জান্নাত-জাহান্নাম আবদুল হামীদ ফাইযী ৮৯ টি
জান্নাত-জাহান্নাম আবদুল হামীদ ফাইযী ৮৯ টি

সেখানে জান্নাতীদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গিনী। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَّهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا

অর্থাৎ, আর যারা বিশ্বাস করে ও ভাল কাজ করে, তাদেরকে বেহেস্তে প্রবেশ করাব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী আছে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান করব। (নিসাঃ ৫৭, আরো দ্রঃ বাকারাহঃ ২৫, আলে ইমরানঃ ১৫)

বেহেশ্তী পত্নী, হুর বা অপসরা। তাঁদের সাথে জান্নাতীদের বিবাহ হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

অর্থাৎ, এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। (দুখানঃ ৫৪)।

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ ۖ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

অর্থাৎ, তারা বসবে সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে; আমি তাদের বিবাহ দেব আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে। (তুরঃ ২০)।

বলা বাহুল্য, তাদেরকে স্বর্গ-বেশ্যা বা স্বর্গীয় বারাঙ্গনা বলা বেজায় ভুল। তারা স্ত্রী। তারা একই স্বামীর জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। তারা দুশ্চরিত্রা, কুলটা বা ভ্ৰষ্টা নয়। তারা পর পুরুষের প্রতি নজর তুলেও দেখবে না।

প্রতি জান্নাতী স্বীয় আমল অনুযায়ী দুই বা ততোধিক বেহেস্তী স্ত্রী পাবে। শহীদের হবে বাহাত্তরটি স্ত্রী।

নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে সাতটি মর্যাদা; রক্তক্ষরণের শুরুতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, বেহেশ্তে সে তার নিজ স্থান দেখতে পায়, তাকে ঈমানের জুব্বা পরিধান করানো হয়, (বেহেশ্তে) ৭২টি সুনয়না হুরীর সাথে তার বিবাহ হবে, কবরের আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে, (কিয়ামতে দিন) মহাত্রাস থেকে নিরাপদে থাকবে, তার মস্তকে গৌরবের মুকুট পরানো হবে, যার একটি মাত্র মণি (চুনি) পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, আর নিজ পরিবারের ৭০ জন লোকের জন্য (আল্লাহর দরবারে) তার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে।” (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সহীহুল জামে’ ৫ ১৮২ নং)

সপত্নী (সতীন)দের মাঝে আপোষের কোন ঈর্ষা ও কলহ থাকবে না। (আল-কুরআন ৭/৪৩, ১৫/৪৭)।

দুনিয়ার স্ত্রী বেহেশতে গেলে, সেও স্বামীর সাথে বাস করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدتَّهُمْ وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ দান কর; যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ (এবং তাদের) পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে (যারা) সৎকাজ করেছে, তাদেরকেও (জান্নাত প্রবেশের অধিকার দাও)। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (মু'মিনঃ ৮)।

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ

অর্থাৎ, স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফিরিশ্তাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (রা’দঃ ২৩)

ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ

অর্থাৎ, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুখরুফঃ ৭০)

هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ

অর্থাৎ, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় থাকবে এবং হেলান দিয়ে বসবে সুসজ্জিত আসনে। (ইয়াসীনঃ ৫৬)।

পার্থিব স্ত্রীর রূপ-গুণ বেহেশ্তী স্ত্রীদের তুলনায় অধিক হবে। বেহেশতী হুরগণ তাদের পার্থিব সপত্নীর খিদমত করবে।

অবিবাহিত নারী এবং যার স্বামী দোযখবাসী হবে, তাদের ইচ্ছামত জান্নাতী কোন পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। কয়েকটি দুর্বল হাদীসে এসেছে যে, মারয়্যাম, আসিয়া ও (মূসা নবীর বোন) কুলসুমের বিবাহ হবে শেষ নবী (ﷺ)-এর সাথে। ( সিঃ যয়ীফাহ ৫৮৮৫, সঃ জামে' ১২৩৫, ১৬১ ১নং)।

