাস করে।
অন্য একটি বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-
يَتَّقِي اللَّهَ وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ
“সে ব্যক্তি (উত্তম), যে নাকি আল্লাহকে ভয় করে এবং তার ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখার জন্য লোকদেরকে ছেড়ে চলে যায়।”
আবু সাঈদ (রাঃ) নিম্নোক্ত হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন-
يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ غَنَمٌ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ وَمَوَاقِعَ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنْ الْفِتَن
ভাবার্থঃ “অচিরেই মুসলমানের উত্তম সম্পদ হবে ভেড়া-ছাগল-বকরী। তা নিয়ে সে পাহাড়ের পাদদেশে চারণভূমিতে ও বৃষ্টিবহুল স্থানে ঘুরে বেড়াবে। সে ফেতনা-ফাসাদের ভয়ে তার ধর্ম (রক্ষার্থে তা) নিয়ে পালিয়ে বেড়াবে।”
উমর (রাঃ) বলেছেন- خذوا بحظكم من العزلة
ভাবার্থঃ “নিঃসঙ্গ জীবনের যে অংশ তোমার ভাগে আছে তা গ্রহণ কর।”
যুনাইদ (রহঃ) কত সুন্দরই বলেছেন-
مكابدة العزلة أيسر من مداراة الخلطة
ভাবার্থঃ “মানুষের তোষামোদের চেয়ে নিঃসঙ্গ জীবন ভোগ করা সহজ।”
খাত্তাবী বলেছেন- “একাকী জীবন যাপনের অর্থ যদি গৌরব থেকে নিরাপদ থাকা হয় এবং সে সব মন্দ কাজ দূরে থাকা হয়, যার পরিবর্তন সাধন করা আপনার সাধ্যাতীত। তবে এটা খুব উপকারী কোন কিছু।”
হাকীম (রহঃ) তার ‘মুছতাদরাক’ কিতাবে আবু যর (রাঃ) থেকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যার সাথে শেষোক্ত খাত্তাবীর কথার অর্থের মিল আছে আর তাহলো—
الْوِحْدَةُ خَيْرٌ مِنْ جَلِيسِ السُّوءِ
ভাবাৰ্থঃ “মন্দ সাথীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো।”
এ হাদীসের সনদ হাসান। খাত্তাবী (রহঃ) বুঝাতে চান যে, আমাদের ধর্মের তথা ইসলাম ধর্মে সন্ন্যাসবাদ ও সামাজিকতার বিধান নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর। ওহীর মাধ্যমে আমাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে- বিশেষ উদ্দেশ্যে মানুষের সাথে মিলে থাকতে, জ্ঞানী লোকদের অনুসরণ করতে এবং ধর্মীয় ব্যাপারে সমাজের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে। যে ব্যক্তি নিজের ধর্ম রক্ষায় এবং সম্পদ অর্জনে নিজেই যথেষ্ট, তার জন্য একাকিতুই উত্তম। তবে প্রয়োজনের সময় ও ভালোকাজে অন্যদের সাথে মেশা দরকার। তা সত্ত্বেও তাকে জরুরি কাজগুলো অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে; যেমন- জামায়াতে সালাত আদায়, সালামের উত্তর প্রদান, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার সালাতে হাজির হওয়া ইত্যাদি। যা দরকার তা হলো অতিমাত্রায় সামাজিক না হওয়া।
কেননা, এমন অতি মাত্রায় সামাজিক হওয়ার ফলে সময় নষ্ট হবে এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করা হবে। দেহের জন্য পানাহারের প্রয়োজন যেমন, সমাজের অন্যদের সাথে মিলামিশা করা তেমন। উভয় ক্ষেত্রেই যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু গ্রহণ করা উচিত। এটাই দেহ-মনের জন্য পবিত্রতর আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন। কুশাইরী (রহঃ) একাকীত্ব বিষয়ে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধে বলেছেন, যে নিঃসঙ্গতা অন্বেষণ করে তার একথা মনে (ধারণা) করা উচিত যে, সে এ কাজ করছে তার ক্ষতি থেকে জনগণকে বাঁচানোর জন্য এবং এর বিপরীতটা নয় (অর্থাৎ, জনগণের ক্ষতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়)। এর কারণ এই যে, প্রথমজন নিজের সম্বন্ধে বিনয়ী মনোভাব পোষন করে (জনগনকে নিজের চেয়ে ভাল মনে করছে)- যা ধর্ম (দ্বীন) চায়। দ্বিতীয়জন অন্যদের উপর নিজের বড়ত্ব আরোপ করেছে (জনগণকে নিজের চেয়ে খারাপ মনে করেছে)- যা মুমিনের চরিত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে জনগণকে (মানুষকে) তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। দু’টি বিপরীত (পরস্পর বিপরীতধর্মী) আর তৃতীয়টি সে দুটির মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। প্রথমে শ্রেণীর লোকেরা নিজেদেরকে লোকজন থেকে এতটাই আলাদা করে রাখে যে, তারা জুময়ার সালাতে হাজির হয় না। জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করে না এবং কল্যাণকর সমাবেশে যেমন ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেয় না। ঐ শ্রেণীর লোকেরা স্পষ্টভাবে ভ্রান্ত। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা এতটাই সামাজিক যে, তারা মন্দ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে- যেখানে নাকি মিথ্যা গুজব ও সময়ের অপচয়ই বেশি। এরাও ভ্রমে পতিত। মধ্যমপন্থী (তৃতীয় শ্রেণীর) লোকেরা যে সব ইবাদত অবশ্যই জামায়াতে আদায় করতে হয় সেসব ইবাদতের ব্যাপারে অন্যদের সাথে একত্রিত হয়। ধর্ম প্রচারে, পুরস্কার অর্জনে এবং আরো বেশি ব্যাপকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়- আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে তারা অন্যদের সাথে অংশগ্রহণ করে। যে সব সমাবেশে শয়তানী, মিথ্যা ও অপচয় বেশি তারা সে সব সমাবেশকে এড়িয়ে চলে।
“এরূপে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৪৩)
উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে-
عَلَيْكُمْ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّهُ بَابٌ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يُذْهِبُ اللَّهُ بِهِ الْهَمَّ وَالْغَمَّ
ভাবাৰ্থঃ “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত থাক; কেননা, তা জান্নাতের একটি দরজা, এর মাধ্যমে আল্লাহ দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা (টেনশন) দূর করে দিবেন।”
মানুষের উপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রভাব আমরা স্বীকার নাও করতে পারি; কিন্তু আমাদের বিবেক তা গ্রহণ করে। আত্মা যখন মন্দের সাথে লড়ে না, তখন এর ভয় ও উদ্বিগ্নতার মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু আত্মা যখন আল্লাহর পক্ষে জিহাদ করে, আল্লাহ তখন এর ভয় ও উদ্বিগ্নতাকে সুখ ও শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেন।
“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে পারেন, তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করতে পারেন। এবং মু’মিনদের অন্তরের ক্রোধকে দূর করতে পারেন।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১৪-১৫)
অতএব, উদ্বিগ্নতা, দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তার সাথে লড়াই করার জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী একটি ঔষধ; আর সাহায্যের জন্য আমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী ।
সৃষ্টির মাঝে যে নিদর্শনাবলি আছে তা দেখুন ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করুন। নদী-নালা, গাছ-পালা, ফুল, পাহাড়, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য ও রাত-দিন এ সব কিছুই আপনাকে সব কিছুর স্রষ্টার কথা মনে করিয়ে দিবে। এভাবে আপনার ধাৰ্মিকতার (দ্বীনদারির) মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ
“অতএব, হে দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (৫৯-সূরা আল হাশরঃ আয়াত-২)
ইসলাম গ্রহণকারী এক দার্শনিক বলেছেন- “সন্দেহ যখন আমাকে ঘিরে রেখেছিল তখন আমি সৃষ্টির পুস্তকে (অর্থাৎ পৃথিবীর দিকে) তাকিয়ে দেখতাম, যার অক্ষরগুলো (নিদের্শনগুলো) আমাকে বিস্ময়কর ও পরম দক্ষতার কথা বলত। তখন আমার ঈমান শুধুমাত্র স্বাভাবিকই হতো না, অধিকন্তু তা বেড়েও যেত।”
আল্লামা শাওক্বানী (রহঃ) বলেছেন- “কিছু সংখ্যক আলেম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন যে, লেখা ছেড়ে দেয়া আমার কখনও উচিত হবে না, যদি সে লেখা প্রতিদিন দু’লাইনও হয়। আমি এ উপদেশ অনুসারে কাজ করেছি এবং এর ফলও ভোগ করেছি।”
