আমি তাওবা করতে চাই . . কিন্তু ! শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ৩৯ টি
আমি তাওবা করতে চাই . . কিন্তু ! শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ৩৯ টি

উত্তর: যদি চুরি করা জিনিস তার কাছে থাকে তাহলে ফেরত দিবে। আর যদি নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের কারণে মূল্যমান কমে গিয়ে থাকে তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া ওয়াজিব, মালিক যদি না তাকে ক্ষমা করে দিয়ে থাকে। আর মালিক যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে কিছুই লাগবে না। সুতরাং আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

[প্রশ্ন নং ৮] আমি খুবই বিব্রতবোধ করি যখন মুখোমুখি হই যাদের কিছু চুরি করেছি, আমি তাদেরকে প্রকাশ্য ভাবে বলতেও পারি না এবং ক্ষমাও চাইতে পারি না, এখন আমি কি করবো?

উত্তর: আপনার জন্য এমন কোন পন্থা অন্বেষণ করতে অসুবিধে নেই যার দ্বারা আপনি এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচতে পারেন, যেমন হয়তো অন্য কোন লোকের মাধ্যমে তাদের কাছে তাদের প্রাপ্য ফেরত পাঠালেন এবং নাম উল্লেখ করতে নিষেধ করলেন অথবা কৌশল অবলম্বন করলেন এবং বললেন, আপনার এসব হক এক ব্যক্তির নিকট ছিল কিন্তু সে তার নাম উল্লেখ করতে চায়নি। মূল কথা হচ্ছে প্রাপকের নিকট তার অধিকার ফেরত দিতে হবে।

[প্রশ্ন নং ৯] আমি আমার আববার এবং নিকটাত্মীয়ের পকেট থেকে গোপনে টাকা পয়সা সরিয়ে নিতাম। আমি এখন তাওবা করতে চাই। আমি সঠিক ভাবে বলতে পারবো না যে, মোট কত টাকা নিয়েছি। আমি এদের সামনে যেতে খুবই বিব্রতবোধ করছি?

উত্তর: আপনি মোটামুটি একটা অনুমান করে নিবেন এবং ধারণা করবেন যে কত হতে পারে। আর আপনি যেমন গোপনে নিয়েছেন তেমনি গোপনে ফেরত দিলে কোন অসুবিধা নেই।

[প্রশ্ন নং ১০] আমি বিভিন্ন লোকের টাকা পয়সা চুরি করেছি, এখন আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। যাদের টাকা পয়সা চুরি করেছি তাদের ঠিকানাও জানি না? অন্য আরেকজন বলে, আমি এক বিদেশী কোম্পানীর কিছু টাকা পয়সা মেরে দিয়েছি। তাদের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে এবং তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে? তৃতীয় আরেকজন বলে, আমি এক দোকান থেকে কিছু মালপত্র চুরি করেছিলাম। বর্তমানে সে দোকানের স্থান পরিবর্তন হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। নতুন ঠিকানাও জানি না!

উত্তর: আপনি যথা সম্ভব তাদের ঠিকানা তালাশ করুন। যদি পেয়ে যান তাহলে তাদের প্রাপ্য ফেরত দিবেন। (আলহামদু লিল্লাহ) যদি মালিক মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে ফেরত দিবেন। চেষ্টা করেও যদি তাদেরকে না পান, তাহলে এসব মাল আপনি তাদের নিয়তে দান করে দিবেন। তাদের জন্যই নিয়ত করবেন, যদিও কেউ কাফের হয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ তাদেরকে এ দুনিয়ায় তার প্রতিদান দিবেন পরকালে তারা (কাফেরেরা) কিছুই পাবে না।

এই মাসআলাটির মত একটি মাসআলা ইবনুল কাইয়্যেম (রহেমাহুল্লাহ্) তাঁর মাদারেজুস সালেকীন নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম বাহিনীর এক সৈনিক গনীমাতের মাল চুরি করে। এর কিছুকাল পরে সে তাওবা করে। অতঃপর সে চুরি করা মালামাল নিয়ে সেনাপতির কাছে হাজির হয়। সেনাপতি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেন, আমি কিভাবে সকল সৈন্যদের নিকট এসব পৌছাবো? (তারা তো বিভক্ত হয়ে গেছে)। এরপর সে সৈনিক হাজ্জাজ বিন শায়েরের নিকট এসে এ ব্যাপারে ফতওয়া চায়।

