বাইবেল বলছে, বিবাহ পরকালের ক্ষতি এবং দুনিয়াতেও কষ্ট। বিবাহ করলে সংসার নিয়ে ভাবতে হয়; ফলে ঈশ্বরের আরাধনা ও পরকালের উন্নতি ব্যাহত হয়। আবার দুনিয়াতেও বিবাহের কারণে কষ্ট করতে হয়। এজন্য সম্ভব হলে বিবাহ না করে থাক। আর বিবাহিত হলেও অবিবাহিতের মতই থাক!
‘‘যদি কেউ বিয়ে না করে তাহলে সে ভালই করে... অবিবাহিত আর বিধবাদের আমি বলছি, তারা যদি আমার মত (অবিবাহিত বা চিরকুমার) থাকতে পারে তাহলে তা তাদের পক্ষে ভাল। ... তোমাদের কি স্ত্রী আছে? তবে স্ত্রীকে তালাক দিতে চেষ্টা করো না। তোমার কি স্ত্রী নেই? তবে বিয়ে করার চেষ্টা করো না। কিন্তু বিয়ে যদি তুমি করই তাতে তোমার কোন গুনাহ হয় না। কোন অবিবাহিত মেয়ে যদি বিয়ে করে তাহলে তারও গুনাহ হয় না। কিন্তু যারা বিয়ে করে তারা এই সংসারে কষ্ট পাবে, আর আমি এই সব থেকে তোমাদের রেহাই দিতে চাইছি। ... এখন থেকে এমন ভাবে চলবার দরকার যে, যাদের স্ত্রী আছে তাদের যেন স্ত্রী নেই... আমি চাই যেন তোমরা ভাবনা চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পার। অবিবাহিত লোক প্রভুর বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কিভাবে সে প্রভুবে সন্তুষ্ট করবে। বিবাহিত লোক সংসারের বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কিভাবে সে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করবে। এভাবে দুই দিকই তাকে টানতে থাকে। যে মেয়ের স্বামী নেই এবং আবিবাহিত মেয়ে প্রভুর বিষয়ে চিন্তা করে যাতে সে শরীরে আর দিলে প্রভুর হতে পারে। কিন্তু বিবাহিত স্ত্রীলোক সংসারের বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কেমন করে সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করবে। ... তাহলে দেখা যায়, যে তার মেয়েকে বিয়ে দেয় সে ভাল করে, আর যে তাকে বিয়ে না দেয় সে আরও ভাল করে।’’ (১ করিন্থীয় ৭/১-৩৮)
- সূর্য সৃষ্টির আগেই আলো ছিল, দিবারাত্র ছিল, পৃথিবীর বুকে গাছপালাও সূর্য সৃষ্টির পূর্বেই জন্ম নেয় এবং বাড়তে থাকে (আদিপুস্তক ১/৩-৫, ১৪-১৯)।
- সাপ মানুষের ভাষায় কথা বলে (হিব্রু ভাষায়?) (আদিপুস্তক ৩/১-৫)।
- পৃথিবীটা থাম, পিলার বা স্তম্ভের উপর স্থাপিত যা ঈশ্বর মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেন: ‘‘তিনি পৃথিবীকে তার স্থান হইতে কম্পমান করেন। তাহার স্তম্ভ সকল টলটলায়মান হয়। (কি. মো.- ০৬: তিনি দুনিয়াকে তার জায়গা থেকে নাড়া দেন তার থামগুলোকে কাঁপিয়ে তোলেন)। (ইয়োব/ আইউব ৯/৬)
- বাইবেল বলছে যে, ঈশ্বর সাপকে সারাজীবন ধুলা খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন: ‘‘তুমি সারাজীবন পেটের উপর ভর করে চলবে ও ধুলা খাবে।’’ (আদিপুস্তক / পয়দায়েশ ৩/১৪)। সাপ পেটের উপর চললেও কখনোই ধুলা খায় না।
- মহাপস্নাবনের পরে মাটিতে নেমে নোহ কতগুলো পশু কোরবানি করে পুড়িয়ে দিলেন। পোড়া মাংসের খোশবুতে ঈশ্বর প্রীত হলেন (আদিপুস্তক ৮/২১)।
- বাইবেলের বিধানে প্রথম সন্তান সর্বোচ্চ অধিকার পায়। আর এ অধিকার পাওয়ার জন্য যমজ বাচ্চা প্রসবের সময় এক বাচ্চা মায়ের পেটের মধ্যে থেকে আগেই হাত বের করে দিল। ধাত্রী সেই হাতে লাল সুতো বেধে দিল। বাচ্চা মায়ের পেটের মধ্য থেকেই নিজের হাত টেনে নিল। এরপর তার ভাই বেরিয়ে আসল। তবে লাল সুতোর কারণে অন্য জনই বড়ছেলের অধিকার পেল (আদিপুস্তক ৩৮/২৭-২৯)।
- দেহের সাথে ঘণ্টা না লাগিয়ে পবিত্র স্থানে গেলে জীবননাশের আশঙ্কা! ‘‘সে যখন পবিত্র স্থানে মাবুদের সামনে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসবে তখন এই ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ শোনা যাবে আর তাতে তার জীবন রক্ষা পাবে।’’ (হিজরত/যাত্রা ২৮/৩৫)
- গাধী ফেরেশতাদের দেখতে পেল এবং হিব্রু ভাষায় মালিকের সাথে কথা বলল। (গণনাপুস্তক/ শুমারী ২২/২১-৩০)
- শিমশোন বা হযরত শামাউনের সকল শক্তি চুলের মধ্যে। চুল কাটলে সব শক্তি শেষ হয়ে গেল! (বিচারকর্তৃগণ/কাজীগণ ১৬/১৭-২২)
- ঈশ্বর নাপাক পাখি দাঁড়কাককে দায়িত্ব দিলেন তার নবী এলিয়/ ইলিয়াসকে রুটি ও মাংস সরবরাহ করার। (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ১৭/২-৬)
- রাজা আহস ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরে তার ছেলে হিষ্কিয় রাজা হলেন। তিনি ২৫ বছর বয়সে রাজত্ব শুরু করলেন। (২ বাদশাহনামা ১৬/২, ২০; ১৮/১-২)। তাহলে রাজা আহস মাত্র এগার বছর বয়ছে সন্তানের পিতা হয়েছিলেন!
