হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি ইসলামহাউজ.কম ৮৭ টি
হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি ইসলামহাউজ.কম ৮৭ টি

وَالْمُعْضَلُ السَّاقِطُ مِنْهُ اثْنَانِ | وَمَا أَتَى مُدَلَّسًا نَوْعَان

الأَوَّلُ الإسْقَاطُ لِلشَّيْخِ وَأَنْ | يَنْقُلَ عَمَّنْ فَوْقَهُ بِعَنْ وَأَنْ

وَالثَّانِ لا يُسْقِطُهُ لَكِنْ يَصِفْ | أَوْصَافَهُ بِمَا بِهِ لا يَنْعَرِفْ

“আর যার থেকে দু’জন রাবি পতিত তাই ‘মু‘দ্বাল’। আর মুদাল্লাস হিসেবে যা এসেছে তা দু’প্রকার। প্রথম প্রকার: নিজ শায়খকে ফেলে দেওয়া এবং শায়খের শায়খ থেকে عَنْ বা أنْ শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা। দ্বিতীয় প্রকার: নিজ শায়খকে ফেলে দিবে না, কিন্তু তার এমন বিশেষণ উল্লেখ করা যার দ্বারা সে পরিচিত হবে না”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ঊনবিংশ ও বিংশ প্রকার মু‘দ্বাল ও মুদাল্লাস। হাদিসের এ দু’প্রকারের সম্পর্ক সনদের সাথে।

মু‘দ্বাল হাদিস


‏معْضَلُ‏‏ এর আভিধানিক অর্থ মুশকিল ও কঠিন। কঠিন বিষয়কে আরবরা বলে: أَمْرٌ عَضِيلٌ ‘কঠিন বিষয়’। একাধিক রাবি অনুল্লেখ থাকার কারণে মু‘দ্বাল হাদিসও কঠিন হয়। মানুষ তার ভালমন্দ জানে না, তাই তার থেকে উপকৃত হতে পারে না।
‘মু‘দ্বালে’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “যে হাদিসের সনদ থেকে দু’জন রাবি পতিত হয় তাই ‘মু‘দ্বাল’। লেখক দু’জন রাবির বাদ পড়াকে ক্রমান্বয়ে শর্তারোপ করেননি, তাই এ সংজ্ঞা মুনকাতি‘ ও মু‘দ্বাল উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ সনদ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দু’জন রাবির ইনকিতাকে মুনকাতি‘ বলা হয়, মু‘দ্বাল বলা হয় না। অতএব এ সংজ্ঞা যথাযথ নয়।

উদাহরণত একটি সনদে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ চার জন রাবি রয়েছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাবি বিলুপ্ত হলে হাদিস মু‘দ্বাল, কারণ ক্রমান্বয়ে দু’জন রাবি বাদ পড়েছেন। অনুরূপ ক্রমান্বয়ে তিন বা তার অধিক রাবি বিলুপ্ত হলেও মু‘দ্বাল। আর দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্তর থেকে রাবি বিলুপ্ত হলে মুনকাতি‘, কারণ ক্রমান্বয়ে দু’জন রাবি বাদ পড়েনি। সনদের শুরু ও শেষ রাবি বাদ পড়লে হাদিস যথাক্রমে মু‘আল্লাক ও মুরসাল। প্রথম রাবি নেই হিসেবে মু‘আল্লাক, শেষ রাবি নেই হিসেবে মুরসাল। প্রথম থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়লে মু‘দ্বাল ও মু‘আল্লাক, আর শেষ থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়লে মু‘দ্বাল ও মুরসাল। এ সকল প্রকারই দ্বা‘ঈফ, তবে মু‘দ্বাল অধিক দ্বা‘ঈফ। মু‘দ্বালের উদাহরণ :

حَدَّثَنِي مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِلْمَمْلُوكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ بِالْمَعْرُوفِ، وَلَا يُكَلَّفُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا يُطِيقُ»

মালিক রাহিমাহুল্লাহ্ তার মুয়াত্তায় হাদিসটি মু‘দ্বাল বর্ণনা করেছেন, তবে অপর জায়গায় তিনি মুত্তাসিল বর্ণনা করেছেন, যেমন:

عن محمد بن عجلان عن أبيه عن أبي هريرة ... ...

এ সনদে মালিক ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যবর্তী মুহাম্মদ ও তার পিতা ‘আজলান রয়েছেন। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, উক্ত হাদিস থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়েছেন।

মু‘দ্বালের হুকুম:
মু‘দ্বাল শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

[1] মালিকের নিকট পৌঁছেছে যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দাস-দাসীগণ রেওয়াজ অনুযায়ী খাদ্য ও পোশাকের হকদার। মুয়াত্তা ইমাম মালিক: (১৮৩৫)

‏‏مدلس‏‏ শব্দটি تدليس থেকে গৃহীত, যার ধাতু دُلسة অর্থ অন্ধকার। ‘তাদলিস’ শব্দটি মূলত ব্যবহার হয় কেনাকাটায়। ক্রেতাদের বিভ্রাটে ফেলার জন্য পশু মোটা-তাজা করাকে তাদলিস বলা হয়। অনুরূপ গাভীর স্তনে দুধ জমা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করাও তাদলিস, কারণ তার দ্বারা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া হয়।

তাদলিস দু’প্রকার:

১. তাদলিসুল ইসনাদ ও ২. তাদলিসুস শুয়ুখ। কেউ তাদলিসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন, তৃতীয় প্রকার-৩. তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ। নিম্নে সংজ্ঞাসহ প্রত্যেক প্রকার প্রদত্ত হল:
১. تدليس الإسناد ‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: নিজ শায়খকে বাদ দিয়ে পরবর্তী শায়খ থেকে عن বা أن শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা, যেন সনদ মুত্তাসিল বুঝা যায়, যেমন বলা: حدثنا فلان عن فلان كذا অথবা বলা: حدثنا فلان أنَّ فلانا قال كذا এখানে أنَّ তাশদীদ যুক্ত, লেখক কবিতার অন্ত্যমিলের জন্য أن সাকিন যুক্ত উল্লেখ করেছেন।
‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে খতিব, ইব্‌নুস সালাহ, নববি, ইব্‌ন কাসির, ইব্‌নুল মুলাক্কিন ও ইরাকি প্রমুখ বলেন: ‘শায়খ থেকে অশ্রুত হাদিস রাবির এমনভাবে বর্ণনা করা যে, শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি এ হাদিসও শায়খ থেকে শ্রবণ করেছেন’। অথবা ‘রাবি সমকালীন কোনো মুহাদ্দিস থেকে এমনভাবে হাদিস বর্ণনা করবেন, যার সাথে তার সাক্ষাত হয়নি, যেন শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন’।
সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আলেমগণ মুদাল্লিসদের নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন, তাই এ নিয়ে অধিক ঘাটাঘাটি করা ফলদায়ক নয়, তবে এখনো কতক মুদাল্লিসকে জানা সম্ভব, যাদেরকে তারা মুদাল্লিসদের কাতারে শামিল করেননি, কারণ তাদের তাদলিস খুব কম। আল্লাহ ভালো জানেন”।

২. تدليس الشيوخ ‘তাদলিসুশ শুয়ুখ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “রাবি নিজ শায়খকে উহ্য করবে না ঠিক, তবে তার অপরিচিত গুণ বর্ণনা করবে, যা তাকে চিহ্নিত করবে না”। অর্থাৎ মুদাল্লিস শায়খকে উল্লেখ না করে তার উপাধি, গুণাগুণ, পদবী বা উপনাম উল্লেখ করবে, যার ফলে মানুষের নিকট সে পরিচিত হবে না, অজ্ঞাতই থাকবে।
এ প্রকার সনদ পূর্বোক্ত তাদলিসুল ইসনাদ অপেক্ষা কম দোষণীয়। যদি রাবি শায়খের দুর্বলতার কারণে এরূপ করে তাহলে খিয়ানত। মুদাল্লিসের শায়খের কারণে কখনো তাদলিসুল ইসনাদ নিকৃষ্টতর, কখনো হয় তাদলিসুস শুয়ুখ, তবে স্বাভাবিক হালতে তাদলিসুল ইসনাদ নিন্দনীয়। কারণ তাদলিসুস শুয়ূখে অনুল্লেখ রাবি জানা অধিকতর সহজ, যা তাদলিসুল ইসনাদে সম্ভব নয়।

৩. تدليس التسوية তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ লেখক উল্লেখ করেননি। এ প্রকারের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে হাফেয ইরাকি রহ. বলেন: ‘মুদাল্লিস’ একটি হাদিস বর্ণনার ইচ্ছা করে, যা সে তার সেকাহ শায়খ থেকে শ্রবণ করেছে, কিন্তু তার সেকাহ শায়খ শ্রবণ করেছে দুর্বল শায়খ থেকে, মুদাল্লিস এখানে শায়খের শায়খ তথা দুর্বল শায়খকে ফেলে অস্পষ্ট শব্দ দ্বারা বর্ণনা করে, যেন বুঝা যায় সনদের সকল রাবি সেকাহ। কখনো বয়স কমের কারণে মুদাল্লিস শায়খের শায়খকে ফেলে দেয়, যদিও সে সেকাহ হয়।
‘আলায়ি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এ প্রকার তাদলিস সাধারণত রাবির দুর্বলতার কারণে করা হয়। এ তাদলিস নিকৃষ্ট ও সবচেয়ে খারাপ, তবে অন্যান্য প্রকারের তুলনায় তার সংখ্যা কম”। সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এখানে কম দ্বারা উদ্দেশ্য তাদলিসুল ইসনাদ ও তাদলিসুস শুয়ূখ অপেক্ষা কম, কিন্তু যারা এতে লিপ্ত হয়েছে তাদের সংখ্যা কম নয়। আমার নিকট তাদের সংখ্যা (১৯) পর্যন্ত রয়েছে।

তাদলিস করার কারণ:
তাদলিস করে রাবি কখনো নিজেকে গোপন করতে চান, যেন কেউ না বলে তিনি অমুক শায়খ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। কখনো রাজনৈতিক কারণে তাদলিস করা হয়। কখনো শাসক বা কারো থেকে রাবি নিজের উপর ক্ষতির আশঙ্কা করে তাদলিস করেন। কখনো শায়খের স্মরণ শক্তি কম, বা দীনদারী কম বা তার চেয়ে মর্যাদায় ছোট ইত্যাদি করণে রাবি তাদলিস করেন।
শায়খকে উল্লেখ না করার কারণ অনেক, তবে আদিল না হওয়ার কারণে শায়খকে বাদ দেওয়া সবচেয়ে খারাপ। এ জাতীয় তাদলিস হারাম, কারণ হতে পারে হাদিসটি বাদ পড়া রাবির মিথ্যা রচনা। অতএব মুদাল্লিস সেকাহ হলেও তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না সে শায়খ থেকে শোনার কথা স্পষ্ট বলে।

তাদলিসের বিধান:
তাদলিস করা হারাম, কারণ তাদলিস একপ্রকার ধোঁকা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا».

“যে ধোঁকা দিল, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের দোষ গোপনকারীকে বলেছেন, তাহলে হাদিসের সনদের দোষ গোপনকারীর পরিণতি আরো জঘন্য হবে সন্দেহ নেই। তবুও অনেক তাবে‘ঈ ও পরবর্তী মনীষীগণ কিছু কারণে তাদলিস করতেন, যার পশ্চাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যা সম্পৃক্ত করার দুঃসাহস কিংবা মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছিল না, বরং ভালো উদ্দেশ্যে ছিল। এ কারণেও আমরা তাদেরকে দায় মুক্ত বলতে পারি না। আমরা বলব: তারা মুজতাহিদ ছিলেন, তারা তাদের ইজতিহাদের সওয়াব পাবেন, কিন্তু তারা যদি প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে দিতেন, তাহলে অনেক ভালো ছিল ও সুন্দর হত সন্দেহ নেই।

وَمَا يُخَالِفْ ثِقَةٌ فِيْهِ الْمَلا | فَالشَّاذُ وَالْمَقْلُوْبُ قِسْمَانِ تَلا

إبْدَالُ رَاوٍ مَا بِرَاوٍ قِسْمُ | وَقَلْبُ إسْنَادٍ لِمَتْنٍ قِسْمُ

“আর যেখানে সেকাহ রাবি বৃহৎ সংখ্যক রাবির বিরোধিতা করে তাই শায। আর শাযের অনুগামী মাকলুব দু’প্রকার: সনদের কোনো রাবিকে অপর রাবি দ্বারা পরিবর্তন করা একপ্রকার। আর মতনের জন্য সনদ পরিবর্তন করা আরেক প্রকার”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের একবিংশ ও দ্বাবিংশ প্রকার শায ও মাকলুব। এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।

শায হাদিস

شاذ শব্দটি شذوذ থেকে গৃহীত, যার অর্থ একাকী, বিচ্ছিন্ন, দলছুট ও নীতি মুক্ত। হাদিসে এসেছে:

«لا يَجْمَعُ اللَّهُ هَذِهِ الأُمَّةَ عَلَى الضَّلالَةِ أَبَدًا، وَيَدُ اللَّهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَمَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّارِ».