পৃথিবীতে যে নারীর একাধিক বার একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহ হয়েছিল তারা সকলেই জান্নাতে গেলে তার পছন্দমত একজন স্বামীর সাথে বাস করবে। যেহেতু সেখানে মনমতো সবকিছু পাওয়া যাবে। নচেৎ শেষ স্বামীর স্ত্রী হয়ে থাকবে। (সঃ জামে’ ৬৬৯ ১নং)

একদা হুযাইফা (রাঃ) তার স্ত্রীকে বললেন, তুমি যদি জান্নাতে আমার স্ত্রী থাকতে চাও, তাহলে আমার পরে আর কাউকে বিয়ে করো না। কারণ, মহিলা তার পার্থিব শেষ স্বামীর অধিকারে থাকবে। (বাইহাকী, সিঃ সহীহাহ ১২৮১নং)

আর সম্ভবতঃ এই জন্যই মহানবী (ﷺ) এর ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীদের বিবাহ হারাম ছিল। কারণ, তারা জান্নাতেও তার বেহেশতী পত্নী।

সকল স্ত্রীগণই সদা পবিত্রা থাকবে। সেখানে তাদের কোন প্রকারের স্রাব, মল, কফ, থুথু, ঋতু ইত্যাদি কিছুই থাকবে না। (বুখারী ৩৩২৭, মসলিম ২৮৩৫নং) স্বামী সহবাসেও চিরকুমারী এবং অনন্ত যৌবনা থাকবে। বীর্যপাত বা কোন অপবিত্রতাও থাকবে না। কেউ কোনদিন গর্ভবতীও হবে না। অবশ্য কোন জান্নাতীর শখ হলে তার ইচ্ছামত ক্ষণেকে তার স্ত্রী গর্ভবতী হবে এবং সন্তান প্রসব করবে ও বয়ঃপ্রাপ্ত হবে। (তিরমিযী ২৫৬৩, আহমাদ ৩/৮০ দারেমী)।

বেহেস্তী হুর। হুর সেই মহিলাদেরকে বলা হয়, যাদের চোখের তারা খুব কালো এবং বাকী অংশ খুব সাদা। এদের চোখের অন্য এক সৌন্দর্য বর্ণনায় বলা হয়, ঈন। তার মানে ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট মহিলা।

তারা লজ্জা-নম্র, আয়তলোচনা তন্বী---সুরক্ষিত ডিম্বের মত উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,

كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُونٌ

অর্থাৎ, যেন তারা গৌরবর্ণ সুরক্ষিত ডিম। (স্বা-ফফাতঃ ৪৯)

وَحُورٌ عِينٌ (22) كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ (23)

অর্থাৎ, আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তলোচনা হুর; সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ। (ওয়াক্বিআহঃ ২২-২৩)

সে সুনয়না তরুণীগণ---যাদেরকে পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। তারা তাদের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে তাকিয়েও দেখবে না। প্রবাল ও পদ্মরাগ-সদৃশ এ সকল তরুণীদের স্বচ্ছ কাচ সদৃশ দেহকান্তি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (56) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (57) كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ (58)

অর্থাৎ, সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না; যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা (সৌন্দর্যে) যেন পদ্মরাগ ও প্রবালসদৃশ। (রাহমানঃ ৫৬-৫৮)।

বাহির হতে তাদের অস্থি-মধ্যস্থিত মজ্জা পরিদৃষ্ট হবে। (মুসলিম ২৮৩৪)

তারা হবে শতরূপে অপরূপা সুন্দরী বধূ। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (70) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (71) حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ (72) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (73) لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (74)

অর্থাৎ, সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের সুন্দরীগণ। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। (রাহমানঃ ৭০-৭৪)

সম্ভ্রান্ত শয্যাসঙ্গিনী, যাদেরকে আল্লাহপাক জান্নাতীদিগের জন্য বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তারা চিরকুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা তরুণী। মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ (27) فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ (28) وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ (29)