- ‘‘পরে সাহাবী-নবীদের মধ্যে একজন মাবুদের কালাম দ্বারা তার সহ-সাহাবীকে বললো, তুমি আমাকে আক্রমণ কর। কিন্তু সে তাকে আক্রমণ করতে সম্মত হল না। তখন সে তাকে বললো, তুমি মাবুদের কথা মান্য করলে না, এ কারণে দেখ, আমার কাছ থেকে যাওয়া মাত্র একটি সিংহ তোমাকে হত্যা করবে। পরে সে তার কাছ থেকে যাওয়া মাত্র এক সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে হত্যা করল।’’ (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২০/৩৫-৩৬, মো.-১৩)
বিষয়টা বড়ই বিস্ময়কর! খুবই স্বাভাবিক যে, ভক্তি বা ভালবাসা বশত নবীর সাথী তাকে আক্রমণ বা আঘাত করতে দ্বিধা করবেন। এজন্য তাকে কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে হত্যা করতে হবে! বাইবেলের ঈশ্বর কি এতই হত্যাপ্রিয়?
- বাইবেল থেকে জানা যায় যে, সূর্যের তাপাঘাত (sunstroke/heatstroke)-এর মত চাঁদও মানুষকে আঘাত করতে ও আহত করতে পারে: ‘‘সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার দক্ষিণ পার্শে। দিবসে সূর্য তোমাকে আঘাত করিবে না, রাত্রিতে চন্দ্রও করিবে না।’’ (গীতসংহিতা ১২১/৫-৬)
- যীশু ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁর রাজ্যের মধ্যে অবস্থানরত পাপীদেরকে জড়ো করে আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন: ‘‘ইবনে-আদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। যারা অন্যদের গুনাহ করায় এবং যারা নিজেরা গুনাহ করে তাদের সবাইকে সেই ফেরেশতারা ইবনে-আদমের রাজ্যের মধ্য থেকে একসংগে জমায়েত করবেন ও জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন।’’ (মথি ১৩/৪১)
কিন্তু গুনাহকারীরা কিভাবে তার রাজ্যে প্রবেশ করল? গুনাহকারী হলেই যদি দোজখে যেতে হয় তবে তার করুণা কোথায় গেল?
- বাইবেলের নিয়ম হল কাউকে কসম করাতে হলে তার হাতটা নিজের অ-কোষের নিচে রাখতে হবে। যদিও বাইবেলের অনুবাদে অ-কোষ শব্দটা ব্যবহার না করে ‘জঙ্ঘা’ বা ‘রান’ বলা হয়েছে। (আদিপুস্তক ২৪/২-৯, ৪৭/২৯) ইংরেজিতে সাক্ষ্য, প্রতিজ্ঞা, নিয়ম, সন্ধি, শপথ ইত্যাদি বুঝাতে টেস্টিমনি, টেস্টামেন্ট, টেস্টিফাই (testimony, testament, testify) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। টেস্টিকল (testicle), অর্থাৎ ‘অন্ডকোষ’ থেকেই এ সকল শব্দের উৎপত্তি।
- ‘‘সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে সাতশো বাঁহাতি দক্ষ লোক ছিল যারা চুল লক্ষ্য করে ফিংগা দিয়ে ঠিক চুলটির উপরেই পাথর মারতে পারত’’!!! (কাজীগণ ২০/১৬)
- ‘‘ফিলিস্তিনীরা তখন বনি-ইসরাইলদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য একসংগে জমায়েত হল। তাদের সংগে ছিল ত্রিশ হাজার রথ, ছয় হাজার ঘোড়সওয়ার ও সমুদ্র-পারের বালুকণার মত অসংখ্য পদাতিক সৈন্য।’’ (১ শামুয়েল ১৩/৫)
প্রিয় পাঠক, কাব্য বা উপন্যাসে এরূপ কথা বলা যেতে পারে। কোনো ধর্মগ্রন্থ তো দূরের কথা, ইতিহাস গ্রন্থে কি এরূপ কথা মিথ্যা বলে গণ্য নয়?