আর নিম্নোক্ত হাদীসের এটাই অর্থ-
خير العمل مادوام عليه صاحبه وان قل
ভাবার্থঃ “উত্তম আমল হলো তা যা আমলকারী নিয়মিত করে, যদিও তা অল্প।”
আর একথা বলা হয় যে, ফোটা ফোটা পানি (জমেই) মহাপ্লাবন ঘটায়।
আমরা সবকিছু একই সময়ে বা একসাথে করতে চাইলে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। তখন ফল যা হবে তা হলো বিরক্তি, ক্লান্তি ও সর্বাপেক্ষা খারাপ যা ঘটবে তাহলো কর্মত্যাগ। আমরা যদি আমাদের কাজকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে এক সময়ে একটি মাত্র স্তরের কাজ করি বা একটি পদক্ষেপ নেই তবে আমরা অনেক বেশি অর্জন করতে পারব। সালাতের কথা ভেবে দেখুন। একদিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে আদায় করতে আদেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন সালাতের মধ্যবর্তী বিরতিসমূহের কারণে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি অন্যান্য কাজ করার সুযোগ পায় এবং এক সালাত থেকে অপর সালাতের মাঝে ঠিক ততটা পর্যাপ্ত সময় থাকে যতটুকু সময়ের মধ্যে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি উৎসাহভরে আবার আরেক সালাতের জন্য ফিরে আসতে পারে। সকল সালাত যদি একই সময়ে পড়া বাধ্যতামূলক হতো তাহলে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে যেত।
একটি বিশেষ হাদীসের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি দীর্ঘ যাত্রাপথে তার ঘোড়াকে পূর্ণ বেগে দৌড়ানোর জন্য খোঁচা মারে সে শুধুমাত্র ঘোড়া হারাবে তা-ই নয়, অধিকন্তু সে তার গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না।
অনেক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিম্নোক্ত কথাটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে (আর তা হলো): যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কাজ করে সে তার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে যে নাকি এক সময়ে সব কাজ করে।
সালাত যে আমাদেরকে আমাদের সময়ের ব্যাপারে সুনিয়ন্ত্রিত করে এতে এমন এক শিক্ষা আছে যা আমি জ্ঞানী লোকদের থেকে শিখেছি আর এ শিক্ষা আমার জীবনে আমাকে অনেক লাভবান করেছে। নিম্নোক্ত আয়াত থেকে এ শিক্ষা অনুমান করা যায়।
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নিশ্চয় সালাত মুমিনের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা অত্যাবশ্যক।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১০৩)
কোন লোক যদি তার পার্থিব ও ধর্মীয় কর্তব্যসমূহকে সালাতকে কেন্দ্র করে ভাগ করে নিত, তবে সে দেখতে পেত যে তার সময়ে বরকত হয়েছে এবং তার সময় উত্তমরূপে কাজে লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন মুসলমান ছাত্র ফজরের সালাতের পরের সময়কে মুখস্ত করার জন্য, জোহরের সালাতের পরের সময়কে পড়ার জন্য বা পাঠ সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য, মাগরিবের সালাতের পরের সময়কে মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও বিশ্রামের জন্য এবং এশার সলাতের পরের সময়কে সম-সাময়িক বিষয়ে অনেক কিছু পড়ার জন্য ও পরিবারের সদস্যদের সাথে বসার জন্য ভাগ করে নেয় তবে সে অনেক কিছু অর্জন করবে।
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী মানদণ্ড মনোনীত করবেন। তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ তো মহাকল্যাণের অধিকারী।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-২৯)
ঋণ, পার্থিব দায়িত্ব ও পাওনা পরিশোধ বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে তিনটি মূলনীতি আছে- যা আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে ও প্রয়োগ বা বাস্তবায়িত করতে হবে।
১. বিচক্ষণ লোক অন্যের উপর নির্ভর করবে না। প্রয়োজন মাফিক খরচ করে ও অপচয় না করে যে ব্যক্তি ব্যয় করবে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পাবে।