অর্থাৎ, তাদেরকে (হুরীগণকে) আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি কুমারী। প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য। (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। সেখানে আছে কঁাটাহীন। কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্বিআহঃ ২৭-২৯)।

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا (31) حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا (32) وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا (33)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে সফলতা; উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা সমবয়স্কা তরুণীগণ। (নাবাঃ ৩১-৩৩)

দুনিয়ার বৃদ্ধাগণও সেদিন যুবতীতে পরিণত হবে।

একদা এক বৃদ্ধা এসে বলল, 'হে আল্লাহর রসূল! আপনি দুআ করে দিন, যাতে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। তিনি মস্করা করে বললেন, ‘বৃদ্ধারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তা শুনে বৃদ্ধা কঁদতে কাঁদতে প্রস্থান করল। তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, “ওকে বলে দাও যে, বৃদ্ধাবস্থায় ও জান্নাতে যাবে না।” (বরং সে যুবতী হয়ে যাবে।) (শামায়েলুত তিরমিযী, রাযীন, গায়াতুল মারাম, মিশকাত ৪৮৮৮নং)

যৌবন-পরিপক্বতায় সকল স্ত্রীর বয়স হবে তেত্রিশ বছর। সকলের দেহ হবে ষােড়শীর মত, যাদের বুকের উঁচু উঁচু সুডৌল স্তনযুগল নতমুখী হয়ে ঢলে যাবে না।

সেই বেহেশ্তবাসিনী, রূপের ডালি, ঝলমলে লাবণ্যময়ী, সুবাসিনী কোন যুবতী যদি পৃথিবীর তমসাচ্ছন্ন আকাশে উকি মারে, তাহলে তার রূপালোকে ও সৌরভে সারা জগৎ আলোকিত ও সুরভিত হয়ে উঠবে। অনন্ত যৌবনা---এমন সুরমার কেবলমাত্র শীর্ষস্থিত উত্তরীয় খানি পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতে উত্তম ও মূল্যবান। (বুখারী ৬৫৬৮নং)

বেহেশ্তে সীমাহীন আনন্দময় স্থান। মনের আনন্দে গান বের হয়। গান শুনতে ভাল লাগে। স্বামীর মনে আনন্দ পরিপূর্ণ করার জন্য মধুর কণ্ঠে তারা গান করবে জান্নাতে। সেই গানের নমুনা নিম্নরূপঃ

نحن الخيرات الحسان
أزواج قوم کرام
ينظرن بقرة أعيان

অর্থাৎ, আমরা সচ্চরিত্র সুন্দরী দল, সম্মানিত সম্প্রদায়ের স্ত্রী। যে স্ত্রীরা শীতল নজরে দৃষ্টিপাত করবে। অন্য শব্দে -

نحن الحور الحسان
خبئنا لأزواج کرام
نحن الحور الحسان
هدينا لأزواج کرام

অর্থাৎ, আমরা হুরী সুন্দরী, সম্মানিত স্বামীদের জন্য গুপ্ত আছি। আমরা হুরী (সুনয়না) সুন্দরী, সম্মানিত স্বামীদের জন্য উপহার।

نحن الخالدات فلا يمتنه
نحن الآمنات فلا يخفنه
نحن المقيمات فلا يظعته

অর্থাৎ, আমরা সেই চিরস্থায়ী রমণী, যারা কখনই মারা যাবে না, আমরা সেই নিরাপদ রমণী, যারা কখনই ভয় পাবে না, আমরা সেই স্থায়ী বসবাসকারিণী, যারা কখনই চলে যাবে না। (সঃ জামে ১৫৫৭, ১৫৯৮নং)

জান্নাতের এই হুরীরা বড় প্রেমময়ী, পৃথিবীতে স্বামীর কষ্ট দেখে কষ্ট পায়। নবী (ﷺ) বলেন, যখনই কোন মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হুর (বেহেশ্তী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে। এসে যাবে। (তিরমিযী)