- দুজন খ্রিষ্টান একত্রিত হয়ে যা চাইবে ঈশ্বর তাই দিবেন! (মথি ১৮/১৯)
- চাইলেই পাবে! বিশ্বাস থাকলে যা চাবে তাই পাবে। (মথি ৭/৭-৮; ২১/২২; মার্ক ১১/২৪; লূক ১১/৯-১০; যোহন ১৬/২৩)!
- চাঁদ, সূর্য ও তারাগুলো সব পড়ে যাওয়ার পরেও দেখার মত যথেষ্ট আলো থাকে। (মথি ২৪/২৯-৩০)
- সরিষাদানা পরিমাণ বিশ্বাস থাকলেও পাহাড় সরানো সম্ভব। সরিষাদানা পরিমাণ বিশ্বাস থাকলে তার জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়! (মথি ১৭/২০; ২১/২১; মার্ক ৯/২৩; ১০/২৭, ১১/২৩, লূক ১৭/৬)
- শিমশোন বা হযরত শামাউন একটা মরা গাধার চোয়াল দিয়ে একবারে ১০০০ মানুষ মেরে ফেললেন! (বিচারকর্তৃগণ/ কাজীগণ ১৫/১৫)
- পিতলের সাপ না দেখিয়ে ঈশ্বর মানুষকে বিষমুক্ত করতে পারেন না। (গণনাপুস্তক ২১/৫-৯)
- বাড়ির দরজায় রক্ত মাখিয়ে না রাখলে ঈশ্বর বুঝতে পারেন না যে, বাড়িটা কি তাঁর প্রজাদের না তাঁর শত্রুদের। যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ১২/৭, ১২-১৩)
- ‘‘যে লোকের পুরুষাংগের সামনের চামড়া কাটা নয় তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলা হবে, কারণ সে আমার ব্যবস্থা অমান্য করেছে।’’ (আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ১৭/১৪) অর্থাৎ ছোটবেলায় পিতা তাকে খতনা করতে অবহেলা করেছেন এজন্য পুত্রকে মুছে (হত্যা করে?) ফেলা হবে!
- খোজা বা নপুংসক হতে উৎসাহ প্রদান: ‘‘কোন খোজা লোক না বলুক, ‘আমি কেবল একটা শুকনা গাছ, কারণ মাবুদ এই কথা বলছেন, ‘খোজারা যদি আমার বিশ্রামবার পালন করে, আমি যা পছন্দ করি তা-ই বেছে নেয় আর আমার ব্যবস্থা শক্ত করে ধরে রাখে তবে তাদের ছেলেমেয়ে থাকলে যে নাম থাকত তার চেয়ে আমার ঘর ও দেয়ালের ভিতরে তার নাম স্থাপন করে তা আমি আরও স্মরণীয় করে রাখব। আমি তাদের এমন চিরস্থায়ী নাম দেব যা মুছে ফেলা হবে না। (ইশাইয় ৫৬/৩-৫)
- ছোঁয়াছুঁয়ির কুসংস্কার! কোনো মানুষ কোনোভাবে কোনো নাপাক বস্ত্ত স্পর্শ করলে সে নাপাক হয়ে যাবে। আবার কোনো নাপাক ব্যক্তি যা কিছুই স্পর্শ করুক না কেন তা তৎক্ষণাৎ তা নাপাক হয়ে যাবে। (গণনা/শুমারী ১৯/২২)
- পুরুষরা যদি ব্যভিচার করে তবে মহিলাদের বেশ্যাচারিতা বা ব্যভিচারের অপরাধ ধরা হবে না: ‘‘তোমাদের মেয়েরা বেশ্যা হলে আর ছেলের স্ত্রীরা জেনা করলে আমি শাস্তি দেব না, কারণ পুরুষেরা নিজেরাই বেশ্যাদের কাছে যায় এবং মন্দির-বেশ্যাদের সংগে পশু উৎসর্গ করে।’’ (হোসিয়া ৪/১৪)
- খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিরোধ হলে কোর্টে যাওয়া চলবে না; বরং চার্চের মধ্যে সাধুদের (saints) কাছে বিচার দিতে হবে: ‘‘তোমাদের মধ্যে কারও যদি কোন ঈমানদার ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করবার কোন কারণ থাকে, তবে কোন সাহসে সাধুদের (saints পবিত্রগণের/ আল্লাহর বান্দাদের) কাছে না গিয়ে যারা আল্লাহর নয় তাদের কাছে গিয়ে বিচার চায়... যারা চার্চের (church মণ্ডলীর/ জামাতের) লোক নয় তাদেরই কি তোমরা বিচরক হবার জন্য ঠিক করে থাক?’’ (১ করিন্থীয় ৬/১-৬)
- পুরুষের জন্য লম্বা চুল লজ্জার বিষয়! ‘‘পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে তবে তার অসম্মান হয় (if a man have long hair, it is a shame unto him) ... যদি কেউ এই নিয়ে তর্ক করতে চায় তবে আমি এই বলব যে, অন্য কোন নিয়ম আমাদের মধ্যেও নেই বা আল্লাহর জামাতগুলোর (ঈশ্বরের চার্চগুলোর: churches of God ) মধ্যেও নেই।’’ (১ করিন্থীয় ১১/১৪-১৬)
এ বক্তব্য অনুসারে স্বয়ং যীশুও অপমানজনক কর্ম করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ আমার দেখি যে, সকল ছবিতেই যীশু খ্রিষ্টের চুল লম্বা দেখানো হয়েছে!
