আল-কুলাইনী ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী।”[1]
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“নিশ্চয় আবূ বকর এবং ওমর উভয় হলেন: ফেরাউন ও হামান।”[2]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“ ‘তাকরীবুল মা‘আরেফ’ (تقريب المعارف) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলী ইবন হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে তার মাওলা (মুক্ত দাস) বলল: আপনার উপর আমার খেদমতের হক রয়েছে; সুতরাং আপনি আমাকে আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে সংবাদ দিন? তখন আলী ইবন হোসাইন বলল: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, সেও কাফির।”[3]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আবূ হামযা আত-সামালী বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম যাইনুল আবেদীনকে আবূ বকর ও ওমরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন? তখন তিনি বললেন: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর আর যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সেও কাফির। আর এই অধ্যায়ে বিভিন্ন গ্রন্থে বহু হাদিস রয়েছে; তার অধিকাংশই ‘বিহারুল আনওয়ার’ (بحار الأنوار) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।”[4]
আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আর তাকে মুফাদ্দাল জিজ্ঞাসা করল, এই আয়াতে কারীমার মধ্যে ফির‘আউন ও হামান বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? তখন তিনি জবাব দিলেন, তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হল: আবূ বকর ও ওমর।”[5] (নাউযুবিল্লাহ)।
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, আরবিতে (বাংলায়) যার অর্থ হল:
“সালমান (ফারসী) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর চারজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর রাসূলের পরে মানুষ হয়ে গেল হারুন ও তার অনুসারীদের মত এবং গো বৎস ও তার পূজারীদের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং আলী হল হারুনের পদমর্যাদায়, আর আবূ বকর হল গরুর বাছুরের মর্যদার এবং ওমর হল সামেরীর পদমর্যাদার।”
আর ‘মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল’ (معرفة أخبار الرجال), (রিজালু কাশি)-এর গ্রন্থকার কাশি উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: তিন ব্যক্তি ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর সে তিন ব্যক্তি হলেন: সালমান, আবূ যর ও মিকদাদ; তিনি বলেন, আমি বললাম: অতঃপর ‘আম্মার? তখন তিনি বলেন: সে অহংকার প্রদর্শন করেছিল, অতঃপর সে ফিরে এসেছে। অতঃপর তিনি বলেন: আমি যদি এমন কোন একজনকে চাই, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় অনুপ্রবেশ করেনি, তিনি হলেন মিকদাদ; আর সালমানের ব্যাপারটি হল, তার হৃদয়ে বাধাদানকারী বাধা প্রদান করেছে ...। আর আবূ যরের বিষয়টি হল, তাকে আমীরুল মুমিনীন চুপ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে তাকে কোন নিন্দুকের নিন্দা স্পর্শ করতে পারে না; ফলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।”[6]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী। অতঃপর জনগণ কিছুদিন পরেই জানতে পারল এবং সে বলল, তারা (তিনজন) ঐসব ব্যক্তি, যাদের উপর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার চলেছে, অথচ তারা আবূ বকরের নিকট আনুগত্যের শপথ বাক্য পাঠ করতে অস্বীকার করেন।”[7]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“কুমাইত বলল, হে আমার নেতা! আমি আপনাকে একটি মাস’আলা জিজ্ঞাসা করব; অতঃপর তিনি বললেন: জিজ্ঞাসা কর, তখন সে বলল, আমি আপনাকে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি; তখন তিনি বললেন, হে কুমাইত ইবন যায়েদ! ইসলামের মধ্যে যত রক্তপাত, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং অবৈধভাবে যৌনকাম চরিতার্থ করার দায়ভার রয়েছে তা তাদের (দুই ব্যক্তির) ঘাড়ে বর্তাবে ঐ দিন পর্যন্ত, যেদিন আমাদের ইমাম (মাহদী) দাঁড়াবে; আর আমরা বনু হাশিমের জনসমষ্টি আমাদের বড় ও ছোটদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি তাদেরকে গালি দিতে এবং তাদের থেকে মুক্তি ঘোষণা করতে।”[8]
কাশি আরও বর্ণনা করেন:
“ওরদ ইবন যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ জাফর আ.কে উদ্দেশ্য করে বলেছি: আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, কুমাইতের পা দেখা যাচ্ছে (সে এসেছে)। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট প্রবেশ করাও; অতঃপর কুমাইত তাকে শায়খাইন তথা আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল; জওয়াবে আবূ জাফর আ. তাকে বললেন: রক্তপাত করা এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আলী আ.-এর বিধানের পরিপন্থী রায় পেশ করার দায়ভার তাদের উভয়ের ঘাড়ের উপর বর্তাবে; তখন কুমাইত বলল: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান), আমার জন্য যথেষ্ট, আমার জন্য যথেষ্ট।”[9]
আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যতীত মুনাফিক হতে কেউ বাকি নেই।”[10]
আল-কুমী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
﴿أَلۡقَى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِيٓ أُمۡنِيَّتِهِۦ﴾ [الحج: ٥٢]
“শয়তান তার কথা-বার্তায় বাতিল ঢেলে দিয়েছে; অর্থাৎ- আবূ বকর ও ওমরের চিন্তাধারায়।”[11]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতু লি মা‘আনিল কুরআন’ (ترجمة لمعاني القرآن)-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“"الفحشاء (অশ্লীলতা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; "المنكر" (মন্দ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং "البغي" (বিদ্রোহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।”[12]
মকবুল আহমদ উর্দু ভাষায় আরও বলেন, যার অনুবাদ হল:
“ "الكفر"(অস্বীকার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রথম নেতা আবূ বকর; "الفسوق" (পাপাচার) দ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বিতীয় শাইখ ওমর এবং "العصيان" (অমান্য করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তৃতীয় পর্দা ওসমান।”[13]
মকবুল আহমদ তার ‘তরজমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:
“মোটকথা, এই বিষয়টি নতুন নয়; বরং তোমার পূর্বে আল্লাহ যত নবী, রাসূল ও মুহাদ্দিস প্রেরণ করেছেন, শয়তান তার কামনা-বাসনায় তার ইচ্ছানুযায়ী বাতিল চিন্তাধারা ঢেলে দিয়েছে, যেমনিভাবে সেখানে শয়তান তার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দুইজনকে পাঠিয়েছে; আর তারা হল: আবূ বকর ও ওমর।”[14]
হে মানব মণ্ডলী! তোমরা এই নোংরা বর্ণনাসমূহের ব্যাপারের চিন্তা-ভাবনা কর, যেগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ কর্তৃক আল-কুরআনুল কারীমের অর্থসমূহ বিকৃতিকরণের সংবাদ (ম্যাসেজ) দিচ্ছে; আরও সংবাদ দিচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে আল-কুরআনের মনগড়া তাফসীর প্রসঙ্গে, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন কিছু নাযিল করেননি; আরও জানিয়ে দিচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় বড় সাহাবীদের উপর তাদের দেয়া মিথ্যা অপবাদ সম্পর্কে, যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সঠিক পন্থায় তা‘লীম (শিক্ষা) ও তারবিয়ত (প্রশিক্ষণ) দিয়েছেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেছেন। আর আল-কুরআন তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সনদ (certificate) দিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট; আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে তাঁর কুরআনে বলেন:
﴿وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗا﴾ [التوبة: 100]
“এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে।”— (সূরা আত-তাওবা: ১০০)
তিনি আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ ...﴾ [سورة الأنفال: 4]
“তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা; ... ”— (সূরা আল-আনফাল: ৪)
আর তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَلۡزَمَهُمۡ كَلِمَةَ ٱلتَّقۡوَىٰ وَكَانُوٓاْ أَحَقَّ بِهَا وَأَهۡلَهَا﴾ [سورة الفتح: 26]
“আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন এবং তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত”— (সূরা আল-ফাতহ: ২৬)
তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَ﴾ [سورة الحجرات: 7]
“কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন; আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়।”— (সূরা আল-হুজুরাত: ৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ﴾ [سورة النساء: 95]
“আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”— (সূরা আন-নিসা: ৯৫)
এগুলো ছাড়া আরও বহু আয়াতে তাদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রু আবদুল্লাহ ইবন সাবা ইহুদী ও তার অনুসারী বিপথগামী শিয়াগণ ভ্রান্ত আকিদাসমূহ প্রচার করেছে এবং তাদের ইমামদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনাসমূহ তৈরি করেছে। আর নিজেদের পক্ষ থেকে মনগড়া মত আল্লাহর কালামের তাফসীরসমূহ উদ্ভাবন করেছে; আর প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর মিথ্যারোপ করা এবং ইসলাম ও মুসলিমের শত্রুতা করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ছিলেন আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের বাস্তব সাক্ষী। সুতরাং প্রকৃত অর্থে ঐসব বাস্তব সাক্ষীদের কুৎসা রটনা করা মানেই আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের মন্দ সমালোচনা করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একান্ত অনুগ্রহ দিয়ে আমাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে যাবতীয় ফিতনা ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন, আমীন!
