হজ্জের মাসগুলোয় উমরা না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে। এ ক্ষেত্রে মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে এহরাম বাঁধতে হয়। মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ) করা। ইচ্ছা হলে এ তাওয়াফের পর সাঈও করা যায়। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সাঈ করতে হবে না। তাওয়াফে কুদুমের পর এহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। ৮ জিলহজ্জ একই এহরামে হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া। ইফরাদ হজ্জকারীকে হাদী জবেহ করতে হয় না। তাই ১০ জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে ইফরাদ হজ্জকারী প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যেতে পারে।
যদি কোনো ব্যক্তি ফরজ হজ্জ আদায় করতে অক্ষম হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির হজ্জ পালনকে বদলি হজ্জ বলে। কয়েকটি হাদিস থেকে বদলি হজ্জের বিধান পাওয়া যায়। নীচে হাদিসগুলো উল্লেখ করা হল।
১.খাছআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যে ফরজ আরোপ করেছেন তা আমার পিতাকে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে দেব? তিনি বললেন, হাঁ। ঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার।[1]
২. আবু রাযিন আল আকিলি থেকে বর্ণিত। তিনি এসে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি হজ্জ ও উমরা পালন করতে পারেন না। সওয়ারির ওপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা করো।[2]
৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرَمَةَ- শুবরামার পক্ষ থেকে লাববাইক। তিনি বললেন, শুবরামা কে? লোকটি বললেন, আমার ভাই বা আত্মীয়। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? লোকটি বললেন, না। তিনি বললেন, আগে নিজের হজ্জ করো। তারপর শুবরামার হজ্জ।[3]
তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে বদলি হজ্জ কোন প্রকার হবে তা, যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা হচ্ছে (المحجوج عنه) তিনি নির্ধারণ করে দেবেন। যদি ইফরাদ করতে বলেন তাহলে ইফরাদ করতে হবে, যদি কেরান করতে বলেন তাহলে কেরান করতে হবে, আর যদি তামাত্তু করতে বলেন তাহলে তামাত্তু করতে হবে। এর অন্যথা হলে হবে না। বদলি-হজ্জ, ইফরাদ হজ্জ হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং ওপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদিসে হজ্জ ও উমরা উভয়টার কথাই আছে। এতে, বদলি হজ্জকারী তামাত্তু হজ্জ করতে পারবে, এর দিকে ইশারা রয়েছে।
বদলি হজ্জকারী ইফরাদ ভিন্ন অন্য কোনো হজ্জ করলে তার হজ্জ হবে না, হাদিসে এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা খোঁজে পাওয়া যায় না। ‘হজ্জ’ শব্দ উচ্চারণ করলে শুধুই ইফরাদ বোঝাবে, এর পেছনেও কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। কেননা হজ্জের সাথে উমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছে বলে এক হাদিসে এসেছে। دَخَلَتِ اْلُعمْرَةُ ِفْي اْلحَجِّ (হজে উমরা প্রবিষ্ট হয়েছে)[4] তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)খাছয়াম গোত্রের মহিলাকে তাঁর পিতার বদলি-হজ্জ করার অনুমতি দেয়ার সময় যে বলেছেন, فَحُجِّيْ عَنْهُ তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো’, এর দ্বারা তিনি উমরাবিহীন হজ্জ বুঝিয়েছেন, এ কথার পেছনে আদৌ কোনো যুক্তি নেই।
বদলি-হজ্জ কেবলই ইফরাদ হজ্জ হতে হবে, ফেকাহশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবেও এ কথা লেখা নেই। ফেকাহশাস্ত্রের কিতাবে যা লেখা আছে, তা হল, বদলি-হজ্জ যার পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তিনি যে ধরনের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজ্জই করতে হবে। এখানে আমি প্রসিদ্ধ কিতাব বাদায়েউস্সানায়ের (بدائع الصنائع) কিছু এবারত তুলে দিচ্ছি—
إذا أمر بحجة مفردة أو بعمرة مفردة، فقرن فهو مخالف ضامن في قول أبي حنيفة، وقال أبو يوسف ومحمد يجزي ذلك عن الآمر، نستحسن وندع القياس فيه --- ولو أمره أن يحج عنه، فاعتمر ضمن، لأنه خالف، ولو اعتمر، ثم حج من مكة، يضمن النفقة في قولهم جميعا، لأمره له بالحج بسفر، وقد أتى بالحج من غير سفر، لأنه صرف سفره الأول إلى العمرة، فكان مخالفا، فيضمن النفقة —
ولو أمره بالحج عنه بجمع بين إحرام الحج والعمرة، فأحرم بالحج عنه وأحرم بالعمرة عن نفسه، فحج عنه ،واعتمر عن نفسه، صار مخالفا في ظاهر الرواية عن أبي حنيفة.