“আল্লাহ এ উম্মতকে কখনো গোমরাহির উপর একত্র করবেন না, আর জামাতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে, অতএব যে দলছুট বা বিচ্ছিন্ন হল, সে জাহান্নামে ছিটকে পড়ল”।[1]

‘শায’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “একাধিক সেকাহ রাবির বিপরীত একজন সেকাহ রাবির বর্ণনাকে শায বলা হয়”। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ সেকার বিপরীত ملأ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ কওমের নেতৃবৃন্দ ও প্রধান ব্যক্তিবর্গ, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ يَٰشُعَيۡبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرۡيَتِنَآ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَٰرِهِينَ ٨٨ ﴾ [الاعراف: ٨٧]

“তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ অহংকার করেছিল ‎তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, আমরা তোমাকে ও ‎‎তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ‎অবশ্যই আমাদের জনপদ থেকে বের করে ‎‎দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে ‎আসবে’। সে বলল, ‘যদিও আমরা তা অপছন্দ ‎করি তবুও?”[2]

হাদিস শাস্ত্রে ملأ বা প্রধান ব্যক্তিবর্গ হলেন অধিক সেকাহ রাবিগণ, যাদের আদালত ও দ্বাবত সবার নিকট স্বীকৃত। তাদের একজনকেও ملأ বলা হয়, কারণ তার আদালত, স্মৃতি শক্তি ও যথাযথ হাদিস সংরক্ষণ করা, তার নিম্নপর্যায়ের একাধিক রাবির আদালত, স্মৃতি শক্তি ও যথাযথ হাদিস সংরক্ষণ করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর ও অধিক নির্ভুল। এ জন্য একলা ইবরাহিম ‘আলাইহিস সালামকে উম্মত বলা হয়েছে, অথচ উম্মত অর্থ একটি জাতি। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ كَانَ أُمَّةٗ قَانِتٗا لِّلَّهِ حَنِيفٗا وَلَمۡ يَكُ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٢٠ ﴾ [النحل: ١٢٠]

“নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর ‎একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না”।[3] অতএব সেকাহ রাবি অপেক্ষাকৃত কম সেকাহ রাবির বিবেচনায় ملأ বা জামাত। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ এখানে একশব্দ দ্বারা শাযের দু’প্রকারকে নির্দেশ করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেকাহ রাবি যদি অধিক সেকাহ বা একাধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করে, তাহলে তার বর্ণিত হাদিস শায।

হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ শাযের সংজ্ঞায় বলেন:

"مخالفة المقبول لمن هو أولى منه" (النزهة:صـ98)

“মাকবুল রাবির তার চেয়ে উত্তম রাবির বিরোধিতা করা শায”।[4] এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহি ও হাসান হাদিসের রাবি, আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সেকাহ রাবি। অর্থাৎ মাকবুল রাবি একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করলে তার হাদিস শায।

বিরোধিতা দ্বারা উদ্দেশ্য:

মানযুমার ব্যাখ্যাকার সুলাইমানি রহ. বলেন: “বিরোধিতার অর্থ শব্দের বৃদ্ধি, যাতে অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। মকবুল রাবির হাদিসে যদি সেকাহ রাবির তুলনায় অতিরিক্ত শব্দ থাকে তাই শায। উভয়ের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হোক বা না-হোক। এটা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের অভিমত।

কেউ বলেন: সেকাহ রাবির হাদিস যদি মকবুল রাবির হাদিসের সাথে পুরোপুরি সাংঘষির্ক হয়, তাহলে মকবুল রাবির হাদিস শায, নচেৎ নয়। এ কথা ঠিক নয়। এ সংজ্ঞা মোতাবেক শাযের উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর। ফকিহ ও মুহাদ্দিসদের নিকট এমন শায নেই যার সাথে মাহফুযের সমন্বয় করা সম্ভব নয়। ‘ইলালের উপর লিখিত গ্রন্থসমূহ দেখলে অনুমিত হয় যে, তারা এমন অনেক বৃদ্ধির উপর শাযের বিধান আরোপ করেছেন, যেখানে মূল বর্ণনার সাথে তার কোনো বিরোধ নেই, বরং কতক শায মূল হাদিসের সম্পূরক, তবুও তারা শায বলেছেন, যেমন কুকুরে চাটা পাত্রকে পবিত্র করার হাদিসে فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধিকে মুহাদ্দিসগণ শায বলেছেন”।[5] ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

وحَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ السَّعْدِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، أَخْبَرَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي رَزِينٍ وَأَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لِيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ » وحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيل بْنُ زَكَرِيَّاءَ، عَنِ الأَعْمَشِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَقُلْ: فَلْيُرِقْهُ

এ হাদিসে ইমাম মুসলিমের উস্তাদ আলি ইব্‌ন হুজর আসসা‘য়েদি; তার উস্তাদ আলি ইব্‌ন মুসহির; তার উস্তাদ আ‘মাশ; তার উস্তাদ আবু রাযিন ও আবু সালেহ; তার উস্তাদ সাহাবি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لِيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ»

“যখন তোমাদের কারো পাত্র কুকুর চাটে, সে যেন তাতে যা আছে তা ঢেলে ফেলে দেয়, অতঃপর সাতবার তা ধুয়ে নেয়”। এ হাদিসের অপর সনদে মুসলিমের উস্তাদ: মুহাম্মদ ইব্‌ন সাব্বাহ; তার উস্তাদ ইসমাইল ইব্‌ন যাকারিয়্যা; তার উস্তাদ আ‘মাশ; অতঃপর সনদ পূর্ববৎ, কিন্তু আ‘মাশ থেকে ইসমাইল ইব্‌ন যাকারিয়্যা فَلْيُرِقْهُ শব্দ বলেননি।[6]

‘আ‘মাশে’র দু’জন ছাত্র: আলি ইব্‌ন মুসহির ও ইসমাইল ইব্‌ন যাকারিয়্যা। তাদের থেকে সনদ দু’ভাগ হয়েছে। মুসলিম বলেন: দু’জনের সনদ ও হাদিস হুবহু এক, তবে ইসমাইল فَلْيُرِقْهُ শব্দ বৃদ্ধি করেননি, যা আলি ইব্‌ন মুসহির বৃদ্ধি করেছেন। উভয়ের হাদিসে পার্থক্য শুধু এখানেই।

আলি ও ইসমাইল উভয়ে সমপর্যায়ের রাবি, তবে ইসমাইলের অনেক মুতাবে‘ ও অনুসারী হাদিস রয়েছে, যা আলি ইব্‌ন মুসহিরের পক্ষে নেই, স্বয়ং মুসলিম ইসমাইলের স্বপক্ষে তিনটি মুতাবে‘ উল্লেখ করেছেন, যেগুলোয় فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধি নেই, যথা:

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ: قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيَغْسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ»

“তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পান করে, সে যেন তা সাতবার ধৌত করে”।[7]

দ্বিতীয় মুতাবি‘:

وحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيل بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ، أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ، أُولَاهُنَّ بِالتُّرَابِ»

“তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর চাটে, তার পবিত্রতা হচ্ছে পাত্রটিকে সাতবার ধোয়া, প্রথমবার মাটি দ্বারা”।[8]

তৃতীয় মুতাবি‘:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِيهِ، أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ»

“তোমাদের কারো পাত্রের পবিত্রতা, যখন কুকুর তাতে চাটে, পাত্রটিকে সাতবার ধোয়া”।[9]

চতুর্থ মুতাবি‘: ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْسِلْهُ سَبْعًا»

“যখন কুকুর তোমাদের কারো পাত্রে পান করে, সে যেন তা সাতবার ধৌত করে”।[10]

এখানে ইসমাইল ইব্‌ন যাকারিয়্যার অনুসারী চারটি মুতাবে‘ বা অনুসারী হাদিস দেখলাম, কেউ আলি ইব্‌ন মুসহিরের ন্যায় فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধি করেননি।

হাফেয ইব্‌ন হাজার বলেন: “ইমাম নাসায়ি বলেন: আমাদের জানা মতে এ হাদিসে فَلْيُرِقْهُ শব্দ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আলি ইব্‌ন মুসহিরের কোনো মুতাবে‘ বা অনুসারী হাদিস নেই। হামযাহ আল-কিনানি বলেন: ‘আলি ইব্‌ন মুসহিরের হাদিস মাহফুয নয় [অর্থাৎ শায], ইব্‌ন আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘আ‘মাশে’র হাফেয ছাত্র শু‘বা ও আবু মু‘আবিয়া এ শব্দ বৃদ্ধি করেননি। ইব্‌ন মানদাহ বলেন: আলি ইব্‌ন মুসহির ব্যতীত কোনো সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ শব্দের বৃদ্ধি জানা যায়নি”।[11]

আমরা ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহু থেকে জানলাম যে, মুহাদ্দিসগণ আলি ইব্‌ন মুসহিরের বৃদ্ধিকে শায বলেছেন, অথচ উভয় বর্ণনায় কোনো বৈপরীত্য নেই। দ্বিতীয়ত কুকুরে চাটা পাত্র পবিত্র করার পূর্বে পানি ফেলে দেওয়া জরুরি, যা فَلْيُرِقْهُ শব্দের অর্থ, কারণ কুকুরে চাটা বস্তু পাত্রে রেখে পবিত্র করা সম্ভব নয়, তবুও فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধিকে আলেমগণ শায বলেছেন। অতএব আমাদের নিকট প্রমাণিত হল যে, মাকবুল রাবি যদি একাধিক সেকাহ কিংবা তার চেয়ে উত্তম রাবির বিপরীত কোনো শব্দ বৃদ্ধি করেন, যার অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তাই শায, যেমন এখানে আলি ইব্‌ন মুসহির বর্ণিত فَلْيُرِقْهُ শব্দ শায।

এ উম্মতের প্রথম যুগের আলেমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ নিঃসৃত বাণীকে হুবহু সংরক্ষণ করার জন্য কি পরিমাণ চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করেছেন, দেখলে অবাক লাগে। দীনের দুশমন এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর শত্রু ব্যতীত কেউ উম্মতের প্রথম যুগের মনীষীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না।

আজান পরবর্তী দো‘আয়إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি শায:

قال الإمام البخاري -رحمه الله- في صحيحه- حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ، اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

আমরা এ সনদে দেখছি: ইমাম বুখারির উস্তাদ আলি ইব্‌ন ‘আইয়াশ; তার উস্তাদ শু‘আইব ইব্‌ন আবু হামযাহ; তার উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্‌ন মুনকাদির; তার উস্তাদ সাহাবি জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কেউ আযান শ্রবণ করার পর বলল:

«اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ»

কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল”।[12]

قال الإمام الترمذي –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَهْلِ بْنِ عَسْكَرٍ الْبَغْدَادِيُّ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ يَعْقُوبَ، قَالَا: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ الْحِمْصِيُّ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».

এ সনদে দেখছি ইমাম তিরমিযির উস্তাদ দু’জন: মুহাম্মদ ইব্‌ন সাহাল ইব্‌ন আসকার বাগদাদি ও ইবরাহিম ইব্‌ন ইয়া‘কুব;[13] অতঃপর সাহাবি পর্যন্ত ইমাম বুখারি ও তার সনদ পূর্ববৎ। ইমাম তিরমিযি (মৃ.২৫৬হি.) ও ইমাম বুখারি (মৃ.২৫৬হি.) উভয়ে সমবয়সী ও এক যুগের, তবে তিরমিযি ছিলেন ছাত্র ও বুখারি ছিলেন উস্তাদ। এ হাদিস ইমাম তিরমিযি ইমাম বুখারি ব্যতীত অপর দু’উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্‌ন সাহাল ও ইবরাহিম ইব্‌ন ইয়াকুব থেকে নিয়েছেন।

قال الإمام أبو داود –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

এ সনদে দেখছি ইমাম আবু দাউদ (মৃ২৭৫হি.) এর উস্তাদ ইমাম আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ্ (মৃ২৪১হি.);[14] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি ও আবু দাউদের সনদ পূর্ববৎ।

قال الإمام النسائي –رحمه الله- أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، قال: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قال: حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرٍ، قال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

এ সনদে দেখছি ইমাম নাসায়ির উস্তাদ আমর ইব্‌ন মানসুর;[15] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি, আবু দাউদ ও নাসায়ির সনদ পূর্ববৎ।

قال الإمام ابن ماجة –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، وَالْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَبِي الْحُسَيْنِ، قَالُوا: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ الْأَلْهَانِيُّ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

এ সনদে দেখছি ইব্‌ন মাজাহ রাহিমাহুল্লাহর উস্তাদ তিনজন: মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া, আব্বাস ইব্‌ন ওয়ালিদ দিমাশকি ও মুহাম্মদ ইব্‌ন আবুল হুসাইন;[16] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজার সনদ পূর্ববৎ। সবার সনদে আলি ইব্‌ন আইয়াশ আছেন। তারা ব্যতীত ইব্‌ন খুযাইমাহ, ইব্‌ন হিব্বান ও অনেক মুহাদ্দিস অভিন্নভাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।[17]

ইমাম বায়হাকি রাহিমাহুল্লাহ্ (মৃ.৪৫৮হি.) সুনানে সাগির গ্রন্থে তাদের সবার বিরোধিতা করে বর্ণনা করেন:

قال الإمام البيهقي –رحمه الله- في السنن الصغير- أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ، وَأَبُو نَصْرٍ أَحْمَدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ أَحْمَدَ الْفَامِيُّ، قَالا: ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَوْفٍ، ثنا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، ثنا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِحَقِّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ الَّذِي وَعَدْتَهُ إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي».