- দর্শন (Philosophy) চর্চা নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। (কলসীয় ২/৮)
- নারীরা সাজগোজ বা সৌন্দর্যচর্চা করবেন না। চুলের বেণী ব্যবহার, সোনা ও মুক্তার গয়না ব্যবহার বা দামী কাপড় পরে নিজেদেরকে সাজাবেন না। (১ তীমথিয় ২/৯ এবং ১ পিতর ৩/৩)
- নিজ মতের ও বিশ্বাসের খ্রিষ্টান ছাড়া কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এমনকি তার জন্য মঙ্গল কামনা করা বা সালাম জানানোও নিষিদ্ধ। যদি কেউ কোনো অখ্রিষ্টানের জন্য মঙ্গল কামনা করে তবে সেও সেই অখ্রিষ্টানের পাপের ভাগী বা অখ্রিষ্টানের মতই মুক্তি-বঞ্চিত: ‘‘যদি কেউ সেই শিক্ষা (the doctrine of Christ মসীহের শিক্ষা) না নিয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে তাকে বাড়িতে গ্রহণ করো না এবং তাকে ‘মঙ্গল হোক’ বলো না। কেননা যে তাকে ‘মঙ্গল হোক’ বলে, সে তার দুষ্কর্মের সহভাগী হয়’’ (২ ইউহোন্না ৯-১১, মো.-১৩)। মো.-০৬: ‘‘সালামও জানায়ো না। যে তাকে সালাম জানায় সে তার খারাপ কাজেরও ভাগ নেয়।’’
বাইবেল সমালোচকরা বাইবেলীয় অশিষ্টতা ও অশ্লীলতা (Bible Vulgarities & Obscenities) প্রসঙ্গে অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার প্রসঙ্গটা উল্লেখ করেন। বাইবেলের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনায় এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা ধর্মগ্রন্থ তো দূরের কথা সাধারণ কথাবার্তা বা সাহিত্যে অশালীন, অশ্রাব্য বা অরুচিকর বলে গণ্য। শালীনতা ও অশালীনতা বা রুচি ও অরুচির বিষয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে স্বাভাবিক বিচারে এগুলো অশালীন বা অভদ্র শব্দ এবং এগুলো বাদ দিয়ে অধিকতর শালীন শব্দ ব্যবহার করেও এ কথাগুলো বলা যেত। বিশেষত, ঐশ্বরিক পুস্তকের ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আরো অনেক শালীন, আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য ভাষায় কথাগুলো বলতে পারতেন বলে ধারণা করাই স্বাভাবিক।[1]
যেমন লিঙ্গাগ্রচ্ছেদন বা খাতনা করা বাইবেলের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বাইবেলে শত শতবার বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে লিঙ্গাগ্রচর্মের বর্ণনা, বয়স্ক মানুষদের লিঙ্গাগ্রচর্ম কর্তনের বর্ণনা, বয়স্ক মানুষদের লিঙ্গাগ্রচর্ম কেটে জমা করে পাহাড় বানানোর বর্ণনা ইত্যাদি অনেক স্থানে বেশ অশোভনীয়। বিষয়টা অশোভন বা অরুচিকর হওয়ার কারণে বর্তমানে অনেক অনুবাদে আক্ষরিক অনুবাদ বর্জন করা হচ্ছে বা মূল ‘অশোভন’ শব্দ বা বাক্যটা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইংরেজি কিং জেমস ভার্শনের সাথে মিলিয়ে পড়লে অশোভনীয়তা ভালভাবে অনুধাবন করা যাবে। পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলো কিং জেমস ভার্শন ও বাংলা কেরি ভার্শন সামনে রেখে পরবর্তী অনুবাদগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়তে পারেন: আদিপুস্তক ১৭/১০-১৪; ২৩-২৭; ২১/৪; ৩৪/১৫, ১৭, ২২, ২৪; যাত্রাপুস্তক ৪/২৫; ২৬; ১২/৪৪; লেবীয় ১২/৩; দ্বিতীয় বিবরণ ১০/১৬; ৩০/৬; যিহোশূয় ৫/২-৫; ৭-৮; বিচারকর্তৃগণ ৪/৪, ৯/২৫; ১ শামুয়েল ১৮/২৫, ২৭, ২ শামুয়েল ৩/১৪, হাবাক্কুক ২/১৬... ইত্যাদি।