অর্থাৎ, (যিনি বদলি-হজ্জ করাচ্ছেন) তিনি যদি শুধু হজ্জ করার নির্দেশ দেন অথবা শুধু ওমরা করার নির্দেশ দেন, আর বদলি-হজ্জকারী কেরান হজ্জ করল তবে বদলি-হজ্জকারীকে—ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর কথা অনুসারে—ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর নিকট, নির্দেশকারীর পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। এটাকে বরং এস্তেহসান মনে করি ও এ ব্যাপারে কিয়াস ছেড়ে দিই। যিনি বদলি হজ্জ করাচ্ছে, তিনি যদি হজ্জ করার নির্দেশ দেয় আর বদলি-হজ্জকারী উমরা করে, তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা সে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেনি। আর যদি সে উমরা করে, ও পরবর্তীতে মক্কা থেকে হজ্জ করে তা হলে সকলের মতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা বদলি-হজ্জকারীর প্রতি, যিনি হজ্জ করালেন, তার নির্দেশ ছিল সফরটা হজ্জের জন্য করার, পক্ষান্তরে সে সফর ব্যতীতই করেছে। কারণ প্রথম সফরটা সে উমরার জন্য ব্যবহার করেছে। তাই নির্দেশের উল্টো কাজ করেছে, সে জন্যই তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি নির্দেশদাতা হজ্জ ও উমরা উভয়টা এক এহরামে একত্রিত করে আদায় করতে বলেন, আর বদলি-হজ্জকারী নির্দেশদাতার জন্য শুধু হজ্জ করল, কিন্তু উমরা করল নিজের জন্য, তবে সে—ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর এক আপাত বর্ণনা অনুসারে—নির্দেশের উল্টো করল।[5]
ওপরের উদ্ধৃতি এটা স্পষ্ট যে বদলি-হজ্জ যিনি করাচ্ছেন তাঁর কথা মতো হজ্জ সম্পাদন করতে হবে। তিনি যে ধরনের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজ্জ করতে হবে। নির্দেশ মোতাবেক হজ্জ না করলে কোথায় কোথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বদলি-হজ্জকারীকে, সর্বাবস্থায় ইফরাদ হজ্জ করতে হবে, এ কথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু ইউসুফ কেউই বলেননি।
[2] قال يا رسول الله إن أبي شيخ كبير لا يستطيع الحج والعمرة والظعن فقال حج عن أبيك واعتمر (তিরমিযী : হাদিস নং ৮৫২)
[3] - عن ابن عباس أن رسول الله سمع رجلا يقول لبيك عن شبرمة فقال من شبرمة؟ قال أخي أو قريب لي. قال :هل حججت؟ قال لا قال حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة (আবুদাউদ : হাদিস নং ১৪২৪)
[4] - মুসলিম : হাদিস নং ১২১৮
[5] - বাদায়েউস্ সানায়ে : খন্ড ২, পৃ: ২১৩-২১৪
বাংলাদেশ থেকে দু’ভাবে হজ্জের সফর সম্পন্ন করতে পারেন। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ও প্রাইভেট হজ্জ-এজেন্সির মাধ্যমে। সরকারী ব্যবস্থাপনার আওতায় দুটি ক্যাটাগরি রয়েছে সবুজ ও নীল। এ দুটোর যে কোনো একটার আওতাভুক্ত হয়ে হজ্জের সফর সম্পন্ন করতে পারেন। সবুজ ক্যাটাগরির হাজিদের জন্য মক্কা-মদিনায় প্রায় আধা কিলোমিটার এবং নীল ক্যাটাগরির হাজিদের জন্য এক কিলোমিটার বা তার থেকেও বেশি দূরত্বে বাসা বরাদ্দ করা হয়।
বাসা-হোটেল কাছে দূরে, উন্নত-অনুন্নত হওয়ার উপর ভিত্তি করেই সবুজ ও নীল ক্যাটাগরি নির্ণয় করা হয়; কেননা অন্যান্য খরচ উভয় ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে অভিন্ন। আপনি সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্জ-গমন বিষয়ে মনস্থির করলে ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময় ও নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দিন। ধর্ম-মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরম পূরণ করে যে কোনো অনুমোদিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রদত্ব রসিদ নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিসে রিপোর্ট করুন। টাকা জমা দেয়ার রসিদ ও অন্যান্য কাগজ পত্র রাখতে হবে যত্ন সহকারে ও তা দেখিয়ে অফিস থেকে বলে দেওয়া সময়ে উপস্থিত হয়ে বিমানের টিকিট ও পিলগ্রিম পাস সংগ্রহ করতে হবে হজ্জ ক্যাম্প থেকে। আপনার জমা দেয়া টাকা যে সব খাতে ব্যয় করা হয় তা হল নিম্নরূপ:
১. বিমান ভাড়া। ২. এম্বারকেশন ফি। ৩. ভ্রমণ কর। ৪. ইনস্যুরেন্স ও সারচার্জ (ব্যাজ কার্ড, পুস্তিকা, কবজি-বেল্ট, আই,টি সার্ভিস, পিলগ্রিম পাস ইত্যাদি) ৬. মুয়াল্লিম - সৌদি আরবের হজ্জ কনট্রাক্টার ফি ৭. মক্কা ও মদিনা শরীফের বাড়ি ভাড়া ৮. সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া ও কোরবানি খরচ যা হাজিদেরকে বাংলাদেশেই ফিরিয়ে দেয়া হয়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার আওতায় ‘‘এ+’’ ‘‘এ’’ ‘‘বি’’ ‘‘সি’’ ইত্যাদি ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনার শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। যেসব এজেন্সির সুনাম, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সরকারের অনুমোদন রয়েছে সে গুলোর মধ্যে কোনো একটি তালাশ করে বের করুন। তাদের নির্ধারিত টাকা চুক্তি মাফিক পরিশোধ করুন। পাকা রসিদ ব্যতীত কেবল বিশ্বাসের ওপর টাকা দেবেন না কখনো। খরচের হিসাব এবং কী-কী সুবিধা আপনি তাদের কাছ থেকে পাবেন, এ ব্যাপারে মৌখিক নয়, বরং লিখিত চুক্তি করুন। যদিও আপনি এজেন্সি কর্তৃক ঘোষিত সুবিধাসমূহের অনেকগুলো থেকে খুব করুণভাবে বঞ্চিত হবেন তবুও। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়, এমন কাফেলা বা এজেন্সিকে কখনো টাকা দেবেন না।