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ
“নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-২৭)
“আর তারা যখন ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং তারা এতদুভয়ের মাঝে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে।” (২৫-সূরা আল ফুরকানঃ আয়াত-৬৭)
২. হালাল উপায়ে আপনার রিযিক উপার্জনের চেষ্টা করুন। কেননা, আল্লাহ নিজে পবিত্র এবং পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু তিনি কবুল করেন না। হারাম উপায়ে অর্জিত রিযিকে আল্লাহ বরকত দেন না।
وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ
“যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে।” (৫-সূরা মায়িদাঃ আয়াত-১০০)
৩. হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জন করার জন্য অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান এবং অকৰ্মণ্য ও অলস হওয়া পরিহার করুন। আব্দুল্লাহ ইবনে আউফ (রাঃ) যখন মদীনাতে হিজরত করেন, তখন তিনি তার সঙ্গে কিছুই নেননি। মদীনার আনসারদের একজন তাকে তার সম্পদের অর্ধেক দেয়ার প্রস্তাব করলেন। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাঝে ও ইবনে আউফ (রাঃ)-এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আউফ (রাঃ) এই উদার উপহারকে নিতে নারাজ হলেন এবং শুধুমাত্র বললেন, “আমাকে বাজারের পথ দেখিয়ে দিন।”
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“অতপর, যখন (জুমআর) সালাত শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় ও আল্লাহর করুণা (রিযিক) অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর যাতে তোমরা সফল হও।” (৬২-সূরা আল জুমআঃ আয়াত-১০)
তিনি ছিলেন দরিদ্র, মলিন ও দুর্বল। তিনি বহুতালি বিশিষ্ট ছেড়া পোশাক পরতেন। তিনি ছিলেন নগ্নপদ ও ক্ষুধার্ত। অজ্ঞাতকুল হওয়ার পাশাপাশি তার না ছিল কোন সামাজিক মর্যাদা, না ছিল কোন সম্পদ আর না ছিল কোন পরিবার। আশ্রয় নেয়ার জন্য তার কোন ছাদওয়ালা ঘর ছিল না, তিনি মসজিদে ঘুমাতেন ও সরকারী ঝর্ণার পানি পান করুতেন। তার বালিশ ছিল ভূমি। কিন্তু তিনি সর্বদা তার প্রভুকে স্মরণ করতেন ও সর্বদা আল্লাহর কিতাবের আয়াত তেলাওয়াত করতেন। তিনি সালাতের ও যুদ্ধের প্রথম কাতার থেকে অনুপস্থিত থাকতেন না।
একদিন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে তার নাম ধরে ডেকে বললেন, “হে জুলাইবীব! তুমি কি বিয়ে করবে না?” তিনি (রাঃ) নম্র ও ভদ্রভাবে উত্তর দিলেন, “কে আমাকে তাদের কন্যা দিবে?” তিনি (রাঃ) আরো দুজনের সাথে সাক্ষাৎ করলেন তারাও তাকে একই প্রশ্ন করলেন এবং তিনি (রাঃ) সে প্রশ্নের একই উত্তর দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি অমুক আনসারীর নিকট গিয়ে তাকে বুল, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং “আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।”
সে আনসারী ছিলেন মহান ও শ্রদ্ধেয় পরিবারের। জুলাইবীব (রাঃ) যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ পালন করলেন তখন আনসারী উত্তর দিলেন, “এবং আল্লাহর রাসূলের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। হে জুলাইবীব! আমি কীভাবে তোমার নিকট আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারি, যখন নাকি তোমার কোন সম্পদও নেই এবং পদমর্যাদাও নেই?” তার স্ত্রীও সংবাদটি শুনে বিস্ময়ে চিৎকার করে বলে উঠল, “জুলাইবীব যার কোন সম্পদও নেই, কোন সামাজিক মর্যাদাও নেই।”
