রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً
“তোমরা সাহুর (সেহেরি) করো, কারণ সাহুরে (সেহেরিতে) বরকত রয়েছে।” (বুখারি ও মুসলিম)
উক্ত হাদিসে ভোর রাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহুর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় তা সেহেরি/সেহেরী/সেহরি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এ শব্দটি এখন বাংলা। এটাই যুগে যুগে বাংলা সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা, গল্প-উপন্যাস, পুঁথি-কবিতা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং সর্বস্তরের মানুষের নিকট সুপরিচিত।
আর বাংলা ব্যাকরণের দৃষ্টিতে বিদেশী কোন শব্দ যখন বাংলা ভাষায় ‘আত্তীকরণ’ হয় তখন সেটাকে পরিবর্তন করা ভাষা বিকৃতির শামিল। যেমন: ইংরেজিতে Table (টেবল) কিন্তু সেটা বাংলায় টেবিল। Apple (এ্যাপল) বাংলায় আপেল। এমন বহু বিদেশী শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে। এখন কোন অতি পণ্ডিত ব্যক্তি এসে যদি বাংলায় কথা বলার সময় টেবিলকে ‘টেবল’ আর আপেলকে ‘এ্যাপল’ বলা শুরু করে তাহলে তা নি:সন্দেহে হাস্যকর ও ভাষা বিকৃতির শামিল বলে গণ্য হবে।
সে কারণে প্রচলিত ‘সেহেরি/সেহরি’ শব্দকে ভুল আখ্যা দিয়ে ‘সাহারি' বলা অনুচিত বলে মনে করি। কারণ সেহেরি শব্দটি বহুল প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ বাংলা। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে ভোররাতের খাওয়া বুঝাতে হাদিসে ‘সাহুর; শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে; সাহারি নয়।
সুতরাং কেউ হুবহু হাদিসের শব্দ ব্যবহার করতে চাইলে ‘সাহুর’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারে; সেহেরি বা সাহারি কোনটাই নয়।
বাংলা অভিধান (ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে, সেহেরি/সেহেরী/সেহরি অর্থ: রোজা রাখার জন্য মুসলমানগণ সুবেহ সাদিকের আগে যে খাবার গ্রহণ করেন। এখানে সাহারি বা সাহারী কোনও বানান নেই।
‘সেহেরি’ মানে কি যাদু?
অনেকেই বলছেন, ‘সেহেরি’ মানে না কি যাদু। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। বরং আরবিতে 'সাহরুন' বা 'সিহরুন' উভয় শব্দের অর্থ: যাদু। যেমন: আরবি অভিধানে লেখা হয়েছে,
سحَرَ يَسحَر ، سَحْرًا وسِحْرًا ، فهو ساحِر ، والمفعول مَسْحور
আর ‘আস সাহারু’ অর্থ: শেষ রাত-ফজরের পূর্ব মূহুর্ত।
السَّحَرُ :آخرُ الليل قبيل الفجر
সুতরাং দেখা গেল, ‘সেহেরি’ শব্দটির অর্থ 'যাদু' বলা অভিধান সঙ্গত নয়।
ভোররাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহরি’ শব্দটি শুদ্ধ নয়:
ভোর রাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহরী' শব্দটি শুদ্ধ নয়। কারণ হল, হাদিসে ‘সাহরী’ শব্দের অর্থ: আমার বক্ষ বা সিনা। যেমন: নিম্নোক্ত হাদিসটি,
আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রায়ই বলতেন,
تُوُفِّيَ فِيْ بَيْتِيْ وَفِيْ يَوْمِيْ وَبَيْنَ سَحْرِيْ وَنَحْرِيْ
“আমার প্রতি আল্লাহর এটা নি'য়ামাত যে, আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার গণ্ড ও সিনার মাঝে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকাল হয়।” [সহিহ বুখারি, হা/ ৪৪৪৯]
সর্বোপরি, এটা এমন কোন শব্দ নয় যে, পরিবর্তন করলে তা শরিয়ত পরিপন্থী কাজ হবে বা গুনাহ হবে। যেমন: কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম ইত্যাদি।এগুলো পরিবর্তন করা শরিয়ত সম্মত নয়।
মোটকথা, সর্বস্তরের বাংলাভাষী মানুষ যে শব্দটি উচ্চারণ করে ও বুঝে এবং বাংলা ভাষা সাহিত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সে শব্দটি অবিকৃত রাখাই ভালো মনে করি। সুতরাং ‘সাহরি’ নয় বরং ‘সেহেরি/সেহরি/সেহেরী’ বলাই অধিক উপযুক্ত। এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে যে কেউ দ্বিমত করার অধিকার রাখে। আল্লাহু আলাম।
প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা পরিয়ড হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। এটি তার শারীরিক সুস্থতা এবং গর্ভধারণে সক্ষমতার আলামত। পিরিয়ডের দিনগুলো অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন রকম থাকে। হরমোনের কারণে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে৷ এই সময় মেয়েদের শরীর অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি দুর্বল থাকে। অনেকের জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে, তলপেট স্ফীত হয়! ব্যথা করে৷এমনকি বমিও হয়।
তাই এ অবস্থায় তাদের কষ্ট লাঘবে দয়াময় আল্লাহ নামাজ-রোজার বিধান রহিত করেছেন। সুতরাং এ সময় তাদের জন্য নামাজ-রোজা করা জায়েজ নাই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أليس إذا حاضت المرأة لم تصل ولم تصم؟
“এমন কি নয় যে, ঋতু কালীন সময়ে একজন নারী সালাত পড়ে না ও রোজা রাখে না”? [সহীহ বুখারী, হা/২৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮০]
তবে ঋতুমতী নারী পবিত্র হলে শুধু রোজাগুলো কাজ করবে; নামাজগুলো কাজা করবে না।
মা-জননী আয়েশা রা. বলেন,
كنا نحيض على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فكنا نؤمر بقضاء الصوم، ولا نؤمر بقضاء الصلاة
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঋতুমতী হতাম। আমাদেরকে তখন রোজাগুলো কাজা করার নির্দেশ প্রদান করা হত; কিন্তু নামাজ গুলো কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হত না”।[সহীহ বুখারী, হা/৩১৫, সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫]
সুতরাং নারীদের জন্য ঋতুস্রাব অবস্থায় নামাজ-রোজা করা জায়েজ নাই। আর লোকলজ্জার কারণে ঋতুস্রাব অবস্থায় নামাজ-রোজা অব্যাহত রাখলে সেগুলো শুধু বাতিল বলেই গণ্য হবে না বরং এ জন্য গুনাহগারও হতে হবে।
তবে কোন মেয়ে যদি তার ঋতুস্রাব হওয়ার বিষয়টি কোন পুরুষের নিকট প্রকাশিত হওয়াতে লজ্জাবোধ করে বা শরিয়ত সম্মত কোনও কারণে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে চায় আর এ কারণে সে তাদের সামনে রোজার ভান ধরে বা সেহেরি বা ইফতারের সময় পরিবারের সবার সাথে খাওয়া-দাওয়া করে তাহলে তাতে কোন গুনাহ নেই। তবে রোজার নিয়ত করবে না। অন্যথায় তা গুনাহের কারণ হবে।
শাইখ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, কোনও মহিলা যদি মাসিক ঋতুস্রাবের কারণে লজ্জাবশত রমজানের রোজা রাখার ভান করে তাহলে তার গুনাহ হবে কি?
তিনি বলেন,
ليس عليها إثم إذا ما بينت أنها حائض، لكن لا تصم لا تنو الصيام، أما إذا سكتت ولم تقل: إني حائض ولم تقل: إني مفطرة ما يضرها ذلك، لكن إذا كانت تنوي الصوم هذا لا يجوز هذا منكر الصوم باطل
“এতে তার কোন গুনাহ নেই যদি সে প্রকাশ না করে যে, সে ঋতুমতী। কিন্তু সে রোজা রাখবে রাখবে না বা রোজার নিয়ত করবে না। কিন্তু যদি সে চুপ থাকে- বলেনা যে, আমি ঋতুমতী আবার এও বলেন না যে, আমি রোজা ভঙ্গকারী। এতে তার কোনও ক্ষতি নেই। তবে যদি সে রোজা রাখার নিয়ত করে করে তবে তা জায়েজ হবে না। এটা গর্হিত কাজ আর এই রোজাও বাতিল।” [binbaz]
আল্লাহু আলাম।
আজরাইল (عزرائيل/Azrael) শব্দটি আরবি বরং ইবরানি (হিব্রু/Hebrew) ভাষা থেকে এসেছে। জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে ইবরানি (হিব্রু) ভাষায় 'আজরাইল/Azrael' বলা হয়। বিভিন্ন ইসরাইলি বর্ণনায় এ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
ইসলামি লেখকদের মধ্যে ফখরুদ্দিন রাযী, ইমাম বাগাভী প্রমুখ কতিপয় তাফসির কারক তাদের তাফসির গ্রন্থে এ নামটি ব্যবহার করেছেন। এ কারণে এ নামটি আমাদের সমাজে বিভিন্ন বক্তা, ইসলামি লেখক এবং সর্ব সাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে।
কিন্তু কুরআন-হাদিসে এই নামটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কুরআনে তাকে বলা হয়েছে মালাকুল মউত (মৃত্যু দূত)। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ
"বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত 'মালাকুল মওত' তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।" [সূরা সাজদা: ১১]
উল্লেখ্য যে, মালাকুল মউত বা মৃত্যু দূত একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম কিন্তু প্রকৃত নাম আল্লাহ ভালো জানেন।
- ইবনে কাসির রহ. বলেন,
وأما ملك الموت فليس بمصرح باسمه في القرآن، ولا في الأحاديث الصحاح، وقد جاء تسميته في بعض الآثار بعزرائيل
"মৃত্যু ফেরেশতার নাম কুরআন এবং সহিহ হাদিসে স্পষ্টভাবে নাই। তবে কতিপয় আসার (পূর্বসূরিদের বক্তব্যে) তার 'আজরাইল' নামটি এসেছে।"
- শাইখ আলবানি বলেন,
"وأما تسميته بـ"عزرائيل" كما هو الشائع بين الناس فلا أصل له، وإنما هو من الإسرائيليات
"আর তার নাম 'আজরাইল'-যেমনটি লোকসমাজে প্রচলিত-এর কোনও ভিত্তি নাই। বরং এটি ইসরাইলি বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত।"
আল্লাহু আলাম।
বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্ব কালীন ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা গ্রহণের কয়েকটি শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে, পরিবারের আয় মাসিক সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা হওয়া। (যা দারিদ্র্যতার সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে)।
[সূত্র: বাংলাদেশ সরকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মাতৃত্বকাল ভাতা কর্মসূচী-mowca-portal-gov bd]
অতএব যে ব্যক্তি উক্ত ভাতা গ্রহণের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলীর যথাযথভাবে পূরণ করতে সক্ষম হবে সে স্বাচ্ছন্দ্যে তা গ্রহণ করতে পারে। কেননা এটি সরকারি অনুদান।
বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, শীর্ণকায় ও খর্বাকার শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে অবদানের উদ্দেশ্যে এই অনুদান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সুতরাং নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে একজন দরিদ্র মার জন্য তা গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। তবে কোনোভাবেই শর্ত লঙ্ঘন করে বা দুর্নীতির মাধ্যমে এই অনুদান গ্রহণ করা বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিকারী এবং দুর্নীতিতে সহযোগিতাকারী দুজন্যই আল্লাহর নিকট গুনাহগার বলে বিবেচিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইনেও অপরাধী বলে গণ্য হবে।
অনুরূপভাবে সরকার যদি এই ভাতা গ্রহণের জন্য ইসলামি শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক কোনও শর্তারোপ করে তাহলে ভাতা পাওয়ার জন্য উক্ত শর্ত পূরণ করা জায়েজ নেই।
এই বিধান সরকার কর্তৃত্ব প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সর্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ফতোয়া: সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি বিশ্ববরেণ্য আলেম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. [মৃত্যু: ১৯৯ খৃষ্টাব্দ]-এর ফতোয়া:
যাদের অভাব নেই তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার জন্য নিবন্ধনের বিধান
প্রশ্ন: যার অভাব নেই তার জন্য কি ‘সামাজিক নিরাপত্তা’ গ্রহণ করা জায়েজ?
উত্তর:
الذي نعلم أن الحكومة وفقها الله جعلت الضمان الاجتماعي للفقير، فالذي لا تتوفر فيه الشروط ليس له أخذ الضمان وليس له أن يكذب، أما الذي يكذب ويزعم أنه فقير أو تزعم أنها ليست ذات زوج وهي ذات زوج أو ما أشبه ذلك فليس له أخذ ذلك.
فالحاصل: أنه لا يجوز أخذ الضمان إلا للذي توافرت فيه الشروط التي وضعتها الدولة، هذا هو الواجب عليه، الواجب أن يتقي الله المؤمن وأن يحذر أخذ شيء لا يحل له، الله المستعان
“যেটা আমরা জানি, সরকার (আল্লাহ তাদেরকে তাওফিক দান করুন) গরিবদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং যার মধ্যে শর্তাবলী যথাযথভাবে পাওয়া যাবে না তার জন্য এই ‘নিরাপত্তা’ নেওয়ার অধিকার নেই। মিথ্যা বলাও তার জন্য বৈধ নয়।
সুতরাং সে ব্যক্তি এই নিরাপত্তা গ্রহণ করবে যার মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বিদ্যমান রয়েছে। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে বা মিথ্যা দাবি করে যে, সে দরিদ্র অথবা দাবী করে যে, তার স্বামী নেই অথচ তার স্বামী আছে ইত্যাদি তার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ নয়।
মোটকথা, যার মধ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যাবে সে ছাড়া অন্য কারও জন্য নিরাপত্তা অনুদান গ্রহণ করা জায়েজ নয়। এটাই তার উপর অত্যাবশ্যক। একজন ইমানদার ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব হলো, সে আল্লাহকে ভয় করবে এবং এমন কিছু গ্রহনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে যা তার জন্য হালাল নয়। আল্লাহ সাহায্য করুন।” [binbaz. org]
আল্লাহু আলাম।
আমাদের দেশে তুহিন নামটি ছেলেদের নাম হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। তাই আমাদের জানা দরকার এ নামটি মুসলিমদের নামের ক্ষেত্রে ব্যবহারে কোনও সমস্যা আছে কি না বা অর্থগত ভাবে তাতে কোনও আপত্তি আছে কি না।
তুহিন tuhin শব্দের ব্যাপারে বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে, এটি মূলত: সংস্কৃত শব্দ [তুহ্+ইন]। সংস্কৃত থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছেন। অর্থাৎ এটি এখন তৎসম শব্দ।
এই শব্দের অর্থ হলো: (বিশেষ্য পদ) বরফ; তুষার; হিম। (বিশেষণ পদ) অত্যন্ত শীতল; তুষারের ন্যায় অতিশয় শীতল বা বরফের মত অত্যন্ত ঠাণ্ডা। যেমন: শীতের তুহিন রাত্রি, তিব্বতের তুহিন প্রান্তরে। এখান থেকে হিমালয় পর্বতকে বলা হয়, তুহিনাদ্রি বা তুহিনাচল ।
[দেখুন: বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পরিমার্জিত সংস্করণ), উইকি সংকলন-বিশ্বকোষ দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১১১ (অনলাইন সংস্করণ), Bengali definition, English & Bengali Online Dictionary & Grammar ইত্যাদি]
এটি আরবি ‘তাওহীন’ (توهين) শব্দের পরিবর্তিত রূপ নয়। অর্থাৎ এর সাথে আরবির কোনও সম্পর্ক নেই। আরবিতে লিখলে তার বানান হবে, ْتُهِيْن
সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে তুহিন নাম রাখতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ অর্থগতভাবে এতে শরিয়ত বিরোধী কিছু নেই। যারা বলে যে, এটি আরবি তাওহীন (توهين) শব্দের পরিবর্তিত রূপ তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, কিছু মানুষ বাংলা ও আরবি ভাষা এবং ইসলাম বিষয়ে খুব সামান্য জ্ঞান নিয়ে অযথা মানুষের মাঝে সংশয় ও বিতর্ক সৃষ্টি করে-যা দুঃখ জনক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।
তবে আমরা বলব, মুসলিমদের নামের ক্ষেত্রে শুধু বাংলা শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে সুন্দর অর্থবোধক আরবি নাম হওয়া উত্তম। যেন নাম শুনেই মুসলিম হিসেবে প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যায়। একজন মুসলিম শিশুর নাম শুধু বাংলা শব্দ দ্বারা রাখা উচিৎ নয়। (যেটা বর্তমানে অনেকেই করছে)। কারণ বাংলা নাম থেকে কারও ব্যাপারে অনুমান করা যায় না, সে কি মুসলিম নাকি অমুসলিম। অথচ এই প্রাথমিক পরিচয়টুকু জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আলাম।
নিম্নে আপনার দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. আপনার স্বামীর উক্ত কথাটি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। অর্থাৎ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়াই সংসার ভাঙ্গার একমাত্র কারণ নয়। তবে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ।
নিম্নে সংসার ভঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করা হলো:
মূলত সংসার ভঙ্গের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কখনো স্বামীর কারণে, কখনো স্ত্রীর কারণে আবার কখনো উভয়ের কারণে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
ক. স্বামীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
অনেক সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্ত্রীকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার প্রতি শারীরিক বা মানসিক জুলুম-নির্যাতন করা, তার প্রাপ্য হক আদায় না করা, তার সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করা, পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা, শারীরিক অক্ষমতা, মাদকাসক্তি ও নেশা গ্রহণ, এমন কোনও বদ অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা থাকা যা স্ত্রী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ইত্যাদি নানা কারণে সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে।
খ. স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
অনেক সময় স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী বা তার পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্বামীর আনুগত্যহীনতা, বিলাসিতা ও উচ্চমাত্রায় ভোগের মনোভাব, অসহিষ্ণু আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি করা, পরকীয়ার সম্পর্ক থাকা ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙ্গে।
আবার অনেক মেয়ে বিয়ের আগে মনের মধ্যে স্বামী সম্পর্কে আকাশ-কুসুম কল্পনা করে কিন্তু বাস্তবে তেমন না পেলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। এতেও অনেক সময় সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। তার মধ্যে জটিল কোন রোগ-ব্যাধিও সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়। আবার স্বামীর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধা দেওয়াও সংসার ভাঙ্গার অন্যতম কারণ হতে পারে।
গ. উভয়ের পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকেও কিছু কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে। যেমন: বিয়ের পর সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া বা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ না থাকা, (অবশ্য এর পেছনেও উপরোক্ত কিছু কারণ দায়ী) কোনোভাবেই মন-মানসিকতার দিক থেকে তাদের মাঝে মিলমিশ না হওয়া, ধৈর্যহীনতা, অতিরিক্ত রাগ, দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেওয়া, রূপ-সৌন্দর্য, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি কারণে অহংকার করা ইত্যাদি।
এ ছাড়াও স্বামী কিংবা স্ত্রী যদি এমন সব পাপাচারে লিপ্ত হয় যাতে তাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত উঠে যায়, তাদের মাঝে শয়তান অনুপ্রবেশ করে এবং আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা। যা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙ্গা পর্যন্ত গড়ায়। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।
২. স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীর করণীয় কী?
কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ের ইচ্ছে করে বা তার একাধিক বিয়ে করা তার জন্য প্রয়োজনীয় হয় তাহলে কোন স্ত্রীর জন্য তাতে বাধা দেওয়া বা এ ক্ষেত্রে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া বা শারীরিক-মানসিক ইত্যাদি কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এই অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تُقۡسِطُواْ فِي ٱلۡيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُواْ
"তাহলে তোমরা নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার বিয়ে করো। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।" [সূরা নিসা: ৩]
সুতরাং এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল-যা মারাত্মক অন্যায়।
তবে হ্যাঁ, একাধিক বিয়ের জন্য পুরুষের শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকা এবং স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করার শর্তারোপ করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি যদি এই শর্ত পালন করতে সক্ষম হবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম।
স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে স্ত্রী এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করবে। কোনভাবেই ধৈর্যধারণ সম্ভব না হলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে সংসার ত্যাগ করবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই কারণে স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা তাকে কোনভাবেই কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ ইসলামে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া গালাগালি করা হারাম ও কাবিরা গুনাহ। আর তা যদি হয় স্বামীর সাথে তাহলে তা আরও বেশি গর্হিত কাজ। কারণ মহান আল্লাহ স্বামীকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا
"পুরুষরা নারীদের কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে।
আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর । যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না । নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।" [সূরা নিসা: ৩৪]
হাদিস সে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে স্ত্রীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে। এ বিষয়ে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
মোটকথা, একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করার পাশাপাশি তার প্রতি কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অনুরূপভাবে একজন স্ত্রীর জন্য (বৈধ বিষয়ে এবং সামর্থ্যের মধ্যে) তার স্বামীর আনুগত্যের পাশাপাশি তার প্রতিও কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী যদি তার সঙ্গীর সাথে সদাচারণের পাশাপাশি একে অপরের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নির্দেশিত দায়িত্ব-কর্তব্য ও হকগুলো সঠিক আদায় করে তাহলে সংসার ভাঙ্গার পরিমাণ খুবই কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ আমাদের দাম্পত্যগুলোকে মধুময় করে দিন এবং স্বামী-স্ত্রীকে সব ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক: আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল রাহ.
ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দরূদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার উম্মতের বয়স ষাট থেকে সত্তর বছরের মাঝখানে”। (তিরমিজী) অন্যান্য নবীর উম্মতদের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মাদির বয়স যদিও কম কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে এমন কিছু মূল্যবান সময় দান করেছেন যাতে অল্প সময়ে অল্প আমল করেও আল্লাহর কাছে অতীতের উম্মত সমূহের চেয়ে অধিক প্রিয় বলে গণ্য হতে পারবে। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে যে সমস্ত ফজিলত পূর্ণ সময় দান করেছেন, তার মধ্যে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অন্যতম।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, “জিলহজ মাসের প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয়”। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল, (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রসুল (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে স্বীয় জানমাল নিয়ে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ে। অতঃপর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেনা। (বুখারি)
তাই প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ, এই দশটি দিনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সৎ আমল বেশি করে সম্পাদন করার মাধ্যমে এই মহান ফজিলত অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হওয়া। আমরা এই প্রবন্ধে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের কতিপয় ফজিলত পূর্ণ আমলের বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।
১) হজ ও উমরা পালন করা: الحج والعمرة
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর তা জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। হজের ফজিলতে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করল, এবং হজ করা অবস্থায় কোন পাপের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে এমন নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল, যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় মায়ের পেট থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিল”। (বুখারি) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এক উমরা থেকে অপর উমরা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কৃত অপরাধ সমূহ উমরার মাধ্যমে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর মকবুল হজের পুরস্কার আল্লাহর কাছে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। (বুখারি)
২) রোজা পালন করা: الصيام
ইমাম নববী বলেন, “এই দিনগুলোতে রোজা পালন করা মোস্তাহাব। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজে যায়নি, তার জন্য আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখে রোজা রাখা মোস্তাহাব”। আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরাফার দিবসের রোজা বিগত এবং আগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়। (সহিহ মুসলিম) তবে যিনি হজ করতে গিয়ে আরাফার মাঠে অবস্থান করছেন, তার জন্য রোজা রাখা বৈধ নয়।
৩) বেশি বেশি তাকবির বলা: الإكثار من التكبير
জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই উঁচু আওয়াজে বেশি বেশি তাকবির পাঠ করা সুন্নত। ফরজ নামাজের পর, মসজিদে, বাজারে এবং রাস্তায় চলার সময় এ তাকবির বেশি করে পাঠ করা। মহিলাগণ নিচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করবে। তবে দলবদ্ধভাবে সমস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নতের পরিপন্থী। কারণ সাহাবিদের থেকে দলবদ্ধভাবে তাকবির পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ তারা ছিলেন সৎকাজে আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী।
এই তাকবির দু ধরণের। যথা:
(ক) অনির্দিষ্ট তাকবির: التكبير المطلق
সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে বাড়ি, মসজিদ, রাস্তা ও বাজারে উঁচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করা। জিলহজের প্রথম দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এ তাকবির চলতে থাকবে। ইমাম বুখারি রহ. বলেন, ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা রা. এই দিনগুলোতে তাকবির বলতে বলতে বাজারে যেতেন। তাদেরকে তাকবির বলতে শুনে লোকেরাও তাকবির পাঠ করত।
(খ) নির্দিষ্ট তাকবির: অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবির পাঠ করা। এই তাকবির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরিক তথা জিলহজ মাসের ১৩ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।
তাকবিরের শব্দ:
الله أكبر , ألله أكبر, لاإله إلا الله, والله أكبر , الله أكبر ولله الحمد
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
৪) ঈদুল আজহার বিধান সমূহ: أحكام عيد الأضحى
ক) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা: التتطهر
ঈদের দিন সকাল বেলা গোসল করা, সাধ্যানুযায়ী নতুন কাপড় পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। তবে মহিলাগণ সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
খ) ঈদের নামাজ আদায় করা: صلاة العيد
মুসলমানদের সাথে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা এবং ঈদের মাঠে ইমাম সাহেবের খুৎবা শ্রবণ করা। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদের মাঠের দিকে বের হতেন।”
বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে মাঠে যেতে অসম্ভব হলে মসজিদেও ঈদের নামাজ আদায় করা যায়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সহ কতিপয় আলেমের মতে ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,
فصل لربك وانحر
“তুমি তোমার প্রভুর জন্য নামাজ আদায় কর এবং কুরবানি কর”। (আল কাউছারঃ২) তবে অধিকাংশ আলেমের মতে তা
সুন্নতে মুআক্কাদাহ; ওয়াজিব নয়। মহিলাদের জন্যও ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাজ আদায় করা বৈধ। তবে বেপর্দা হয়ে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে নয়। এমনকি ঋতুমতী মহিলাগণও ঈদের মাঠে গমন করবে। তারা নামাজ আদায় করবে না। বরং মুসলমানদের সাথে দুআয় শরিক হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের কিছু আলেম মহিলাদের ঈদের নামাজে আসাকে হারাম ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
গ) পায়ে হেঁটে ঈদের নামাজে গমন করা: إلى الصلاة مشيا الذهاب
সম্ভব হলে পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের মাঠে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং আসার সময় অন্য রাস্তা ফেরত আসা সুন্নত। (বুখারি)
ঘ) ঈদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি: كيفية أداء صلاة العيد
বিনা আজানে ও বিনা ইকামতে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত বার তাকবিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর কিরাত পাঠের পূর্বে সাত তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবির পাঠ করা। সহিহ হাদিসে এভাবেই তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে।
ঙ) ঈদের শুভেচ্ছা প্রদান করা: تبادل تهاني العيد
ঈদের আনন্দ বিনিময় করা এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা প্রদান করা জায়েজ আছে। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় একথা বলা যায়, (তাকাবাল্লাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম-تقبل الله منا ومنكم) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনাদের সৎ আমলগুলো কবুল করুন।
চ) ঈদের দিন পানাহার করা: الأكل والشرب يوم عيد الأضحى
দুই ঈদের দিনে পানাহারের ব্যাপারে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত হলো, ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে কিছু খেয়ে ঈদের নামাজে গমন করা। আর ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া। বুরায়দা রা. হতে বর্ণিত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না। এবং ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে বের হতেন এবং নামাজ থেকে এসে কুরবানি করে কুরবানির গোশত থেকে খেতেন। (আহমদ) অনেকে এটাকে রোজা বলে থাকেন। রোজা বলা ঠিক নয়। কারণ দুই ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
ছ) কুরবানি করা: ذبح الأضحية
সামর্থ্য বান ব্যক্তির উপর কুরবানি করা সুন্নতে মুআক্কাদা। কুরবানি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তির জন্য কুরবানি না দেওয়া মাকরূহ। অনেক আলেম আল্লাহর বাণী: (فصل لربك وانحر) “আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কুরবানি করুন।” এই আয়াতকে দলিল হিসাবে গ্রহণ করে কুরবানি দেওয়াকে ওয়াজিব বলেছেন।
ইবনে উমর রা. বলেন, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনাতে দশ বছর অবস্থান করেছেন। তিনি প্রতি বছরই কুরবানি করেছেন। (তিরমিজী-আহমদ)
কুরবানি নিজ হাতে করা উত্তম। নিজে করতে না পারলে অন্যকে দিয়ে করা যেতে পারে। কুরবানি জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহ আকবার’ বলে জবাই করবে। জবাই করার সময় কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার দুআ করা মোস্তাহাব।
জ) কুরবানির পশু নির্বাচন: اختيار المواشي للأضحية
উট, গরু, ছাগল, দুম্বা-ভেড়া ও মহিষ দিয়ে কুরবানি করা বৈধ। তবে কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে শর্ত হল তা সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।
ইমাম বুখারি ও মুসলিম আনাস রা. হতে বর্ণনা করেন, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং বিশিষ্ট দু‘টি কাল মুখ ও কাল পা বিশিষ্ট ভেড়া দিয়ে কুরবানি করেছেন। (বুখারি)
চার প্রকার পশু দিয়ে কুরবানি করা সিদ্ধ নয়। সুস্পষ্ট অন্ধ, সুস্পষ্ট রোগ বিশিষ্ট, সুস্পষ্ট খোঁড়া এবং একেবারে দুর্বল ও গোশত হীন যা জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে অক্ষম। (তিরমিজী)
একটি ছাগল বা দুম্বা এক পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। যদিও পরিবারের লোক সংখ্যা অনেক হয়ে থাকে। একটি উটে দশজন এবং একটি গরুতে সাত জন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা বৈধ। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিস রয়েছে। তবে ছাগল-খাসীতে শরিক হওয়া জায়েজ নাই।
আমাদের দেশে কুরবানির গরুর সাথে ভাগে আকিকা দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত আছে। হাদিসে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। সুতরাং ইহা আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিয়ে খেলাধুলার শামিল।
ঝ) কুরবানির পশুর বয়স: أعمار مواشي الأضحية
কুরবানির পশুর জন্য শর্ত হল, তার বয়স পূর্ণ হতে হবে। ভেড়া-দুম্বার ক্ষেত্রে ছয় মাস পূর্ণ হতে হবে। (নাসাঈ) ছাগল-খাসীর বয়স এক বছরের কম হলে তার দ্বারা কুরবানি চলবে না। গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। উটের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (মুসলিম)
ঞ) কুরবানি করার সময়: أوقات ذبح الأضحية
ঈদের নামাজের পর থেকেই কুরবানি করার সময় শুরু হয়। ঈদের নামাজের পূর্বে জবাই করলে তা কুরবানি হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেউ যদি নামাজের আগেই জবাই করে ফেলে, তবে তাকে নামাজের পর তদস্থলে আর একটি পশু জবাই করতে হবে। কুরবানি করার শেষ সময় হল জিলহজ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ ঈদের দিন এবং ঈদের পর তিন দিন। পরের তিন দিনকে হাদিসের পরিভাষায় আইয়ামে তাশরিক বলা হয়। তাশরিক অর্থ সূর্যের আলোতে শুকানো। সাহাবিগণ এই দিনগুলোতে কুরবানির গোশত কেটে টুকরো টুকরো করে রৌদ্রে শুকাতেন বলে এই দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরিক বলা হয়।
ট) কুরবানির গোশত খাওয়া:
কুরবানির গোশত থেকে অল্প হলেও খাওয়া সুন্নত। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)মদিনাতে অভাবী লোক থাকার কারণে কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রাখতে নিষেধ করেছিলেন।পরবর্তীতে যখন মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন হল, তখন রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা রেখে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেছেন।
ঠ) কুরবানি দাতা যা থেকে বিরত থাকবে: الأشياء التي يبتعد عنها المضحي
যে ব্যক্তি কুরবানি দিতে ইচ্ছা করবে, তার জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানির করার পূর্ব পর্যন্ত মাথার চুল, হাত বা পায়ের নখ কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করবে, সে যেন কুরবানির পশু জবাই করার পূর্বে তার মাথার চুল বা হাত-পায়ের নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম-আহমদ)
এই বিধান শুধুমাত্র পরিবারের যে কুরবানি করবে, তার জন্য স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ড) কুরবানির গোশত বণ্টন করা: توزيع لحوم الأضاحي
কুরবানি দাতার জন্য সুন্নত হল নিজে পরিবারসহ কুরবানির গোশত খাবে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দিবে এবং গরীব-মিসকিনকে সদকা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা উহার গোশত খাও এবং ফকীর ও অভাবগ্রস্তদেরকে খেতে দাও”। (সূরা হজ্জ: ২৮)
অনেক উলামায়ে দ্বীন কুরবানির গোশত তিন ভাগে বণ্টন করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ধনী আত্মীয়দেরকে হাদিয়া দেওয়া এবং আর একভাগ ফকির-মিসকিনদেরকে দান করা পছন্দ করতেন। তবে এধরণের বণ্টন করা ওয়াজিব নয়।
ঢ) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা: الأضحية عن الميت
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা তিন ধরণের হতে পারে। যথা:
(১) নিজের কুরবানিতে পরিবারের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদেরকে নিয়তের মাধ্যমে শামিল করা। ইহা বৈধ। নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এধরণের কুরবানি করার কথা প্রমাণিত আছে। এভাবে দেওয়া কুরবানির গোশত পরিবারের সবাই খেতে পারবে।
(২) মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করার ওসিয়ত করে থাকলে ওসিয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানি করা জায়েজ আছে।
(৩) মৃত ব্যক্তির জন্য আলাদাভাবে কুরবানি করা। এব্যাপারে বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন। কারণ এ ধরণের কুরবানি করার কথা হাদিসের মাধ্যমে সরাসরি প্রমাণিত নাই। আল্লামা ইবনে উসাইমীন সদকা স্বরূপ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এভাবে কুরবানি করলে গোশত দরিদ্রদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। নিজে খাওয়া যাবে না।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এই যে তিনি যেন আমাদের সমস্ত সৎ আমল কবুল করেন ।
এ কথা সঠিক। এতে কোনও শিরক নেই। কারণ ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, আল্লাহর নামে আগে কাজ করতে হবে, চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে অতঃপর সফলতার জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। চেষ্টা-পরিশ্রম না করে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়।
আনাস রা. হতে বর্ণিত,
قال رجلٌ يا رسولَ اللهِ أعقِلُها وأتوكَّلُ أو أُطلقُها وأتوكَّلُ قال اعقِلها وتوكَّلْ
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, নাকি তা ছেড়ে রেখে? তিনি বললেন, “উট বাঁধ, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সহিহ তিরমিজি, হা/২৫১৭, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
- উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
لو أنَّكم تَوَكَّلُونَ علَى اللهِ تعالَى حَقَّ تَوَكُلِهِ ، لَرَزَقَكُمْ كمَا يَرْزُقُ الطيرَ ، تغدُو خِماصًا ، وتروحُ بِطانًا
“তোমরা যদি সত্যিকার ভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা বেলা ভরা পেটে ফিরে আসে।” [তিরমিজি, সহিহুল জামে, হা/৫২৫৪]
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, পাখিরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় বসে থাকে না। তারা খুব ভোরে তাদের বাসা ছেড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রিজিকের সন্ধানে যায়। সেখানে ওঁত পেতে থাকা শিকারির জালে ধরা পড়ার কিংবা সাপ-বিচ্ছু ও হিংস্র পশুর আক্রমণে জীবননাশের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রিজিক অনুসন্ধান করে। ফলে আল্লাহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন এবং তারা সন্ধ্যায় পেট পুরে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরেতে পারে।
তাহলে বুঝা গেল, ঘরে বসে খাবারের অপেক্ষা করার নাম তাওয়াক্কুল বা ভরসা নয়। বরং হালাল উপার্জনের জন্য দৌড়-ঝাঁপ ও চেষ্টা-পরিশ্রম করা, বিভিন্ন ঝুঁকি মাথায় নিতে কাজ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উভয়টির প্রয়োজন আছে। তাহলেই আল্লাহ সাহায্য করবেন। সুতরাং “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথা বলায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে মনে রাখতে হবে যে, আমরা চেষ্টা-পরিশ্রম বা কোন কাজ করতে পারবো না যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমতা না দেন। আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কোন কিছুতে করতে সক্ষম নই। এটাই “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-এর অর্থ।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো:
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله
(বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ।)
অর্থ: “আল্লাহর নামে (বের হলাম)। আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। কোনও অবলম্বন নেই এবং কোনও শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।” [সুনানুত তিরমিজি, ৫/৪৯০, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/৮৫৯, হাদিসটি হাসান।]
তাই আমাদেরকে আল্লাহর নামে কাজ শুরু করতে হবে, তার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে, অতঃপর তার উপর ভরসা করতে হবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। আর আমরা অতিশয় দুর্বল দুর্বল এবং তার করুণার মুখাপেক্ষী। তার দেওয়া শক্তি-সামর্থ্য ছাড়া ছাড়া আমাদের নিজস্ব কোনও শক্তি, সামর্থ্য বা যোগ্যতা নেই।
আল্লাহু আলাম।
الحمد لله، رب العالمين والصلاة السلام على رسول الله، وبعد:
فمن يقول هذا العبارة مراده أني فعلت السبب الذي أقدر عليه في الأمر الذي أريد تحقيقه، وأما حصول المقصود، وتحقيق النتائج فذلك إلى الله، وهذا المعنى حق، فإن العبد لا يملك تحقيق مقاصده، وبلوغ آماله إلا بتوفيق الله وتيسيره، فمعنى هذه العبارة يرجع إلى ما جاء في الحديث "اعقلها وتوكل". أخرجه الترمذي (2517)، وابن حبان (731). وهذا هو الذي يليق بالمسلم أن يفعل السبب المشروع ويعتمد في حصول المطلوب على ربه، فيجتهد في فعل الأسباب المشروعة، ويستعين بربه في حصول مطلوبه كما قال صلى الله عليه وسلم "احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجِز". صحيح مسلم (2664).
ولكن ينبغي أن يقول المتكلم بهذه العبارة (والباقي إلى الله)، بدل (على الله)، والله أعلم
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুলের উপর। অত:পর-
যে ব্যক্তি এই বাক্যটি বলে তার কথার মানে হল যে, আমি যে বিষয়টি অর্জন করতে চাই তার জন্য আমি সাধ্যানুযায়ী উপায় অবলম্বন করেছি (অর্থাৎ আমার যা করণীয় আমি তা করেছি)। কিন্তু লক্ষ্য হাসিল বা ফলাফল অর্জনের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করছি।
আর এ অর্থটি সত্য। কারণ আল্লাহর রহমত ও তৌফিক ছাড়া বান্দা তার লক্ষ্য অর্জন এবং প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।
সুতরাং উক্ত বাক্যটির অর্থ সেটাই, যা এ হাদিসে এসেছে:
اعقِلْها وتوكَّلْ
“আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (অর্থাৎ উটকে না বেঁধে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থেকো না। অন্যথায় উট পালিয়ে যাবে)। এটি তিরমিজি (২৫১৭) এবং ইবনে হিব্বান (৭৩১) বর্ণনা করেছেন।
একজন মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো, সে যা চায় তা অর্জনের জন্য তার প্রতিপালকের উপর ভরসা করবে। ফলে সে বৈধ উপায় অবলম্বন করার করার পাশাপাশি তার প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করবে। যেন সে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অর্জন করতে পারে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
احْرِصْ علَى ما يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ باللَّهِ وَلَا تَعْجِزْ
"যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা গুরুত্ব সহকারে করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ো না।” [সহীহ মুসলিম, ২৬৬৪]
তবে যে এমন কথা বলবে, তার "বাকিটা আল্লাহর উপর” না বলে উচিৎ, “বাকিটা আল্লাহর নিকটে।”
আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।”
- শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক,
(লেকচারার, ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)
একজন মেয়ের পিরিয়ডের সময় প্যাম্পারস বা প্যাড কেনার জরুরি প্রয়োজন হলে, যে কোন মাহরাম ব্যক্তি দ্বারা তা ক্রয় করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে এতে কোন বাধা নেই। ‘বাবা-ভাই বা কোন মাহরাম পুরুষ এগুলো ক্রয় করতে পারবে না’ ইসলামে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি।
তবে স্বামী থাকলে অবশ্যই তার দায়িত্ব স্ত্রীর প্রয়োজনীয় সব কিছুর সু-ব্যবস্থা করে দেয়া। আর স্বামী না থাকলে একজন নারী নিজস্ব উপায়ে তা সংগ্রহ করবে। দরকার হলে, বাবা-ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা ইত্যাদির মাধ্যম তা ক্রয় করবে। চেষ্টা করতে হবে, যথাসম্ভব একবারে বেশি করে ক্রয় করে রাখা যেন, প্রতি মাসে তা কেনার প্রয়োজন না হয়।