ভাষার অশোভনীয়তার বিভিন্ন দিক রয়েছে। কখনো কখনো নিষ্ঠুরতা বা হত্যাকাণ্ড-র বর্ণনা এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, কোনো ধার্মিক খ্রিষ্টানও চাইবেন না যে, তার কিশোর সন্তান তা পাঠ করুক। একটা হত্যাকাণ্ড-র বর্ণনায় বাইবেল বলছে: ‘‘যোয়াব অমাসাকে বললেন, ‘ভাই, কেমন আছ?’ এই বলে তিনি ডান হাত দিয়ে তাঁর দাড়ি ধরলেন। যোয়াবের হাতে যে সেই ছোরাটা ছিল সেই দিকে অমাসা খেয়াল করেনি। যোয়াব সেই ছোরা তাঁর পেটে ঢুকিয়ে দিলেন। তাতে তাঁর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে মাটিতে পড়ল। .... তারপর সেই স্ত্রীলোকটি সমস্ত লোকের কাছে গিয়ে জ্ঞানপূর্ণ উপদেশ দিল। লোকেরা বিথ্রির ছেলে শেবের মাথাটা কেটে নিয়ে যোয়াবের কাছে ছুঁড়ে দিল।’’ (২ শামুয়েল ২০/৯-১০, ২২)
অন্যত্র বাইবেল বলছে: ‘‘যেহু বললেন, ‘ওকে নীচে ফেলে দাও।’ তখন তারা ঈষেবলকে নীচে ফেলে দিল আর যেহুর রথের ঘোড়াগুলো তাঁকে পায়ে মাড়িয়ে গেল। তাতে তাঁর রক্ত ছিটকে গিয়ে দেয়ালে আর ঘোড়ার গায়ে লাগল। ... লোকেরা যখন তাঁকে দাফন করবার জন্য বাইরে গেল তখন তাঁর মাথার খুলি, হাত ও পা ছাড়া আর কিছুই পেল না ...।’’ (২ বাদশাহনামা ৯/৩৩-৩৫)
পাঠক পরবর্তী অধ্যায়ে হত্যা ও জিহাদ প্রসঙ্গে আরো ভয়ঙ্কর কিছু বর্ণনা দেখবেন। পুরো বাইবেলের মধ্যে এরূপ বিভীষিকাময় বর্ণনা অনেক। ‘হরর মুভি’ (horror movie) বা ভয়ের-সিনেমাগুলোতেই এরূপ থাকে। ধর্মগ্রন্থে এরূপ বিভীষিকাময় বর্ণনা আপত্তিকর বলে গণ্য করাই স্বাভাবিক। বিশেষত ধর্মগ্রন্থ তো শিশু কিশোর সকলেই পড়বেন। আর এরূপ বর্ণনা শিশু-কিশোরদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে।
কখনো কখনো উপদেশ প্রসঙ্গেও এরূপ আতঙ্কময় বর্ণনা দেওয়া হয়েছে: ‘‘আপনারা আমার লোকদের গা থেকে চামড়া আর হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিচ্ছেন; আপনারা আমার লোকদের মাংস খাচ্ছেন, তাদের চামড়া তুলে ফেলে হাড়গুলো টুকরা টুকরা করে ভাঙ্গছেন; আপনারা হাঁড়ির মধ্যেকার মাংসের মত করে তাদের টুকরা টুকরা করে কাটছেন।’’ (মিকাহ ৩/২-৩)
পবিত্র বাইবেল উল্লেখ করেছে, মোশি একজন ইথিওপীয় মহিলাকে বিবাহ করেন। এজন্য মোশির ভাই হারোণ ও মরিয়ম মোশির বিরুদ্ধে কথা বলেন। এতে ঈশ্বর হারোন ও মরিয়মের উপর ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হন এবং হারোনকে বাদ দিয়ে শুধু মরিয়মকে কুষ্ঠরোগ দ্বারা আক্রমণ করেন। মরিয়ম মোশির নিকট ক্ষমা চাইলে মোশি ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করেন। তখন ঈশ্বর বলেন: ‘‘তার বাবা যদি তার মুখে থুথু দিত তবে কি সে সাত দিন সেই লজ্জা বয়ে বেড়াত না? সাত দিন তাকে ছাউনির বাইরে বন্ধ করে রাখ, তারপর তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে।’’ (শুমারী/গণনা ১২/১৪)
সমালোচকরা ঈশ্বরের এ উদাহরণকে অশোভন বলে উল্লেখ করেন। পিতা তার কন্যার মুখে থুথু দেবেন? এটা কি কোনো শোভনীয় ও শিক্ষণীয় কর্ম? এ উদাহরণ দ্বারা কি ঈশ্বর আমাদেরকে এবং আমাদের শিশু কিশোরদেরকে এ কর্মে উদ্বুদ্ধ করছেন? এ কর্মের বৈধতা দিচ্ছেন? ঈশ্বর কি মরিয়মের অপরাধ বুঝাতে এর চেয়ে শোভনীয় কোনো ধার্মিক কর্ম উল্লেখ করতে পারতেন না?