[2] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬৭
[3] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৫২২
[4] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৫৩৩
[5] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৯৩
[6] মুহাম্মদ ইবন ওমর আল-কাশী, মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), পৃ. ৬ (রিজালু কাশী/ رجال كشي)
[7] মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), (রিজালু কাশী/ رجال كشي), পৃ. ৪
[8] মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), (রিজালু কাশী/ رجال كشي), পৃ. ১৩৫
[9] মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), (রিজালু কাশী/ رجال كشي), পৃ. ১৩৫
[10] আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী (تفسير القمي)
[11] আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী, তাফসীরুল কুমী (تفسير القمي), পৃ.২৫৯।
নাউযুবিল্লাহ, দেখুন কিভাবে কুরআনের আয়াতকে তারা অপব্যাখ্যা করে ইসলামের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের অসম্মান করার চেষ্টা করে। এ আয়াতের সাথে আবু বকর ও উমরের ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। [সম্পাদক]
[12] তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৫৫১; তাফসীরুল কুমী (تفسير القمي), পৃ. ২১৮।
[13] তরজমাতু মকবুল, পৃ. ১০২৭; তাফসীরুল কুমী (تفسير القمي), পৃ. ৩২২।
[14] তরজমাতু মকবুল, পৃ. ৬৭৪
শিয়া মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতাগণ প্রমাণ সাব্যস্ত করেছে যে, তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত নিষ্পাপ এবং তারা নবীদের সকলের চেয়ে উত্তম। আর তাদের আনুগত্য করা এবং তাদের ইমামত তথা নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখা বাধ্যতামূলক; যেমনিভাবে বাধ্যতামূলক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর আনুগত্য করা। আর তারা তাদের ইমামদের জন্য এমন সব গুণাবলী ও মর্যাদার কথা বলে, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও জন্য সাব্যস্ত হতে পারে না। সুতরাং তারা তাদের ইমামদের জন্য দাবি করে যে, যা হয়েছে এবং যা হবে, তারা সেই জ্ঞান রাখে। আর তারা তাদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কেও জানে, এমনকি তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করে।[1] আর ফযিলতের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা হলেন জাতির সাহসী সন্তান ইত্যাদি ইত্যাদি।
একদিকে তারা তাদের (ইমামদের) জন্য এই ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব, অলৌকিক ঘটনা ও কল্পকাহিনী থেকে যা সাব্যস্ত করেছে, এ সব এমন ধরণের কল্পকাহিনী যে তা নিজের জন্য সাব্যস্ত করা বা নিজের প্রতি সম্পৃক্ত করা থেকে যে কোন সাধারণ মানুষও নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করে এবং তা সাব্যস্ত করতে লজ্জাবোধ করে; কারণ তাতে রয়েছে সীমাহীন লজ্জা ও অবমাননা। অপরদিকে তারা তাদের জন্য স্থির করেছে যে, তারা মুনাফিক ও কাপুরুষ ছিল এবং তারা মিথ্যা বলে ইত্যাদি।
আমরা তাদের মাযহাবের নির্ভরযোগ্য প্রধান গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের বর্ণনা ও বক্তব্যসমূহ থেকে অংশবিশেষ আপনার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। অতএব তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ব্যাপারে লিখেছে: “ইমাম জাফর সাদিক বলেছেন: সেই প্রথম (গুপ্তাঙ্গ), যা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।”[2]
আমরা সাইয়্যেদা (উম্মে কুলসুম), তাঁর পিতা আলী এবং তাঁর ভাই হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের ব্যাপারে তাদের এই নির্লজ্জ মন্তব্য থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।
মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক শিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একজন এই বর্ণনাটির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন:
“অভিশপ্ত মুনাফিক ওমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল নিরুপায় হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতি বা নীতির অনুসরণে।”
দেখুন, কোন প্রশ্নকারী কি এই প্রশ্নটা করতে পারে না যে, তখন আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) আল-গালিব সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বীরত্ব ও ব্যক্তিত্ব কোথায় ছিল? অনুরূপভাবে তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বীরত্ব ও ব্যক্তিত্বই বা কোথায় ছিল?
আর যাইনুল আবেদীন ইয়াযীদকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
“তুমি যে চেয়েছ, আমি তা স্বীকার করে নিচ্ছি; আর আমি হলাম তোমার অপছন্দের গোলাম। সুতরাং তুমি চাইলে আমাকে আটকিয়ে রাখতে পার; আবার চাইলে বিক্রিও করে দিতে পার।”[3]
কিভাবে শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী নিষ্পাপ ইমাম নিজেকে ইয়াযীদের গোলাম বলে স্বীকৃতি দেবে এবং তা কি করে হয়?
