সহজ ফিকহ শিক্ষা প্রথম অধ্যয়: ইবাদাত ইসলামহাউজ.কম
দুই ’ঈদের সালাত

দু’ঈদের সালাত শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:

ঈদের সালাত দীন ইসলামের অন্যতম বাহ্যিক নিদর্শন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এতে রমযান মাসের সাওম পালন ও আল্লাহর ঘরের হজ আদায়ের মাধ্যমে মহান মালিক আল্লাহর শুকরিয়া আদায় হয়। এছাড়াও ঈদে রয়েছে মুসলিমের মধ্যে পরস্পর ভালোবাসা, সহমর্মিতা, দয়াশীলতা, বহু লোকের সমাবেশ ও আত্মার পবিত্রতার আহ্বান।

ঈদের সালাতের হুকুম:

ঈদের সালাত ফরযে কিফায়া, অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে এলাকার সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর খলিফাগণ এ সালাত সর্বদা আদায় করেছেন। আর সব মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ঈদের সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। শরী‘আত মুকিম লোকদের জন্য এ সালাত বিধিবদ্ধ করেছেন; মুসাফিরের জন্য নয়।

ঈদের সালাতের শর্তাবলী:

জুমু‘আর সালাতে যেসব শর্ত রয়েছে ঈদের সালাতেও সেসব শর্ত প্রযোজ্য। তবে ঈদের দুই খুৎবা সুন্নাত এবং এ খুৎবাদ্বয় সালাতের পরে দিতে হয়।

ঈদের সালাতের ওয়াক্ত:

প্রত্যুষে সূর্য এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠলে ঈদের সালাতের সময় শুরু হয় এবং সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত এ সালাত পড়া যায়। ঈদের দিনে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে যদি ঈদের দিন সম্পর্কে জানা যায় তাহলে পরের দিন এ সালাত যথাসময় কাযা করবে।

ঈদের সালাতের পদ্ধতি:

ঈদের সালাত দুই রাকাত। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«صلاة الفطر والأضحى ركعتان، ركعتان، تمام غير قصر على لسان نبيكم، وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَى»

“ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত। তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে সে দুই রাকাতই পূর্ণ সালাত; সংক্ষেপ নয়। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে নতুন কিছু রটনা করলো সে বিফল হলো”।[1] এ সালাত খুৎবার আগে পড়তে হয়। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পরে ও আউযুবিল্লাহ এর আগে ছয় তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ার আগে পাঁচ তাকবীর বলবে।

ঈদের সালাত আদায়ের স্থান:

ঈদের সালাত মাঠে আদায় করতে হয়, তবে প্রয়োজনে মসজিদে আদায় করাও জায়েয।

দু’ঈদের সালাতের সুন্নাতসমূহ:

সালাতের আগে পরে বেশি করে তাকবীর দেওয়া ও দু’ ঈদের রাতে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥]

“আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

ইমাম আহমাদ রহ. বলেছেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উভয় ঈদে তাকবীর দিতেন।

তাছাড়া আরও সুন্নাত হচ্ছে, যুলহজ মাসের দশ দিন তাকবীর দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ٢٨﴾ [الحج : ٢٨]

“আর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ২৮]

আর আইয়্যামুত তাশরীকের নির্ধারিত তাকবীর সালাতের পরে দিতে হয়। এ তাকবীর ঈদুল আযহার দিনের সাথে নির্দিষ্ট। ইহরাম থেকে মুক্ত ব্যক্তি আরাফাতের দিন ফজর সালাতের পর থেকে আইয়্যামুত তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত এ তাকবীর বলবে।

ঈদের দিনে মুসল্লিগণের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত; কিন্তু ইমাম সালাতের সময় হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে। ঈদগাহে গমনকারী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া ও সুন্দর কাপড় পরিধান করা সুন্নাত, তবে মহিলারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করবে না।

ঈদের সালাতের সুন্নাতসমূহ:ঈদুল আযহার সালাত আগে আগে পড়া আর ঈদুল ফিতরের সালাত দেরি করে পড়া সুন্নাত। ঈদুল ফিতরের সালাতে যাওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া আর ঈদুল আযহার সালাতের আগে কিছু না খেয়ে কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া সুন্নাত।

>
[1] ইবন মাজাহ, ইকামাতুস সালাহ ওয়াসসুন্নাতু ফিহা, হাদীস নং ১০৬৪; আহমদ, ১/৩৭।