এ হাদিসে দো‘আর শেষে إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ অতিরিক্ত রয়েছে।[18] অথচ তার সনদেও আলি ইব্‌ন আইয়াশ আছেন, যার পর থেকে সবার সনদ পূর্ববৎ।

আলি ইব্‌ন আইয়াশের ছাত্রগণ:

১. ইমাম বুখারি;

২. মুহাম্মদ ইব্‌ন সাহাল ইব্‌ন আসকার বাগদাদি ও ইবরাহিম ইব্‌ন ইয়াকুব, তাদের ছাত্র ইমাম তিরমিযি;

৩. আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন হাম্বল, তার ছাত্র ইমাম আবু দাউদ;

৪. আমর ইব্‌ন মানসুর, তার ছাত্র ইমাম নাসায়ি;

৫. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া, আব্বাস ইব্‌ন ওয়ালিদ দিমাশকি ও মুহাম্মদ ইব্‌ন আবুল হুসাইন, তাদের ছাত্র ইমাম ইব্‌ন মাজাহ;

৬. মুসা ইব্‌ন সাহাল রামলি, তার ছাত্র ইব্‌ন খুযাইমাহ;

৭. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া, তার ছাত্র ইব্‌ন খুযাইমাহ, তার ছাত্র ইব্‌ন হিব্বান। তারা কেউ আযান পরবর্তী দো‘আয় إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি বর্ণনা করেননি।

তাদের সবার বিরোধিতা করে ‘আলি ইব্‌ন ‘আইয়াশের অপর ছাত্র মুহাম্মদ ইব্‌ন ‘আউফ إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি করেছেন, যদিও তিনি সেকাহ ও নির্ভরযোগ্য। তার থেকে আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়া‘কুব, তার থেকে হাকেম আবু আব্দুল্লাহ ও আবু নাসর আহমদ ইব্‌ন আলি ইব্‌ন আহমদ আল-ফামি এবং তাদের থেকে ইমাম বায়হাকি বর্ণনা করেছেন। অতএব বায়হাকির বর্ণনা শায ও গায়রে মাহফুয। এখানে বৃদ্ধি ঘটেছে ‘আলি ইব্‌ন ‘আইয়াশের ছাত্র মুহাম্মদ ইব্‌ন ‘আউফ থেকে, কারণ তার দু’জন ছাত্র: আবুল আব্বাস ও হাকেম থেকে বায়হাকি অভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ ভালো জানেন।

আযান পরবর্তী দো‘আয় وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ বৃদ্ধি শায:

ইমাম নাসায়ির ছাত্র ইব্‌নু সুন্নি[19] (মৃ.৩৬৪হি.) তাদের সবার বিরোধিতা করে বর্ণনা করেন:

قال الإمام ابن السني –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: «اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

এ সনদে আযান পরবর্তী দো‘আয় وَالْفَضِيلَةَ শব্দের পর وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ বাক্যের বৃদ্ধি ঘটেছে। অথচ এ সনদেও ‘আলি ইব্‌ন ‘আইয়াশ আছেন, তার থেকে ‘আমর ইব্‌ন মানসুর, তার থেকে আবু আব্দুর রহমান, তথা ইমাম নাসায়ি। আমরা পূর্বে দেখেছি ইমাম নাসায়ি তার সুনান গ্রন্থে স্বীয় উস্তাদ ‘আমর ইব্‌ন মানসুর থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সেখানে وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। তাই আমরা নিশ্চিত ‘আলি ইব্‌ন ‘আইয়াশের ছাত্র ‘আমর ইব্‌ন মানসুর কিংবা তার ছাত্র ইমাম নাসায়ি থেকে বৃদ্ধি ঘটেনি, খুব সম্ভব ইব্‌ন সুন্নি থেকে এ বৃদ্ধি ঘটেছে। আল্লাহ ভালো জানেন।মুদ্দাকথা: ইব্‌ন সুন্নির বর্ণনা বায়হাকিসহ সকল মুহাদ্দিসের বিপরীত, অনুরূপ বায়হাকির বর্ণনা ইব্‌ন সুন্নিসহ সকল মুহাদ্দিসের বিপরীত, তাই তাদের বর্ণনা শায, যা একপ্রকার দুর্বল হাদিস; পক্ষান্তরে ইমাম বুখারি প্রমুখদের বর্ণনা মাহফুয ও সহি। অতএব আযানের দো‘আয় এ দু’টি শব্দ বৃদ্ধি করা দুরস্ত নয়।

>
[1] হাকেম: (৩৫৮), হাদিসটি হাসান কিংবা সহি লি গায়রিহি।

[2] [সূরা আরাফ: (৮৮)]

[3] [সূরা নাহাল: (১২৭)]‎

[4] আন-নুযহাহ: (পৃ.৯৮)

[5] আল-জাওয়াহিরুস সুলাইমানিয়াহ: (৩০২-৩০৩)

[6] মুসলিম: (২৭৯)

[7] মুসলিম: (২৮০)

[8] মুসলিম: (২৮১)

[9] মুসলিম: (২৮২)

[10] বুখারি: (১৭২)

[11] ফাতহুল বারি: (৩০১), জাওয়াহিরি থেকে নেয়া।

[12] বুখারি: (৬১৪), দো‘আর অর্থ: ‘হে আল্লাহ, এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু, আপনি মুহাম্মদকে উসিলা ও ফযিলত দান করুন এবং তাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার ওয়াদা আপনি করেছেন’।

[13] তিরমিযি: (২১১)

[14] আবু দাউদ: (৫২৯)

[15] সুনানুস সুগরা লিন নাসায়ি: (৬৮০), সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি (১৬৩০) ও (৯৪৮২)

[16] ইব্‌ন মাজাহ: (৭২২)

[17] ইব্‌ন খুযাইমাহ রহ. এর উস্তাদ মুসা ইব্‌ন সাহাল রামলি, তার উস্তাদ আলি ইব্‌ন আইয়াশ। ইব্‌ন হিব্বান রহ. এর উস্তাদ ইব্‌ন খুযাইমাহ‘ ; তার উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া, তার উস্তাদ আলি ইব্‌ন ‘আইইয়াশ। সহি ইব্‌ন খুযাইমাহ‘ : (৪২১), সহি ইব্‌ন হিব্বান: (১৭২৩)

[18] সুনানুস সাগির লিল বায়হাকি: (১/৪০৯), হাদিস নং: (১৭৫৯), সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: (১৪৮)

[19] ‘আমালুল ইওয়াম ওয়াল লাইলাহ’: লি ইব্‌নুস সুন্নি: (৯৬)
মুসলিমের হাদিসে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধির শায

قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: " كُنْتُ عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: ... ... وَلَكِنْ حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: « ... ... هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ، وَلَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»

... ... তবে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদেরকে বলেন, তিনি বলেছেন: “তারাই, যারা ঝাড়-ফুঁক করে না, ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[1]

قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ حُصَيْنَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ، هُمُ الَّذِينَ لَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»

... ... আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উম্মত থেকে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যারা ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[2]

আমাদের সামনে ইমাম মুসলিম ও বুখারির দু’টি সনদে একটি হাদিস বিদ্যমান। মুসলিমের সনদে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, যা ইমাম বুখারির সনদে নেই। উভয় ইব্‌ন আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদিস এক। ইব্‌ন আব্বাস (মৃ.৬৮হি.); এর ছাত্র সা‘ঈদ ইব্‌ন জুবায়ের (মৃ.৯৫হি.); তার ছাত্র হুসাইন ইব্‌নে আব্দুর রহমান (মৃ.১৩৬হি.); তার ছাত্র দু’জন: শু‘বা (মৃ.১৬০হি.) ও হুশাইম (মৃ.১৮৩হি.) থেকে বুখারি ও মুসলিমের সনদ ভাগ হয়েছে। শু‘বার ছাত্র রাওহু ইব্‌নু উবাদাহ (মৃ২০৫হি.), তার ছাত্র ইসহাক (মৃ২৫১হি.), তার ছাত্র ইমাম বুখারি (মৃ.২৫৬হি.)। আর হুশাইমের ছাত্র সা‘ঈদ ইব্‌ন মানসুর (মৃ.২২৭হি.); তার ছাত্র ইমাম মুসলিম (মৃ.২৬১হি.)।

হাদিসটি ইমাম বুখারি নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র শু‘বা থেকে, ইমাম মুসলিম নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র হুশাইম থেকে। হুশাইমের হাদিসে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, শু‘বার হাদিসে যা নেই। যদিও উভয়ই সেকাহ[3], তবে হুশাইম অপেক্ষা শু‘বা অধিক সেকাহ, তাই শু‘বার হাদিস মাহফুয ও হুশাইমের বৃদ্ধি শায। দ্বিতীয়ত শু‘বার স্বপক্ষে শাহেদ ও মুতাবি‘ রয়েছে, যা হুশাইমের পক্ষে নেই।[4] অতএব হুশাইমের لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়।

শায়খুল ইসলাম ইব্‌নে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি শায, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম ঝাড়ফুঁক করেছেন, অতএব মতনের এ বাক্য হাদিস হতে পারে না। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম বুখারি[5] বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ الْمِنْهَالِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ، وَيَقُولُ: إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনকে ঝাড়-ফুঁক করতেন এবং বলতেন: নিশ্চয় তোমাদের পিতা ইবরাহিম নিম্নের বাক্যগুলো দ্বারা ইসমাইল ও ইসহাককে ঝাঁড়ফুক করতেন:

«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»

জ্ঞাতব্য: অপরকে ঝাড়-ফুঁক করা ও অপরের নিকট তলব করা এক নয়। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ঝাঁড়-ফুককারী অপরকে উপকার করে, যা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়, কিন্তু ঝাড়-ফুঁক তলবকারী অপরের নিকট নিজের প্রয়োজন পেশ করে, যা বৈধ হলেও উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী।এ হাদিসে দু’টি দোষ: একটি সেকাহ রাবির বিরোধিতা অপরটি ইল্লত। হুশাইম لَا يَرْقُونَ শব্দ বৃদ্ধি করে তার চেয়ে অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করেছেন তাই তার হাদিস শায; দ্বিতীয়ত এ শব্দ প্রমাণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীলের কর্ম উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ছিল তাই হাদিসটি মু‘আল্।

>
[1] মুসলিম: (২২১)

[2] বুখারি: (৬৪৭২), এ হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আবু সুলাইমান খাত্তাবি রহ. প্রমুখগণ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে এবং তার সিদ্ধান্ত ও পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে এসব চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করে সে এ হাদিসের উদ্দেশ্য। এটা পরিপক্ক ঈমানের অধিকারীদের মর্যাদা”। কাদি ইয়াদ রহ. বলেন: “হাদিসের স্পষ্ট অর্থ ও দাবি সেঁকা ও ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির হুকুম এক”। নবী সা. বৈধতা প্রমাণের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ও তার অনুমতি প্রদান করেছেন। ফাতহুল বারি লি ইব্‌ন হাজার রহ.।

[3] ‘শু‘বা’ সম্পর্কে হাফেজ ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সেকাহ, হাফেযে হাদিস ও ইবাদত গুজার, ইরাকে সর্বপ্রথম তিনি রাবিদের ভালো-মন্দ যাচাই আরম্ভ করেন এবং সুন্নত থেকে মিথ্যা দূরীভূত করেন”। ‘হুশাইম’ সম্পর্কে তিনি বলেন: “সেকাহ, হাদিসের সুদৃঢ় ইমাম, অধিক তাদলিস ও সূক্ষ্ম ইরসালে অভ্যস্ত। তিনি হাদিসের ইমাম, তার আদালত সম্পর্কে সবাই একমত, তবে তার তাদলিস প্রসিদ্ধ ছিল। সকল ইমাম তাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন”। দেখুন: তাহযিবুত তাহযীব, লি ইব্‌ন হাজার রহ.।

[4] অধিকন্তু ইমাম বুখারি রহ. হুসাইন ইব্‌ন আব্দুর রহমানের দু’জন ছাত্র: হুশাইম এবং মুহাম্মদ ইব্‌ন ফুদাইল সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। বুখারি: (৬৫৪১); অনুরূপ ইমাম মুসলিম সাহাবি ‘ইমরান ইব্‌ন হুসাইন থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। অতএব শাহেদ ও মুতাবি‘ থাকার ফলে শু‘বার হাদিস আরো শক্তিশালী। দেখুন: মুসলিম: (২২০) ও (২২১)

[5] বুখারি: (৩৩৭১)

শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়, কখনো ভিন্ন দু’টি হাদিস একটির কারণে অপরটি শায হয়, যেমন: ‌

قال الإمام أبو داود -رحمه الله- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَدِمَ عَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ الْمَدِينَةَ، فَمَالَ إِلَى مَجْلِسِ الْعَلَاءِ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا انْتَصَفَ شَعْبَانُ، فَلَا تَصُومُوا»

“... ... আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন শাবানের অর্ধেক হয়, তোমরা সিয়াম রেখ না”।[1] আবু দাউদসহ অন্যান্য সুনান গ্রন্থকারগণ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনেকের নিকট হাদিসটি সহি, তাই তারা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা মাকরুহ বলেন, তবে যার সিয়াম রাখার অভ্যাস আছে তার পক্ষে মাকরুহ নয়।

ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন: “হাদিসটি শায, কারণ অন্যান্য সহি হাদিস তার পরিপন্থী, তাই সিয়াম রাখা মাকরুহ নয়”। তিনি বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنِ أَبِي سَلَمَةَ، عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقَدَّمُوا شَهْرَ رَمَضَانَ بِصِيَامِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا رَجُلًا كَانَ يَصُومُ صَوْمًا فَلْيَصُمْهُ»

“তোমরা এক দিন অথবা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা রমযানকে এগিয়ে এনো না, তবে যে পূর্ব থেকে সিয়াম রাখত, সে যেন তাতে সিয়াম রাখে”।[2]

এ হাদিস অধিক সহি তাই মাহফুয, যা প্রমাণ করে রমযানের দু’দিন পূর্বে, তথা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ। হাদিস দু’টি আলাদা, তবু আহলে ইলম অধিকতর সহি হাদিসের কারণে অপেক্ষাকৃত কম সহি হাদিসকে শায বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়।

এ ছাড়া অন্যান্য সহি হাদিসও প্রমাণ করে শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ, যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন:

«لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ فَلْيَصُمْ ذَلِكَ الْيَوْمَ»

“তোমাদের কেউ রমযানকে একদিন বা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা এগিয়ে আনবে না, তবে যে নিজের সিয়াম পালন করত, সে যেন ঐ দিন সিয়াম রাখে”।[3]

এ হাদিস প্রমাণ করে সিয়ামে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য শাবানের শেষার্ধে সিয়াম পালন করা বৈধ, যেমন কোনো ব্যক্তির অভ্যাস সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করা, অথবা একদিন সিয়াম রাখা ও একদিন ইফতার করা, তার জন্য রমযানের এক-দু’ দিন পূর্বে সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়, যা يوم الشك বা সন্দেহের দিন নামে পরিচিত। এ দিন ব্যতীত শাবানের শেষার্ধে কারো জন্য সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়।

এখানে আমরা শায ও শাযের বিপরীত মাহফুয জানলাম। এ ছাড়া আরো প্রকার রয়েছে, লেখক যা উল্লেখ করেননি, যেমন সেকাহ রাবির বিরোধিতাকারী যদি দুর্বল হয়, তখন তার হাদিসকে মুনকার বলা হয়। মুনকার শাযের চেয়েও খারাপ, কারণ সে দুর্বল হয়েও সবলের বিরোধিতা করেছে। মুনকারের বিপরীত মারূফ। অতএব চার প্রকার হল: শায ও মাহফুয, মুনকার ও মারূফ।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর:

প্রশ্ন হতে পারে: ‘শায’ একটি সুপ্ত দোষ বা ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। অনুরূপ ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ সুপ্ত ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ছাড়া জানা যায় না, তবু কেন মুহাদ্দিসগণ ‘সহি’র জন্য শায না হওয়া র্শত করেছেন, কিন্তু ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ না হওয়া শর্ত করেননি?

উত্তর: মুহাদ্দিসগণ জমহুর ফুকাহার বিপরীত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, কারণ তারা ‘শায’কে ইল্লত মানেন না, অথচ ইদতিরাব, ইদরাজ ও কালবকে ইল্লত মানেন। তারা সেকাহ রাবির অতিরিক্ত শব্দকে গ্রহণ করেন, যদিও একাধিক সেকাহ রাবির বর্ণিত হাদিস বিরোধী হয়, তবে উভয় বর্ণনা জমা করা অসম্ভব হলে তারাও অতিরিক্ত শব্দ ত্যাগ করেন। মুহাদ্দিসগণ মুত্তাসিল ও মুরসাল বিরোধ হলে অধিক সেকাহ রাবির বর্ণনাকে প্রাধান্য দেন, কিন্তু ফকিহগণ সমন্বয় করার চেষ্টা করেন।‘শায’ এর হুকুম: শায শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

[1] আবু দাউদ: (২৩৩৭) এ হাদিস অভিন্ন অর্থ ও ভিন্নভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন: ইমাম তিরমিযি, নাসায়ি, ইব্‌ন মাজাহ, আহমদ, ইব্‌ন হিব্বান, বায়হাকি, আব্দুর রাজ্জাক, ইব্‌নে আবি শায়বাহ ও ইমাম তাহাবি রহ. প্রমুখগণ। সবার সনদে ক্রমান্বয়ে শেষের তিনজন রাবি হলেন: ‘আলা, আব্দুর রহমান ও সাহাবি আবু হুরায়রা রা.। অর্থাৎ আবু হুরায়রা রা. থেকে আব্দুর রহমান এবং তার থেকে তার ছেলে ‘আলা বর্ণনা করেছে হাদিসটি। ইমাম নাসায়ি রহ. বলেন: “আমাদের জানা মতে ‘আলা ইব্‌ন আব্দুর রহমান ব্যতীত কেউ এ হাদিস বর্ণনা করেনি”। সুনানুল কুবরা: (২৯২৩), ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন: “এ হাদিস অন্য কোনো সনদে আমরা জানি না”। তিরমিযি: (৭৩৮)

[2] আহমদ: (৯৮২৮),

[3] বুখারি: (১৯১৪), মুসলিম: (১০৮২)

‏مقْلوبُ‏‏ এর আভিধানিক অর্থ উল্টো। কোনো বস্তুর উপরের অংশ নীচে ও নীচের অংশ উপরে হলে ‘মাকলুব’ বলা হয়, যেমন বলা হয়: الثوب المقلوب উল্টো কাপড়। قلب ‘কালব’ ক্রিয়া বিশেষ্য, অর্থ পরিবর্তন। ‘মাকলুব’ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ উল্টো।

কালব দু’প্রকার: ১. কালবে সনদ, ২. কালবে মতন।

১. কালবে সনদ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “সনদের কোনো রাবিকে অপর রাবি দ্বারা পরিবর্তন করা”।

কালবে সনদ দু’প্রকার:

ক. আংশিক কালব ও খ. সম্পূর্ণ কালব।

ক. আংশিক কালব বিভিন্ন প্রকার হয়:

এক. কোনো সনদে এক রাবির জায়গায় অপর রাবিকে উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন:

قال الإمام البيهقي –رحمه الله- أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أنبأ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْقَطَّانُ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: ذَكَرَ سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ، فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهِ»

এ সনদে সর্বশেষ রাবি সাহাবি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু; তার ছাত্র আবু সালেহ; তার ছাত্র সুহাইল ইব্‌ন আবু সালেহ; তার ছাত্র সুফিয়ান[1]; মুহাদ্দিসদের নিকট সনদটি এভাবেই প্রসিদ্ধ, তাদের বিপরীত ইমাম তাবরানি বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو الْحَرَّانِيُّ، ثَنَا أَبِي، نا حَمَّادُ بْنُ عَمْرٍو النَّصِيبِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهَا».

এখানে দেখছি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র আবু সালেহ, তার ছাত্র আ‘মাশ রাহিমাহুল্লাহ্, তার থেকে হাম্মাদ ইব্‌নু আমর আন-নাসিবি। হাম্মাদ ইব্‌ন আমর নাসিবি এ সনদে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে। ইমাম তাবরানি বলেন: “হাম্মাদ ব্যতীত কেউ আ‘মাশ থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেনি”।[2] হাম্মাদ ইব্‌ন ‘আমর ইচ্ছাকৃতভাবে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে, হাম্মাদ পরিত্যক্ত রাবি। অতএব তা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুই. রাবি ও রাবির পিতার নাম উলট-পালট করা আংশিক কালব, যেমন: ‘মুররাহ ইব্‌ন কাব’-কে ‘কাব ইব্‌ন মুররাহ’ বলা আংশিক কালব বা পরিবর্তন।

তিন. এক তবকার রাবির স্থানে অপর তবকার রাবি উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন রাবিদের নাম অগ্র-পশ্চাৎ করে উস্তাদকে ছাত্র ও ছাত্রকে উস্তাদ বানানো কিংবা উস্তাদের উস্তাদকে ছাত্রের ছাত্র ও ছাত্রের ছাত্রকে উস্তাদের উস্তাদ বনানো। ইব্‌নু আবি হাতেম ‘ইলাল’[3] গ্রন্থে বলেন:

وَسألت أبي عَنْ حديث حَدَّثَنَا بِهِ أَحْمَد بْن عصام الأَنْصَارِيّ، عَنْ أَبِي بَكْر الحنفي، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنحكيمبْنسَعْدٍ ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَنْ سَلْمَانَ، أَنَّهُ قَالَ: " من وَجَدَ فِي بطنه رزًا من بولٍ أو غائطٍ فلينصرف غير متكلم ولا داعي ".

আমার পিতা আবু হাতেমকে আমি একটি হাদিস সম্পকে জিজ্ঞাসা করেছি, যা আমাদেরকে বলেছে আহমদ ইব্‌ন ইসাম আল-আনসারি, আবু বকর আল-হানাফি থেকে, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি হাকিম ইব্‌ন সাদ থেকে, তিনি ইমরান ইব্‌ন যাবইয়ান থেকে, তিনি সালমান থেকে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার পেটে পেশাব অথবা পায়খানার প্রয়োজন অনুভব করে, সে যেন কথা ও ডাকাডাকি ব্যতীত প্রস্থান করে”। আমার পিতা বললেন, এ সনদে কালব হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সনদটি এরূপ:

سُفْيَان، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَن حكيم بْن سَعْدٍ، عَنْ سَلْمَانَ

খ. সম্পূর্ণ কালব:

এক মতনের পূর্ণ সনদ অপর মতনের সাথে জুড়ে দেওয়া, কিংবা তার বিপরীত করা পূর্ণ কালব। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ দ্বিতীয় পঙক্তিতে এ প্রকারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ প্রকার কালবকে কালবে মতনও মানা যায়। কারণ, এক সনদের জায়গায় অপর সনদ জুড়ে দিলে যেরূপ কালবে সনদ হয়, অনুরূপ কালবে মতনও হয়, অর্থাৎ এক মতনের জায়গায় অপর মতন স্থাপি হয়। এ হিসেবে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ কলবে সনদ ও কলবে মতন উভয় উল্লেখ করেছেন। বাগদাদে ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ঘটনা সম্পূর্ণ কালবের উদাহরণ। ঘটনাটি নিম্নরূপ:

বাগদাদবাসীরা যখন জানল যে, ইমাম বুখারি তাদের নিকট আসছেন, তারা ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করল। তারা সিদ্ধান্ত নিলো দশজন প্রখর ধী শক্তিমান ব্যক্তি দশটি হাদিস করে মোট একশো হাদিস সনদ পাল্টে বুখারির নিকট পেশ করব। যখন বুখারি আসলেন, মানুষেরা তার নিকট জমা হল। তারা দশটি করে মোট একশো হাদিস পেশ করল। তারা যখন সনদসহ এক একটি হাদিস পেশ করত, বুখারি তাদের উত্তরে বলতেন: আমি জানি না। এভাবে তারা একশো হাদিস পূর্ণ করল। সাধারণ লোকেরা বলতে লাগল, সে কিছু জানে না, একশো হাদিস পেশ করা হল, প্রত্যেকটির ব্যাপারে সে বলল: আমি জানি না! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং প্রত্যেক হাদিস সঠিক সনদসহ বলা আরম্ভ করলেন। এভাবে তিনি একশো হাদিস শেষ করলেন। এ থেকে তারা জানল যে, সে আসলে আল্লাহর মহান এক কুদরত। তারা সবাই তার বড়ত্বের স্বীকৃতি দিল ও তার সামনে নত হল।

এ জাতীয় কালব সাধারণত পরীক্ষার জন্য করা হয়। কখনো ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, যেমন কেউ দুর্বল সনদের কোনো হাদিস সহি সনদে প্রচার করল। এটাও এক জাতীয় তাদলিস, তবে কালব থাকার কারণে মাকলুবও।

খ. কালবে মতন: কালবে মতন বিভিন্নভাবে হয়, যেমন:

قال أبوحاتم ابن حبان –رحمه الله- أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ سُفِيانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَجَّاجِ السَّامِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيِّ، وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ، وَعُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حِبَّانَ، عَنْ عَمِّهِ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «رَقِيتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ، فَإِذَا أَنَا بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا عَلَى مَقْعَدَتِهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، مُسْتَدْبِرَ الشَّامِ».

ইব্‌ন হিব্বানের[4] এ হাদিসে কালব ও পরিবর্তণ হয়েছে। রাবি এখানে الْقِبْلَةِ এর জায়গায় الشَّامِ এবং الشَّامِ এর জায়গায় الْقِبْلَةِ স্থাপন করেছেন। হাদিসের প্রকৃতরূপ ইমাম বুখারি[5] প্রমুখ বর্ণনা করেছেন, যেমন:

قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ، عَنْ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: «ارْتَقَيْتُ فَوْقَ ظَهْرِ بَيْتِ حَفْصَةَ لِبَعْضِ حَاجَتِي، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ».

কালবে মতনের দ্বিতীয় উদাহরণ:

قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى جميعا، عَنْ يَحْيَى الْقَطَّانِ، قَالَ زُهَيْرٌ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَخْبَرَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ يَمِينُهُ مَا تُنْفِقُ شِمَالُهُ ... ».

“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার ডান হাত জানেনি তার বাঁ হাত কি খরচ করেছে”।[6]

এখানে ডান হাতের জায়গায় বাঁ হাত ও বাঁ হাতের জায়গায় ডান হাত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতরূপ বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি:

قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، ... ... وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ... ».

“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার বাঁ হাত জানেনি তার ডান হাত কি খরচ করেছে”।[7]

এ হাদিসে ডান হাতে খরচ করা ও বাঁ হাতের অজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। এটাই হাদিসের প্রকৃতরূপ।

কালবে মতনের তৃতীয় উদাহরণ:

قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَسَنٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».

“যখন তোমাদের কেউ সেজদা করে, সে যেন অবনমিত না হয়, যেরূপ অবনমিত হয় উট, আর সে যেন তার দু’হাত তার দু’হাঁটুর পূর্বে রাখে”।[8]

ইব্‌ন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ্ ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়াহ’র ব্যাখ্যায় বলেন: ‘এখানে কালব হয়েছে। তার প্রমাণ হাদিসের প্রথমাংশ। হাদিসের প্রথমাংশে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের ন্যায় সেজদা করতে নিষেধ করেছেন। আমরা দেখি উট হাঁটুর পূর্বে প্রথমে হাত রাখে, অর্থাৎ প্রথমে সামনের অংশ নিচু করে, অতঃপর পিছনের অংশ নিচু করে। আপনি যদি আগে হাত ও পরে হাঁটু রাখেন, তাহলে আপনিও উটের ন্যায় সেজদা করলেন, যার থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। অতএব যখন আপনি বললেন:‏"‏وليضع يديه قبل ركبتيه"‏ হাদিসের প্রথম অংশের খিলাফ করলেন, হাদিসের প্রথম অংশের দাবি:‏"وليضع ركبتيه قبل يديه‏" এটাই হাদিসের সঠিকরূপ, যেমন ইমাম তিরমিযি ও ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:

حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَغَيْرُ وَاحِدٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ، وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».

... ... ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজুর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি সেজদা করতেন দু’হাতের পূর্বে দুই হাঁটু রাখতেন। আর যখন তিনি উঠতেন দুই হাঁটুর পূর্বে দুই হাত উঠাতেন”।[9] হাসান ইব্‌ন ‘আলি হুলওয়ানি সূত্রে ইমাম আবু দাউদ এভাবেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।[10]

অতএব আমরা নিশ্চিত যে,«فلا يبرك كما يبرك البعير» এর দাবি: প্রথমে হাঁটু ও পরে হাত রাখা, কারণ সেজদার স্বাভাবিক ক্রম প্রথমে হাঁটু রাখা। অতঃপর হাত, অতঃপর কপাল ও নাক রাখা।

জ্ঞাতব্য: কলব-এ মতনকে ইব্‌ন জাযারি রাহিমাহুল্লাহ্ منقلب বলেছেন। বালকিনি রাহিমাহুল্লাহ্ معكوس বলেছেন। হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ مُبْدَل বলেছেন।

মাকলুবের হুকুম:মাকলুব একপ্রকার দ্বা‘ঈফ হাদিস। ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যদি কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া স্বেচ্ছায় কালব বা পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সেটা মাওদু‘ বা বানোয়াট হাদিসের একপ্রকার। আর যদি অনিচ্ছায় ও ভুলে হয়, তাহলে মাকলুব বা মু‘আল্লাল”।[11] সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘বরং এ জাতীয় হাদিস মাওদুর মতই’।[12] শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

[1] সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি রাহিমাহুল্লাহ্ (৯/২০২), হাদিস নং (১৭২২১), আদাবুল মুফরাদ লিল বুখারি (১১১১), ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া’ লি আবু নুআইম আল-ইসফাহানি (১০১৫৪) গ্রন্থকার প্রমুখগণ সুহাইলের ছাত্র সুফিয়ান থেকে এবং ইব্‌নুস সুন্নি রাহিমাহুল্লাহ্ (২৪২) সুহাইলের ছাত্র সুফিয়ান ও শুবা দু’জন থেকে বর্ণনা করেছেন।

[2] মুজামুল আওসাত লিত তাবরানি: (৬৩৫৮)

[3] হাদিস নং: (১৮৫)

[4] সহি ইব্‌ন হিব্বান: (১৪১৮)

[5] বুখারি: (১৪৮), মুসলিম: (২৬৭)

[6] মুসলিম: (১০৩৩)

[7] বুখারি: (১৪২৩)

[8] আবু দাউদ: (৮৪০)

[9] তিরমিযি: (২৬৮)

[10] আবু দাউদ: (৮৩৮)

[11] আন-নুযহা: (পৃ.১২৭)

[12] দেখুন: শারহুন নুযহাহ, লিল কারি: (পৃ.৪৮৮)

وَالْفَرْدُ مَا قَيَّدْتَه بِثِقَةِ | أَوْ جَمْعٍ اوْ قَصْرٍ عَلَى رِوَايَةِ

“আর ‘ফার্‌দ’ যা তুমি সংরক্ষণ করেছ একজন সেকাহ থেকে, অথবা বৃহৎ জমাত থেকে অথবা এক সনদ থেকে”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ত্রয়োবিংশ প্রকার ‘ফার্‌দ’।

‏فَردُ‏‏ এর আভিধানিক অর্থ বেজোড়।

‘ফার্‌দ’ দু’প্রকার:

১. ফার্‌দে মুতলাক ও ২. ফার্‌দে নিসবি। প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা আলাদা। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ শুধু ফার্‌দে নিসবি উল্লেখ করেছেন। আমরা সম্পূরক হিসেবে ফার্‌দে মুতলাক উল্লেখ করব।

২. ফার্‌দে নিসবি তিন প্রকার:

ক. একজন সেকাহ রাবি থেকে গ্রহণকৃত হাদিস ফার্‌দ, যদিও তার একাধিক গায়রে সেকাহ বা দুর্বল রাবি রয়েছে। অতএব সেকাহ রাবির বিবেচনায় ফার্‌দ, সাধারণ রাবির বিবেচনায় ফার্‌দ নয়। তাই এ প্রকারকে ফার্‌দে নিসবি বা অপেক্ষাকৃত ফার্‌দ বলা হয়, যেমন নিম্নে বর্ণিত হাদিস[1]:

قال الإمام مسلم –رحمه الله - وحَدَّثَنَا إسحاق بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، عَنْ ضَمْرَةَ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، عَنْ أَبِي وَاقِدٍ اللَّيْثِيِّ، قَالَ: " سَأَلَنِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَمَّا قَرَأَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَوْمِ الْعِيدِ، فَقُلْتُ: بِـ اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ ".

এ হাদিসের সনদে সাহাবির স্তরে আছেন আবু ওয়াকেদ আল-লাইসি, তার থেকে উবাইদুল্লাহ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উতবাহ, তার থেকে দামরাহ ইব্‌ন সায়িদ; বলা হয়: দামরাহ ইব্‌ন সায়িদ ব্যতীত কোনো সেকাহ রাবি এ হাদিস উবাইদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেনি, তাই এ হাদিস ফার্‌দ, তবে নিসবি ও অপেক্ষাকৃত ফার্‌দ, কারণ তার থেকে বর্ণনাকারী একাধিক দুর্বল রাবি রয়েছে।

খ. নির্দিষ্ট দেশ বা নগর বা বংশ থেকে বর্ণিত হাদিস[2], যেমন:

قال الإمام أبوداود- رحمه الله- حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: " أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ ".

ইমাম হাকেম রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এ হাদিস أُمِرْنَا শব্দ যোগে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু বসরার রাবিগণ বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসের সনদে সাহাবির স্তরে আছেন: আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (মৃ৬৩হি.), তিনি মাদানি; তার থেকে বর্ণনাকারী আবু নাদরাহ (মৃ১০৮হি.), তিনি বসরি; তার থেকে বর্ণনাকারী কাতাদাহ (মৃ১১৭হি.), তিনি বসরি; তার থেকে বর্ণনাকারী হাম্মাম ইব্‌নু ইয়াহইয়া (মৃ১৬৪হি.), তিনি বসরি; তার থেকে বর্ণনাকারী আবুল ওয়ালিদ আত-তায়ালিসি (মৃ২২৭হি.), তিনি বসরি। অর্থাৎ এ হাদিসের সনদের প্রত্যেক রাবি ইমাম আবু দাউদ পর্যন্ত বসরার বাসিন্দা, একমাত্র সাহাবি ব্যতীত। বসরার সকল রাবি এ হাদিস أُمِرْنَا শব্দসহ বর্ণনা করেছেন। তাই এ হাদিস বসরিদের ফার্‌দ।

গ. কোনো শায়খ থেকে একজন রাবির একা কোনো হাদিস বর্ণনা করা, সে ব্যতীত ঐ শায়খ থেকে কেউ তা বর্ণনা করেনি, যদিও অন্যান্য শায়খ থেকে তার একাধিক সনদ রয়েছে। শায়খের একজন ছাত্র থেকে হাদিসটি প্রাপ্ত হিসেবে ফার্‌দ, কারণ তার অন্য কোনো ছাত্র তার থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেনি, তবে নিসবি কারণ অন্যান্য শায়খদের থেকে তাদের ছাত্রগণ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, যাদের বিবেচনায় নিলে হাদিস আযিয বা মাশহূর হতে পারে, যেমন:

قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا حَامِدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا وَائِلُ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ ابْنِهِ بَكْرِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ الزَّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " أَوْلَمَ عَلَى صَفِيَّةَ بِسَوِيقٍ وَتَمْرٍ ".

এ হাদিসের সনদে দেখছি: সাহাবির স্তরে আনাস ইব্‌ন মালিক, তার থেকে যুহরি, তার থেকে বকর ইব্‌ন ওয়ায়েল, তার থেকে পিতা ওয়ায়েল ইব্‌ন দাউদ, তার থেকে সুফিয়ান, তার থেকে হামেদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া, তার থেকে ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ্[3]।

ইব্‌ন তাহের বলেন: এ হাদিস বকর থেকে একমাত্র ওয়ায়েল বর্ণনা করেছেন, তার থেকে শুধু সুফিয়ান। ছেলে বকর থেকে একমাত্র পিতা ওয়ায়েল বর্ণনা করেছেন, তাই এ হাদিস ফার্‌দে নিসবির তৃতীয় নাম্বার। এ প্রকার আবার গরিবও।

সাহাবিদের যুগে ফার্‌দের সংখ্যা বেশী, অনুরূপ তাবে‘ঈদের যুগেও বেশী, তবে সাহাবিদের অপেক্ষা কম। কারণ তাদের সংখ্যা অধিক, তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিলেন। অনুরূপ তাদের অনুসারীদের যুগেও ফার্‌দের সংখ্যা অনেক, কিন্তু তাবে‘ঈদের তুলনায় অনেক কম। এ থেকে প্রমাণিত হয় ফার্‌দ দুর্বল হাদিসের একপ্রকার।

লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ ফার্‌দের ভাগ করে বুঝিয়েছেন যে, ফার্‌দ কখনো অপেক্ষাকৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়, কখনো ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ১. সাহাবি, তাবে‘ঈ বা তাদের অনুসারীদের স্তরে ফার্‌দ; ২. নির্দিষ্ট দেশ, শহর বা বংশের বিবেচনায় ফার্‌দ; ৩. শায়খ ও ছাত্রের বিবেচনায় ফার্‌দ। ৪. সেকাহ ও দুর্বল রাবির বিবেচনায় ফার্‌দ।

প্রথম প্রকার মুতলাক বা সাধারণ ফার্‌দ, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার নিসবি বা অপেক্ষাকৃত ফার্‌দ। প্রথম প্রকার ফার্‌দ সাধারণত দুর্বল হয়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকার ফার্‌দ সহির নিকটবর্তী। কারণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকার হাদিস তাদের বিবেচনায় ফার্‌দ, কিন্তু অন্যদের বিবেচনায় আযিয ও মাশহূর হতে পারে, তাই সহির নিকটবর্তী।

১. ফার্‌দে মুতলাক:

ফার্‌দে মুতলাক বা সাধারণ ফার্‌দ: সনদের মূল তথা সাহাবির স্তরে যদি একজন রাবি থাকে তাহলে ফার্‌দে মুতলাক, আর সাহাবির স্তরে ফার্‌দ হবে যদি এক বা একাধিক সাহাবি থেকে একজন তাবে‘ঈ বর্ণনা করেন। সাহাবির সংখ্যা অধিক হলেও ফার্‌দ, কারণ তাবে‘ঈ একজন। তাবে‘ঈ সন্দেহের স্থান, সাহাবি সন্দেহের স্থান নয়, তাই তার স্তরে ফার্‌দ সন্দিহান। এ ফার্‌দ কখনো দূর হবে না, পরবর্তী রাবি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে ফার্‌দে মুতলাক। ফার্‌দের এ প্রকারও গরিব।

একজন সাহাবি থেকে একাধিক তাবে‘ঈ রাবি হলে ফার্‌দে নিসবি, একাধিক তাবে‘ঈ থেকে একজন রাবি হলে ফার্‌দে নিসবিই থাকবে। অর্থাৎ একজন সাহাবি থেকে একাধিক তাবে‘ঈ রাবি হলে ফার্‌দে নিসবি, তথা সাহাবির বিবেচনায় ফার্‌দ, আবার একাধিক তাবে‘ঈ থেকে যদি তৃতীয় স্তরে একজন রাবি হয় তবুও ফার্‌দ। এ প্রকার ফার্‌দের ওজুদ সম্পর্কে জানা নেই, কারণ তাবে‘ঈর যুগে কোনো হাদিস প্রসিদ্ধি লাভ করে পরবর্তী যুগে ফার্‌দ হওয়া অসম্ভব না হলেও ওজুদ নেই। তাবে‘ঈর স্তরে একজন হলে ফার্‌দে মুতলাক, সাহাবির স্তরে একজন হলে ফার্‌দে নিসবি। সাহাবি ও তাবে‘ঈ উভয় স্তরে ফার্‌দ হলে ফার্‌দে মুতলাক। এটাই পরিভাষা, অন্যথায় সাহাবি একজন হলে ফার্‌দ মুতলাক হত, কিন্তু সাহাবির ফার্‌দ যেহেতু দোষণীয় নয়, তাই উসুলে হাদিসের পরিভাষায় ফার্‌দ বলা হয় না। কারণ, ফার্‌দ একপ্রকার দুর্বল হাদিস, সাহাবি একজন হলে হাদিস দুর্বল হয় না, অপেক্ষাকৃত ফার্‌দ বলা হয়।

ফার্‌দে মুতলাক দু’প্রকার:

ক. সাহাবি, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী এক বা একাধিক রাবির ক্রমান্বয়ে একলা বর্ণিত হাদিস ফার্‌দ, যেমন নিয়তের হাদিস[4]:

قال الإمام البخاري – رحمه الله- حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْأَنْصَارِيُّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ".

এ হাদিসে সাহাবির স্তরে ওমর ইব্‌নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি ব্যতীত কোনো সাহাবি এ হাদিস বর্ণনা করেনি; তার ছাত্র আলকামা ইব্‌নু ওয়াক্কাস আল-লাইসি, তিনি ব্যতীত ওমর ইব্‌নুল খাত্তাব থেকে কেউ এ হাদিস বর্ণনা করেনি; তার ছাত্র মুহাম্মদ ইব্‌নু ইবরাহিম আত-তাইমি, তিনি ব্যতীত আলকামা থেকে কেউ এ হাদিস বর্ণনা করেনি; তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইব্‌নু সায়িদ আল-আনসারি, তিনি ব্যতীত মুহাম্মদ থেকে কেউ এ হাদিস বর্ণনা করেনি। ইয়াহইয়ার ছাত্র অনেক, তার পর থেকে হাদিস প্রসিদ্ধি লাভ করে।

এ হাদিস ফার্‌দে মুতলাক এবং গরিব, কারণ সাহাবি ও তাবে‘ঈর স্তরে একজন রাবি। এ হাদিস ফার্‌দে নিসবির প্রথম প্রকার, কারণ একজন সেকাহ রাবি বর্ণনা করেছে, দুর্বল কোনো রাবি বর্ণনা করুক বা না-করুক। এ হাদিস ফার্‌দে নিসবির তৃতীয় প্রকার, অর্থাৎ ওমর ইব্‌নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইয়াহইয়া পর্যন্ত ফার্‌দ, তাই সনদের প্রথমাংশের বিবেচনায় ফার্‌দ, সাধারণত এ প্রকারকে গরিব বলা হয়, যদিও শেষাংশের বিবেচনায় মাশহূর।

খ. কোনো গ্রাম, বংশ বা নগরবাসীর বর্ণিত হাদিস ফার্‌দে মুতলাকের দ্বিতীয় প্রকার। কোনো সম্প্রদায় যদি একটি হাদিস বর্ণনা করে, অপর কোনো গ্রাম, নগর বা দেশবাসীর নিকট সে হাদিস না-থাকে তাহলে মুতলাক। সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল রাবি এক জায়গার তাই ফার্‌দে মুতলাক বলা হয়, এ প্রকার আবার ফার্‌দে নিসবির দ্বিতীয় প্রকারও বটে।জ্ঞাতব্য: ফার্‌দের কতক প্রকার কতক প্রকারে অনুপ্রবেশ করে, যেমন ফার্‌দে নিসবির দ্বিতীয় প্রকার ও ফার্‌দে মুতলাকের দ্বিতীয় প্রকারের সংজ্ঞা ও উদাহরণ এক। আবার ফার্‌দে নিসবির দ্বিতীয় প্রকার ও ফার্‌দে মুতলাকের প্রথম প্রকার এক, যদি হাদিসটি সেকাহ রাবি ব্যতীত দ্বিতীয় কেউ বর্ণনা না করে। ফার্‌দে মুতলাকের প্রথম প্রকার ও ফার্‌দে নিসবির তৃতীয় প্রকারকে গরিব বলা হয়। ভালো করে স্মরণ রাখুন।

[1] মুসলিম: (৮৯২)

[2] আবু দাউদ: (৮১৮)

[3] আবু দাউদ: (৩৭৪৪)

[4] বুখারি: (১), মুসলিম: (১৯১০)

وَمَا بِعِلَّةٍ غُمُوضٍ أَوْ خَفَا | مُعَلَّلٌ عِنْدَهُمُ قَدْ عُرِفَا

“আর যে হাদিসে সূক্ষ্ম ও উহ্য দোষ রয়েছে তাই মুহাদ্দিসদের নিকট মু‘আল্লাল হিসেবে প্রসিদ্ধ”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের চতুর্বিংশ প্রকার মু‘আল্লাল। এ প্রকার হাদিসকে মু‘আল্লাল, মু‘আল্ ও মা‘লুল ইত্যাদি নামে অবহিত করা হয়, তবে অভিধানের বিচারে ‘মুয়াল্’ শব্দটি অধিক বিশুদ্ধ।

علة এর আভিধানিক অর্থ রোগ,عَلَّ يَعِلُّ থেকেمُعلَّلٌ অর্থ অসুস্থ ব্যক্তি। এ থেকে দোষণীয় ইল্লতযুক্ত হাদিসকে মু‘আল্লাল বলা হয়, কারণ মু‘আল্লাল হাদিসও অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় অক্ষম, সহি হাদিসের ন্যায় দলিল হতে পারে না।

ইল্লত প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যে হাদিসের সনদ বা মতনে সূক্ষ্ম ও উহ্য দোষ রয়েছে তাই মুহাদ্দিসদের নিকট মু‘আল্লাল হিসেবে প্রসিদ্ধ”।

ইমাম সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ মু‘আল্লালের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন:

"والمعلول: خبر ظاهر السلامة، اطُّلِعَ فيه بعد التفتيش على قادح".

“মু‘আল্লাল: বাহ্যত দোষমুক্ত হাদিস, অনেক অনুসন্ধানের পর তাতে দোষ সম্পর্কে জানা গেছে”।[1]

ইমাম হাকেম রাহিমাহুল্লাহ্ মু‘আল্লালের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন:

"وإنما يعلل الحديث من أوجه ليس للجرح فيها مدخل، فإن حديث المجروح ساقط واه، وعلة الحديث تكثر في أحاديث الثقات، أن يحدثوا بحديث له علة، فتخفى عليهم علته، فيصير الحديث معلولا".

“এমন কতক কারণে হাদিসকে মু‘আল্লাল ঘোষণা করা হয়, যে কারণে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, দোষী ব্যক্তিদের হাদিস পরিত্যক্ত। আর সেকাহ রাবিদের হাদিসে ইল্লত অধিক হয়, তারা কোনো হাদিস বর্ণনা করেন, যার ইল্লত রয়েছে, কিন্তু তার ইল্লত তাদের নিকট অজ্ঞাত থাকে, ফলে হাদিসটি মু‘আল্লাল হয়”।[2]

হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ হাকেমের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন: “এ হিসেবে মুনকাতি‘ হাদিসকে মু‘আল্লাল বলা যাবে না এবং যে হাদিসের রাবি অজ্ঞাত কিংবা দুর্বল তাকেও মু‘আল্লাল বলা যাবে না। হাদিসকে তখনি মু‘আল্লাল হবে, যখন তার ইল্লত খুব সূক্ষ্ম হয়, বাহ্যত যার থেকে মুক্ত মনে হয়। এ থেকে তাদের কথার বাতুলতা প্রমাণ হল, যারা বলেন: প্রত্যেক অগ্রহণীয় হাদিস মু‘আল্লাল”।[3]

যারা বলেন: এ হাদিসে ইল্লত রয়েছে, অতঃপর مجالد بن سعيد কিংবা ابن لهيعة রাবিদের ন্যায় দুর্বল রাবি পেশ করেন, তাদের ইল্লতের প্রয়োগ যথাযথ নয়। কারণ, এ জাতীয় রাবির দুর্বলতা সবার নিকট স্পষ্ট। আর আমাদের আলোচনার বস্তু হচ্ছে সূক্ষ্ম ও সুপ্ত ইল্লত। যেমন কোনো মুহাদ্দিস বলেন: “ইল্লত এমন এক বস্তু, যা মুহাদ্দিসের অন্তরে খতের সৃষ্টি করে”। উদাহরণত কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দিস কারো নিকট ‘আ‘মাশে’র হাদিস শ্রবণ করে বললেন: এ হাদিস ‘আ‘মাশে’র হাদিসের মত নয়; কিংবা বললেন: এ হাদিস ইমাম যুহরির হাদিস নয়। তাদের এ কথা হাদিসের ইল্লত প্রমাণ করে। কারণ, তারা হাদিসের সনদ জানেন, ইতিহাস জানেন, রাবিদের অবস্থা জানেন, তারা হাদিস দেখে ইল্লত বলতে পারেন, যেমন স্বর্ণকার স্বর্ণ দেখে খাঁটি-ভেজাল বলতে পারেন, কিন্তু ইল্লত বা কারণ উল্লেখ করেন না। তারা বলেন: ‘এ হাদিস দ্বা‘ঈফ’, কিন্তু যখন তাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করা হল, এটা কিভাবে জানব? তখন সে উত্তর দিল: আমি তোমাকে বলেছি এতে ইল্লত আছে। তুমি ইব্‌ন মাহদিকে জ্ঞিজ্ঞাসা কর, সেও বলবে এতে ইল্লত আছে। তুমি আহমদকে জিজ্ঞাসা কর, সেও বলবে এতে ইল্লত আছে। তুমি ইয়াহইয়া ইব্‌ন সায়িদ আল-কাত্তানকে জিজ্ঞাসা কর, সেও বলবে এতে ইল্লত আছে। এভাবে সকল বিজ্ঞ মুহাদ্দিসের কথা ইল্লতের ব্যাপারে এক হয়ে যায়, হাদিসের উপর যারা অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন, আল্লাহ তাদের অন্তরে এ বিষয়গুলো ঢেলে দেন।

কোনো মারফূ‘ হাদিসের মুত্তাসিল সনদ সবার নিকট পরিচিত, অতঃপর একজন হাফেযে হাদিস বলেন, এতে একটি দোষণীয় ইল্লত রয়েছে, অর্থাৎ অমুক সেকাহ রাবি থেকে হাদিসটি মুনকাতি‘ বর্ণিত। আমরা তার মন্তব্য থেকে হাদিসে দ্বা‘ঈফের একটি ইল্লত পেলাম ইনকিতা‘ বা সনদের বিচ্ছেদ, অথচ হাদিসটি সবার নিকট মুত্তাসিল ছিল।

ইব্‌ন হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে এরূপ অনেক বলেন: হাদিসটি ইরসালের কারণে মু‘আল্‌, বা ওয়াকফের কারণে মু‘আল্‌ ইত্যাদি। তিনি যখন এ জাতীয় মন্তব্য করেন, আপনি তার রাবিদের খোঁজ নিয়ে দেখেন।

মুদ্দাকথা: মু‘আল্‌ হাদিসের বাহ্যিক দেখে সহি মনে হয়, কারণ তাতে সহির সকল শর্ত বিদ্যমান, কিন্তু ব্যাপক গবেষণার পর স্পষ্ট হয় যে, হাদিসটি দোষণীয় ইল্লতের কারণে মু‘আল্‌।

ইল্লত দু’প্রকার:

১. দোষণীয় ইল্লত ও ২. দোষহীন ইল্লত।

দোষহীন ইল্লতের কারণে হাদিসের বিশুদ্ধতা বিনষ্ট হয় না। এ ইল্লত মতন ও সনদ উভয় স্থানে হতে পারে। সনদে দোষহীন ইল্লত যেমন,

قال الإمام الترمذي –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، وَشُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ بَيْعِ الْوَلَاءِ وَهِبَتِهِ ".

ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম [গোলামকে] ‘অলা’[4] বিক্রি ও দান করতে নিষেধ করেছেন”।[5]

এ হাদিস ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র عبد الله بن دينار সূত্রে বর্ণিত, কোনো রাবি যদি তার পরিবর্তে عمرو بن دينار বলে তাহলে ইল্লত হবে, তবে দোষণীয় নয়, কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন দিনার ও আমর ইব্‌ন দিনার উভয়ে সেকাহ।

মতনে দোষহীন ইল্লত যেমন:

قال الإمام مسلم-رحمه الله- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ أَبِي شُجَاعٍ سَعِيدِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ خَالِدِ بْنِ أَبِي عِمْرَانَ، عَنْ حَنَشٍ الصَّنْعَانِيِّ، عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ قَالَ: " اشْتَرَيْتُ يَوْمَ خَيْبَرَ قِلَادَةً بِاثْنَيْ عَشَرَ دِينَارًا فِيهَا ذَهَبٌ وَخَرَزٌ، فَفَصَّلْتُهَا، فَوَجَدْتُ فِيهَا أَكْثَرَ مِنَ اثْنَيْ عَشَرَ دِينَارًا، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لَا تُبَاعُ حَتَّى تُفَصَّلَ "

... ... ফুদালা ইব্‌ন উবাইদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি খায়বরের দিন বারো দিনার দিয়ে একটি হার ক্রয় করেছি, যাতে স্বর্ণ ও পূতি ছিল। দু’টি বস্তু [স্বর্ণ ও পূতি] পৃথক করে তাতে বারো দিনারের অধিক পেলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি অবহিত করি, তিনি বললেন: দু’টি বস্তু পৃথক করা ব্যতীত বিক্রি করা যাবে না”।[6]

এ হাদিসের রাবিগণ হারের মূল্য নির্ধারণে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কেউ বলেছেন: বারো দিনার। কেউ বলেছেন: নয় দিনার। কেউ বলেছেন: দশ দিনার, ইত্যাদি।

এসব দোষের কারণে হাদিসে ইল্লত হয় ঠিক, তবে এ জাতীয় ইল্লত হাদিসের শুদ্ধতা বিনষ্ট করে না, কারণ সব বর্ণনায় হাদিসের মূল বিষয় এক। এ হাদিস প্রমাণ করে কোনো বস্তুর সাথে মিশ্রিত স্বর্ণ পৃথক করা ব্যতীত স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করা যাবে না। স্বর্ণ পৃথক করে সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে, আর অপর বস্তু যত দামে ইচ্ছা বিক্রি করবে। এটা হাদিসের মূল বক্তব্য। হারের মূল্য যতই বলি এতে প্রভাব পড়ে না, তাই হারের মূল্যের ইখতিলাফ দোষণীয় ইল্লত নয়।

দোষণীয় ইল্লত:

قال الإمام الترمذي -رحمه الله- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ حَرْبٍ الْمُلَائِيُّ، عَنْ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " إِذَا أَرَادَ الْحَاجَةَ لَمْ يَرْفَعْ ثَوْبَهُ حَتَّى يَدْنُوَ مِنَ الْأَرْضِ ".

এ হাদিসের সনদ বাহ্যত সহি এবং সকল রাবি সেকাহ। ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “বলা হয় আ‘মাশ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বা কোনো সাহাবি থেকে শ্রবণ করেনি। তিনি শুধু আনাসকে দেখেছেন। আ‘মাশ বলেন: আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। অতঃপর সালাত সম্পর্কে তার একটি ঘটনা বর্ণনা করেন”।[7] ইমাম তিরমিযির মন্তব্য থেকে ‘আ‘মাশ’ ও ‘আনাসে’র মাঝে ইনকেতা‘ প্রমাণিত হয়। এটাই ইল্লত।

ইল্লত জানার গুরুত্ব:

ইব্‌ন মাহদি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন: ‘আমার নিকট একটি হাদিসের ইল্লত জানা নতুন বিশটি হাদিস শেখার চেয়ে অধিক উত্তম’।[8]

হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ নুখবার ব্যাখ্যায় বলেন: “হাদিস শাস্ত্রের এ প্রকার সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও দুর্বোধ্য। আল্লাহ যাকে অন্তর্দৃষ্টি, ব্যাপক স্মৃতিশক্তি, রাবিদের স্তর এবং সনদ ও মতন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করেছেন সেই এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারেন। তাই দেখি এ বিষয়ে খুব কম লোক মুখ খুলেছেন, যেমন: আলি ইব্‌নু মাদিনি, আহমদ ইব্‌নু হাম্বল, বুখারি, ইয়াকুব ইব্‌নু শাইবাহ, আবু হাতেম, আবু যুরআহ ও দারাকুতনি প্রমুখ। মুহাদ্দিস কতক সময় ইল্লতের কারণ দর্শাতে পারেন না, যেমন মুদ্রা ব্যবসায়ী খাঁটি দিনার ও দিরহামের পক্ষে দলিল দিতে পারেন না, কিন্তু খাঁটি মুদ্রা তিনি ঠিকই চিনেন”।[9]

‘ইলালের উপর লিখিত কিতাব:‘ইলালের উপর লিখিত কিতাবসমূহের মধ্যে ‘ফাতহুল বারি’ অন্যতম, এতে ফিকাহ, হাদিস ও ইল্লতের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। অতঃপর ‘নাসবুর রায়াহ’, ‘তালখিসুল হাবির’, ইব্‌ন আব্দুল হাদি রচিত ‘আল-মুহাররার’ ইত্যাদি গ্রন্থে ইল্লতের উপর আলোচনা রয়েছে। ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থেও ইলালের উপর যথেষ্ট আলোচনা রয়েছে। অনুরূপ এ বিষয়ে আরেকটি সুন্দর কিতাব: ‘আল-কুবরা’ লিল বায়হাকি।

[1] ফাতহুল মুগিস: (১/২৭৬)

[2] ‘মা‘রিফাতু উলুমিল হাদিস’: (পৃ.১১২-১১৩)

[3] আন-নুকাত: (২/৭১০)

[4] দাস/দাসীদের মিরাস ও পরিত্যক্ত সম্পদকে ‘অলা’ বলা হয়।

[5] তিরমিযি: (১২৩৬), তিনি বলেন: এ হাদিস হাসান ও সহি।

[6] মুসলিম: (১৫৯২), তিরমিযি: (১২২৫), নাসায়ি: (৪৫৭৩), আবু দাউদ: (৩৩৫২), মুসনাদে আহমদ ইব্‌ন হাম্বল: (৬/১৯)

[7] তিরমিযি: (১৪)

[8] ‘আল-‘ইলাল’: (১/১২৩) লি ইব্‌নি আবি হাতেম।

[9] আন-নুজহা: (১২৩-১২৪)

وَذُو اخْتِلافِ سَنَدٍ أَوْ مَتْنِ | مُضْطَرِبٌ عِنْدَ أُهَيْلِ الْفَنِّ

“আর বৈপরীত্যশীল সনদ বা মতন বিশিষ্ট হাদিস এ শাস্ত্রে অভিজ্ঞদের নিকট মুদতারিব”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের পঞ্চবিংশ প্রকার মুদতারিব। হাদিসের এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।

اضطراب এর আভিধানিক অর্থ অমিল ও ইখতিলাফ। ইদতিরাবের মূল ব্যবহার হয় নদী বা সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্ষেত্রে, যখন অধিক তরঙ্গ দেখা দেয় ও ঢেউয়ের উপর ঢেউ আছড়ে পড়ে, তখন বলা হয়: اضطربت الأمواج ‘সমুদ্র অশান্ত হয়ে উঠছে বা ঢেউয়ের উপর ঢেউ আছড়ে পড়ছে’। এ থেকে এক সনদের সাথে অপর সনদ ও এক মতনের সাথে অপর মতনের অমিল ও বিরোধ হলে ইদতিরাব বলা হয়।

‘ইদতিরাবে’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সমান শক্তিশালী একাধিক সনদ অথবা মতনের বৈপরীত্য বা অমিলকে হাদিসের পরিভাষায় ইদতিরাব বলা হয়, যেগুলোর মাঝে সমন্বয় করা কিংবা কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয়”। চারটি শর্তে ইদতিরাব হয়:

১. একাধিক সনদ, ২. পরস্পরের মাঝে অমিল, ৩. সব সনদের সমান শক্তিশালী হওয়া, ৪. উসুলে হাদিসের নীতিতে সমন্বয় করা সম্ভব না হওয়া।

অতএব ইদতিরাব সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে সব ক’টি সনদের মান ও শুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। মুত্তাসিল ও মুনকাতি‘ এবং মারফূ‘ ও মাওকুফের মাঝে ইদতিরাব হয় না। অনুরূপ একাধিক সনদের মাঝে সমন্বয় কিংবা কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব হলে ইদতিরাব বলা হয় না।

সমন্বয়ের ফলে ইদতিরাব নেই:

আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়া’র ব্যাখ্যায় বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজের বর্ণনা সম্বলিত হাদিসে ইদতিরাব পরীলক্ষিত হয়, কেউ বলেন: তিনি কিরান হজ করেছেন। কেউ বলেন: ইফরাদ হজ করেছেন। কেউ বলেন: তামাত্তু হজ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এতে কোনো ইদতিরাব নেই, কারণ সমন্বয় করা সম্ভব। সমন্বয় করার দু’টি পদ্ধতি:

প্রথম পদ্ধতি: যারা বলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফরাদ হজ করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য ইফরাদ আমল, যেমন তিনি মক্কায় পৌঁছে প্রথমে তওয়াফে কুদুম ও হজের সায়ি করেন। অতঃপর ঈদের দিন শুধু তওয়াফে ইফাদা করেন। অতঃপর মক্কা ত্যাগ করার সময় তওয়াফে বিদা করে প্রস্থান করেন।

যারা বলেন তিনি তামাত্তু হজ করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য হজ ও ওমরা এক সফরে সম্পাদন করা। হজ ও ওমরা দু’টি ইবাদত, দু’সফরে সম্পাদন করাই স্বাভাবিক, তবে তিনি এক সফরে উভয় সম্পাদন করে ফায়দা তথা তামাত্তু হাসিল করেছেন। ওমরার পৃথক সফর ও অর্থব্যয় থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তামাত্তু অর্থ ফায়দা হাসিল করা।

যারা বলেন তিনি কিরান হজ করেছেন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত হজের বর্ণনা দিয়েছেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুতে হজের ইহরাম বাঁধেন, অতঃপর তার সাথে ওমরা সংযুক্ত করেন। ইহরামের প্রথম অবস্থার ভিত্তিতে তিনি মুফরিদ, দ্বিতীয় অবস্থার ভিত্তিতে তিনি কারিন। হজ ও ওমরা এক সফরে আদায় করেছেন হিসেবে তামাত্তুকারী।

শায়খুল ইসলাম ইব্‌নে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ্ প্রথম পদ্ধতি সমর্থন করে বলেন: “যিনি ইফরাদ বলেছেন, তার উদ্দেশ্য হজের আমল। যিনি তামাত্তু বলেছেন, তার উদ্দেশ্য এক সফরে হজ ও ওমরা সম্পন্ন করে তামাত্তু হাসিল করা। যিনি কিরান বলেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত হজ বর্ণনা করেছেন”।[1]

হজ তিন প্রকার:

১. ইফরাদ। ২. তামাত্তু। ৩. কিরান।

১- ইফরাদ: মিকাত থেকে শুধু হজের ইহরাম বেঁধে মুখে لبيك اللهم حجًّا বলা, অতঃপর মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম ও হজের সায়ি সম্পন্ন করে হজের শেষ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকা। ঈদের দিন তাওয়াফে ইফাদা করে বাড়ি ফিরার সময় তাওয়াফে বিদা করা।

২- কিরান: একসাথে হজ ও ওমরার ইহরাম বেঁধে মুখে لبيك اللهم عمرة وحجًّا বলা, অতঃপর মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম ও হজ-ওমরার সায়ি করা। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় থেকে ঈদের দিন শুধু তাওয়াফে ইফাদা করা। বাড়ি ফেরার সময় তাওয়াফে বিদা করা। কিরানের কর্মগুলো ইফরাদের ন্যায়, পার্থক্য শুধু নিয়তে ও হাদই প্রদানে।

৩- তামাত্তু: মিকাত থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফ, সায়ি ও চুল ছোট করে ওমরা সম্পন্ন করা। অতঃপর জিল হজের অষ্টম দিন ইহরাম বেঁধে ঈদের দিন তাওয়াফে ইফাদা ও হজের সায়ি করা। বাড়ি ফেরার সময় শুধু তাওয়াফে বিদা করা।

প্রাধান্য দেওয়ার ফলে ইদতিরাব নেই:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন বারিরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মুক্ত করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ বহাল রাখা কিংবা ভেঙ্গে ফেলার স্বাধীনতা দেন। তখন ‘বারিরাহ’র স্বামী মুগিস গোলাম না স্বাধীন ছিল ইখতিলাফ রয়েছে, যা দূর করা সম্ভব নয়, তাই প্রাধান্য দেওয়ার নীতি অনুসরণ করব। মুহাদ্দিসদের নিকট মুগিস গোলাম ছিল বর্ণনা অধিক বিশুদ্ধ। ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন:

قَالَ الْحَكَمُ: وَكَانَ زَوْجُهَا حُرًّا وَقَوْلُ الْحَكَمِ: مُرْسَلٌ، وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: رَأَيْتُهُ عَبْدًا.

“হাকাম বলেছে: তার স্বামী ছিল স্বাধীন, হাকামের কথা মুরসাল। ইব্‌ন আব্বাস বলেছেন: আমি তাকে গোলাম দেখেছি”।[2] বুখারি অন্যত্র বলেন:

قَالَ الْأَسْوَدُ: وَكَانَ زَوْجُهَا حُرًّا ". قَوْلُ الْأَسْوَدِ: مُنْقَطِعٌ، وَقَوْلُ ابْنِ عَبَّاسٍ: رَأَيْتُهُ عَبْدًا: أَصَحُّ.

“আসওয়াদ বলেছে: তার স্বামী ছিল স্বাধীন, আর আসওয়াদের কথা: মুনকাতি‘। ইব্‌ন আব্বাসের বাণী: ‘আমি তাকে গোলাম দেখেছি’ অধিক বিশুদ্ধ”।[3] ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন:

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: " كَانَ زَوْجُ بَرِيرَةَ عَبْدًا "

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আর তার স্বামী ছিল গোলাম”।[4] অতএব এতে কোনো ইদতিরাব নেই, কারণ বারিরার স্বামী গোলাম ছিল বর্ণনাগুলো অধিক বিশুদ্ধ।

ইব্‌ন দাকিকুল ঈদ বলেন: “মাখরাজ এক না হলে ইদতিরাব হবে না”।[5] অর্থাৎ মুদতারিব হাদিসের সব ক’টি সনদ একজন রাবির উপর নির্ভরশীল হতে হবে। সাহাবি দু’জন হলে ইদতিরাব হবে না।

ইব্‌ন রজব রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “... জেনে রাখ, এক হাদিসের সনদে ইখতিলাফ হলে ইদতিরাব হয়, একাধিক হাদিসের সনদের মাঝে ইদতিরাব হয় না। অতএব এক সনদের কারণে অপর সনদ ভুল বলা যাবে না।”।[6]

শায়খ সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “ইদতিরাবের শর্তগুলো খুব সূক্ষ্ম, কোন হাদিসের সকল সনদ জমা করে ইদতিরাবের শর্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মুদতারিব ফায়সালা করা কঠিন কাজ। কারণ কেউ একটি হাদিস মুদতারিব বলল, অতঃপর তার চেয়ে বিজ্ঞ কেউ তাতে প্রাধান্য দিল, অথবা উভয়ের মাঝে সমন্বয় করল, তখন ইদতিরাব থাকবে না। ‘শায’ ফয়সালা করা অপেক্ষাকৃত সহজ, ইদতিরাব ফয়সালা করা কঠিন, বিশেষ করে মতনের ইদতিরাব”।[7] ইদতিরাব সনদ ও মতন উভয় জায়গায় হয়, বেশী হয় সনদে।

সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আলেমগণ সনদের কারণে একাধিক হাদিসে ইদতিরাবের বিধান আরোপ করেছেন, কিন্তু মতনের কারণে মাত্র কয়েকটি হাদিস মুদতারিব বলেছেন। সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘ইদতিরাবের সুনির্দিষ্ট উদাহরণ পাওয়া খুব মুশকিল’। অর্থাৎ এমন হাদিস পাওয়া দুষ্কর যা শুধু ইদতিরাবের কারণে দুর্বল, ইদতিরাব না হলে হাদিসটি সহি হত”।[8]

জ্ঞাতব্য: ইদতিরাব সেকাহ রাবিদের হাদিসে হয়, দুর্বল রাবিদের হাদিসে ইদতিরাব হয় না। কারণ, তাদের হাদিস ইদতিরাব ছাড়াই দুর্বল। আর ইদতিরাব সম্পন্ন হাদিস, ইদতিরাব থেকে মুক্ত হলে সহি হয়। তাই এ প্রকার সেকাহ রাবিদের হাদিসের সাথে খাস।

মুদতারিব হাদিসের হুকুম:

মুদতারিব হাদিস দ্বা‘ঈফ, কারণ রাবিদের ইখতিলাফ প্রমাণ করে কেউ হাদিসটি ভালো করে সংরক্ষণ করতে পারেনি।

>
[1] শারহুল মানদুমাহ লি ইব্‌নি উসাইমিন।

[2] বুখারি: (৬৭৫১)

[3] বুখারি: (৬৭৫৪)

[4] মুসলিম: (১০/১৪৭), (২৭৭৫)

[5] আল-ইকতিরাহ: (পৃ.৩২৪)

[6] শারহু ‘ইলালিত তিরমিযি: (২/৮৪৩)

[7] আল-জাওয়াহির: (৩৩৭)

[8] আল-জাওয়াহির: (৩৩৭)

وَالْمُدْرَجَاتُ في الْحَدِيْثِ مَا أَتَتْ | مِنْ بَعْضِ أَلْفَاظِ الرُّواةِ اتَّصَلَتْ

“হাদিসে বিদ্যমান সেসব শব্দ মুদরাজ, যা কতক রাবির শব্দ থেকে [তার সাথে] সংযুক্ত হয়েছে”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ষড়বিংশ প্রকার মুদরাজ। এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।