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু আবি ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’[4]-এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নাবীয ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।”[5]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[6]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মা‘মার ইবন খাল্লাদ থেকে বর্ণিত, আমি আবূল হাসান আ.-কে ওলীদের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম; আবূ জাফর আ. বললেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[7]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে সুলায়মান! তোমরা এমন ব্যক্তির দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যিনি তা গোপন করে রেখেছেন; আল্লাহ তাকে সম্মান দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।”[8]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা মুহাম্মদ বাকের আ.-কে এক মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন: আগামীকাল তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন আমি তোমাকে কিতাব পড়ে শুনাব; অতঃপর আমি পরের দিন যোহরের পর তার নিকট এসে উপস্থিত হলাম। আর আমার যে সময়টিতে আমি তাঁর সাথে নির্জনে কাটাতাম সে সময়টি ছিল যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়। আর আমি নির্জনে ব্যতীত তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতে অপছন্দ করতাম এই আশঙ্কায় যে, তার নিকট উপস্থিত ব্যক্তির কারণে তিনি আমাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ফতোয়া দেবেন।”[9]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বনী উমাইয়াদের যুগে ফতোয়া দিতেন যে, বাজপাখি ও ঈগল পাখি অন্যান্য শিকারী পাখি দ্বারা যা হত্যা করা হয় তা খাওয়া বৈধ (হালাল), কিন্তু তিনি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ করতেন। আর আমি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ না করেই বলতাম, সেগুলোর দ্বারা হত্যা করা বস্তু হারাম (অবৈধ)।”[10]
তিনি বর্ণনা আরও করেন:
“যখন তিনি (ইমাম) মারা গেলেন এবং তা (নেতৃত্ব বা শাসনক্ষমতা) মুহাম্মদ ইবন আলী আ.-এর নিকট স্থানান্তর হল, তখন পঞ্চম মোহর খুললেন এবং তিনি তাতে যা পেলেন, তা হচ্ছে: তুমি আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যা (তাফসীর) কর ... এবং ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সর্বাবস্থায় সত্য কথা বল; আর আল্লাহকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করো না। অতঃপর সে তাই করল।”[11]
অর্থাৎ- তার পূর্ববর্তী ইমামগণ ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সত্য কথা বলতেন না এবং তারা জনগণকে ভয় করতেন (নাউযুবিল্লাহ)।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আমাকে জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট জনৈক ব্যক্তি আসল এবং তার নিকট সে একই প্রশ্ন করল; তখন তিনি আমাকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট (একই প্রশ্ন নিয়ে) অপর আরেক ব্যক্তি আসল; তিনি আমাকে ও আমার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর যখন উভয় ব্যক্তি বের হল, তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলের (বংশের) ছেলে! ইরাক থেকে আপনাদের দলীয় দুই লোক আগমন করে প্রশ্ন করলে আপনি তাদের প্রত্যেককে তার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছেন, অপর জনকে তার বিপরীত জওয়াব দিয়েছেন? অতঃপর তিনি বললেন: হে যুরারা! এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং আমাদের ও তোমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী।”[12]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“মূসা ইবন আসইয়াম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট ছিলাম; অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল, আর তিনি তার জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট আরও এক প্রবেশকারী এসে প্রবেশ করল; অতঃপর সে তাকে ঐ একই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল; অতঃপর তিনি তাকে প্রথম ব্যক্তির জবাবের বিপরীত জওয়াব দিলেন। আর সেই থেকে আমার মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এমন কিছু বিষয় প্রবেশ করল, এমনকি শেষ পর্যন্ত মনে হল আমার হৃদয়কে ছুরি দিয়ে উম্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। অতঃপর আমি মনে মনে বললাম: আমি আবূ কাতাদাকে শাম (সিরিয়া) দেশে রেখে এসেছি, তিনি ওয়াও (واو) এবং তার অনুরূপ কিছুর মধ্যেও ভুল করতেন না; আর আমি এর নিকট আসলাম, সে তো সবকিছুতেই ভুল করে। সুতরাং আমার অবস্থা যখন এই রকম, তখন অপর আরেক ব্যক্তি এসে তার নিকট প্রবেশ করল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল ঐ আয়াত সম্পর্কে ; অতঃপর তিনি আমাকে ও আমার সাথীকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত বা ভিন্ন উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি আমার মনের সান্ত্বনা পেলাম এবং জানতে পারলাম যে, এটা তার পক্ষ থেকে ‘তাকীয়া’ হিসেবে হয়েছে। সে বলল: অতঃপর তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বললেন: হে আশইয়ামের ছেলে! আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান ইবন দাঊদ আ.-কে ক্ষমতা প্রদান করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: এটা আমাদেরকে দেয়া উপহার। সুতরাং তুমি (এর মাধ্যমে) দয়া কর, অথবা বিরত থাক; এর জন্য তোমাকে হিসেব দিতে হবে না। আর তিনি (আল্লাহ) ক্ষমতা প্রদান করেছেন তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তিনি বলেন:
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [سورة الحشر: 7]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক।”— (সূরা আল-হাশর: ৭)
সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ক্ষমতা দান করেছেন, সেই একই ক্ষমতা তিনি আমাদের প্রতি অর্পণ করেছেন।”[13]
এটা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের মধ্যে শির্ক নয়, অথবা এই আকিদা বা বিশ্বাসের পরও (নাউযুবিল্লাহ) কি কোন মানুষ মুসলিম থাকতে পারে?
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“সালামা ইবন মিহরায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বললাম: জনৈক আরমানীয় ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমার নিকট অসিয়ত করল; তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আরমানীয় কী? আমি বললাম: পাহাড়ে বসবাসকারী অনারব লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমাকে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে অসিয়ত করল এমন অবস্থায় যে, সে তার এক কন্যা রেখে গিয়েছিল। তখন তিনি (আবূ আবদিল্লাহ আ) আমাকে বললেন, তাকে অর্ধেক দিয়ে দাও। তিনি (সালামা ইবন মিহরায) বলেন: আমি এই বিষয়টি যুরারাকে জানালাম; তখন তিনি আমাকে বললেন: সে তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছে, সম্পদ সবটুকুই তার। তিনি বললেন: পরবর্তীতে আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম: আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিক; আমাদের সাথীগণ ধারণা করেছে যে, আপনি আমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছেন। তখন তিনি বললেন: না, আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করি নি; বরং আমি ‘তাকীয়া’ করেছি তোমার প্রতি অর্পিত তোমার কর্তব্যকে। সুতরাং এই সম্পর্কে কেউ জানতে পেরেছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তাকে (তার কন্যাকে) বাকিটুকু দিয়ে দাও।”[14]
এই বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ইমামগণ একবার মাসআলা গোপন করতেন এবং আরেকবার তা পরিবর্তন করতেন। আর তাদের জওয়াবসমূহ এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির নিকট পরিবর্তন করে করে বলেন। আর মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে গোপন করাটাই হল তাদের দীনের সিংহভাগ; বরং তারা তাদের (ইমামদের) থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে যে, ‘যে ব্যক্তি দীন গোপন করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন; আর যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন। সুতরাং তাদের নিকট তাদের নিষ্পাপ ইমামদের অবস্থা যখন এই রকম, তখন আল্লাহর কসম! এসব ইমামদের উপর কিভাবে নির্ভর করা সম্ভব? তারা কি দীন বিকৃত ও গোপন করার ক্ষেত্রে ইহুদী আলেমদের মত নয়? আর এ সবই আহলে বাইতের ইমামদের ব্যাপারে শিয়াদের পক্ষ থেকে কুৎসা রটনা ও অবমাননা; আর তারা (আহলে বাইতের ইমামগণ) এসব ভ্রান্ত ও কুটিল বক্তব্যসমূহ থেকে মুক্ত।
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আমার নিকট হিশাম ইবন হেকাম ও হাম্মাদ যুরারা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি মনে মনে বলি, শাইখের বিতর্ক করার মত কোন জ্ঞান নেই (আর শাইখ দ্বারা উদ্দেশ্য হল তার ইমাম)।”[15]
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা খলিল আল-কাযবিনী ফারসি ভাষায় লিখেছেন, যার অর্থ হল: এই শাইখ অক্ষম, তার কোন জ্ঞান-বুদ্ধি নেই এবং বিতর্ককারীর সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারে না।
কাশি বর্ণনা করেন:
“যুরারা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ... আমি বললাম: التحيات و الصلوات ... অতঃপর আমি তাকে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন সে অনুরূপই বলল, সে বলল: التحيات و الصلوات; অতঃপর আমি যখন বের হলাম, তখন আমি তার দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করলাম এবং বললাম, সে কখনও সফলকাম হবে না।”[16]
এই আবূ আবদিল্লাহই হলেন ইমাম জাফর সাদিক, যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে শিয়াদের একটি গ্রুপ (দল) নিজেদেরকে জাফরী বলে পরিচয় দেয়। আর এই যুরারা হল শিয়াদের অন্যতম সর্দার বা নেতা। আর ইমামদের অধিকাংশ বর্ণনাই শিয়াগণ একই পদ্ধতিতে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহে যুরারা তার (বিশ্বাসমত) নিষ্পাপ ইমামের সাথে যে ব্যবহার করেছে, তা বড় ধরনের অপমান-অবমাননার শামিল। আর যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে কোন নগণ্য ব্যক্তি কাউকে তার চেহারা বা দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করাকে মেনে নেয় না, সেখানে কিভাবে জাফর সাদিক র.-এর মত সম্মানিত ইমামের চেহারা বা দাড়ির সামনে তা করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে?!!!
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ‘জালাউল ‘উয়ুন’ (جلاء العيون) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“আমার দাদা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন জাফর ইবন মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হোসাইন জন্ম গ্রহণ করবে, তখন তোমরা তার নাম রাখবে ‘সাদিক’। কারণ, তার পঞ্চম আওলাদ থেকে জাফর নামে যে ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, মিথ্যা ইমামতের দাবি করবে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে, সে হবে আল্লাহর নিকট জাফর আল-কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী জাফর)।”[17]এই বর্ণনাটিতে যাকে জাফর আল-কাযযাব বলা হচ্ছে সে আর কেউ নয়, তাদেরই ইমাম নকী’ -যিনি শিয়াদের নিকট স্বীকৃত নিষ্পাপ ইমামদের একজন- এই জাফর তাঁরই ছেলে এবং ইমাম হাসান আল-‘আসকারী’র সহোদর ভাই। যে হাসান আল-আসকারী শিয়াদের নিকট স্বীকৃত দ্বাদশ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। আর এই জাফর, তিনি তো আলী ও ফাতেমার বংশেরই সন্তান এবং হোসাইন ও যাইনুল আবেদীনের বংশের অন্যতম ব্যক্তি। সুতরাং কিভাবে তারা আহলে বাইতের প্রতি তাদের অসার ভালবাসার দাবি করে। নিশ্চয় তার বংশের এই ধারাটি হল ‘সোনালী ধারা’; কিন্তু ‘আলে বাইতের’ (নবী পরিবারের) মহব্বতকারী শিয়াগণ তাকে ‘জাফর আল-কাজ্জাব’ (মিথ্যাবাদী জাফর) উপাধিতে ভূষিত করে। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র (সুবহানাল্লাহ) ...!
>[2] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), দ্বিতীয় খণ্ড।
[3] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়।
[4] ‘তাকিয়া’ (التقية) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।
[5] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২। অর্থাৎ শিয়ারা নাবীয খাবে না ও মোজার উপর মসেহ করবে না, এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে তার ঘোষণা দিচ্ছে। এ দু’ ব্যাপারে তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আলাদা নীতি অবলম্বন করবে না। তন্মধ্যে নাবীয হচ্ছে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে সে পানি (মাদকতা আসার আগেই) খাওয়া, যা খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনায় বৈধতা এসেছে, অথচ তারা তা খাবে না। আর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে। যার অস্বীকারকারী কাফির হয়ে যাবে। অথচ তারা তাই অস্বীকার করছে। এজন্য আপনি দেখবেন, তারা মোজা খুলে খালি পায়ে মাসেহ করে অযু করে থাকে। একদিকে খালি পায়ে মাসেহ করার কারণে তাদের অযু শুদ্ধ হয় না। অপরদিকে মোজার উপর মাসেহ করা অস্বীকার করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে বিরোধিতা করে এবং মুতাওয়াতির হাদীসের উপর আমল করে না। শয়তান তাদেরকে এভাবে প্রতারিত করছে। [সম্পাদক]
[6] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৩
[7] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
[8] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
[9] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২
[10] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০
[11] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৭১
[12] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৩৭
[13] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৬৩
[14] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮
[15] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৫৫৭
[16] মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), পৃ. ১০৬
[17] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন (جلاء العيون), পৃ. ৩৪৮
শিয়াদের নিকট তাকীয়া (التقية)-র অর্থ হল: নির্ভেজাল মিথ্যা, অথবা সুস্পষ্ট মুনাফেকি (কপটতা); যেমনিভাবে তাদের বর্ণনাসমূহ থেকে তা পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট।
তাকীয়া (التقية) ও তার ফযিলতের ব্যাপারে শিয়াদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের আকিদা ও বিশ্বাস নিয়ে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ থেকে অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হল।
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“ইবনু ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ (التقية)-র মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।”[1]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[2]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[3]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ) (ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না)-প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ভাল (ٱلۡحَسَنَةُ) হচ্ছে ‘তাকীয়া’ (التقية) বা গোপন করা এবং মন্দ (ٱلسَّيِّئَةُ) হচ্ছে প্রচার করা। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ﴾ (মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা)- প্রসঙ্গে তিনি বলেন: উৎকৃষ্ট হল ‘তাকীয়া’ (التقية)।”[4]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“দরাসত আল-ওয়াসেতী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ব্যক্তির তাকীয়াই আসহাবে কাহাফের তাকীয়ার পর্যায়ে পৌঁছেনি; যদি তারা উৎবসমূহ প্রত্যক্ষ করত এবং পৈতা বাঁধত, তবে আল্লাহ তাদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিতেন।” উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থের ‘তাকীয়া’ (التقية) অধ্যায়ে এ বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে।
[2] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
[3] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৩
[4] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: প্রত্যেক প্রয়োজনের সময়েই ‘তাকীয়া’ রয়েছে; তার (প্রয়োজন) কখন হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই তা সম্পর্কে অধিক অবগত, যখন তার উপর সে প্রয়োজন এসে পড়ে।”[1]
তিনি আরও বর্ণনা করেন:
“মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম এমতাবস্থায় যে, তার নিকট আবূ হানিফা ছিলেন; অতঃপর আমি তাকে বললাম: আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছি; তখন তিনি আমাকে বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! তুমি তা বর্ণনা কর, তার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এখানে বসা আছেন এবং তিনি তার হাত দ্বারা আবূ হানিফার দিকে ইঙ্গিত করেন; অতঃপর আমি বললাম: আমি (স্বপ্নে) দেখেছি যে, আমার মনে হল আমি আমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম; তৎক্ষণাৎ আমার স্ত্রী আমার নিকট বের হয়ে আসল এবং অনেকগুলো আখরোট ভেঙ্গে তা আমার উপর চিটিয়ে দিল।
আর এই স্বপ্ন দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। অতঃপর আবূ হানিফা বললেন: তুমি এমন এক ব্যক্তি, যে তোমার স্ত্রীর উত্তরাধিকার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং প্রচণ্ড ঝগড়ার পর তার থেকে তোমার প্রয়োজন মিটে যাবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ আ. বললেন: আল্লাহর শপথ, হে আবূ হানিফা! আপনি সঠিক বলেছেন। অতঃপর আবূ হানিফা তার নিকট থেকে বের হয়ে গেল; তখন আমি তাকে বললাম: আমি আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এই নাসেবী[2] লোকের ব্যাখ্যাকে অপছন্দ করি। অতঃপর তিনি বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে ক্ষতির সম্মূখীন করবেন না; কারণ, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু হবে না। আর সে যে ব্যাখ্যা করেছে, প্রকৃত ব্যাখ্যা এই রকম নয়। অতঃপর আমি তাকে বললাম: আপনার কথা সঠিক এবং তার কথার বিপরীত; আর সে ভুল করেছে; তখন তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি তার নিকট শপথ করে বলেছি যে, সে ভুল করেছে।”[3]
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বলতেন: ‘তাকীয়া’র চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কি হতে পারে! নিশ্চয় তাকীয়া’ হল মুমিনের জান্নাত।[4]
আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলা হল: জনগণ আলী আ.-কে দেখেছে যে, তিনি কুফার মিম্বরে বসে বলেছিলেন: হে জনগণ! তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দাও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না। অতঃপর তিনি বললেন, মানুষ আলী আ.-এর ব্যাপারে খুব বেশি মিথ্যা বলে; তারপর তিনি বললেন: তিনি (আলী আ.) তো শুধু বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দিও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, অথচ নিশ্চতভাবে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তিনি বলেননি: তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না।”[5]
শিয়াদের নিকট ইমামগণ নিষ্পাপ; আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমতার অধিকারীও; তাদের মতে ছোট ও বড় প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক। তাদের মতে ‘তাকীয়া’র জন্য যখন এত সব গুণাবলী বিদ্যমান আছে; তখন তাদের প্রত্যেক কথা ও কাজের মধ্যে অচিরেই সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হবে যে, তাদের মধ্য থেকে তা প্রকাশ পেয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ ধরে; আর কোন সে ব্যক্তি যে নিশ্চিতরূপে ফয়সালা করবে যে, ইমামের উক্তিসমূহের মধ্যে এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ এবং এই কথাটি ছিল ‘তাকীয়া’ ব্যতীত? আর কিসে আমাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, সম্ভবত শিয়াদের গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান বক্তব্য ও বর্ণনাসমূহও বর্ণিত হয়েছে ‘তাকীয়া’র পথ অনুসরণে?অতএব যেহেতু তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজ তাকীয়া’র সম্ভাবনা রাখে, সেহেতু তাদের (কিতাবে বর্ণিত) প্রতিটি নির্দেশই কার্যকর না করাটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সুতরাং এর ফলে তাদের পক্ষ থেকে সংঘটিত সকল কথা ও কাজ ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনার কারণে বাদ পড়ে যাবে।
[2] শিয়ারা তাদের প্রতিপক্ষ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদেরকে নাসেবী বলে থাকে। এটা তাদের শত্রুতার প্রমাণ। [সম্পাদক]
[3] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১৩৮
[4] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
[5] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:
“সুলাইমান খালিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন, নিশ্চয় তোমরা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত; যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন এবং যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, তাকে আল্লাহ অপমানিত করবেন।”[1]
জেনে রাখুন, পূর্বে শিয়াদের যেসব আকিদা ও বর্ণনাসমূহ আলোচিত হয়েছে, তার সবকটিই আল-কুরআনের বক্তব্যের পরিপন্থী; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ﴾ [سورة المائدة: 67]
“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৬৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ﴾ [سورة التوبة: 33]
“অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন।”— (সূরা আত-তাওবা: ৩৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱتۡلُ مَآ أُوحِيَ إِلَيۡكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ﴾ [سورة الكهف: 27]
“তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব থেকে পাঠ করে শুনাও।”— (সূরা আল-কাহফ: ২৭)
তিনি আরও বলেন:
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٩٤ ﴾ [سورة الحجر: 94]
“অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেকে উপেক্ষা কর।”— (সূরা আল-হিজর: ৯৪)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱلۡيَوۡمَ يَئِسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَٱخۡشَوۡنِ﴾ [سورة المائدة: 3]
“আজ কাফিরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর।”— (সূরা আল-মায়িদা: ৩)
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [سورة التوبة: 119]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”— (সূরা আত-তাওবা: ১১৯)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ ﴾ [سورة البقرة: 159]
“নিশ্চয় আমি মানুষের জন্য যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন করে রাখে, আল্লাহ তাদেরকে ‘লানত’ (অভিশাপ) দেন এবং অভিশাপ দানকারীগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয়। ”— (সূরা আল-বাকারা: ১৫৯)
>ইসলামে ‘তাকীয়া’ শূকরের মাংস ভক্ষণ করার চেয়েও বেশি কঠোরতার সাথে নিষিদ্ধ। কারণ, কঠিন পরিস্থিতিতে নিরুপায় ব্যক্তির জন্য শূকরের মাংস ভক্ষণ করা বৈধ; আর তেমনিভাবে অনুরূপ কঠিন পরিস্থিতিতেই শুধু ‘তাকীয়া’ বৈধ হবে। কারণ, কোন মানুষ যদি নিরুপায় অবস্থায়ও শূকরের মাংস ভক্ষণ করা থেকে মুক্ত থাকে এবং মারা যায়, তবে সে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে। আর এটা ‘তাকীয়া’র বিপরীত। কারণ, যখন কোন মানুষ নিরুপায় অবস্থায় ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নেয় এবং মারা যায়, তবে আল্লাহর নিকট তার জন্য উচ্চ মর্যাদা ও সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং শূকরের মাংস ভক্ষণ করার অবকাশটি যেন শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু ‘তাকীয়া’র অবকাশটি শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয় না।
বরং যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের জন্য ‘তাকীয়া’র আশ্রয় না নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি তার এই মৃত্যুর কারণে শীঘ্রই মহাপ্রতিদানের অধিকারী হবে। আর এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক অবস্থায় তাকীয়ার চেয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্তই উত্তম। আর এই উম্মতের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুশরিকদের প্রদত্ত কষ্ট সহ্যকরণ, অনুরূপভাবে আবূ বকর সিদ্দীক ও বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের কষ্ট সহ্যকরণ; আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাতা সুমাইয়া ও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা প্রমুখের শাহাদাত ইত্যাদি ধরনের বীরত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের বহু বিরল ঘটনা ও কাহিনী এর উপর উত্তম দলিল যে, দৃঢ় সিদ্ধান্তই হল মূল বিষয়, অতি উত্তম ও সুন্দর।
ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।”[1]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে।”[2]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আমার নিকট আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে আগমন করল; আর ঐ উপহার ছিল মুমিন নারীদের ভোগ করা। আর এই উপহার আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আর কোন নবীকে দান করেননি ...। তোমরা জেনে রাখ, পূর্ববতী সকল নবীর উপর আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে বিশেষিত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জীবনে একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ... আর যখন মুত‘আ বিবাহিত নারী ও পুরুষ কোন জায়গায় একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর একজন ফেরেশতা নাযিল হবে এবং সে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পাহারা দেবে; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে, সে কথাবার্তাগুলো হবে যিকির ও তাসবীহ; আর তাদের একজন যখন অপর জনের হাত ধরবে, তখন তাদের উভয়ের আঙ্গুলসমূহ থেকে গুনাহসমূহ ফোটায় ফোটায় ঝরতে থাকবে; আর যখন তাদের একজন অপর জনকে চুম্বন করবে, তখন তাদের জন্য প্রত্যেক চুম্বনের বিনিময়ে হজ ও ওমরার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের সহবাসের সময় প্রত্যেক কামনা ও স্বাদের বিনিময়ে সুউচ্চ পর্বতসমূহ পরিমাণ পুণ্য লেখা হবে। আর যখন তারা গোসলে মশগুল থাকবে এবং পানি ফোটা ঝড়বে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পানির প্রত্যেক ফোটা দ্বারা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং তার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার সাওয়াব তাদের উভয়ের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।
