দ্বীনী প্রশ্নোত্তর আবদুল হামীদ ফাইযী ৭৯৩ টি
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর আবদুল হামীদ ফাইযী ৭৯৩ টি
কোন কোন সময় এমন হয় যে, জোরপূর্বক বর বা কনেকে বিবাহের কাবিন নামা বা তালাক পত্রে সই করিয়ে বিবাহ বা তালাক দেওয়া হয়। কিন্তু জোরপূর্বক বিবাহ বা তালাক কি গণ্য?

জোরপূর্বক বিবাহ বা তালাক গণ্য নয়। ভয় দেখিয়ে বা হুমকির মুখে কাউকে বিয়ে করে সংসার করলে ব্যভিচার করা হয়। অনুরূপ তালাকও। জোরপূর্বক মুসলিম বানানো হলে যেমন কেউ মুসলিম হয়ে যায় না, জোরপূর্বক কুফরী করলে যেমন কেউ কাফের হয় না, তেমন বিবাহ ও তালাকও। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“কেউ বিশ্বাস করার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং অবিশ্বাসের জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহ্‌র ক্রোধে এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে অবিশ্বাসে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত বিশ্বাসে অবিচল।” (নাহলঃ ১০৬)

রাসূল (সঃ) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃত এবং যার উপর তাকে নিরুপায় করা হয়, তার (পাপ)কে অতিক্রম (ক্ষমা) করেন।” ৫৫৩ (ইবনে মাজাহ ২০৪৫ নং)

আমি বিবাহের বয়স উত্তীর্ণ একজন ধনী ও রোগী মহিলা। আমি একজন সুপুরুষকে বিবাহ করে কেবল স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাই। আমি আমার পৈত্রিক বাড়িতেই থাকতে চাই। আমি তার নিকট কোন প্রকার খোরপোশ দাবী করব না। সে কেবল মাঝে মাঝে আমার সাথে সাক্ষাৎ করে যাবে। তার প্রথম স্ত্রী আছে। সে তার ঐ স্ত্রীর কাছে আমার কথা গোপন রাখবে। সে রাজী, আমি রাজী, আমার অভিভাবক ও রাজী। এমন বিবাহে কোন সমস্যা আছে কি?

বিবাহের যে সকল শর্ত আছে, তা পূরণ হলে এমন বিবাহ বৈধ। আপনার অভিভাবক, সাক্ষীস্বরূপ কমপক্ষে দুইজন সৎ ব্যক্তি, দেনমোহর, বিবাহের প্রচার ইত্যাদি। খোরপোশ স্বামীর উপর ফরয, কিন্তু আপনি তা থেকে তাকে মুক্তি দিলে তা বৈধ হবে। আর তার প্রথম স্ত্রী এর খবর না জানলে বা অনুমতি না দিলেও কোন ক্ষতি হবে না। ৫৫৪ (ইবনে বায)

অনেক সময় উপযুক্ত পাত্র বিবাহের প্রস্তাব দিলে মেয়ে অথবা মেয়ের বাপ এই বলে রদ করে দেয় যে, পড়া শেষ হলে তবেই বিয়ে হবে। এটা কি বৈধ?

এটা বৈধ নয়। পড়া ওজর নয়। তাছাড়া বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়। আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের) বিবাহ দাও। যদি তা না কর, তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।” (তিরমিযী ১০৮৫ নং, ইবনে মাজাহ ১৯৬৭ নং)

বর ভিন্ন দেশে থাকলে টেলিফোনের মাধ্যমে বিয়ে পড়ালে শুদ্ধ হবে কি?

বিবাহের ব্যাপারটা দুটি জীবনের চির বন্ধন। সুতরাং ধোঁকাবাজির আশঙ্কায় টেলিফোন বা নেটের মাধ্যমে বিয়ে পড়ানো একান্ত জরুরী হলে যেখানে সে থাকে, সেখানের পরিচিত কাউকে উকীল বা প্রতিনিধি বানিয়ে বিয়ে পড়ানো যায়। ৫৫৬(মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী)

স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে, স্পর্শ করলে, নির্জনতা অবলম্বন করলে অথবা বিবাহের পর মারা গেলে মোহর ওয়াজেব হয়। কেবল বিয়ে পড়ালেই মোহর ওয়াজেব হয় না। ৫৫৭ (ইবনে উষাইমীন)

দেশীয় আইনে সাবালিকা হয় ১৮ বছর পূর্ণ হলে। কিন্তু শরীয়তের আইনে সাবালিকা হল সেই মেয়ে, যার স্বাভাবিকভাবে মাসিক শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার অনুমতিক্রমে বিবাহ দিলে কোন বাধা নেই। অবশ্য মেয়ে না চাইলে জোরপূর্বক বিবাহ শুদ্ধ নয়।

অনেক বৃদ্ধ অল্প বয়সের মেয়েকে বিয়ে করে, এটা কি শরীয়তে বৈধ ?

মেয়ে ও তার অভিভাবকের সম্মতি থাকলে সে বিবাহ বৈধ।

নাম করা বংশের ছেলে বা মেয়ের সাথে কি বংশ পরিচয়হীন ছেলে বা মেয়ের বিবাহ শুদ্ধ নয়?

কোন কোন মানুষ এই ভেদাভেদ জ্ঞান রেখে উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রী হাতছাড়া করে। অথচ তা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক আল্লাহ ভীরু। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।” (১৩)

আর মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম বান্দা হল সেই যার চরিত্র সুন্দর।” (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে ১৭৯ নং)
ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি সে, যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। আর সবচেয়ে উচ্চ বংশীয় লোক সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।”(আল-আদাবুল মুফরাদ)

নবী (সঃ) বলেন, “যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের) বিবাহ দাও। যদি তা না কর (শুধুমাত্র দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিবাহ না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও কেবলমাত্র বংশ, রূপ বা ধন সম্পত্তির লোভে বিবাহ দাও), তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।” (তিরমিযী ১০৮৫ নং, ইবনে মাজাহ ১৯৬৭ নং)

মেয়ে যাকে বিয়ে করতে রাজী নয়, তার সাথে বাপ জোরপূর্বক বিয়ে দিতে পারে কি?

মেয়ে রাজী না থাকলে কারো সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “অকুমারীর পরামর্শ বা জবানী অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীর সম্মতি না নিয়ে তাদের বিবাহ দেওয়া যাবে না। আর কুমারীর সম্মতি হল মৌন থাকা।” ৫৬১ (বুখারী, মুসলিম, সহীহ নাসাঈ ৩০৫৮, সহীহ ইবনে মাজাহ ১৫১৬ নং)

বিয়েতে বাপ রাজী ছিল না। ভাই দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য বাপ রাজী হয়ে গেছে। এখন সে বিয়ের মান কি ?

বাপ থাকতে ভাই শরয়ী অভিভাবক হতে পারে না। সুতরাং বিবাহ শুদ্ধ নয়। পরবর্তীতে রাজী হলেও পুনরায় বিয়ে পড়াতে হবে। ৫৬২ (মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম) অনুরূপ যারা পালিয়ে গিয়ে মেয়ের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করে তাদের অবস্থা।

দেখানো হচ্ছেঃ ৪৩১ থেকে ৪৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 41 42 43 44 45 · · · 77 78 79 80 পরের পাতা »