বাইবেলে নারী ও পুরুষের যৌন অঙ্গসমূহের উল্লেখ ব্যাপক। বর্তমানে বাইবেল অনুবাদকরাও এগুলোকে অশালীন বলে গণ্য করে অনুবাদ থেকে তা বাদ দিচ্ছেন। যেমন: ‘‘তারা সিন্দুকটি সেখানে নিয়ে গেলে পর মাবুদ সেই শহরের বিরুদ্ধে হাত উঠালেন।... তিনি শহরের ছোট-বড় সব লোককে আঘাত করলেন, আর তাতে সকলের ‘গোপন অঙ্গে’ সেই টিউমার রোগ হল (they had emerods in their secret parts)। (১ শামুয়েল ৫/৯)। উল্লেখ্য যে, ‘গোপন অঙ্গ’ কথাটুকু বাংলা অনুবাদে নেই। তবে ইংরেজিতে বিদ্যমান। বাইবেল সমালোচকরা বলেন যে, বাইবেলের ঈশ্বর শত্রুদের আক্রমণের ক্ষেত্রেও ‘গোপন অঙ্গ’ পছন্দ করেন।
নারীদের গুপ্তাঙ্গ অনাবৃত করা, স্তন ছেড়া, ধর্ষণ করা ইত্যাদি শব্দ বাইবেলে বারংবার ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর অশোভনীয়তার কারণে কোনো কোনো আধুনিক সংস্করণ বা অনুবাদে এগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে বা অর্থ পরিবর্তন করা হচ্ছে।
যেমন, যিশাইয় ৩/১৭ ‘‘KJV:Therefore the Lord will smite with a scab the crown of the head of the daughters of Zion, and the Lord will discover their secret parts. RSV: the Lord will lay bare their secret parts: অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মাথায় ঘা দিয়ে আঘাত করে টাক পড়াবেন এবং সদাপ্রভু তাদের গুপ্তাঙ্গ অনাবৃত করবেন।’’ কেরির অনুবাদ: ‘‘অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মস্তক টাকপড়া করিবেন, ও সদাপ্রভু তাহাদের গুহ্য স্থান অনাবৃত করিবেন।’’
বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-০৬: ‘‘সেইজন্য সদাপ্রভু/ মাবুদ সিয়োনের স্ত্রীলোকদের মাথা ঘা হতে দেবেন আর তাতে টাক পড়াবেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-১৩: ‘‘‘‘অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাদের মাথা কেশহীন করবেন ও মাবুদ তাদের মাথায় টাক পড়াবেন।’’ জুবিলী বাইবেলও শেষ বাক্যটি বাদ দিয়েছে।
যিশাইয় ১৩/১৬: “Their children also shall be dashed to pieces before their eyes; their houses shall be despoiled and their wives ravished/raped.” কেরি: ‘‘তাহাদের চক্ষুর সামনে তাহাদের শিশুগণকে আছড়ান যাইবে, তাহাদের গৃহ লুণ্ঠিত হইবে এবং তাহাদের স্ত্রীগণ বলাৎকৃত হইবে।’’ কি. মো.-০৬: ‘‘স্ত্রীদের ধষর্ণ করা হবে।’’ জুবিলী বাইবেল: ‘‘তাদের বধুরা অসম্মানের বস্ত্ত হবে।’’
বাহ্যত মূল ‘ravish/rape’ অর্থাৎ ধর্ষণ শব্দটার মধ্যে যে অশোভনতা বিদ্যমান তা সহজ করতেই ‘অসম্মান’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বর ‘ধর্ষণ’ (ravish/rape) শব্দের বদলে ‘অসম্মান’ (dishonoured) শব্দ ব্যবহার করলেন না কেন? পবিত্র পুস্তকের শোভনীয়তা ও সর্বজনীনতার জন্য সেটাই কি প্রত্যাশিত ছিল না? অথবা আরো কোনো সুন্দর ভাষায় কি এ অর্থ প্রকাশ করা যেত না?
ঈশ্বরের অবাধ্যতার বর্ণনায় বাইবেল রূপকার্থে নারী-পুরুষের দৈহিক সম্পর্ক, গুপ্তাঙ্গ ও ব্যভিচারের সময় নারীপুরুষের কর্মকাণ্ডর খোলামেলা আলোচনা করেছে, যা অনেকটা অশ্লীল চলচ্চিত্রের মতই। উল্লেখ্য যে, মূল হিব্রু বা গ্রিকের অশ্লীলতার ভয়াবহতা ইংরেজি অনুবাদে যেমন সুস্পষ্ট বাংলা অনুবাদে তেমন নয়। শব্দ পরিবর্তন বা বিয়োজনের মাধ্যমে অর্থ অস্পষ্ট করা হয়েছে। তারপরও কয়েকটা নমুনা দেখুন:
‘‘তুমি বৃদ্ধি পাইয়া বড় হইয়া উঠিলে, পরম শোভা প্রাপ্ত হইলে, তোমার স্তনযুগল পীন ও কেশ দীর্ঘ হইল; কিন্তু তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে।’’ কেরি। মো.-০৬: ‘‘তুমি বেড়ে উঠে কিশোরী হলে, তোমার বুক গড়ে উঠল, লোম গজাল, কিন্তু তুমি উলংগিনী ও কাপড় ছাড়াই ছিলে।’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ১৬/৭)
‘‘যখন তুমি ছিলে উলংগিনী এবং খালি গায়ে নিজের রক্তের মধ্যে ছটফট করছিলে। ... জেনার কাজে তুমি তোমার লজ্জাস্থান খুলে দিয়ে তোমার প্রেমিকদের কাছে তোমার উলংগতা প্রকাশ করেছ... তাদের সামনেই তোমার সব কাপড় খুলে ফেলব যাতে তারা তোমার উলংগতা দেখতে পায়... তোমাকে একেবারে উলংগ করে রেখে যাবে।’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ১৬/২২, ৩৬, ৩৭, ৩৯)
‘‘তুমি যে দশটা শিং দেখেছ সেগুলো আর সেই জন্তুটা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করবে। তারা তাকে ধ্বংস ও উলংগ করবে এবং তার মাংস খাবে; তারপর তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে।’’ (প্রকাশিত কালাম/ ১৭/১৬)
মুখ পর্যন্ত কাপড় তুলে পুরো দেহ উলঙ্গ করে প্রদর্শনী করানোর বর্ণনা দেখুন: ‘‘আমি তোমার বিরুদ্ধে; আমি মুখ পর্যন্ত তোমার কাপড় উঠাব। তোমার উলঙ্গতা আমি জাতিদেরকে দেখাব আর রাজ্যগুলোকে দেখাব তোমার লজ্জা।’’ (নাহূম ৩/৫)
পাঠক উপরের দৃশ্যগুলো কল্পনা জগতে এঁকে দেখতে থাকুন! মুখ পর্যন্ত কাপড় তুলে একজন মহিলাকে উলঙ্গ করে প্রদর্শনী করা হচ্ছে! পীনোন্নত নগ্ন স্তন ও দীর্ঘ কেশ নিয়ে উলঙ্গ ঘুরে বেড়ানো কিশোরী!.... একজন বেশ্যাকে মেরে মাংস খাওয়ার আগে তাকে উলঙ্গ করা হচ্ছে! পাপী নারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে উলঙ্গ করা কি এতই জরুরি? উলঙ্গ না করে মাংস খেলে বা আগুনে পুড়ালে কি শাস্তি হতো না?