১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রতি জেলায় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ডের মাধ্যমেই ব্যবস্থা করা হয় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনিনজাইটিস প্রতিরোধক টিকা, যা বাধ্যতামূলক, এ বোর্ডের মাধ্যমেই প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা নিয়ে এ বোর্ড থেকে আপনাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে এ কাজটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে ঢাকায় হজ্জ ক্যাম্পে এসে সম্পূর্ণ করবেন। এ সনদ ব্যতীত হজে যাওয়া সম্ভব হবে না।
২. পুলিশ ছাড়পত্র: সরকারী ব্যবস্থাপনার হাজিদের জন্য জেলা প্রশাসকগণ পুলিশ সুপারের নিকট ছাড়পত্রের জন্য হজ্জযাত্রীদের তালিকা প্রেরণ করেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে হজ্জ অফিসে ছাড়পত্র সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
৩. হজ্জ প্রশিক্ষণ: সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জ পালনেচ্ছুদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে সুবিধা মত সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হজ্জ যাত্রার ৩ দিন পূর্বে হজ্জ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি হজ্জ এজেন্সিগুলোর কোনো-কোনোটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি আরব গমনের পূর্বেই একদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে মনোযোগের সাথে অংশগ্রহণ করা উচিৎ। এ ছাড়াও কোনো কোনো বিজ্ঞ আলেম অথবা মসজিদ কর্তৃপক্ষ হজ্জ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে সেখানেও অংশ গ্রহণ করা উচিৎ। হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটি বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে।
হজ্জ অফিস থেকে প্রেরিত অনুমতিপত্রে নির্ধারিত যে তারিখ থাকবে, সে তারিখে সকাল ১০টার মধ্যে হজ্জ ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জযাত্রীগন এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। হজ্জ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারী ব্যবস্থাপনার হাজিগণ সাথে করে আনবেন অনুমতিপত্র, ব্যাংকে টাকা জমা-দেয়ার ডুপ্লিকেট রসিদসমূহ, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে আনতে হবে।
হজ্জ ক্যাম্প ডরমিটরিতে শুধুমাত্র হজ্জযাত্রীদের অনুমতি দেয়া হয়। তাই আত্মীয় স্বজন সাথে আনা উচিৎ নয়। তবে নীচ তলায় আত্মীয় স্বজনগণ তাদের হজ্জযাত্রীকে নানাবিধ দাপ্তরিক কাজে সহায়তা দিতে পারেন। হজ্জ ক্যাম্পে পান খাওয়া বা ধূমপান করা নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে ৩ টি ক্যান্টিন যা খোলা থাকে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা। তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। টিকিট, পিলগ্রিম পাস, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য কাগজপত্র খুবই যত্নের সহিত সংরক্ষণ করবেন। এ গুলো হারিয়ে গেলে হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। মালামাল বহনের জন্য যে লাগেজ বহন করবেন তার গায়ে নাম, পিলগ্রিম পাস নং ও ঠিকানা লিখে নেবেন। কমপক্ষে ২সেট এহরাম, ২সেট পায়জামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, একটি তোয়ালে, ২টি গামছা সঙ্গে নেবেন। শীত মৌসুম হলে দু একটি গরম কাপড় বিশেষ করে চাদর সঙ্গে নেবেন। আপনার কোন অসুখ থেকে থাকলে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সঙ্গে নেবেন। বাংলাদেশ হজ্জ মিশন জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা দেয় না। সৌদি আরবে ওষুধের দামও প্রচুর। তাই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হবেন।
জেদ্দা বিমান বন্দরে বিমান থেকে বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করুন। বিশ্রাম কক্ষ হতে বহির্গমন বিভাগে গিয়ে পিলগ্রিম পাসে সিলমোহর লাগাতে হবে। এখানে আপনাকে লাইন বেঁধে বসতে হবে। পিলগ্রিম পাসে সিল লাগানো সম্পূর্ণ হলে আপনার ব্যাগ সংগ্রহ করবেন। ব্যাগ মেশিনে স্ক্যান করিয়ে মূল বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাবেন। বের হওয়ার গেটেই ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে নেবে যা আপনি জায়গা মতো পেয়ে যাবেন।
একটু সামনে এগোলে কিছু অফিসার দেখতে পাবেন। তারা আপনার পিলগ্রিম পাসে বাসের টিকিট লাগিয়ে দেবে। কোনো একটি টিকিট অব্যবহৃত থেকে গেলে তার পয়সা দেশে আসার সময় ফেরত পাবেন যা জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে।
বাংলাদেশের পতাকা টানানো জায়গায় গিয়ে পাসপোর্টে মুয়াল্লিমের স্টিকার লাগাবেন। এরপর বাসে ওঠার জন্য লাইন ধরে দাঁড়াবেন। আপনার মাল-সামানা গাড়িতে ওঠানো হল কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। বাসে ওঠার পর ড্রাইভার হজ্জ যাত্রীদের পিলগ্রিম পাস (পাসপোর্ট) নিয়ে নেবেন, এবং মক্কায় পৌঁছে হজ্জ কন্ট্রাক্টর (মুআস্সাতুত তাওয়াফার) কাছে সেগুলো হস্তান্তর করবেন।
বাস থেকে নেমে প্রথমে নিজের মাল-সামানা সংগ্রহ করে নেবেন। মাল-সামানা নিয়ে সরকার অথবা এজেন্সির ভাড়া-করা বাসায় আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে-দেয়া কক্ষে গিয়ে উঠবেন। প্রথমে মক্কায় এসে থাকলে গোসল করে খাওয়া দাওয়া সেরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে উমরা আদায়ের প্রস্ত্ততি নিন। সরকারি ব্যবস্থাপনার আওতাধীন হলে আপনার ফ্ল্যাটে অথবা আপনার নাগালের মধ্যে কোনো আলেম আছেন কি-না তা জেনে নিন। আলেম না পেলে হজ্জ উমরা বিষয়ে যাকে বেশি জ্ঞানসম্পন্ন মনে হবে তার নেতৃত্বে উমরা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। যাওয়ার পথে কিছু জিনিসকে আলামত হিসাবে নির্ধারণ করবেন যাতে হারিয়ে গেলে সহজেই আপনার বাসা খুজে বের করতে পারেন। আলেম অথবা নেতা নির্ধারণের সময় হকপন্থী কি-না, তা ভালো করে যাচাই করে নেবেন। অন্যথায় আপনার উমরা নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
মক্কায় পৌঁছার পর মুয়াল্লিম অফিস থেকে দেয়া বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখবেন। এ বেল্টে মুয়াল্লিম অফিসের নম্বর লেখা আছে, যা আপনি হারিয়ে গেলে কাজে লাগবে। ঘর হতে বাইরে যাওয়ার সময় বেশি টাকা পয়সা সঙ্গে রাখবেন না। কেননা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে অথবা পকেটমারের পালায় পড়তে পারেন। আর সবসময় দলবদ্ধ হয়ে চলার চেষ্টা করবেন। একা কখনো ঘরের বাইরে যাবেন না যতক্ষণ না আপনার বাসার লোকেশন ভালভাবে আয়ত্ব করতে না পারেন।
রোদের মধ্যে বাইরে বেশি ঘোরা-ফেরা করবেন না। প্রচুর ফলের রস ও পানি পান করবেন। প্রয়োজনে লবণ মিশিয়ে পান করবেন। অনেকেই একের পর এক উমরা করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবেন। শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের ডাক্তার অথবা সৌদি সরকার কর্তৃক স্থাপিত চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ সংগ্রহ করবেন। এ ব্যাপারে কোন অলসতা করা উচিৎ হবে না। কেননা হজ্জের কার্যক্রম অসুস্থ শরীর নিয়ে সম্পন্ন করা খুবই কঠিন। হজ্জ এজেন্সি বা মুয়াল্লিমের সাথে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে ঠান্ডা মাথায় সমাধানের চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের কর্মকর্তাদের সাহায্যও নিতে পারেন, যদি প্রয়োজন মনে করেন।
৭ জিলহজ্জ দিবাগত রাতে অথবা ৮ জিলহজ্জ সকালে এহরাম অবস্থায় মুয়াল্লিম কর্তৃক সরবরাহ-কৃত বাসে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সাথে হালকা কিছু কাপড়-চোপড়, শুকনো খাবার ও সামান্য টাকা পয়সা নেবেন। মূল্যবান জিনিসপত্র সাবধানে ঘরে রেখে যাবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে টাকা পয়সা মুয়াল্লিমের অফিসের কর্মকর্তার নিকট জমা রাখতে পারেন। তবে টাকা আমানত রেখে রসিদ নিতে ভুলবেন না। শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে মিনা আরাফায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।
কঙ্কর মারার সময় কখনো পায়ের স্যান্ডেল খুলে গেলে অথবা হাত হতে কঙ্কর পড়ে গেলে তা উঠাতে চেষ্টা করবেন না। নিজেরা হাদী জবেহ করার পরিকল্পনা করলে সবার পক্ষ থেকে সবল ও তরুণ ২/৩ জনকে প্রতিনিধি করে হাদী জবেহ করবেন। তবে এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হওয়ায় মক্কা মদিনায় যে কোনো ব্যাংকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হজ্জযাত্রীদের পক্ষ থেকে হাদী জবেহ করে দেবেন। এই প্রক্রিয়াটি সহজ্জ ও নিশ্চিত। তাই অতি লোভনীয় অন্যসব প্রস্তাব বাদ দিয়ে এটাই বেছে নিন। মিনায় বা আরাফায় কখনও নিজের তাঁবু হারিয়ে ফেললে বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের তাঁবুতে পৌঁছার চেষ্টা করুন। সেখান থেকে কোনো না কোনো উপায়ে নিজ তাঁবুতে ফিরে আসার ব্যবস্থা হবে, অথবা আপনার হজ্জ পালনে কোনো সমস্যা হবে না।
আরাফার ময়দানে জাবালে আরাফায় উঠার চেষ্টা করবেন না এমনকি তার কাছেও যাওয়ার চেষ্টা থেকেও বিরত থাকুন। আরাফায় হারিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে নিজ তাঁবুতে ফিরে আসা খুবই কঠিন। তাই নিজ তাঁবুতেই অবস্থান করুন। টয়লেট ব্যবহার করতে হলেও কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হোন। মুযদালেফাতেও টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে একই পন্থা অবলম্বন করুন।
১.সরকারী ব্যবস্থাপনায় যাবেন না বেসরকারি কাফেলা- ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন এসব ব্যাপারে সৎ-নেককার ও অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শ নিন, ও এস্তেখারা করুন। এস্তেখারার নিয়ম হল—প্রথমে ভাল করে ওজু করুন। দু’রাকাত সালাত আদায় করুন ও মনযোগের সাথে এই দোয়াটি পড়ুন ও الأمر শব্দের পর যে বিষয়ে এস্তেখারা করছেন সে বিষয়টি উল্লেখ করুন—
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ِ فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي[1]
২. সফরে বের হওয়ার পূর্বে মুস্তাহাব হল, দেনা-পাওনা বিষয়ে একটি অসিয়তনামা লেখা[2] ও উক্ত অসিয়তনামায় একজনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা।
৩. আপনার কাছে কেউ কোনো জিনিস আমানত রেখে থাকলে তা মালিকের কাছে পৌঁছিয়ে দিন।
৪. ছেলে-সন্তান, পরিবার পরিজনকে তাকওয়া-পরহেজগারির ব্যাপারে বুঝান, অসিয়ত করুন। তারা যেন আপনার অনুপস্থিতিতে আরো বেশি একাগ্রতা নিয়ে দ্বীন-ধর্ম মেনে চলে, কোনো পাপ কর্মের ধারে-কাছে না যায় এ সব ব্যাপারে তাদেরকে বুঝান। এ ধরনের অসিয়ত ইসলামি শরিয়তে মুস্তাহাব।
৫. কোনো হক্কানি আলেম বা নেককার ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সফর-সঙ্গী হোন। তাতে হজ্জ-ওমরা পালনসহ তাকওয়া-পরহেজগারির সীমানায় থেকে হজ্জের পবিত্র সফর সম্পন্ন করা সহজ্জ হবে। বিশেষ করে ভুলভ্রান্তি থেকে বেঁচে-থাকা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
৬. পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন, আলেম-ওলামা ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে বলে-কয়ে বিদায় নেয়া মুস্তাহাব।[3]
৭. যাদেরকে ছেড়ে হজ্জের সফরে বের হচ্ছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন,‘اَسْتَوْدِعُكُمُ اللهَ الَّذِي لا تَضِيْعُ وَدَائِعُهُ’ -আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হেফাযতে রেখে যাচ্ছি যার হেফাযতে- থাকা কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না’[4] নবী আকরাম (ﷺ)তাঁর সাথিদের কেউ সফরে বের হওয়ার উপক্রম করলে তিনি বলতেন, أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَ أَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ -আমি তোমার দ্বীন তোমার আমানত এবং তোমার আমলের সমাপ্তি পর্যায়কে আল্লাহর হেফাযতে ছেড়ে যাচ্ছি।’[5] কোনো মুসাফির রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর নিকট নসিহতের প্রার্থনা করলে আল্লাহর রাসূল বলতেন—
زَوَّدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ
আল্লাহ তা’আলা তোমাকে তাকওয়া দ্বারা ভূষিত করুন। তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং তুমি যেখানেই অবস্থান করো তোমার জন্যে কল্যাণকে সহজ্জলভ্য করে দিন।[6]
৮. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব—
اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিজে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে, এবং অপর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে, নিজে পদস্খলিত হওয়া থেকে, এবং অপর দ্বারা পদস্খলিত হওয়া থেকে। কারো উপর জুলুম করা থেকে এবং আমি কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে। কারো সাথে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করা থেকে, এবং অন্যের মূর্খতা জনিত আচরণে আক্রান্ত হওয়া থেকে।[7]
৯. গাড়ি, বিমান বা যে কোন যানবাহনে উঠে দোয়া পড়া মুস্তাহাব। সে হিসেবে যানবাহনে উঠে এই দোয়াটি পড়ুন—
اللهُ أَكْبَرُ ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، سُبْحانَ الذِيْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينْ، وإِنَّا إِلَى ربِّنَا لَمُنْقَلِبُون، الَّلهُمُّ إِنَّا نَسْألُكَ فِيْ سَفَرِِنا هَذَا البِرَّ والتَّقْوى، ومِنَ الْعَمَلِ ما تَرْضَى، الَّلهُمُّ هوِّن عَلَيْنا سَفَرَنا هَذَا واطْوِعنَّا بُعدَه، الَّلهُمُّ أنْتَ الصَّاحِبُ في السَّفَرِ، وَالْخَلِيْفَةُ فِي الأَهْلِ، الَّلهُمُّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَر، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ فِيْ الْمَالِ والأَهْلِ.
(আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান। পবিত্র সেই মহান সত্তা যিনি আমাদের জন্যে একে বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব আমাদের প্রতিপালকের নিকট। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা তোমার নিকট প্রার্থনা জানাই পূর্ণ হেদায়েত ও তাকওয়ার এবং এমন আমলের যা তুমি পছন্দ কর। হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে এ সফরকে সহজ্জসাধ্য করে দাও। হে আল্লাহ! এ সফরে তুমিই আমাদের সাথি আর (আমাদের গৃহে রেখে আসা) পরিবার পরিজনের তুমিই খলিফা (রক্ষণাবেক্ষণ কারী) হে আল্লাহ অমারা তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের ক্লেশ হতে ও অবাঞ্ছিত কষ্টদায়ক দৃশ্য দর্শন হতে।[8]
১০. সফরে সকলে মিলে একজনকে আমির নির্ধারণ করা মুস্তাহাব। এতে করে যে কোন বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়, এবং ঐক্য সুদৃঢ় হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, তিনজনের একটি দল সফরে বের হলে একজনকে যেন আমির বানিয়ে নেয়া হয়।[9]
১১.পথে কোথাও অবস্থানের প্রয়োজন হলে দলের সকলে একত্রে একস্থানে মিশে থাকা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কতিপয় সাহাবি কোথাও অবতরণ করলে বিভিন্ন উপত্যকা এবং গিরিপথে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতেন। একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)(এ কাজের নিন্দা জানিয়ে) বলেন, তোমাদের এ বিক্ষিপ্ততা শয়তানের পক্ষ থেকে।
১২. সফর অবস্থায় কোথাও অবতরণ করলে এই দোয়াটি পড়বেন
أَعَوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقْ
‘‘আমি আল্লাহ তা’আলার পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর সৃষ্ট-বস্ত্তর সমুদয় অনিষ্ট থেকে।’[10] যদি কোন ব্যক্তি নতুন স্থানে গিয়ে এ দোয়া পড়ে তাহলে সেখান থেকে ফেরত আসা পর্যন্ত কোন বস্ত্ত তার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করতে পারবে না।
১৩. উঁচু স্থানে ওঠার সময় الله أكبر বলা এবং নিচুস্থানে অবতরণের সময় سبحان الله -বলা মুস্তাহাব। জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদিস তাই প্রমাণ করে।[11] তবে হজ্জের এহরাম অবস্থায় তালবিয়া পাঠের সময়সীমায় উল্লেখিত জায়গাসমূহে তালবিয়া পড়া বাঞ্ছনীয়।
১৪. সফরে ভোরের আলো ফুটতে লাগলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মুস্তাহাব -
سَمِعَ سَامِعٌ بِحَمْدِ اللَّهِ وَحُسْنِ بَلَائِهِ عَلَيْنَا، رَبَّنَا صَاحِبْنَا وَأَفْضِلْ عَلَيْنَا عَائِذًا بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ.
শ্রোতা শুনুক আমাদের কর্তৃক আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর উত্তম নেয়ামতের বর্ণনা। হে অমাদের প্রতিপালক, আমাদের সাথে থাকুন, আমাদের উপর অনুকম্পা ও নিয়ামত বর্ষণ করুন। আশ্রয় চাইছি আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে।[12]
১৫. সফরে বেশি পরিমাণ আল্লাহর নিকট দোয়া করা মুস্তাহাব; কারণ সফরে দোয়া কবুল হয়ে থাকে এবং কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত প্রদান করা হয়।
১৬. জ্ঞান ও সামর্থ্য অনুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে মানুষদেরকে বারণ করবেন। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরুরি হচ্ছে, যে বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করবেন, আগে নিজে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করবেন এবং নম্র ব্যবহার ও মাধুর্যপূর্ণ ভাষার মাধ্যমে তা প্রয়োগ করবেন।
১৭. সর্বপ্রকার অন্যায়-অপরাধ ও গুনাহ থেকে দূরে থাকবেন। কাউকে মন্দ বলবেন না। কাউকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেবেন না। এমন ভিড় ও জটলা পাকাবেন না যে অপর হাজিদের কষ্ট হয়। সবসময় ভিড় এড়িয়ে চলবেন। সকল প্রকার গিবত দোষচর্চা, পরনিন্দা কুৎসা রটনা মুনাফেকিসহ পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, দূরত্ব সৃষ্টি হয়, শ্রদ্ধাবোধ লোপ পায় এমন সকল কাজ এড়িয়ে চলবেন। মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন। এবং না জেনে ধর্মীয় কোন বিষয়ে মুখ খুলবেন না। মোটকথা যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লীল কাজ বর্জন করবেন কঠিনভাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন—
لْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
-হজ্জ হয় সুবিদিত কয়েকটি মাসে। যে কেউ এ মাস গুলোতে হজ্জ করা স্থির করে, তার জন্য হজে যৌনতা, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।[13] তাছাড়া হারাম এলাকার ন্যায় পবিত্র স্থানে কোনো গুনাহ করা অন্য স্থানের মতো নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন—
‘وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
-আর যে ব্যক্তি মসজিদুল হারামে সীমা-লঙ্ঘন করার ইচ্ছা পোষণ করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।[14]
১৮. অত্যাবশ্যকীয়ভাবে পালনীয় সকল ফরজ ও ওয়াজিবের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন যার শীর্ষে রয়েছে সালাত। বিশেষ করে ফরজ সালাতসমূহ জামাতের সাথে সময় মত আদায়ে সবিশেষ যত্নবান থাকবেন, পাশা-পাশী অন্যান্য ইবাদত, যথা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, দোয়া, পরোপকার, দান-সদকা ইত্যাদি অধিক পরিমাণে করার চেষ্টা করবেন।
১৯. সফর অবস্থায় মানুষের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে সুন্দর আচরণ বজায় রাখবেন।
২০. যারা দুর্বল, সফর অবস্থায় তাদের সহায়তা করুন, পয়সা দিয়ে হোক শ্রম দিয়ে হোক বা পরামর্শের মাধ্যমে হোক যে কোনো উপায়ে তাদেরকে সহায়তা করার চেষ্টা করুন। নিজ সাথিবৃন্দের প্রতিও এরূপ সহমর্মীতাপূর্ণ আচরণ করে যাবেন।
২১. সফরের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে খুব দ্রুত বাড়ি ফিরে আসবেন। অকারণে বিলম্ব করবেন না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন, সফর আযাবের একটি টুকরো বিশেষ। তোমাদেরকে স্বাধীন ভাবে খাবার, পানীয় ও নিদ্রা হতে বাঁধা দিয়ে থাকে, সুতরাং তোমাদের সফরের কাজ সারা হয়ে গেলেই অতি দ্রুত পরিজনের নিকট ফিরে আসবে।
২২. সফর থেকে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)থেকে প্রমাণিত দোয়া ও জিকিরগুলো পড়া মুস্তাহাব। নবী (ﷺ)যখন কোন যুদ্ধ বা হজ্জ-উমরার সফর থেকে ফিরতেন তখন প্রত্যেক উঁচু স্থানে তিন বার করে الله أكبر বলতেন। অত:পর বলতেন—
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.