কিন্তু তাদের ঈমানদার কন্যা জুলাইবীবের কথা শুনল, তার সম্বন্ধে কথা, যাতে আল্লাহর রাসূলের বাণী আছে। তিনি তার পিতাকে বললেন, “আপনারা কি আল্লাহর রাসূলের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করছেন? আল্লাহর কসম, তা হবে না। সাথে সাথে সে বরকতময় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তাদের বাসর রাতে রাস্তায় এক ঘোষক আসন্ন জিহাদের ঘোষণা দিচ্ছিল। জুলাইবীব অবিলম্বে যুদ্ধের ময়দানের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন। নিজ হাতে সাতজন কাফেরকে হত্যা করে জুলাইবীব নিজেও শহীদ হয়ে গেলেন। আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে এবং যে আদর্শের জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। লোকজন রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিহতদের সম্বন্ধে জানাতে লাগলেন।
কিন্তু তারা জুলাইবীবকে তার পরিচয়হীনতার কারণে ভুলে গেলেন। তা সত্ত্বেও নবীজীর কিন্তু তার কথা মনে পড়ে গেল এবং তিনি বললেন, “কিন্তু আমি জুলাইবীবকে হারিয়েছি”। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুলাইবীবের মৃতদেহ খুঁজে বের করলেন, যার মুখ ধূলিতে ঢেকে ছিল। রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখ থেকে ধূলি ঝেড়ে ফেললেন এবং বললেন, “তুমি সাতজনকে হত্যা করে তুমি নিজেই নিহত হলে! তুমি আমার, আমি তোমার; তুমি আমার, আমি তোমার; তুমি আমার, আমি তোমার!” আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে এই সম্মান-পদবীই অনেক বড় পুরস্কার।
আল্লাহর রাসূলের প্রতি ও যে আদর্শের জন্য তিনি (জুলাইবীব) নিহত হয়েছেন তার প্রতি ঈমান ও ভালোবাসার কারণেই জুলাইবীব (রাঃ)-এর এতটা মূল্য হয়েছিল। তাঁর দীন-হীন অবস্থা এবং অজ্ঞাতকুল পরিচয় তাকে তার মহা সম্মান থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। তার অল্প সম্পদ নিয়ে তিনি শাহাদাত, সন্তুষ্টি এবং পৃথিবী ও পরকালের সুখ অর্জন করেছিলেন।
“আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দান করেছেন, তাতে তারা আনন্দিত এবং তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে যারা তাদের পিছনে রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি। এ কারণে (আনন্দ প্রকাশ করে) যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তগ্রস্তও হবে না।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৭০)
অতএব, একথা মনে রাখুন যে, আপনার আদর্শ ও চরিত্রই আপনার মূল্য নির্ধারণ করে। মর্যাদার পথে ও উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের পথে দারিদ্র কখনও অনঢ় হয়ে দাঁড়ায়নি।
সাহাবীগণ বিভিন্নভাবে ধন্য হয়েছেন; তার মধ্যে একটি হলো যে, ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে তাদের মর্যাদা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াতটি-
১. আবু বকর (রাঃ) সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে-
“আর শুদ্ধির জন্য তার সম্পদ দান করে।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১৭-১৮)
২. নিম্নোক্ত হাদীসে উমর (রাঃ) সম্বন্ধে শুভ সংবাদ দেয়া হয়েছে-
رأيت قصرا ابيض فى الجنة قلت لمن هذا القصر قيل لى لعمر بن الخطاب
ভাবাৰ্থঃ “জান্নাতে আমি একটি সাদা প্রাসাদ দেখলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম; এটি কার? আমাকে বলা হলোঃ এটি উমরের।”
৩. উসমান (রাঃ)-এর জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন-
اللهم اغفر لعثمان ما تقدم من ذنبه وما تاخر
ভাবার্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি উসমানের আগে-পিছের সব পাপ ক্ষমা করে দিন।”
৪. আলী (রাঃ) সম্বন্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত কথা বলেছেন-
رجُلٌ يحبُّ الله ورسوله ويُحبُّه الله ورسوله
ভাবার্থ” “(আলী) এমন লোক যিনি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসেন এবং আল্লাহ্ ও তার রাসূলও তাকে ভালোবাসেন।”
৫. সা’দ ইবনে মুয়াজ সম্বন্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اهتز له عرش الرحمٰن
ভাবার্থঃ “পরম করুণাময়ের আরশ তার জন্য কেপে উঠেছে।”
৬. হানযালাহর (রাঃ) ইনতেকালের পর তার সম্বন্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