হে আলী! যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) হালকা ও দুর্বল মনে করবে এবং তাকে অপছন্দ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত ...।
জিবরাইল আ. বলল: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে দিরহামটি মুমিন তার মুত‘আ বিয়েতে খরচ করবে, তা আল্লাহর নিকট মুতা‘ বিয়ের বাইরে এক হাজার দিরহাম ব্যয় করার চেয়ে উত্তম।
হে মুহাম্মদ! জান্নাতের মধ্যে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট এক দল হুর রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মুত‘আ বিয়ের অনুসারীদের জন্য।
হে মুহাম্মদ! যখন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তখন সে তার যে জায়গায়ই দাঁড়াবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং মুমিন নারীকেও ক্ষমা করে দেবেন ...।
আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুত‘আ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুত‘আ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ।”[3]
‘মুন্তাহাল আমাল’ (منتهى الأمال) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
“আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুত‘আ বিয়ে থেকে দূরে থাকে।”[4]
উর্দু ভাষায় লিখিত ‘উজালাতুন হাসানাহ্ (عجالة حسنة ) মুত‘আ বিয়ের ফযিলত সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করা হয়েছে; আর তা হল আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ (رسالة المتعة) নামক পুস্তিকার অনুবাদ। এখানে আমরা তার কিয়দংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি:
“আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।”[5]
“সাইয়্যেদুল ‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে।”[6]
“রহমাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল।”[7]
“সাইয়্যেদুল বাশার শাফে‘উল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুত‘আ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুত‘আ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুত‘আ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।”[8]
আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় একটি দীর্ঘ বর্ণনার উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের এই বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করবে, তার প্রতিদান কী হবে? জওয়াবে তিনি বললেন: সে উভয়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ মুত‘আ বিবাহকারী নারী ও পুরুষের মধ্যে চেষ্টা-সাধনাকারীর জন্য তাদের উভয়ের সমান প্রতিদান রয়েছে।”[9]
আবূ জাফর আল-কুমী ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’ (من لا يحضره الفقيه) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন; আর এটা শিয়াদের নিকট চারটি বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম, তাতে বলা হয়:
“মুমিন পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুত‘আ বিয়ে করবে।”[10]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আবূ জাফর আ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আকশ পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হল, তখন তিনি বলেন, জিবরাইল আমার সাথে মিলিত হল এবং বলল: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের মধ্য থেকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীদের ভোগকারীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”[11]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:
“আস-সাদিক আ. বলেন: আমি সেই পুরুষ ব্যক্তির মৃত্যুবরণকে অপছন্দ করি, যার স্বভাবের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবসমূহের মধ্য থেকে একটি স্বভাব বাকি রয়েছে এবং সে তা বাস্তবায়ন করেনি; অতঃপর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুত‘আ বিয়ে করেছেন? তিনি বললনে: হ্যাঁ।”[12]
আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:“আবদুল্লাহ ইবন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের শিয়াদের উপর মাতালকারী প্রত্যেক শরাব নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার বিনিময় স্বরূপ তাদেরকে মুত‘আ বিয়ের সুযোগ দিয়েছেন।”[13]
>[2] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬
[3] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬
[4] মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১
[5] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ (رسالة المتعة)-এর অনুবাদ ‘উজালাতুন হাসানা’ (عجالة حسنة), পৃ. ১৫
[6] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬
[7] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬
[8] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة ), পৃ. ১৬
[9] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬
[10] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০
[11] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০
[12] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০
[13] মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০; মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১
মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين) নামক তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখা উচিত, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত করার রুকন পাঁচটি: স্বামী, স্ত্রী, মোহর, সময় নির্ধারণ এবং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)।”[1]
আল-কাশানী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:
“জেনে রাখ, মুত‘আ বিয়ের মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যা সীমিত নয়; আর পুরুষের জন্য ব্যয়ভার বহন, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ও পোষাক-পরিচ্ছদ প্রদান করা আবশ্যক নয়। আর মুত‘আ বিবাহকারী স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হয় না। এসব জিনিস (বিষয়) স্হায়ী বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য হবে।”[2]
আবূ জাফর আত-তুসী বর্ণনা করেন:“আবূ আবদুল্লাহ আ.কে মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: না, এমনকি সত্তরের মধ্যেও সীমিত নয় ...। আবূ আবদুল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তার নিকট মুত‘আ বিয়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হল, তা কি চারের ভিতরেই সীমিত? জওয়াবে তিনি বলেন: তুমি তাদের (নারীদের) মধ্য থেকে এক হাজার জনকে বিয়ে করতে পার! কারণ, তারা ভাড়াটে ... সে তালাকও পাবে না এবং উত্তরাধিকারীও হবে না; সে শুধু ভাড়াটে।”[3]
>[2] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫২
[3] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব (التهذيب), ৩য় খণ্ড, ১৮৮
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব (التهذيب) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি চিত্তে যা নির্ধারিত হবে, তাই হবে মুত‘আ বিয়ের মোহর; কম হউক বা বেশি হউক ...। আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে বললাম, সর্বনিম্ন কী দিয়ে মুত‘আ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে? তখন তিনি বললেন: এক মুষ্টি গম।”[1]
আত-তুসী আত-তাহযীব (التهذيب) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“মুত‘আ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী রাখার ও ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই।”[1]
আত-তুসী আরও বর্ণনা করেন:
“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: শুধু মিরাস বা উত্তরাধিকারের কারণে বিবাহের মধ্যে দলিল-প্রমাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”[2]
আবূ জাফর আত-তুসী তার আত-তাহযীব (التهذيب) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
“আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে একটি কাঠির বিনিময়ে বিয়ে করে? জওয়াবে তিনি বললেন: কোন অসুবিধা নেই; কিন্তু যখন সে কাজ শেষ করে অবসর গ্রহণ করবে, তখন সে তার চেহারাকে পরিবর্তন করবে এবং তাকাবে না।”[3]