অনন্তকাল ধরে তারা এই বয়স নিয়েই চিরসুন্দর যুবক-যুবতী হয়ে থাকবে। (মুসলিম ২৮৩৬) সেখানে যৌন-মিলনে অধিক তৃপ্তিলাভ করবে। প্রত্যেক জান্নাতীকে একশ জন পুরুষের সমান যৌনশক্তি ও সঙ্গম ক্ষমতা প্রদান করা হবে। (তিরমিযী ২৫৩৬)।

যেহেতু পান-ভোজন, বসনভূষণ, বাসভবন এবং নারী-সংসর্গ ও যৌনসম্ভােগ ইত্যাদিতেই মানুষের প্রকৃতিগত সুখ ও পরম আনন্দ, তাই তাদেরকে তাদের প্রকৃতির উপযোগী অভীষ্ট প্রতিদান দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, তোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবন; তোমরা আর কখনো মরবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুস্বাস্থ্য; তোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির যৌবন; তোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দ; তোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না। (মুসলিম)

তাদের পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম আর সালাম। শান্তিবাক্য ছাড়া তারা কোন অসন্তোষজনক, মিথ্যা বা অসার বাক্য শুনবে না।

لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا

অর্থাৎ, সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার ও মিথ্যা কথা। (নাবাঃ ৩৫)

لَّا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً

অর্থাৎ, সেখানে তারা কোন অসার বাক্য শুনবে না। (গাশিয়াহঃ ১১)

لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا (25) إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا (26)

অর্থাৎ, তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য। সালাম-সালাম (শান্তি) বাণী ব্যতীত। (ওয়াক্বিআহঃ ২৫-২৬)

لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا ۖ وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا

অর্থাৎ, সেখানে তারা শান্তি’ ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবে না এবং সেথায় সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ। (মারয়ামঃ ৬২)

وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ (34) الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ (35)

অর্থাৎ, তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দুরীভূত করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক বড় ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী, যিনি নিজ অনুগ্রহে, আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন; যেখানে আমাদেরকে কোন প্রকার ক্লেশ স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না কোন প্রকার ক্লান্তি। (ফাত্বিরঃ ৩৪-৩৫)

دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ۚ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থাৎ, সেখানে তাদের বাক্য হবে, সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র)! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম। আর তাদের শেষ বাক্য হবে, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)। (ইউনুসঃ ১০)

জান্নাত ও জাহান্নামীদের মাঝে কথোপকথন

বেহেশ্তীগণ দোযখীদেরকে সম্বােধন করে বলবে,

قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا

‘আমাদের প্রতিপালক আমাদের ঈমান ও সৎকার্যের উপর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তা সত্য পেয়েছি (জান্নাত পেয়েছি) তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের (কুফরী ও অধর্মের উপর) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছ কি? ওরা বলবে, হ্যাঁ।

অতঃপর জনৈক ঘোষণাকারী তাদের নিকট ঘোষণা করবে, পাপিষ্ঠদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। যারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তাতে বক্রতা (ও দোষ-ত্রুটি) অন্বেষণ করেছিল এবং তারাই ছিল পরকালে অবিশ্বাসী। (আল-কুরআন ৭/৪৪-৪৫)

কতুক জান্নাতবাসী কতক জাহান্নাম (সাক্বার)বাসীকে জিজ্ঞাসা করবে,

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ (42) قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ (43) وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ (44) وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ (45) وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ (46) حَتَّىٰ أَتَانَا الْيَقِينُ (47)

‘তোমাদেরকে কিসে সাক্বারে নিক্ষেপ করেছে? ওরা উত্তরে বলবে, ‘আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না, যারা অন্যায় আলোচনা করত আমরা তাদের আলোচনায় যোগ দিতাম এবং আমরা (এই) কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করেছি। (আল-কুরআন ৭৪/ ৪২-৪৭)

জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বােধন করে বলবে, আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদেরকে যা দান করেছেন, তা হতে আমাদেরকে কিছু দাও। জান্নাতীরা উত্তরে বলবে,

إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ

‘আল্লাহ এ দু’টিকে অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করেছেন। যারা তাদের ধর্মকে ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (আল-কুরআন ৭/৫০-৫১)

জাহান্নামীদেরকে নিয়ে জান্নাতীদের হাসি

পৃথিবীতে কত অসৎ মানুষ সৎ মানুষদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তাদেরকে বেওকুফ ভাবে, তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে, কত টিস্ মারে, কত কুমন্তব্য করে। কিন্তু পরকালে তারাই হবে হাসির পাত্র। আজ যাদেরকে পাগল ভাবা হয়, কাল তারাই হবে রাজা।

মহান আল্লাহ বলেন, যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে নিয়ে উপহাস করত এবং তারা যখন মুমিনদের নিকট দিয়ে যেত, তখন চোখ টিপে ইশারা করত এবং যখন তারা আপনজনের নিকট ফিরে আসত, তখন তারা ফিরত উৎফুল্ল হয়ে এবং যখন তাদেরকে দেখত, তখন বলত,

إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ

এরাই তো পথভ্রষ্ট। অথচ তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি! আজ তাই মুমিনগণ উপহাস করবে কাফেরদেরকে নিয়ে। সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে। কাফেররা যা করত, তার ফল তারা পেল তো? (মুত্বাফফিফীনঃ ২৯-৩৬)

জান্নাত আমলের জায়গা নয়, জান্নাত হল আমলের বিনিময় পাওয়ার জায়গা। তাই সেখানে কোন কর্মব্যস্ততা কিংবা কোন পালনীয় ইবাদতবন্দেগী থাকবে না। শ্বাসক্রিয়ার ন্যায় সদা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) তাদের মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত হবে। এতে তাদের কোন অসুবিধা হবে না। (বুখারী)।

জান্নাতীদের একটি ব্যস্ততার কথা মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ

অর্থাৎ, এ দিন বেহেশতিগণ আনন্দে মগ্ন থাকবে। (ইয়াসীনঃ ৫৫)

সুতরাং সে মত্ততা, ব্যস্ততা ও মগ্নতা হল স্ত্রী নিয়ে আনন্দ করাতে।

শতরূপা চিরকুমারী স্ত্রীদের সাথে মিলনের আনন্দে মগ্ন থাকবে চিরকাল। এটাকে যদি কর্ম’ বলা যায়, তাহলে বেহেশতে সেটাই তাদের কর্ম।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মহান প্রভু জান্নাতীদেরকে সম্বােধন করে বলবেন, হে জান্নাতের অধিবাসিগণ!’ তারা উত্তরে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির আছি, যাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে, আমাদের কী হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছ, যা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি। তখন তিনি বলবেন, এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি? তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।” (বুখারী-মুসলিম)

রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বৰ্কতময় আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দিই? তারা বলবে, 'তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ (হঠাৎ গর্বের) পর্দা সরিয়ে দেবেন এবং তারা তার চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। (মুসলিম)। মহান আল্লাহ বলেছেন,

لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, যারা কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ (জান্নাত) এবং আরো অধিক (আল্লাহর দীদার)। তাদের মুখমণ্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে না এবং লাঞ্ছনাও না; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল বাস করবে। (ইউনুসঃ ২৬)

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ (22) إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ (23)

অর্থাৎ, সেদিন বহু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (কিয়ামাহঃ ২২-২৩)

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।” (বুখারী-মুসলিম)

এ দীদার হবে জান্নাতে। জাহান্নামীরা সেই দীদার কোথায় পাবে? তারা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলেই তো তার চেহারা দর্শনেও বঞ্চিত হবে। তিনি বলেছেন,

كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ

অর্থাৎ, কক্ষনো না, অবশ্যই তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে। (মুত্বাফফিফীনঃ ১৫)

আ’রাফ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী এক জায়গার নাম। এমন কতক মানুষ যাদের নেকী-বদী সমান হলে ঐ স্থানে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করবে এবং পরে আল্লাহর রহমতে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই জায়গা থেকে জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের অবস্থা অবলোকন করা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, “(জান্নাতী ও জাহান্নামী অথবা জান্নাত ও জাহান্নাম) উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে এবং আ’রাফে কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেককে তার লক্ষণ দ্বারা চিনবে এবং তারা বেহেশবাসীদেরকে আহবান করে বলবে, 'তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হােক। তারা তখনও বেহেশতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা করে।

আর যখন তাদের দৃষ্টি দোযখবাসীদের প্রতি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখন তারা বলবে, (رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অত্যাচারীদের সঙ্গী করো না। আরাফবাসিগণ কিছু লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পেরে তাদেরকে আহবান করে বলবে, 'তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না। (দেখ,) এদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। (এদেরকেই বলা হবে,) তোমরা বেহেশ্তে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।” (আ'রাফঃ ৪৭-৪৯)।

নবী (ﷺ) বললেন, একদা জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা থাকবে। আর জান্নাত বলল, দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভিতরে বসবাস করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। (মুসলিম)।

জাহান্নাম সেই আগুনের বাসস্থানকে বলা হয়, যেখানে রেখে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার অবাধ্যদেরকে শাস্তি দেবেন। ফারসীতে একে ‘দোযখ’ বলা হয়, বাংলাতে নরক।

এটিকে আগুনের কারাগার বা জেলখানাও বলা যেতে পারে, যেখানে আল্লাহদ্রোহীরা চিরবন্দী থাকবে। যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে, জান্নাত-জাহান্নাম অবিশ্বাস করে, নবী-রসূলকে মিথ্যা মনে করে, যারা পাপ করে, অন্যায় ও অপরাধ করে, তাদের পারলৌকিক ঠিকানা হবে এই দোযখ।

এই জাহান্নাম হল মানুষের সবচেয়ে বড় লাঞ্ছনা, সবচেয়ে বড় ক্ষতি। মহান আল্লাহই সে কথা বলেছেন,

رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যাকে দোযখে প্রবেশ করাবে, তাকে নিশ্চয় লাঞ্ছিত করবে। আর অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (আলে ইমরানঃ ১৯২)

أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ, তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন; সে তাতে অনন্তকাল থাকবে। এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা। (তাওবাহঃ ৬৩)।

قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ

অর্থাৎ, বল, আসল ক্ষতিগ্রস্ত তো তারাই; যারা কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিজনবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জেনে রাখ, এটিই সুস্পষ্ট ক্ষতি৷’ (যুমারঃ ১৫)

জাহান্নাম জাহান্নামীদের বড় নিকৃষ্ট ঠিকানা, দোযখ দোযখীদের বড় নিকৃষ্ট বিশ্রামাগার, নিকৃষ্ট শয়নাগার। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا

অর্থাৎ, নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতীব নিকৃষ্ট! (ফুরকানঃ ৬৬)

অর্থাৎ, এ হল (সাবধানীদের জন্য) আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম; জাহান্নাম, সেখানে ওরা প্রবেশ করবে, সুতরাং কত নিকৃষ্ট সে শয়নাগার। (স্বাদঃ ৫৫-৫৬)

وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَن شَاءَ فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاءَ فَلْيَكْفُرْ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا

অর্থাৎ, বল, ‘সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করুক। আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়; যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; কত নিকৃষ্ট সেই পানীয় এবং কত নিকৃষ্ট সেই (অগ্নির) আশ্রয়স্থল। (কাহ্‌ফঃ ২৯)

দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 পরের পাতা »