‘আললাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তার কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। অমরা প্রত্যাবর্তন করছি সফর থেকে তাওবা করতে করতে, ইবাদতরত অবস্থায়, এবং আমাদের প্রভুর প্রশংসা করে করে। আল্লাহ তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন এবং স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন, সকল গোত্রকে একাই পরাভূত করেছেন।’[15]
২৩. দীর্ঘ দিনের সফর হলে একান্ত প্রয়োজন না হলে রাত্রিকালে বাড়ি ফিরতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নিষেধ করেছেন।
২৪. সফর থেকে ফেরার পর বাড়ি প্রবেশের পূর্বে পাশের মসজিদে গিয়ে দ’ু রাকাত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরূপ করতেন।[16]
২৫. সফর থেকে ফেরার পর নিজ পরিবার ও আশে পাশের শিশুরা তাকে
ইস্তেকবাল-অভ্যর্থনা করলে তাদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ ব্যবহার করা, তাদের স্নেহ করা, মুস্তাহাব। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিসের দাবিও তাই।
২৬. অপরকে হাদিয়া দেয়া এবং অপরের হাদিয়া গ্রহণ করা মুস্তাহাব। এর মাধ্যমে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়, মনের কৌলীন্য দূর হয়। এবং সহাবস্থান সহজ্জ হয়। রাসূলু্ল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান- প্রদান কর এতে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
২৭. মুসাফির সফর থেকে ফিরে এলে তার সাথে মু’আনাকা করা মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম এরূপ করতেন বলে হাদিসে এসেছে, যেমন আনাস (রাঃ) বলেন, তাঁরা (সাহাবাগণ) যখন পরস্পর মিলিত হতেন মুসাফা করতেন আর যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন মুআনাকা করতেন।[17]
২৮. সফর থেকে ফিরে এসে স্বীয় সাথি সঙ্গী ও বন্ধু বান্ধবদের একত্রিত করা এবং খাবারের আয়োজন করা মুস্তাহাব। নবী আকরাম (ﷺ)নিজেও সফর থেকে ফিরে এমন ব্যবস্থা করতেন।[18]
[2] - আব্দুল্লাহ বিন ওমরের (রাঃ) একটি হাদিসে পরিষ্কারভাবে এ কথাটি ব্যক্ত হয়েছে।
[3] - দেখুন ইবনে মাযাহ : হাদিস নং ২৮২৫
[4] - আহমদ : ২/৪০৩
[5] - আলবানী : সহিহু আবি দাউদ :২/৪৯৩
[6] - তিরমিযী : হাদিস নং ৩৩৬৬
[7] - আবু দাউদ : হাদিস নং ৪৪৩০
[8] - মুসলিম : হাদিস নং ১৩৪২
[9] - إذا خرج ثلاثة في سفر فليؤمروا أحدهم (আবু দাউদ:২২৪১)
[10] - মুসলিম : ২/২০৮০
[11]- বোখারি : হাদিস নং ২৯৯৩
[12]- মুসলিম : হাদিস নং ৪৮৯৫
[13] - সূরা আল বাকারা : ১৯৭
[14] - সূরা আল হাজ্জ : ২৫
[15] - বুখারী ৭/১৬৩ মুসলিম ২/৯৮০
[16] - أن النبي صلى الله عليه وسلم إذا قدم من سفر بدأ بالمسجد فركع فيه ركعتين (মুসলিম : ২৪২৮)
[17] - كان أصحاب النبي إذا تلاقوا تصافحوا ، وإذا قدموا من سفر تعانقوا (তিবরানী : ১/৯৭) আলবানী এ হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[18] - দেখুন বোখারি : হাদিস নং ৩০৮৯
স্থান অথবা কালের সীমারেখাকে মীকাত বলে। অর্থাৎ এহরাম ব্যতীত যে স্থান অতিক্রম করা যায় না, অথবা যে সময়ের পূর্বে হজ্জের এহরাম বাঁধা যায় না সেটাই হল মীকাত।
স্থান বিষয়ক মীকাত (মীকাতে মাকানি)
বেশ দূর থেকে এহরাম বেঁধে রওয়ানা হওয়া আল্লাহর পানে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছা-আগ্রহকে আরো মজবুত, আরো পরিপক্ব করে তোলে। নিজের ঈমানি জোশ-জযবাকে শতগুণ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ককে বহুগুণে দৃঢ় করে দেয় এ ধরনের প্রস্ত্ততি। এ জন্যই, হয়তো, হজে মীকাতের নিয়ম রাখা হয়েছে। মীকাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সীমানা বেঁধে দিয়েছেন—মদিনাবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফা, শামবাসীদের জন্য জুহফাহ, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল, ইয়েমেনবাসীদের জন্য য়ালামলাম, এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ্জ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য। আর যারা এ সীমার অভ্যন্তরে বসবাস করবে তাদের স্বস্থানই তাদের এহরামের জায়গা। তদ্রূপভাবে মক্কাবাসী মক্কা থেকে।[1] অন্য এক হাদিসে ইরাকবাসীদের মীকাত যাতু ইর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।[2]