লক্ষণীয় বিষয় হল, আমাদের দেশে মেয়েরা তাদের পোশাক-আশাক, কসমেটিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র কেনাকাটার জন্য যেভাবে বাজারে নারী-পুরুষ একাকার হয়ে ভিড় জমাচ্ছে ইসলামি সমাজে তা কাম্য নয়। এটা অনেক ফিতনার কারণ। সুতরাং মেয়ে মানুষ নিজে এসব ক্রয় করার জন্য দোকানে বা বাজারে যাওয়াটাও অনেক সময় ফেতনা সৃষ্টি করে।
যাহোক এগুলো জিনিস বাবা-ভাই ইত্যাদি মাহরাম পুরুষদের দ্বারা ক্রয় করার অর্থ এই নয় যে, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে তারা নিজেদের গোপন ও মেয়েলি বিষয়গুলো তাদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করবে বা ফেসবুকে পাবলিকলি ডিসকাস করবে।
হায়েজের ক্ষেত্রে ইঙ্গিত বাচক বাক্য ব্যবহার করা শিষ্টাচারের প্রমাণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মহিলাগণ কিভাবে তাদের হায়েজের বিষয়টি সরাসরি প্রকাশ না করে ইঙ্গিত বাচক বাক্য ব্যবহার করতেন তা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে প্রতিভাত হয়:
বিদায় হজ্জের সফরে এসে মা জননী আয়েশা রা. ঋতুমতী হওয়ার প্রাক্কালের ঘটনা: (ঘটনার মূল কথাটা হল,)
তিনি বললেন,
فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ قُلْتُ سَمِعْتُكَ تَقُولُ لأَصْحَابِكَ مَا قُلْتَ فَمُنِعْتُ الْعُمْرَةَ قَالَ وَمَا شَأْنُكِ قُلْتُ لاَ أُصَلِّي قَالَ فَلاَ يَضِرْكِ أَنْتِ مِنْ بَنَاتِ آدَمَ كُتِبَ عَلَيْكِ مَا كُتِبَ عَلَيْهِنَّ
আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন: তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? আমি বললাম: আপনি আপনার সাহাবিগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো উমরা হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার কী অবস্থা? আমি বললাম: আমি তো সালাত আদায় করছি না। (অর্থাৎ তিনি এ কথা দ্বারা বুঝালেন যে, তার ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে)।
তিনি বললেন: “এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো আদম কন্যাদেরই একজন। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে।” (একটি লম্বা হাদিসের অংশবিশেষ)
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ২৬/ উমরাহ (كتاب العمرة), পরিচ্ছেদ: ২৬/৯. ‘উমরাহ আদায়কারী ‘উমরাহ’র তওয়াফ করেই রওয়ানা হলে, তা কি তার জন্য বিদায়ী তওয়াফের বদলে যথেষ্ট হবে? এবং সহিহ মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১১)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
قولها: لا أصلي كناية عن أَنَّهَا حَاضَت. قَالَ ابن الْمُنِيرِ: كَنَّتْ عَنِ الْحَيْضِ بِالْحُكْمِ الْخَاصِّ بِهِ أَدَبًا مِنْهَا، وَقَدْ ظَهَرَ أَثَرُ ذَلِكَ فِي بَنَاتِهَا الْمُؤْمِنَاتِ فَكُلُّهُنَّ يُكَنِّينَ عَنِ الْحَيْضِ بِحِرْمَانِ الصَّلَاةِ أَوْ غَيْرِ ذَلِكَ. انتهى
মা-জননী আয়েশা রা. বলেছেন, “আমি তো সালাত আদায় করছি না।” এ দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন যে, তিনি ঋতুমতী হয়েছেন।
ইবনুল মুনাইয়ের (১২২৩-১২৮৪ খৃষ্টাব্দ) বলেন, তিনি বিশেষ একটি বিধান (সালাত না পড়া) এর কথা উল্লেখ করে হায়েজ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটি তার শিষ্টাচারের প্রমাণ। তাঁর এই শিষ্টাচারের প্রভাব তাঁর মুমিন মেয়েদের উপরও পড়েছে। তাই তারা সবাই হায়েজ বিষয়ে ইঙ্গিতে কথা বলে থাকে ‘সালাত থেকে বঞ্চিত হয়েছি’ বা জাতীয় বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে।” (ফাতহুল বারী শরহু সহিহুল বুখারী)
সামাজিক ট্যাবু ভাঙ্গার নামে নারীদের লজ্জাশীলতাকে কেড়ে নিতে ভিনদেশী উচ্ছিষ্টভোজীদের নোংরা ষড়যন্ত্র:
বর্তমানে আমাদের দেশে সামাজিক ট্যাবু (taboo) তথা ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক রীতিনীতি এবং চিরাচরিত সাংস্কৃতিক বিবেচনা বোধ ভেঙ্গে মানুষকে এক বীভৎস ও বিপদজনক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে একশ্রেণীর ভিনদেশী উচ্ছিষ্টভোজী এনজিও, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী চক্র খুব কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে।
এদের উদ্দেশ্য খুবই নিকৃষ্ট। এরা মুসলিম নারীদের থেকে লজ্জাবোধের মত অতি উচ্চমানের মানবিক গুনটিকে বিদায় করে তাদেরকে নির্লজ্জ বানানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। যার একটি কৌশল হল, মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের বিষয়টিকে বাবা, বড় ভাই বা অন্যান্য পুরুষদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহিত করা। যার ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে একশ্রেণীর লজ্জাহীন নারী তাদের ঋতুস্রাবের রক্তভেজা প্যাডের ছবি ফেসবুকের পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সবার সামনে নির্দ্বিধায় এসব মেয়েলি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা শুরু করছে!
এই চক্রটি নাটক, সিনেমা, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, ম্যাগাজিন ইত্যাদি মিডিয়া ব্যবহার করে প্রেম, যৌনতা, বয় ফ্রেন্ড, গার্ল ফ্রেন্ড, লিভটুগেদার, পরকীয়া, সমকামিতা ইত্যাদি বিষয়গুলোকেও একপ্রকার সামাজিকভাবে নির্দোষ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপকভাবে কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে তারা আত্মপরিচয়হীন বহু সংখ্যক নির্বোধ যুবক-যুবতীকে এ নোংরা পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছে।
শয়তান এবং তাদের অনুসারী নারীবাদী ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ দাসরা আমাদের মুসলিম নারীদের স্বভাবজাত ও সৃষ্টিগত লজ্জাবোধ তুলে দিয়ে অবাধ যৌনাচার, প্রেম, পরকীয়া, সমকামিতা ও লিভ টুগেদারের মত নোংরা যে সব ফাঁদ পেতেছে সে ব্যাপারে আমাদের সুশীল ব্যক্তিবর্গ, আলেম-উলামা এবং সর্বস্তরের যুব সমাজ সচেতন না হলে এবং প্রতিবাদ না করলে সময়ের ব্যবধানে আমরা নির্লজ্জ জাতিতে পরিণত হব-যেভাবে সামাজিক ট্যাবু ভাঙ্গার কৌশল প্রয়োগ করে বর্তমান পাশ্চাত্যের নারী-পুরুষের বিরাট একটি অংশকে ওরা সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ছেড়েছে।
মহান আল্লাহ মুসলিম নারী-পুরুষ সকলকে সব ধরণের ষড়যন্ত্র ও ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।