তিনি আত-তাহযীব (التهذيب) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
হাশেমী বংশের মহিলার সাথে মুত‘আ বিয়েতে কোন সমস্যা নেই।”[4]
আল-কুলাইনী তার ‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক মহিলা ওমরের নিকট আগমন করল, অতঃপর বলল, আমি ব্যভিচার করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন; অতঃপর তিনি (ওমর) তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ.কে এই ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিভাবে ব্যভিচার (যিনা) করেছ? তখন সে বলল: আমি মরুভূমিতে পথ অতিক্রম করেছি, অতঃপর আমাকে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় পেল, আমি এক বেদুইনের নিকট পানি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু সে আমাকে পানি পান করাতে অস্বীকার করল যতক্ষণ না আমি তাকে আমার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেই। অতঃপর পিপাসা যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলল এবং আমি আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কাবোধ করলাম, তখন সে আমাকে পানি পান করাল; আর আমিও আমার নিজের উপর তাকে ক্ষমতাবান করে দিলাম। এ কথা শুনে আমীরুল মুমিনীন আ. বললেন: কাবার মালিকের শপথ, এটা তো বিবাহ।”[5]
সুবহানাল্লাহ! প্রবৃত্তি শিয়াদের উপর বিজয় লাভ করেছে; ফলে তারা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবি তালিবের সাথে এই ধরনের মিথ্যাসমূহের সম্পর্কযুক্ত করেছে। অথবা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, অপরাধী যালিম কর্তৃক জোরপূর্বক একজন নারীকে ব্যভিচার করা, তার উপর জবরদস্তি করা এবং মৃত্যু ও পিপাসা দ্বারা তাকে ভীতি প্রদর্শন করা; অতঃপর তার ষড়যন্ত্রের কারণে তার আহ্বানে সাড়া দেয়া এই সব কিছুই শিয়াদের নিকট শরিয়ত সম্মত বিবাহ বলে স্বীকৃত। অথবা এর দ্বারা কি প্রশস্ত দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে না, যা দিয়ে প্রত্যেক অপরাধী ও ইতর শ্রেণীর লোক অনুপ্রবেশ করবে, অতঃপর যে কোন ভদ্র ও সম্মানিত মহিলাকে অপহরণ করবে এবং এই ধরনের যে কোন উপায় অবলম্বন করে তার সাথে যিনা-ব্যভিচার করতে তাকে বাধ্য করবে। অতঃপর শিয়াদের নিকট তা হয়ে যাবে বৈধ বিবাহ। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইসলাম এই ধরনের মন্দ কাজ ও অপকর্ম থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
অতঃপর শিয়াগণ মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে দলিল পেশ করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী দ্বারা:
﴿فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِۦ مِنۡهُنَّ فََٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةٗ﴾ [سورة النساء: 24]
“তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও।”— (সূরা আন-নিসা: ২৪); ইবনু মাসউদের এক কিরাতে রয়েছে:
" فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ إلى أجلٍ"
অর্থাৎ- তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত।
দলিলের জওয়াব:
আয়াতে উল্লেখিত "فاء" টি বাক্যকে পৃথক করার জন্য ব্যবহৃত, বাক্যকে নতুন করে শুরু করার অর্থে নয়। সুতরাং فَمَا ٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهِ مِنۡهُنّ মানে তোমরা বিশুদ্ধ বিবাহের দ্বারা নারীদের সাথে মিলনের মাধ্যমে যে স্বাদ ও উপকার হাসিল করেছে, তার বিনিময় স্বরূপ তাদের প্রতিদান তথা মোহর দিয়ে দাও। আর ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কিরাতটি একটি বিচ্ছিন্ন কিরাত, যা মূল গ্রন্থসমূহের মধ্যে পাওয়া যায় না; সুতরাং এটাকে কুরআন ও হাদিস বলে প্রমাণ দেয়া যাবে না এবং তার উপর আমল করাও আবশ্যক হবে না।
মুত‘আ বিয়ে অবৈধ ও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়াদের একটা অংশ ব্যতীত শহুরে আলেমদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ (হারাম) হওয়ার উপর দলিল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧ ﴾ [سورة المؤمنون: 1-7]
“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে, যারা ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তার হবে সীমালংঘনকারী।”— (সূরা আল-মুমিনুন: ১-৭)
সুতরাং এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য কোন নারী বৈধ নয়; অতএব এর বাইরে কোন নারীকে ব্যবহারের পথ খুঁজলে, সে হবে সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই কথা সুস্পষ্ট যে, পুরুষ ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে যে নারীর কর্তৃত্ব লাভ করবে, সে নারী তার জন্য বিবাহিত নয়। কারণ, মুত‘আ বিয়ের সাক্ষী, তার খরচ বহন করা, উত্তরাধিকার ও তালাকের শর্ত নেই; অনুরূপভাবে তাতে (মুত‘আ বিয়ের মধ্যে) চারটাতে সীমিতকরণ, তাকে বিক্রয়, হেবা ও মুক্তি দেয়ার বৈধতার শর্তও নেই, যেমনিভাবে তা দাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সুতরাং কিভাবে মুত‘আ বিয়ে হালাল বা বৈধ হবে?
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ﴾ [سورة النساء: 3]
“আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে।”— (সূরা আন-নিসা: ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়ের আশঙ্কা করবে, সে যেন একজন স্ত্রী অথবা তার অধিকারভূক্ত দাসীকে যথেষ্ট মনে করে। সুতরাং কোথায় মুত‘আ বিয়ে? অতএব যদি তা হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের সময় আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ مِنكُمۡ طَوۡلًا أَن يَنكِحَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ فَمِن مَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُم مِّن فَتَيَٰتِكُمُ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۚ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِإِيمَٰنِكُمۚ بَعۡضُكُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ فَٱنكِحُوهُنَّ بِإِذۡنِ أَهۡلِهِنَّ وَءَاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِ مُحۡصَنَٰتٍ غَيۡرَ مُسَٰفِحَٰتٖ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ فَإِذَآ أُحۡصِنَّ فَإِنۡ أَتَيۡنَ بِفَٰحِشَةٖ فَعَلَيۡهِنَّ نِصۡفُ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ مِنَ ٱلۡعَذَابِۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ مِنكُمۡۚ وَأَن تَصۡبِرُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡۗ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٥ ﴾ [سورة النساء: 25]
“তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিয়ে দেবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়। বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে, এটা তাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।”— (সূরা আন-নিসা: ২৫)
সুতরাং যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন ﴾مَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ﴿ অর্থাৎ- ‘যারা ব্যভিচারকে ভয় করে’। আর (যদি মুত‘আ বিয়ে হালাল হত) তিনি তা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং এটাই প্রমাণ হয় যে, নিঃসন্দেহ তা (মুত‘আ বিয়ে) হারাম।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ﴾ [سورة النور: 33]
“যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।”— (সূরা আন-নূর: ৩৩)
সুতরাং তিনি যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, তাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীর উপর কর্তৃত্ব গ্রহণ ও তাকে ভোগ করার নির্দেশ দেননি; যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করেন (সচ্চরিত্রবান অবস্থায় প্রকাশ্য ব্যভিচারের জন্য নয়)। আর আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ের মধ্যে রয়েছে সতীত্ব ও পবিত্রতা; আর মুত‘আ বিয়ের মধ্যে তার কিছুই নেই। সুতরাং তা হারাম (নিষিদ্ধ) হওয়ার ব্যাপারে এ সবই সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আর রাফেযীগণ (শিয়াগণ) মুত‘আ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কিছু সংখ্যক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে; তার জওয়াব হল: ঐসব হাদিস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে; যেমনিভাবে তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় অপরাপর হাদিসসমূহ থেকে, যা আমরা অচিরেই উল্লেখ করব। যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন সকল ব্যাখ্যাকার এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণ। আর এই ব্যাপারে সকলের ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে। সুতরাং তাদের পক্ষে তার (মুত‘আ বিয়ের বৈধতার) ব্যাপারে কোন দলিল নেই।