মক্কা থেকে মীকাতসমূহের দূরত্ব
যুল হুলায়ফা: মক্কা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে আবয়ারে আলী বলে জায়গাটি পরিচিত। মদিনাবাসী এবং ওই পথ হয়ে যারা আসেন যুল হুলায়ফা তাদের মীকাত।
জুহফাহ: এই জায়গাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত হওয়ায় রাবেগ থেকে মানুষেরা এহরাম বাঁধে। মক্কা থেকে রাবেগের দূরত্ব ১৮৬ কিলোমিটার। সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার লোকজন, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার লোকজন, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনবাসীরা এই জায়গা হতে এহরাম বাঁধেন।
কারনুল মানাযেল: এই জায়গার অন্য নাম আস্সাইলুল কাবির। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। ইরাক ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের লোকদের মীকাত হল এই কারনুল মানাযেল।
য়ালামলাম: মক্কা থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ইয়েমেনবাসী ও পাক-ভারত-বাংলাসহ প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্য হতে আগমনকারীদের জন্য মীকাত হল এই য়ালামলাম।
যাতু ইরক: মক্কা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে এই মীকাতটি পরিত্যক্ত। কেননা ওই পথ হয়ে বর্তমানে কোনো রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজিরা বর্তমানে সাইল অথবা যুল-হুলায়ফা থেকে এহরাম বাঁধেন।
হাদিস অনুযায়ী মীকাতের বাইরে থেকে আসা হাজিদের জন্য মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা ওয়াজিব। তবে যারা মীকাতের সীমানার অভ্যন্তরে বসবাস করেন তাদের অবস্থানের জায়গাটাই হল তাদের মীকাত। অর্থাৎ যে যেখানে আছে সেখান থেকেই হজ্জের এহরাম বাঁধবে। তবে মক্কার হারাম এরিয়ার ভেতরে বসবাসকারী ব্যক্তি যদি উমরা করতে চায় তা হলে তাকে হারাম এরিয়ার বাইরে- যেমন তানয়ীম তথা আয়শা মসজিদে গিয়ে এহরাম বাঁধতে হবে।
মীকাতে মাকানি বিষয়ে কিছু সমস্যার সমাধান
যদি কারও পথে দুটি মীকাত পড়ে তাহলে প্রথম মীকাত থেকেই এহরাম বাঁধা উত্তম। তবে দ্বিতীয় মীকাত থেকেও এহরাম বাঁধা চলে। বাংলাদেশ থেকে মদিনা হয়ে মক্কায় গমনকারী হাজিগণ এই মাসআলার আওতায় পড়েন। অতঃপর তারা জেদ্দা বিমান বন্দরের পূর্বে যে মীকাত আসে সেখান থেকে এহরাম না বেঁধে মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে যে মীকাত পড়ে—যুল হুলায়ফা—সেখান থেকে এহরাম বাঁধেন।
যদি কোনো ব্যক্তি এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করত: ভেতরে চলে আসে তার উচিৎ হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে এহরাম বাঁধা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে এহরাম বাঁধলে হজ্জ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল যে, এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেললে ভেতরে ঢুকে মসজিদে আয়শায় গিয়ে হজ্জের এহরাম বাঁধলে চলবে না, কেননা মসজিদে আয়শা হেরেম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত।
কাল বিষয়ক মীকাত (মীকাতে যামানি)
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হজ্জ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে’।[3]
এ নির্দিষ্ট মাসগুলো হল—শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। কারও কারও মতে জিলহজ্জ মাসের পুরোটাই হজ্জের মাস।
শাওয়াল মাস থেকে যেহেতু হজ্জের মাস শুরু হয় তাই শাওয়াল মাসের পূর্বে হজ্জের এহরাম বাঁধা উচিৎ হবে না। তা বরং খেলাফে সুন্নত ও মাকরুহে তাহরীমি হবে।
[2] - أن رسول الله وقت لأهل العراق ذات عرق (মুসলিম : ২/৮৪১)
[3] - الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ (সূরা বাকারা : ১৯৭)