‏مدْرَج‏‏ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ প্রবেশকৃত বস্তু। এক বস্তুকে অপর বস্তুর মাঝে প্রবেশ করানো হলে বলা হয়: أدرجت الشيء في الشيء ‘আমি এক বস্তুকে অপর বস্তুর মাঝে প্রবেশ করিয়েছি’।[1] ইদরাজ ক্রিয়া বিশেষ্য, অর্থ প্রবেশ করানো।

‘মুদরাজে’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “হাদিসের সনদ বা মতনে বিনা পার্থক্যে রাবির পক্ষ থেকে বৃদ্ধিকে মুদরাজ বলা হয়”। লেখক এক প্রকার মুদরাজ উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ মতনের মুদরাজ। এ জাতীয় মুদরাজ সবচেয়ে বেশী হয়। হাদিস দ্বারা যদি তিনি সনদ ও মতন উভয় উদ্দেশ্য করেন, তাহলে মুদরাজের উভয় প্রকার তিনি উল্লেখ করেছেন।

জ্ঞাতব্য: হাদিস দ্বারা মারফূ‘ ও মাওকুফ উভয় উদ্দেশ্য। ইচ্ছায় বৃদ্ধি করা হোক বা অনিচ্ছায় বৃদ্ধি করা হোক বর্ধিত অংশকে মুদরাজ বলা হয়, তবে বর্ধিত অংশ হাদিস থেকে পৃথক হলে মুদরাজ নয়। রাবিগণ ব্যাখ্যা ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ইদরাজ করেন। ইদরাজ কখনো হয় হাদিসের শুরুতে, কখনো মাঝে ও কখনো শেষে হয়।

হাদিসের শুরুতে ইদরাজ:

খতিবে বাগদাদি রাহিমাহুল্লাহ্ ‘আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি’ গ্রন্থে মুদরাজের উদাহরণ দিয়েছেন:

أنا الْحَسَنُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ، أنا دَعْلَجُ بْنُ أَحْمَدَ، نا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْدِيُّ، نا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ هُوَ الزَّعْفَرَانِيُّ، نا أَبُو قَطَنٍ، نا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ "

قَرَأْتُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ الْبَرْقَانِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عُمَرَ الْحَافِظِ، أنا أَبَا بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيَّ حَدَّثَهُمْ، قَالَ: نا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ، نا شَبَابَةُ، نا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ "

 

এখানে দু’টি সনদে একটি হাদিস রয়েছে। শু‘বার দু’জন ছাত্র: আবু কাতান ও শাবাবাহ থেকে সনদ ভাগ হয়েছে। শু‘বার শায়খ মুহাম্মদ ইব্‌ন যিয়াদ, তার শায়খ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা অজু পূর্ণ কর, টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুন”।[2]

এ সনদে হাদিসের পুরো অংশ মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, অথচ পুরো অংশ মারফূ‘ নয়, প্রথমাংশ মাওকুফ ও শেষাংশ মারফূ‘। এতে ইদরাজ হয়েছে হাদিসের শুরুতে। মারফূ‘ অংশ«ويل للأعقاب من النار» ‘টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুন’। মাওকুফ অংশ‏«‏أسبغوا الوضوء‏»‏ ‘তোমরা অজু পূর্ণ কর’। এ অংশ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী। মারফূ‘ ও মাওকুফ অংশ পৃথক করা হয়নি বিধায় মুদরাজ। এ জাতীয় ইদরাজ খুব কম, অনেক মুহাদ্দিস বলেছেন: শুরুতে ইদরাজের উদাহরণ শুধু এ হাদিসই।

খতিবে বাগদাদি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এখানে ভুল হয়েছে ‘শু‘বা’র ছাত্র আবু কাতান ইব্‌ন হায়সাম ও শাবাবাহ ইব্‌ন ফাজারি থেকে। এ ছাড়া শু‘বার অন্যান্য ছাত্র, যেমন আবু দাউদ তায়ালিসি, ওহাব ইব্‌ন জারির ইব্‌ন হাযেম, আদম ইব্‌ন আবি আয়াস, আসেম ইব্‌ন ‘আলি, আলি ইব্‌ন জা‘দ, মুহাম্মদ ইব্‌ন জা‘ফর গুনদার, হুশাইম ইব্‌ন বাশির, ইয়াযিদ ইব্‌ন যুরাই‘, নাদর ইব্‌ন শুমাইল, ওকি‘ ইব্‌ন জাররাহ, ঈসা ইব্‌ন ইউনুস, মু‘আয ইব্‌ন মু‘আয সবাই শু‘বা থেকে মারফূ‘ ও মাওকুফ অংশ পৃথক করে বর্ণনা করেছেন”।[3] যেমন শুবার ছাত্র আদম থেকে ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، وَكَانَ يَمُرُّ بِنَا وَالنَّاسُ يَتَوَضَّئُونَ مِنَ الْمِطْهَرَةِ، قَالَ: أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ، فَإِنَّ أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ ".

... মুহাম্মদ ইব্‌ন যিয়াদ বলেন: আমি আবু হুরায়রাকে শুনেছি, তখন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, মানুষেরা লোটা থেকে অজু করতে ছিল, তিনি বললেন: তোমরা অজু পূর্ণ কর, কারণ আবুল কাসেম বলেছেন: “টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুনের ধ্বংস”।[4] এতে মাওকুফ ও মারফূ‘ অংশ পৃথক করা হয়েছে, এ থেকে জানা যায়, পূর্বের হাদিসে ইদরাজ হয়েছে, কারণ এ হাদিস অধিক বিশুদ্ধ।

হাদিসের মাঝে ইদরাজ:

قال الإمام البخاري –رحمه الله- [في صحيحه برقم:4] حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا، قَالَتْ: " أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لَا يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلَاءُ وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ، فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا حَتَّى جَاءَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ الْمَلَكُ.

এ হাদিস পাঠকারী মনে করবে যে, ‏ وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ অংশ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন, অথচ তিনি বলেননি, বরং ইব্‌নে শিহাব বলেছেন। তিনি فَيَتَحَنَّثُ শব্দের ব্যাখ্যার জন্য ইদরাজ করেছেন, যার প্রয়োজন ছিল, কারণ حِنثِ অর্থ পাপ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَكَانُواْ يُصِرُّونَ عَلَى ٱلۡحِنثِ ٱلۡعَظِيمِ ٤٦ ﴾ [الواقعة: ٤٦]

“আর তারা জঘন্য পাপে লেগে থাকত”।[5] তিনি ব্যাখ্যা না দিলে কেউ ভুল বুঝত: ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পাপ করতেন’, অথচ তিনি ইবাদত করতেন। ইবাদত حنث দূর করে, অর্থাৎ পাপ দূর করে, তাই ‘হিন্‌স’ বলে তার বিপরীত অর্থ নেওয়া হয়েছে। এটাও অলঙ্কার শাস্ত্রের একটি নীতি।

দ্বিতীয় উদাহরণ:

قال الإمام الدار قطني –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدٍ الْوَكِيلُ، نا عَلِيُّ بْنُ مُسْلِمٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ، نا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ أَوْ أُنْثَيَيْهِ أَوْ رُفْغَيْهِ فَلْيَتَوَضَّأْ ".

এ হাদিস পাঠকারী পুরো অংশ মারফূ‘ মনে করবে, অথচ পুরো অংশ মারফূ‘ নয়, মারফূ‘ শুধু " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ " অবশিষ্টাংশ উরওয়া থেকে বর্ধিত। ইমাম দারাকুতনি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:أَوْ أُنْثَيَيْهِ أَوْ رُفْغَيْهِ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়, বরং উরওয়ার বাণী।[6] প্রকৃত হাদিস নিম্নরূপ:

قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عُرْوَةَ يَقُولُ: دَخَلْتُ عَلَى مَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ فَذَكَرْنَا مَا يَكُونُ مِنْهُ الْوُضُوءُ، فَقَالَ مَرْوَانُ: وَمِنْ مَسِّ الذَّكَرِ؟، فَقَالَ عُرْوَةُ: مَا عَلِمْتُ ذَلِكَ. فَقَالَ مَرْوَانُ: أَخْبَرَتْنِي بُسْرَةُ بِنْتُ صَفْوَانَ، أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ "

এখানে দেখছি: উরওয়া বলছেন, আমি মারওয়ান ইব্‌নুল হাকামের নিকট গেলাম, তার নিকট অজুর কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করলাম। তখন মারওয়ান বললেন: পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে? উরওয়া বললেন: আমি তা জানি না। মারওয়ান বললেন: আমাকে বুসরা বিনতে সাফওয়ান বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: “যে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করল, সে যেন অজু করে”।[7] এ থেকে প্রমাণ হল যে, বর্ধিত অংশ উরওয়ার ইজতিহাদ।

হাদিসের শেষে ইদরাজ:

قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلَالٍ، عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ، قَالَ: رَقِيتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ فَتَوَضَّأَ، فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ "

হাদিস পাঠকারী মনে করবে পুরো অংশ মারফূ‘, অথচ পুরোটা মারফূ‘ নয়, ‏"فمن استطاع منكم أن يطيل غرته فليفعل‏"‏ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী। হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আবু হুরায়রা ব্যতীত আরো দশজন সাহাবি এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, কেউ এ অংশ বর্ণনা করেনি। অধিকন্তু নু‘আইম ব্যতীত আবু হুরায়রার কোনো ছাত্রও তা বলেনি। আল্লাহ ভালো জানেন”।[8]

মুদরাজ চিনার উপায়:

১. কতক সময় হাদিসের বাক্য থেকে ইদরাজ বুঝা যায়, যেমন:

قال الإمام البخاري –رحمه الله- [في صحيحه برقم:2548] حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ ".

এ হাদিসের শেষাংশে وَأَنَا مَمْلُوكٌ শব্দ প্রমাণ করে এ অংশ মারফূ‘ নয়, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে দাসত্বের তামান্না করা অসম্ভব। দ্বিতীয়ত তার মা ছিল না, যার প্রতি তিনি দয়া করবেন। তাই নিশ্চিত এ অংশ আবু হুরায়রার বাণী।[9] এখানে মূল হাদিস শুধু لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ “নেককার গোলামের জন্য দ্বিগুন সাওয়াব”।

২- কখনো সাহাবি বা কোনো রাবি ইদরাজ বলে দেন, যেমন:

قال الإمام البخاري -رحمه الله- [في صحيحه برقم:4497] حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ الْأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَةً، وَقُلْتُ أُخْرَى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ "، وَقُلْتُ أَنَا: مَنْ مَاتَ وَهْوَ لَا يَدْعُو لِلَّهِ نِدًّا دَخَلَ الْجَنَّةَ

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ এতে ইদরাজ স্পষ্ট করেছেন।

৩. কখনো অপর সনদ থেকে ইদরাজ জানা যায়, যেমন:

قال الإمام البخاري- رحمه الله- [في صحيحه برقم:2548] حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ ".

এতে মারফূ‘ ও মাওকুফ স্পষ্ট নয়, তবে এ হাদিসের অপর সনদ থেকে মারফূ‘ ও মাওকুফ স্পষ্ট হয়, যেমন:

قال الإمام مسلم –رحمه الله- [في صحيحه برقم:3152] حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالَا: أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنْ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الْمُصْلِحِ أَجْرَانِ "، وَالَّذِي نَفْسُ أَبِي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ، قَالَ: وَبَلَغَنَا أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ لَمْ يَكُنْ يَحُجُّ حَتَّى مَاتَتْ أُمُّهُ لِصُحْبَتِهَا

... নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নেককার গোলামের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আবু হুরায়রার নফস: যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ ও আমার মার প্রতি সদাচরণ না থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই পছন্দ করতাম যে, আমি গোলাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করি”। আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, আবু হুরায়রা তার মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হজ করতে পারেননি, তাকে সঙ্গ দেওয়ার কারণে”।[10]

৪. কোনো হাফেযে হাদিস থেকেও ইদরাজ জানা যায়।

সনদে ইদরাজ:

এ প্রকার বুঝার জন্য মনে রাখতে হবে, সনদে ইদরাজ অর্থ সনদ বর্ধিত করা নয়, বরং এক হাদিস বা তার অংশ বিশেষ অপর হাদিসের সাথে জুড়ে দেওয়া। যখন এক হাদিস বা তার অংশ বিশেষ অপর হাদিসের সাথে জুড়ে দেওয়া হল, তখন এক হাদিসের সনদও অপর হাদিসের সনদে অনুপ্রবেশ ঘটানো হল, এটাই সনদে ইদরাজ, কারণ সনদ ব্যতীত হাদিস হয় না। তাই দুই হাদিস একত্র করা হলে, দু’টি সনদও একত্র করা হয়।

ইদরাজের হুকুম: শব্দের ব্যাখ্যার জন্য ইদরাজ করা বৈধ, তবে হাদিসের অর্থ পাল্টে গেলে ইদরাজ করা হারাম। ইদরাজকে দলিল হিসেবে পেশ করা যায় না, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়।

[1] তাজুল ‘আরূস: (২/৩৯-৪০)

[2] “আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি”: (৫৮) ও (৫৯)الفصل للوصل المدرج في النقل

[3] “আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি”: (৫৮)

[4] বুখারি: (১৬৫)

[5] সূরা ওয়াকিয়াহ: (৪৬)

[6] সুনানে দারাকুতনি: (৫২৯)

[7] আবু দাউদ: (১৮১)

[8] ফাতহুল বারি, বুখারির হাদিস নং: (১৩৬)

[9] আন-নুজহা: (১২৫), ফাতহুল বারী: (৫/২০৮-২০৯)

[10] মুসলিম: (১১/১৩৫), হাদিস নং: (৩১৫২)
দেখানো হচ্ছেঃ ৭১ থেকে ৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 6 7 8 9 পরের পাতা »