আর মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আরও দলিল হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
« يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِى الاِسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَىْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيلَهُ وَلاَ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا ». [ أخرجه مسلم]
“হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে) নারীদের ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলাম; আর আল্লাহ তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যার নিকট তাদের পক্ষ থেকে কোন বস্তু রয়েছে, সে যেন তার পথ উন্মুক্ত করে দেয়; আর তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার মধ্য থেকে কিছুই গ্রহণ করো না।”[6]
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম র. আরও বর্ণনা করেছেন:
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْمُتْعَةِ وَقَالَ: أَلاَ إِنَّهَا حَرَامٌ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَانَ أَعْطَى شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْهُ ». [ أخرجه مسلم]
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত‘আ বিয়ে থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় তা (মুত‘আ বিয়ে) তোমাদের এই দিন থেকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম (নিষিদ্ধ)। আর যে ব্যক্তি কোন কিছু প্রদান করেছে, সে যেন তা গ্রহণ না করে।”[7]
ইমাম তিরমিযী র. বর্ণনা করেন:
«عن ابن عباس قال : إنما كانت المتعة في أول الإسلام كان الرجل يقدم البلدة ليس له بها معرفة فيتزوج المرأة بقدر ما يرى أنه يقيم فتحفظ له متاعه وتصلح له شيئه حتى إذا نزلت الآية ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم ﴾ قال ابن عباس فكل فرج سوى هذين فهو حرام ». [ أخرجه مسلم]
“ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুত‘আ বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে বৈধ ছিল, পুরুষ ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে আগমন করত, যা তার নিকট অপরিচিত; অতঃপর সে যেই পরিমাণ সময় সেখানে অবস্থান করত, সেই পরিমাণ সময়ের জন্য কোন নারীকে বিয়ে করত; অতঃপর সে তার মালমাত্তার হেফাজত করত এবং তার জিনিসপত্র তার জন্য ঠিকঠাক করে রাখবে, শেষ পর্যন্ত আয়াত নাযিল হল: ﴾إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم﴿ অর্থাৎ- (যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে) নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত); ইবনু আব্বাস রা. বলেন: এই দুই যৌন অঙ্গ ব্যতীত সকল যৌন অঙ্গই হারাম।”[8]
আল-হাযেমী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা তাদের বাড়ি-ঘর ও নিজ দেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের জন্য কখনও মুত‘আ বিয়ে বৈধ করেননি; বরং তিনি শুধু বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে তাদের জন্য তা বৈধ করেছেন; শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের উপর তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
শিয়াদের কিতাবসমূহের মধ্যেও বর্ণিত আছে:
« عن علي عليه السلام قال: حرّم رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم خيبر لحوم الحمر الأهلية و نكاح المتعة ». [ التهذيب]
“আলী আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাদার মাংস ও মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন।”[9]
মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কার্যকরী ও অকাট্য দলিলসমূহ পুরাপুরিভাবে উপস্থাপনের পর আমাদের উচিত যুক্তিভিত্তিক দলিলের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া; তবে কিন্তু সে দলিলসমূহ হতে হবে খেয়াল-খুশি থেকে মুক্ত এবং নির্লজ্জতা ও খোঁড়া যুক্তির উর্ধ্বে। আর তা হল, একজন পুরুষের জন্য শুধু চারটি[10] বিবাহ বৈধ রাখা হয়েছে, তার বেশি নয়। অপরদিকে রাফেযী ও শিয়াগণ একজন পুরুষের জন্য এক হাজার অথবা দুই হাজার নারীকে ভোগ করার বৈধতা দিয়েছে, যার আলোচনা পূর্বে হয়েছে। সুতরাং এই পদ্ধতি তার অধিক ছেলে ও মেয়ের বাস্তবতার দিকে নিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিবাহ ও উত্তরাধিকার নীতিমালার মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করবে। কারণ, সে বিবাহ ও উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তখনই জানতে পারবে, যখন সে বংশের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারবে; কিন্তু তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। অতএব ধরে নাও যে, যদি কোন ব্যক্তি বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে এবং প্রত্যেক শহরে গিয়ে সে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারী ভোগ করতে থাকে, এমনকি পরবর্তীতে তার অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ে গেল; অতঃপর তার অথবা তার কোন এক ভাই অথবা কন্যার সুযোগ হল ঐ শহরগুলোতে ফিরে যাওয়ার এবং চলাফেরা করার; অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানকার কোন নারীকে বিয়ে করল; সুতরাং ঐ নারীদের কেউ তার কন্যা হতে কিসে বাধা দেবে? আর তখন দেখা যাবে যে, তার বিয়ে হয়েছে তার কোন কন্যা অথবা তার ভাইয়ের কন্যা অথবা তার বোনের সাথে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সবের পরেও শিয়াগণ মুত‘আ বিয়েকে (বৈধ বলে) আঁকড়ে ধরে রাখে এবং দলিল পেশ করে যে, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত ছিল। আর তারা প্রমাণ করে যে, মুত‘আ বিয়ে সংঘটিত হত সাক্ষীর মাধ্যমে এবং তারা এ সম্পর্কে জানতে পারে তাদের কিতাবসমূহের মধ্য থেকে।
আর এই যুগে শিয়াগণ যে মুত‘আ বিয়ের কথা প্রকাশ করে, তাতে তারা সাক্ষীর শর্ত করে না; সুতরাং কিভাবে এই মুত‘আ বিয়ের বিশুদ্ধতার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার শুরুর দিকে প্রচলিত মুত‘আ বিয়ের দ্বারা তাদের দলিল পেশ করাটা শুদ্ধ হবে? আর তুমি তাদের বর্ণনাসমূহ নিয়ে ভেবে দেখ। ইমাম জাফর সাদিককে জিজ্ঞাসা করা হল: মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিনা প্রমাণে বিবাহ করত কিনা; জবাবে তিনি বললেন: না।[11] আর তারা এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে “তারা মুত‘আ বিয়ে করে” (باب المتعة يتزوجون) নামক অধ্যায়ে। বিয়ে দ্বারা তাদের নিকট উদ্দেশ্য হল মুত‘আ বিয়ে। আর লেখক সুস্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এর থেকে স্থায়ী বিবাহকে উদ্দেশ্য করেননি; বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন মুত‘আ বিয়েকে।
>[2] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, ১৮৬
[3] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, ১৯০
[4] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, ১৯৩
[5] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায় (كتاب النكاح) পৃ. ১৯৮
[6] সহীহ মুসলিম, বিবাহ (نكاح) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৮৮
[7] সহীহ মুসলিম, বিবাহ (نكاح) অধ্যায়, বাব নং- ৩, হাদিস নং- ৩৪৯৬
[8] সুনানুত তিরমিযী, বিবাহ (نكاح) অধ্যায়, বাব নং- ২৯ (باب تحريم نكاح المتعة), হাদিস নং- ১১২২
[9] আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬; আল-ইসতিবসার (الاستبصار),৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪২
[10] চারটি বিয়ে মানে একজন পুরুষ একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী নিয়ে ঘর-সংসার করতে পারবে। তালাক বা মৃত্যু জনিত কারণে শূন্যতার ভিত্তিতে শরিয়ত সম্মতভাবে তার বিয়ের সংখ্যা চারের অধিকও হতে পারে। — অনুবাদক।
[11] আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৯