উল্লেখ্য যে, এভাবে শাব্দিক বা রূপক অর্থে ব্যভিচার, ব্যভিচারিণী, বেশ্যা, বেশ্যাগিরি, স্তন, উলঙ্গ হওয়া, ধর্ষণ, বিষ্ঠা, মল, মূত্র ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার বাইবেলের মধ্যে ব্যাপক। পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলো ইংরেজি ও বাংলা মিলিয়ে দেখতে পারেন: বিলাপ/ মাতম ৪/২১; যিহিস্কেল ১৬/২৮; ২৩/৩৪; হোশেয় ১/২; ২/২; ২/৩; ৪/১২; ৬/১০; ৯/১; ১৩/১৬; অমোষ ২/১৬; মিখা ১/৮; ৩/২-৩; নাহূম ৩/৫; হাবাক্কুক ২/১৫; মালাখি ২/৩; মার্ক ১৪/৫১-৫২...।
এ জাতীয় বাক্য ও শব্দ যদি কোনো সাহিত্য, কাব্য বা অন্য কোনো ধর্মের গ্রন্থে থাকে তবে যে কোনো ধার্মিক খ্রিষ্টান তাতে আপত্তি করবেন, অপছন্দ করবেন এবং নিজের সন্তান বা প্রিয়জনদেরকে তা পড়তে দিতে চাইবেন না। কিন্তু বাইবেলের ক্ষেত্রে তিনি কী বলবেন?
বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা অশোভনীয় বলে গণ্য। যেমন পায়খানা-প্রস্রাব খাওয়া... ইত্যাদি: ‘‘ঐ যে লোকেরা তোমাদের সঙ্গে নিজ নিজ বিষ্ঠা খেতে ও মূত্র পান করতে প্রাচীরের উপরে বসে আছে (মো.-০৬: যাদের আপনাদেরই মত নিজের নিজের পায়খানা ও প্রস্রা্ব খেতে হবে), ওদেরই কাছে কি তিনি পাঠাননি?’’ (২ বাদশাহনামা ১৮/২৭, মো.-১৩। পুনশ্চ: যিশাইয় ৩৬/১২।)
বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি খ্রিষ্টান প্রচারকদের প্রশ্ন করে বলেন:
“Don’t you want your child to learn all that the Holy and beautiful Bible has to teach?” ‘‘আপনি কি চান না যে, পবিত্র ও সুন্দর বাইবেল যা কিছু শিক্ষা দিচ্ছে আপনার শিশু তা সবই শিক্ষা করুক?’’[1]
পুরুষ বুঝাতে বাইবেলের একটা পরিচিত পরিভাষা: (that pisseth against the wall/ who urinates on a wall) ‘যে দেয়ালে হিস্যু করে’ বা ‘দেয়ালের উপর পেশাব করে’। মূল হিব্রু ভাষার অনুসরণে কিং জেমস ভার্শনে ‘দেয়ালে হিস্যু/ পেশাব করে’ লেখা হয়েছে। তবে আধুনিক অনেক সংস্করণে এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদে এ অশালীনতা গোপন করার জন্য অধিকতর শোভন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
১ শমূয়েল ২৫/২২ কিং জেমস ভার্শনে নিম্নরূপ: ‘‘So and more also do God unto the enemies of David, if I leave of all that pertain to him by the morning light any that pisseth against the wall: ‘‘যদি আমি তাদের সাথে সম্পর্কিত দেয়ালে পেশাব করা একজনকেও রাত্রি প্রভাত পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখি তবে ঈশ্বর দাউদের শত্রুদের প্রতি অমুক ও ততোধিক দ- দিন।’’ তবে বাংলা অনুবাদগুলোতে এখানে ‘দেয়ালে পেশাব করে’ বাক্যাংশটার পরিবর্তে ‘পুরুষ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলো কিং জেমস ভার্শনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন: ১ শমূয়েল ২৫/৩৪; ১ রাজাবলি ১৪/১০; ১৬/১০-১১; ২১/২১; ২ রাজাবলি ৯/৮ ...। বিভিন্ন সংস্করণ ও অনুবাদে মূল শব্দগুলোর পরিবর্তে শালীন শব্দ ব্যবহার করা থেকে প্রমাণ হয় যে, বাইবেল প্রচারকরাও বাইবেলীয় এ ভাষা অশালীন বলে গণ্য করেন।
ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হলে মানুষের উপর বিষ্ঠা বা মল ঢেলে দেবেন বলে জানিয়েছেন: মালাখি ২/৩-এ ঈশ্বর বলছেন: “Behold, I will corrupt your seed, and spread dung upon your faces, even the dung of your solemn feasts; and one shall take you away with it”: ‘‘আমি তোমাদের সন্তানদেরকে দূষিত-বিনষ্ট করব, তোমাদের মুখের উপর মল ঢেলে দেব, তোমাদের পবিত্র উৎসবের মল এবং মলসহই মানুষেরা তোমাদের দূরে নিয়ে যাবে।’’ কেরি: ‘‘দেখ, আমি তোমাদের জন্য বীজকে ভৎর্সনা করিব, ও তোমাদের মুখে বিষ্ঠা অর্থাৎ তোমাদের উৎসব সকলের বিষ্ঠা ছড়াইব, এবং লোকেরা তাহার সহিত তোমাদিগকে লইয়া যাইবে।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-০৬: ‘‘তোমাদের দরুনই আমি তোমাদের বংশধরদের শাস্তি দেব; তোমাদের ঈদের কোরবানীর পশুর ময়লা আমি তোমাদের মুখে মাখিয়ে দেব এবং সেই ময়লা সুদ্ধই তোমাদের দূর করে দেওয়া হবে।’’ আরো দেখুন নাহূম ৩/৬।
বাইবেলে অনেক স্থানে পাপ থেকে সতর্ক করতে পাপের এমন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যা বাহ্যত অশোভন। যেমন ব্যভিচার থেকে সতর্ক করতে উলঙ্গতা ও স্তনযুগলের বর্ণনা: ‘‘তোমরা বিবাদ কর, তোমাদের মাতার সহিত বিবাদ কর, কেননা সে আমার স্ত্রী নয়, এবং আমিও তাহার স্বামী নই; সে আপনার দৃষ্টি হইতে আপন বেশ্যাচার, এবং আপনার স্তনযুগলের মধ্য হইতে আপন ব্যভিচার দূর করুক। নতুবা আমি তাহাকে বিবস্ত্রা করিব, সে জন্মদিনে যেমন ছিল, তেমনি করিয়া রাখিব।’’ মো.-০৬: ‘‘তোমাদের মাকে বকুনি দাও, বকুনি দাও তাকে, কারণ সে আমার স্ত্রী নয় এবং আমিও তার স্বামী নই। সে তার চোখের চাহনি থেকে বেশ্যাগিরি ও তার বুক থেকে জেনা দূর করুক। তা না হলে আমি তাকে উলংগ করে দেব এবং সে তার জন্মের দিনে যেমন উলংগ ছিল তেমনি করব।’’ (হোসিয়া ২/২-৩)
বিভিন্ন প্রসঙ্গে নগ্নতা, উলঙ্গতা বা নগ্ন নারীদেহের বর্ণনা বা্ইবেলে ব্যাপক।
খারাপ মেয়েদের থেকে দূরে থাকার উপদেশ দিয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘যুবকদের মধ্যে আমি এমন একজন যুবককে লক্ষ্য করলাম যার বুদ্ধির অভাব ছিল। সে সেই স্ত্রীলোকের বাড়ীর কাছের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তারপর সে তার বাড়ীর দিকের গলিতে গিয়ে ঢুকল; তখন দিনের আলো যাবার পর সন্ধ্যা হয়ে রাতের গভীর অন্ধকার নেমে এসেছিল। সেই সময় একজন স্ত্রীলোক তার সাথে দেখা করতে বের হয়ে আসল; তার পরনে বেশ্যার পোশাক, আর তার অন্তর ছিল বেদনায় ভরা। সে বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোক, জোরে জোরে কথা বলে, তার পা কখনও ঘরে থাকে না; কখনও রাস্তায়, কখন বাজারে, প্রত্যেকটি মোড়ে সে ওৎ পেতে থাকে। সে সেই যুবককে ধরে চুমু দিল আর বেহায়া মুখে বলল, ‘আমার ঘরে যোগাযোগ-কোরবানীর মাংস আছে, আজকেই আমি মানত পূরণ করেছি। তাই আমি তোমার সংগে দেখা করবার জন্য বের হয়ে এসেছি; আমি তোমার তালাশ করে তোমাকে পেয়েছি। মিসর দেশের বিভিন্ন রংয়ের কাপড়ের তৈরী চাদর দিয়ে আমি বিছানা ঢেকেছি; গন্ধরস, অগুরু আর দারচিনি দিয়ে আমার বিছানা সুগন্ধযুক্ত করেছি। এস, আমরা সকাল পর্যন্ত দেহ-ভোগে মেতে থাকি (কেরি: কামরসে মত্ত থাকি), গভীর ভালবাসার মধ্যে আনন্দ ভোগ করি। আমার স্বামী বাড়ীতে নেই, তিনি দূরে যাত্রা করেছেন; তিনি থলে ভরে টাকা নিয়েছেন, পূর্ণিমার আগে ঘরে ফিরবেন না।’’ (মেসাল/ হিতোপদেশ ৭/৭-২০)