তিনি বলেন, হে লোক ! নিশ্চয়ই আল্লাহ সেনাবাহিনীর সকলকে জানেন, তাদের নামধামও অবগত এবং বংশ পরিচয়ও জানেন। সুতরাং তুমি পঞ্চমাংশ তার প্রাপককে দিয়ে দিবে এবং বাকী ওদের পক্ষ থেকে দান করে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাদের আমলনামায় নেকী পৌছে দিবেন। সে তখন সেভাবেই আমল করে বিষয়টি খলিফা মুয়াবিয়াকে জানায়। তখন তিনি বলেন, আমি যদি তোমাকে এভাবে ফাতওয়া দিতে পারতাম তাহলে তা আমার অর্ধেক সম্পদের চেয়েও আমার কাছে বেশী পছন্দনীয় হতো। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার (রহেমাহুল্লাহ্) এ ধরনেরই একটি ফাতওয়া রয়েছে যা মাদারেজুস সালেকীনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

[প্রশ্ন নং ১১] আমি ইয়াতীমের মাল আত্মসাত করি এবং তা দ্বারা ব্যবসা করে অনেক লাভবান হই। এখন আমি আল্লাহকে ভয় করছি, এ কাজের জন্য অনুতপ্ত, এখন কিভাবে তাওবা করবো?

উত্তর: এ ব্যাপারে আলেম-ওলামারা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো, আপনি মূল সম্পদ ইয়াতীমের নিকট ফেরত দিবেন এ ছাড়াও লাভের অর্ধেক দিয়ে দিবেন। তাহলে ইয়াতীমকে তার মূলধন ফেরত দেয়া হলো এবং পার্টনার হিসাবে অর্ধেক লাভও দেয়া হলো। তাহলে মূল ও লাভ সবই দেয়া গেল। এ বিষয়টি ইমাম আহমাদ (রাহেমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহেমাহুল্লাহ্) হতেও এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে এবং তার বিশিষ্ট সাগরেদ ইবনুল কাইয়্যেম এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৯২)

তেমনিভাবে যদি কেউ উটনী অথবা ছাগল ছিনিয়ে নিয়ে নেয় এবং তা থেকে বাচ্চা-কাচ্চা হয়, তাহলে সেটি ও তার অর্ধেক বাচ্চা প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে। যদি তা মারা যায় তাহলে সেটির মূল্য এবং এর জন্মান বাচ্চার অর্ধেক মালিককে ফেরত দিতে হবে।

[প্রশ্ন নং ১২] এক ব্যক্তি বিমান বন্দরে চাকুরী করত। তার নিকট বিভিন্ন জনের মালপত্র আসতো। এসব থেকে সে নামধাম সহ কিছু জিনিসপত্র চুরি করে নেয়। এর বেশ কয়েক বছর পর সে তাওবা করে। এখন কি সেই জিনিস ফেরত দিবে, না তার মূল্য, না কি এ ধরণের কিছু ফেরত দিবে? এখানে উল্লেখ্য যে, চুরি করা মাল বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

উত্তর: সেই জিনিসই ফেরত দিবে এর সাথে যোগ করবে মূল্যমান যা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের ব্যবধানে কমেছে। এটার একটা মোটামুটি মূল্য ধরে নিবে যেন নিজের খুব বেশী কষ্ট না হয়। যদি তাকে পাওয়া কষ্টকর হয়ে থাকে তাহলে সে পরিমাণ টাকা পয়সা দান করে দিবে মূল মালিকের পক্ষ থেকে।

[প্রশ্ন নং ১৩] আমার কাছে কিছু সুদের মাল ছিল কিন্তু আমি তা সব খরচ করে ফেলেছি, বর্তমানে কিছুই অবশিষ্ট নেই, এখন তাওবা করছি, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর: আপনাকে খালেস তাওবা করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে সুদ হলো খুবই বিপজ্জনক জিনিস। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা একমাত্র সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর যেহেতু সুদী মালামাল সব শেষ হয়ে গেছে তাই এ ব্যাপারে অপর কোন কর্তব্যও আর অবশিষ্ট নেই।

[প্রশ্ন নং ১৪] আমি একটি গাড়ী কিনেছি এর মধ্যে কিছু আছে হালাল উপার্জন আর কিছু হারাম। গাড়ীটি বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে।

উত্তর: যে ব্যক্তি এমন জিনিস কিনল যা বিভক্ত করা সম্ভব নয় যেমন ঘর অথবা গাড়ী, এমন টাকা দিয়ে যার কিছু হালাল এবং কিছু হারাম, তাহলে হারামের সমপরিমাণ মাল সাদকা করে দিবে ঐ মালকে পবিত্র করার জন্য। যদি এই অংশটি হারাম মালেরই হয়ে থাকে তাহলে তা অন্যের অংশই বটে যা তার প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে পূর্বোক্ত বর্ণনা মোতাবেক।

[প্রশ্ন নং ১৫] সেই মালের দ্বারা কি করবে যা ধুমপানের সামগ্রীর ব্যবসা থেকে লাভ হয়েছে, তেমনিভাবে যা তার অন্যান্য হালাল মালের সাথে সংমিশ্রণ ঘটে গেছে?

উত্তর: যে ব্যক্তি হারাম জিনিসের ব্যবসা করে যেমন বাদ্যযন্ত্র, হারাম ক্যাসেটের ব্যবসা, ধুমপানের সামগ্রী ইত্যাদি এবং এর হুকুমও জানে। অতঃপর তাওবা করে, তাহলে এই হারাম ব্যবসার লভ্যাংশ দান হিসেবে নয় বরং তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার লক্ষ্যে বিলিয়ে দিবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পূত-পবিত্র জিনিস ছাড়া গ্রহণ করেন না।

যদি এই হারাম মাল অন্যান্য হালাল মালের সাথে মিলে যায় যেমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর যাতে বিভিন্ন হালাল সওদার সাথে কিছু নাজায়েয জিনিসও বিক্রি করা হয়ে থাকে তাহলে সে এই মালের একটা যথাসম্ভব অনুমান করে মূল্য বের করে দিবে বাকী মালকে পবিত্র করার জন্য। আল্লাহ তাকে এর পরিবর্তে আরো ভালো কিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি হচ্ছেন প্রশংসার অধিকারী, সম্মানিত।

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, যার নিকট হারাম উপার্জনের মাল রয়েছে এবং সে তাওবা করতে চায় তাহলে:

১. উপার্জন করার সময় যদি সে কাফের হয়ে থাকে তাহলে তাওবা করার সময় সেগুলো বের করার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের ইসলাম গ্রহণ করার সময় হারাম মাল বের করার জন্য বাধ্য করেননি।

২. কিন্তু যদি উপার্জন করার সময় যে ব্যক্তি মুসলমান থাকে এবং সেটি হারাম হওয়ার ব্যাপারটি অবগত থাকে তাহলে অবশ্যই তাওবা করার সময় হারাম মাল বের করে দিতে হবে।

[প্রশ্ন নং ১৬] এক ব্যক্তি ঘুষ নিত। অতঃপর আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। সে এখন সঠিক পথে রয়েছে। সে যেসব ঘুষ নিয়েছে তার কি করবে?

উত্তর: এ ব্যক্তির অবস্থা এ দু’অবস্থার বাইরে নয়:

এক. হয়তো এমন এক ব্যক্তির নিকট থেকে ঘুষ নিয়েছে যিনি বাধ্য হয়ে নিজের হক রক্ষার স্বার্থে একে ঘুষ দিয়েছেন, এক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহীতাকে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে যার কাছ থেকে সে ঘুষ নিয়েছে। কেননা সে তাকে বাধ্য করে এ ঘুষ নিয়েছে, এর বিধান হলো জোর করে অর্থ আত্মসাতের হুকুম -এর মত, বেচারা নিরুপায় হয়ে তাকে ঘুষ দিয়েছেন।

দুই. ঘুষ গ্রহণ করেছে এক জালেমের কাছ থেকে, যেমন হয়তো কেউ ঘুষ দিয়ে অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করিয়ে নিয়েছে, এক্ষেত্রে তাকে কিছুই ফেরত দেয়া লাগবে না। তাওবাকারী এসব মালকে কল্যাণ মূলক কাজে খরচ করবে। যেমন হয়তো কোন ফকীর-মিসকীনকে দিয়ে দিলো। তেমনিভাবে সে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা চাইতে থাকবে, কেননা সে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছু অর্জন করার সুযোগ দিয়েছে।

দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 পরের পাতা »