غسلته ملائكة الرحمٰن
ভাবার্থঃ “পরম করুণাময়ের ফেরেশতারা তাকে গোসল দিয়েছে।”
১. ফেরাউন সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا
“সকাল-সন্ধ্যা তাদেরকে আগুনের সামনে উপস্থিত করা হয়।” (৪০-সূরা আল মু'মিনঃ আয়াত-৪৬)
২. কারূন সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-
فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ
“তাই আমি তাকে ও তার বাসগৃহকে মাটিতে প্রোথিত করে দিলাম।” (২৮-সূরা আল কাসাসঃ আয়াত-৮১)
৩. ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন
سَأُرْهِقُهُ صَعُودًا
“আমি অচিরেই তাকে শাস্তির পাহাড়ে চড়াব।” (৭৪-সূরা আল মুদদাছছিরঃ আয়াত-১৭)
‘স’উদ’ হলো জাহান্নামের আগুনের মাঝে এক ঢালু ও শাস্তিদায়ক পাহাড়।
৪. উমাইয়া ইবনে খালফ সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ
“সম্মুখে ও পশ্চাতে নিন্দাকারীর প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ।” (১০৪-সূরা আল হুমাযাহঃ আয়াত-১)
৫. আবু লাহাব সম্বন্ধে আল্লাহ্ বলেন-
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ
“আবু লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক।” (১১১-সূরা আল লাহাব বা মাসাদঃ আয়াত-১)
(আবু লাহাব ছিল নবী করমর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন চাচা)
৬. এবং আস ইবনে ওয়ালী সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-
كَلَّا سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ وَنَمُدُّ لَهُ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا
“কখনও নয়! সে যা বলে তা আমি লিখে রাখব এবং (জাহান্নামে) আমি তার শাস্তিকে বাড়িয়ে দিব।” (১৯-সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৭৯)
পাপ ও আল্লাহর জিকির সম্বন্ধে গাফেল হওয়ার নিম্নবর্ণিত কুফলগুলো ভেবে দেখুনঃ একাকীত্ব, প্রার্থনার উত্তর না পাওয়ার, হৃদয়ের কঠোরতা, স্বাস্থ্য ও সম্পদে বরকতহীনতা, জ্ঞানার্জনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, অপমান, উদ্বিগ্নতা (টেনশন) এবং মন্দ সাথী যারা আত্মাকে কলুষিত করে তাদের দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া। উপরোল্লিখিত ফলাফলের পরে পাপ কাজ বাড়ে যেমন নাকি পানি দেয়া হলে গাছ বাড়ে।
তাহলে এগুলোই যদি পাপের ফল হয় তবে একমাত্র তওবার মধ্যেই ঔষুধ নিহিত আছে।
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
“এবং তাদের সাথে তোমরা সৎভাবে বা সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন কর।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১৯)
“এবং তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পারিক ভালোবাসা ও করুণার সৃষ্টি করেছেন।” (৩০-সূরা আর রূমঃ আয়াত-২১)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٌ عِنْدَكُمْ
ভাবাৰ্থঃ “নারীদের হিতাকাঙ্ক্ষী হও, কেননা, তারা তোমাদের হাতে বন্দী।”
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي
ভাবার্থঃ “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের জন্য ভালো আর আমি আমার পরিবারের জন্য তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।”
সুখী পরিবার প্রেম-ভালোবাসা, সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি এবং মহান আল্লাহর ভয়ে পূর্ণ থাকে।
“তবে কি সে উত্তম যে নাকি আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির উপর তার দালানের ভিত্তি স্থাপন করে, নাকি সে উত্তম যে নাকি খাড়া উঁচু গিরিচূড়ার ধ্বসোন্মুখ কিনারায় তার দালানের ভিত্তি স্থাপন করে, ফলে তা তাকে নিয়ে জহান্নামের আগুনে ধ্বসে পড়ে? আর আল্লাহ্ জালিমদের হিদায়াত (সঠিক পথ প্রদর্শন) করেন না।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১০৯)
জালিম বলতে বুঝায় নিষ্ঠুর, হিংস্ৰ, অহংকারী, মুশরিক (বহু ঈশ্বরবাদী বা অংশীবাদী) এবং অন্যায়কারী ও অত্যাচারী।