ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ ইসলামহাউজ.কম ১১ টি
ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ ইসলামহাউজ.কম ১১ টি

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম ঐ নবীর ওপর যার পরে আর কোনো নবী আসবেন না এবং তাঁর সাহাবী ও যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন তাদের ওপর। অতঃপর, হে মুসলিম ভাই জেনে রাখুন, আল্লাহ সকল মানুষের ওপর দীন ইসলাম প্রবেশ করা ও তা আঁকড়ে ধরা ফরয করে দিয়েছেন এবং ইসলাম পরিপন্থী যাবতীয় পথ থেকে সাবধান করেছেন। তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন ইসলামের প্রতি আহ্বান করার জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর অনুসরণ করবে সে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে আর যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। তিনি কুরআনের বহু আয়াতে মুরতাদে পরিণত হওয়ার সকল পথ, সকল প্রকার শির্ক এবং কুফুরী সম্পর্কে সাবধান ও ভীতিপ্রদর্শন করেছেন।

আমাদের সম্মানিত আলেমগণ ধর্ম ত্যাগের হুকুমের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে, একজন মুসলিম ইসলাম বিনষ্টকারী বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়ে যেতে পারে এবং এ কারণে তার জীবন নাশ করা ও সম্পদ ক্রোক করা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। আর এ কারণে সে ইসলামের গণ্ডি থেকেও বেরিয়ে যাবে।

এ সমস্ত ইসলাম বিনিষ্টকারী বিষয়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও অধিক প্রসার লাভকারী বিষয় দশটি যা বর্ণনা করেছেন ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহাব ও অন্যান্য আহলে ইলমগণ। আল্লাহ তাদের সকলের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। নিম্নে অতিসংক্ষেপে আপনাদের উদ্দেশ্যে সে দশটি বিষয় আলোচনা করা হলো। আপনারা যেন এ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করেন এবং অন্যদেরকে সাবধান করেন। আমি সামান্য ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিষয়গুলো এ আশা নিয়ে বর্ণনা করব যাতে আমরা এ থেকে নিরাপদ থাকতে পারি।

প্রথম: আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে শির্ক করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [النساء: ٤٨]

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন’’। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিবেন, আর তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই’’। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]

এসমস্ত শির্কের উদাহরণ: যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া ও তাদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা এবং তাদের নামে মান্নত করা ইত্যাদি।

দ্বিতীয়: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার নিজের মাঝে মাধ্যম সাব্যস্ত করে তাদের নিকট প্রার্থনা করে, তাদের শাফা‘আত বা সুপারিশ কামনা করে, তাদের ওপর নির্ভর করে, সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফির হয়ে যাবে।

তৃতীয়: যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে বা অংশীবাদিদেরকে কাফির মনে করে না, অথবা তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক মনে করে সে কাফির হয়ে যাবে।

চতুর্থ: যে ব্যক্তি বিশ্বাস পোষণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের চেয়ে অন্য আদর্শ আরো বেশি পূর্ণাঙ্গ অথবা তাঁর হুকুম বা বিধানের চেয়ে অন্যের হুকুম বা বিধান আরো উত্তম। যেমন, কোনো ব্যক্তি যদি তাগুতের বিধানকে রাসূলের বিধানের উপরে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেয় সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে।

পঞ্চম: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত কোনো বিধানকে যে ব্যক্তি অবজ্ঞা বা ঘৃণা করবে সে কাফির বলে বিবেচিত হবে। এমনকি যদি সে ঐ বিধান অনুযায়ী আমলও করে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩﴾ [محمد: ٩]

“এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দিবেন”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৯]

ষষ্ঠ: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের কোনো বিষয়কে অথবা সাওয়াব বা শাস্তি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে সে কাফির বলে বিবেচিত হবে। এ কথার প্রমাণ হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]

“নিশ্চয় আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা বলবে, আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছি। বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে? ওযর পেশ করো না, তোমরা ঈমান গ্রহণ করার পর কাফির হয়ে গেছ”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]

সপ্তম: জাদু করা। যেমন, এর মাধ্যেমে বিচ্ছেদ ঘটানো বা এর মাধ্যমে প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি করা। যে ব্যক্তি এ কাজ করল অথবা একাজে সে সন্তুষ্ট থাকল সে কুফুরী করল। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী:

﴿وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنۡهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَزَوۡجِهِ﴾ [البقرة: ١٠٢]

“আর তারা দু‘জন (হারুত ও মারুত) এ কথা না বলে কাউকে (জাদু) শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষা বৈ কিছু নই। অতএব, (জাদুকর্ম করে) তোমরা কুফুরী করো না’’। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২]

অষ্টম: মুশরিকদের সংগে বন্ধুত্ব করা ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য করা। এর দলীল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ [المائ‍دة: ٥١]

“হে মুমিনগণ! ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম জাতিকে সৎপথে পরিচালিত করেন না’’। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত-৫১]

নবম: কোনো ব্যক্তি যদি মনে করে যে, কারো কারো জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আত হতে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, যেমন খিযিরের জন্য মূসা আলাইহিস সালামের শরী‘আত থেকে বের হওয়া বৈধ ছিল, সে (এ রকম বিশ্বাসকারী ব্যক্তি) কাফির হয়ে যাবে।

কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]

“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার নিকট থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »